প্রিয়
পাঠক,
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেমন অত্যাচারি জমিদার
ছিল তা আপনারা পূর্বেই জেনেছেন। না জেনে থাকলে এইখান
থেকে জেনে নেবেন। তার মৃত্যুর পর এই বিশাল জমিদারী দেখাশোনার জন্য ছেলেদের মধ্যে
থেকে তার মতই একজন অত্যাচারীকে বেছে নিয়েছিল দেবেন্দ্রনাথ।
রবিন্দ্রনাথ
জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহন করার পর, তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ থেকেও
বেশি অত্যাচারি হিসেবে প্রজাদের কাছে পরিচিতি লাভ করে।
রবীন্দ্রনাথের
আশি ভাগ আয় ছিল পূর্ব বাংলার মুসলমান প্রজাদের থেকে। পূর্ব -বাংলার মুসলমান প্রজাকুল
থেকে খাজনা আদায় করে পশ্চিম – বাংলার কলিকাতায় শান্তি
-নিকেতন,
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিল রবীন্দ্রনাথ।
কিন্তু পূর্ব-বাংলার প্রজাদের কল্যাণে রবীন্দ্রনাথের হাত ছিলো একেবারে
মুষ্টিবদ্ধ। সে কখনো চাইতোনা তার প্রজারা পড়ালেখা শিখুক। যার ফলশ্রুতিতে রবিন্দ্রনাথ
তার প্রজাদের জন্য একটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠা করেনি কখনো। রবীন্দ্রনাথের এই আদর্শ ছিলো
সুবিধাবাদি মানসিকতা এবং স্বার্থপরতা। যার কারণে
স্বদেশী-যুগের নেতৃবৃন্দ তাঁকে কখনোই বিশ্বাস করেনি, এমনকি
তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
টাকা-পয়সার
অভাবে যখন প্রজারা অনাহারে মারা যাচ্ছিল তখন তা দেখে রবীন্দ্রনাথের
প্রাইভেট সেক্রেটারি অমিয় চক্রবর্তী একবার রবিন্দ্রনাথকে বলেছিলো প্রজাসাধারণের জন্য
অল্প কিছু দান করতে যাতে প্রজাদের প্রাণটা অন্তত রক্ষা পায়। একথা শুনে রবিন্দ্রনাথ
ইজি চেয়ারে আধ শোয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছিলো- ‘‘বলো কি হে অমিয় ! আমার রথিন তাহলে খাবে কি?’’ (অন্নদা শংকর রায়ের রচনা থেকে উদ্ধৃত, রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, আবু জাফর, বইঘর, চট্টগ্রাম ১৯৮৫)
একবার
না-কি খাজনা মওকুফের ফলে এক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। যা
রবীন্দ্র ভক্তরা প্রজাদের প্রতি তাঁর মহানুভবতা প্রমাণ করে থাকে। কিন্তু ১৮৯৪ সালে
রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারীতে খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন একথা কেউ বলে না। গরীব মুসলমান
প্রজারা তাঁর পায়ে পড়েছিলো, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নির্মমভাবে
তা আদায় করে। পরে সেই বাড়তি আয়ের টাকায় মার্কিন কোম্পানীর কাছ থেকে ডেবরাকোল জমিদারী
খরিদ করেছিল।
এ
প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত প্রবন্ধকার শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার লিখেছিলেনঃ “জমিদার জমিদারই । রাজস্ব আদায় ও বৃদ্ধি, প্রজা নির্যাতন ও যথেচ্ছ আচরণের যেসব অস্ত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
বাংলার জমিদার শ্রেণীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠাকুর
পরিবার তাঁর সদ্ব্যবহারে কোনও দ্বিধা করেনি। এমনকি জাতীয়তাবাদী হৃদয়াবেগ ঔপনিষদিক ঋষি
মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি এবং হিন্দু মেলার উদাত্ত আহবানও জমিদার রবীন্দ্রনাথকে তাঁর শ্রেণীস্বার্থ
থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।“( শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার, রবীন্দ্রনাথ ও রাজনৈতিক গ্রন্থ দ্রষ্টব্য)।
0 facebook: