ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া বা খুশী প্রকাশ করা, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর “মীলাদুন নবী” ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলতে নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার আগমনকে বুঝায়। ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলতে নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার আগমনে খুশী প্রকাশ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে, আধারের বুক চিরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রসূল হুযুরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি শান্তি নিয়ে যেদিন জমিনে এসেছিলেন মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলতে সেই দিনকেই পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলা হয়। আর এই নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম এর সূরত যা আমরা আমাদের সম্মুখে দেখতে পাই রবিউল আউওয়াল শরীফের মাস এলে ১২ই শরীফে আশিকদের ঘরে ঘরে। যেমনঃ (مِيلَاد) শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্ম, আর (عِيد مِيلَاد) অর্থ জন্মদিন, আর যখন তা (عِيد مِيلَاد النَّبِيِّ) অর্থাৎ নবীর জন্মদিন। অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, ঈদে মিলাদ উন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের অর্থ হচ্ছে নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই দিনটি। জানার বিষয় হচ্ছে সেই দিন কি আমাদের নিকট খুশির নয়? আপনি কি আপনার জীবনের স্বরনীয় দিনগুলিকে স্বরন করে খুশী হন না? পূলকিত হোন না? আপনি কি আপনার জীবনের স্বরনীয় দিনগুলকে বার বার ফিরে পেতে চান না?
কিন্তু উম্মত নামের কিছু শয়তানের অনুসারী আছে যারা সেই দিনে মুছলমানদের খুশি প্রকাশ দেখলে বিদআত বলে চিল্লায়। এখন এমন কথাবার্তা যারা বলে, তাদেরকে জানানো প্রয়োজন যেঃ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের কথা শুনলে তোমরা যারা খুশি হওয়া বা আনন্দ করাকে বিদয়াত বলো, তারা সত্যিকার অর্থেই ইবলিশ শয়তান, কারন শয়তান তার জীবনে ৪ বার খুব কেদেছিলো, তার মধ্যে ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম এর দিন ছিলো অন্যতম!!
যে সকল ওহাবী/দেওবন্দী/আহলে হাদিস/খারেজী/লা মাজহাবি/সালাফি যারা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার বিরোধীতা করে তারা যে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ইবলিশ শয়তানের গোলামী করে ইবলিশের সুন্নত পালন করে, তার কান্নার দিবসে খুশি হয়ে তার বিরোধিতা না করে কষ্ট পায় তারাই ইবলিশের কায়িম মাকাম। আর এই বিষয়ে এটা একটা প্রামান্য দলীল ↓↓
ছাইয়্যিদুল মুরসালিন ইমামুল মুরসালিন নূরে মুজাছছাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার বিলাদত শরীফে সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন?
সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তানই। সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না আর বিলাপ করেছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে কাসির রহমতুল্লাহ উনার কিতাবে বিষয়টা এইভাবে উপস্থাপন করেন যে, ইবলিশ শয়তান তার হায়াতে সর্বমোট চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল।
১) প্রথম বার যখন সে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ
থেকে মালউন বা চিরো অভিশপ্ত বলে সাব্যস্থ হয়।
২) দ্বিতীয়বার যখন তাকে মহা সম্মানিত বেহেস্ত
থেকে বের করে দেয়া হয়।
৩) তৃতীয়বার, যখন রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার মুবারক আগমন
অর্থাৎ জন্ম তথা বিলাদত শরীফ হয়।
৪) এবং চতুর্থবার যখন পবিত্র সূরা ফাতেহা শরীফ নাযীল হয়।
(সূত্রঃ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়াঃ- ২য় খণ্ড ১৬৬ পৃষ্ঠা)
এখন বর্তমান সমাজে মানুষ রুপী কিছু ইবলিশ আছে, ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের কথা শুনলেই যাদের শরীরে জ্বালা পোড়া শুরু করে। সুতরাং প্রমান হচ্ছে, যারা ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের বিরোধী তারা মূলত শয়তানের উম্মত। কারন এদিনে শয়তান কষ্ট পেয়েছিলো এখন তার উম্মতরা কষ্ট পাচ্ছে।
শুধু তাই নয় বরং যেসব মানুষ নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করেও অপপ্রচার করছে যে, ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালন করা বিদয়াত/হারাম। নাউযুবিল্লাহ!!! অথচ মহান আল্লাহ তা’আলাই কালামুল্লাহ শরীফে আমাদের এই ব্যপারে নির্দেশ দিচ্ছেন এভাবে যে, (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ادۡخُلُوۡا فِی السِّلۡمِ کَآفَّۃً ۪ وَ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ)হে মুমিনগণ, তোমরা (সম্মানিত দ্বীন) ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের (সবচেয়ে বড়) প্রকাশ্য শত্রু। (আল বাক্বারা ২/২০৮, আল-আন’য়াম ৬/১৪২)
অর্থাৎ এই যে ইবলিশ তার পদাঙ্ক অনুসরণ না করতে
বলা হয়েছে, এখন রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু
য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার জন্মদিনে ইবলিশ কষ্ট পেলো, কান্না করলো, বিলাপ করলো তাহলে
আমিও কি একিই কাজ করবো? করে তার পদাঙ্ক
অনুসরণ করবো নাকি যার আগমনে সে কষ্ট পেলো সেটায় আমি খুশী প্রকাশ করবো?
এই মূর্খদের কাছে যখন দলিল চাওয়া হয় যে তোরা বিদয়াত/হারাম কোথায় পেলি? তখন অনেকে অজ্ঞতা আর মূর্খতার কারনে বলে থাকে যে জন্মদিন পালন করা খ্রিষ্টানদের রীতিনীতি? তো? খ্রিষ্টানদের রীতিনীতি দিয়ে তারা কি বুঝায়? ঈসা য়ালাইহিছ ছালামের ছুন্নত বিদআত? হারাম কাজ? এরূপ আক্বিদাহ রাখনে ওয়াল কাফের কাফের কাফের।
তারা হলো আল কুরআনে অবিশ্বাসকারী, তারা কুরআন মানেনা, তারা নবী বিদ্বেষী মুর্তাদ। তারা জানেইনা যে জন্মদিন পালন করা খোদ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সুন্নাহ। কুরআন শরীফ অনুসারে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেন এবং সেই অনুসারে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ইসলামিক পন্থায় দেওয়া হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সুন্নাহ, এবং যে কেউ জেনেশোনে, বোঝে, ইহাকে বর্তমান বিকৃত ইহুদী নাছারার কালচার বলবে সে মহান আল্লাহ পাক উনাকেই তা বলবে, এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে বলার অর্থই হচ্ছে সে মুরতাদ হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ (وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا) উনার (ইয়াহিয়া য়ালাইহিস ছালাম) প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক উনার জন্মদিনে এবং যেদিন উনি অফাৎ মুবারক লাভ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। শুধু মহান আল্লাহ তায়ালাই না খোদ নবী ইসা য়ালাইহিছ ছালাম নিজে নিজের জন্মদিন পালন করেছেন যার যিকির মহান আল্লাহ তায়ালা খোদ আল কুরআনের মধ্যেই বর্ননা করেছেন, যেমনঃ (وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا) (ইসা য়ালাইহিস ছালাম বলেন) আর আমার প্রতি শান্তি বর্ষিত হয়েছে আমার জন্মদিনে, (হবে) যেদিন আমি অফাৎ লাভ করবো এবং যেদিন আমি পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব সেদিন। (পবিত্র ছুরা মারিয়াম আলাইহাছ ছালাম ১৯/১৫ ও ৩৩)
আর হাদিস শরীফে এসেছেনঃ হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বনর্ণা করেন যেঃ (وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ غَيْلاَنَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّرَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ " فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, “ইয়া রছুলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম! আপনি সোমবারের দিন কেন রোযা রাখেন?” রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, “ওই দিন আমার জন্মের দিন এবং ঐ দিনই আমার উপর আল কুরআন নাযিল হোন”। সুবহানআল্লাহ!!! (মুসলিম শরীফ ২৮০৭, মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক ৭৮৬৫, আবু দাউদ শরীফ ২৪২৮, বায়হাকী ৮২১৭, ইবনে খুজাইমা ২১১৭, মুসনাদে আবি আওয়ানা ২৯২৬, মুসনাদে আহমাদ ২২৫৫০)
এখন রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ছ্বহাবিদের স্বরন করাই দিলেন যে এই দিনে দুইটা মুবারক ঘটনা ঘটেছিলো যার জন্যে আমি এর স্বরনে রোজা রাখি। এর কি কারণ থাকতে পারে? এর কারণ হচ্ছে আইয়্যামুল্লাহ, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিন, অনেকে হয়তো জানেও না যে আল্লাহ তায়ালা উনার দিন কি, হ্যাঁ উনার দিন ও আছে যা গাফেল মুছলিম পালনের সময় নাই বলে সমাজেও বিদ্যমান নাই আর তাই কেউ কুরআন ফলো করে তা পালন করলে ঘেউ ঘেউ শুরু করে। যেমন মহান আল্লাহ পাক আল কুরআনে বলেনঃ (وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مُوۡسٰی بِاٰیٰتِنَاۤ اَنۡ اَخۡرِجۡ قَوۡمَكَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ وَ ذَكِّرۡهُمۡ بِاَیّٰىمِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوۡرٍ) আর আমি মূসা য়ালাইহিছ ছালামকে আমার নিদর্শনসমূহ দিয়ে প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে, ‘আপনি আপনার কওমকে (কুফরের) অন্ধকার হতে (ঈমানের) নূরের দিকে বের করে আনুন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিনগুলির বিষয়ে তাদের উপদেশ দিন’। নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। (ছুরা ইব্রাহীম য়ালাইহিছ ছালাম ১৪/৫)
উক্ত আয়াত শরীফ বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায় তা হলোঃ
১. মূসা য়ালাইহিছ ছালামের নবুয়তের মিশনঃ
- আমি অবশ্যই মূসা য়ালাইহিছ ছালামকে আমার নিদর্শনসমূহ সহ পাঠিয়েছি
- এই বাক্যটি মহান আল্লাহ তায়ালা মূসা য়ালাইহিছ ছালামকে নবী হিসেবে নিদর্শনসমূহ (মোজেজা) সহ পাঠানোর কথা উল্লেখ করে।
- গুরুত্ব: এটি নির্দেশ করে যে, আল্লাহ্ মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে নবী পাঠিয়েছেন এবং তাঁদের মাধ্যমে মোজেজা দিয়েছেন।
২. কুফরের অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোতে তথা নূর পাইয়ে দিয়ে মুক্তি দেওয়াঃ
- আপনার সম্প্রদায়কে কুফরের অন্ধকার থেকে ঈমানের নূরের দিকে নিয়ে যান।
- অন্ধকার (ظُّلُمٰتِ): জ্ঞানহীনতা, অবিশ্বাস, শোষণ ও পাপ নির্দেশ করে।
- আলো (نُّوۡرِ): নির্দেশ করে পথপ্রদর্শন, ঈমান, জ্ঞান ও ধার্মিকতা।
- বার্তা: মূসার মিশন ছিল তাঁর সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, বিশেষ করে ফেরাউন থেকে মুক্ত করে বিশ্বাস ও স্বাধীনতার পথে নিয়ে আসা।
৩. মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিনের স্মরণঃ
- তাদেরকে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিনসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিন
- মহান আল্লাহ তা’য়ালা উনার দিনসমূহ (أَیّٰامِ اللّٰهِ): এগুলো সেই দিনসমূহকে নির্দেশ করেন, যেদিন মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শক্তি, রহমত বা শাস্তি স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছিলেন। যেমন, ইব্রাহীম ইয়ালাইহিছ ছালাম উনাকে অগ্নিকুণ্ডে ফেলার দিন ফুলের বাগান বানিয়ে দেওয়া, শিশু ইসমাঈল য়ালাইহিছ ছালাম ও হাজেরা য়ালাইহাছ ছালামকে মক্কার মরুভূমিতে একা রেখে আসা সেখানে পানির জন্যে ছাফা মারওয়ায় তিনি ৭ চক্কর লাগান, ইসমাঈল য়ালাইহিছ ছালামকে কুরবানী করতে নিয়ে যাওয়া, ফেরাউনকে সমুদ্রের মধ্যে ডুবিয়ে দেওয়া এবং বনী ইসরাইলকে রক্ষা করা, ঈসা য়ালাইহিছ ছালামকে আসমানে তোলে নেওয়া, আব্রাহার ক্বাবা শরীফে আক্রমণের দিন পরাস্থ হওয়া, প্রত্যেক নবীর বিলাদত শরীফ তথা জন্মদিন, কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিছাল তথা মৃত্যু পর্যন্ত সবই আইয়্যামুল্লাহ, তেমনি আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত লাইলাতুর রগ্বায়ীব, ঈদে মীলাদুন্নবী, উনার মিরাজ শরীফে গমন, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুল ক্বদর, আল কুরআন নাযিলের দিন, বদর দিবস, ১২ই রবিউল আউওয়াল শরীফে মদিনা শরীফের হিজরত ইত্যাদি।
বার্তাঃ এটা মানুষের জন্য অতীতের দয়া ও শাস্তির
কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যাতে তারা মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার ক্ষমতা ও রহমত উপলব্ধি করে।
প্রয়োগঃ অতীতের ঘটনা স্মরণ করে মানুষ যেনো তার ঈমানকে শক্তিশালী করতে পারে এবং একই ভুল না করার জন্য সতর্ক হতে পারে।
৪. ধৈর্যশীল ও শাকিরদের জন্য নিদর্শনঃ
- নিঃসন্দেহে এতে রয়েছে নিদর্শন প্রত্যেক ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যঃ
- নিদর্শনঃ মূসা য়ালাইহিছ ছালামের জীবনের ঘটনা, যেমন উনার মোজেজা এবং ফেরাউন থেকে মুক্তি পাওয়া, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ক্ষমতা ও রহমতের নিদর্শন।
- ধৈর্যশীল (صَبَّارٍ): পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং কষ্ট সহ্য করা।
- কৃতজ্ঞ (شَكُوۡرٍ): মহান আল্লাহ তায়ালা উনার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা।
বার্তাঃ কেবলমাত্র যারা পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরে এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ হয়, তারাই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিদর্শন উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তায়ালা উনার দিন সম্পর্কিত এই আয়াতের মূল বার্তা কি?
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার মিশনঃ নবী য়ালাইহিমুছ
ছালামদের মহান আল্লাহ্ তায়ালা উনার নির্দেশ ও মোজেজাসহ পাঠিয়েছেন।
কুফরের অন্ধকার তথা নার থেকে মুক্তিঃ নবীদের কাজ
হলো মানুষকে কুফরের অন্ধকার তথা নার থেকে ঈমানের নূরের দিকে নিয়ে আসা।
মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দিন স্মরণঃ অতীতের মহান
আল্লাহ তা’য়ালা উনার ও উনার প্রেরিত
দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত উপদেশময় দিনসমূহকে মানুষকে স্মরণ করীয়ে দেওয়া।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতাঃ ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞরা মহান
আল্লাহ তায়ালা উনার নিদর্শন বুঝতে সক্ষম।
ইতিহাসের শিক্ষাঃ অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শক্তির ব্যপারে উপলব্ধি করা।
অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কিছু দিন আছে প্রত্যেক নতুন বছরের মধ্যে, এর মধ্যে অন্যতম হলো উনার নবীদের সাথে সম্পৃক্ত দিনসমূহ, একারণেই মহান আল্লাহ পাক উনার আইয়্যামুল্লাহ হিসেবেই স্পেশাল তিন এর এক দিন জন্মদিনে সর্বপ্রথম ইয়াহইয়া ও ঈছা হালাইহিমাছ ছালাম উনাদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা দিয়েছেন দুরুদ ছালাম ভেঁজে। এখন মহান আল্লাহ পাক যদি সাধারণ দুই নবীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা দেন সালাম পাঠিয়ে তাহলে উনার অনুসরণ করে উনার বান্দারা যখন দুরুদ ছালাম পাঠ করবে তখন যারা তা পালন তো করছেনা উল্টো গোয়ারমি আর বিরোধিতা করছে তারা কি কাট্টা কাফের হচ্ছেনা? একেবারে সর্বোত্তম কাজটাও যদি কেউ তার ইচ্ছা না হলে পরিত্যাগ করে তাহলে সে গুনাহগার হবেনা কিন্তু নিয়ামত থেকে মাহ্রুম হবে, কিন্তু বিরোধিতা করলে খেল খতম। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সাথে ইবলিশ এর একমাত্র চ্যালেঞ্জই হচ্ছে মানুষকে শাকির বান্দা হতে দিবেনা, (ছুরা আল-আ'রাফ ৭:১৬-১৭) আর (ছুরা ইব্রাহীম য়ালাইহিছ ছালাম ১৪/৫) এ মহান আল্লাহ পাক বলতেছেন শাকিরদের জন্যেই আইয়্যামুল্লায় নিদর্শন রয়েছে। ক্লিয়ার? যারা রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার জন্মদিন কে আইয়্যামুল্লাহ মানেনা তারা কুরআনের ১৪/৫ এর হুকুমই মানেনা, আর যারা ১৪/৫ এর হুকুম মানেনা তারা মূলত ইবলিসের কবলে চলে গেছে, ৭:১৬-১৭ সে এটাই বলেছে, যে সে শাকির হতে দিবেনা। অর্থাৎ (وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ) আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই শাকির হিসেবে পাবেন না। (৭:১৬-১৭)
আমি জানি এর পরেও বিদ্বেষী খারেজী দুষমনে রছুলেরা বলবে যে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম নিজের জন্মদিন উপলক্ষে রোজা রেখেছেন কিন্তু অন্য কোন ছাহাবী রদ্বিআল্লাহু আনহুম উনাদেরকে কি রোযা রাখার বা উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন? আবার অনেকে বলতে পারে যে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম নিজের জন্মদিন উপলক্ষে রোজা রেখেছেন আর ঈদের দিন তো রোজা রাখা হারাম, তারা হলো অর্ধ শিক্ষিত, জাহিল, এরা দ্বীনের পুরোটা জানেনা, জানার চেষ্টাও করেনা, যার কারণে নিজেরাও ফেত্নায় পতিত হয়, অন্যকেও গুমরাহ করে। দ্বীনে কত নমুনার ঈদ বিদ্যমান তারা জানেওনা, যেমন জুমুয়াহ শরীফের দিনের ব্যপারে বলা হচ্ছেঃ
আবু হুরাইরা রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেনঃ “আমাদের উপর মহান আল্লাহ তা’য়ালা জুমুয়াহ শরীফের দিন নির্ধারণ করেছেন, যাকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা উনার দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ করা হয়েছে। (সহিহ মুসলিম ৮৫৪) জুমুয়াহ শরীফের দিন ঈদের দিনগুলির মধ্যে একটি।" (ইবনু মাজাহ শরীফ ১০৯৮) আরো বলা হয়েছেঃ “সুর্য উদিত হওয়ার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হল জুমার দিন। (সহিহ মুসলিম ৮৫৪) এছাড়াও স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই এই দিনটি ঈদের দিন, যা মহান আল্লাহ তা’য়ালা মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন অন্য বর্ননায় আল্লাহ আমাদের জন্য জুমার দিনকে ঈদের দিন বানিয়েছেন”। (সহিহ মুসলিম ৮৫৪, ইবনু মাজাহ শরীফ ১০৯৮) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম আরো বলেছেন, নিশ্চয়ই এটি একটি ঈদের দিন, মহান আল্লাহ তা’য়ালা এটি মুসলমানদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং, যে জুমার নামাজে আসবে, সে যেন গোসল করে আসে। (ইবনে মাজাহ শরীফ ১০৯৮)
কেনো? জুমুয়াহ শরীফের দিন ঈদের দিন? আসুন এটাও দেখি কেনো ইহা ঈদের দিন।
আবু হুরাইরা রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেনঃ “সূর্য উদিত হওয়া দিনের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হল জুমার দিন। এর কারণ এদিনে আদম য়ালাইহিছ ছালাম সৃষ্টি হয়েছেন অর্থাৎ (উনার জন্ম হয়েছে), এদিনেই উনাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এদিনেই উনাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কিয়ামতও এদিনেই সংঘটিত হবে”। (মুসলিম শরীফ ৮৫৪) এইসব হাদিস অনুযায়ী, জুমার দিনকে সৃষ্টির শুরু থেকে এবং কিয়ামতের দিন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই এটি দুই ঈদের চেয়েও বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন বলা হয়েছে। বাহ বাহ, আদম য়ালাইহিছ ছালাম উনার সাথে নিছবত থাকায় উনার সৃষ্টির দিন, উনাকে জান্নাতে ঢুকানোর বের করার দিন হয়ে গেলো ঈদ আর যদি সকল নবীদের শিরোমণি, মুকুট, নাবুওয়্যাতের শিলমোহোর উনার জন্মদিন খরেজীদের নিকট নাকি বিদআত? মানে জাহেলিয়াত এর যে কত রূপ আরো দেখতে হবে মুছলমানদের।
বছরে ৫২ টা ঈদের দিন মুছলিম সম্প্রদায়ের, যারা রেগুলার দ্বীন পালন করেনা তারা জুমুয়াহ শরীফের হাক্বিকতই বা কীভাবে বুঝবে, মুছলমানদের নিকট ইহা তো ঘুমানোর, ছুটির আর বেড়ানোর দিন, যা পুরোটাই কুরআন বিরোধী, এই আলাপ এইখানে আর নাইবা করলাম। এখন ঈদের এই দিনে কি রোজা রাখা হারাম? না হলে ঈদের দিনে কীভাবে রোজা রাখা যায়? এতেও মুর্খ গোঁয়ারদের যদি হেদায়েত না হয় তাহলে আরেকটি দলিল পেশ করা যেতে পারে, যেমন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেন, “আরাফার দিনের রোজা রাখার ব্যপারে আমি আমার রব তা’য়ালা উনার কাছে আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা আগে পরের দুই বছরের গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।” (মুসলিম শরীফ ১১৬২) আর আরাফার দিন ঈদের দিন সবাই জানে তাও দলিল দিয়ে দিচ্ছি, “তারিক ইবন শিহাব রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ইহুদী হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিআল্লাহু আনহুকে বললো, “হে আমিরুল মুমিনিন, যদি আমাদের ধর্মে এই আয়াত শরীফ নাযিল হতো, তবে আমরা ওই দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে পালন করতাম।” হযরত ওমর রদ্বিআল্লাহু আনহু বললেন, “কোন আয়াত?” তখন সে বললোঃ (اَلۡیَوۡمَ اَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِیۡنَكُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡكُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَكُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا)“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম” (মায়েদা শরীফ ৩) তখন হযর ওমর রদ্বিআল্লাহু আনহু বললেন, “আমি নিশ্চিতভাবে জানি, এই আয়াত শরীফটি কোন দিন এবং কোন স্থানে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি অবতীর্ণ হয়েছিল রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার উপর আরাফার দিনে, জুমার দিনে।” (বুখারি শরীফ ৪৫)
উল্লিখিত আয়াত, সূরা আল-মায়েদা (৫:৩), কোরআনের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ আয়াত, যা ইসলামের বার্তা
সম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়ে তথ্যা প্রদান করে।
ইহুদী ব্যক্তি এই ঘোষণার গুরুত্ব স্বীকার করে বলে
যে, যদি এমন একটি আয়াত তার
সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হতো, তাহলে তারা ওই
দিনটিকে উৎসব হিসেবে পালন করত।
উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিআল্লাহু আনহু জানান যে, মুসলমানরা প্রকৃতপক্ষে ওই দিনের গুরুত্ব জানতেন এটিও জানতেন
যে ঐটা ঈদের দিন, কারণ এটি রছুলুল্লাহ
ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বিদায় হজের সময় আরাফাতের দিন নাযিল
হয়েছিল।
এই হাদীস শরীফখানা উক্ত আয়াত শরীফের গভীর গুরুত্ব তুলে ধরেন, এমনকি অমুসলিমরাও এর গুরুত্ব স্বীকার করেছে তাও তোলে ধরেন।
যুক্তিসঙ্গত উপসংহারঃ ফিকিরের বিষয় হলো যদি আল কোরআনের একটি আয়াত এত গুরুত্বপূর্ণ হয় যে উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিআল্লাহু আনহু তা ঈদ হিসেবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন অমুছলিম ইহুদীদের, তাহলে নবী মুহাম্মদূর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার জন্মদিন, যা সমস্ত সৃষ্টির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত আগমনের দিন ছিলেন, ঈদ হিসেবে কেন বিবেচিত হবে না?
রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম কেবল পৃথিবী নয়, বিশ্বের নয় বরং সমস্ত মহাবিশ্বের, সমস্থ আলমের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন (কোরআন ২১:১০৭)। যেখানেই আল্লাহ রব, নবী সেখানেই রহমত, মাথামোটা বলদদের ক্বলবে কি এইসব চাইলেই ঢোকানো যাবে?
একটি আয়াতের অবতীর্ণ হওয়া ঈদ হিসেবে বিবেচিত হলে, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার জন্মদিন ঈদ হিসেবে বিবেচিত না হওয়ার যুক্তি কী (যার উসিলায় সেই আয়াত নাযিল হলো)?
এটি স্পষ্ট যে, ইসলামে বিশেষ মুহূর্ত, বিশেষ করে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দয়া ও অনুগ্রহের সাথে সম্পর্কিত মুহূর্তগুলি উদযাপন কেবল বৈধই না বরং তাগিত দেওয়া হয়েছে। রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার জন্মদিনটি একটি বিশাল দয়া ও সর্বচ্চো রহমত প্রেরণের মতো উপহার হিসেবে, যা স্বাভাবিকভাবেই উদযাপনের কারণ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। যারা এই দিনটি স্মরণ করে জিকির, দুরুদ, ছ্বলাওয়াত, এবং দান খয়রাত করেন, খাবার দাবার বিলান, তারা শুধু এই বিরাট রহমতেকে সম্মানিত করছেন না, বরং ইসলামের মূল উদ্যশ্যকেই অনুসরণ করছেন, যা মহান আল্লাহ তায়ালা ও অনুগ্রহ ও কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতি দেয়।
এবার বুঝো অবস্থা, ইহুদীরা বুঝতেছে অথচ তাদের গোলাম খরেজিরা বুঝেনা, তাদের নিকট আর কীভাবে বুঝ ঢুকানো হবে, যে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলছেন আরাফার দিনের রোজার ফজিলত আগের পরের দুই বছরের গুনাহ মাফ, আর উনার ছ্বহাবিদের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় খলীফা, যার অনুসরণ ওয়াজিব করে দিয়েছেন খোদ রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তিনি বলছেন এটা ঈদের দিন। এখন এই খরেজিদের নিকট কি উত্তর আছে? আরাফার দিনের ঈদের নামাজ কয় রাকাত? আর রোজা কি হারাম ছিলো?
একবার নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- “সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই অর্থাৎ সে যদি তার পিতা এবং পুত্র হতে আমাকে বেশি মুহব্বত না করে”। অন্য হাদিস শরীফেও এসেছেঃ তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সমস্থ মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই অর্থাৎ তুমরা যদি তোমাদের পিতা এবং পুত্র এবং সমস্থ মানুষ হতে আমাকে বেশি মুহব্বত না করো। (বুখারি শরীফঃ ১৩, ১৪, ১৫, মুসলিম শরীফঃ ৪৪, ১৭৮, মিশকাত শরীফ ৭)
যাইহোক বর্নিত হাদিস শরীফ খানা যখন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বর্ণনা করছিলেন তখন ঐ সময় হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু তিনি রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে বললেন ইয়া রছুলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম আমার জীবন ব্যতীত আপনি আমার নিকট সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়। তখন নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বললেন, না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! আপনার কাছে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় না হবো ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি পূর্ণ মুমিন হতে পারবেন না। তখন হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয়। নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বললেন, হে হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু এখন আপনি সত্যিকারের ঈমানদার হলেন। (বুখারী শরীফঃ ৬৬৩২)
ব্যখাঃ উপরের হাদিস শরীফ এর ব্যখা হচ্ছে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামকে বলেছিলেন যে ইয়া রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম। আমি সবকিছু থেকে আপনাকে বেশি মুহব্বত করি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি আমার জীবনের থেকে আপনাকে বেশি মুহব্বত করতে পারিনি। উত্তরে হুযূর পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তখন বলেছিলেন, হে হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু, সেক্ষেত্রে আপনি এখনও ঈমানদার হতে পারেননি। নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের মুখে এই কথা শুনে হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু তিনি বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলেন। নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তখন উনাকে নিজের কাছে ডাকলেন, উনার সিনার উপর হাত মুবারক স্থাপন করলেন। ফয়েজে ইত্তিহাদী প্রদান করলেন। সাথে সাথে হযরত ফারূকে আজম য়ালাইহিস ছালাম সচকিত হয়ে বললেন, এখন আমি শুধু একজন উমর ই নই, আরো শত-সহস্র উমর আপনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। সুবহানআল্লাহ!!
আমি আমার পূর্বের অনেক আলোচনায় বলেছিলাম নিছবত বা সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে। দ্বীন ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযুরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনাদের সাথে নিছবত স্থাপনের ধর্ম। এই নিছবত কিভাবে স্থাপিত হয়? হযরত ওমর ফারূক রদ্বিআল্লাহু আনহু উনার নিছবত স্থাপিত হয়েছিল উনার সিনার মধ্যে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের পবিত্র হাত মুবারক স্থাপনের মাধ্যমে। হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিআল্লাহু আনহু তিনি যখন মিরাজ শরীফের ঘটনাকে বিনা দ্বিধায় মেনে নিলেন, তখন উনাকে ‘ছিদ্দীক’ উপাধি দেয়া হলো। এর মাধ্যমে উনার নিছবত স্থাপিত হল। আপনার কি পরিমাণ কঠিন মুহব্বত ভরশা বিদ্যমান এর উপর নির্ভর করে নিছবত। দুনিয়াবি প্রেমের.........
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ (كَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا فِیۡكُمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡكُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیۡكُمۡ وَ یُعَلِّمُكُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ وَ یُعَلِّمُكُمۡ مَّا لَمۡ تَكُوۡنُوۡا تَعۡلَمُوۡنَ فَاذۡكُرُوۡنِیۡۤ اَذۡكُرۡكُمۡ وَ اشۡكُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَكۡفُرُوۡنِ) যেভাবে আমি তোমাদের মধ্য থেকেই একজনকে রছূল বানিয়ে পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের উপর আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তোমাদের নফছ ও ক্বলবের তাজকিয়া করবেন, কিতাবের ইলম আতা করবেন, (জাহির-বাতিন বোঝার) প্রজ্ঞা ও হিকমত সহ এমন বিষয়ের শিক্ষা দিবেন, যা পূর্বে তোমরা জানতেই না। অতএব (এই নিয়ামত লাভের কারনে) তোমরা আমার যিকির করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করবো। আর তোমরা আমার শাকির বান্দা হয়ে যাও, অকৃতজ্ঞ হয়ে আমার প্রতি কুফর করো না। (ছুরা বাকারা শরীফঃ ২/১৫২) একিই বিষয়ের আলাপই করছেন, তবে এইখানে স্পষ্ট করেই বলেছেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম মুমিনদের জন্যে কি, যেমনঃ (لَقَدۡ مَنَّ اللّٰهُ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ بَعَثَ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡ اَنۡفُسِهِمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ ۚ وَ اِنۡ كَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা মু’মিনদের উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের মধ্য থেকেই একজনকে রছূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের উপর মহান আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদের নফছ ও ক্বলবের তাজকিয়া করেন, কিতাবের ইলম দান করেন এবং (জাহির-বাতিন বোঝার) প্রজ্ঞা ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও এরা সবাই ইতিপূর্বে সুস্পষ্ট গুমরাহিতে নিমজ্জিত ছিলো। (ছুরা আলে ইমরান ৩/১৬৪) এই আয়াত প্রমাণ করে, রছূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম হলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আর নিয়ামতের জন্য শুকরিয়া করা কুরআনেরই নির্দেশ। এই নির্দেশ কেবল হাক্বিকি ইবাদতকারিই মানতে পারবে, লোক দেখানো আবিদ, নামাজী, মুল্লা, ওয়াজি, মুফতির পক্ষে সম্ভব না, যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ (وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ) তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা উনারই ইবাদত করে থাকো। (ছুরা বাকারা শরীফঃ ২/১৭২)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন শাকির বান্দা হয়ে উনার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য, সাথে নিয়ামত কি সেটাও বলে দিচ্ছেন যে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম দিয়েছি নিয়ামত হিসেবে। রিমেম্বার শাকির বান্দা হতে জোর দিচ্ছেন, যা না হতে আমাদের শত্রু হিসেবে ইবলিশ রয়েছে জন্ম-মৃত্যু পর্যন, আর হয়ে যার শুকরিয়া আমরা আদায় করব তিনিই হলেন রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ (وَ اَمَّا بِنِعۡمَۃِ رَبِّكَ فَحَدِّثۡ) আর আমার নিয়ামতের চর্চা করো, আলাপ করো বা বর্ননা করো। (আদ দ্বোহা ৯৩/১১) এইযে হাদ্দিস এর সাথে ফা Conjunction সংযোগকারক, অর্থাৎ “তাহলে” যুক্ত করে মহান আল্লাহ পাক বললেন ফাহাদ্দিছ, এটা হলো আদেশ মহান আল্লাহ পাক উনার, যে উনার থেকে প্রাপ্ত নিয়ামতের চর্চা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটা Verb in the imperative form অপরিহার্য আকারে ক্রিয়া।
এখন যেখানে মহান আল্লাহ পাক নিজেই নির্দেশ দিলেন নিয়ামত এর চর্চা করতে সেখানে আমরা হাদিসের কিতাবে ছ্বহাবিরা পালন করেছেন কিনা এইসব খুজতে খুজতে গুমরাহ হয়ে যাচ্ছি। আচ্ছা হাদিছে কি সব পাওয়া যাবে? পাওয়া সম্ভব? তাও ছিয়াহ ছিত্তায়?
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পবিত্র সূরা ইউনুস য়ালাইহিছ ছালামের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ) হে মানবজাতি, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নসীহতকারী, সিনার মধ্যে যা আছে তার সুস্থতা দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত ও হিদায়েত দানকারী আগমন করেছেন। (পেয়ারে হাবিব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম) আপনি (তাদের) বলেদিন সুতরাং তোমরা এই ফদ্বল ও রহমত লাভ করার কারনে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করো, যা তোমাদের সঞ্চিত (দুনিয়া ও আখেরাতের) সমস্ত নেক আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবে।” (আল কুরআন ১০/৫৭-৫৮)
এবার উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরিফ উনার তাফসির জেনে নিনঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহু তিনি এই আয়াত শরিফের তাফসীরে বলেন এখানে মহান আল্লাহ তা’য়ালা তিনি উঁনার অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন-কে বুঝিয়েছেন আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দো’আলম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীইয়্যিন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উঁনাকে বুঝানো হয়েছে।
দলিল সুত্রঃ তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী কৃত তাফসীর-ই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ডের ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আর ঈদে মিলাদুন্নবি পালনের জন্য উপরে বর্নিত আয়াত শরীফ এর হুকুম যেই ভাষায় প্রয়োগ করা হয়েছে, পবিত্র কোরআন শরীফ এর অন্য কোথাও এমনিভাবে জোর তাগিদের সাথে হুকুম আসেনি। একটূ ফিকির করলেই এই আয়াত শরীফ এ ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালনের জন্য কমপক্ষে ১০ টি তাগিদ রয়েছেঃ-
১) قُلْ - قُلْ (কুল) শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কথা শুরু করা হলে, ইহাই এক প্রকারের জোর তাগিদ । যার উদ্ধেশ্য এই যে আপাদ-মস্তক
নিমগ্ন হয়ে যাও।
২) بِفَضْلِ اللّهِ আল্লাহ পাক উনার ফজলের কারনে। প্রশ্ন তৈরি হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার ফজলের কারন কি? এই ফজল নবিজি ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম। কারন নবিজি
ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম দুনিয়ায় না আসলে আমরা কোরআন শরীফ
পেতামনা মুসলমান ও হতাম না। তাই এই ফযল ও তাগিদ।
৩) وَبِرَحْمَتِهِ - মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের কারনে। প্রশ্ন হল রহমতের
কারন কি? রহমত কে? ইহাও ৩য় তাগিদ।
৪) بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ - ফজল ও রহমত একত্রীকরন। ফজলের পরে রহমতের উল্লেখ করাও
তাগিদ।
৫) فَبِذَلِكَ
- জালিকা (ذَلِكَ) এর পরে ফা-কে এজাফত(সম্মান) করা হয়েছে। “ফা” আরবী কাওয়ায়েদ
অনুযায়ি তাগিদের জন্য ব্যবহৃত হয় বা তাগিদের জন্য আসে।
৬) بِذَلِكَ
- ফজল ও রহমত এর উল্লেখ করার পরে ইশারা বায়িদ লওয়াও তাগিদের অন্তর্ভুক্ত।
৭) فَلْيَفْرَحُو – “ফালইয়াফরাহু” শব্দের উপর পুর্ন “ফা” হরফ এজাফত করা হয়েছে,
যার ফলে
তাগিদ করা হয়েছে।
৮) فَلْيَفْرَحُو - ইয়াফরাহু এর উপর “লাম” ও তাগীদের জন্য হয়ে থাকে।
৯) هُوَ خَيْرٌ - এখানে “হুয়া” তাগিদের জন্য এসেছে।
১০) مِّمَّا يَجْمَعُونَ – “মিম্মা ইউয়াযমাঊন” ইহাও তাগীদের কালাম।
বর্নিত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ১০ তাগিদের সাথে যে হুকুম প্রদান করেছেন ইহা এই যে, فَلْيَفْرَحُو অর্থাৎ খুশি প্রকাশ কর অর্থাৎ ঈদ পালন কর। কেননা فَبِذَلِكَ “ফাবিজালিকা” শব্দ দ্বারা যেই রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের কথা বলা হয়েছে, তিনি আগমন করেছেন উনার পরে আর কোন নবী রছুল য়ালাইহিমুস সালাম আগমন করবেন না।
উপরোক্ত ১০ তাগীদের পরে বিষয়টি এমন চুড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে যে এই খুশি প্রকাশ করা সমস্ত (কবুলকৃত) নেক আমল থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হবার ঘোষনা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!!!
ইমাম ইবনুল জাওযী রহমাতুয়াল্লাহ উনার তাফসিরে উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে যে, আদ-দ্বাহাক ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে এই আয়াতে উল্লিখিত অনুগ্রহের অর্থ হচ্ছে ইলম (অর্থাৎ কুরআন ও তাওহীদ) যেখানে রহমত অর্থ মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম। (৪/৪০) আর ইমাম আবু হাইয়ান আল আন্দালুসী (রহমাতুয়াল্লাহ) বলেনঃ অনুগ্রহ বলতে ইলমকে বোঝায় যেখানে রহমত বলতে মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে বোঝায়। (তাফসির আল-বাহর আল মুহীতঃ ৫/১৭১) এছাড়াও ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি রহমাতুয়াল্লাহ বলেনঃ আবূ শেখ রহমাতুয়াল্লাহী ইবনে আব্বাস রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ অর্থ ইলম, যেখানে রহমত অর্থ মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম কারন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ (وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ) (পেয়ারে ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) আমরা আপনাকে সমস্থ আলমের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (আল আম্বিয়া য়ালাইহিমুছ ছালাম ২১/১০৭) (আদ দুররে মনছুর ৪/৩৩০)
এদিকে আল্লামা আলুসী (রহমাতুয়াল্লাহ) ব্যাখ্যা করেছেন যে ফদ্বল (অর্থাৎ অনুগ্রহ) বলতে নবী মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকেই বোঝায় যে আল খতিব রহমতুল্লাহ এবং ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে অনুগ্রহ বলতে মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকেই বোঝায় (রুহুল মাআনী ১১/১৪১) কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলতেছেনেঃ (ذٰلِکَ فَضۡلُ اللّٰهِ یُؤۡتِیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ) এটা মহান আল্লাহ তায়ালা উনারই অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছে (তাকেই) এটা দান করেন। আর মহান আল্লাহ তায়ালাইতো মহা অনুগ্রহশীল। (আল কুরআন ৬২/২)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিআল্লাহু আনহু বলেনঃ মহান আল্লাহ তায়ালাই অসীম অনুগ্রহের অধিকারী, যেমনঃ (وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ) তিনি মুহাম্মাদুর রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামকে ইসলাম ও নবুওয়াত দান করেছেন (তাফসির ইবনে আব্বাস)
এখন এই খুশি প্রকাশ অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম যদি কেউ পালন না করে, বিরোধীতা করে তাহলে তার জীবনের কোন আমল কাজে আসবে কি? সে কি আল্লার বান্দা, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে?
এর পরেও অনেক গুমরাহ আছে তারা বলে “রহমত” দ্বারা নাকি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়নি। নাউযুবিল্লাহ। এতএব যারা রহমত হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনাকে অস্বীকার করতে চায় তারা কি জানেনা সেরা রহমত কে?
এইখানে মহান আল্লাহ পাক আয়াত শরীফ নাযিল করে সকল মানুষের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন (يَا أَيُّهَا النَّاسُ) বলে, তারপর উনার পক্ষ থেকে কিছু জিনিষ হাদিয়া করা হয়েছে মর্মে বলতেছেন যেঃ (قَدْ جَاءَتْكُم) অলরেডি চলে এসেছেন, পেয়ে গেছো, (مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ)তোমাদের রবের নিকট থেকে নসিহতকারি ও সিনার মধ্যে থাকা (ক্বলব, রূহ, নফসের অসুস্থতার) শিফা দানকারী। (وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ)আর মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত এসেছেন, হ্যাঁ মুমিনদের জন্যে। এখন মানুষ কি করবে? মহান আল্লাহ পাক এর পরেই নির্দেশ দিচ্ছেন উনার হাবীব রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামকে যে, (قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ)আপনি তাদের বলুন এই যে ফদ্বল ও রহমত আমি আতা করেছি, এই কারণে (فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُو) তারা যেনো (فَلْيَفْرَحُوا) ঈদ মানায়, খুশী প্রকাশ করে, আনন্দিত হয় নিয়ামত পেয়েছে বলে, তাহলে এই খুশী প্রকাশ হবে (هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ) তাদের সঞ্চিত সমস্ত সম্পদ থেকেও দামি।
এখন মানুষের তো চিন্তা ফিকিরের সময় নাই যে যা বল্লো বা কোন এক তাফসীরে যদি কারো নিজস্ব মতামত তার মনমতো হয়ে যায় তাহলে সেটাকেই গিলতে থাকে, অথচ আল কুরআনের সবচেয়ে উত্তম তাফসীর হচ্ছে আল কুরআন দিয়েই করা, মানে একটি আয়াত কে অন্য আয়াত দিয়ে ব্যখ্যা দেওয়া, তা সম্ভব না হলে হাদিছ শরীফ, তাও সম্ভব না হলে তখন আহলে জিকির আইয়্যিমারা ব্যখ্যা দিবেন বাতিনে তালাশ করে মুরাকাবা, তাফাক্কুর তাদাব্বুরে ডুব দিয়ে।
যাইহোক, অনেকে এইখানে কেবল আল কুরআনকে ইন্ডিকেট করে যা মোটেও কুরআন সম্মত না। কারণ শুরুই হয়েছে (يَا أَيُّهَا النَّاسُ) বলে যে সকল মানুষের জন্যে এসেছেন কিছু জিনিষ, নসিহত, শিফা, হুদা, রহমত। কিন্তু কুরআন তো সকল মানুষের জন্যে আসেন নাই, কুরআন তো কেবল তাদের জন্যেই ফায়দামন্দ যারা মুত্তাকী হয়ে কুরআন থেকে ফায়দা নিতে চাইবেন, খোদ আল কুরআনই এটা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছেন এইভাবেঃ সবাই এই আয়াত শরীফ চিনে, ছুরাহ বাক্বারা শরীফের প্রথম আয়াত (ذٰلِكَ الۡكِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ) এই সেই কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই, তবে হেদায়েত কেবল মুত্তাকীদেরই দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, একিই ছুরার ২৬ নং আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলছেন যেঃ (یُضِلُّ بِهٖ كَثِیۡرًا ۙ وَّ یَهۡدِیۡ بِهٖ كَثِیۡرًا ؕ وَ مَا یُضِلُّ بِهٖۤ اِلَّا الۡفٰسِقِیۡنَ) (আসল ব্যাপার হল) তিনি এ (কুরআন) দ্বারা অনেককেই গুমরাহ করে থাকেন, আবার অনেককেই হেদায়েত প্রাদান করেন, তবে ফাসিক ব্যতীত অন্য কাউকে তিনি বিভ্রান্ত করেন না। তাহলে বুঝা গেলো যে আল কুরআন থেকে হেদায়েত পেতে হলে মুত্তাকী হতে হবে, আর ফাসেক হলে ১০০% গুমরাহ হয়ে যাবে কুরআন হিফজ করে ২৪ ঘন্টা রিসার্চ করলেও। তাহলে মানুষ মুত্তাক্বি কীভাবে হবে? এই বিষয়ে হাদিছ শরীফ ঘেটে পাওয়া যাচ্ছে জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِتْيَانٌ حَزَاوِرَةٌ فَتَعَلَّمْنَا الإِيمَانَ قَبْلَ أَنْ نَتَعَلَّمَ الْقُرْآنَ ثُمَّ تَعَلَّمْنَا الْقُرْآنَ فَازْدَدْنَا بِهِ إِيمَانًا) “আমরা নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার ছ্বহবতে ছিলাম। আমরা ছিলাম শক্তিশালী এবং সক্ষম যুবক। আমরা কুরআন শেখার পূর্বে (উনার কাছ থেকে) ঈমান শিখেছি, অতঃপর কুরআন শিখেছি এবং এর ফলে আমাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সুনান ইবনু মাজাহ ৬১) এই হাদিস শরীফ একেবারে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে কুরআন শরীফ ঈমানদার বানান না বানান নবী, হ্যাঁ নবী বানালে কুরআন ঈমান বাড়াতে পারেন যদি উম্মত মুমিন হয়ে যায়।
এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে নসিহত, শিফা, হুদা, রহমত এর কানেকশন অন্য কোন যায়গায়, আসুন সেটা দেখি পাওয়া যায় কি না। মহান আল্লাহ পাক (يَا أَيُّهَا النَّاسُ) সকল মানুষের জন্যে এসেছেন বলে যে নিয়ামতের কথা বলেছেন, সেই সকল মানুষের জন্যে কি এসেছেন সেটা দেখি। মহান আল্লাহ পাক ছুরা আম্বিয়া শরীফের ২১/১০৭ নং আয়াত শরীফে বলেনঃ (وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম) আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। অন্য আয়াতে বলতেছেনঃ (وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰكَ اِلَّا كَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰكِنَّ اَكۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম) আমরা আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বেখবর। (ছুরাহ ছাবা ৩৪/২৮)
আচ্ছা এবার দেখি ছ্বহাবিরা কি বুঝলেন এই আয়াত শরীফের মানেটা আসলে কি?
একদা হুজরা শরীফ থেকে বের হয়ে উনার ছ্বহাবীদের এক মজলিসে পৌছালেন। তিনি উনাদের জিজ্ঞাসা করলেনঃ এখানে তোমাদের কিসে বসিয়েছে? উনারা বললেনঃ (عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ مُعَاوِيَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَ اٰلِهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ - يَعْنِي مِنْ أَصْحَابِهِ - فَقَالَ: "مَا أَجْلَسَكُمْ؟" قَالُوا: "جَلَسْنَا نَدْعُو اللَّهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِدِينِهِ وَمَنَّ عَلَيْنَا بِكَ." قَالَ: "آللَّهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلَّا ذَلِكَ؟" قَالُوا: "آللَّهِ مَا أَجْلَسَنَا إِلَّا ذَلِكَ." قَالَ: "أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهَمَةً لَكُمْ، وَإِنَّمَا أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَةَ) আমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার জিকির এবং তিনি যে আমাদেরকে হিদায়ত দান করেছেন এবং আপনাকে প্রেরণ করে মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের উপর যে ইহসান করেছেন তার শুকরিয়া আদায় করার জন্য বসেছি। তিনি বললেন তোমরা কি কসম করতে পারবে যে এই কারনেই এখানে বসেছো? উনারা বললেনঃ মহান আল্লাহ তা’য়ালার কসম! আমরা এজন্যই এইখানে (মিলাদ) মাহফিল করতে বসেছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদের ব্যপারে সন্দেহ পোষণ করে তোমাদের কসম করাইনি, বরং এটা এজন্য যে, জিবরীল য়ালাইহিছ ছালাম এসে আমাকে সংবাদ দিলেন, মহান আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের (এই আমলের ওপর খুশী হয়ে) ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করছেন আমার মাখলুক বলে। (তিরমিযী শরীফ ৩৬১৯, নাসাঈ শরীফ ৫৪২৬, ৫৪২৮) মিলাদ আর কি? ঈদে মিলাদুন্নবী আর কি? মানুষ কীভাবে এতো জাহিল হয় যে এরূপ তরতাজা প্রমান থাকার পরেও বুঝেনা?
অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার ফদ্বল (কুরআনকে মেনে নিলে) ও রহমত কুরআন অনুসারেই রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তিনিই, আর এটা পাওয়ার জন্যে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে খুশী প্রকাশ করো।
(هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ)বলে পবিত্র আয়াতে কারীমার সর্বশেষ অংশেই মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক ব্যবসার কথা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজে বলে দিয়েছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘নিশ্চয়ই এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম হবে (দুনিয়া ও আখেরাতে)।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ধরণের সঞ্চয় জমা সব থেকে উত্তম। আমরা কি জমা করি? দুনিয়াবী ধন সম্পদ, টাকা পয়সা সঞ্চয়ের তো কোন মূল্য নেই। মৃত্যুর সাথে সাথেই এসবের মালিকানা চলে যায়। পরকালের সঞ্চয় হচ্ছে, নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, দান-সদকা, সদক্বায়ে জারিয়া, নেক সন্তানের দোয়া ইত্যাদি। যদি মহান আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেন তাহলে পরকালের জন্য তা জমা থাকে। তাহলে পবিত্র আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক যে ব্যবসার কথা বললেন যেটা এসকল ইবাদত বা সঞ্চয়ের চেয়েও অধিক উত্তম তথা লাভ জনক সেটা কোনটা? এটা যদি আমল নাও ধরি তাহলে দুনিয়াবি মাল সম্পদ হলেও তো এর পেছনে তুমি আমি যে জীবন বরবাদ করে দিচ্ছি এই মাল সম্পদের চেয়ে এই সেলিব্রেশন, রিজয়েছ টা সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম হবে (দুনিয়া ও আখেরাতে)।
এবার সেই সুমহান ব্যবসার ব্যাখ্যায় আসি। আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘ফালইয়াফরহু’ শব্দের অর্থ ‘খুশি প্রকাশ’ তথা ঈদ উদযাপন। অর্থাৎ আমরা যে মহান আল্লাহ পাক উনার অত্যন্ত দয়া ও এহসানের কারণে আখেরী নবী নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনাকে পেয়েছি এজন্য যেন আমরা অত্যন্ত শান শওকের সাথে খুশি প্রকাশ বা ঈদ ইদযাপন করি। এই খুশি প্রকাশ তথা (পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (যা সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ) পালন করাটাই হবে ইহকাল ও পরকালের জন্য যা কিছু জমা করা হয় তার চেয়ে উত্তম বা লাভজনক ব্যবসা)।
এবার বলুন- নবীজী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ বা ঈদ উদযাপন করবেন কিনা?
এতএব আর কিছুই বলার নাই যারা মনে করেন ঈদে মিলাদুন্নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম অর্থাৎ নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার আগমনের দিনে শরীয়ত সম্মত উপায়ে হালাল পন্থায় খুশী প্রকাশ করা সবচেয়ে সহজে সবচেয়ে বেশী নেক আমল হাসিলের অন্যতম পন্থা, তারা তা পালন করুন আর যারা মনে করেন প্রয়োজন নাই তারা টিভি সিনেমা গান বাজনা প্রেম পিরিতি ডেটিং ফেটিং করে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফকে ইগনোর করেন, তাতে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালনকারীরা কাউকে বাঁধা দেবনা, কারন নেক আমল হোক আর বদ আমল হোক যাই করেন তা আপনি একাই ভোগ করবেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি তো রহমাতুল্লিল আলামীন। তিনি কুল কায়িনাতের সকলের জন্য রহমত। উনার শান-মান, মর্যাদা মুবারক এমন যে, যে ব্যক্তি উনার সম্পর্কে মুবারক আলোচনা করবে, উনার ছানা-ছিফত করবে সেই ব্যক্তিই মর্যাদাবান হয়ে যাবে! সুবহানাল্লাহ।
যিনি সকল নবীর উপর আলাদাভাবে এবং এককভাবে বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব মুবারকের অধিকারী যা কুল কায়িনাতের আর কাউকে দেয়া হয়নি হবেও না...
উনার উম্মত হওয়ার জন্য সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা আরজু করেছিলেন উনার শান-মান মর্যাদা মুবারক বুঝেই। তবে মহান আল্লাহ পাক শুধু হযরত ঈসা রুহুল্লাহ য়ালাইহিস ছালাম উনার আরজু কবুল করে উনাকে উম্মত হিসেবে শেষ যামানায় প্রেরণ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
বুঝা যায় কি? একজন সম্মানিত রসূল (ঈসা য়ালাইহিস ছালাম) তিনি কখন আরেকজন রসূল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার উম্মত হতে চাইতে পারেন? তিনি কত সুমহান মর্যাদা মুবারকের অধিকারী হতে পারেন...! সুবহানাল্লাহ।
বুঝা যায় কি... যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কত মাহবুব হলে মহান আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের নিকট জানিয়েছেন শেষ নবীর আগমনের কথা...
আর যেদিন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি দুনিয়াতে আগমন করবেন এই বিষয় যদি মহান আল্লাহ পাক প্রত্যেক ক্বওমের নিকট ওহী মুবারকের মাধ্যমে জানিয়ে দেন তাহলে কি এটা বুঝা যায় না তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ??? তাহলে উনার আগমনের যেই মুবারক দিবস, ক্ষণ সেই দিনটি, ক্ষণটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ!!!
উম্মত সসীম আর হুযুর পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার মুবারক শান-মান আজিম যা উম্মতের ক্ষুদ্র মগজের ক্ষুদ্র চিন্তা দ্বারা কল্পনা করা অসম্ভব...
আর পবিত্র মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া
আলিহি ওয়াছাল্লাম এর দিনের খুশীর বেলায় নয় যখন কোন মৃতের বাড়ীতে, মৃত্যু দিবসে, বিয়ের দিন, বা কোন শুভ কাজের প্রারম্ভে মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তখন
ইহাকেও যারা বিদয়াত বলে চালিয়ে দিতে চায় তারা যে কত বড় মুরতাদ তা আপনারা কল্পনাও
করতে পারবেন না।
এবার আসুন পবিত্র মিলাদ শরীফ আসলে কিভাবে পাঠ করে তা দেখিঃ বিশুদ্ধ তাওয়াল্লুদ শরীফ দ্বারা পবিত্র মিলাদ শরীফ পাঠের নিয়ম, বাংলা, উর্দু শের সহ সময় এবং মানসিক তৃপ্তি হলে ছালাম শেষ করে বসে পড়েন। তারপর বেজোড় সংখ্যায় যতক্ষণ মানসিক তৃপ্তি যায় তওবা শরীফ পাঠ করে দোয়া করেন। এই হলো মিলাদ শরীফ যা তারা হারাম আর বিদয়াত বলে ফতোয়া দেয়। নাউযুবিল্লাহ!!!
এবার আসুন জেনে নেই একা বা মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ অথবা কোন একটি সূরাহ বা আয়াত শরীফ পাঠ করার হুকুম এবং ফজিলত।
মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (اِنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ کِتٰبَ اللّٰہِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً یَّرۡجُوۡنَ تِجَارَۃً لَّنۡ تَبُوۡرَ لِیُوَفِّیَہُمۡ اُجُوۡرَہُمۡ وَ یَزِیۡدَہُمۡ مِّنۡ فَضۡلِہٖ ؕ اِنَّہٗ غَفُوۡرٌ شَکُوۡرٌ)“যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব (কুরআন শরীফ) পাঠ করে, ছ্বলাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। (ছুরা ফাতির ২৯-৩০)
আর হাদিস শরীফে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেনঃ আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেনঃ (مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمْ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمْ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمْ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ) অর্থাৎ, যে কোন সম্প্রদায় মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তার আলোচনা ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করে, তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশতা য়ালাইহিমুস ছালাম উনারা তাদের বেষ্টন করে রাখেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার নিকটস্থ ফেরেশতা য়ালাইহিমুস ছালাম উনাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন।” সুবহানাল্লাহ!!!
এবার আসুন জেনে নেই একা বা মিলিত হয়ে দূরুদ শরীফ পাঠ করার হুকুম এবং ফজিল।
খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ (إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا) নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক ও উনার ফেরেশতা য়ালাইহিমুস ছালামগন নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম উনার প্রতি ছ্বলাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও উনার (ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) প্রতি ছ্বলাত-দরুদ পেশ করো এবং উনাকে (ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম) যথাযথভাবে ছালাম জানাও।” (আল কুরআন ৩৩/৫৬)
আর হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রদ্বিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উহার কারনে তার উপর দশবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবেন।” সুবাহানাল্লাহ (মুসলিম শরীফ)
ইবনে মাসঊদ রদ্বিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিতঃ রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে।” (তিরমিযী শরীফ)
আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম তিনি বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে পবিত্র জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ শরীফ পাঠ করবে। কেননা, তোমাদের দরূদ শরীফ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রছুলুল্লাহ! ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম আপনি তো (অফাৎ এর পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। নাউযুবিল্লাহ! সে ক্ষেত্রে আমাদের দুরুদ শরীফ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ সমস্থ পয়গম্বরগণ নিজ নিজ রওজা শরীফে জীবিত বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে। (আবু দাউদ শরীফ)
প্রমান হলো যে একা বা সম্মিলিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত এবং দূরুদ শরীফ পাঠ করার হুকুম স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক এবং রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনারা দিয়েছেন, যা বেমিছাল ফজিলতের কারন দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য। অথচ এই হুকুমকে হারাম আর বিদয়াত বলে ফতোয়া দেনে ওয়ালা যদিও নিজেদের পবিত্র দ্বীন ইসলামের ঠিকাদার মনে করে কিন্তু হক্বিকতে এরা কাফের মুশরিক আবু লাহাবের চেয়েও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।
আর অনেকে জিজ্ঞেস করেন কিভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালন করবেন, কারন ঈদে মীলাদে হাবীবী একটি পরিপূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও নিয়ামতপূর্ণ আমল।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম এমন এক আমল যে আমলে অগনিত নিয়ামতের সম্ভার রয়েছে। ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালনের মাধ্যম দিয়ে মানুষ এসকল নেক কাজ করার সুযোগ ও বিশাল নিয়ামত লাভ করতে পারে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, (مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ)হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রছুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম শরীফ ১০১৭, নাসাঈ শরীফ ২৫৫৪, জামে তিরমিযী ২৬৭৫)
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা দেখতে পেলাম, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উপলক্ষে আমারা যে আমল করি সেগুলো প্রতিটি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ সম্মত। এবং সবই উত্তম ও নিয়ামত সমৃদ্ধ, এবং আল্লাহ পাকের আদেশের অর্ন্তভূক্ত। তাই এই সুমহান আমলের বিরোধীতা করা কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব না। সূতরাং প্রমাণ হলো, আমরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উপলক্ষে যে আমল করি সবই কুরআন শরীফ সম্মত।
শেষ করার আগে কয়েকটি কথা বলে শেষ করছি। কিছু “জাহেলে মুরাক্কাব” মানে গন্ড মুর্খ আছে যারা প্রশ্ন করে নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম কি প্রতি বছর আগমন করেন নাকি? তাহলে প্রতি বছর তোমরা কেন মিলাদুন নবী পালন কর?
এইসব নরাধম জাহিল মুর্খদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যেঃ
কোরআন শরীফ কি প্রতি বছর নাজিল হয়? তাহলে কোরআন শরীফ নাজিলের কারনে প্রতি বছর শবে কদর পালন করতে হয় কেন?
প্রতি বছর মুহররমুল হারাম শরীফের দশ তারিখে কি মূসা (য়ালাইহিস ছালাম) ও উনার উম্মতরা ফেরাউনের হাত থেকে নাজাত পান? তাহলে সেই নাজাত পাওয়ার খুশিতে আজও আশুরার রোযা রাখতে হয় কেন?
মা হাজেরা য়ালাইহাস ছালাম কি প্রতিবছর সাফা-মারওয়া শরীফ দৌড়াদৌড়ি করেন? তাহলে উনার এই আমলের স্মৃতি সরুপ আজও হাজ্বীদের সাফা-মারওয়া শরীফ সাঈ না করলে হজ্জ বাতিল হয় কেন?
শয়তান কি প্রতি বছরই কোরবানী করতে বাধা দেয়? তাহলে প্রতিবছর হাজীদের জামারায় শয়তানকে পাথর মারতে হয় কেন?
এতএব এইসব উদ্ভট প্রশ্ন করে তারা নিজেদের মূর্খতাকে জাহির করে এবং কুরআন সুন্নাহ ইজমা ক্বিয়াস শরীফ এর দলিল দিয়ে প্রত্যেক হিজরি শতকের পবিত্র মিলাদুন নবী ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম পালনের দলিল দেওয়ার পরেও যারা মুবারক এই বিষয়ে কুতর্ক করে তা অস্বীকার করবে নিস্বন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট গুমরাহ হবে।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের হক্ব বোঝার মানার আর পালন করার তৌফিক দিন আমিন সুম্মা আমিন।
0 ফেইসবুক: