Monday, December 5, 2022

দ্বীন ইসলামে বাইয়াতের গুরত্ব এবং কার হাতে বাইয়াত হওয়া ফরজ?


সোজা ভাষায় খিলাফত বিদ্যমান থাকলে আমিরের নিকট বাইয়াত করা ফরজ। পিরের বাইয়াত যদিও ফরজ নয় তবে তা যায়েজ, মুস্তাহাব। কিন্তু অনেক ধর্মব্যবসায়ী পির নিজেদের ব্যবসাকে আজকাল টিকিয়ে রাখতে দ্বীনের মূল বাইয়াতের কনসেপ্টই পরিবর্তন করে দিয়েছে মুরিদ-দের নিকট, আর ব্রেইন ওয়াশ মুরিদেরাও তা চোঁখ বোঝে গিলতেছে স্বজ্ঞানে অজ্ঞানে। অথচ কেউ চাইলেই আমিরের আনুগত্য থেকে বের হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমির কোন কুফরী কাজের নির্দেশ দিবেন। যদি কেউ বের হয়, বিদ্রোহ করে, তাহলে সে জাহেলিয়াতের উপর মারা যাবে। কিন্তু কেউ চাইলেই পির পরিবর্তন, পরিত্যাগ করতে পারবে, পিরের থেকে কুফরি হুকুম পাওয়া বাধ্যতামূলক না। যেমনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ (مَنْ خَلَعَ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللَّهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ حُجَّةَ لَهُ وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً) যে (মুসলিম) আমীরের বায়'য়াত থেকে (নিজের) হাত গুটিয়ে নিবে, সে কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা'আলার সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, তার (মুসলিম হওয়ার আদতে) কোন দলীলই থাকবে না (তার নিকট)। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ তার ঘাড়ে বায়'আত এর কোন বন্ধন নেই, তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের উপর। নাউযুবিল্লাহ (মুসলিম শরিফ ১৮৫১এ, মিশকাত শরিফ ৩৬৭৪, রিয়াদ্বুছ স্বলেহীন ৬৬৪)

অতএব ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী পিরদের মূর্খ মুরিদগুলি ব্রেইন খাটায় না, বুঝতে চায়না যে, একটি এলাকায় যখন ইসলামিক খিলাফত কায়েম হবে, সেখানে যখন একজন আমির নির্ধারিত হবেন তখন ঐ এলাকার সকল পিরের উপর সেই আমিরের বাইয়াত ফরজ হয়ে পড়ে মুরিদ সহ। এখন কলিজায় আঘাত লাগা ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী পিরদের মূর্খ মুরিদগুলির মধ্যে থাকা কিছুটা জ্ঞানিদের নিকট প্রশ্নের উদয় হতে পারে যে এর দলিল কি? প্রমান কি? তাদের জন্য দলিল হলোঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (মুসলিম মিল্লাতের) একজন ইমামের হাতে হাত রেখে অন্তর থেকে তার বাইয়াত গ্রহণ করে, তখন তার যথাসাধ্য আনুগত্য করা ওয়াজিব। (আর) যদি অন্য কোন ব্যক্তি এসে ঐ ইমামের সাথে ঝগড়া করে তবে তোমরা তার ঘাড়ে আঘাত করো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, একথা কি আপনি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে সরাসরি শুনেছেন? তিনি বললেন, আমার দু’টি কান তা শুনেছে এবং আমার অন্তর তা স্মরণ রেখেছে। আমি বললাম, এই যে তিনি আপনার চাচাতো ভাই মুআবিয়াহ, তিনি আমাদেরকে এই এই কাজ করার আদেশ করেন। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ তা'আলার আনুগত্যে তোমরা উনার আনুগত্য করো আর মহান আল্লাহ তা'আলার নাফরমানীতে উনার আনুগত্য করো না। (আবু দাউদ শরীফ ৪২৪৮) পাঠক এইখানে মনযোগ দিন, কিছু ব্যক্তি আমিরে মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাইয়াত গ্রহণ করেন, যাদের কোন কাজের আদেশ তিনি দিয়েছিলেন যা ঐসব সাহাবিদের পছন্দ হয়নি, তখন উনারা আবদুল্লাহ ইবনু আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে এই ব্যপারে অভিযোগ করলে উনি তাদের মহান আল্লাহ পাকের দিকে রুজু করে দেন, কারনঃ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সকল মুসলমানের জন্য তাদের আমিরের কথা শোনা ও আনুগত্য করা ওয়াজিব, তা হোক তার পছন্দের বা অপছন্দের, তাকে যতক্ষন পর্যন্ত কোন হারাম কাজের নির্দেশ না দেয়া হবে। যদি তাকে কোন হারাম কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে তা শুনা এবং মানা তার উপর ওয়াজিব নয়। (বুখারি শরীফ ২৯৫৫, ৭১৪৪, তিরমিযি শরীফ ১৭০৭)

উপরোক্ত হাদিস শরীফ থেকে পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো যে মুসলিম মিল্লাতের আমীর মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ইল্মে তাসাউফ অর্জনের জন্য পির হিসেবে কেউ বাইয়াত নেন নাই, বরং আমীর হিসেবেই বাইয়াত নিয়েছিলেন সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন। আর এটাই ফরজ বাইয়াত যেখানে মুসলিম মিল্লাতের আমিরের হাতে ঐ এলাকায় থাকা কোটি কোটি মুরিদের যদি হাজার হাজার পিরও বিদ্যমান থাকেন। বিষয়টা আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবে এই হাদিসের দ্বারা। "ইরবাদ বিন সারিয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ একদিন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় আমাদের নসীহত করেন, যাতে আমাদের অন্তরসমুহ ভীত হলো এবং চোখগুলো অশ্রু বর্ষণ করলো। উনাকে বলা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ দিচ্ছেন? অতএব আমাদের নিকট থেকে একটি প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করুন (একটি সুনির্দিষ্ট আদেশ দিন)। তিনি বলেনঃ তোমরা আল্লাহ্ভীতি (অর্থাৎ তাক্বওয়া পহেজগারিতা) অবলম্বন করো, শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো (আমিরের-আদেশ), যদিও সে আবিসিনিয়ান (কাফরী) গোলাম হয়। (সূনান ইবনে মাজাহ ৪২, তিরমিঝি শরীফ ১৭০৬, ২৬৭৬, রিয়াদুস স্বলেহীন ১৫৭, ৭০১) আহ কি একটা অবস্থা ভাবা যায়? শ্রবণ করো ও আনুগত্য করো (আমিরের-আদেশ), যদিও সে আবিসিনিয়ান (কাফরী) গোলাম হয়। কোন পিরের নয়।

কি হে ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড পিরদের মূর্খ মুরিদেরা ব্যথা লাগে? কষ্ট হয়? কিছুই করার নাই, দ্বীন এমনই, হক্ব যখন বাতিলের সম্মুখে উপস্থাপিত হয় তখন তাদের প্যাট খারাপ, প্যান্ট খারাপ হয়।

এদিকে আবার পেট্রো-ডলারে লাক্সারিয়াস জীবনযাপনকারি ওহাবি, সলাফি, লা মাজহাবী হয়তো খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে যাচ্ছে ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড পিরদের ব্যবসায় দলীল ভিত্তিক পানি ফেলায়। তোদের খুশী হওয়ার কিছুই নাই হে লুসিফারের দালালেরা। তোরা উভয় দলই ইহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তোরা যে ইসলামিক খিলাফত ও ফরয বাইয়াতের ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত অবস্থান করছিস তা এখন সকল ইসলামিক জ্ঞানে গুণান্বিত ব্যক্তিরা জানে। ইহুদীরা ইসলামিক খিলাফতের বাইয়াতকে বিলীন করতে ভন্ড ধর্মব্যবসায়ী পিরদের দিয়ে পিরের বাইয়াত ফরয নামক প্রোপাগান্ডা চালায়, আর তোদের দিয়ে খোদ খিলাফত, বাইয়াত জ্বিহাদের সরাসরি বিরোধিতা করায় যেনো মুসলিম সমাজ আর কোনোদিন ইসলামিক খিলাফতের স্বাধ ভোগ করতে না পারে, আর ইহুদীরা ইসরায়েল আমেরিকায় বসে কুফুরিতন্ত্র দিয়ে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রন করে, তাদের গোলামি করায়। কিন্তু তোদের জানা থাকা প্রয়োজন যে একদল মানুষ সব সময় সঠিক দ্বীন ইসলামের উপর ইস্তিকামত থাকবে। "তারা সর্বদা দ্বীনের জন্য জ্বিহাদ করতে থাকবে। (নাসাঈ শরীফ ৩৫৬১) মূলত এদের কারনেই (মুসলিমদের মূল গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিস আজ ইহুদি নাসারা ও মুশরিকদের দখলে।) আর এই তোরা যে কত বড় মুনাফিকে আযম তা বলে বোঝানো যাবেনা, তোরা সব সময় আহলে সুন্নতের দাবীদার সুন্নীদের বিভিন্ন কাজকে বিদআত বলে গলাবাজি করিস, তোরা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করিসঃ (كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلَّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ) সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়ই (হচ্ছে) বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (নাসাঈ শরীফঃ ১৫৭৮) অথচ একীই বিদআত সম্পরকে বর্ণিত হাদিসের কেবল একাংশের উপর আমল করিস, ব্যপারটা কি? ইহুদীদের খুশি করা? যারা টুকরো টুকরো করে দিয়েছে দ্বীন ইসলামকে, যার ধ্বংস্তুপে আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি!!!

এবার দেখি বিস্তারিত হাদিসে পাকে কি বলা হয়েছেঃ (حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي الْمُطَاعِ، قَالَ سَمِعْتُ الْعِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ يَقُولُ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم ذَاتَ يَوْمٍ فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ وَذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ فَقِيلَ يَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّم وَعَظْتَنَا مَوْعِظَةَ مُوَدِّعٍ فَاعْهَدْ إِلَيْنَا بِعَهْدٍ فَقَالَ ‏ "‏ عَلَيْكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا وَسَتَرَوْنَ مِنْ بَعْدِي اخْتِلاَفًا شَدِيدًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَالأُمُورَ الْمُحْدَثَاتِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ) আবূ নাজীহ্ আল-'ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ্ রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় নসীহত করেন, যাতে আমাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে এবং আমাদের চোখে পানি এসে যায়। আমরা নিবেদন করিঃ রসুলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! (এটা) মনে হচ্ছে বিদায়কালীন উপদেশ; আপনি আমাদেরকে অসীয়ত করুন। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে মহান আল্লাহ তা'আলাকে ভয় (তাক্বওয়া অর্জন) করতে অসীয়ত করছি, আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়ত করছি; যদি কোন (হাবশি) গোলামও তোমাদের আমীর হয় তবুও। (আর) তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা (আমার দুনিয়া থেকে বিদায়ের পর, দ্বীনে) অনেক মতবিরোধ (ইখতেলাফ) দেখবে; সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত ও হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নত তরীকা মেনে চলবে, (আর) তা দাঁত দিয়ে (অর্থাৎ খুব শক্তভাবে) আঁকড়ে ধরে থাকবে; আর (দ্বীনে) নব উদ্ভাবিত বিষয় সম্পর্কে সাবধান থাকবে, কারণ প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়ই হচ্ছে বিদ'আত, (আর) প্রত্যেক বিদ'আতই হচ্ছে গোমরাহী”। (সূনান ইবনে মাজাহ শরীফ ৪২)

মুনাফিকেরা তোরা বল এই হাদিসে বিদআতের সাথে আমিরের বাইআত, আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি?

হে দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, একজন মানুষ আত্মশুদ্ধির জন্য একজন হাক্বানি পিরের বাইয়াত হতেই পারে, এতে কোন দোষ নাই, কিন্তু এর মানে এই না যে, সেই পিরের বাইয়াত দিয়ে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে সেই বাইয়াত থেকে, যে বাইয়াত দিয়ে আমীর নির্ধারিত হয়ে থাকে জমিনে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্টা ও পরিচালনার জন্য। উদাহরণস্বরূপ এইযে (হিন্দু ইউএনও রুলী বিশ্বাসকে সালাম না দেওয়ায়, খতিবকে ‍‍‍ছাগল-বেয়াদব বলে অপমান! করা হলো) কোন পির তার মুরিদ নিয়ে দরবার ছেঁড়ে প্রতীবাদে উপজেলা, থানা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিমূখে প্রতিবাদী যাত্রা করেনাই। আজ ইসলামিক খিলাফত থাকলে মুসলিম মিল্লাতের সর্বচ্চো সম্মানিত ব্যক্তি ইমাম/খতিবের এই অপমানে নগদে ব্যবস্থা নিত অরিজিনাল বাইয়াত ও ইসলামিক ইমারত প্রতিষ্টিত থাকলে, আর ঐচ্ছিক পির মুরিদির বাইয়াত কখনো এইসবের ব্যবস্থা নিবেনা, নিতে পারবেওনা, কারন আজকে যে মুসলমান সারা দুনিয়ায় নির্যাতিত হচ্ছে এর মূল কারন জমিনে ইসলামিক খিলাফত বিদ্যমান নাই, মুসলমানদের কোন আমীর নাই, অথচ লাখ লাখ ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড পির বিদ্যামান যারা নিজের মুরিদ কাষ্টমার ব্যতীত অন্য কোন ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড পিরের কাষ্টমার মুরিদের দিকে ফিরেও তাকায় না দুঃখ, কষ্ট, আর অনাহারে দিন কাটালেও। অথচ মুসলিম মিল্লাতের বাইয়াত গ্রহণকারী দ্বিতীয় খলীফা উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন (قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رضي الله عنه لَوْ مَاتَتْ شَاةٌ عَلَى شَطِّ الْفُرَاتِ ضَائِعَةً لَظَنَنْتُ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى سَائِلِي عَنْهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ) আমার শাসনামলে ফুরাতের তিরে যদি একটি ছাগল ও অনাহারে মারা যায় তাহলে কিয়ামতের ময়দানে আমাকে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট এর জবাবদিহিতা করা লাগবে বলে মনে করি। (হিলিয়াতুল আউলিয়া ১৩৭) এই হলো ধর্মব্যবসায়ী ভন্ড পির আর ইসলামিক খিলাফতের আমিরের নিকট বাইয়াতের তফাৎ।

এবার আসুন কুর'আন সুন্নাহ'র আলোকে জেনে নেই বাইয়াতের ব্যাখ্যা, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।

পৃথিবীর কোথাও যদি কোন মুসলিম জামা'আত (যারা রিয়েল আহলুস সুন্নাহ) কোন কুরাইশী মুমিনকে খলীফা হিসেবে নির্বাচন করে, উনার হাতে বায়‘আত করা তখন সকল পিরের জন্য মুরিদ সহ ওয়াজিব, মুসলিম মিল্লাতের জন্যেও ওয়াজিব। কিন্তু কুরাইশী পাওয়া না গেলে বাইরের কাউকেও যদি মুসলিম জামা'আত (যারা রিয়েল আহলুস সুন্নাহ) আমীর হিসেবে মনোনিত করেন, তখন উনার হাতেও বায়‘আত করতে হবে। কারন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا) আর আনুগত্য দেখাতে অসীয়ত করছি; যদি কোন (হাবশি) গোলাম ও তোমাদের আমীর হয় তবুও। (সূনান ইবনে মাজাহ শরীফ ৪২) উক্ত হাদিস দ্বারা ইহা প্রমাণিত।

খিলাফতের পতনের পর জাহেলী রাজনীতির কবলে অধিকাংশ মুসলিম দেশ আক্রান্ত হয়ে আছে। মুসলিমদের বিরাট একটি অংশ জাহেলী রাজনীতিকে গ্রহণ করে নিয়েছে দুনিয়া পরিচালনার জন্য। অন্যদিকে ক্ষুদ্র একটি অংশ বিদ'আতী রাজনৈতিক দল গঠন করে আন্দোলন করে আসছে দ্বীন কায়েমের আশায়। ফলে কাঙ্খিত ইসলামিক খিলাফত, এমনকি কোন রাষ্ট্রে শরীআহ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তারা আজ পর্যন্ত পায়নি। ইবলিসের ধোঁকায় পড়ে সিয়াসাহ শারঈয়্যাহ বা শারঈ রাজনীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকাও তাদের ব্যর্থতার বড় একটি কারণ। শারঈ রাজনীতির তিনটি ধারাবাহিক পর্যায় জানা অতীব জরুরী।

প্রথমতঃ মহান আল্লাহ তাআলার দিকে দাওয়াত দান। কোন দল, গোষ্ঠী, জাতির দিকে নয়। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দাওয়াত মানুষের সামনে উপস্থাপন করা।

দ্বিতীয়তঃ বায়'আতের মাধ্যমে কাঙ্খিত খিলাফত গঠন করে খলীফাতুল মুসলিমীন/ইমামুল মুসলিমীন/আমীরুল মুমিনীন-এর আনুগত্য করা। আর তা সম্ভব না হলে কোন রাষ্ট্রেও যদি শরীআহ প্রতিষ্ঠা করা যায় সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক তবে তা কোন কুফরি পন্থায় নয়।

তৃতীয়তঃ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী শরী'আতের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা।

কারন মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে এটাই বলেছেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ اَطِیۡعُوا الرَّسُوۡلَ وَ اُولِی الۡاَمۡرِ مِنۡکُمۡ ۚ فَاِنۡ تَنَازَعۡتُمۡ فِیۡ شَیۡءٍ فَرُدُّوۡهُ اِلَی اللّٰهِ وَ الرَّسُوۡلِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ؕ ذٰلِکَ خَیۡرٌ وَّ اَحۡسَنُ تَاۡوِیۡلًا) হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা মহান আল্লাহ তা'আলার আনুগত্য করো, আনুগত্য করো রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের এবং সেসব লোকদের, যারা উলিল আমর, অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে যদি ইখতেলাফের সৃষ্টি হয়, তাহলে সে বিষয়টি (ফায়সালার জন্যে) মহান আল্লাহ তা'আলা ও রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও, যদি তোমরা মহান আল্লাহ তা'আলার ওপর এবং কিয়ামতের দিনের ওপর ঈমান এনে থাকো! (আর) এ (পদ্ধতিই) হচ্ছে (বিরোধ মীমাংসার) সর্বোৎকৃষ্ট উপায় এবং পরিণামের দিক থেকেও (এটি) হচ্ছে উত্তম পন্থা। (সূরাহ নিসা ৪/৫৯) আয়াতে উল্লেখিত ‘উলুল আমর’ আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে ইসলামিক সালতানাত পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে, যেমন খিলাফতের দায়িত্বে থাকা আমীর। এছাড়াও ‘উলুল আমর’ দ্বীনের হাক্বিকি জ্ঞান অর্জনকারী মুত্তাকী পরহেজগার উলামা ও ফুক্বাহাগণকেও বলা হয়ে থাকে।

মহান আল্লাহ তা'আলা ও রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের দিকে প্রত্যাবর্তন করার অর্থ হলো, উনার কিতাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করা। আর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের বিছল শরীফের (অফাৎ) পর উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করার অর্থ হলো উনার সুন্নাতের দিকে প্রত্যাবর্তন করা।

মহান আল্লাহ তা'আলা আল কুরআনে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও উনার পথকে আঁকড়ে ধরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি আমাদেরকে জামা'আত বদ্ধ থাকতে ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের আদেশ করেছেন। দলাদলি ও মতবিরোধ করা থেকে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ) তোমরা সম্মিলিতভাবে মহান আল্লাহ তা'আলার রজ্জুকে (অর্থাৎ মহান আল্লাহ তা'আলার দীন ও কিতাবুল্লাকে) আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সূরা আলে ইমরান আলাইহিস সালাম ৩:১০৩)। তিনি আরো বলেনঃ (إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِى شَىْءٍ ۚ إِنَّمَآ أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ) নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করেছে। আর দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের কোন কাজের সাথে আপনার কোন সম্পর্কই নেই। তাদের বিষয় মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট, (সময় হলেই) তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে। (সূরা আল আন'আম ৬:১৫৯)। এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক স্পষ্ট বলে দিয়েছেন মুসলিমদেরকে যে, দলে দলে বিভক্ত হওয়া এবং উল্লসিত হওয়া মূলত মুশরিকদের তরিকা (দেখুন সুরাহ রূম ৩০/৩১-৩২) তবে যেসব পির, যেসব বাবা, যেসব নামধারী স্কলার, যেসব দল ও সংগঠন মুসলিম মিল্লাতকে বিভক্ত করেছে, জমিনে মিল্লাতে ইসলামিয়ার ঐক্য ও শক্তি বিনষ্ট করেছে, তাদের বায়‘আত গ্রহণতো অনেক দূরের বিষয়, বরং তাদের এই দলাদলির বিরোধিতা করতে হবে, তাদের কুরআন হাদিস দিয়ে প্রথমে বুঝাতে হবে বিশুদ্ধ দ্বীনের পথে ফিরে আসতে না শুনলে বিদ্রোহী হিসেবে তাদের ধরতে হবে। কারণ আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ (أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏ نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ ‏"‏‏.‏ وَبِهَذَا الإِسْنَادِ ‏"‏ مَنْ أَطَاعَنِي فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللَّهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أَطَاعَنِي، وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيرَ فَقَدْ عَصَانِي، وَإِنَّمَا الإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ، فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَعَدَلَ، فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا، وَإِنْ قَالَ بِغَيْرِهِ، فَإِنَّ عَلَيْهِ مِنْهُ) (পৃথিবীতে) আগমনকারী হিসেবে আমরা সর্বশেষ হলেও সর্বাগ্রে (জান্নাতে) প্রবেশকারী (হবো)। আর যে আমার আনুগত্য করল, সে মহান আল্লাহ তা'আলারই আনুগত্য করল, যে আমার নাফরমানী করল, সে মহান আল্লাহ তা'আলারই নাফরমানী করল। আর যে আমীরের আনুগত্যে খিলাফাত ও বায়'আত গ্রহণ করল, সে আমারই আনুগত্য করলো। আর যে আমীরের নাফরমানী করল, সে আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। উনার নেতৃত্বে জিহাদ্ব এবং উনারই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি তিনি (খলিফা/আমির/ইমাম) মহান আল্লাহ তাআলার তাকওয়ার (বিষয়ে) নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেন, তবে উনার জন্য (আখিরাতে) রয়েছে পুরষ্কার, আর যদি তিনি এর বিপরীত করেন তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে। (বুখারি শরীফ ২৯৫৬, ২৯৫৭) আর এই আমির ও ইসলামিক ফরজ বাইয়াতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কেবল তখনই সম্ভব যখন মানুষ সম্মিলিতভাবে দ্বীন পালনের নিমিত্তে জামাআতবদ্ধ হয়ে নিদ্দ্রিষ্ট একটি স্থানে একত্রে বসবাস করবে, কারণ জামাআত বিহীন একা একা দ্বীন পালন করে হেদায়েত লাভ করা যাবে না। চলবে............।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: