মন চাইলো আর যাকে তাকে “মাজার পূজারী” বলা ও শিরকের ফতোয়ার অপব্যবহার করার উপর একটি আকীদাগত বিশ্লেষণ (বিস্তারিত দলিলভিত্তিক ফায়ছালা) দেওয়া হলো। যারা হক্ব
তালাশি তাদের ইছলাহ’র জন্য।
বর্তমানে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী (মূলত ওহাবীজম দ্বারা ব্রেইন ওয়াশ করা) এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন যে, “মাজারে যাওয়া মানেই শিরক”, কিংবা “মাজারে যারা যেতেন তারা পূজারী”, কিংবা তাদেরকে “মাজার পূজারী” বলেও অভিহিত করেন। এই ধরনের উক্তি একদিকে যেমন উক্তিদাতার সরাসরি ঈমান নষ্টের ঝুঁকি রাখে, অপরদিকে এটি দ্বীনের গভীরতা না বোঝায় জাহেলিয়াতের বহিঃপ্রকাশ হয়।
১. সংজ্ঞাগত ভুল: “মাজার পূজারী” বলা এক ধরনের অপবাদ
- “পূজারী” শব্দটি হিন্দু ধর্মের পরিভাষা, যেখানে পূজা মানে মুর্তি, দেবতার ইবাদত।
- একজন
মুসলিম যদি মাজারে গিয়ে দোআ করেন,
ফাতেহা পড়েন, কিংবা তাজিম করেন, তা কখনো “পূজার” অন্তর্ভুক্ত নয় কেননা মূল উদ্যেশ্যই ফায়েজ বারাকাত লাভ।
- অতএব তাকে গায়ের জোরে, জোর করে “মাজার পূজারী” বললে একদিকে যেমন সে মুছলিম হয়েও “শিরকি” অপবাদে পড়ছে, অন্যদিকে এই অপবাদ তাকফীরের দরজা খুলে দিচ্ছে।
সাধারণত যারা “মাজার পূজারী” বলে ট্যাগ দেয়, তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় কেন তুমি ট্যাগ দাও? তখন ১ টাই জবাব পাওয়া যায়, (যেভাবে তাদের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে) যে, তারা মাজারে সেজদা দেয়, অলিদের সেজদা দেওয়া শিরক, তারা মাজারে গিয়ে চায়, মৃত অলিদের নিকট চাওয়া শিরক। (আপনি যদি হুবুহু এরূপ আক্বিদাহ রাখেন তাহলে নিচে নামুন নতুবা এই নসিহত আপনার জন্যে নয়।)
যাইহোক, দেখা গেলো যে দুই জিনিসের কারনে শিরকের অপবাদ দেওয়া হচ্ছে?
- মাজারে/অলিকে/পিরকে সেজদা দেওয়া।
- মাজারে/অলির নিকট কোন কিছু চাওয়া।
এখন আমাদের এই দুই জিনিস জানতে হবে, এগুলোর শরীয়তের ফায়ছালা কি? এগুলো যেহেতু নয়া কোন আমল নয়, সেহেতু আমাদের রুজু হতে হবে পূর্ববর্তী আয়ীম্মায়ে কেরাম উনাদের দিকে, ৪ মাজহাবের ইমাম সহ সকল গ্রহণযোগ্য ইমামদের দিকে। আজকের, বা সমসাময়িক কোন মুফতির মনগড়া বক্তব্যে নিজের ঈমান নষ্ট করা যাবেনা।
প্রথমে জেনে নেই, মাজারে গিয়ে সেখানে থাকা কোন বরজখি অলী কিংবা জীবিত কোন অলীকে সেজদা দেওয়ার হুকুম কি? রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার রায় কি এই বিষয়ে?
প্রথমে সেজদা ও তার প্রকারভেদ জেনে নিতে হবেঃ মহান আল্লাহ তা’য়ালা ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা ইসলামী শরীয়তে দু’ভাবে বিবেচিত হয়ঃ
১. ইবাদতের নিয়তে সেজদাঃ যেমন মুশরিকরা তাদের
দেব-দেবীদের উদ্দেশ্যে সেজদা করে। তারা মনে করে, অমুক দেবতা অমুক বিষয়ের নিয়ন্ত্রণকারী।
- এই ধরনের সেজদা নিঃসন্দেহে শিরক।
- যদি কোনো মুসলিম ইবাদতের নিয়তে কাউকে সেজদা করে, তাহলে সে শিরকে
আকবার-এ লিপ্ত হলো। তাকে তাওবা করে পুনরায় ঈমান গ্রহণ করতে হবে।
কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (وَ مِنۡ اٰیٰتِهِ الَّیۡلُ وَ النَّهَارُ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ ؕ لَا تَسۡجُدُوۡا لِلشَّمۡسِ وَ لَا لِلۡقَمَرِ وَ اسۡجُدُوۡا لِلّٰهِ الَّذِیۡ خَلَقَهُنَّ اِنۡ كُنۡتُمۡ اِیَّاهُ تَعۡبُدُوۡنَ) আর মহান আল্লাহ তা’য়ালার নিদর্শনসমূহের মধ্যে রাত দিন, সূর্য ও চন্দ্র (কয়েকটি নিদর্শন মাত্র); অতএব তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না (এমনকি) চাঁদকেও নয়, বরং তোমরা সেজদা করো মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে, যিনি এর সব কয়টি সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা একান্তভাবে উনারই ইবাদত করতে চাও (তাহলে তোমরা উনাকেই সেজদা করো)। (হা-মীম আস-সাজদা “ফুসসিলাত” ৪১:৩৭) অতএব রব তায়ালা উনার সমকক্ষ মনে করে উনারই কোন সৃষ্টিকে ইবাদতের মানসে সেজদা করা যেরূপ চন্দ্র পূজারী, সুর্যপূজারী, মুশরিকরা তাদের দেবতাদের উদ্যেশ্য করে, এরূপ করা শিরক, আর এগুলো বলা হচ্ছে মূলত অমুছলিমদের যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ইলাহ মানেনা। এরূপ কোন আমল কোন মুছলমান করেনা, তাই এই বিষয়ের নিছবত করা শিরকের অপবাদ দেওয়া, যা নিজের দিকে ফিরার ১০০% চান্স থাকে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত না থাকলে।
২. তা’য়যীম (সম্মান) এর নিয়তে সেজদাঃ মানুষের দুনিয়ায় আগমনের সূত্রপাত এই তা’য়যীমি সেজদা, যেটা না দেওয়ার কারনে আজাজিল ইবলীছে পরিণত হয়েছে, আর তাছাড়া পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যে এটা স্বাভাবিক একটি আমল, যায়েজ রূপেই বিদ্যমান ছিল। এর ব্যপারে ৩ টা ঘটনা মওজুদ কুরআন হাদিছে।
১) পবিত্র আল কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِكَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ اَبٰی وَ اسۡتَكۡبَرَ ٭۫ وَ كَانَ مِنَ الۡكٰفِرِیۡنَ) আমি যখন ফেরেশতা য়ালাইহিমুছ ছালামদের বললাম, তোমরা আদম য়ালাইহিছ ছালামকে সেজদা করো, অতঃপর ইবলীছ ছাড়া সবাই সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন; ইবলিছ সেজদা করতে অস্বীকার করলো, সে অহংকার প্রদর্শন করলো এবং সে না-ফরমানদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো। (ছুরাহ আল-বাক্বরহ ২:৩৪)
২) পবিত্র আল কুরআন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (وَ رَفَعَ اَبَوَیۡهِ عَلَی الۡعَرۡشِ وَ خَرُّوۡا لَهٗ سُجَّدًا ۚ وَ قَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاۡوِیۡلُ رُءۡیَایَ مِنۡ قَبۡلُ ۫ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّیۡ حَقًّا) আর তিনি (ইউসুফ য়ালাইহিছ ছালাম) উনার পিতা-মাতাকে নিজের সিংহাসনের পাশে মর্যাদার আসনে বসালেন। এরপর সবাই উনার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। তখন তিনি বললেন, ‘হে আমার পিতা! এটাই সেই স্বপ্নের বাস্তব ব্যাখ্যা, যা আমি পূর্বে দেখেছিলাম। আমার রব এটিকে সত্যে পরিণত করেছেন। (ছুরাহ ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালাম ১২:১০০) উক্ত ছুরার শুরুর দিকে পাওয়া যায় যেখানে ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালামের কথা মহান আল্লাহ পাক নকল করেন (اِذۡ قَالَ یُوۡسُفُ لِاَبِیۡهِ یٰۤاَبَتِ اِنِّیۡ رَاَیۡتُ اَحَدَعَشَرَ كَوۡكَبًا وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ رَاَیۡتُهُمۡ لِیۡ سٰجِدِیۡنَ) যখন ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালাম উনার আব্বাজানকে বলেছিলেন, ‘হে আব্বাজান! আমি (স্বপ্নে) দেখেছি এগারটি তারকা আর সূর্য ও চন্দ্রকেও দেখলাম যে তারা আমাকে সেজদাহ করছে। (ছুরাহ ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালাম ১২:৪) এগারটি নক্ষত্র থেকে উদ্দেশ্য হল, ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালামের এগার ভাই। আর চাঁদ ও সূর্য থেকে উদ্দেশ্য হল, উনার পিতা-মাতা। এ স্বপ্নের তা’বীর ৪০/৮০ বছর পর যখন উনার পিতা-মাতা সহ সমস্ত ভাইয়েরা মিশরে গিয়ে উনার সামনে সেজদাবনত হয়েছিলেন, তখন তা বাস্তব রূপ পেয়েছিল, এটাই তিনি ১০০ নং আয়াতে উনার পিতাকে লক্ষ করে বলেছিলেন (وَ قَالَ یٰۤاَبَتِ هٰذَا تَاۡوِیۡلُ رُءۡیَایَ مِنۡ قَبۡلُ ۫ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّیۡ حَقًّا)। অতি বুঝদার বাঙ্গাল মুফতের কেউ কেউ এর তরজমা করে যে, তারা সবাই আদব ও সম্মান প্রদর্শনে কেবল কল্লা ঝুঁকিয়েছিলেন উনার সামনে অবনত হয়ে। কিন্তু (وَخَرُّوْا لَهُ سُجَّدًا) এই বাক্যের শব্দগুলো প্রমাণ করছেন যে, তারা ইউসূফ য়ালাইহিছ ছালামের সামনে মাটিতে সেজদাবনত হয়েছিলেন। অর্থাৎ সেজদার অর্থ এখানে সেজদাই, যা আমরা নামাজে দিয়ে থাকি। তবে এই সেজদা তা’যীমের সেজদা, ইবাদতের সেজদা নয়। আর সম্মানের (তা’য়যীমি) সেজদা ইয়াকূব য়ালাইহিছ ছালামের শরীয়তে জায়েয ছিল।
কুরআন হাদিছের বাহীরে একটি ঘটনা পাওয়া যায়, কিছু তাফসীরের কিতাবেঃ একদা পাপিষ্ঠ ইবলিশ মূছা য়ালাইহিছ ছালামের নিকট উপস্হিত হয়ে বলতে লাগলঃ হে মূছা য়ালাইহিছ ছালাম আপনাকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা রিছালাত ও নবুওয়্যাতের সম্মানে ভূষিত করেছেন, আপনার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। হযরত মূছা য়ালাইহিছ ছালাম বললেন, তা তো অবশ্যই; কিন্তু তোমার উদ্দেশ্য কি? তুমি আমার কাছে কি চাও? এবং তুমি কে? ইবলিশ বললো, “হে মূছা য়ালাইহিছ ছালাম!, আপনি আপনার প্রভুর কাছে বলুন যে, আপনার একজন মাখলুক তওবা করতে চায়। তখন মহান আল্লাহ তা’য়ালা মূছা য়ালাইহিছ ছালামের নিকট ওহী প্রেরণ করলেনঃ হে মূছা য়ালাইহিছ ছালাম! আপনি তাকে বলে দিন যে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা তোমার দরখাস্ত শ্রবণ করেছেন। অতঃপর তাকে আদেশ করুন, সে যেনো আদম য়ালাইহিছ ছালামের কবরে গিয়ে কবরকে সম্মুখে রেখে সিজদা করে। যদি সে এভাবে সিজদা করে নেয়, তা হলেও আমি তার তাওবা কবূল করে নিবো এবং তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবো। হযরত মূছা য়ালাইহিছ ছালাম ইবলীসকে এ কথা জানালে সে রাগে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে যায় এবং দম্ভের সাথে বলতে শুরু করে, “হে মূছা য়ালাইহিছ ছালাম! আমি আদম য়ালাইহিছ ছালামকে বেহেসতে সেজদা করি নাই, এখন উনার মৃত্যুর পর উনার কবরে গিয়ে উনাকে সেজদা করতে পারি না। আরেকটি ঘটনা বর্ণিত আছে যেঃ- ইবলিশকে যখন দোযখে নিক্ষেপ করার পর কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে, তখন জিজ্ঞাসা করা হবে, “ইবলিশ মহান আল্লাহ তাআলার আযাব কেমন হচ্ছে? সে বলবে, “অত্যন্ত কঠিন, এর চেয়েও অধিক কঠিন হতেই পারেনা। এ সময় ইবলিশকে বলা হবে, হযরত আদম য়ালাইহিছ ছালাম তো বেহেসতে আছেন, তুমি এখনও উনাকে সেজদা করে মাফ চেয়ে নাও, তোমাকে মাফ করে দেওয়া হবে। এ কথার পরও সে হযরত আদম য়ালাইহিছ ছালামকে সেজদা করতে অস্বীকার করবে। অন্য আরেক রেওয়াতে বর্ণিত আছে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইবলীশকে এক লক্ষ বৎসর পর পর দোযখ হতে বাহিরে আনয়ন করবেন এবং হযরত আদম য়ালাইহিছ ছালামকে ও বাহিরে আনা হবে। অতঃপর ইবলীশকে সেজদা করার হুকুম করা হবে। তখনও বার বার ইবলিশ তা করতে অস্বীকার করবে এভাবে পুনঃ পুনঃ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
অতএব, উপরোক্ত দুই ধরনের সেজদা খোদ কুরআনের আয়াত দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে, এক ধরণের সেজদা সরাসরি শিরক যা ঐ ব্যক্তিরা মাবুদ মনে করে যেকোন কিছুকে করে থাকে, সেটা চন্দ্র, সুর্য, মুর্তি, গাছপালা যাই হোক। আর অন্য ধরণের সেজদা পূর্ববর্তী নবী, রছুল, মুমিনদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। এই ধরণের সেজদা আগের শরীয়তে জায়েয ছিল তা’য়যীমিরূপে, অতএব কোন মুছিলমকে মাজার/অলি বা পিরকে সেজদা করতে দেখলে সেটা শিরক বলে ফাতওয়া মারা স্পষ্ট ভ্রষ্টতা। “হারাম” “শিরক” “কুফর” প্রতিটি শব্দের শরঈ মানে আছে, সেটাই জানতে হবে। না জানলে চুপ থাকা ফরজ। গোমরাহী ছড়ানো যাবেনা, যা ফেত্নায় রূপ নিবে, আর ফেত্না হত্যার চেয়েও জঘন্য।
তাহলে কি আমি তা’য়যীমি সেজদা যায়েজ করে দিচ্ছি?
মোটেও না, আমি কেবল মনগড়া কপিপেষ্ট আলাপ, ব্রেইন ওয়াশ না হতে সাহায্য করতেছি। মূল বিষয়টা বুঝাতে চেষ্টা করছি যে, যে আমলের দিকে ইশারা করা হবে তার সঠিক দরজা কি? তাহলে “মাজারে সেজদা” করলে সেটা শিরক হবে না?
সেটা নির্ভর করবে সেজদাকারির নিয়তের উপর। যদি কেউ মনে করে ঐ মাজারে থাকা অলী বা জীবিত কোন পীর স্বয়ং নিজ ক্ষমতাবলে উপকার-অপকার দিতে পারেন যেরূপ আরবের মুশরিকরা মনে করতো, কেবল তখনই তা শিরক হবে, কিন্তু যদি কেউ তা’যীম বা গভীর ভক্তির কারণে এমনটি করে, তবে তা শিরক হবেনা।
তাহলে হবেটা কি?
হবে আমাদের শরীয়ত অনুসারে যা তাই, আর আমাদের শরীয়ত প্রনেতা কোন ওহাবি মুল্লা, খারেজী মুল্লা নয়, খোদ রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তিনিই আমাদের মূল উছুল, কুরআন হাদিছের প্রত্যেক হুকুম আহকাম আমরা সেভাবেই মানি যেভাবে মানতে বলা হয়েছে।
এখন দেখা যাক রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম কি বলেন তা’য়যীমি সেজদার ব্যপারে। তাহলে যারা দেয় তারাও ফায়সালা পাবে, আর যারা শিরক বলে তারাও ফায়সালা পাবে এবং উভয়ে হেদায়েত পাবে। প্রথমতো মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوۡلُ فَخُذُوۡهُ وَ مَا نَهٰىكُمۡ عَنۡهُ فَانۡتَهُوۡا ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ) রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তোমাদেরকে যা (আদেশ) দেন, তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক আর মহান আল্লাহ তাআলা উনাকেই তোমরা ভয় কর; নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা শাস্তি দানে (অত্যন্ত) কঠোর। (আল কুরআন ৫৯/৭) কথা একেবারে স্পষ্ট, যে রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার আদেশ নিষেধ মানা ফরজ যেরূপ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার, না মানলে মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে “শাদিদুল য়ীক্বব” রূপে পাবে, যখন শাদিদ ব্যবহার হবে তখন বুঝতে হবে খুবই এক্সট্রিম দরজার শাস্তি দেওয়া হবে।
এবার দেখবো রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম সেজদা-এ তা’য়যীমির ব্যপারে কি বলেন?
১নং হাদিছ) হাদিছ শরীফে এসেছেনঃ (عَنْ قَيْسِ بْنِ سَعْدٍ قَالَ: أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَقُلْتُ: لَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أَحَق أَن يسْجد لَهُ فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ الْحِيرَةَ فَرَأَيْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِمَرْزُبَانٍ لَهُمْ فَأَنْتَ أَحَقُّ بِأَنْ يُسْجَدَ لَكَ فَقَالَ لِي: «أَرَأَيْتَ لَوْ مَرَرْتَ بِقَبْرِى أَكُنْتَ تَسْجُدُ لَهُ؟» فَقُلْتُ: لَا فَقَالَ: «لَا تَفْعَلُوا لَو كنت آمُر أحد أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لِأَزْوَاجِهِنَّ لِمَا جَعَلَ اللَّهُ لَهُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ حق) কায়স ইবনু ছা’দ রদ্বিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার (ইরাকে অবস্থিত, কূফার সন্নিকটবর্তী) হীরা নামক অঞ্চলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি দেখলাম, তারা তাদের এক ‘মারজুবান’ (নেতা বা প্রশাসক)-কে সেজদা করছে। (তাদের এই দৃশ্য দেখে) আমার মনে হলো, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তো তাদের চেয়েও অনেক বেশি সম্মানিত ও মর্যাদার অধিকারী। তিনি তো (তা’য়যীমি সেজদার) আরও বেশি হকদার। অতঃপর আমি রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম-এর নিকট এসে বললাম, আমি হীরা’র সফরে দেখতে পেলাম যে, সেখানকার অধিবাসীরা তাদের নেতাকে সেজদা করছে। আমি স্থির করেছি যে, আপনিই সেজদার অধিক হকদার। এ কথা শুনে রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, (তবে কি আমার অফাৎ-এর পরে) তুমি আমার কবরের সম্মুখ দিয়ে গমনকালে কবরকে সিজদা করবে? উত্তরে আমি বললাম, (নিশ্চয়) না। রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বললেন, তাহলে (জীবিত অবস্থায়ও) সেজদা করো না। কেননা আমি যদি (মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া) অন্য কাউকে সেজদা করতে বলতাম তবে স্বামীদের জন্য স্ত্রীদেরকেই সেজদা করার নির্দেশ দিতাম। (মিশকাত ৩২৬৬, আবূ দাঊদ ২১৪০, দারিমী ১৫০৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ২৭৬৩)
২নং হাদিছ) হাদিছ শরীফে এসেছেনঃ (حَدَّثَنَا أَزْهَرُ بْنُ مَرْوَانَ قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ الْقَاسِمِ الشَّيْبَانِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي أَوْفَى قَالَ لَمَّا قَدِمَ مُعَاذٌ مِنْ الشَّامِ سَجَدَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَا هَذَا يَا مُعَاذُ قَالَ أَتَيْتُ الشَّامَ فَوَافَقْتُهُمْ يَسْجُدُونَ لِأَسَاقِفَتِهِمْ وَبَطَارِقَتِهِمْ فَوَدِدْتُ فِي نَفْسِي أَنْ نَفْعَلَ ذَلِكَ بِكَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَلَا تَفْعَلُوا فَإِنِّي لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا) আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআয বিন জাবাল রদ্বিআল্লাহু আনহু শাম থেকে ফিরে এসে রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে সেজদা করেন। রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বললেনঃ হে মু’আয! এটা কী? তিনি বললেন, “আমি শামে গিয়ে দেখেছি, তারা (খ্রিষ্টানরা) তাদের বিশপ ও নেতাদের সামনে সেজদা করে। তখন আমার মনে হলো, আপনি তো তাদের চেয়েও অনেক বেশি হকদার যে, আপনাকে সেজদা করা হোক।” তখন রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বললেনঃ “তোমরা এমন কিছু করোনা” আমি যদি মহান আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করার জন্য আদেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের আদেশ করতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সেজদা করে। (আবুদ দাউদ ১৮৫৩)
এখানে দুই হাদিছ থেকে ছ্বহাবিয়ে রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনাদের আমল থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেজদা-এ তা’য়যীমির দরজা কি?
আজকে যারা কোন মানুষের ইলমের কমতির ফলে ছ্বহাবিয়ে রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনাদের মত মুহব্বত প্রকাশ করতে তাদের পির/মুর্শিদ কিংবা মাজারে সেজদা করে বসছে, তাদের মুশরিক বলে, তারা নিকৃষ্ট শ্রেণীর দাজ্জাল, রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার চেয়ে বেশী বুঝা জ্ঞানপাপী তারা। রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার দুইজন ছ্বহাবির আমল বিদ্যমান যার একজন সেজদা করতে চাইলে অনুমতি দেন নি, আরেকজন করার পর নিষিদ্ধ করেছেন। কই রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম দুইজনের একজনকেও তো বললেন না তোমরা শিরক করেছ, তাওবা কর, কলিমা পড়ো, করাইছেন? পড়াইছেন? রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম শিরক কি জানতেন না? রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ছ্বহাবিদের শিরক কি শিক্ষা দেন নাই? উনারা শিরকের মাছালা বুঝলেন না আর ১৪০০ বছর পরের টেংরা পুটি শিরকের মাছালা বুঝতেছে? অথচ মুআয বিন জাবাল রদ্বিআল্লাহু আনহু উনাকে যখন শামে পাঠানো হয় তখন রছুলে পাক রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার সাথে কি আলাপ করেছিলেন সেটার দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যাবে যে জ্ঞানপাপিরা যে শিরকের বুলি আওড়ায় তা কতো জঘন্য আক্বিদাহ।
এইযে তিনি শাম থেকে ফিরে এসে রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে সেজদা দিয়ে দিলেন সরাসরি, অথচ উনাকে শামে পাঠানোই হয়েছিলো শরীয়ত অনুসারে সেখানের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য কাজি রূপে। জাহিলদের নিকট প্রশ্ন? রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম কি শিরকের মাছালা না জানা একজন ব্যক্তিকে ইছলামিক খিলাফতের কাজি বানিয়ে দিয়েছিলেন? মশহুর ছ্বহাবি মুআয বিন জাবাল রদ্বিআল্লাহু আনহুর কি শিরকের মাছলা বুঝার এভিলিটি আমাদের আজকের কথিত ব্রেইন ওয়াশ যুব সমাজের চেয়ে কম ছিলো? উত্তর পাওয়া যাবে?
অতএব হিসাব খুব সোজা, স্পষ্ট, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে যখন মুআয বিন জাবাল রদ্বিআল্লাহু আনহু সেজদা দিলেন, তখন রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তা’য়যীমি সেজদাকে উনার শরীয়তে নিষিদ্ধ করে দিলেন, এটা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক উনার কোন কুরআনী ওহীর দ্বারা নয়, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার নিজের সিদ্ধান্তেই সম্মানিত দ্বীন ইছলামে সেজদা-এ তা’য়যীমি নিষিদ্ধ করে দিলেন, কিন্তু এটি শিরক হিসেবে ফাতওয়া দেয় নাই, অন্যথায়, তিনি মুআয বিন জাবাল রদ্বিআল্লাহু আনহুকে “তুমি শিরকি কাজ করলে” বলতেন, বলতেন শিরক করে তুমি মুশরিক হয়ে গেছো, কলিমা পড়ো। কিন্তু তা করেননি, তাওবা পর্যন্ত করান নি। রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম নিষিদ্ধ করেছেন, হারাম করে দিয়েছেন, সেটা উনার ইচ্ছা, উনি শরীয়তপ্রণেতা উনার যা ইচ্ছা করবেন, যেভাবে করবেন আমরা সেভাবেই মানি।
তাহলে কি “মাজারে সেজদা” করলে সেটা শিরক হবে এখন?
সেটা নির্ভর করবে নিয়তের উপর। যদি কেউ মনে করে ঐ অলী বা
পীর স্বয়ং নিজ ক্ষমতাবলে উপকার-অপকার দিতে পারেন, তবে তা শিরক।
কিন্তু যদি কেউ তা’য়যীমি বা গভীর ভক্তির কারণে এমনটি করে, তবে তা শিরক তো হবেনা, কিন্তু হারাম ও মারাত্বক কবিরা গোনাহ হবে।
ইসলামি শরীয়তে ফয়সালা হয় নিয়তের উপরঃ
যে ব্যক্তি কোন হারাম কিছু করে এবং তা হারাম মনে করে, সে গোনাহগার; কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুমের সাথে দ্বিমত পোষণ করেনা এর বদৌলতে সে ইসলামের বাইরে কিন্তু চলে যায় না।
উদাহরণঃ কেউ মদ খায়, কিন্তু মনে করে এটা গোনাহ, সে ফাজির, কাফের নয়। কেউ গান শোনে, ঘুষ খায়, জিনা করে, কিন্তু মনে করে এটা হারাম, তাহলে সে গোনাহগার, কাফের নয়। কিন্তু কেউ যদি বলে “এটা হারাম না” অথচ সে ঔ আমল না করলেও হারামকে হালাল মনে করছে, অথচ মহান আল্লাহ তা’য়ালা হারাম করেছেন এটা আকীদাগত কুফর। অর্থাৎ আমল না করেন শুধু মাত্র দ্বিমতে সে ইছলাম থেকে খারিজ অর্থাৎ মুর্তাদ হয়ে যাবে।
মূল নীতিঃ “প্রতিটি আমলের দরজা নির্ধারিত”
- নিয়ত না বুঝে ফতোয়া দেওয়া মানে দ্বীনের সঙ্গে আপন খেয়ালখুশি জুড়ে দেওয়া
খুবই ভয়ানক, আর এটা সবচেয়ে বড় শিরকে আক্ববর, আর এটা বলেছেন খোদ মহান আল্লাহ
তায়ালা, এই জিনিসটাই অনেকে জানে না। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (اَرَءَیۡتَ
مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَكُوۡنُ عَلَیۡهِ وَكِیۡلًا
اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَكۡثَرَهُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ
هُمۡ اِلَّا كَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا) (হে
নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আপনি কি সেই ব্যক্তির
প্রতি লক্ষ্য করেন নি? যে তার (নফছের) খেয়ালখুশিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ
করেছে? তবুও কি আপনি তার আমলের যিম্মাদার হতে চান? আপনি কি সত্যিই মনে করেন, (যে)
তাদের অধিকাংশ লোক (আপনার হাদিছ) শুনে কিংবা (এর মর্ম তারা) বুঝে? (আসলে) ওরা
হচ্ছে পশুর মত, বরং (কিছু কিছু ক্ষেত্রে) তারা (তাদের চাইতেও) বেশী পথভ্রষ্ট। অন্য আরেকটি আয়াতেও
বলেনঃ
(اَفَرَءَیۡتَ
مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ وَ اَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّ
خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَ قَلۡبِهٖ وَ جَعَلَ عَلٰی بَصَرِهٖ غِشٰوَۃً ؕ
فَمَنۡ یَّهۡدِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ) আপনি
কি সে ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছেন? যে তার (নফছের) খেয়ালখুশিকে (তার) নিজের
মাবূদ বানিয়ে নিয়েছে? এবং (পর্যাপ্ত পরিমাণ দ্বীনি) জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও
মহান আল্লাহ তা’আলা তাকে গোমরাহ করে দিয়েছেন, তার কান ও তার অন্তরে তিনি
মোহর মেরে দিয়েছেন, তার চোখে তিনি পর্দা এঁটে দিয়েছেন; এমন ব্যক্তিকে মহান
আল্লাহ তা’য়ালার পর আর কে (আছে যে) তাকে হেদায়াতের পথ দেখাবে? এরপরও কি
তোমরা কোন উপদেশ গ্রহণ করবে না?
- অতএব হারাম ≠ শিরক ≠ কুফর - প্রতিটি শব্দের শরঈ মানে আছে, সেটাই জানতে
হবে। না জেনে নিজের মনে চাইলো আর মাজার পূজারী, কবর পূজারী, পির পূজারী,
বিদআতি বলে ফতোয়া মারা মূলত নফছের খেয়ালখুশিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহন করা। মনে
রাখতে হবে যে কেউ যদি কাউকে হত্যা করে তাহলে তার শাস্তি হলো তাকেও অনুরূপ
হত্যা করা হবে, কিন্তু তাকে যদি হত্যার জন্যে পাথর মেরে রজম করে মারা হয়
তাহলে সেটা নফছের খেয়ালখুশিকে নিজের ইলাহরূপে গ্রহণ করার শামিল, অথচ ফায়সালা
একিই? জিনার শাস্তিও পাথর মেরে হত্যা করা, কাতলের বেলায় ও কাতল করা। এইখানে
একটি সুক্ষ ফাঁক আছে, এটা না বুঝলে অটো শিরকে আকবরে লিপ্ত নয়ে কখন কবে বেঈমান
হয়ে যাবেন বুঝবেন ও না।
- যেকোন বিষয়ে না জানলে চুপ থাকা ফরজ, না হলে গোমরাহী ছড়াবে। আর যেকোন মানুষের সাথে তর্কের আগে তার সম্পর্ক পুর্নরূপে অবগত হওয়া উচিৎ, নতুবা নফছের খেয়ালখুশিকে প্রাধান্য দিয়ে অপবাদ দিলে সেটাও নফছের পূজার অন্তর্ভুক্ত হবে।
শেষ কথাঃ “মাজার পূজারী” বলা একজন মুসলমানের ঈমান নিয়ে খেলা করা, যা নিজের ঈমান নিয়ে নিবে যাকে বলা হচ্ছে সে তা না হলে। সেজদার প্রকার বুঝে শিরক, হারাম বা নাযায়েজ ফায়ছালা করতে হবে। আগের উম্মতের জন্যে সেজদা জায়েয ছিল, তাই সেজদা মানেই শিরক এমন ডালাও ফতোয়া আহলে ছুন্নতের আকীদাহ-বিরোধী নাহলে প্রথমে আল্লাহ পাক, তারপর নবীদের ও উনাদের পরিবারের উপর শিরকের ফতওয়া যাবে, কেননা সেজদা-এ তা’য়যীমি দিতে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক আদেশ করেন, আর ইউছুফ ইয়ালাইহিছ ছালাম উনার পরিবার উনাকে দেন, তাই “মাজার পূজারী” বলে কাউকে শিরকের তকমা দিলে নিজেই শিরকের ফতোয়া দেওয়ার গোনাহে লিপ্ত হতে হয়। এই কাজ ফিকহে তাকফীর (তাকফীরের ফিকহ) অনুযায়ী অত্যন্ত বিপজ্জনক। হাদিছ শরীফে এসেছেঃ “যে ব্যক্তি তার ভাইকে কাফের বললো, অথচ সে কাফের নয়, তবে সেই বাক্য তার দিকেই ফিরে যাবে”। (বুখারী শরীফ ৫৭৫৩) আমাদের শরীয়তে সেজদা-এ তা’য়যীমি হারাম, কিন্তু শিরক নয় এটি আহলুস ছুন্নাহ ওয়াল জামাআতের উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত মত, কেননা শিরকের হুকুম সব জামানায় এক সমান, আগে যায়েজ ছিলো এখন শিরক এরূপ কোন কিছুই নাই শিরকের বেলায়। এর পরেও যদি কেউ ইছলাহ হতে না চায় তাহলে জাহান্নামের দিকে হাটতে থাকুক, কার এতো ঠেকা পড়েছে দ্বীন শিখানোর।
বিঃদ্রঃ আমাদের কাছে, মাজারে/অলিকে সেজদা দেওয়া, বিড়ি, সিগারেট, গান-বাজনা, মদ-গাজা, জিনা, চুরি, মিথ্যা বলা, গীবত, চোগলখুরি, টেলিভিশন, নাটক-সিনেমা, প্রেম ভালোবাসা নামক সকল কাজই হারাম, কবিরা গুনাহ। এগুলোকে হারাম অস্বীকারকারি মুর্তাদ। এর পরেও কেউ মনগড়া ট্যাগ দিয়ে নফছের খেয়ালখুশিকে তার নিজের মাবূদ বানালে কিছুই করার নাই। আর এইসব ট্যাগিং যারা করে, তারা অটো অলি আল্লাহ উনাদের বিদ্বেষী হয়, এখন যারা অলী আউলিয়াদের ব্যপারে কটূক্তি করে, বিদ্বেষ, শত্রুতা পোষণ করে, তাদের পরিণতি কি হয়?
0 ফেইসবুক: