ত্বরীকাহ আল রাজ-এর বাইয়াত হতে কি কি যোগ্যতা ও আক্বিদাহ থাকা লাগে?

 

প্রথমে বাইয়াত কি তা বুঝতে হবে, যারা বুঝেনা তাদের জন্যেঃ বাইয়াত শব্দটি পবিত্র আল কুরআনে বাইয়াত হিসেবে সরাসরি এসেছেন ৩ যায়গায়সূরাহ ফাতহ এর ৪৮/১০ এবং ১৮ নং আয়াত শরীফ ও আল মুমতাহিনা শরীফের ১২ নং আয়াত শরীফে

আরবি (بَيْعَة) শব্দটি একটি ইসলামিক পরিভাষাএর অর্থ আনুগত্যের চুক্তি করা, আনুগত্যের শপথ ও আনুষ্ঠানিক আনুগত্যের স্বীকৃতি দেওয়াএর মূল ধাতু হলো (بيع) এটাও আল কুরআনের অনেক যায়গায় আল্লাহ পাক ব্যবহার করেছেন, “কেনাবেচা, বিক্রয় করা, লেনদেন করা, শপথ করা, চুক্তি করা ইত্যাদী হিসেবেএকারনে সম্মানিত দ্বীন ইসলামে বাইয়াত বলতে বিক্রয় হওয়া, শপথ পাঠ বা আনুগত্যের চুক্তিকে বুঝানো হয়

বাইয়াত মূলত দুই প্রকারঃ বাইয়াতে শরীয়ত, বাইয়াতে মা’রিফাত। 

বাইয়াতে শরীয়ত হলো বাধ্যতামূলক ফরজ বাইয়াত, উদাহরণস্বরূপ জমিনে খিলাফত বিদ্যমান, বা কোথাও প্রতিষ্টা হয়েছে, তখন খলিফার/আমীরের নিকট বাইয়াত করে এক আক্বিদায় জামায়াতবদ্ধ হওয়া ফরজজামায়াত পরিত্যাগ করা জাহেলিয়াতকিন্তু যদি ইসলামিক খিলাফত না থাকে তাহলে তা ফরজ নয়

বাইয়াতে মা’রিফাতঃ হলো ইলমে তাসাউফ অর্জন করে নিজেকে ইসলাহ করার জন্য কামিল মুর্শিদ তালাশ করে বাইয়াত হয়ে নিজের নফস কে পাক পবিত্র করাতবে এটা বাইয়াতে শরীয়তের মতো সবার উপর সমানতালে ফরজ নাঅর্থাৎ যারা কামেল মুর্শিদ ছাড়া নিজের নফসের তাজকিয়া করার ক্ষমতা রাখে, ইলমে শরীয়ত, ইলমে মারিফাতের ইলম হাছিল করে সেই অনুসারে চলার ক্ষমতা রাখে তাদের জন্য ইহা ফরজ নয়কিন্তু যারা নফসের পূজারী তাদের জন্য ইহা বাধ্যতামূলক, কারন নফসের পূজা করা সবচেয়ে বড় শিরকইহা এমন শিরক, যা বান্দা রেগুলার করে যায় কিন্তু বুঝতেই পারেনাএকারণেই ইলমে তাসাউফের বাইয়াত এঁর মূল অর্থ হলো নিজের নফস, কলব, ও রূহকে মুর্শিদের নিকট বিক্রি করে দেওয়া

এখন যদি উপরোক্ত ব্যখ্যা বুঝে কেউ বাইয়াতে সম্মত হয়, তাহলে তাকে কি কি করতে হবে তাও সে জেনে নিক।

মুর্শিদ জান্নাতে গেলে সেও জান্নাতে যাবে উনার ওয়ারিশ হয়ে ছুরা মু’মিনুনের ১০-১১ নং আয়াত শরীফ অনুসারে, কিন্তু মুর্শিদ জাহান্নামি হয়ে গেলে সে এর দায় নিয়ে উনার সাথে জাহান্নামে যাবেনা।

আর যে কেউ বাইয়াত নিতে চাইবে, সে প্রথমতো আল কুরআনের ছুরা নিছার ৩, ২৪, ২৫, ৩৬, নাহলের ৭১, মু’মিনুনের ৬, নূরের ৩১, ৩৩ ও ৫৮, রূমের ২৮, আহযাবের ৫০, ৫৫ ও মা’য়ারিজের ৩০ নং আয়াতের মধ্যে বর্নিত (مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ) অর্থাৎ মুর্শিদের ডান হাতের মাল/সম্পদের ক্যাটাগরিতে স্বেচ্ছায় দাখিল হবে এটা মেনে নিতে হবে।

কোন অবস্থায় বিড়ি, সিগারেট, মদ, গাজা, জর্দা, তামাক, মাদক গ্রহণ করা যাবেনা, এইসব এর অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে সাথে সাথে। সকল ধরণের নেষার বস্তুই হারাম, এমনকি যা নেষা করেনা কিন্তু নিজের ক্ষতি করবে তাহাও। উপরোক্ত নেষার মধ্যে সবচেয়ে বেশী নার প্রবেশ করে সিগারেটের মাধ্যমে তাই ইহা সবার আগে ছাড়তে হবে যারা অভ্যস্থ। সিগারেট আমাদের নিকট হারাম এবং সবচেয়ে বেশী পরিমাণ নার প্রবেশের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। অনেকে মাকরুহ বলে, ইহা সঠিক নয় আমাদের নিকট। সিগারেট আমাদের নিকট নিকৃষ্ট বস্তুর পেছনের মূল কারন হারামের চেয়ে এর মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা নার।

ইসরায়েলি পন্য, কাদিয়ানীদের পন্য ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ভুলেও এদের পন্য কিনা ও ব্যবহার করা যাবেনা। এছাড়াও মুসলিমদের মাল কিনার বেলায় সর্বোচ্চো প্রাধান্য দিতে হবে বাজারে গেলে।

কোন পুরুষ মুরিদ, কোন নারি মুরিদাকে ইনবক্সে ম্যসেজ করতে পারবেনা, জেনে শোনে করলে অবশ্যই তাকে রূহানী শাস্তি দেওয়া হবে। কোন কিছু জানার প্রয়োজনে সবার সম্মুখে প্রশ্ন করা যেতে পারে।

মুর্শিদ মাহরামের অন্তর্ভুক্ত উনার সাথে কোন পর্দা নাই এবং মুর্শিদ হলেন সম্মিলিত (পিতা, ভ্রাতা, আহাল, সন্তান) চার পুরুষের এক রূহানী রূপ। জন্মদাতা পিতা রূহ আলমে আরওয়াহ থেকে জমিনে নিয়ে এসে নাপাক নাসুতে ছেড়ে দেন, আর মুর্শিদ সেই রূহকে মুনাওয়ার করে আপন স্থানে ফিরিয়ে দেন। মুর্শিদ ব্যতীত অন্য কোন মুরিদের ব্যপারে পর্দায় কোন শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবেনা। ১০০% খাছ পর্দা করতে হবে ঘরে বাহীরে, মাহরাম নন মাহরামদের সাথে যেরূপ শরীয়তের হুকুম রয়েছে।

অবিবাহিত নারী কিংবা পুরুষ যেই হোক, বাইয়াতের পর বিবাহের ইজিন মুর্শিদের নিকট ও বিবাহ পড়ানোর সময় তালাকের ক্ষমতা মুর্শিদের নিকট গচ্ছিত রাখতে হবে। আর বিবাহিত হলে মুর্শিদ চাইলে একের অধিক বিবাহ করতে, নারীদের সতিন নিয়ে কোন আপত্তি রাখা যাবেনা এটা মেনে নিতে হবে। আহাল আহলিয়ার গায়ে যত অপরাধ-ই করুক হাত তুলতে পারবেনা, আর আহলিয়া আহালের সাথে কোন ধরণের বে আদবিও করতে পারবেনা সেও যতো অপরাধ করুক, যেকোন পরিস্থতিতে মুর্শিদের দিকে রুজু হয়ে যেতে হবে। আহলিয়াকে মা বোন মানসিক কষ্ট দিলে আলাধা বাসা/বাড়িতে রাখতে হবে। আহাল দরিদ্র হলে যা কামাই করবে তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া তথা, ফেইসবুক, টুইটার ইত্যাদি, ব্যবহার করা যাবেনা, নাটক, সিনেমা, গান, ইউটিউবেও ফালতু ভিডিওতেও সময় কাটানো যাবেনা, থাকলে ঐসব অফ করে দিতে হবে এটা বাধ্যতামূলক মানতে হবে।

খেলাধুলা কুরআন সুন্নাহ অনুসারে হারাম তাই কোন ধরণের ক্রিকেট ফুটবল দাবা ক্যারাম সহ কোন ধরণের খেলাধুলায় মূল্যবান সময় ব্যায় করা যাবেনা, তবে শরীরচর্চা করা যাবে।

সবকিছুর আগে দ্বীন এই আক্বিদাহ পোষণ করতে হবে, আহাল/স্বামী, আহলিয়া/স্ত্রী আওলাদগণও অনেক সময় শত্রু হয়ে যেতে পারে ছুরা তাগাবুনের ১৪ নং আয়াত শরীফ অনুসারে, তাই যদি কখনো দ্বীনের পথে বাধা হয় তাকে ত্যাগ করতে হবে যদি সর্বোচ্চো বুঝানোর পরেও গুমরাহির উপর ইস্তিকামত থাকে। ছুরা তাওবা ২৩, ২৪ ও মুজাদালাহ’র ২২ নং আয়াত শরীফ অনুসারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, বা আত্বীয় স্বজন, মাল-সম্পদ কাউকেই অভিভাবক, মুহব্বতের মানুষ রূপে গ্রহন করা যাবেনা যদি তারা দ্বীনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

অতঃপর সে আল কুরআনের শুরুতে ছুরা বাক্বারাহ শরীফের ২ নং আয়াত শরীফে যে বলা হয়েছে মূল আল কুরআন দ্বারা তারাই হেদায়েত লাভ করবে যারা মুত্তাকী, অর্থাৎ আল কুরআন পাঠ করে হেদায়েত তারাই লাভ করতে পারবে যার মুত্তাকী হয়ে কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু যদি মুত্তাকী না হয়ে পাঠ করে তাহলে সে কুরআন সরাসরি পাঠ করে গুমরাহ হবে একিই সুরার ২৬ নং আয়াত শরীফ অনুসারে এটা সে মেনে নিতে হবে।

অতঃপর সে ছুরা মায়েদার ৪১ ও হুজুরাতের ১৪ নং আয়াত শরীফ অনুসারে মুখে ঈমান আনলেই তা ঈমান আনা হবেনা বরং ঈমান ক্বলবে আসতে হবে আর মুমিন হতে হলে ঈমানকে ক্বলবে প্রবেশ করীয়ে সেখানে স্থায়ী অবস্থান করাতে হবে কারন ইব্রাহীম য়ালাইহিছ ছালামের ২৪ নং আয়াত শরীফ অনুসারে ঈমান গ্রহনের পবিত্র বাক্য কলিমা শরীফের অবস্থান মুমিনের ক্বলবে সাবিত থাকে, আর হাদিদের ২৮ নং আয়াত শরীফ অনুসারে ঈমান মানেই নূর, আর আনআমের ৮২ নং আয়াত শরীফ অনুসারে ঈমান আনার পর যে হেদায়েত লাভ হয়, সেই হেদায়েত ছুরা নূরের ৩৫ নং আয়াত শরীফ অনুসারে কেবল মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিতে পারেন, আর যখন কাউকে হেদায়েত দিতে চান ১৭ নং আয়াত শরীফ অনুসারে তিনি তখন তার জন্য হাদি নিযুক্ত করেন মুর্শিদ রূপে, আর মুর্শিদ কামিল কি না তার প্রমান হবে বাইয়াতের পর ক্বলবের হারাকাতের উপর, যদি হেদায়েত পেয়ে যায় মুর্শিদের উসিলায় তাহলে ছুরা নূরের ৩৭ নং আয়াত শরীফ অনুসারে সর্বাবস্থায় তার ক্বলব জিকীরে লিপ্ত থাকবে যদিও সে ব্যবসা-বাণিজ্য করে, বেচা-কেনা করে, চাকুরী কিংবা মজুরী করে, কোন অবস্থায় সে জিকরুল্লাহ থেকে গাফেল হবেনা। আর এটা কেবল মুর্শিদের উসিলায় সহজে হাছিল করা যায় ইহা মেনে নিতে হবে।

অতঃপর হেদায়েত পেয়ে গেলে আর গুমরাহ হতে ক্বলবকে নষ্ট করা যাবেনা কারন ছুরা তাগাবুনের ১১ নং আয়াত শরীফ অনুসারে এই হেদায়েতের নূর না শরীরে না ব্রেইনে বরং ক্বলবে আসে, এটাই বুখারী ৫২, মুসলিমের ১৫৯৯, মুছনাদে আহমদের ১৮৩৯৬, ১৮৪০২ হাদিছ শরীফে এইভাবে বলা হয়েছে যে, ক্বলবই হলো মানব দেহের মূল পার্টস যেখানে ঈমান মওজুদ থাকে তাই এটা সুস্থ থাকলেই সারা দেহ সুস্থ থাকে আর নষ্ট হলে সারা দেহ অসুস্থ হয়ে যায়। আর মুতাফফিফীনের ১৪ নং আয়াত শরীফ অনুসারে এই ক্বলব নষ্ট হয় যখন রেগুলার নার গ্রহণ করা হয়, কারন যখন নার গ্রহণ করা হয় তখন ক্বলবের মধ্যে মরিচা পড়তে পড়তে ক্বলব কাল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তখন আর ভাল মন্দের হিতাহিত জ্ঞান তার থাকে না, যা মুসলিম শরীফের ১ম খন্ডের, ৮২ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে। তাই যাতে কোন গুনাহের দ্বারা নার কামাই না হয় সেকারণে ত্বরীকাহ আল রাজ-এর ও প্রত্যেক ওয়াক্তের মাছনুন আমল সহ মুর্শিদের দেয়া সকল আমল আদায় করে প্রত্যেক ওয়াক্তে রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক ইহা মেনে নিতে হবে। ২৪ ঘন্টা মুর্শিদকে মুরিদের সকল কাজের আপডেট দিতে হবে, উনাকে না জানিয়ে কোন কাজ করাই যাবেনা, প্রত্যেকটা কাজের ব্যপারে, যেমন ঘুম, খাবার, হাজত, গোসল, কাজ-কর্ম, ইবাদত, বাজার-হাট, যাত্রা, সবকিছুর বেলায় প্রথমে জানানোর সময় বিসমিল্লাহ শরীফ ও দুরুদ শরীফ পাঠ করা বাধ্যতামূলক। আর টানা ৩ দিন জিকরুল্লার মাহফিলের ছ্বহবত থেকে অনুপস্থিত কোন অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হবেনা, এইসব বিনা চু চেরায় মেনে নিতে হবে, নতুবা বাইয়াত নিয়ে পালানোর ফল হবে জাহেলিয়াতের উপর মৃত্যু।

বিঃদ্রঃ মুর্শিদ কখনো ভুলেও কোন মুরিদের থেকে টাকা পয়সা নিবেন না, না উনাকে হাদিয়া দেওয়ার কোন সিস্টেম আছে। সম্পদ, দুনিয়া, দুনিয়াবি কোন চাওয়া পাওয়া থাকলে ত্রি সীমানায়ও কারো আসা যাবেনা। আসতে হবে কেবল খালিছ মহান আল্লাহ পাক উনার তালাসি হয়ে। অতএব উপরোক্ত বিষয়াদি স্বজ্ঞানে পড়ে, বুঝে, শোনে, মেনে তারপর বাইয়াতের ব্যবসায় লাগতে হবে নাহলে দুনিয়ার সাথে আখিরাত ও যাবে।

0 ফেইসবুক: