أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ
الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى
سُبْحَانَ
اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ اِلٰہَ
اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ
الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকতুহ।
আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ১৮-ই শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৩ হিজরি। আজ শাওওয়াল শরীফ মাসের তৃতীয় জুমু’আহ শরীফের দিন।
বিগতো ৩ সপ্তাহে আমরা শাওওয়াল শরীফ মাস সম্পর্কে আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক আলোচনাই করেছি, আজকে আরো কিছু আলোচনা করবো ইন’শা-আল্লাহ।
প্রিয় মুসল্লিয়ানে কেরাম ভাইয়েরা আমার লক্ষ্য করুন, আজকে আপনি যে দ্বীন ইসলাম পালন করছেন, তা বিগত দেড় হাজার বছর ধরে, অনেক রক্ত ঝরিয়ে আপনার নিকট উপস্থিত হয়েছে, এই যে কোনরূপ টেনশন, চিন্তা পেরেশানি ছাড়াই আপনি মহান আল্লাহ পাকের ইবাদত করতে পারছেন, এগুলি এমনি এমনি কিন্তু আসেনাই, এইসবের পেছনে বিদ্যমান কোটি কোটি মুসলমানের দ্বিখণ্ডিত মস্তক, কোটি কোটি মায়ের উপযুক্ত সন্তান হারানোর যন্ত্রনা, কোটি কোটি বাপের শেষ বয়সের অবলম্বন যুবক সন্তানের লাশটাও না দেখার কষ্ট, কোটি কোটি নারীর সদবা থেকে বিধবা হওয়ার মতো অসহ্য যন্ত্রনার সাথে যুবক বোন ও ভাইয়ের একা হয়ে যাওয়ার মত আফসোস আর ব্যথা বেদনা। আজকে আপনি যে সাজানো গোছানো ইসলামিক পরিবেশ পেলেন, এর বিপরীতে আপনি কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন? কখনো কি খোজ খবর নিয়েছেন যে আপনার আমার যিনি মুক্তিদাতা রসূল, নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আমাদের এই দ্বীনের জন্য কি পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করেছেন যেনো আমরা দুনিয়া আখিরাতে কামিয়াবি হতে পারি। আপনারা কি জানেন যে ৪র্থ হিজরী সনের এই শাওওয়াল শরীফ মাসেই খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো।
বারা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধের দিন মাটি বহন করেছিলেন। এমনকি মাটি উনার পেট ঢেকে ফেলেছিল অথবা (হাদিস বর্ণনাকারীর সন্দেহ যে) উনার পেট ধূলায় আছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এ সময় তিনি বলছিলেন, মহান আল্লাহ পাকের কসম! মহান আল্লাহ পাক হেদায়েত না করলে আমরা (আজ) হেদায়েত পেতাম না, দান সদকা করতাম না, এবং ছ্বলাত (নামাজ)ও আদায় করতাম না। সুতরাং (হে মহান আল্লাহ পাক) আমাদের প্রতি রহমত নাযিল করুন এবং আমাদের কে শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার সময় দৃঢ়পদ রাখুন।
কিতাব সূত্রঃ [বুখারি শরীফ, ইঃফাঃ ৩৮০৪, আঃনঃ ৪১০৪]
জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “খন্দক যুদ্ধের দিন আমরা পরিখা খনন করেছিলাম। এ সময় একখন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে আসলে (যা ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছিলো না) সকলেই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, খন্দকের মাঝে একখন্ড শক্ত পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাংতে পারছি না)। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব। এরপর তিনি দাঁড়ালেন। এ সময় উনার পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী ছিলাম। কোনো কিছুর স্বাদও গ্রহণ করিনি। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একখানা কোদাল উনার মুবারক বরকতময় হাতে নিয়ে প্রস্তরখন্ডে আঘাত করলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। সুবহানআল্লাহ!
কিতাব সূত্রঃ [বুখারি শরীফ, ইঃফাঃ ৩৮০১, আঃনঃ ৪১০১]
এই হলো ইসলাম প্রতিষ্টার নমুনা, হাক্বিকত, অথছ আজকে আমরা পুরাই গাফেল হয়ে আছি। আমরা মজে থাকি আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে, আমাদের বউ বাচ্চা নিয়ে, বন্ধ বান্ধব নিয়ে, দিনের পর দিন পার করে দিচ্ছি দ্বীন ইসলামের খেদমত ছাড়াই, অথচ এর ফলাফল কি, অথবা এইসবের হুকুম কি তা জানিওনা, জানার চেষ্টাও করিনা, আবার অনেকে জানলে পালন করিনা, ফলশ্রুতিতে আমরা দিন দিন আল্লাজীর পাকড়াওয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আমাদের উচিৎ মহান আল্লাহ পাক আমাদের এই গাফলতির মূলে কি রয়েছে তা জানা, জেনে সেইরূপ আমল করা। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ) হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ আর তোমাদের সন্তানাদি তোমাদেরকে যেন মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ হতে গাফিল করে না দেয়। যারা এমন করবে তারাই (কিন্তু) ক্ষতিগ্রস্ত।
কিতাব সূত্রঃ (আল কুরআন ৬৩/৯)
অথচ অনেকেই দেখা যাচ্ছে ব্যবসায় উন্নতি হলে, বা লস হলেই গাফেল হয়ে যাই, সন্তানদের দুনিয়াবি কোন উন্নতি বা অসুখ বিশুখ হলেই গাফেল হয়ে যাই। ভুলে যাই যে আমাদের এই গাফেল হওয়া মূলত আমাদেরই ক্ষতির কারণ। মহান আল্লাহ পাক এই ব্যপারে স্পষ্ট বলেই দিয়েছেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ وَ اَوۡلَادِکُمۡ عَدُوًّا لَّکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُمۡ) হে মুমিনগণ, তোমাদের স্ত্রী(স্বামীও অন্তর্ভুক্ত) ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা (দ্বীনের কাজে) তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। (আল কুরআন ৬৪/১৪)
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বর্ণিত হয়েছেঃ বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, এই আয়াত শরীফ সেইসব মুসলিমদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল, যারা হিজরতের পর মক্কায় ইসলাম গ্ৰহণ করে মদীনা শরীফে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে হিজরত করে চলে যেতে মনস্থ করে, কিন্তু তাদের পরিবার পরিজনরা তাদেরকে হিজরত করতে বাধা দেয়। অতঃপর তারা যখন হিজরত করে মদীনা আসে তখন দেখতে পায় যে, অন্যান্য লোকেরা তাদের আগেই দ্বীনের ফিকহ শিক্ষায় অগ্রণী হয়ে গেছে। তখন তাদের খুব আফসোস হয়। [তিরমিযী শরীফ ৩৩১৭] তাছাড়া সন্তান-সন্তুতির কারণে মানুষ অনেক মহৎ কাজ থেকেও বিরত হতে বাধ্য হয়, তাই এইসব জিনিস যখন তোমাদের নেক কাজ ও আনুগত্যের পথে বাধা সৃষ্টি করবে, তখন জেনে নিও যে তারা তোমার কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্ক্ষী নয়, বরং শত্রু। এরেকটি বিষয় হলো, তুমি কখনোই তাদের পিছনে পড়ো না, বরং তাদেরকে তোমার পিছনে লাগাও, যাতে তারাও মহান আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে নেয়। তুমি তাদের পিছনে পড়ে নিজের পরিণাম মন্দ করো না।
হাদীস শরীফে এসেছে, বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দিচ্ছিলেন, ইত্যবসরে হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আলাইহিমুস সালাম) সেখানে উপস্থিত হলেন, উনাদের গায়ে দুটি লাল রংয়ের পোশাক ছিল। উনারা হাঁটছিলেন আর হোঁচট খেয়ে পড়ছিলেন। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনাদের এ অবস্থা দেখে (খুৎবা বন্ধ করে) মিম্বর থেকে নেমে এসে উনাদেরকে নিজের সামনে বসালেন তারপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক সত্য বলেছেনঃ (اِنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ) তোমাদের ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পরীক্ষা(’র বস্তু)মাত্র (যারা এ দু’টিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে মহান আল্লাহ পাকের রাস্থায় অটল থাকবে তারাই কৃতকার্য হবে, আর যারা এ দু’টিকে মহান আল্লাহ পাকের চেয়ে অধিক ভালবাসবে তারাই ব্যর্থ হয়ে যাবে)। আর মহান আল্লাহ পাক হচ্ছেন এমন, যাঁর নিকট রয়েছে মহা পুরস্কার। এ বাচ্চা দু'টিকে হাঁটার সময় হোঁচট খেতে দেখে আমি স্থির থাকতে পারলাম না। ফলে আমি আমার কথা বন্ধ করে তাদেরকে উঠিয়ে নিলাম।” (তিরমিযী শরীফ ৩৭৭৪, ইবনে মাজাহ শরীফ ৩৬০০)
আজকে যদি আমাদের বলা হতো যে এই রাস্থায় যেওনা গেলে তোমার সাথে থাকা লাখ টাকা ডাকাতি হবে, তাহলে মানুষ ভুলেও সেই রাস্থায় যেতনা, অথচ দুনিয়াবি বিষয়ে সতর্ক থাকলেও মহান আল্লাহ পাক যে আখেরাতের ব্যপারেও স্পষ্ট বলে দিয়েছেন সেই ব্যপারে আমরা সতর্ক না হয়ে উল্টো গাফেল হচ্ছি দিন দিন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ ( زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ) নারী জাতির প্রতি ভালোবাসা, সন্তান সন্ততি, কাঁড়ি কাঁড়ি সোনা রূপা, পছন্দসই ঘোড়া(আজকের দিনের দামী যানবাহন), গৃহপালিত জন্তু ও যমীনের ফসলকে (সব সময়ই) মানব সন্তানের জন্যে লোভনীয় করে রাখা হয়েছে; (আসলে) এ সব হচ্ছে পার্থিব জীবনের কিছু ভোগের সামগ্রী (মাত্র, স্থায়ী জীবনের) উৎকৃষ্ট আশ্রয় তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার।
কিতাব সূত্রঃ (আল কুরআন ৩/১৪)
উপরোক্ত আয়াতের সারমর্ম এই যে, মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষের মনে এসব বস্তুর প্রতি স্বভাবগতভাবেই আকর্ষণ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে যে, কে এগুলোর আকর্ষণে মত্ত হয়ে আখেরাতকে ভুলে যায় এবং কে এসবের আসল স্বরূপ ও ধ্বংসশীল হওয়ার বিষয় অবগত হয়ে শুধু যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু অর্জনে সচেষ্ট হয় ও আখেরাতের কল্যাণ আহরণের লক্ষ্যে তার সুচারু ব্যবহার করে। মহান আল্লাহ্ তা'আলা যেসব বস্তুকে মানুষের দৃষ্টিতে সুশোভিত করে দিয়েছেন, শরীয়ত অনুযায়ী সেগুলো পরিমিত উপার্জন করলে এবং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সঞ্চয় করলে দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী হাসিল হবে। পক্ষান্তরে অবৈধ পন্থায় সেগুলো ব্যবহার করলে অথবা বৈধ পন্থায় হলেও এগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত নিমজ্জিত হয়ে আখেরাত বিস্মৃত হয়ে গেলে ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়বে। [সা’দী] অর্থাৎ এসব হচ্ছে পার্থিব জীবনে ব্যবহার করার জন্য; মন বসাবার জন্য নয়। আর মহান আল্লাহ পাকের নিকটই রয়েছে উত্তম ঠিকানা। সেখানে চিরকাল থাকতে হবে যার নেয়ামত কখনোই ধ্বংস হবে না, হ্রাসও পাবে না। আখেরাতে মহান আল্লাহ তা'আলা মুমিনের জন্য যে নেয়ামত রেখেছেন, তার তুলনা দুনিয়ার জীবনের সামগ্ৰীসমূহের কোন কিছু দিয়েই দেয়া যায় না। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং যা কিছু এতে আছে সবই অভিশপ্ত। তবে সেইসব ছাড়া যা মহান আল্লাহ পাকের যিকর বা স্মরণে করা হয় ও তার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং দ্বীনী জ্ঞানের আলেম ও দ্বীনী জ্ঞান অর্জনকারী। (তিরমিযী শরীফ ২৩২২; ইবন মাজাহ শরীফ ৪১১২)
এর পরেও কি আমাদের হুস ফিরবেনা? এর পরেও কি আমরা গাফেল থাকবো? মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পানাহ চাই, আমাদের হেফাজত করুন, সহিহ বিশুদ্ধ বুঝ দান করুন। দ্বীন ইসলামের খেদমতের তৌফিক দিন। নিজে আমল করে অন্যকে করার জন্য উৎসাহ দেওয়ার, সাহায্য করার তৌফিক দিন। আমিন।
যাইহোক, প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হবে জুমু’আহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল ব্যবসা আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ] হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমু’আহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তা’য়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।
√ কিতাব সূত্রঃ আল কুরআন – ৬২/৯।
কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমু’আহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমু’আহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্থ উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ ঐ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তা’য়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।
এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ] অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও।
√ কিতাব সূত্রঃ আল কুরআনঃ ৬২/১০।
আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমু’আর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্বরন থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কাম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমু’আহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমু’আহ শরীফ সহ দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)
0 ফেইসবুক: