আজকাল ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি
বিষয় “আহলে বাইত” ও “আওলাদে রসূল” নিয়ে
অনলাইন অফলাইনে টানা হেঁচড়া চলছে। অজ্ঞতার
দরূন অনেকে জানেও না যে “আহলে বাইত” ও “আওলাদে রসূল” কি ও
উনাদের মর্যাদা কি। আবার অনেকে জেনেও যারা জানে মানে তাদের উপর আধিপত্য বিস্তার লাভের
অপচেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। অফলাইনের
চেয়ে অনলাইন এই ব্যপারে বেশী সরব তাই অনলাইনেই উপস্থাপন করা প্রয়োজন বলে মনে করলাম।
আসুন প্রথমে জেনে নেই “আহলে বাইত” ও “আওলাদে রসূল” এর মানে
কি?
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আহলে বাইত কয়েক
প্রকার, যা অনেকেই জানেন না। মহান আল্লাহ
পাক আল কুরআনের সূরাহ আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে সর্ব প্রথম রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের আহলে বাইত কারা, এই উদ্যেশ্যে আয়াতে তাত্বহির নাযিল
করেনঃ (اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا) হে (আহলে বাইত) নবী (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার, মহান আল্লাহ পাক তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে
দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে (পাক) পবিত্র করতে।
কিছু জ্ঞানপাপী শিয়া-খারেজি ও কথিত কিছু
সুন্নী খোঁদার উপর খোদাগিরি করে বলে থাকে ‘আহলে বাইত’
হলেন
কেবল হযরত আলী, ফাতেমা, এবং
হাসান-হুসাইন আলাইহিমুস সালাম, এবং নবী-পত্নীগণকে তারা বাইরে মনে করে। নাউযুবিল্লাহ!!! অথচ এরূপ তরতাজা আয়াত যার আগের প্রায় ১৫ আয়াত
ও পরের ২০ আয়াতে উম্মাহাতুল মু’মিনিন
আলাইহিন্নাস সালামদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক আলোচনা করলেন, আর মাঝখান থেকে এক আয়াতে তারা
কেবল ৪ জনকেই যুক্ত করে দিতে চায়। অথচ সূরাহ
হুদে মহান আল্লাহ পাক স্পষ্ট বলে দিয়েছেন নবীর আহলিয়াগণও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের শেষ বয়সে যখন আওলাদ প্রদানের
সুসংবাদ দিলেন মহান আল্লাহ পাক তখন উনি আশ্চর্য হয়ে যান, যার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহী
নিয়ে আসা ফেরেশতা আলাইহিমাস সালাম বলেন, যা আল্লাহ পাক হুবুহু আল কুরআনে উল্লেখ
করেছেনঃ ( قَالُوۡۤا اَتَعۡجَبِیۡنَ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰهِ رَحۡمَتُ اللّٰهِ وَ بَرَکٰتُهٗ عَلَیۡکُمۡ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ ؕ اِنَّهٗ حَمِیۡدٌ مَّجِیۡدٌ ) তারা
(ফেরেশতারা) বললেন, ‘মহান
আল্লাহ পাকের সিদ্ধান্তে আপনি আশ্চর্য হচ্ছেন? ওহে (ইবরাহীম আলাইহিস সালামের) পরিবারবর্গ! আপনাদের উপর রয়েছে
মহান আল্লাহ পাকের দয়া ও বরকতসমূহ,
তিনি
বড়ই প্রশংসিত, বড়ই মহান।’
এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে ইবরাহীম আলাইহিস
সালাম-এর স্ত্রীকে এখানে ফিরিশতাগণ ‘আহলে বাইত’
বলে
সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্য বহুবচন (আপনাদের) শব্দ ব্যবহার করেছেন। যাতে প্রথমতঃ এই কথা প্রমাণ হয় যে, স্ত্রীরাও আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়তঃ এ প্রমাণ হয় যে, ‘আহলে বাইতের’
জন্য
বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করাও সঠিক। একিই
জিনিস সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
আলিহি ওয়াসাল্লামের পাক পবিত্রা স্ত্রী উম্মতের মাতাগণের বেলায়ও ‘আহলে বাইত’ বলেছেন এবং উনাদেরকেও বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ
দ্বারা সম্বোধন করেছেন।
শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিস দেহলবী
রহমতুল্লাহী তায়ালা আলাইহি, যাকে শায়েখে মুহাক্বিক আলাল ইতলাক্ব বলা হয় এবং সুন্নী
সহ ওহাবী, দেওবন্দি, ফেরকার মানুষের নিকট যিনি একজন নির্ভরযোগ্য আলীম, উনার
দৃষ্টিতে উক্ত আয়াতে পাকে যাদের আল্লাহ পাক আহলে বাইত বলে সম্বোধন করেছেন, সবার প্রথমে
উনারা হলেন উম্মাহাতুল মু’মিনিন
আলাইহিন্নাস সালাম, উনাদেরকে বলা হয় আহলে বাইতে মাসকান, এছাড়াও আহলে বাইতে সুকনাও
বলা হয়ে থাকে অর্থাৎ যারা ঘরণী বা ঘর ওয়ালী। দ্বিতীয়
কিসিমের আহলে বাইত যারা আছেন তারা হলেন সেইসব ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিত্বা মুবারক,
যারা রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার ঔরসে জন্ম
নিয়েছেন, উনাদের আহলে বাইতে বিলাদাত বলা হয়ে থাকে, যারা রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আওলাদ হওয়ার কিসমত, এজাজ লাভ করেছেন
সেইসব ছেলে ও মেয়েরা। তৃতীয়
আরেক কিসিম আছেন যাদের বলা হয় আহলে বাইতে নসব, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার খানদান মুবারকের (বনি হাশিমের) সেইসব আহবাব যারা কলিমা
পড়েছেন এবং যাদের উপর যাকাত/সদাকা হারাম, উনারাও কিয়ামত পর্যন্ত আনে ওয়ালা আহলে
বাইতে রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের অন্তর্ভুক্ত।
স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, আহলে সুন্নত ওয়াল
জামায়াত অনুসারে আহলে বাইত হলেনঃ উম্মাহাতুল মু’মিনিন, আওলাদে রসূল, খানদানে রসুল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
আলিহি ওয়া সাল্লামের যারা ঈমানদার ছিলেন মৃত্যু পর্যন্ত তারা ও তাদের আলে আওলাদেরা
কিয়ামত পর্যন্ত যারা আসবেন ইমানদার হিসেবে।
উম্মাহাতুল মু’মিনিন ১৩ জন আমরা সাবাই জানি, আওলাদে
রসূল ৪+৩=৭ জন এটাও আমরা জানি, কিন্তু অনেকেই জানিনা খানদানে রসূলের মধ্যে থেকে নির্ধারিত
সেইসব আহলে বাইত কারা, হাদিস, ও শরাহ এবং ইমামদের মতামত ঘেটে পাওয়া যায়ঃ “উনারা হলেন হযরত আলী, হযরত হারিস, হযরত আকীল, হযরত জা’ফর ও হযরত আব্বাস আলাইহিমুস সালামদের
আলে আওলাদগণ, যাদের ও তাদের ঈমানদার বংশধরদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত যাকাত, সদাকা
হারাম। (দেখতে পারেন দলিল আরবিতেঃ প্রথম লিঙ্ক, দ্বিতীয়
লিঙ্ক, তৃতীয় লিঙ্ক)
অতএব কুরআন দ্বারা প্রমাণিত হলো
রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের আহলিয়া তথা মুমিনগণের
মাতা উনারা খোদ আল্লাহ পাকের নির্দেশে প্রথম আহলে বাইত। আর হাদিসের আলোকে আওলাদ ও খানদানের লোকেরা।
স্মরণীয় যে, সকল ঈমানদার আওলাদে রসূলই
আহলে বাইত, কিন্তু সকল আহলে বাইত আওলাদে রসূল নন। আওলাদে রসূল বলা হয় তাদের যারা পিতার দিক থেকে ক্রমান্বয়ে
হযরত আলি আলাইহিস সালামের সন্তানদের মধ্যে কেবল হযরত ফাতেমা আলাইহাস সালামের সাথে
উনার পুত্রদের রক্তের (বংশের) সম্পর্ক দ্বারা যুক্ত। আর আহলে বাইত বলা হয় নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি
ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগন তথা উম্মুল মুমিনিন আলাইহিন্নাস সালাম ও উনার বংশের (বনী হাশিম
এবং বনী আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের ঈমানদার লোকজনের) সাথে রক্তের সম্পর্ক দ্বারা
যুক্ত সবাইকে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে আওলাদ তো ৭ জন
তাহলে একজনের সন্তানেরা কেনো আওলাদে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া
সাল্লাম? এর দলিল হলোঃ রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন আমার বংশ কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে আমার মেয়ে ফাতিমা দ্বারা, একারণে হযরত
আলীর অন্যান্য স্ত্রীদের সন্তানেরা আহলে বাইতের মর্যাদার অধিকারী হলেও আওলাদের
রসূল বলে গন্য হোন না। কারণ
হাদিস শরীফে এসেছে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ (عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَ السَّلَامْ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي، مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ ) অর্থাৎ উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম সূত্রে
বর্ণিত তিনি বলেন,
আমি
রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ মাহদী আমার
পরিজন থেকে ফাতিমার সন্তানদের বংশ থেকে আবির্ভূত হবে। (দেখতে পারেন দলিল আরবিতেঃ আবু দাউদ শরীফের মূল আরবি ইবারত শরাহ
সহ এখানে) এইখানে রসূলে
পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার বাকি তিন কন্যা ও হযরত আলী
আলাইহিস সালামের নাম উল্লেখ করেন নাই, স্পেসিফিকলি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হযরত
ফাতেমাতুজ্জ যাহ্রা আলাইহাস সালামকে।
এর অনেক গুলি কারণ আছে, প্রথমতো উনার বড়
মেয়ে “যাইনাব” আলাইহাস সালামের সাথে নিকাহ হয় “মাক্বসিম ইবলুন রবিহ” যিনি আবুল আস আলাইহিস সালাম নামে
পরিচিত ছিলেন, আর বাকি দুইজন, “রুকাইয়্যা
ও উম্মে কুলসুম”
আলাইহিমাস সালাম উনাদের নিকাহ হয় উসমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালামের সাথে, উনারা
বনু হাসিম তথা আব্দুল মুত্তালিব গোত্রের ছিলেন না, যে বংশের লোকেরা কিয়ামত পর্যন্ত
আহলে বাইত হবেন বলে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম
নির্ধারণ করেছিলেন। দ্বিতীয় হচ্ছে পাক পাঞ্জাতন ও মুবাহালা
ফ্যাক্টঃ মহান আল্লাহ পাক যখন আয়াতে তাত্বহির নাযিল করে উম্মাহাতুল মু’মিনিন আলাইহিন্নাস সালামদের আহলে বাইত
বলে সম্বোধন করলেন তখন রসূলে পাক যা করলেন তা নিম্নোক্ত হাদিস শরীফে পাওয়া যায়ঃ
উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালামের ঘরে রসূলুল্লাহ
ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যখন আয়াতে তাত্বহির নাযিল হলোঃ (اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیُذۡهِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَهۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَهِّرَکُمۡ تَطۡهِیۡرًا) “হে (আহলে বাইত) নবী (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া
সাল্লাম)-এর পরিবার, মহান আল্লাহ পাক তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে
দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে (পাক) পবিত্র করতে”।
তখন তিনি হযরত ফাতিমাহ আলাইহাস সালাম, হাসান ও হুসাইন আলাইহিমাস সালামকে ডেকে
পাঠালেন, উনারা যখন আসলেন তখন উনাদেরকে একটি চাদরের ভিতর ঢেকে নিলেন। হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার পিছনে ছিলেন, উনাকেও তিনি সেই চাদরের ভিতর ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “হে মহান আল্লাহ পাক! এরাও আমার আহলে বাইত মালিক’ (পরিবারের সদস্য)। আপনি এদের ভিতর থেকেও অপরিচ্ছন্নতা দূর করে দিন এবং সম্পূর্ণরূপে
পাক পবিত্র করে দিন।” উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম বলেন, হে মহান আল্লাহ তা’আলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
আলিহি ওয়া সাল্লাম! আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই? তিনি বললেনঃ আপনি স্ব-স্থানেই থাকুন বরং আপনি কল্যাণের মধ্যেই আছেন। (অর্থাৎ আপনি অলরেডি আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত যাদের পাক
পবিত্র করতে আল্লাহ পাক চান, আপনাদের সাথে আমি এদের ও শামিল করে দিলাম)। (দেখতে পারেন আরবি তাফসীর তাবারী এখানে)
এছারাও মুবাহালা’র আয়াত একটি পানির মতো স্পষ্ট বিষয় যে,
বংশধর কারা ও কাদের মাধ্যমে জমিনে বিদ্যমান থাকবে। যেমন, মহান আল্লাহ পাক রসূলে
পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন ( فَمَنۡ حَآجَّکَ فِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡا نَدۡعُ اَبۡنَآءَنَا وَ اَبۡنَآءَکُمۡ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَکُمۡ وَ اَنۡفُسَنَا وَ اَنۡفُسَکُمۡ ۟ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَلۡ لَّعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَی الۡکٰذِبِیۡنَ) আপনার নিকট (ওয়াহীর) জ্ঞান আসার পর (নাসারাদের) যে ব্যক্তি আপনার সাথে (ঈসা
আলাইহিস সালাম সম্বন্ধে) বিতর্ক করবে তাকে বলুন, ‘আসো, আমাদের পুত্রদেরকে
এবং তোমাদের পুত্রদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে
এবং তোমাদের নিজেদেরকে আহবান করি,
অতঃপর
আমরা মুবাহলা করি আর মিথ্যুকদের প্রতি মহান আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত বর্ষণ করি।
ঘটনাটা ছিলো এরূপ যেঃ ৯ম হিজরীতে নাজরান
থেকে খ্রিষ্টানদের একটি প্রতিনিধিদল রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া
সাল্লাম-এর কাছে এসে তারা যে ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর ব্যাপারে কুফুরি আকীদা রাখত, সে বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত শরীফ নাযিল হয় এবং রসূলে পাক
ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মুবাহালার আহবান জানান। তিনি যখন আহ্বান জানান তখন হযরত আলী, ফাতিমা এবং হাসান ও হুসাইন আলাহিমুস
সালামদেরকে সাথে নিয়ে মুবাহালার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে আসেন এবং খ্রিষ্টানদেরকে বলেন যে, তোমরাও তোমাদের পরিবারের লোকদের সাথে নিয়ে
এসো। তারপর আমরা মিথ্যাবাদীর উপর অভিশাপ বর্ষণের
বদ্দুআ করব। খ্রিষ্টানরা তখন ভয়ে চুপসে যায় এবং আপোসে
পরামর্শ করে মুবাহালা করার পথ ত্যাগ করে। (বিস্তারিত দেখুন আরবি তাফসীরে এখানে ও এখানে)
অতএব স্পষ্ট দলিলে আহলে বাইত কারা
প্রমান হয়ে গেলো, এখন যারাই এই তিন ধরণের আহলে বাইতকে অস্বীকার করবে তারাই কুরআন
শরীফ, হাদিস শরীফ অস্বীকারকারী কাজ্জাব, মুরতাদে পরিনত হবে।
একটি প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন যে, কেউ
কি চাইলেই কাউকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে?
কথা হলো, কারো আহলে বাইত হওয়ার জন্য
নসবের প্রয়োজন, অর্থাৎ সোজা কথায়ঃ দেহে সেইসব ব্যক্তিদের রক্ত বইতে হবে যারা আহলে
বাইতের অন্তর্ভুক্ত। উপরে অলরেডি দলিল প্রমান দিয়ে বুঝিয়ে
দেওয়া হয়েছে যে উম্মাহাতুল মু’মিনিন,
আওলাদে রসূল ও খানদানে রসূল হলেন মূল আহলে বাইত, তবে একটি বিষয় হলো উনাদের মধ্যে
সবচেয়ে ফযিলত ওয়ালা আহলে বাইত হলেন সেইসব ব্যক্তিবর্গ যারা সাইয়্যিদাতুনা
ফাতেমাতুজ্জ যাহ্রা আলাইহাস সালামের রেহেম থেকে দুনিয়ায় এসেছেন। এখন ক্লিয়ার বিষয় হলো আহলে বাইতের জন্য নসবের প্রয়োজন তবে রসূলে
পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার জমিনে থাকা অবস্থায় কাউকে
চাইলে সে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতো, (যেমন হযরত সালমান ফারসি আলাইহিস
সালামকে আহলে বাইতের মধ্যে তিনি শামিল করেছিলেন) তবে সেটা হাক্বিকি নয় বরং হুকমে
আহলে বাইত, কিন্তু তিন সেই ক্যাটাগরির হাক্বিকী আহলে বাইতের অন্তরভুক্ত ছিলেন না,
আর অন্য কারো কোন ক্ষমতাই নাই কিয়ামত পর্যন্ত সে চাইলে কাউকে আহলে বাইত বানাতে
পারবে জবান বা মুখ দিয়ে স্বীকৃতি দিয়ে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে আহলে বাইত কেউ
যেহেতু চাইলে হতে পারছেনা রক্তের সম্পর্ক ছাড়া সেহেতু কাউকে কি বের করা যাবে “আহলে বাইতের” মাক্বাম থেকে?
কোন মানুষের মুখের কথায় কোন আওলাদে রসূল
বা আহলে বাইতকে তাদের মাক্বাম থেকে বের করা যাবেনা, তবে শরীয়ত দিয়ে করা যাবে। রক্ত
বহন করলেই আওলাদ বা আহলে বাইত কেউ থাকতে পারবেন না যদি না ঈমান থাকে। সমস্থ
সম্পর্ক ঈমানের সাথে। তাই কোন আওলাদ বা আহলে বাইত যদি কুফুরি করে, শিরক করে,
মুশরিক হয়ে যায়, নাস্তিক, মুরতাদ হয়ে যায়, তাহলে আর সে আওলাদ বা আহলে বাইত
থাকবেনা। তার এই মাক্বাম সে ঈমান হারানোর সাথে সাথেই হারিয়ে ফেলবে।
এর স্বপক্ষে মহান আল্লাহ তা'আলার বাণী যা তিনি হযরত নূহ আলাইহিস
সালামকে উনার পথভ্রষ্ট মুশরিক আওলাদের বেলায় বলেছিলানঃ (قَالَ يٰنُوحُ إِنَّهُۥ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُۥ عَمَلٌ غَيْرُ صٰلِحٍ) নিশ্চয় সে আপনার আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত নয়১।
সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ। (সূরাহ
হূদ ১১/৪৬)
১) এ আয়াতাংশের তাফসীরে বলা হয়েছেঃ সে ঈমানের
বদলে কুফর গ্রহণ করেছিল। আর মুক্তি
বা নাজাতের ব্যাপারে যারা কুফরে লিপ্ত তাদের সাথে ঈমানদারের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে
না। (বিস্তাতির দেখুন আরবি তাফসীরে এখানে)।
এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّهُ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ، أَيْنَ تَنْزِلُ فِي دَارِكَ بِمَكَّةَ. فَقَالَ وَهَلْ تَرَكَ عَقِيلٌ مِنْ رِبَاعٍ أَوْ دُورٍ . وَكَانَ عَقِيلٌ وَرِثَ أَبَا طَالِبٍ هُوَ وَطَالِبٌ وَلَمْ يَرِثْهُ جَعْفَرٌ وَلاَ عَلِيٌّ ـ رضى الله عنهما ـ شَيْئًا لأَنَّهُمَا كَانَا مُسْلِمَيْنِ، وَكَانَ عَقِيلٌ وَطَالِبٌ كَافِرَيْنِ، فَكَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ لاَ يَرِثُ الْمُؤْمِنُ الْكَافِرَ) উসামা ইবনু যায়দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ইয়া
রাসূলাল্লাহ! আপনি মক্কায় অবস্থিত আপনার বাড়ির কোন স্থানে অবস্থান করবেন? তিনি বললেনঃ আকীল (আলাইহিস সালাম) কি কোনো
সম্পত্তি বা ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট রেখে গেছে? “আকীল (আলাইহিস সালাম) এবং তালিব” হযরত আবূ তালিবের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন, হযরত জা’ফার
(আলাইহিস সালাম) ও আলী (আলাইহিস সালাম) হোন নি। কেননা উনারা দু’জন তখন ছিলেন
মুসলিম। “আকীল (আলাইহিস সালাম) ও তালিব তখন ছিলেন কাফির (পরে আক্বীল
আলাইহিস সালাম মুসলিম হয়ে যান)। এ জন্যই উমর
ইবনুল খাত্তাব (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম) বলতেন, মু’মিন কাফির এর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয় না। (বুখারি শরীফ আরবি ইবারত ইংরেজি সহ এখানে দেখুন)
এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক ও রসূলে পাকের
স্পষ্ট বিধান রয়েছে এই বিশয়ে। হাদিস শরীফ এসেছে, “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দুই মিল্লাতের লোকেরা পরস্পর ওয়ারিস হবে
না। কোন মুসলিম কোন কাফেরকে ওয়ারিস করবে না(অর্থাৎ ইমানদার না হলে
আওলাদ বলে গন্য হবেনা)। অনুরূপভাবে
কোন কাফেরও মুসলিমকে ওয়ারিস করবে না। তারপর তিনি
এ আয়াত শরীফ পাঠ করলেনঃ ( وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ) আর যারা কুফরী করে, তারা একে অপরের বন্ধু। বিস্তারিত পাবেন আরবি তাফসীরে এখানে। সুতরাং কাফেররা
পরস্পর ওয়ারিস, অভিবাবক হবে। কারণ, তারা পরস্পর একে অপরের ওয়ালী। এখানেও আল্লাহ্ তাআলা (ولي) শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটি একটি সাধারণ
ও ব্যাপকার্থক শব্দ। এতে যেমন ওয়ারাসাত বা উত্তরাধিকারের বিষয়টি
অন্তর্ভুক্ত, তেমনি অন্তর্ভুক্ত
বৈষয়িক সম্পর্ক ও পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ও।
অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে ইসলাম থেকে
আওলাদে রসুল বা আহলে বাইতের কেউ যদি বের হয়ে যায় তাহলে সে আর ওয়ারিশ থাকেনা। সে
তার মাক্বাম হারিয়ে ফেলে যার কারনে মুসলিম মিল্লাতের নিকট সে আর ১০ জন অমুসলিমের
মতো হয়ে যায়।
আরেকটি বিষয় হলো, রসুলে পাক
ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (قَالَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنَ الآخَرِ كِتَابُ اللَّهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَىَّ الْحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا) নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে দুটি ভারী জিনিস রেখে
যাচ্ছি, একটি হলো
মহান আল্লাহ পাকের কিতাব এবং অন্যটি হলো আমার বংশধর, আমার পরিবার (আহলে বাইত)। যদি তোমরা এ দু’টিকে শক্ত
করে আঁকড়ে ধর তাহলে কোনো দিনও পথভ্রষ্ট হবে না। কারণ, এ দু’টি (কুরআন ও আহলে বাইত) কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন
হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আমার “হাউজে কাউসারে”
উপস্থিত
হয়। (দেখুন তিরমিযি শরীফে এখানে)
এখন এই হাদিসের অনুসরণ যেহেতু ওয়াজিব
সেহেতু যারা আওলাদ বা আহলে বাইত অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এরা ফাসেকি, হারাম কাজে
জড়িত, তাদের ও কি আঁকড়ে ধরে থাকবে তাদের অনুসারীরা?
উত্তর হলো না, এর কারন ফাসেক হল সেই ব্যক্তি, যে অবৈধ, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ করে এবং ফরয বা ওয়াজিব ও সুন্নতকে ছেড়ে
দেয় কিন্তু অস্বীকার করেনা; অর্থাৎ কবীরা
গুনাহ করে। এরূপ লোকের অনুসরণ করা যাবেনা। কারন
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ (وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ کَانَ اَمۡرُهٗ فُرُطًا) আর সেই লোকের আনুগত্য করবে না, যার অন্তরকে আমি আমার স্বরন থেকে গাফেল করে
দিয়েছি এবং যে তার নফসের অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে। (সূরাহ আল কাহফ ১৮/২৮)
পরিশেষে, কুরআন শরীফ, হাদিস শরীফ,
তাফসীর ও ইমাম মুস্তাহিদগনের রায় অনুসারে আমরা যা বুঝলাম তা নিম্নরূপঃ
১) আহলে বাইত কয়েক প্রকার।
২) সকল আওলাদে রসূল আহলে বাইত হলেও সকল আহলে বাইত আওলাদে রসূল না।
৩) আহলে বাইতের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী হলেন যারা আওলাদে রসূল অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতেমাতুজ্জ যাহরা আলাইহাস সালামের আনে ওয়ালা মুমিন সন্তানগণ।
৪) কেউ ইসলাম থেকে খারিজ হলে সে আর আওলাদের রসূল ও আহলে বাইত থাকেনা।
৫) ফাসেক ফুজ্জার আওলাদে রসূল ও আহলে বাইতের অনুসরণ যায়েজ নয়, তবে তাদের প্রতি মুহব্বত ও ভালো ধারণা রাখতে হবে, গালিগালাজ করা যাবেনা।
২) সকল আওলাদে রসূল আহলে বাইত হলেও সকল আহলে বাইত আওলাদে রসূল না।
৩) আহলে বাইতের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার অধিকারী হলেন যারা আওলাদে রসূল অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতেমাতুজ্জ যাহরা আলাইহাস সালামের আনে ওয়ালা মুমিন সন্তানগণ।
৪) কেউ ইসলাম থেকে খারিজ হলে সে আর আওলাদের রসূল ও আহলে বাইত থাকেনা।
৫) ফাসেক ফুজ্জার আওলাদে রসূল ও আহলে বাইতের অনুসরণ যায়েজ নয়, তবে তাদের প্রতি মুহব্বত ও ভালো ধারণা রাখতে হবে, গালিগালাজ করা যাবেনা।
0 ফেইসবুক: