![]() |
কোরআন সুন্নাহর আলোকে পবিত্র লাইলাতুল বরাত। |
উলামায়ে ‘ছূ’রা ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উলামায়ে ‘ছূ’ বা ধর্মব্যবসায়ীরা বলে ও প্রচার করে থাকে যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম। নাঊযুবিল্লাহ!
তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমূলক বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তিক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে। কেননা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তাই এ সকল ধর্মব্যবসায়ীদের মুখোস উম্মোচন করে সঠিক বিষয়টা তুলে ধরার প্রয়াস পাবো। ইনশা আল্লাহ।
শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلة العيدين
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”(সুনানুল কবরা লি বায়হাকী ৩/৩১৯)
ধর্মব্যবসায়ীরা বলে থাকে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কোথাও শবে বরাত শব্দ উল্লেখ নাইঃ
=================================================
‘শবে বরাত’ ফারসী ভাষায় ব্যবহার হয় শব অর্থ হচ্ছে রাত, এবং বরাত অর্থ হচ্ছে ভাগ্য, বরকত, নাজাত ইত্যাদি। এককথায়দ যার বাংলায় অর্থ হচ্ছে ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রাত।
কুরআন শরীফ-এ রয়েছে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-উনার নাম মুবারক যা ছুরইয়ানী ভাষার অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম, হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-উনাদের নাম মুবারক যা হিব্রু ভাষার অন্তর্ভুক্ত। এরূপ শব্দ মুবারক যা আরবী নয় বরং অনারবী তথা আরবী ও আজমী’র সংমিশ্রণে পবিত্র কুরআন শরীফ। তবে আরবী সংখ্যাধিক্য হওয়ার কারণে আরবী।
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফেও আল্লাহ পাক-উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে আরবী ও অনারবী ভাষা ব্যবহার করেছেন। তদ্রুপ আওলিয়ায়ে কিরাম উনারা ওইরূপ ভাষা ব্যবহার করেছেন এবং স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ ও অঞ্চল ভেদে মূল বিষয় তথা একই বস্তু ও জিনিস এর মূল ভাব ঠিক রেখে একই অর্থে তা বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা জায়িয তো বটেই বরং ক্ষেত্র বিশেষে সুন্নাতুল্লাহ, সুন্নাতে রসূলুল্লাহ ও সুন্নাতুল আওলিয়া এবং সুন্নতুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন। এর অসংখ্য ও অগণিত উদাহরণ রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ বর্ণনা করা হলো-
যেমন, ‘ছলাত’ শব্দটি আরবী। যা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত পাঁচবার পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য (শর্ত সাপেক্ষে) ফরয। ‘ছলাত’ শব্দটিকে ফারসী ভাষায় বলা হয় ‘নামায।’ উর্দূতেও নামায বা ‘বন্দিগী।’ বাংলায় ‘প্রার্থনা।’ ইংরেজিতে চৎধুবৎ (প্রেয়ার)। আরো অন্যান্য ভাষাভাষীর লোকেরা অন্যান্য ভাষায় ‘ছলাত’ শব্দকে বুঝিয়ে থাকে যার মূল ভাব, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
অনুরূপভাবে ‘রোযা’ শব্দটি ফারসী। আরবীতে বলা হয় ‘ছিয়াম।’ ইংরেজীতে বলে ঋধংঃরহম (ফেসটিং) বাংলায় আমরা বলে থাকি অভূক্ত থাকা, পানাহার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি। যার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। কিন্তু বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহার হলেও সকল ভাষার মূল বিষয় হচ্ছে ‘ছিয়াম।’
অনুরূপভাবে معراج (মি’রাজ) এর রাত্রিকে আরবীগণ বলে থাকেন, ليلة المعراج (লাইলাতুল মি’রাজ) বা ليلة الاسراء (লাইলাতুল আসরা)
ফরাসীগণ ফারসী ভাষায় এটাকেشب معراج (শবে মি’রাজ) বলে থাকেন। উর্দূতে معراج كى ليل (মি’রাজ কী লাইল) বাংলায় যার অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বগমনের রাত। একইভাবে ক্বদরের রাতকে আরবীতে ليلة القدر ফারসীতে শবে ক্বদর বলা হয়।
তদ্রƒপ ‘শবে বরাত’ ফারসী ভাষায় ব্যবহার হয় যার বাংলায় অর্থ হচ্ছে ভাগ্যরজনী বা মুক্তির রাত। আরবীতে শবে বরাতের বহু নাম রয়েছে যা বিশ্ববিখ্যাত হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে এবং সর্বজনমান্য তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবসমূহে উল্লেখ হয়েছে। যেমন-
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাবে বর্ণিত ‘শবে বরাত’-এর অন্যান্য নামসমূহঃ
(১) الليلة المباركة (আল্লাইলাতুল মুবারকাতু) বরকতময় রজনী।
(২) ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বানা) অর্ধ শা’বানের রজনী।
(৩) ليلة القسمة (লাইলাতুল ক্বিস্মাতি) ভাগ্য রজনী।
(৪) ليلة التكفير (লাইলাতুত্ তাকফীরি) গুনাহ্খতা ক্ষমা বা কাফ্ফারার রাত্রি।
(৫) ليلة الاجابة (লাইলাতুল ইজাবাতি) দোয়া কবুলের রাত্রি।
(৬) ليلة الحياة (লাইলাতুল হায়াতি) হায়াত বা আয়ু বৃদ্ধির রাত্রি।
(৭) ليلة عيد الملائكة (লাইলাতু ঈদিল্ মালায়িকাতি) ফেরেশতাগণের ঈদের রাত্রি।
(৮) ليلة البراءة (লাইলাতুল বারাআতি) মুক্তির রাত্রি বা ভাগ্য বন্টনের রাত।
(৯) ليلة التجويز (লাইলাতুত্ তাজবীযি) বিধান সাব্যস্ত করার রাত্রি।
(১০) ليلة الفيصلة (লাইলাতুল ফায়সালাতি) সিদ্ধান্ত নেয়ার রাত্রি।
(১১) ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছক্কি) ক্ষমা স্বীকৃতি দানের রাত্রি।
(১২) ليلة الجاءزة (লাইলাতুল জায়িযাতি) মহা পুরস্কারের রাত্রি।
(১৩) ليلة الرجحان (লাইলার্তু রুজহানি) পরিপূর্ণ প্রতিদানের রাত্রি।
(১৪) ليلة التعظيم (লাইলাত্ত্ ুতা’যীমি) সম্মান হাছিলের রাত্রি।
(১৫) ليلة التقدير (লাইলাতুত্ তাক্বদীরি) তক্বদীর নির্ধারণের রাত্রি বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত।
(১৬) ليلة الغفران (লাইলাতুল গুফরানি) ক্ষমাপ্রাপ্তির রাত্রি।
(১৭) ليلة العتق من النار (লাইলাতুল ইত্ক্বি মিনান্ নীরানি) জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার রাত্রি।
(১৮) ليلة العفو (লাইলাতুল আফবি) অতিশয় ক্ষমা লাভের রাত্রি।
(১৯) ليلة الكرام (লাইলাতুল কারামি) অনুগ্রহ হাছিলের রাত্রি।
(২০) ليلة التوبة (লাইলাতুত্ তাওবাতি) তওবা কবুলের রাত্রি।
(২১) ليلة الندم (লাইলাতুন্ নাদামি) কৃত গুনাহ স্মরণে লজ্জিত হওয়ার রাত্রি।
(২২) ليلة الذكر (লাইলাতুয্ যিকরি) যিকির-আযকার করার রাত্রি।
(২৩) ليلة الصلوة (লাইলাতুছ্ ছলাতি) নামায আদায়ের রাত্রি।
(২৪) ليلة الصدقة (লাইলাতুছ্ ছদাক্বাতি) দানের রাত্রি।
(২৫) ليلة الخيرات (লাইলাতুল খইরাতি) নেক কাজ সম্পাদনের রাত্রি।
(২৬) ليلة انزال الرحمة (লাইলাতু ইনযালির রহ্মাতি) রহমত নাযিলের রাত্রি।
(২৭) ليلة صلوة وسلام على سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم (লাইলাতু ছলাতিন ওয়া সালামিন আলা সাইয়্যিদিল মুরসালীনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রতি ছলাত ও সালাম পাঠের রাত্রি ইত্যাদি।
এছাড়াও ‘শবে বরাতের’ আরো অনেক নাম রয়েছে। যা এখানে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি।
কুরআন শরীফ-এর সূরা আদ দুখানের আয়াত শরীফ এ লাইলাতুল বরাতকে অনেকে অস্বীকার করে লাইলাতুল ক্বদর বলতে চায়। তাদের বক্তব্যের জবাবঃ
===============================================
শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরাম উনারা শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেনঃ
বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-
قال عكرمة هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيه امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد. روى البغوى عن محمد بن الميسرة بن الاخفس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح و يولد له ولقد اخرج اسمه فى الموتى.
وروى ابو الضحى عن ابن عباس ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা আদ দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত। এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়ছালা করা হয় এবং কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়ছালা করা হয়। অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না। অর্থাৎ কোন প্রকারের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয় না। হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয়। এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহন করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে।
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয়। (তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খন্ড ৩৬৮ পৃষ্ঠা)
তাফসীরের কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
(انا انزلناه فى ليلة مباركة).. وقيل هى ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাত্রিতে উহা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ অবতীর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে (শবে বরাত) উল্লেখ করা হয়েছে। (তাফসীরুল খাযিন এর ৪র্থ খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায়)
বিশ্বখ্যাত তাফসীর তাফসীরে মাদিরক-এ ليلة المباركة এ আয়াতাংশের তাফসীরে উল্লেখ আছে-
وهذه الليلة مفرق كل أمر حكيم ومعنى يفرق يفصل ويكتب كل أمر من ارزاق العباد واجالهم وجميع أمورهم من هذه الليلة الى ليلة القدرالتى تجى فى السنة المقبلة
অর্থ: ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকাহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবেবরাত এবং এই মুবারকময় রাতে সকল প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। আয়াত শরীফ-এর يفرق শব্দের অর্থ হচ্ছে يفصل (ইউফাছছালু) তথা ফায়ছালা করা, এবং يكتب (ইউকতাবু) তথা লেখা হয় প্রত্যেক বান্দাদের রিযিক বা জীবিকাসমূহ। তাদের মৃত্যুর সময় সীমাও লেখা হয় এবং সমস্ত বিষয়ের তালিকা লেখা হয় এই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে। আর ক্বদর রাতে তথা মর্যাদাবান রাতে ওই সমস্ত ফায়ছালাকৃত বিষয়গুলো চালু করা হয় তথা কার্যকরী করা হয় যা সামনের এক বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে। (তাফসীরু হাশিয়াতিল খাযিন ৪র্থ খ-,পৃঃ ১১২)
উল্লেখ্য যে, যদিও কেউ কেউ ليلة مباركة দ্বারা ليلة القدر বুঝে থাকেন মূলত তা নয়, বরং ليلة القدر দ্বারা শবে বরাতের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার রাতকে বুঝানো হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে, উল্লেখ আছে-
فقيل له (للحسين بن الفضل) فما معنى ليلة القدر قال سوق المقادير الى المواقيت وتنفيذ القضاء المقدر.
অর্থ: “হযরত হুসাইন ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হল ‘লাইলাতুল ক্বদর’-এর অর্থ কি? তিনি উত্তরে বলেন, পূর্বে স্থিরীকৃত সিদ্ধান্তসমূহ নির্ধারিত সময়ের দিকে পরিচালনা করা এবং পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তের যথার্থ বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে ক্বদর রাতের অর্থ।”
কাজেই উল্লিখিত দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠল যে, অর্ধ শা’বানের রাত হচ্ছে ليلة التجويز তথা বণ্টনের বা সিদ্ধান্তের রাত। আর লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে ليلة التنفيذ তথা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রাত। (তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খ-ের ৩৯০ পৃষ্ঠা)
আদ দুখানের এই আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় একইভাবে শবে বরাতের রাতকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلايزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد.
অর্থ: “হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা এবং ফায়ছালার রাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান এর (১৫ই-শাবানের) রাত তথা শবে বরাত। আর এই শবে বরাতের রাতে সামনের এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যলিপি প্রস্তুত করা হয়। এবং জীবিত ও মৃত্যুদের ভাগ্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয় এই শবে বরাতে। অতঃপর ওই ভাগ্য তালিকা থেকে কোন কম বেশি তথা হেরফের করা হয় না। (তাফসীরে বাগবী এর ৬ষ্ঠ খ-ের ১৪৩ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে নাযমুদ দুরার” কিতাবের ৭ম খ-ের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
او ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শা’বানের রাত।”
উক্ত তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে-
قال وروى ابو الضحى عنه ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان فيسلمها الى اربابها فى ليلة القدر وقال الكرمانى فيسلمها الى اربابها وعمالها من الملائكة ليلة السابع والعشرين من شهر رمضان.
অর্থ: “হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হযরত আবু দ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। আর ক্বদরের রাতে তথা শবে ক্বদরে সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকরী তথা বাস্তবায়ন করার জন্য তালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে। হযরত ইমাম কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পূর্ব সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফেরেশতা উনাদের হাতে যেই রাত্রিতে তালিকা পেশ করা হয়, সেই রাত্রিটি হচ্ছে রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখের রাত। (তাফসীরে নাযমুদ দুরার ৭ম খ-ের ৬৪ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে ‘তাফসীরে কুরতুবী’-এর ২০তম জুযে ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ايضا ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করেন। আর ক্বদরের রাত্রিতে ওই ভাগ্যতালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে।
কাজেই উক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠলো যে, শবে বরাত বান্দাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় আর শবে ক্বদরে সেই ভাগ্যতালিকা জারি বা কার্যকরী করা হয়। সূতরাং এটাই প্রমানিত হলো যে, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা ভাগ্য নির্ধারণ রজনী বা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে।
বাতিল ফির্কারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অপপ্রচার চালায় সূরা দুখানের লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা নাকি লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান তথা শবে বরাতকে বুঝানো হয়নি, বরং শবে কদরকে বুঝানো হয়েছে। আসুন আমরা উক্ত আয়াত শরীফের বিশ্ব বিখ্যাত তফসীর সমূহ থেকে স্পষ্ট ভাবে জেনে নিই লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা প্রকৃতপক্ষে কি বুঝানো হয়েছে।
বিভিন্ন তাফসীর থেকে সূরা আদ দুখানের তাফসীর উল্লেখ করা হলোঃ
============================================
শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক রবকতপূর্ণ রাত্রিতে নাযিল করেছি। অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপুর্ণ কাজসমূহের বণ্টন করা হয় তথা বণ্টনের ফায়সালা করা হয়।” (সূরা আদ দোখান-৩-৪)
(১) সূরা আদ দুখান-এর ليلة مباركة এর পরবর্তী আয়াত শরীফ-এ বলা হয়েছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “সেই মুবারক রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة رضى الله تعالى هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد.
অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে। ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না।( তাফসীরে কুরতুবী-এর ১৬তম খ-ের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠা)
(২) এ প্রসঙ্গে তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) يفصل (كل امر حكيم) ... وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يقوم فيها امر السنة وتنسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد
অর্থ: “ওই মুবারক তথা বরকতপূর্ণ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ যাবতীয় বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়। বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যতালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের। ওই তালিকা থেকে কোন কম বেশি করা হয়না অর্থাৎ কোনরূপ পরিবর্তন হয় না (‘তাফসীরে লুবাব’-এর ১৭তম খ-ের ৩১০-৩১১ পৃষ্ঠা)
(৩) প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে গারায়িবুল কুরআন ওয়া রাগায়িবুল কুরআন, হাশিয়ায়ে জামিউল বয়ান’-এর ৩০তম জুযের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وعن عكرمة رضى الله تعالى عنه انها ليلة البراءة
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ যে রাতে অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয় তা হচ্ছে বরাতের রাত। তথা শবে বরাতে।” (তাফসীর তাবারী, ৩০ খ-)
(৪) বিশ্বখ্যাত তাফসীর আরো উল্লেখ আছে-
يبدأ فى استنساخ ذالك من اللوح المحفوظ فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “লাওহে মাহফূয-এর প্রত্যেকটি বিষয়ের অনুলিপি বা ভাগ্যলিপি লেখা শুরু হয় শবে বরাতের রাত্রে এবং শেষ হয় শবে ক্বদরের রাত্রে।” (“তাফসীরে কুরতুবী”-এর ১৬তম খ-ের ১২৮ পৃষ্ঠা)
(৫) তাফসীরে আরো উল্লেখ আছে-
وقيل ليلة البراءة ابتدئ فيها انزال او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাইলাতুল মুবারাকা অর্থ হচ্ছে লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত। উক্ত রাত্রিতে কুরআন শরীফ ও অন্যান্য সবকিছু অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়। অথবা ওই রাত্রিতে একই সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ লাওহে মাহফুয থেকে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ করা হয়।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৬) উক্ত কিতাবের উক্ত পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
وقيل يبدأ فى استنساخ ذلك من اللوح فى ليلة البراءة ويقع الفراغ فى ليلة القدر.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, লাওহে মাহফুয থেকে যা কিছু নাযিল হয় তার সবকিছুই লিপিবদ্ধ শুরু করা হয় শবে বরাতে। আর সেই ভাগ্যলিপি সম্পাদন তথা কার্যকরী করার জন্য পেশ করা হয় শবে ক্বদরে।” (“তাফসীরে আবী সুয়ূদ”-এর ৮ম খ-ের ৫৮ পৃষ্ঠা)
(৭) এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত “তাফসীরে তাবারী”তে উল্লেখ আছে-
وقال اخرون بل هى ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “মুফাস্সিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত।” (“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠা)
“তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
فيها يفرق كل امر حكيم
“ওই রাতেই সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়।”
(৮) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
زعم بعضهم كعكرمة وغيره انها ليلة النصف من شعبان ... قالوا وسمى ليلة البراءة ايضا وليلة الصك
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণ উনাদের মধ্য থেকে অনেকেই উল্লেখ করেছেন, অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যেমন, প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও অন্যান্য আরো অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বর্ণনা করেছেন যে, লাইলাতুম মুবারকাই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। তারা আরো বলেন, লাইলাতুম মুবারাকাকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এবং লাইলাতুছ ছক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাতও বলা হয়। (“তাফসীরে গারায়িব হাশিয়া জামিউল বয়ান” কিতাবের ২৫তম খ-ের ৮১-৮২ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৩ খ-, ১১২ পৃষ্ঠা)
(৯) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
انها ليلة النصف من شعبان قاله عكرمة .. وروى عن عكرمة ان ذلك فى ليلة النصف من شعبان.
অর্থ: “লাইলাতুল মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে। যা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে। প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই ফায়ছালার রাত্রি হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত। (“তাফসীরে যাদুল মাসীর”-এর ৭ম খ-ের ১১২ পৃষ্ঠায়)
(১০) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وغيره الليلة المباركة هى النصف من شعبان.
অর্থ: “হযরত ইকরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরামগণ উনাদের থেকে বর্ণিত আছে যে, লাইলাতুম মুবারাকা হচ্ছে ১৫ই শাবানের রাত তথা শবে বরাত। (“তাফসীরে আল মুর্হারারুল ওয়াজিয” কিতাবের ৫ম খ-ের ৬৮ পৃষ্ঠায়)
(১১) তাফসীরের কিতাব এ উল্লেখ আছে-
او البراءة معطوف على القدر اى ليلة البراءة وهى ليلة النصف من شعبان فانها تسمى الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة الرحمة وتسميتها بليلة البراءة والصك لانه تعالى يكتب لعبادة المؤمنين براءة فى هذه الليلة كذا فى الكشاف.
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত। যা ক্বদরের তথা মর্যাদাপূর্ণ রাতের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শাবানের রাতকেই লাইলাতুল মুবারাকা, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত এবং লাইলাতুর রহমত নামে নামকরণ করা হয়েছে।”
আর লাইলাতুল বরাত এবং লাইলাতুল ছক বা ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবে এজন্যই নামকরণ হয়েছে। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মু’মিন বান্দাদের ব্যাপারে এই রাত্রিতে মুক্তির ফায়ছালা করে থাকেন। এরূপভাবে তাফসীরে কাশশাফেও বর্ণিত আছে। (“তাফসীরে হাশিয়ায়ে শিহাব”-এর ৮ম খ-ের ২ পৃষ্ঠা)
(১২) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
او البراءة ابتدأ فيها انزاله او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত। এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয়। অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয়।” (“তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খ-ের ২৮৭ পৃষ্ঠা)
(১৩) সকল মাদ্রসায় পঠিত কিতাব “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”- উল্লেখ আছে-
او ليلة نصف من شعبان
অর্থ: “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শাবানের তথা ১৫ই শাবানের রাত।” (“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” ৪১০ পৃষ্ঠা)
এই উক্তির সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
قوله ليلة النصف من شعبان هو قول عكرمة وطائفة ومنها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত। এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে। আর এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের ৪টি নাম রয়েছে। যেমন, লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত, লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত, লাইলাতুর রহমত এবং লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারনের রাত।
(১৪) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
اخرج ابن جرير وابن المنذر وابن ابى حاتم من طريق محمد بن سوقة عن عكرمة رضى الله تعالى عنه فيها يفرق من كل امر حكيم قال فى ليلة النصف من شعبان يبرم امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم ولاينقص منهم احد.
অর্থ: “হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মুহম্মদ ইবনে সাওক্বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আবার হযরত ইক্রামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মহান আল্লাহ পাক-উনার বাণী-
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থাৎ, “ওই মুবারক রাত্রে প্রত্যেক হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে।” তিনি এই ফায়ছালার রাত দ্বারা অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে উল্লেখ করেছেন। আর এই শবে বরাতে আগামী এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে এবং ওই রাতেই মৃত ও জীবিতদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সেই রাতেই হাজীদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। ওই তালিকা থেকে কোনরূপ কমবেশী করা হয়না। (“তাফসীরে দুররে মানছূর”-এর ৬ষ্ঠ খ-ের ২৬ পৃষ্ঠা)ৎ
(১৫) উক্ত আয়াত শরীফ সর্ম্পেকে উল্লেখ আছে-
قال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خير وبركتها على العاملين ... الثانى ليلة الرحمة والثالث ليلة البراءة والرابع ليلة الصك.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে অনেকেই লাইলাতুল মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাতকে। এবং ইহার তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে। প্রথমত: লাইলাতুল মুবারকা তথা বরকতের রাত্রি। কেননা এই বরকতের রাত্রিতে যারা আমল করে থাকেন তথা ইবাদত-বন্দিগী করে থাকেন তাদের জন্য অনেক খায়ের বরকত রয়েছে।
দ্বিতীয়ত: লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত্রি।
তৃতীয়ত: লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত্রি।
চতুর্থত: লাইলাতুছ ছক তথা চেক প্রদানের রাত। (“তাফসীরে রহুল বয়ান” কিতাবের ৮ম খ-ের ২৫তম জুযের ৪০২ পৃষ্ঠা)
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর এর কিতাবে উল্লেখ আছে-
وقال عكرمة وجماعة: هى ليلة النصف من شعبان وتسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك وليلة البراءة
অর্থ: হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি জামায়াত বলেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত। ১৫ শা’বানের রাতকে লাইলার্তু রহমত তথা রহমতের রাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুছ ছক্ক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে। (“তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১৩তম খ-ের ১১০-১১১ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, অধিকাংশ অনুসরনীয় মুফাসসিরীণগণ উনারা ‘সূরা দুখানে’ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ অর্থাৎ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ‘শবে বরাত’ কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। অতএব শবে বরাতের বিরোধিতা করা বা শবে বরাতকে অস্বীকার করা মূলত কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফকেই অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত সম্পর্কে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন তা সর্বজনমান্য ও বিশ্বখ্যাত হাদীছগ্রন্থে রয়েছে কিতাবের নামসহ তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো
বিশ্ববিখ্যাত হাদীছগ্রন্থ “মিশকাত শরীফ”-এর ১১৪ পৃষ্ঠায় বাবু ক্বিয়ামি শাহ্রি রমাদ্বান-এ উল্লেখ আছে-
عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فاذا هو بالبقيع فقال اكنت تخافين ان يحيف الله عليك ورسوله قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى ظننت انك اتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب. رواه الترمذى وابن ماجه.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা রাত্রিতে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর তালাশ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতুল বাক্বী নামক স্থানে দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি মনে করেন যে, আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার খিয়ানত করছেন? জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মনে করেছিলাম যে, হয়তোবা আপনি আপনার অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন উনাদের হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর তখন উনাকে লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক অর্ধ শাবান তথা শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে অবতীর্ণ হন (অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন) এবং ক্বালব গোত্রের মেষপালের পশম পরিমাণের চেয়েও অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। (আজ সেই রাত।)” (তিরমিযী শরীফ ৩/১১৫ : হাদীস ৭৩৯, ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৯ , মুসনাদে আহমদ ১৮/১১৪ : হাদীস ২৫৮৯৬, ইবনে আবী শায়বা : হাদীস ৯৯০৭, মিশকাতুল মাছাবিহ ২/২৫৩: হাদীস ১২৯৯, ববিনে হিব্বান : হাদীস ৬২৬, জামেউছ ছগীল লিছ সূয়ুতী ১/১৪৬: ১৯৪২, কানযুল উম্মাল ৩/৪৬৪ : হাদীস ৭৪৫০, জামিউল আহাদিস : হাদীস ২৬২৪ , শরহুস সুন্নাহ ৪/১২৬ : হাদীস ৯৯২, ফাযায়েলুল ওয়াক্ত ১/১৩০: হাদীস ২৮, মুন্তাখাব মিনাল মুসনাদ ১/১৯৪, আত তাগরীব ওয়াত তারহীব ৪/১২৬ : ২৪, )
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এর অন্যতম বিশুদ্ধ হাদীছ গ্রন্থ সিয়া সিত্তার অন্যতম কিতাব “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর মধ্যে অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাত সম্পর্কে একটি বাবও আনা হয়েছে। যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ১০০ পৃষ্ঠায়
باب ماجاء فى ليلة النصف من شعبان
এখন কথা হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শবে বরাতের যদি অস্তিত্বই না থাকতো তবে ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় রচনা করলেন কেন ? এবং সে বাবে এই হাদীস শরীফ বর্ণনা করলেন কেন? হাফিজে হাদীস ইমমি ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি সালাফীদের চাইতে হাদীস কম বুঝতেন ? নাউযুবিল্লাহ।
শুধু তাই নয় উক্ত হাদীস শরীফ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ইমাম হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
“উক্ত হাদীস শরীফটি সনদের দিক থেকে হাসান।” (দলীলঃ জামেউছ সগীর ১/১৪৬)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত ইবনে হিব্বান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত সিদ্দীকা আলাইহিস সালাম বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফটি হাসান। এবং সকল রাবী বিশ্বস্ত। যদিও সনদে ইনকেতা পাওয়া যায় তথাপিও একাধিক সনদে বর্ণিত থাকায় সহীহ লি গইরিহীর মর্যাদা পেয়েছে।
এখানে সালাফীরা একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে ফিৎনা ছড়ানোর চেষ্টা করে, সেটা হচ্ছে উক্ত হাদীস শরীফের সনদে ইমমি বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন উক্ত হাদীস শরীফের ইয়াহিয়া ইবনে আবি কাছীর হযরত উরউয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীস শরীফ শ্রবন করেন নাই। কিন্তু ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উস্তাদ জরাহ ও তাদীলের ইমাম হযরত ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমান করেছেন ইয়াহিয়া ইবনে আবি কাছীর হযরত উরউয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীস শরীফ শ্রবন করেছেন। (তিরমিীযি ৩/১১৫)
এখানেই শেষ নয়, উক্ত হাদীস শরীফ খানা জগৎ বিখ্যাত অসংখ্য ইমমি বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে আছেন হাম্বলী মযাহবারে ইমাম ও মুস্তাহিদ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিশিষ্ঠ ইমাম ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি যার সনদে ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা অসংখ্য হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও সিয়া সিত্তার অন্যতম দুই ইমাম হযরত তিরমীযি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাও বর্ণনা করেছেন। এছাড়া পৃথিবী বিখ্যাত প্রায় ত্রিশ জন মুহাদ্দিস উক্ত হাদীস শরীফ উল্লেখ করেছেন এবং কেউ কোন আপত্তি করেননি। তবে লা’মাযহাবীরা কেন আজ উক্ত হাদীস শরীফের বিরোধীতা করে ?
সূতরাং উক্ত সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা লাইলাতুন নিছফী মিন শাবান বা শবে বরাত স্পষ্ট ভাবেই প্রমানিত হলো।
পবিত্র শবে বরাত প্রসঙ্গে অসংখ্য সহীহ হাদীস শরীফ বর্ণিত আছে। এত ব্যাপক সংখ্যক বর্ণনার ফলে লা’মাযহাবীদের গুরুরাও হাদীস শরীফ গুলোকে সহীহ বলতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও কিছু কুয়োর ব্যাঙ সালাফী, হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে অজ্ঞ হওয়ার করনে সহীহ হাদীস সমূহের বিরোধিতা করে। আসুন তাদের একটা বিরোধিতার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া যাক-
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه ورواه احمد. عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه وفى رواية الا اثنين مشاحن وقاتل نفس.
অর্থ: “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নাযিল হন এবং উনার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না। কিন্তু হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। আর উনার অপর এক রেওওয়ায়েত রয়েছে, দু’ব্যক্তি ব্যতীত। যথা- বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মানুষ হত্যাকারী ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করা হয়।” (ইবনে মাজাহ পৃষ্ঠা ১০১: হাদীস ১৩৯০, বায়হাকী শুয়াইবুল ঈমান ৩/৩৮২: হাদীস ৩৮৩৫, মিসবাহুল জুজাহ ১/৪৪২: হাদীস ৪৮৭, মিশকাতুল মাছাবীহ ১১৫ পৃষ্ঠা: হাদীস ১৩০৬, আত তাগরীব ওয়াত তারহীব ৪/২৪০, কানযুল উম্মাল ১২/৩১৫: হাদীস ৩৫১৮২, মাযমাউয যাওয়াইদ ৮/৬৫: হাদীস ১২৯৬০, জামেউস সগীর : হাদীস ২৭০০, ফাযায়েলে ওয়াক্ত লি বায়হাকী ১/১৩২: হাদীস ২৯, জামিউল মাসানিদ ওয়াল সুনান লি ইবনে কাছীর : হাদীস ১৩০৭৬)
উক্ত হাদীস শরীফের সনদ নিম্নরূপঃ
১)হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- তিনি ছিলেন বিখ্যাত ফক্বীহ সাহাবী।
২)হযরত দ্বাহাক বিন আব্দুর রহমান ইবনে আয়যব রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি ছিলেন তৃতীয় তবকার ছেকাহ রাবী। এছাড়া তিনি একজন তাবেয়ীও ছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৩৯২, মিযানুল ইতিদাল ২/৩২৪)
৩)হযরত দ্বাহাক বিন আয়মন রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি অপরিচিত। (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৪৮৯)
৪)হযরত ওলীদ বিন মসলিম আল কুরাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি- হযরত ইবনে সাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পেকে বলেন, তিনি হচ্ছেন নির্ভরযোগ্য এবং অধিক হাদীস শরীফ বর্ণনাকারী। (তাহযীবুত তাহযীব ১১/১৩৪)
৫)হযরত রাশেদ ইবনু সায়ীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি- উনার সর্ম্পেকে ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি বলেন, তিনি ছিলেন দশম তবকার ছিকাহ রাবী।” (তাহযীবুত তাহযীব ৩/১৯৬)
সালাফীরা উক্ত সনদের তৃতীয় বর্ণনাকারী হযরত দ্বাহাক বিন আয়মান রহমতুল্লাহি আলইহি উনার কারনে হাদীস শরীফকে অস্বীকার করতে চায়। এখানে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে উক্ত রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার কাছে অপরিচিত হলেও সিয়া সিত্তার ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে অপরিচিত ছিলেন না। ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত ২০৯ হিজরীতে আর রাবী ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি উনার বিলাদত ৮৫২ হিজরীতে। সূতরাং (৮৫২-২০৯)= ৬৪৩ বছর আগের ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে উক্ত রাবীর খবর ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি থেকে ভালো জানার কথা। সূতরাং উক্ত রাবীকে ঢালাও ভাবে মাজহুল বা অপরিচিত বলা মোটেও ঠিক হবে না।
উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে লা’মাযহাবীদের ইমাম মোবারকপুরী উল্লেখ করেছে, “ইমাম মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, উক্ত হাদীস শরীফ খানা ইমাম হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন। উক্ত হাদীস শরীফের সনদটির মধ্যে কোন অসুবিধা নেই।” (তুহফাতুল আহওয়াজী ৩/৪৪১)
তাছাড়া উক্ত হাদীস শরীফ কমপক্ষে ১০ টা সনদে বর্ণিত হয়েছে। যা হাদীস শরীফকে শাহেদ হাদীস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আহলে হাদীস লা’মাযহাবীদের অন্যতম পুজনীয় নাসির উদ্দীন আলবানী উক্ত হাদীস শরীফ সর্ম্পেকে বলেছে,
হযরত ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক বর্ণিত হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা সহীহ লি গাইরিহী। (দলীলঃ সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩ খন্ড: হাদীস ২৭৬৮)
এবার আসুন সহীহ লিগাইরিহী কাকে বলে জেনে নিই,-
ছহীহ লিগাইরিহীঃ এটা হাসান লিযাতিহী হাদীছ শরীফরে অনুরূপ। ছহীহ হাদীছ শরীফ-এর কোন রাবীর মধ্যে স্বরণ শক্তি কছিুটা কম থাকে। তবে সইে অভাব বা ত্রুটিটুকু অন্যান্য উপায়ে এবং অধকি রওিয়ায়তে দ্বারা পুরণ হয়ে যায়। মোট কথা, উহার সমর্থনে বহু রিওয়ায়েত বর্ণিত থাকায় তাহার ত্রুটি ক্ষতপিুরণ হয়ে গেছে। এরূপ হাদীছ শরীফকে ছহীহ লিগাইরিহী। (তাদরীবুর রাবী, মিজানুল আখবার)
লা’মাযহাবীদের গুরুরাই উক্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে সনদে কোন অসুবিধা নেই তাহলে এখন কুয়ার ব্যং লা’মাযহাবীরা কোন সাহসে এই হাদীস শরীফের বিরোধিতা করে ?
শবে বরাত বা লাইলাতুন নিছফী মিন শাবান এর বিরোধীতা করতে গিয়ে আহলে হদস বা লা’মাযহাবীরা যে হাদীস শরীফের বিরোধীতা করে সেটা নিয়ে আজ আলোকপাত করবো। অকাট্য দলীল দ্বারা শবে বরাতের ফযীলত উপস্থাপিত হবে ইনশা আল্লাহ।
“মিশকাত শরীফ”-এর ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে। কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব। কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব। সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।” (দলীলঃ ইবনে মাজাহ ১/১৪৪: হাদীস ১৩৮৮, ইবনে হিব্বান: হাদীস ১৩৮৮, বায়হাকী শুয়াবুল ঈমনি ৫/৪৫৪: হাদীস ৩৮২২, মিশকাতুল মাসাবীহ ২/২৪৫ : হাদীস ১২৩৩, দায়লামী শরীফ ১/২৫৯: হাদীস ১০০৭, তারগীভ ওয়াত তারহীব ২/৭৫: হাদীস ১৫৫, বায়হাক্বী – ফযায়েলে ওয়াক্ত ১/১২২ : হাদীস ২৪, জামেউস সগীল লি সুয়ুতী : হাদীষ ১৬৬৫, মিসবাহুল জুজাহ : হাদীস ৪৯১, কানযুল উম্মাল ১২/৩১৪ : ৩৫১৭৭, উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ১১/৮২, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়াহ ৩/৩০০, মিরকাত ৩য় খ-, ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খ- ২৯৩-২৯৪-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত ৪/২১২)
উক্ত হাদীস শরীফের রাবীগন হচ্ছেন:
১) খলীফাতুল মুসলিমিন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু- জলীল ক্বদর সাহাবী।
২) হযরত মুয়াবিয়া বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহ বলেন, তিনি বিশ্বস্ত রাবীদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন, এবং নির্ভরযোগ্য ছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব ২/১৯৬)
৩) হযরত ইব্রাহিম বিন মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি: তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন। (মিযানুল এতেদাল)
৪) হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দ্বয়ীফ বলেছেন। ইমাম নাসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মাতরুক বলেছেন। কিন্তু ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বড় ফক্বীহ ও ইরাকের কাজী বলে উল্লেখ করেছেন। (মিযানুল এতেদাল ৪/৫০৩) সিয়া সিত্তার অন্যতম ইমাম হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মদীনা শরীফের মুফতী ছিলেন। (তাহযীবুত যাহযীব ১২/২৭, মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১)
৫) আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হাম্মাম ইবনে নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি- ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে হাদীস শরীফের বড় নির্ভরযোগ্য রাবী বলেছেন। (তাজকিরাতুল হুফফাজ ১/৩৬৪)
৬) হযরত হাসান বিল আলী আল খালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি- হযরত খতীব বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিজে হাদীস ছিলেন। (তারীখে বাগদাদ ৭/৪২৫) হযরত ইবনে হাজর আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য এবং হাফিজে হাদীস ছিলেন। (তাহজীবুত তাহজীব ২/৩০২)
উক্ত হাদীস শরীফে সালাফীদের আপত্তি হচ্ছে চতুর্থ রাবী হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিয়ে। হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কিন্তু য্যথাক্রমে কাজী, ফক্বীহ এবং মুফতী ছিলেন। সালাফীদের আপত্তির প্রেক্ষিতে বিষয়গুলো পর্যালোচনা না করলেই নয়। মুসলমান শাষন আমলে একজন ক্বাজী হওয়ার যোগ্যতা সে বিষয়ে না বললেই না। একজন ক্বাজীর প্রধান বৈশিষ্ঠই হচ্ছে সর্বোচ্চ তাক্বওয়া। সেই সাথে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা কিয়াস সর্ম্পকে অগাধ জ্ঞান। যিনি কাজী তিনি অবশ্যই আদীল বা চরম ন্যায়পরায়ন হবেন। শুধু তাই না একজন কাজীর কুরআন শরীফের ৬৬৬৬ টি আয়াত শরীফের আদেশ সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ , নিষেধ সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ওয়াদা সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ভীতি সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, ঘটনা সূচক ১০০০ আয়াত শরীফ, উপদেশ মূলক ১০০০ আয়াত শরীফ, হালাল সূচক ২৫০ টা আয়াত শরীফ, হারাম বিষয়ে ২৫০ টা আয়াত শরীফ, তাজবীহ সংক্রান্ত ১০০ টি আয়াত শরীফ, বিবিধ বিষয়ে ৬৬ টি আয়াত শরীফ এর প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা হুকুম সর্ম্পকে পূর্ণরূপে অবহিত থাকতে হবে। এবং কয়েক হাজার হাদীস শরীফের হাফিজ হবেন। এবং প্রতিটা বিষয়ে অত্যান্ত সত্যবাদী হবেন। যেহেতু তিনি বিচারক সেহেতু উনার যোগ্যতার মাপকাঠি সহজেই অনুমেয়। (দলীলঃ সমূহ ফিক্বহের কিতাব) সহজেই বোঝা যাচ্ছে একজন কাজী মাতরূক বা পরিত্যজ্য ব্যাক্তি হতে পারেন না। তাহলে ৭০ হাজার হাদীসের হাফিজ ( মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১) এবং একজন ক্বাজী হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি যে রাবী হিসাবে সিকাহ সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রইলো না।
হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুধু ক্বাজীই ছিলেন না তিনি ছিলেন ফক্বীহ। (মিযানুল এতেদাল ৪/৫০৩) একজন ফক্বীহর যোগ্যতা সর্ম্পকে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীকত হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যটাই যথেষ্ঠ,
*انما الفقيه الزاهد فى الد نيا الراغب فى الا خرة البصير بذنبه المدائم على عبادة ربه الورع الكف عن اعراض المسلمين العفيف عن اموالهم النا صح لجماعتهم.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই ফক্বীহ (হাক্বীক্বী আলিম) ঐ ব্যক্তি যিনি দুনিয়া থেকে বিরাগ, আখিরাতের দিকে ঝুকে রয়েছেন, গুণাহ থেকে সতর্ক, সর্বদা ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল, পরহিযগার, মুসলমানদের মান-সম্ভ্রম নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং অধীনস্থ লোকদেরকে নছীহত করেন। (তাফসীরে কবীর)
সূতরাং ফক্বীহ হিসাবে হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি কেমন ব্যাক্তিত্ব ছিলেন নতুন করে বলার অবকাশই রাখে না।
এছাড়ও হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সর্ম্পকে বিখ্যাত ইমাম হযরত আবু দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, তিনি মদীনা শরীফের মুফতী ছিলেন। (তাহযীবুত যাহযীব ১২/২৭, মিযানুল এতেদাল ৪/৪৬১)
আর একজন মুফতী বা ফতোয়াদান কারীর বৈশিষ্ঠ সর্ম্পকে হাফিজে হাদীস হযরত জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহ , ফতোয়াদানকারী বা মুফতীকে অবশ্যই ইলমে লাদুন্নী বা খোদায়ী প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে। (আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন)
সূতরাং সহজেই বলা যায় হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিশেষ গুনাবলীর অধিকারী ছিলেন। আর মদীনা শরীফের একজন মুফতীর কি পরিমান যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন সেটা আক্বল সম্পন্ন ব্যাক্তি মাত্রই বুঝতে পারার কথা।
তাই রাবী হিসাবে উনাকে মাতরূক বলার আগে অবশ্যই হুশিয়ার হতে হবে। হযরত ইবনু আবি সাবরা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মোটেও মাতরূক ছিলেন না। তিনি একজন যোগ্য হাদীস বিশারদ ও সেইসাথে ক্বাজী, ফক্বীহ ও মুফতী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ।
এছাড়াও ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিতাবে একটা হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন। হাদীস শরীফখানা হলোঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ينزل ربنا تبارك وتعالى في كل ليلة إلى سماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الآخر فيقول من يدعوني فأستجيب له ومن يسألني فأعطيه ومن يستغفرني فأغفرله. (أخرجه البخاري ومسلم)
অর্থঃ আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমাদের রব তা‘আলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে থাকেন, কে আছ আমার কাছে দু‘আ করবে আমি কবুল করব। কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী শরীফ: হাদীস ১০৯৪, মুসলিম শরীফ : হাদীস ১৮০৮)
সূতরাং বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের হাদীস শরীফ দ্বারা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত শবে বরাতের হাদীস শরীফখানাও সমর্থন পেলো। অতএব বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের হাদীস শরীফ দ্বারা শবে বরাতের হাদীস শরীফ শক্তিশালী হলো।
এ ছাড়া মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ৭/৪১২ এ উল্লেখ আছে , “ এ হাদীস শরীফের সমর্থনে শাহেদ হাদীস বিদ্যমান। ফলে হাদীস শরীফটির মৌলিকত্ব স্বীকৃত। ”
ইবনে মাজাহ শরীফ বিশ্লেষনে অনেক ইমাম অনেক মতামত ও চুচেরা বিশ্লেষন করেছেন। কিন্তু কেউই উক্ত হাদীস শরীফ এর ব্যাপারে জাল বা মওজু বলেন নাই। সূতারাং অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমান হলো শবে বরাত সম্পর্কে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীস শরীফ খানা সহীহ। এবং সালাফীদের সকল আপত্তির উপশমও হবে আশাকরি।
পরিশেষে কিছু আয়াত শরিফ দিয়ে শেষ করে দিচ্ছি যারা মুসলমানদেরকে ইবাদত বিমুখ, মসজিদ বিমুখ, মাজার কবর জিয়ারত থেকে বিরত রাখতে চায় তাদের ব্যপারে মহান আল্লাহ পাক তিনি কি বলেছেন তা নিচের আয়াত শরীফগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়।
যারা নেক কাজে বাঁধা দেয় ও মসজিদকে ইবাদত শূণ্য করে দেয় তারা মুনাফিক ও জালেম।
এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا اللَّـهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ﴿٦٧﴾
অর্থঃ “মুনাফিক নর-নারী তারা পরস্পর পরস্পরকে মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং নেক কাজে বাঁধা দেয় এবং তাদের হাতকে বন্ধ করে দেয় অর্থাৎ হাতকে দান করা থেকে বিরত রাখে। তারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যায় অর্থাৎ হুকুম-আহকাম মানা থেকে গাফেল থাকে, ফলে মহান আল্লাহ পাক তিনিও তাদেরকে ভুলে যান। নিশ্চয়ই মুনাফিকরাই ফাসিক বা অবাধ্য।”
(পবিত্র সূরা ত্বওবা শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফঃ ৬৭)
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّـهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿١١٤﴾
অর্থঃ “সেই ব্যক্তি থেকে অধিক যালিম আর কে হতে পারে? যে মসজিদে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম স্বরণ করতে বাঁধা দেয় এবং মসজিদ গুলোকে বিরাণ করে দিতে চেষ্টা করে তাদের জন্য উচিত ছিল ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে মসজিদে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্চনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফঃ ১১৪)
আর যারা জালেম তাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি হেদায়েত দান করেন না। সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিয়েছেন,
إِنَّ اللَّـهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿١٤٤﴾
র্অথঃ "নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।”
যারা শবে বরাতের বিরোধিতা করবে অরথাত শরীয়তের ফায়সালাকে অমান্য করবে ...তাদের অবস্থা কুরানশরিফেই বর্ণনা করা হয়েছে । এখন মুনাফিক ও জালেমদের কি শাস্তি হবে ???
সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا ﴿١٣٨﴾
র্অথঃ “আপনি মুনাফিকদেরকে সুসংবাদ দিন, তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক বা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
(পবিত্র সূরা নিসা শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফঃ ১৩৮)
ছাগলের বাচ্ছা তোর বাপে হাদিস পড়ছেনি। কপি পেস্ট করে পোস্ট দিস। কয়টা হাদিসের কিতাব পড়েছিস। তোরে পেলে জুতা পিটা করতাম। সালা ছাগল।
ReplyDelete