Tuesday, May 31, 2022

২৫শে শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৩ হিজরির জুমু'আর বয়ান


أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى 

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ 

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকতুহ

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিনআজ ২৫শে শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৩ হিজরিআজ শাওওয়াল শরীফ মাসের শেষ জুমুআহ শরীফের দিন

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে, মহান আল্লাহ পাকের নিকট হজ্জের জন্যে যে কয়টি মাস সম্মানিত, এর মধ্যে শাওওয়াল শরীফ মাস পবিত্র হজ্জের মাসের অন্তর্ভুক্ত। এটি হজ্জের নিদৃষ্ট মাসগুলির মধ্যে প্রথম মাস। পবিত্র আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومٰتٌ) হজ্জ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে। (সূরাহ বাক্বারা ২/১৯৭) এই আয়াতের ব্যখায় হাদিস শরীফে এসেছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, পবিত্র হজ্জ-এর মাসগুলো হলঃ শাওয়াল, যিলকদ, এবং যিলহজ্জ মাসের দশ দিন

দলিল সূত্রঃ সহীহ বুখারী ৩/৪৯০, ফাতহুল বারী ৩/৪৯০।

যারা হজ্জের নিয়ত করেছেন, যারা হজ্জে যাবেন আপনাদের কিছু জিনিস মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছি। প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরযআর প্রয়োজনীয় মুহূর্তের জ্ঞান অর্জন করা বিশেষভাবে ফরযব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত ইসলামী বিধি-বিধান জানা ফরযকৃষকের জন্য কৃষি সংক্রান্ত ইসলামের যাবতীয় নির্দেশনা জানা ফরযতেমনি ইবাদতের ক্ষেত্রেও সালাত কায়েমকারির জন্য সালাতের যাবতীয় মাসআলা জানা ফরয তেমনি হজ্জ পালনকারির জন্য হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় মাসলা-মাসায়েল জানাও ফরয আপনারা যারা হজ্জের প্রস্তুতি নিয়েছেন বা হজ্জ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তাদের উচিৎ আগে থেকেই হজ্জের বিষয়ে সমস্থ খুঁটিনাটি নির্ভরযোগ্য তাক্বওয়াশীল পরহেজগার একজন দ্বীনি জ্ঞানে গুণান্বিত আলেম থেকে ভালোকরে শিখে নেওয়া। প্রচুর অর্থ ব্যয় ও শারীরিক কষ্ট সহ্য করে হজ্জ থেকে ফেরার পর যদি কোন আলিমের নিকট গিয়ে জানতে চান যে, ‘আমি এই ভুল করেছি, দেখুন তো কোন ব্যবস্থা করা যায় কি-না’, তবে তা দুঃখজনক বৈ আর কিছুনাঅথচ আপনার ওপর ফরয ছিল, হজ্জের সফরের পূর্বেই এ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা

হজ্জ সম্মানিত দ্বীন ইসলামের পাঁচ রুকন বা স্তম্ভের অন্যতম পালনীয় বিষয়, যা মহান আল্লাহ তা‘আলা সামর্থবান প্রত্যেক নারী পুরুষের ওপর ফরয করেছেন মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ) এবং সামর্থ্যবান (প্রত্যেক) মানুষের উপর মহান আল্লাহ তা’য়ালা উদ্যেশ্যে বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরযআর যে কেউ কুফরী করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তা’য়ালা সৃষ্টিজগতের (কোন কিছুর) মুখাপেক্ষী নন (সূরাহ আলে ইমরান আলাইহিস সালাম ৩/৯৭)।

পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা সমস্থ মুসলিম নারী পুরুষদের জন্য হজ্জ এর উপর ঈমান রাখা ফরজ, আর যারা সামর্থ্যবান তাদের জন্য হজ্জ করা মহান আল্লাহ পাক ফরজ করে দিয়েছেন। স্বরনীয় যে, হজ্জ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করাশরীয়তের পরিভাষায় কা'বা ঘরকে প্রদক্ষিণ করা, আরাফাত, মিনা ও মুযদালিফায় অবস্থান ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মকে হজ্জ বলা হয় এই হজ্জের বিস্তারিত নিয়ম-পদ্ধতি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তিনি মৌখিক উক্তি ও কর্মের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন

তিলাওয়াতকৃত আয়াতে পাকে, পবিত্র কা'বা ঘরের তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা মানব জাতির জন্য শর্তসাপেক্ষে কা'বা ঘরের হজ্জ ফরয করেছেনশর্ত এই যে, সে পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য থাকতে হবেসামর্থ্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ঈমানদার ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা তিনি কা'বা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হবেন ঋনকরা ব্যতীতএছাড়া বাড়িতে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবেদৈহিক দিক দিয়ে হাত পা ও চক্ষু কর্মক্ষম হতে হবেকারণ, যাদের এসব অঙ্গ বিকল, তাদের পক্ষে স্বীয় বাড়ী ঘরে চলাফেরাই দুস্কর সেখানে হজ্জ তাদের উপর ফরজ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা এমতাবস্থায় সেখানে যাওয়া ও হজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালন করা তার পক্ষে কিরূপে সম্ভব হবে? তবে এরূপ ব্যক্তিরা যদি বিত্তবান হোন আর কারো সাহায্য নিয়ে যেতে পারেন তাহলে তা অধিক উত্তম।

আর মহিলাদের পক্ষে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া সফর করা শরীয়ত অনুসারে নাজায়েযকাজেই মহিলাদের সামর্থ্য তখনই হবে, যখন তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ হজ্জে থাকবেন; নিজ খরচে করুন অথবা মহিলাই তার খরচ বহন করুন মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলাই লক্ষ কোটি টাকার মালিক হলেও হজ্জ করতে পারবেন না। এমনিভাবে কা'বা ঘরে পৌছার জন্যে রাস্তা নিরাপদ হওয়াও সামর্থ্যের একটি অংশরাস্তা যদি বিপজ্জনক হয় এবং জানমালের ক্ষতির প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে হজ্জের সামর্থ্য নাই বলে ধরে নিতে হবেইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আয়াতে সামর্থ বলতে, বান্দার শারীরিক সুস্থতা এবং নিজের উপর কোন প্রকার কমতি না করে পাথেয় ও বাহনের খরচ থাকা বুঝায়। [তাফসীরে তাবারী]

অতঃপর, ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আয়াতে কুফর বলতে বোঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তির কাজকে, যে হজ্জ করাকে নেককাজ হিসেবে নিল না আর হজ্জ ত্যাগ করাকে গোনাহের কাজ মনে করল না। [তাফসীরে তাবারী] মুজাহিদ রহমতুল্লাহ বলেন, কুফরী করার অর্থ, মহান আল্লাহ পাক ও আখেরাতকে অস্বীকার করল নাউযুবিল্লাহ। [তাফসীরে তাবারী] মোটকথা বান্দা বড়-ছোট যে ধরনের কুফরই করুক না কেন তার জানা উচিত যে, মহান আল্লাহ পাক তার মুখাপেক্ষী নযন তিলাওয়াতকৃত আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির কোন কিছুর মুখাপেক্ষী ননযদি সমস্ত মানুষ হজ্জ না করে, হজ্জকে অস্বীকার করে কাফের হয়ে যায় তবুও এতে উনার রাজত্বে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না

পবিত্র আল কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছেযেমনঃ (اِنۡ تَکۡفُرُوۡۤا اَنۡتُمۡ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ۙ فَاِنَّ اللّٰهَ لَغَنِیٌّ حَمِیۡدٌ) তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও মহান আল্লাহ পাক অভাবমুক্ত ও প্রশংসার যোগ্য [সূরা ইবরাহীমঃ ১৪/৮] আরও বলেনঃ (فَکَفَرُوۡا وَ تَوَلَّوۡا وَّ اسۡتَغۡنَی اللّٰهُ ؕ وَ اللّٰهُ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ) অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল মহান আল্লাহ পাক-ও (তাদের ঈমানের ব্যাপারে) কোন পরোয়া করলেন না; আর মহান আল্লাহ পাক অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত [সূরা আত-তাগাবুনঃ ৬৪/৬] সুতরাং তিনি উনার বান্দাদেরকে আনুগত্য করা এবং অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ বান্দাদের উপকারার্থেই দিয়ে থাকেনএ জন্যে দেন না যে, বান্দার আনুগত্য বা অবাধ্যতা মহান আল্লাহ পাকের কোন ক্ষতি বা উপকার করবে। [আদওয়াউল বায়ান]

অতএব ইহা খুবয় ভয়ানক বিষয় যে সামর্থ্য থাকার পরেও যারা হজ্জের ব্যপারে গাফেল, হজ্জকে ঐচ্ছিক বলে মনে করেন তাদের জেনে রাখা উচিৎ, এতে আপনি কুফুরে লিপ্ত না হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের অনেকের মা, বাপ, ভাই দুনিয়া থেকে সামর্থ্য থাকার পরেও হজ্জ না করে বিদায় নিয়েছেন, এরা প্রতিনিয়ত আযাব ভোগ করে যাচ্ছেন, আওলাদ ও ভাই ব্রাদার হিসেবে তাদের ক্বাযা হজ্জ কে সম্পাদন করা উচিৎ নিজে বা বিশ্বস্থ কাউকে দিয়ে।

যার ওপর হজ্জ ফরয তিনি যদি হজ্জ না করেই মারা যান, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে হজ্জ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বের করতে হবে উত্তরসূরি হিসেবে তার সম্পদ আপনি খেতে পারবেন না যদি ঋন থাকে তা না দিয়ে, এবং হজ্জ বাকি থাকলে তা না করিয়ে। ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছেঃ “সিনান ইবন আবদুল্লাহ জুহানির স্ত্রী তাকে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে, উনার মা মৃত্যু বরণ করেছেন অথচ তিনি হজ্জ করতে পারেননিতার জন্য কি তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ করা যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তার মায়ের ওপর কোন ঋণ থাকত, আর সে তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করত, তাহলে তার পক্ষ থেকে কি তা পরিশোধ হত না? তাই সে যেনো তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ আদায় করে (মুসনাদে আহমাদ ১/২৯৭)

ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, “জুহাইনা বংশের জনৈক মহিলা রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার মা হজ্জের মানত করেছিলেনতিনি সে হজ্জ আদায়ের আগেই মারা গেছেনআমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করবো?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করোতোমার মায়ের যদি কোন ঋণ থাকতো তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? তুমি (তোমার মায়ের যিম্মায় থাকা) মহান আল্লাহ পাকের হক্ব পরিশোধ করোকেননা মহান আল্লাহ পাকের পাওনা অধিক পরিশোধযোগ্য (ফাতহুল বারীঃ ১৩/২৯৬)।

এখন প্রশ্ন হলো বদলী হজের পূর্বে ব্যক্তির জন্য হজ্জ করা জরুরী কি না?

রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিসের আলোকে কিছু ইমামের মতানুসারে প্রতিনিধি হওয়ার আগে তার নিজের হজ্জ করা জরুরী (তবে আমাদের মাজহাবের ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহ-এর মতে, বদলী হজ করার জন্য তার পূর্বে হজ করা জরুরী নয়তবে যিনি পূর্বে হজ করেছেন তাকে দিয়ে বদলী হজ করানো উত্তম] ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, শুবরুমার পক্ষ থেকে লাব্বাইকতিনি বললেন, শুবরুমা কে? সে বলল, আমার ভাই, অথবা সে বলল আমার নিকটাত্মীয়তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ করেছ? সে বলল, নাতিনি বললেন, (আগে) নিজের হজ করো, তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ করবে” (আবূ দাউদ শরীফঃ ১১৮১; ইবনে মাজাহ শরীফঃ ৩০৯২)

বদলী হজ্জ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য

১. বদলী হজ্জে প্রেরণকারীর উচিত একজন সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে উনার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পাঠানো, যিনি হজ্জ-উমরার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং যার অন্তরে রয়েছে তাকওয়া বা মহান আল্লাহ পাকের ভয়

২. বদলী হজ্জকারির কর্তব্য আপন নিয়ত পরিশুদ্ধ করা এবং দুই উদ্দেশের যেকোন একটি সামনে রেখে বদলী হজ করতে যাওয়াঃ

এক) যে ব্যক্তি চায় মৃত ব্যক্তিকে তার হজ্জের দায় থেকে মুক্ত করতে মহান আল্লাহ পাকের প্রাপ্য এই ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে তার উপকার করতেসে এটা করবে হয়তো মৃত ব্যক্তির সাথে তার আত্মীয়তার সূত্রে কিংবা একজন মুসলমান ভাই হিসেবেঅতএব যতটুকু অর্থ খরচ হবে তা-ই গ্রহণ করবেঅবশিষ্টগুলো ফেরত দেবেএটি একটি ইহসান বা সৎকর্ম আর মহান আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলকে ভালোবাসেন

খ. যে ব্যক্তি হজ্জ করতে এবং হজ্জের নিদর্শনাবলি দেখতে ভালোবাসে অথচ সে হজের খরচ যোগাতে অক্ষমঅতএব সে তার প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ নেবে এবং তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে হজ্জের ফরয আদায় করবে

মোটকথা বদলী হজ্জকারী হজ্জের জন্য টাকা নেবেনটাকার জন্য হজ্জে যাবে নাআশা করা যায়, এ ব্যক্তি বিশাল নেকির অধিকারী হবেন এবং তাকে প্রেরণকারীর মতো তিনিও পূর্ণ হজের সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহরসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন ‘যে বিশ্বস্ত কোষাধ্যক্ষ সন্তুষ্টচিত্তে তার দায়িত্ব পালন করে সেও একজন সদকাকারী (বুখারী শরীফ ৪/৪৩৯; মুসলিম শরীফ ২/৭১০)

আর বদলী হজের মাধ্যমে যার উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন করা, আখিরাতের আমলের উসিলায় দুনিয়া কামাই করা এবং দুনিয়াবী কোন স্বার্থ লাভ করা, সে আখিরাতে কিছুই পাবে না ইন’শা-আল্লাহ, আগামী সপ্তাহে আমরা হজ্জের বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।

যাইহোক, প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হবে জুমুআহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ] হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমুআহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো (সূরাহ জুমুআহ শরীফ ৬২/৯)

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমুআহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবেএই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমুআহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্থ উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ ঐ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছেআর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ] অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও (সূরাহ জুমুআহ শরীফ ৬২/১০)

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তায়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করোঅর্থাৎ, জুমুআর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও তবে আমার স্বরন থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কাম করতে থাকোএছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমুআহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেনআর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমুআহ শরীফ সহ দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারেআল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন)


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: