ভূমিকাঃ পবিত্র
দ্বীন ইছলাম উনার মূলনীতি হলেন, “মহান আল্লাহ
তা’য়ালা যা হালাল
করেছেন তা-ই হালাল, আর যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম”। এই বিধান ক্বিয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় এবং এর
উপর ইমান রাখা ফরয। এই ইমানেরই একটি অপরিহার্য অংশ হলেন,
“বিজাতীয় ও বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি, উৎসব, প্রথা
ও সংস্কৃতি থেকে মুক্ত থাকা”।
হিজরি নববর্ষ, ইংরেজি নিউ ইয়ার, নওরোজ, পহেলা বৈশাখ, এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র একটি কালচারের নাম নয় বরং তা একটি আকীদাগত
বিপর্যয়ের
নাম। এগুলো এমন এক অনুষ্ঠান, যা মূলত মজুসী (অগ্নিপূজক),
হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইহুদী, নাছারা ও অন্যান্য বিধর্মীদের সাথে সম্পৃক্ত, যার মধ্যে শিরক, বিদআত ও কুফরী স্পষ্টভাবে বিরাজমান।
পবিত্র দ্বীন ইছলাম শুধু এইসব উৎসবকে নিষিদ্ধ করেননি, বরং যে ব্যক্তি “জেনে-বুঝে
ও ইচ্ছাকৃতভাবে” এই ধরনের কোনো “নববর্ষ পালন করে, বিশেষ করেঃ পহেলা বৈশাখে অংশগ্রহণ করে,
ঐ দিনকে উৎসবের দিন মনে করে বা রেওয়াজে শামিল হয়, সে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামচ্যূত মুরতাদ হয়ে যায়।
এ প্রবন্ধে আমরা অত্যন্ত গভীরভাবে তা বিশ্লেষণ করবো ইনশাআল্লাহঃ
- নববর্ষের (নওরোজ, পহেলা বৈশাখ, থার্টি
ফার্স্ট নাইট) ইতিহাস ও উৎস কোথা থেকে এসেছে?
- কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোকে নববর্ষ পালন
করার শরয়ী হুকুম কী?
- এটি কুফরী,
বিদআত ও হারামের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দলিল কী?
- ইমামগণের কিতাবসমূহে (তাবইনুল হাকায়েক, ফাতাওয়া শামী, আল ইকনা, ফিকহে আকবার ইত্যাদি) কী ফয়সালা
রয়েছে?
- এমন কাজ করলে একজন ব্যক্তি কেন মুরতাদ হয়ে যায়
এবং তার দুনিয়া ও আখিরাতের কী পরিণাম হয়?
মূল উদ্দেশ্যঃ এই
লেখার উদ্দেশ্য কারো প্রতি বিদ্বেষ নয় বরং উম্মতের ঈমান রক্ষা করা, এবং শিরক, কুফর ও বিজাতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক রূহানী যুদ্ধ চালানো। বিশেষ করে
যারা নামধারী মুসলমান হয়ে, অজান্তে কিংবা সংস্কৃতির নামে
এই ভয়াবহ পাপের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য এই
প্রবন্ধ হতে পারে সতর্কতার আলো।
বিশেষ বার্তাঃ যারা
বলেন, “পহেলা বৈশাখ তো বাঙালি সংস্কৃতি, আমরা
তো শুধু আনন্দ করি, পূজা
করি না,
নওরোজ তো এখন কালচারাল”, তাদের
উদ্দেশ্যেও এই লেখায় থাকবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও দলিলভিত্তিক জবাব।
নওরোজ ও পহেলা বৈশাখের ঐতিহাসিক পটভূমি ও ধর্মীয়
উৎসঃ
নওরোজের উৎস ও পারসিক শিরকী ব্যাকগ্রাউন্ডঃ “নওরোজ” একটি পারস্যভিত্তিক উৎসব যা মূলত মজুসি (অগ্নি উপাসক) ধর্মের ধর্মীয় দিন হিসেবে
পালিত হতো। এটি বসন্তের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং পারস্য (বর্তমান ইরান)
থেকে এর সূচনা।
দলিলঃ ঐতিহ্যমতে
প্রাচীন পারস্যের সম্রাট জামে হাশীদ (জমশীদ) খৃষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নওরোজ প্রবর্তন
করে। এটি ছিল মজুসীদের অগ্নি পূজা, শিরকি সংস্কার ও জাতিগত কুফরী ঐতিহ্যের অংশ। (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৬০৯, প্রকাশনায়: ইসলামী ফাউন্ডেশন।)
শিয়া সম্প্রদায়ের বিস্তার এবং ভারত উপমহাদেশে
নওরোজের আগমনঃ পারস্য থেকে শিয়া
সম্প্রদায়ের মাধ্যমে নওরোজের রেওয়াজ ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।
ঐতিহাসিক দলিলঃ মুঘল সম্রাট হুমায়ুন পারস্যের শিয়া সম্রাট শাহ তাহমাসের সহযোগিতায়
ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর ভারতীয় রাজসভায় ইরানী শিয়াদের প্রভাব ব্যাপকভাবে বিস্তৃত
হয়। তখন থেকেই আগ্রা ও দিল্লীতে ‘নওরোজ’ দিনটি রাষ্ট্রীয় ভোজ, আতশবাজি ও মেলা সহকারে পালিত হতো। (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৬০৯)
সম্রাট আকবর ও ‘দ্বীনে ইলাহী’র মাধ্যমে
নববর্ষ উদযাপনঃ আকবর ‘দ্বীনে ইলাহী’ নামে এক শিরকি মতবাদ চালু
করে, যেখানে সে
ফার্সি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে হিন্দু ধর্মের পূজা ও সংস্কৃতি মিলিয়ে “আদর্শ মানবতা দিবস” হিসেবে নববর্ষ উদযাপন
বাধ্যতামূলক করে।
দলিলঃ সম্রাট
আকবর নতুন সন ‘আকবরী
সন’ বা ‘ফসলী সন’ প্রবর্তন করে। তার ফরমানে সর্বপ্রথম ‘নওরোজের
কয়েকদিন’ জাতীয় ছুটি ঘোষিত হয় এবং ভোজ, আনন্দ-উৎসব করার নির্দেশ দেওয়া হয়।” (ইসলামী বিশ্বকোষ, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৬০৯)
পহেলা বৈশাখঃ হিন্দু-বৌদ্ধ-উপজাতীয় পূজার মিশ্রণ, পহেলা
বৈশাখে কোন “বাঙালিয়ানা” নেই, বরং এদিন রয়েছে, পূজামূলক অনুষ্ঠানসমূহঃ
১) হিন্দুদের ঘটপূজা
২) হিন্দুদের গণেশ পূজা
৩) হিন্দুদের সিদ্ধেশ্বরী পূজা
৪) হিন্দুদের ঘোড়ামেলা
৫) হিন্দুদের চৈত্রসংক্রান্তি পূজা-অর্চনা
৬) হিন্দুদের চড়ক বা নীল পূজা বা শিবের উপাসনা ও
সংশ্লিষ্ট মেলা
৭) হিন্দুদের গম্ভীরা পূজা
৮) হিন্দুদের কুমীরের পূজা
৯) হিন্দুদের অগ্নিনৃত্য
১০) ত্রিপুরাদের বৈশুখ
১১) মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব
১২) চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজাউৎসবগুলোর
সম্মিলিত নাম বৈসাবি)
১৩) হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা
১৪) মজুসি তথা অগ্নি পূজকদের নওরোজ
১৫) হিন্দুদের বউমেলা
১৬) হিন্দুদের মঙ্গলযাত্রা
১৭) হিন্দুদের সূর্যপূজা
দেখা যাচ্ছে, পহেলা বৈশাখে কাফিরদের বিভিন্ন পূজা ও অনুষ্ঠান বিদ্যমান, কিন্তু মুসলমানদের এই দিনে কোন অনুষ্ঠানই নাই। তাহলে মুসলমান কেনো
শিরকী অনুষ্ঠানের দিন কে বর্জন করে না???
অথচ হযরত ইমাম আবু হাফস্ কবীর রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেছেন, নওরোজ বা নববর্ষ উপলক্ষে যদি
কেউ একটি ডিমও দান করে তাহলে তার ৫০ বছরের আমল থাকলেও তা বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থাৎ নওরোজ বা
নববর্ষ পালনের কারণে তার জিন্দেগীর সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। অতএব, পহেলাবৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ পোশাক পরিধান করা,
ব্যবসা-বাণিজ্য
করা, দ্রব্যমূল্যে বিশেষ ছাড় দেয়া, ইলিশ-পান্তা খাওয়া,
ফলমুল
খাওয়া সবকিছুই বিজাতীয় ও বিধর্মীয় সংস্কৃতির সাথে তাশাব্বুহ বা মিল হিসেবে হারামের
অন্তর্ভুক্ত। যদি
কোনো মুসলমান তাদের সাথে মিল রেখে পহেলাবৈশাখ পালন করে তবে শরীয়ত-এর দৃষ্টিতে সে
আর মুসলমান থাকতে পারে না যদিও তা কুরআন, নফল নামায বা মিলাদ শরীফ পড়েও করে থাকে। অর্থ্যাৎ তার জীবনের
সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
কোন বছরের পহেলা দিবস পালন করা মজুসী বা অগ্নি উপাসকদের
একটি একান্ত উৎসবের দিন। পরবর্তীতে অবশ্য অন্যান্য মুশরিক ধর্ম যেমনঃ বৌদ্ধ, হিন্দু ও উপজাতিরাও এ দিবসটিকে উৎসব ও পূজার দিন হিসেবে
গ্রহণ করে।
তাই পহেলা বৈশাখ দুটি কারণে হারাম ও কুফরীঃ
- এটি মজুসীদের অনুকরণ
- এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও উপজাতিদের পূজা
ও উৎসবের সাথে সদৃশ্য
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম কি কাফিরদের
সাদৃশ্যপূর্ণ আমল করার অনুমতি দেন, পবিত্র কুরআন শরিফ আর
হাদীস শরিফ এ সম্পর্কে কি বলেন?
শরয়ী হুকুম ও কুফরী ফয়সালাঃ মহান আল্লাহ তায়ালা
কালামুল্লাহ শরীফে বলেনঃ (وَمَن
يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَـٰمِ دِينًۭا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى
ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَـٰسِرِينَ) যে লোক সম্মানিত দ্বীন ইছলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মীয় রিতিনিতি
তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে
না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত। (ছুরা আলে ইমরান য়ালাইহিছ ছালামঃ ৩:৮৫)
ব্যাখ্যাঃ নববর্ষ
উদযাপন - তা হোক নওরোজ, পহেলা বৈশাখ, থার্টিফার্স্ট নাইট সবই বিজাতীয় দ্বীনের অংশ। এসব পালন করা মানে
ইছলামের বাইরে অন্য এক কালচার ও রীতিনীতিকে গ্রহণ করা, যা
কুরআনের ভাষায় অগ্রহণযোগ্য এবং ধ্বংসের কারণ। মহান আল্লাহ তায়ালা আরো
বলেনঃ (ٱلْيَوْمَ
أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ
ٱلْإِسْلَـٰمَ دِينًۭا) আজ আমি
তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত পূর্ণ করেছি এবং আমি
তোমাদের জন্য ইছলামকেই দ্বীন হিসেবে পছন্দ করেছি। (সূরা আল-মায়িদাহ ৫:৩)
ব্যাখ্যাঃ যেহেতু
দ্বীন ইছলাম পূর্ণাঙ্গ, তাই এর বাইরে কোনো রীতি, নিতি, উৎসব, ক্যালেন্ডার, নববর্ষ
ইত্যাদি উদ্ভাবন বা পালন করা সরাসরি “বিদআত
ও কুফর”।
এই সবকিছু মিলিয়েই পহেলা বৈশাখ মূলত একটি বহু শিরক,
কুফরি ও বিজাতীয়তা পূর্ণ দিবস যা কোনোভাবেই ইসলামী সংস্কৃতি বা উম্মতের
ঐতিহ্য হতে পারে না। এর পরেও যারা ভাব্বে যে আমিতো মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর ঈমান এনেছি,
আমিতো উনাকে অস্বীকার করছিনা, নামাজ রোজা করছি, অনলাইনে আমি মুজাহিদ, জীহাদের
চেতনা রাখি, তাহলে তারা জানা প্রয়োজন যে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ (وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم
بِٱللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ) অধিকাংশ মানুষ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর ঈমান আনা স্বতেও (শিরক) করে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (ছুরাহ ইউসুফ য়ালাইহিছ ছালামঃ ১২:১০৬)
ব্যাখ্যাঃ এই
আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কেউ যদি আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী হয়েও বিজাতীয় রীতিতে শামিল হয়,
তাহলে সে শিরক করলো, কারণ তা “তাশাব্বুহ বিল কুফফার” তথা “কাফেরদের তাহজিব তামাদ্দুনে মিল রাখা, যা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সঙ্গে অন্যের সম্মান ভাগ করে নেওয়ার শামিল। তাফসিরে কুরতুবি ও তাফসিরে ইবনে কাসীর
অনুযায়ীঃ এখানে শিরক বলতে শুধু মূর্তিপূজা বোঝানো
হয়নি; বরং “তাশাব্বুহ বিল কুফফার” কাফেরদের ধর্মীয় রীতি, উৎসব, সংস্কৃতি
অনুসরণ করাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মানুষ নামধারী মুসলমান হলেও, যখন সে মুশরিকদের মতো আচরণ করে,
তখন সে শিরকে লিপ্ত হয়।
হাদিছ শরীফে এসেছেন, শিরক মানুষের মধ্যে এমনভাবে ঢুকে যাবে, যেমন পিঁপড়ের পদচারণাঃ (الشِّرْكُ
فِيكُمْ أَخْفَى مِنْ دَبِيبِ النَّمْلِ) মানে, তোমাদের মধ্যে শিরক এমন গোপনে প্রবেশ করে, যেমন পিঁপড়ের চুপচাপ চলাফেরা। (মুসনাদে আহমাদঃ ২২৪৪৯)
ফয়সালাঃ আজ
যারা “আমরা তো শুধু
কালচার করি”, “আমরা তো শুধু আনন্দে শামিল হই” তারা আসলে অজান্তেই “নিরব শিরকে” লিপ্ত হচ্ছে।
হাদিছ শরীফে এসেছেন, শিরককে শিরক মনে না করলেও ঈমান থাকবে নাঃ (يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لَا يَبْقَى مِنَ
الْإِسْلَامِ إِلَّا اسْمُهُ) মানুষের
উপর এমন সময় আসবে, যখন
ইসলামের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না; শুধু নামটি ছাড়া। (মুসনাদে বাযযার, হাদীস ২৭৫২)
আর বিজাতীয়দের
অনুসরণ ঈমান নষ্ট করে দেয়, খোদ মহান
আল্লাহ তায়ালাই বলছেনঃ (وَلَا
تَرْكَنُوٓا۟ إِلَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ) তোমরা যালিমদের দিকে
ঝুঁকো না, তা না হলে আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে।
(ছুরাহ হুদ, আয়াত
১১৩) মুশরিকদের রীতিতে ঝুঁকেও কেউ যদি নিজেকে নিরাপদ মনে
করে, সে আসলে গাফেল।
ইমাম ইবনে হজর রহমতুল্লাহ (মিরকাত শারহ মিশকাত): (مَن كَرَّهَ
عَلَيْهِمْ أَعْيَادَهُمْ وَلَمْ يُعَظِّمْهَا فَقَدْ سَلِمَ، وَمَن فَرِحَ بِهَا
فَقَدْ أَشْرَكَ) যে ব্যক্তি মুশরিকদের উৎসবকে সম্মান না দিয়ে, ঘৃণা করে, সে নিরাপদ। আর যে ব্যক্তি এতে আনন্দ পায়, সে মূলত শিরকে লিপ্ত রয়েছে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ,
শারহু
হাদীস “লাইসা মিন্না মান্
তাশাব্বাহ্”, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৫)
অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সর্বতম করেই প্রেরণ
করেছে, তিনি বলেনঃ (كُنتُمْ
خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِۖ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ
عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِۗ) (মানুষের মধ্যে) তোমরা হচ্ছো সেই সর্বশ্রেষ্ট উম্মত, যাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা
সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো
এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি ঈমান রাখো। (সূরা আলে ইমরান ৩:১১০)
আর হাদিছ শরীফেও স্পষ্ট নিষেধ রয়েছেঃ (لَيْسَ
مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لاَ تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلا
بِالنَّصَارَى) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদেরকে ছেড়ে অন্য কারো রীতিনীতি গ্রহণ করে। তোমরা ইহুদীদের ও খ্রিস্টানদের রীতিনীতি গ্রহণ করো না। (আবু
দাউদঃ ৪০৩১, মিশকাতঃ ৪৩৪৭) অন্য আরেকটি হাদিছ শরীফে
এসেছেনঃ (مَنْ
تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ) যে ব্যক্তি কোন কওমের (সম্পদ্রয়ের, রীতিনীতি) অনুসরণ-অনুকরন করবে,
সে তাদের দলভুক্ত হবে। (আবু
দাউদঃ ৩৫১২)
হজরত উমর
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ১ টা ঘটনাঃ (الحديث:عَنْ
جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حِينَ أَتَاهُ عُمَرُ،
فَقَالَ: إِنَّا نَسْمَعُ أَحَادِيثَ مِنْ يَهُودَ تَعْجِبُنَا، أَفَتَرَى أَنْ
نَكْتُبَ بَعْضَهَا؟ قَالَ: أَمُتَهَوِّكُونَ أَنْتُمْ، كَمَا تَهَوَّكَتِ
الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، لَقَدْ جِئْتُكُمْ بِهَا بَيْضَاءَ نَقِيَّةً، وَلَوْ
كَانَ مُوسَى حَيًّا، مَا وَسِعَهُ إِلَّا أَنْ يَتَّبِعَنِي) হযরত জাবির রদ্বিআল্লাহু
আনহু বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম উনার কাছে হযরত ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
এসে বললেন, আমরা
ইহুদীদের এমন কিছু কথা শুনি যেগুলো আমাদের ভালো লাগে। আপনি কি মনে করেন, আমরা কি তা লিখে রাখতে পারি? রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম বললেন, তোমরা কি বিভ্রান্ত হয়েছো যেমন ইহুদি-নাসারা
বিভ্রান্ত হয়েছিল? আমি তো তোমাদের কাছে পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল দ্বীন নিয়ে এসেছি। যদি মূসা য়ালাইহিছ
ছালাম জীবিত থাকতেন, তিনিও আমার অনুসরণ ছাড়া উপায়
পেতেন না। (মুসনাদে আহমাদঃ ১৪৬৩১, দালায়িলুন নাবুওয়্যাহ ২:৫২৪, মিশকাত ১১০)
বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য হারামঃ (الحديث:عَنْ
عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ব্যতীত অন্যদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (তিরমিযী শরীফ ২১৮৫, মিশকাত
শরীফ ৪৩৪৭)
আশুরা ও সাদৃশ্য বর্জনের হিকমতঃ ইহুদীরা একদিন আশুরার রোযা রাখত। রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম দুই দিন রোযা রাখতে বললেন যাতে
ইহুদীদের সাথে মিল না হয়। (মুসলিম: ১১৩৪)
চিন্তা করা যায়? মানে ইবাদতের বেলায় ও আহলে কিতাবের সাথে সাদৃশ্য
যাতে না হয় সেকারণে ১ টার যায়গায় ২ টা করে দিচ্ছেন, সেখানে মুশরিকদের ইবাদত পালনের
ফলাফল কি হতে পারে? আর কাফিরদের উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের হাশর
তাদের সাথেই হবেঃ (الحديث:مَنْ
تَنَافَى أَرْضَ الْأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانَهُمْ حُشِرَ
مَعَهُمْ) যে
ব্যক্তি অমুসলিমদের দেশে বসবাস করে এবং তাদের নওরোজ বা মেহেরজান পালন করে, সে তাদের সাথেই হাশরে উঠবে।
(সুনান আল-বায়হাকীঃ ৯/২৩৪, ইবনে তাইমিয়া
ইকতিদা সিরাতুল মুস্তাকীম ১/২১৮)
ইমামগণের ফিকহি ফয়সালাঃ
- ইমাম
আবু হাফস আল-কাবীর রহমতুল্লাহ (হানাফি
ফকীহ): (قَالَ أَبُو
حَفْصٍ الْكَبِيرُ: "مَنْ أَهْدَى فِي النَّيْرُوزِ بَيْضَةً إِلَى مُشْرِكٍ
تَعْظِيمًا لِلْيَوْمِ، فَقَدْ كَفَرَ بِاللَّهِ تَعَالَى) যে ব্যক্তি নওরোজ উপলক্ষে কোনো মুশরিককে একটি ডিমও উপহার দেয়, তা যদি এই দিনকে সম্মান দেখিয়ে
হয়, তবে সে আল্লাহ তা’য়ালার
প্রতি কুফরি করেছে। (আদ্-দুররুল মুখ্তার মা‘আর্-রাদ্দিল মুখ্তার, ৬/৭৫৪, আল-খিলায়া
৩/৩৮৫)
- ইমাম ফাখরুদ্দীন আয-যাইলাঈ আল-হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনঃ (بَيْعُ مَا يُعْمَلُ فِيهِ مِنَ
التَّصَاوِيرِ وَالصَّلَابِ لِلْمَجُوسِ حَرَامٌ، وَلَا يَجُوزُ إِعَانَةُ
الْكُفَّارِ عَلَى أَعْيَادِهِمْ، لِأَنَّهُ تَعْظِيمٌ لِشَعَائِرِهِمْ) মজুসীদের উৎসব উপলক্ষে মূর্তি বা ক্রুশ
বিক্রি করা হারাম। কাফিরদের উৎসব পালনে সহযোগিতা করাও জায়েয নয়,
কারণ এটি তাদের রীতিনীতির সম্মান প্রদর্শন। আরো বলেন (النَّيْرُوزُ
وَالْمِهْرَجَانُ يَكُونَانِ مِنْ أَعْيَادِ الْمُشْرِكِينَ، فَلَا يَجُوزُ
الْبَيْعُ فِيهِمَا، وَلَا الشِّرَاءُ، وَلَا الْهَدَايَا فِيهِمَا) নওরোজ ও মেহেরজান মুশরিকদের উৎসব। এসব
দিনে ক্রয়-বিক্রয় বা উপহার আদান-প্রদান কোন কিছুই বৈধ নয়। (তাবইনুল হাক্বায়িক শারহু কানযিদ দাক্বায়িক, ৬/২২৮)
ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়ার
রায়ঃ (إِنَّ
الِٱحْتِفَالَ بِأَعْيَادِ ٱلْكُفَّارِ هُوَ مِنْ أَعْظَمِ ٱلْمُنْكَرَاتِ، وَمِنْ
شَعَائِرِ ٱلْكُفْرِ، وَمَنْ فَعَلَهَا مُوَافَقَةً لَهُمْ فَقَدْ أَشْرَكَ أَوْ
كَفَرَ أَوْ فَسَقَ) কাফেরদের উৎসব উদযাপন করা সবচেয়ে বড় গর্হিত কাজগুলোর অন্তর্ভুক্ত, এটি কুফরীর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। আর যে ব্যক্তি তা তাদের অনুসরণের নিয়তে পালন করে, সে শিরকে লিপ্ত হয়েছে,
কিংবা কাফের
হয়ে গেছে, অথবা ফাসিক হয়েগেছে। (ইক্তিদ্বাওস্-ছিরাতিল মুস্তাক্বীম
লিমুখালাফাতি আছহাবিল জাহীম, ১/৪৫৪) আরো বলেছে (لَيْسَ لِلْمُسْلِمِينَ أَنْ
يُشَابِهُوا الْكُفَّارَ فِي شَيْءٍ مِنْ أَعْيَادِهِمْ، كَمَا لَا
يُشَارِكُونَهُمْ فِي سَائِرِ عِبَادَاتِهِمْ) মুসলমানদের জন্য কাফিরদের উৎসবের কোন কিছুতেই তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখা
বৈধ নয়, যেমন তাদের
ইবাদতেও অংশগ্রহণ করা জায়েয নয়। (ইক্তিদ্বাউস সিরাতিল মুস্তাকীম লিমুখালাফাতি আসহাবিল জাহীম
খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১৮)
ফিকহি সিদ্ধান্তঃ নববর্ষ, পহেলা
বৈশাখ, নওরোজ - এগুলোর মধ্যে শিরকী তাসাব্বুহ রয়েছে। এগুলোতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃত হয় এবং
জেনে বুঝে করে, তাহলে
“মুরতাদ” হয়ে যাবে। শরীয়তের
দৃষ্টিতে সে আর মুসলমান নয়, এবং তার “হজ্জ, নামাজ, রোযা, স্ত্রী-পুত্র ও জানাজা” সব বাতিল হয়ে যায়। অতএব নওরোজ,
পহেলা বৈশাখ, হ্যাপি নিউ ইয়ার এগুলো
পালন
করা কুফরী ও মুরতাদ হওয়ার
উপযোগী। ইচ্ছাকৃতভাবে এসব
পালন করা হলে ঈমান নষ্ট হয়, স্ত্রী তালাক হয়, জানাযা হয় না, দাফন হয় না। একমাত্র ইসলামে অনুমোদিত উৎসব, দিবস পালন যায়েজ, যার
রূট কুরআন ছুন্নাহ, ইছলাম, মুছলিম।
উপসংহারঃ
নওরোজ ও পহেলা বৈশাখ - দুটোই “ঐতিহাসিকভাবে মুশরিকদের উৎসব”। এগুলোর
মধ্যে রয়েছে “শিরক ও কুফরী কাজ” যা কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ হতে পারে না। ইসলাম
কোনোদিন এই দিবস উদযাপনের অনুমতি দেন নি, বরং “তাশাব্বুহ
বিল কুফফার” হিসেবে “হারাম ও কুফরী” বলে চিহ্নিত
করেছে। নববর্ষ উদযাপন, সে যেই নামে হোক, ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে স্পষ্ট কুফরী ও মুরতাদ হওয়ার কাজ।
বিভ্রান্তি ও প্রচলিত ভুল যুক্তির
খণ্ডন (উত্তরসহ):
বিভ্রান্তি ১: “আমরা তো পূজা করি না, শুধু আনন্দ করি।”
জবাবঃ আনন্দ
করাই যদি হালাল হত, তাহলে
রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম মদীনা শরীফে গিয়ে জাহেলী যুগের
আনন্দ উৎসবকে বাতিল করতেন না। হাদীস
শরীফে এসেছেঃ
(عَنْ
أَنَسٍ قَالَ: قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ
يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: "قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللَّهُ بِهِمَا خَيْرًا
مِنْهُمَا: يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ) আনাস রদ্বিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম মদ্বীনায় পৌঁছে দেখতে পান
যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি দিন (নায়মূক ও মেহেরজান, নামক) খেলাধূলা ও
আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি
ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম জিজ্ঞাসা করেন, এই দুই
দিন কিসের (খুশির দিন)? তারা বলেন, জাহেলী যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব
করতাম। রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলহি ওয়াছাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা
তোমাদেরকে এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুইটি উত্তম দিন দান করেছেন এবং তা হলঃ
কোরবানীর ঈদ এবং রোযার ঈদ। (আবূ দাঊদ ১১৩৪, আহমাদ ১৩৬২২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৯১)
ফয়সালাঃ শুধু
আনন্দ বলেও শিরকী উৎসব পালন করা হারাম;
শরীআত কেবল দ্বীনি আনন্দকে বৈধতা দিয়েছেন, তাগুতি বা কুফরী উৎসবের আনন্দকে
নয়।
উক্ত হাদিছ শরীফ একটা স্পষ্ট দলিল, খেলাধুলা ও আনন্দ-উৎসব জাহেলি জামানার সাথে
নিছবত থাকায় তা বাতিল করে দেওয়া হলো, আজকে যারা বিভিন্ন নাপাক মুর্তি নিয়ে নাপাক
অমঙ্গলশোভাযাত্রায় যোগ দিচ্ছে, যা ১০০% শিরক, তার ফলাফল কি?
বিভ্রান্তি ২: “আমরা তো বাঙ্গালী, এটা আমাদের কালচার!”
জবাবঃ যা
কিছু “কালচার”
নামে চালানো হচ্ছে, তা যদি “ধর্মীয় রীতিনীতির বিরোধিতা করে”, তাহলে তা বাঙালিত্ব নয়, গোমরাহি ও কুফরি। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ (وَ اِذَا قِیۡلَ لَهُمُ
اتَّبِعُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ قَالُوۡا بَلۡ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلۡفَیۡنَا عَلَیۡهِ
اٰبَآءَنَا ؕ اَوَ لَوۡ كَانَ اٰبَآؤُهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ شَیۡئًا وَّ لَا یَهۡتَدُوۡنَ) যখন তাদেরকে
বলা হয়, মহান আল্লাহ তা’আলা যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তা মেনে চলো, (তখন) তারা বলে,
আমরা তো শুধু সে পথই অনুসরণ করবো যার ওপর আমরা আমাদের বাপ দাদাদের পেয়েছি; (তবে
কি) তাদের বাপ-দাদারা যদি (এ ব্যাপারে) কোনো জ্ঞান-বুদ্ধির পরিচয় না দিয়ে থাকে, এবং
তারা যদি হেদায়াতও না পেয়ে থাকে (তবুও কি তারা তাদের অনুসরণ করবে? (ছুরাহ আল-বাক্বরহঃ ২:১৭০)
ফয়সালাঃ “পুরনো সংস্কৃতি” বলতে গোমরাহীকে গ্রহণ করা
জাহিলিয়াতের বৈশিষ্ট্য,
এটি ইছলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
বিভ্রান্তি ৩: “ইসলাম তো সহনশীল ধর্ম! তাই সব
ধর্মের উৎসবকে সম্মান করা উচিৎ”।
জবাবঃ ইসলাম
মানুষকে সহানুভূতি শিখায়, কিন্তু “দ্বীনের মৌলিকত্ব
বিসর্জন দিয়ে অন্য ধর্মকে সম্মান করা শিরক ও কুফর। মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ (لَكُمْ
دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ) তোমাদের
জন্য তোমাদের দ্বীন, আর আমার জন্য আমার দ্বীন। অর্থাৎ “তোমাদের পথ ও পন্থা
তোমাদের জন্য সে পথে চলার পরিণতি তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে আর আমার জন্য আমার পথ যে
সত্য পথে চলার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ পথ ছেড়ে আমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে মোটেই প্রস্তুত নই”। (ছুরাহ আল-কাফিরুনঃ আয়াত ১০৯:৬)
ফয়সালাঃ দ্বীনের
দিক থেকে ইছলামে সহনশীলতার নামে মুশরিকদের ধর্মীয়
উৎসবকে সম্মান করাও শিরকের পথে ধাবিত করে।
বিভ্রান্তি ৪: “তাহলে তো প্লেন, মোবাইল, কম্পিউটার এগুলোও কাফিরদের বানানো!
সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না?”
জবাবঃ একটি
বিষয় হলো জিনিসপত্র (Technology), আর একটি হলো ধর্মীয় রীতি (Culture/ Aqeedah) দুইটাই
সম্পূর্ণ ভিন্ন
জিনিস। ফিকহি ব্যাখ্যাঃ
- কাফিরদের তৈরি
জিনিস ব্যবহারঃ জায়েয (যদি হারাম উদ্দেশ্যে না হয়)।
- কাফিরদের রীতিনীতি অনুসরণঃ হারাম/কুফরি
(তাশাব্বুহ বিল কুফফার) যদিও তা ভালো নিয়তে হয়।
ইমাম বায়হাকি উনার শুয়ায়বুল ঈমানে একটি হাদিছ বর্ননা
করেছেন এই মর্মে যেঃ (إِنَّ الدُّنْيَا خُلِقَتْ لَكُمْ، وَأَنْتُمْ خُلِقْتُمْ لِلآخِرَةِ) নিশ্চয়ই দুনিয়ার সমস্ত কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, আর তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে
আখিরাতের জন্য।
ফয়সালাঃ মালপত্র
ব্যবহার জায়েয হতে পারে, কিন্তু কাফিরদের তাহজিব তামাদ্দুন, কৃষ্টি কালচার, আমল আকীদা ও আচার গ্রহণ করা সম্পূর্ণ
হারাম।
বিভ্রান্তি ৫: “সবাই করছে, আমরা না করলে বেমানান লাগে”
জবাবঃ কিয়ামতের
দিন মহান আল্লাহ তা’য়ালা
কাউকে জিজ্ঞেস করবেন না “তোমার আশেপাশে কে কী করছিলো? বরং জিজ্ঞেস করবেন “তুমি কী করেছিলে?” মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ (وَكُلُّهُمْ ءَاتِيهِ
يَوْمَ ٱلْقِيَـٰمَةِ فَرْدًۭا) কিয়ামতের
দিন প্রত্যেকেই
মহান আল্লাহ তা’য়ালা উনার দরবারে একা একাই হাজির হবে। (ছুরাহ মারইয়াম য়ালাইহাছ ছালাম
১৯/৯৫)
ফয়সালাঃ গোমরাহি
ও বিদআতকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অজুহাতে বৈধ করা ইবলীসের পথ।
উপসংহারঃ নববর্ষ
উদযাপনের পক্ষে প্রচলিত সকল যুক্তি
❌ কুরআন বিরোধী
❌ ছুন্নাহ বিরোধী
❌ ছ্বহাবায়ে কেরাম ও ছ্বলফে ছ্বলেহীন উনাদের পথ বিরোধী।
নববর্ষ পালনকারীর ঈমান-আমলের শারঈ পরিণামঃ মুরতাদ, আমল বাতিল ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (وَ مَنۡ یَّرۡتَدِدۡ
مِنۡكُمۡ عَنۡ دِیۡنِهٖ فَیَمُتۡ وَ هُوَ كَافِرٌ فَاُولٰٓئِكَ حَبِطَتۡ
اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ وَ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ
هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ) তোমাদের
কেউ যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায় এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তবে দুনিয়া ও আখিরাতে তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে, এবং সে জাহান্নামবাসী হবে, সেখানে (সে) চিরকালই থাকবে। (ছুরাহ আল-বাক্বরহ ২:২১৭)
আর হাদিছ শরীফে এসেছেনঃ কুফরি ফিতনা এতই ছড়িয়ে পড়বে যে, একদিনে দ্বীন বিক্রি করে দেওয়া
হবে।
রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেনঃ (بَادِرُوا
بِالأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا
وَيُمْسِي كَافِرًا وَيُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا يَبِيعُ أَحَدُهُمْ
دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَ) তোমরা দ্রুত (নেক) আমল করে নাও এমন ফিতনার আগমনের পূর্বে, যা হবে
অন্ধকার রাত্রির খণ্ড খণ্ড অংশের মতো (অর্থাৎ অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর ও ভয়ানক)। তখন এমন হবে (যে) এক
ব্যক্তি সকালবেলা থাকবে মুমিন, আর সন্ধ্যাবেলায় কুফরীতে লিপ্ত হবে। আবার সন্ধ্যায় থাকবে মুমিন,
আর সকালে কুফরীতে পতিত হবে। তারা তাদের দ্বীনকে বিক্রি করে দেবে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী স্বার্থ বা সম্পদের
বিনিময়ে।
(মুসলিম শরীফঃ ১১৮)
ইমামদের ফাতওয়ার কিতাবে এসেছে, উনারা এই মর্মে ফাতওয়া
দিয়েছেনঃ নববর্ষ পালনকারীর ঈমান বাতিল, আমল বাতিল, হজ্জ বাতিল, স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে, এর পর সন্তান জন্ম নিলে জারজ বলে
গণ্য হবে। জানাজা পড়া যাবে না, মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।
ওয়ারিস স্বত বাতিল, হক্ব থাকবে না, জানাজা পড়লে সেই জানাজাপাঠকারী ইমামও মুরতাদ।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/২৭৭; ফাতাওয়া শামী ৬/৭৫৪; তাবইনুল হাকায়েক ৬/২২৮)
অতএব পহেলা
বৈশাখ, হ্যাপি নিউ ইয়ার, নওরোজ ইত্যাদি শিরকি আমলে শামিল
হয়ে যারা মুমিন থেকে মুশরিক হতে চায় তাদের ক্ষেত্রে এই হাদীস সুস্পষ্ট দলিল। তাই নববর্ষ
পালনকারী ব্যক্তি যদি জেনে-বুঝে ও ইচ্ছাকৃতভাবে এই কুফরী রীতি নিতিতে অংশগ্রহণ করে তাহলে তার উপর “তাকফির” জারী হবে এবং সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। আর এটি কোনো অতিরঞ্জন বিষয় নয়,
বরং পূর্ববর্তী আয়ীম্মায়ে কেরাম রহমতুল্লাহী য়ালাইহিম উনাদের ফতোয়ার ভিত্তিতে করা ফয়সালা, যা হাজারো মানুষকে শিরক ও কুফরি থেকে রক্ষা করতে
পারে।
যারা শিরকি পহেলা বৈশাখ পালন করে মুর্তাদ হবে, তাদের পরিণতি কি?
ফাতাওয়া হিন্দিয়াঃ (إِذَا ارْتَدَّ أَحَدُ
الزَّوْجَيْنِ، انْفَسَخَ النِّكَاحُ مِنْ سَاعَتِهِ)
যদি স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে কেউ মুরতাদ হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়াঃ ২
খন্ড ২৭৭ পৃষ্টা)
হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, যদি স্বামী বা স্ত্রী পহেলাবৈশাখ
পালন করে মুরতাদ হয়, তাহলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক তৎক্ষণাৎ বাতিল হয়ে যাবে। সন্তান
জারজ হওয়ার শর্তঃ “যদি মুরতাদ হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রী কুরবতে খাছে ছ্বহবত নেয় (সহবাস
করে) এবং তারা জানে যে তাদের নিকাহ বাতিল হয়েছে মর্মে ফাতওয়া আছে, তাহলে সেই সহবাস
হারাম এবং সন্তান জারজ (وَلَدُ
ٱلزِّنَا) গণ্য হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া যায় হানাফি ফিকহের এই
কিতাবসমূহেঃ (আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৪০, আদ্-দুররুল মুখতার মা‘আর-রাদ্দুল
মুখতার খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৩২, আল-বাহরুর রায়িক শারহু কানযিদ দাকায়িক খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৫)।
মুছলিম দাবীদার পহেলাবৈশাখ পালনকারীদের জানাযা পড়া যাবে না, মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ (وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی
اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِهٖ ؕ اِنَّهُمۡ
كَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ مَا تُوۡا وَ هُمۡ فٰسِقُوۡنَ) তাদের (মুনাফিক, মুর্তাদ) কেউ মারা গেলে
আপনি কক্ষনো তাদের জন্য
(জানাযার) নামায পড়বেন না, আর তাদের কবরের পাশে (জিয়ারতের উদ্যশ্যে) দন্ডায়মান হবেন না। (কেননা) তারা মহান আল্লাহ তায়ালা ও রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনাদের সঙ্গে কুফুরী করেছে আর বিদ্রোহী পাপাচারী অবস্থায়
তাদের মৃত্যু হয়েছে। (ছুরাহ আত তাওবা ৯/৮৪)
কবর দেওয়া যাবে না মুসলিম কবরস্থানেঃ (وَلَا
يُغَسَّلُ ٱلْمُرْتَدُّ، وَلَا يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَلَا يُدْفَنُ فِي مَقَابِرِ
ٱلْمُسْلِمِينَ) মুরতাদকে গোসল দেওয়া যাবে না, তার জানাজা পড়া যাবে না
এবং তাকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। (আদ্-দুররুল মুখতার মা‘আর-রাদ্দুল মুখতার, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা
২৪৮) তার জানাযায় কেউ অংশ
নিলে, সেই
জানাযাপাঠকারীও মুরতাদ হয়ে যাবে (ইজমা ভিত্তিক মতে)।
তার ওয়ারিসেরা তার সম্পত্তি পাবে নাঃ মুসলিম উত্তরাধিকারী কাফেরের সম্পদ পায়
না, কাফের ও মুসলিমের মাঝে ওয়ারিসি সম্পর্ক
থাকে না। (আল-ফাতাওয়াল
হিন্দিয়্যাহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ২৭৭)
তার হজ্জ,
রোযা, ছ্বলাত
ইত্যাদি সব বাতিল হয়ে যায়ঃ হজ্জ করার পর যদি
কেউ মুরতাদ হয়, তাহলে
হজ্জ বাতিল, কোনো নেক আমলই আর
তার নামের সাথে থাকবে না। তাওবা না করলে
তাকে ইসলামি রাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে (যদি খলাফত বা শরয়ী আদালত ব্যবস্থা চালু থাকে)। মুরতাদকে তাওবার আহ্বান করা হবে, তাওবা না করলে তাকে হত্যা করা
হবে।
ফাইনাল সিদ্ধান্তঃ পহেলা বৈশাখ বা অন্য কোনো বিজাতীয় ধর্মীয় রীতিনীতি পালনকারী ব্যক্তি, যদি জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে তা
করে, তাহলে তার উপর এই সব ফিকহি বিধান শরয়ীভাবে প্রযোজ্য
হয়ে যায়,
ফলে সে মুর্তাদ হয়ে বেঈমান হয়ে যায়। এই বিধান কোনো
ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তৈরি নয়, বরং কুরআন, হাদীস এবং চার মাজহাবের ইমামদের
ইজমা অনুযায়ী স্থির করা।