প্রশ্নঃ বাংলাদেশে
২০২৪ সালের জুলাই মাসের কোটা বিরোধী শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে
শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের নির্দেশে, বাংলাদেশের মুছলিম শিশু, কিশোর, যুবক,
নারী, বৃদ্ধ বৃদ্ধার উপরঃ “ছাত্রলীগ, পুলিশ, রেব, আর্মি বিডিয়ার, মিলে যে গণহত্যা
চালিয়েছে, মেরেছে, মরেছে, তাদের উপর ইছলামিক শরীয়ত উনার ফতওয়া কি? তারা কি আদৌ
মুছলিম বলে গন্য হচ্ছে ইছলামিক শরীয়ত অনুসারে? দয়া করে এর উপর আপনার ফতওয়া
পেশ করবেন, কোন মুফতিই এদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি।
وَعَلَيْكُمُ ٱلسَّلَامُ
وَرَحْمَتُ ٱللّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ
উত্তরঃ বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে
নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে, বাংলাদেশ বিষয়ক দেশি বিদেশি বিশ্লেষকদের মতামত, চলমান ঘটনার
উপর শত শত ভিডিও, হাজার হাজার ছবি, আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য মিডিয়ার নিউজ ও আমার
বিশ্বস্ত সকল অনুসারীদের থেকে প্রাপ্ত সরাসরি জবানবন্দী দ্বারা যে বিষয়গুলি পাওয়া
গেছে তা হলোঃ
১) বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মেধার
ভিত্তিতে চাকুরিপ্রাপ্তির দাবী জানিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছিলো, যেখানে
তাদের হারাম রাজনৈতিক কোন এজেন্ডা ছিলো না।
২) কথিত আওয়ামী সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ
সেই দাবীকে কবুল তো করেনাই, উল্টো বাংলাদেশের কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী
আনিসুল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান
চৌধুরী নওফেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ও বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
মোহাম্মদ এ. আরাফাত সহ অনেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও তাদের অঙ্গসংঘটন ছাত্রলীগ,
যুবলীগ, শ্রমিকলীগকে নিরীহ নিরপরাধ অধিকার আদায়ের সংগ্রামী সকল ছাত্রদের উপর এজিদি
হামলার নির্দেশ প্রদান করে।
৩) কথিত সরকারের গুন্ডাবাহিনী যখন
নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্রদের আক্রমণ করে তখন ছাত্ররা সম্মিলিতভাবে আওয়ামী হানাদার
বাহিনীর হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তারা পালিয়ে যায় পিছু হটে।
৪) কথিত আওয়ামী সরকার তার গুন্ডাবাহিনী
দিয়ে যখন ছাত্রদের দমাতে পারেনাই, তখন এইসব মন্ত্রিরা “দেখা মাত্র গুলি করতে”
নির্দেশ দেয় পুলিশকে, ফলশ্রুতিতে আবু সাইদকে দিয়ে তাদের গণহত্যার যাত্রা শুরু হয়।
৫) আন্দোলন তীব্র হয়, পুলিশের
গুলিতেও যখন নিরস্ত্র ছাত্রসমাজকে থামানো যাচ্ছেনা তখন মাঠে নামানো হয় বিডিয়ার,
কিন্তু এদের গুলিতেও তাজা তাজা মুছলিম, অমুছলিম যুবক, বৃদ্ধ এমনকি শিশুদেরও যখন
হত্যা করে কোন ফায়দা হয়নি তখন শেষ ভরসা আর্মিকে নামানো হয়।
৬) বাংলাদেশের মানুষের শেষ
আশারস্থল আর্মি ও যখন হুকুমের গোলাম হয়ে নিজ দেশের শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতি,
বৃদ্ধার বুকে চোখ বন্ধ করে গুলী চালায়, তখন বাংলার আম জনতাও বাধ্য হয়ে ছাত্রদের
সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।
৭) পরিস্থিতি বেসামাল দেখে বন্ধ
করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট টানা ৬ দিন ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন সারা বাংলার মোবাইল
ব্যবহারকারীরা। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে দিনে রাতে সমানতালে চলে গণহত্যা। কেবল
ছাত্রছাত্রীদেরই নয়, বরং দোকানি, পথচারী, দিনমজুর, এমনকি মানুষের বাসায় ঢুকে পর্যন্ত
গুলীবর্ষন করা হয়েছে, ফলে শিশু ও বৃদ্ধ পর্যন্ত হত্যার স্বীকার হয়েছেন। এছাড়াও
হেলিকপ্টার দিয়েও গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে প্রতিবাদী ছাত্রসমাজের উপর। এমনকি ৯৫%
মুছলিমের বাংলাদেশে বেওয়ারিশ হিসেবে জানাযা ছাড়াও করা হয়েছে অসংখ্য দাফন, পুলিশি জুলুম
কত কঠিন আকার ধারণ করেছে তা বোঝা যায় অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা জানাযা পড়ানোর
কারণে ইমামকে নামাজরত অবস্থায় এরেষ্ট করার দিকে তাকালে।
৮) কথিত সরকারি হিসেবেই ২০০+
মুছলিম, মুমিন, অমুছলিমকে হত্যা করেছে আওয়ামীপন্থীরা, শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের
হুকুমে, এই হত্যাযজ্ঞে হাসিনার আনুগত্য প্রকাশে যেনো ত্রুটি না হয় সেকারণে অনেক
পুলিশ, রেব, আর্মি, বিজিবিও গণহত্যায় শামিল হয়। যদিও নির্ভরযোগ্য সুত্র বলছে
হাজারের উপর বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে, আর হাসপাতালে ২০ হাজারের উপর আহত
মুছলিম কাতরাচ্ছেন, কেউবা মৃত্যুর জন্যে প্রহর গুনছেন।
৯) পবিত্র সম্মানিত মুহর্মুল
হারাম শরীফের মাসে ইয়াজীদ, ইবন যিয়াদ, শিমার, বাহিনীর কায়িম মাক্বাম হতে কোন
ত্রুটি রাখেনি আওয়ামী সরকার ও তাদের পোষা বাহিনীরা।
১০) শেখ হাছিনা ও তার অনুসারী
অন্ধ আওয়ামীলীগের কিছু মানুষ ছাড়া এই গণহত্যাকে ভুলক্রমেও কুফর হিসেবে মেনে নিতে
রাজি নয়।
১১) সন্তানকে হত্যা করে এখন আবার
পিতামাতাকেও হয়রানি করা হচ্ছে যাতে তারা কোন ধরণের মামলা মোকদ্দমায় না যায় শেখ
হাসিনা ও আওয়ামীলীগের কোন নেতার উপরে।
১২) ক্ষমতার মসনদে বসে থাকার
জন্যে যদি পুরো দেশকেও হুমকির মুখে ফেলতে হয় তাহলে তাই করা হবে, তবুও কেউ হক্বের
অধিকারে শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম পরিচালিত করতে পারবেনা।
জানার বিষয় হলোঃ সরকার বা
শাসনব্যবস্থায় কর্তৃত্ব পেলেই কি নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা যাবে? মোটেও না মহান
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (فَهَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ
اَنۡ تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ تُقَطِّعُوۡۤا اَرۡحَامَكُمۡ اُولٰٓئِكَ
الَّذِیۡنَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ فَاَصَمَّهُمۡ وَ اَعۡمٰۤی اَبۡصَارَهُمۡ) তোমাদের কাছ থেকে এর চাইতে বেশী কি প্রত্যাশা করা
যাবে যে, তোমরা (একবার) যদি (জমিনে) শাসন ক্ষমতায় বসতে পারো তাহলে (মহান আল্লাহ
তায়ালা উনার) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং যাবতীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে
ফেলবে। (মূলত) এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ, যাদের ওপর মহান আল্লাহ
তা’য়ালা লানত দিয়েছেন, (এছাড়াও, তিনি তাদের) বোবাও করে দিয়েছেন (তাই তারা সত্য
কথা বলতে পারে না) এবং তাদের তিনি অন্ধও করে দিয়েছেন (তাই তারা সত্য কি তা দেখতেও
পায় না)। (আল কুরআন ৪৭/২২-২৩)
আওয়ামী লিগের দাবী অনুসারে শেখ
হাসিনা ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাবন্ধি, তাহাজ্জুদ পড়নে ওয়ালা মুছলিমাহ। যেহেতু আ’লা
দরজার মুছলিমাহ বলে দাবি করা হচ্ছে সেহেতু আশা করা যায় যে কুরআন ছুন্নাহ (ছ্বহীহ
হাদিছ)-এর অনুসারী। তাই ফায়সালা কুরআন ছুন্নাহ তথা শরীয়ত অনুসারেই দেওয়া হলো।
আওয়ামীলীগের মধ্যে কুরআন ছুন্নাহর অনুসারী থাকলে তা নির্দ্বিধায় মেনে নেবে
ইনশাআল্লাহ।
নিরপরাধ মানুষকে হত্যাকারী,
গণহত্যার হুকুমদাতা খুনীদের গডফাদারদের কেবল দুনিয়াই নয়, বরং আখেরাত ও তাদের বরবাদ
হয়ে যায়, যেমনঃ মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَّ یَقۡتُلُوۡنَ الَّذِیۡنَ
یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡقِسۡطِ مِنَ النَّاسِ ۙ فَبَشِّرۡهُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ
اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ حَبِطَتۡ اَعۡمَالُهُمۡ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ۫ وَ
مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ) আর মানুষের মধ্য থেকে যারা
ন্যায়-পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে (যারা) হত্যা করে, (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম)
আপনি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। এরাই
হচ্ছে তারা যাদের সমস্ত (নেক) আমল দুনিয়া ও আখেরাতে বরবাদ হয়ে যাবে এবং (সেদিন)
তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবেনা। (আল কুরআন ৩/২১-২২)
মহান
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেনঃ (وَمَنْ
يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا
وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا) ‘‘আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, তার মধ্যে সে সারাজীবন থাকবে এবং মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সেই লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন ও তাকে লানত প্রদান
করবেন। এছাড়াও তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন মর্মন্ধুত
শাস্তি’’। (আন নিছা
৪/৯৩)
(مَنۡ
قَتَلَ نَفۡسًۢا بِغَیۡرِ نَفۡسٍ اَوۡ فَسَادٍ فِی الۡاَرۡضِ فَكَاَنَّمَا قَتَلَ
النَّاسَ جَمِیۡعًا ؕ وَ مَنۡ اَحۡیَاهَا فَكَاَنَّمَاۤ اَحۡیَا النَّاسَ
جَمِیۡعًا) যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তিকে হত্যার বিনিময়ে অথবা ভূপৃষ্ঠে
ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ছাড়া অন্যায়ভাবে হত্যা করলো সে যেন সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে
ব্যক্তি কাউকে অবৈধ হত্যাকান্ড থেকে রক্ষা করলো সে যেন সকল মানুষকেই রক্ষা করলো’’। (আল মা’য়িদাহ শরীফ ৫/৩২)
আর
এই ধরণের হত্যাকান্ডকে হাদীসের পরিভাষায় সর্ববৃহৎ গুনাহ্ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমন আনাস
বিন মালিক রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ
ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘সর্ববৃহৎ কবীরা গুনাহ্ হচ্ছে চারটি, “১) মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা উনার
সাথে কাউকে শরীক করা, কোন ব্যক্তিকে অবৈধভাবে হত্যা
করা, (মুমিন) মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষী দেয়া’’। (বুখারী
শরীফ ৬৮৭১;
মুসলিম শরীফ ৮৮)
তাছাড়া
এখন দলিল হিসেবে যা যুক্ত করবো হাদিছ শরীফ থেকে সেই হাদিছ শরীফগুলোতে হত্যাকান্ডের
ভয়াবহতা ও ভয়ঙ্করতা আরো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান
আল্লাহ তা’য়ালার নিকট ইচ্ছাকৃত হত্যাকারীর ক্ষমার আশা খুবই ক্ষীণ। কেননা রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম
বলেনঃ ‘‘প্রতিটি গুনাহ্ আশা করা যায়
যে, মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দু’টি গুনাহ্
যা আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ
কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত কেউ কোন মু’মিনকে হত্যা করলে’’। (নাসাঈ শরীফ ৩৯৮৪; মুছনাদে
আহমাদ ১৬৯০৭;
হাকিম ৪/৩৫১)
এতো
গেলো অন্যকে হত্যার ব্যাপারে, অথচ আপন সন্তান ও যদি কোন মহিলার গর্ভ ধারণের চার মাস পর দরিদ্রতার ভয়ে তার
গর্ভপাত করানোরই হুকুম নাই, কেননা কাউকে অবৈধভাবে হত্যা করার শামিল। আব্দুল্লাহ
ইবনে মাসঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ ‘‘জনৈক ব্যক্তি রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি
ওয়া ছাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া
রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম! কোন পাপটি মহান আল্লাহ্
তা’য়ালার নিকট মহাপাপ বলে বিবেচিত? রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম
বললেন, মহান আল্লাহ তা’য়ালার
সাথে কাউকে শরীক করা; অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি
করেছেন। সে বললোঃ অতঃপর কি? তিনি
বললেনঃ নিজ
সন্তানকে (গর্ভে থাকা অবস্থায়) হত্যা করা ভবিষ্যতে তোমার সঙ্গে খাবে বলে। (বুখারী
শরীফ ৪৪৭৭,
৪৭৬১, ৬০০১, ৬৮১১, ৬৮৬১, ৭৫২০, ৭৫৩২; মুসলিম শরীফ ৮৬) এই
হাদিছ শরীফের মূল হুকুম কালামুল্লাহ শরীফে পাওয়া যায়, যেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা
তিনি বলেনঃ (وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا
اَوۡلَادَكُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُهُمۡ وَ اِیَّاكُمۡ ؕ اِنَّ
قَتۡلَهُمۡ كَانَ خِطۡاً كَبِیۡرًا) দরিদ্রতার ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে
(ভ্রুনেই) হত্যা করো না। (ভুলে যেওনা) তোমাদের ও তাদের রিযিকদাতা (কেবল) আমিই, (একারণে দরিদ্রতার ভয়ে) তাদের হত্যা করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। (ছুরাহ আল ইসরা
১৭/৩১ ও আল আন’আম ৬/১৫১) এখন আপন
পিতামাতা ভ্রুনেই যেখানে সন্তানকে হত্যার অধিকার পাচ্ছেনা, সেখানে জলজ্যান্ত
নিরপরাধ মানুষকে হত্যার কোন সুযোগই নাই, না এর আছে কোন ক্ষমার সুযোগ।
এই
ব্যপারে হাদিছ শরীফে এসেছেন, আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘হত্যাকৃত
ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘য়ালার সামনে উপস্থিত হবে। হত্যাকৃত
ব্যক্তির মাথা তার হাতেই থাকবে। শিরাগুলো থেকে তখন রক্ত পড়বে। সে মহান
আল্লাহ তা‘আলাকে উদ্দেশ্য করে বলবেঃ হে আমার প্রভু! এ ব্যক্তি আমাকে
হত্যা করেছে। এমনকি সে হত্যাকারীকে আরশের অতি নিকটেই নিয়ে যাবে। শ্রোতারা
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহুকে উক্ত হত্যাকারীর তাওবা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপরোক্ত সূরাহ নিসা’র আয়াত
শরীফটি তিলাওয়াত করে বললেনঃ উক্ত আয়াত রহিত হয়নি। পরিবর্তনও
হয়নি। অতএব তার তাওবা কোন কাজেই আসবে না’’। (তিরমিযী
শরীফ ৩০২৯;
ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৭০; নাসায়ী শরীফ ৪৮৬৬)
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘মু’মিন ব্যক্তি সর্বদা ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে
যতক্ষণ না সে কোন অবৈধ রক্তপাত করবে’’। (বুখারী শরীফ ৬৮৬২)
আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘এমন
ঝামেলা যা থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর রক্তপাত করা (অর্থাৎ
কাউকে হত্যা করা বিনা অপরাধে)’’। (বুখারী শরীফ ৬৮৬৩)
আব্দুল্লাহ
ইবনে মাস্ঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘কিয়ামতের
দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত সর্বপ্রথম হিসেব হবে রক্তের’’। (বুখারী
শরীফ ৬৫৩৩,
৬৮৬৪; মুসলিম
শরীফ ১৬৭৮;
ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৬৪, ২৬৬৬)
আবূ
সা’ঈদ খুদরী রদ্বিআল্লাহু আনহু ও আবূ হুরায়রাহ রদ্বিআল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত উনারা বলেনঃ রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া
ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘যদি আসমান ও জমিনের সকলে
(মাখলুক) মিলেও কোন মু’মিন হত্যায় অংশ গ্রহণ করে
তবুও মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে মুখ থুবড়ে
জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’। (তিরমিযী শরীফ ১৩৯৮)
জারীর
বিন ‘আব্দুল্লাহ্ আল-বাজালী, আব্দুল্লাহ
ইবনে উমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবূ বাক্রাহ রদ্বিআল্লাহু
আনহুমাদের থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রছুলুল্লাহ
ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘আমার দুনিয়া থেকে পর্দা তথা বিছাল শরীফের পর তোমরা কাফির
হয়ে যেও না। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যা করো না’’। (বুখারী
শরীফ ১২১, ১৭৩৯, ৪৪০৫, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম
শরীফ ৬৫, ৬৬, ১৬৭৯)
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ
ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ‘‘মহান আল্লাহ তা‘য়ালার নিকট
একজন মুসলিমকে হত্যা করার চেয়ে পুরো দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া অধিকতর সহজ’’। (তিরমিযী
শরীফ ১৩৯৫;
নাসাঈ শরীফ ৩৯৮৭; ইব্নু মাজাহ শরীফ ২৬৬৮)
আব্দুল্লাহ
ইবনে আমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে হত্যা করলো সে জান্নাতের
সুগন্ধও পাবে না;
অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের
রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়’’। (বুখারী শরীফ ৩১৬৬, ৬৯১৪; ইব্নু মাজাহ্ শরীফ ২৬৮৬)
আবদুল্লাহ
ইবনে উমর রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে কাবা ঘর তাওয়াফ করতে
দেখলাম এবং তিনি বলছিলেনঃ কত উত্তম আপনি হে কাবা! আকর্ষণীয় আপনার খুশবু, কত উচ্চ মর্যাদা আপনার (হে কাবা)! কত মহান সম্মানের অধিকারী
আপনি। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে
আমার প্রাণ!,
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট মুমিন
ব্যক্তির জান-মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা আপনার চেয়ে অনেক বেশী। আমরা
মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে সুধারণাই পোষণ করি।
(তিরমিযী ২০৩২, ইব্নু হিববান ৫৭৬৩, ইবনে
মাজাহ শরীফ ৩৯৩২)
অতএব ছাত্র আন্দোলনের পুরো ঘটনা
পর্যালোচনা করে শরীয়ত অনুসারে যে রায় পাওয়া যায়, তা হলোঃ “শেখ হাসিনা ও তার বাহিনীর
যারা এই হত্যাযজ্ঞে জড়িত, যারা মনেপ্রাণে এই হত্যাগুলিকে সমর্থন করে, যায়েজ মনে
করে, তারা সবাই মুর্তাদ, এদের বিয়ে বাতিল, স্ত্রীর/স্বামীর সাথে মিলিত হলে জিনা
হবে, সন্তান জন্মালে তা হবে জারজ, কেননা তারা কুফুরি করেছে। হাদিছ শরীফে এসেছেনঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্ঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
হাদিছে, “রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম
ইরশাদ করেনঃ ‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং তাকে হত্যা করা কুফরি’’। (বুখারী শরীফ ৪৮, মুসলিম শরীফ ৬৪) আর
আয়াতে পাকে স্পষ্ট বলা হয়েছেঃ (وَمَنْ يَّقْتُلْ مُؤْمِنًا
مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيْهَا وَغَضِبَ اللهُ عَلَيْهِ
وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيْمًا) ‘‘আর যে
ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে
হত্যা করে তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, তার মধ্যে সে সারাজীবন থাকবে
এবং মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা সেই লোকের প্রতি ক্রুদ্ধ
হবেন ও তাকে লানত প্রদান করবেন। এছাড়াও তিনি তার জন্য প্রস্ত্তত করে রেখেছেন মর্মন্ধুত
শাস্তি’’। (আন নিছা
৪/৯৩) উক্ত আয়াত শরীফে ৪ শাস্তি হত্যাকারীর ব্যপারে
মহান আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেন, যেখানে প্রথমেই যাহান্নামের বাসিন্দাদের
অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন, এরপর বলেছেন, হত্যাকারী সেই জাহান্নামে সারাজীবন থাকবে,
এরপর বলেছেন গজবনাক হবেন এবং ভয়ানক আযাবের ব্যবস্থাও করে রেখেছেন।
এই জামানার স্বৈরাচারীরা মনে করে
যে হত্যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, তাওবা করলেই মাফ পেয়ে যাবে অথচ আমরা দেখেছি
যে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু
আনহুর মুখনিঃসৃত হাদিছ শরীফে তিনি বলেছেন
হত্যাকারীর তাওবা কবুল হয়না, তাহলে বোঝা গেলো যে ইহা কবিরা গুনাহের চেয়েও অনেক
উপরের বিষয়। তাছাড়া আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বিদাহ হলেন কবিরা গুনাহ
দ্বারা ইনছান কাফের হয়না, আর কবিরাহ গুনাহ ইনছানকে সারাজীবন জাহান্নামে রাখার মতো
কারণের অন্তর্ভুক্ত ও নয়। তাহলে উক্ত আয়াত শরীফের জাহির তো জানলাম, বাতিনের
ব্যপারে ইমামগণের মত কি? মহান আল্লাহ পাক তিনি তো স্পষ্ট করেই আল কুরআনে বলে দিয়েছেন,
হত্যা, গণহত্যাকারী চিরস্থায়ী যাহান্নামী, এর মানে কি? এর মানে হলো যে ব্যক্তি,
গোত্র মিলে কোন মুছলিমকে হত্যা করবে তার ক্বলব থেকে কলিমা শরীফ সরাই দেওয়া হবে,
অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে সে কাফের হয়ে মরবে, কারণ যত বড় গুনাহগার হোক, জররা পরিমাণ
ঈমান তার মধ্যে থাকলে সে জাহান্নামে চিরজীবন থাকবেনা, একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু বলেছেন হত্যা, গণহত্যাকারীর তাওবা কবুল
হবেনা কারণ তাওবা কবুল হলে সে জাহান্নামে চিরস্থায়ী থাকবেনা, একারণেই প্রথমদিকেই
হাদিছ শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে যে মুছলিমকে হত্যা করা কুফরি তথা হত্যাকারীর মৃত্যুও
হবে কুফরের উপর, এতে সে যত বড় আবিদই হোক না বাহ্যিক দৃষ্টিতে।
উক্ত ফতোয়ার আলোকে বাংলাদেশী
মুছলিমরা কি করবেন এইসব হত্যাকারীদের ব্যপারে?
১) হাসিনা ও তার সহযোগী সকল খুনীই
চির যাহান্নামী লানতুল্লাহ।
২) যেহেতু এরা চির যাহান্নামী তাই
হাসিনা, ও তার যেসকল মন্ত্রী, ও দলের সদস্য, পুলিশ, আর্মি, বিজিবি, রেব, আনসারের
মধ্যে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে তাদের সাথে দ্বীনি সকল সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে।
৩) এরা মারা গেলে এদের মুছলিমদের
কবরে দাফন করা ও জানাযা পড়া হারাম।
৪) সামাজিকভাবে এদের বয়কট করতে
হবে।
৫) কখনো ইসলামিক হুকুমাত
বাংলাদেশে কায়েম হলে, এদের যারা বেঁচে থাকবে তাদের কিসাসের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
রইলো, আওয়ামীলীগের
যেসকল সদস্য, পুলিশ, আর্মি, বিজিবি, রেব, আনসার বা অন্যান্য দলের (বিএনপি,
জামায়াত, জাতীয়পার্টি ইত্যাদি) মারা গেছে তাদের ফায়ছালা কি? তারা কি শহীদ?
মোটেও না, শহীদ কেবল তারা যারা
ছাত্র ছিলো, এবং আম জনতা, পথচারী, মৃত্যুর সময় আক্বিদাহ বিশুদ্ধ ছিলো মহান আল্লাহ
পাক, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম, কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ-এর
ব্যপারে, কোটা বাতিল ব্যতীত সরকার পতনের কোন মোটিভ নিয়ে রাস্থায় নামে নাই। কিন্তু
যারা সরকার দলীয় বা বিরোধী দলের লোক গণতন্ত্র নামক কুফরের চেয়ারে বসে থাকা
আওয়ামীলীগকে সরিয়ে নিজেদের বসানোর সুযোগ মনে করে রাস্তায় নেমে মরেছে তারা মূলত জাহেলিয়াতের
উপর মৃত্যুবরণ করলো, কেননা আবু
হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি
(ইসলামি খিলাফতের) আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে
গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের (অবস্থায়) মৃত্যুবরণ করল। আর যে
ব্যক্তি (দ্বীনের) লক্ষ্যহীন নের্তৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে দলপ্রীতির
জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা দলের দিকে আহবান করে অথবা দলের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার সেখানে থাকেনা) আর তাতে
নিহত হয়, সেও জাহেলিয়াতের
উপর মৃত্যুবরণ করে। (মুসলিম শরীফ ১৮৪৮এ, নাসাঈ শরীফ ৪১১৪, মিশকাত শরীফ ৩৬৬৯)।
وَاللهُ أعْلَمُ بِالصَّوَابِ
مُحَمَّد
رَجِيبْ خَوَاجَهْ
شَيْخُنَا
وَ مُرْشِدِنَا إِمَامُ الطّٰرِيْقَةِ الْرَاج
٢٨/٠١/١٤٤٦