না শোনা যাবেনা, বক্তা যতো সুমধুর আর ঘন্টায় রেইট তার যতো বেশিই হোক, কিংবা ভাইরাল, ফেমাছ যতই হোক না কেনো, দ্বীনের ইলম কেবল “আহলে জিকর” উনাদের থেকেই হাছিল করতে হবে, এটা আমাদের চেয়ে আনলিমিটেডগুণ বেশি জানেন বলেই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ (فَسۡـَٔلُوۤا أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ) অতএব, (দ্বীনের কোন বিষয়ে) যদি তোমরা না জানো, তাহলে আহলে জিকিরের নিকট জিজ্ঞেস করো। (আন নাহল ৪৩, আম্বিয়া ৭) অর্থাৎ যদি তোমরা দ্বীনের কোনো বিষয়ে অজ্ঞ হও, সঠিক সমাধান চাও, তাহলে কুরআন হাদিছ, টেলিভিশন, ফেইসবুক, ইউটিউব, গুগল, এআই নয়, এমনকি ভাড়ায় খাটা শ্রোতাকে ঠিক কিনা বলা স্টেইজ মুল্লাদের নয়, বরং আহলে জিকর যারা উনাদের থেকে সঠিক মাছলা মাছায়েল কি তা জেনে নাও, কেননা কুরআন হাদিছ নিজের মতো বুঝে সমাধান চাইলে গুমরাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আম পাবলিকের জন্যে, কুরআন হাদিছ আহলে জিকরের জন্যে আহলে উম্মিদের জন্যে নয়।
অনেকে ইদানিং আহলে জিকরের অনুবাদে বলে য়া’লীম উলামার নিকট। এটা দিয়ে তারা তাদের কথিত স্কলার/শুয়ুখ বাবাদের দিকে মানুষকে রুজু করাই দিতে চায়, আল্লাহু মুস্তা’য়ান। কিন্তু য়া’লীম হলেই আহলে জিকর হয়ে যাবে?
খোদ রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার দিকে মুখাতিব হয়ে উনি সহ সকল মুমিনদের জন্যে যাদের অনুসরণ খোদ মহান আল্লাহ তায়ালা নিষিদ্ধ করছেন পবিত্র আল কুরআনে, তারা হলোঃ (وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهٗ عَنۡ ذِكۡرِنَا وَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ كَانَ اَمۡرُهٗ فُرُطًا) আর আপনি এমন ব্যক্তির অনুসরণ করবেন না, যার ক্বলবকে আমি আমার জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি (অর্থাৎ যে আহলে জিকির নয়), আর যে নিজের হাওয়ার অনুসরণ করে, আর যার কার্যক্রমই হচ্ছে সীমা লঙ্ঘন করা। (ছুরাহ আল কাহাফ ১৮/২৮)
মহান আল্লাহ পাক আঙ্গুল, জিহ্বায় পাঠ করা তাছবিহ ওয়ালা য়া’লীমের আলাপ করছেন না, (اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهٗ عَنۡ ذِكۡرِنَا) যাদের ক্বলবকে জিকির করা বন্ধ করে দিয়েছেন বলেছেন, আঙ্গুল আর জিহ্বায় নয়। আর আহলে জিকর এর অন্তর্ভুক্ত নূর ওয়ালা (২৪/৩৫) য়া’লীম এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলেছেনঃ (رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِكۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّكٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ) এরা হচ্ছে সেইসব পুরুষ, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা বেচা-কেনা কখনো মহান আল্লাহ তায়ালা উনার জিকির, ছ্বলাত কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। কেননা তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন ক্বলবসমূহ ও চোখগুলো ভয়ে উলট-পালট হয়ে যাবে। (ছুরা আন নূর ২৪/৩৭)
আর হাদিছ শরীফে এসেছেঃ (عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ " إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ، يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللَّهَ تَنَادَوْا هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ. قَالَ فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا. قَالَ فَيَسْأَلُهُمْ رَبُّهُمْ وَهْوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ مَا يَقُولُ عِبَادِي قَالُوا يَقُولُونَ يُسَبِّحُونَكَ، وَيُكَبِّرُونَكَ، وَيَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ. قَالَ فَيَقُولُ هَلْ رَأَوْنِي قَالَ فَيَقُولُونَ لاَ وَاللَّهِ مَا رَأَوْكَ. قَالَ فَيَقُولُ وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي قَالَ يَقُولُونَ لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيدًا، وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا. قَالَ يَقُولُ فَمَا يَسْأَلُونِي قَالَ يَسْأَلُونَكَ الْجَنَّةَ. قَالَ يَقُولُ وَهَلْ رَأَوْهَا قَالَ يَقُولُونَ لاَ وَاللَّهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا. قَالَ يَقُولُ فَكَيْفَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا قَالَ يَقُولُونَ لَوْ أَنَّهُمْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصًا، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَبًا، وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً. قَالَ فَمِمَّ يَتَعَوَّذُونَ قَالَ يَقُولُونَ مِنَ النَّارِ. قَالَ يَقُولُ وَهَلْ رَأَوْهَا قَالَ يَقُولُونَ لاَ وَاللَّهِ مَا رَأَوْهَا. قَالَ يَقُولُ فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا قَالَ يَقُولُونَ لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَارًا، وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً. قَالَ فَيَقُولُ فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ. قَالَ يَقُولُ مَلَكٌ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ فِيهِمْ فُلاَنٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ. قَالَ هُمُ الْجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ ". رَوَاهُ شُعْبَةُ عَنِ الأَعْمَشِ وَلَمْ يَرْفَعْهُ. وَرَوَاهُ سُهَيْلٌ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم) আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রছূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু ইয়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলার কিছু ফেরেশতা রয়েছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন, তারা খুঁজে বেড়ান ‘আহলে জিকির’ – যারা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার জিকিরে মশগুল থাকে। যখন তারা এমন কোনো কওম/গোষ্ঠী পায়, যারা আল্লাহর যিকির করছে, তখন তারা একে অপরকে ডেকে বলেঃ ‘এসো! তোমাদের প্রয়োজনীয় বস্তু (যিকিরের মজলিস) এখানে রয়েছে।’ অতঃপর তারা তাদের (যিকিরকারীদের)কে নিজেদের ডানায় ঘিরে ফেলে পৃথিবীর আকাশ পর্যন্ত। তারপর তাদের প্রতিপালক (মহান আল্লাহ তায়ালা) ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করেন - অথচ তিনি তাদের চেয়ে ভালো জানেনঃ “আমার বান্দারা কী বলছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা আপনাকে পবিত্রতা দিচ্ছে, তাকবীর বলছে, হামদ করছে এবং মহিমা প্রকাশ করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা কি আমাকে দেখেছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ না, কসম আল্লাহ তায়ালার, তারা আপনাকে দেখেনি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা যদি আমাকে দেখত, তাহলে কী করত?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা যদি আপনাকে দেখত, তাহলে আরো বেশি ইবাদতে নিমগ্ন হতো, আপনার মহিমা আরো অধিক প্রচার করত এবং আরো বেশি তাসবীহ বলত। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা আমার কাছে কী চাইছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা আপনার নিকট জান্নাত কামনা করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা কি জান্নাত দেখেছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ না, কসম আল্লাহ তায়ালার, হে আমাদের রব, তারা তা দেখেনি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা যদি জান্নাত দেখত তাহলে কেমন করত?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা যদি তা দেখত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য আরও অধিক আগ্রহী ও প্রবল চেষ্টা করত এবং জান্নাতের প্রতি তাদের আকর্ষণ আরও গভীর হতো।” মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা কিসের থেকে আশ্রয় চাচ্ছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা দোজখ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা কি দোজখ দেখেছে?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ না, কসম আল্লাহর, তারা তা দেখেনি। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “তারা যদি দোজখ দেখত, তাহলে কেমন করত?” ফেরেশতাগণ বলেনঃ তারা যদি তা দেখত, তাহলে তা থেকে আরো দ্রুত পালাতো এবং আরও গভীর ভয় পেত।” অতঃপর মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “সাক্ষী থাকো, আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।” তখন এক ফেরেশতা বলে উঠলেনঃ তাদের মাঝে একজন লোক আছে, সে এই জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়। সে কেবল কোনো প্রয়োজনেই এসেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “ওরা এমন এক গোষ্ঠী, যাদের পাশে বসলে কেউ হতভাগা হয় না।” (মুসলিম ২৬৮৯, বুখারী ৬৪০৮, তিরমিযি, মুসনাদ আহমাদ সহ একাধিক কিতাবে এসেছে)
এই হলো আহলে জিকিরের ডেফিনিশন, মহান আল্লাহ তায়ালা ও রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনাদের ব্যাখ্যা অনুসারে। এখন কি কেউ সারাদিন আহলে জিকির মানে জ্ঞানী, য়া’লিম, স্কলার বলে ঘেউঘেউ করলেই মেনে নেব?
যাইহোক, এইযে এতক্ষন কুরআন হাদিছ আওড়াইলাম তা আমাদের ছ্বলাফরা কীভাবে বুঝেছিলেন? তাও দেখে নেই, ভন্ড ছ্বলাফী, ওহাবী, দেওবন্দী সহ সকল ফেরকাই আহ্লে জীকরের থেকে অনেক অনেক বাহীরে, কেননা এরা আহলে হাওয়া, আহলে জিকরুল্লাহ নয়।
কিতাবে এসেছেঃ (عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلَانِ مِنْ أَهْلِ الْأهْوَاءِ إِلَىٰ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، فَقَالَا: يَا أَبَا بَكْرٍ، نُحَدِّثُكَ بِحَدِيثٍ؟ قَالَ: لَا. قَالَا: نَقْرَأُ عَلَيْكَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللَّهِ؟ قَالَ: لَا، لَتَقُومَانِ عَنِّي، أَوْ لَأَقُومَنَّ. فَقَامَا. فَقَالَ: إِنِّي حَسِبْتُ أَنْ لَا يَقُومَا. قَالَ: فَأَخْبَرَ بَعْضُهُمْ أَيُّوبَ، فَقَالَ أَيُّوبُ: أَرَاهُ قَدْ فَطِنَ حَيْثُ لَا تَفْطَنُونَ) হিশাম ইবনে হাছছান বলেনঃ দুজন আহলে আহওয়ার লোক ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন রহমতুল্লাহ উনার নিকট এসে বলল, “হে আবু বকর! আমরা কি আপনাকে একটি হাদীছ বর্ননা করতে পারি?” তিনি বললেন, “না।” তারা বলল, “তাহলে আমরা আপনাকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কিতাব থেকে একটি আয়াত পাঠ করি?” তিনি বললেন, “না! বরং তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, নতুবা আমি উঠে যাব।” অতঃপর তারা উঠে গেল। তিনি বললেন, “আমি মনে করেছিলাম তারা উঠবে না।” তারপর কারো মাধ্যমে এই ঘটনা আইয়ূব (আস-ছাখতিয়ানী) রহমতুল্লাহকে বলা হলে তিনি বললেন, “আমি মনে করি, সে এমন কিছু বুঝেছে যা তোমরা বুঝো না।” (রেফারেন্সঃ ছুনানুদ দারেমী ১/১২১, হাদিছ ৩৯৯)
ইমাম আইয়ূব আছ-ছাখতিয়ানী রহমতুল্লার ঘটনা বলিঃ (عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دَاوُدَ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَىٰ أَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ، فَقَالَ: يَا أَبَا بَكْرٍ، أَسْأَلُكَ عَنْ كَلِمَةٍ، فَوَلَّىٰ عَنْهُ وَقَالَ بِيَدِهِ: وَلَا نِصْفَ كَلِمَةٍ، وَلَا نِصْفَ كَلِمَةٍ) আব্দুল্লাহ ইবনে দাউদ বলেনঃ এক ব্যক্তি ইমাম আইয়ূব আস-ছাখতিয়ানী রহমতুল্লার কাছে এসে বলল, “হে আবু বকর! আমি আপনাকে একটি শব্দ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে চাই।” তিনি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং হাতের ইশারায় বললেন, “না, এমনকি অর্ধেক শব্দও নয়, অর্ধেক শব্দও নয়!”। (রেফারেন্সঃ আল-ইবানাহ লি ইবনে বাত্তা, কিতাবুশ শরাহ ওয়াল ইমান হাদীস নাম্বারঃ ৩৭৪, আরো পাওয়া যায়ঃ আস-ছুন্নাহ লি আবী আছিম, হাদীছ ৫৯)
খলীফা উমর ইবনে আবদুল আযীয রদ্বিআল্লাহুর একটি ঘটনা পাওয়া যায়ঃ (أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ بِشْرٍ ، حَدَّثَنَا الْمُعَافَى ، عَنْ الْأَوْزَاعِيِّ ، قَالَ : كَتَبَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ رَحِمَهُ الله تَعالَيَ :" إِنَّهُ لَا رَأْيَ لِأَحَدٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ، وَإِنَّمَا رَأْيُ الْأَئِمَّةِ فِيمَا لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ كِتَابٌ، وَلَمْ تَمْضِ بِهِ سُنَّةٌ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا رَأْيَ لِأَحَدٍ فِي سُنَّةٍ سَنَّهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) আল-হাছান ইবনে বিশর বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আল-মুআফা, তিনি আল-আওযা'ঈ থেকে, তিনি বলেনঃ উমর ইবনে আবদুল আযীয রদ্বিআল্লাহু আনহু একটি চিঠিতে লিখেছেন, “মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কিতাব (কুরআন শরীফ) সম্পর্কে কারো নিজস্ব মতামতের কোনো অধিকার নেই। ইমামদের মতামত কেবল সেই বিষয়ে গ্রহণযোগ্য, যেখানে কুরআন শরীফে কিছু অবতীর্ণ হয়নি এবং রছূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম-এর পক্ষ থেকে কোনো সুন্নতও প্রচলিত হয়নি। আর যে বিষয়ে রছূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম ছুন্নত হিসেবে কিছু নির্ধারণ করে গেছেন, সে বিষয়ে কারো ব্যক্তিগত মতের কোনো স্থান নেই”। (ছুনানুদ দারেমী ৪৩৪)
এই ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ঃ ইমামগণ পর্যন্ত বিদআতী, খারেজি, ও বাতিল ফেরকার কাউকেই একটুও শোনার সুযোগ দিতেন না। তাদের কাছ থেকে আয়াত, হাদিস শোনার চেষ্টাও বন্ধ করে দিতেন, কারণ তারা সেগুলোর বিকৃত ব্যাখ্যা দিত। এই ভয় ছিলো একবার শুনলে অন্তরে প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ “الْقَلْبُ يَتَأَثَّرُ بِالسَّمْعِ’” শব্দ দ্বারা ক্বলব প্রভাবিত হয়।
প্রথম ঘটনাঃ- ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন রহমতুল্লাহ আলাইহি
“দু’জন ব্যক্তি এসে বলল, আমরা হাদীছ বা আয়াত বর্ননা করি”? তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। উলামাগণ বলছেন, বর্ণনায় সরাসরি বলা আছেঃ (جَاءَ رَجُلَانِ مِنْ أَهْلِ الأهواء) অর্থাৎ: “এরা আহলে আহওয়া”।
আহলে আহওয়াঃ
(أَهْلِ الأهواء) কাদের বলা
হয়?
·
খারেজি
·
মুতাযিলা
·
কাদারিয়া
·
মুরজিয়া
·
রাফেযি
· এবং ওহাবী-ছ্বলাফি দেওবন্দিদের মত সকল বিদআতী ফেরকাকে।
দ্বিতীয় ঘটনাঃ- আবু আইয়্যুব সাখতিয়ানী রহমতুল্লাহ আলাইহি
এক ব্যক্তি বলল, “আমি একটা শব্দ জানতে চাই”, তিনি বললেন, “না, অর্ধেক শব্দও না!” এখানে “সে ব্যক্তি” কে ছিল? এই রেওয়ায়েতটি সংক্ষেপে এসেছে, তবে ‘আহলে হাওয়া’ বলেই ইমাম তার সাথে কথা বলেননি। কেননা মুহাম্মদ ইবনে ছিরীন রহমতুল্লাহ উনার ঘটনার বিপরীতে উনার মন্তব্যতেই তা পরিষ্কার।
ইমাম আজুররী এই রেওয়ায়েত সংকলন করেছেন তার কিতাবঃ (الشَّرِيعَةُ) যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বিদআতী খারেজীদের বিরুদ্ধে আহলে ছুন্নতের অবস্থান পেশ করা। অতএব, এখানে ইমাম আজুররী স্পষ্ট করে বুঝিয়েছেন, “সে ব্যক্তি ছিল বিদআতী, খারেজি প্রকৃতির।
এখন “খারেজি মাযহাবসম্পন্ন বিদআতী কারা”? অর্থাৎ, তাদের মধ্যে খারেজি আকীদা বিদ্যমান ছিল, এবং সে আকীদা দ্বারা তারা বিদআতি গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য।
ফতোয়াগত পরিচয়ঃ
· “খারেজি” হলো ফেরকা, যারা ঈমানদারদের তাকফির করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তোলে।
· “বিদআতী” হলো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যারা কুরআন ও সুন্নাহ থেকে বিচ্যুতি করে নিজেদের নতুন আকীদা ও আমল তৈরি করে।
খারেজি মানেই বিদআতী, কিন্তু সব বিদআতী খারেজি নয়। এই কারণে ইমামগণ “আয়াত-হাদীছ শোনার আগেই” তাদেরকে তাড়িয়ে দিতেন। কারণঃ- তারা ‘আয়াত’ এবং ‘হাদীছ’-কে অস্ত্র বানিয়ে ভুল আকীদা চাপিয়ে দেয়।
তো যারা আহলে হাওয়া তাদের ব্যপারে তো মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَكُوۡنُ عَلَیۡهِ وَكِیۡلًا اَمۡ تَحۡسَبُ اَنَّ اَكۡثَرَهُمۡ یَسۡمَعُوۡنَ اَوۡ یَعۡقِلُوۡنَ ؕ اِنۡ هُمۡ اِلَّا كَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ سَبِیۡلًا) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আপনি কি সেই ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার নফসের-খায়েশাতকে (তাকে) নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে; তবুও কি আপনি তার কাজের জিম্মাদার হতে চান? (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আপনি কি সত্যিই মনে করেন, যে তাদের অধিকাংশ লোক (আপনার কথা) শুনে কিংবা বুঝে? (আসল) তারা হচ্ছে পশুর মত, বরং (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) তারা (তাদের চাইতেও) বেশী পথভ্রষ্ট। (ছুরা ফুরকানঃ ২৫/৪৩–৪৪)
এতো গেলো আম পাবলিক এর ব্যপারে আল্লাজীর কালাম। যারা য়া’লীম তারা যখন আহলে জিকির না হয়ে আহলে হাওয়া হবে তখন তাদের তো হেদায়েত এর দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ وَ اَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّ خَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَ قَلۡبِهٖ وَ جَعَلَ عَلٰی بَصَرِهٖ غِشٰوَۃً ؕ فَمَنۡ یَّهۡدِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আপনি কি সে ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করেছেন? যে তার নফসের খায়েশাতকে (তার) নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে; এবং (পর্যাপ্ত পরিমাণ দ্বীনি) জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাকে গোমরাহ করে দিয়েছেন, তার কান ও তার অন্তরে তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন, তার চোখেও তিনি পর্দা এঁটে দিয়েছেনঃ এমন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তা’য়ালার পর আর কে আছে যে তাকে হেদায়াতের পথ দেখাবে? এরপরও কি তোমরা কোনো উপদেশ গ্রহণ করবে না? (ছুরা জাসিয়া ৪৫/২৩)
এর পরেও যদি কেউ এইসব কথিত য়া’লীম উলামার অনুসারী হয়ে,
ওয়াজ নসিহত শোনে গুমরাহ হয়ে যায়, কার কি করার আছে?
0 ফেইসবুক: