Wednesday, June 29, 2022

পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ ৩০ জিলক্বদ কিংবা ১ জিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরির বয়ান।

أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি (السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللهِ وَبَرَكَاتُهُ) আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ৩০ জিলক্বদ কিংবা জিলহজ্জ শরীফ শরীফ (তারিখ চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল), ১৪৪৩ হিজরী গত সপ্তাহে আমরা হুদাইবিয়ার সন্ধি বাইয়াতে রিদ্বওয়ান নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পবিত্র হজ্জের যেহেতু আর কয়েকদিন বাকি সেহেতু আজকে থেকে পবিত্র হজ্জের আলোচনা শুরু করবো, ইনশা-আল্লাহ।

হজ্জ শব্দের আবিধানিক অর্থ হল ইচ্ছে করা, আর ইসলামিক পরিভাষায়ঃ মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন হাদিসের নিয়ম অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে কাবা শরিফ এবং নির্দিষ্ট স্থান সমূহের তাওয়াফ জিয়ারত করাকে হজ্জ বলা হয়।

এবার আসুন জেনে নেই, হজ্জ সম্পর্কে দ্বীন ইসলামের হুকুম কি?

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র আল কুরআনে মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেন এই বলে যেঃ (وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ) এবং (প্রত্যেক) সামর্থ্যবান মানুষের ওপর মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্জ (আদায়) করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে (তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাআলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী। (আল কুরআন /৯৭)

অতএব আমরা জেনে নিলাম যে পবিত্র হজ্জ আদায় করা মহান আল্লাহ পাঁকের নির্দেশ, আর মহান আল্লাহ পাঁকের নির্দেশ পালন করা ফরয। আর যারা ইচ্ছেকৃত এই ফরজ পালন করেন না, অবহেলা করেন সম্পদশালী হওয়ার পরেও, তাদেরকে মহান আল্লাহ পাঁক ধমকি দিচ্ছেন এই বলে যে তারা হজ্জের ব্যপারে উদাসীন হলে, গাফেল হলে, কুফরের উপর মারা গেলে, আল্লাহ পাঁকের কিছুই যায়- আসেনা

ইবনে কাসীর তাবারিতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমামগণ বলেছেনঃ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ্জ না করাকে আল কুরআন কুফরী’ (ফরজ অস্বীকার) বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতএব হজ্জ ফরয হওয়ার এবং এটা যে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সে ব্যাপারে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকছে না। তাছাড় বহু হাদীস শরীফে সাহাবায়ে কেরামদের উক্তিতে যা পাওয়া যায়, তা হচ্ছেঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উক্ত আয়াতে পাঁকে কুফর বলতে কি বোঝানো হয়েছে বলতে গিয়ে বলেন, এমন ব্যক্তির কাজকে, যে হজ্জ করাকে নেককাজ হিসেবে নিল না আর হজ্জ পরিত্যাগ করাকে গোনাহের কাজ মনে করল না (তাবারী) মুজাহিদ রহমতুল্লাহ বলেন, (হজ্জের ব্যপারে) কুফরী করার অর্থ, মহান আল্লাহ তাআলা আখেরাতকে অস্বীকার করল। (তাবারী) মোটকথা বান্দা বড়-ছোট যে ধরনের কুফরই করুক না কেন তার জানা উচিত যে, মহান আল্লাহ তাআলা তার মুখাপেক্ষী নন আর আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ তাআলা তিনি উনার সৃষ্টির কোন কিছুরই মুখাপেক্ষী নন যদি সমস্ত মানুষই কাফের হয়ে যায় তবুও উনার রাজত্বে এর-জন্যে সামান্যতম তারতম্যও ঘটবে না।

এছাড়াও হজ্জ ঈমানের স্থম্ভের অন্যতম রুকন। হাদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ) ইবন উমার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ তাআলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।

. মহান আল্লাহ তাআলা ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ/মাবুদ/ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই, এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলার রসূল- কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।

. নামায কায়িম করা।

. যাকাত প্রদান করা।

. হজ্জ সম্পাদন করা এবং

. রমযান মাসের রোজা রাখা। (মুসলিম শরীফ ৬১, বুখারি শরীফ ৮)

অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ফরজ হজ্জ সম্পাদন করে না, তার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা এই বলে যে, সে যদি গোয়ারমি করে হজ্জ না করে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে আমার কিছুই আসে যায়না। অতএব যারা, এখনো সামর্থ্য থাকার পরেও হজ্জ করেন নাই, ভাবছেন এখন আমি যুবক, আরো কিছুদিন আরাম আয়েশ, স্ফূর্তি করে কাটিয়ে দেই, শেষ বয়সে হজ্জ করে হাজি হয়ে জান্নাতি হয়ে যাবো সকল গুনাহ মাফ করিয়ে। এরূপ অলীক ধারণায় কেউ ডুবে থাকবেন না দয়া করে, আপনারা খেয়াল করে দেখুন, আপনার আশেপাশের অনেক ধনী পয়সাওয়ালা আজকে কবরস্ত হয়ে গেছেন, হয়ত আপনার পরিবারেই আছেন, একবার ভেবে দেখুন, যদি কুরআন অনুসারে তারা কুফরের হালে মারা যান তাহলে আজকে তাদের অবস্থা কি হচ্ছে?

অতএব, প্রত্যেক ব্যক্তি যিনি সামর্থ্যবান উনার উপর ফরজ হচ্ছে, নিজের হজ্জ সম্পাদন করা, এবং যদিঃ মা, বাপ, ভাই, বোন বৃদ্ধ কিংবা অসুস্থ হোন যার পক্ষে হজ্জ সম্পাদন করা সম্ভব নয় অথচ তা ফরজ, তাহলে উনাদের এবং পরিবারের কেউ যদি ফরজ হজ্জ আদায় না করে মারা যান, তাহলে বদলি হজ্জ করিয়ে অন্তত উনাদেরকে কবরের আযাব, আখিরাতের কঠিন ধরা থেকে হেফাজত করা এই ব্যপারে হাদিস শরীফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ খাছআম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। মহিলাটি বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ তাআলার বান্দার উপর ফরযকৃত হজ্জ আমার বয়োবৃদ্ধ পিতার উপর ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, আমি কি উনার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ (আদায় কর) (বুখারি শরীফঃ ইঃফাঃ ১৪২৫, আঃনাঃ ১৫১৩) অন্য হাদিসে আবু রুযাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা একজন বয়স্ক-বৃদ্ধ লোক, পবিত্র হজ্জ উমরাহ করার ক্ষমতা উনার নেই এবং বাহনে আরোহণেরও রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ উমরাহ্ আদায় কর। (নাসাঈ শরীফ ২৬২৩) তবে বদলি হজ্জ কেবল তখনই কেউ করতে পারবেন যিনি নিজের ফরজ হজ্জ আদায় করে ফেলেছেন ইতোপূর্বে এবং হজ্জের বিঁধান পরিপূর্ণরূপে বুঝেন, জানেন এই বিষয়ে হাদিস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, “লাব্বায়িক আন্ শুবরুমাহ’’ (আমি শুবরুমার পক্ষ থেকে হাযির) তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ শুবরুমাহ কে? সে ব্যক্তি বললো, আমার ভাই অথবা আমার বন্ধু। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ আচ্ছা তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ? সে বললো, না। (তখন) তিনি (রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি প্রথমে নিজের হজ্জ আদায় কর, পরে শুবরুমার হজ্জ সম্পন্ন করবে। (আবু দাউদ ১৮১১)

উপরোক্ত তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে বদলি হজ্জ কোন প্রকার হবে তা, যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা হচ্ছে, তিনি নির্ধারণ করে দেবেন যদি ইফরাদ করতে বলেন তাহলে ইফরাদ করতে হবে, যদি কিরান করতে বলেন তাহলে কিরান করতে হবে, আর যদি তামাত্তু করতে বলেন তাহলে তামাত্তু করতে হবে, এর অন্যথা হলে হবে না।

এইযে তিন প্রকার হজ্জে তামাত্তু, ইফরাদ কিরান আমাদের জন্য বিদ্যমান, এর মধ্যে সওয়াবের দিক দিয়ে সর্বাধিক উত্তম হলো কিরান, এরপর তামাত্তু, এরপর ইফরাদ। তবে আদায় সহজ হওয়ার দিক থেকে প্রথমে তামাত্তু, এরপর ইফরাদ, এরপর কিরান।

হজ্জে কিরানঃ মিকাত থেকে একসঙ্গে উমরাহ মূল হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে হজ্জে কিরান বলা হয়। কিরানের হাজিগণকে মক্কা শরীফে পৌঁছে প্রথমে উমরাহ করতে হবে। অতঃপর ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন এবং ১০ জিলহজ্জ দমে শুকরিয়া তথা কোরবানি না করা পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায়ই থাকতে হবে। কিরান হজ্জের ক্ষেত্রে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করা সুন্নত। তাই উমরাহ হজ্জের মধ্যবর্তী যেকোনো সময় একজন হাজী তাওয়াফে কুদুম করবেন; সম্ভব হলে সায়ীও করে নেবেন। মনে রাখতে হবে, যদি কোনো কিরান হাজি তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করেন, তবে তাকে ১০ জিলহজ্জ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না (চাইলে করতে পারেন) কেননা, উমরাহ হজ্জের বিধানে একবার করে সায়ী করা ওয়াজিব। ছাড়া জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত হজ্জের আহকামসমূহ সব হাজির জন্য এক অভিন্ন।

(বিঃদ্রঃ মিকাত হল হজ্জ সংক্রান্ত কিছু স্থান। এসব স্থান অতিক্রম করার পূর্বেই হাজিদেরকে ইহরামের অবস্থা ধারণ করতে হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগত হাজিদের হিসেবে একেকটি মিকাত রয়েছে)

হজ্জে ইফরাদঃ মিকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে ইহরাম বাঁধাকে হজ্জে ইফরাদ বলে। ইফরাদের হাজিগণ পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে ইহরাম অবস্থায় হজ্জের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। অতঃপর মূল হজ্জ শুরু হওয়ার আগে যেকোনো একদিন সুন্নত তাওয়াফ তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করবেন, সম্ভব হলে সায়ীও করে নেবেন। কিরান হজ্জের মতো ক্ষেত্রেও তাওয়াফে কুদুমের সঙ্গে সায়ী করে নিলে ১০ জিলহজ্জ ফরজ তাওয়াফের পর আর সায়ী করা বাধ্যতামূলক না। আর জিলহজ্জ থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত হজ্জের বাকি আহকাম সবার জন্য এক অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো, ১০ জিলহজ্জ কঙ্কর নিক্ষেপের পর কিরান ইফরাদ হাজিগণকে হজ্জের ওয়াজিব অংশ দমে শুকরিয়া তথা কোরবানি করতে হবে, কিন্তু ইফরাদ হাজিগণকে কোরবানি করতে হবে না।

হজ্জে তামাত্তুঃ মিকাত থেকে শুধু উমরার নিয়তে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছে উমরাহ করার পর ইহরাম খুলে স্বাভাবিক অবস্থায় হজ্জের জন্য অপেক্ষা করা এবং জিলহজ্জ ইহরাম বেঁধে হজ্জ সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে। থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত কিরান ইফরাদ হজ্জের মতো তামাত্তু হজ্জের সব বিধান এক অভিন্ন। তবে পার্থক্য হলো, হজ্জে তামাত্তুতে, হজ্জে কিরান, হজ্জে ইফরাদের মতো তাওয়াফে কুদুম নেই

উল্লেখ্য, সাগরপথে বাংলাদেশি হজ্জযাত্রীদের মিকাত হলো ইয়ালামলাম। কিন্তু আকাশপথে বাংলাদেশি হজ্জযাত্রীদের মিকাত হবে কারনুল মানাযিল; যা জেদ্দা এয়ারপোর্টের আগে থেকেই শুরু হয়। সুতরাং, যারা বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা হয়ে প্রথমে পবিত্র মক্কা শরীফে যাবেন, তাদের বাংলাদেশ থেকে বিমানে আরোহণ করার পূর্বেই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। আর যারা বাংলাদেশ থেকে জেদ্দা হয়ে প্রথমে মদিনা মুনাওয়ারায় যাবেন, তাদের মিকাত হবে যুলহোলাইফা; যা বর্তমানে বীরে আলী নামে পরিচিত, এখান থেকে ইহরাম বেঁধে পবিত্র মক্কায় প্রবেশ করবেন।

স্মরণীয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। আর প্রয়োজনীয় মুহূর্তের জ্ঞান অর্জন করা বিশেষভাবে ফরয। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম সবাইকে প্রত্যেক কাজের পূর্বে সেই কাজ সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরি বলেছেন, উদাহরণস্বরূপঃ ব্যবসায়ীর জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত, চাকুরীজীবীর জন্য চাকরী সংক্রান্ত, কৃষকের জন্য কৃষি সংক্রান্ত, হাকিমের জন্য বিচার সংক্রান্ত ইসলামের যাবতীয় নির্দেশনা জানা ফরয। তেমনি ইবাদতের ক্ষেত্রেও নামায কায়েমকারির জন্য নামাজের, সম্পদশালী ব্যক্তিদের যাকাতের জন্য যাকাতের, রোজাদারের জন্য রোজার যাবতীয় মাসআলা জানা ফরয। তেমনী হজ্জ পালনকারির জন্য হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় মাসআলা জানা ফরয, কারণ প্রচুর অর্থ ব্যয় শারীরিক কষ্ট সহ্য করে পবিত্র হজ্জ থেকে ফেরার পর যদি আলিম উলামার নিকট গিয়ে বলতে হয়, ‘আমি হজ্জে গিয়ে এই ভুল করেছি, দেখুন তো কোন পথ বের করা যায় কি-না’, তবে তা দুঃখজনকই বটে অথচ আপনার ওপর ফরয ছিল, হজ্জের সফরের পূর্বেই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি উনার রচিত হাদিসের কিতাবের একটি পরিচ্ছেদ-শিরোনাম করেছেন এভাবেঃ (باب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ.لِقَوْلِ اللهِ تَعَالَى: فَاعْلَمْ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ) অধ্যায়ঃ কথা কাজের আগে জ্ঞান লাভ করার বিষয়ে’; কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুতরাং তুমি জানযে, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই) ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি এখানে কথা কাজের আগে ইলম তথা জ্ঞানকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তাছাড়া রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ (خُذُوْا عَنِّيْ مَنَاسِكَكُم) তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ উমরার বিধি-বিধান শিখে নাও। (মুসলিম শরীফঃ ৭৯২১) হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হয়, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হজ্জ উমরা পালনের আগেই হজ্জ সংক্রান্ত যাবতীয় আহকাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে তা আল্লাহ পাঁকের নির্দেশের মতোই ফরজে পরিণত হয়

অতএব নিঃসন্দেহে এটাই সম্মানিত দ্বীন ইসলামের উসুল, হজ্জ-উমরা পালনকারী প্রত্যেক নর-নারীর জন্য যথাযথভাবে হজ্জ উমরার বিষয়াদি জানা ফরয। হজ্জ উমরা পালনের বিধি-বিধান জানার পাশাপাশি প্রত্যেক হজ্জ উমরাকারীকে অতি গুরুত্বের সাথে হজ্জ উমরার শিক্ষণীয় দিকগুলো অধ্যয়ন অনুধাবন করতে হবে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফরে বা হজ্জের দিনগুলোতে কিভাবে মহান আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন, উম্মত পরিবার-পরিজন এবং স্বজনদের সাথে উঠাবসায় কী ধরনের আচার-আচরণ করেছেন তা রপ্ত করতে হবে। নিঃসন্দেহে বিষয়টির অধ্যয়ন, অনুধাবন রপ্তকরণ হজ্জ-উমরার তাৎপর্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে চেতনা সৃষ্টি করবে।

এবার আসুন জেনে নেই হজ্জের ফযিলত কেমন?

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র আল কুরআনে বলেনঃ (وَ لَیَالٍ عَشۡرٍ) (পবিত্র জিলহজ্জ মাসের প্রথম) দশ রাতের শপথ। (আল কুরআন ৮৯/) ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদা মুজাহিদ প্রমুখ তাফসীরবিদদের মতে, উক্ত আয়াতে জিলহজ্জ মাসের দশ দিনকে বোঝানো হয়েছে। (ইবন কাসীর) এছাড়াও ইহা সর্বোত্তম দিন বলে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা স্বীকৃত। হাদিস শরফে এসেছে, “জিলহজ্ব মাসের দশ দিনের চেয়ে কোনো দিনই মহান আল্লাহ তা'আলার নিকট উত্তম নয় (ইবনে হিব্বান ২৮৪২) হাদীস শরীফে আরো এসেছে, “ দিনগুলোতে নেক আমল করার চেয়ে অন্য কোন নেক আমল করা মহান আল্লাহ তাআলার নিকট এত উত্তম নয়, অর্থাৎ জ্বিলহজের দশ দিন। সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বললেন, হে মহান আল্লাহ তাআলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! মহান আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও নয়? রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি (বুখারী শরীফ ৯৬৯, আবু দাউদ শরীফ ২৩৪৮, তিরমিযী শরীফ ৭৫৭, ইবনে মাজাহ শরীফ ১৭২৭, মুসনাদে আহমাদঃ /২২৪)

তাছাড়া এই দশ দিনের তাফসীরে জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় দশ হচ্ছে কোরবানীর মাসের দশদিন, বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন আর জোড় হচ্ছে কোরবানীর দিন।(মুসনাদে আহমাদঃ /৩২৭, মুস্তাদরাকে হাকিমঃ /২২০, আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ীঃ ৪০৮৬, ১১৬০৭, ১১৬০৮)

এছাড়াও, এই সম্মানিত ১০ দিনের ফযিলত বর্বণা করেছেন উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা, উনার থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা রাখে, সে যেনো জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর তার চুল নখ না কাটে। (ইবনে মাজাহ ৩১৪৯, মুসলিম শরীফ, তিরমিজী শরীফ ১৫২৩) আর, হাদিস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি (মহান আল্লাহ তাআলার জন্য) হজ্জ পালন করল এবং (তাতে) কোন অশ্লীল কাজ করল না পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দান করেছিলেন (বুখারী শরীফঃ ১৫২১, ১৮১৯-১৮২০, মুসলিম শরীফঃ ৩৩৫৭-৩৩৫৮) এছাড়াও রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি উমরাহ পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত দুয়ের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপরাশির জন্য কাফফারা (মোচনকারী) হয়। আর মাবরূর” (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (বুখারী শরীফঃ ১৭৭৩, মুসলিম শরীফঃ ৩৩৫৫)

আর আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্র কাবার দিকে নিজের বাড়ি থেকে তোমার বের হওয়াতে, তোমার সওয়ারীর প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে মহান আল্লাহ পাঁক একটি করে সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং একটি করে পাপ মোচন করবেন। আরাফায় অবস্থানকালে মহান আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন (অর্থাৎ উনার রহমতে খাস আসেন) এবং তাদের (হাজীদের) ব্যপারে ফিরিশতাবর্গের নিকট গর্ব করেন। বলেন, ‘আমার বান্দাগণ আলুথালু কেশে ধূলামলিন বেশে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে আমার কাছে এসে আমার রহমতের আশা করে এবং আমার আযাবকে ভয় করে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি। তাহলে তারা আমাকে দেখলে কি করত?

সুতরাং তোমার যদি বালির পাহাড় অথবা পৃথিবীর বয়স অথবা আকাশের বৃষ্টি পরিমাণ গোনাহ থাকে, আল্লাহ তা ধৌত করে দেবেন। পাথর মারার সওয়াব তোমার জন্য জমা থাকবে। মাথা নেড়া করলে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব লিখা হবে। অতঃপর কাবাগৃহের তওয়াফ করলে তুমি তোমার পাপরাশি থেকে সেই দিনের মত বের হবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন (ত্বাবারানী শরীফঃ ১৩৩৯০, সহীহুল জামেঃ ১৩৬০) এছাড়াও আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু (তবুও সে) আমার দিকে (হজ্জব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই (কল্যান থেকে) বঞ্চিত। (ইবনে হিব্বান ৩৭০৩, বাইহাকী ১০৬৯৫, আবূ য়্যালা ১০৩১, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৬৬২)

আর আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, মহান আল্লাহ তাআলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হজ্জ উমরাহকারিগণ মহান আল্লাহ তাআলার বিশেষ প্রতিনিধিদল (অতিথি) তাঁরা মহান আল্লাহ তাআলাকে আহবান করলে তিনি সাড়া দিয়ে থাকেন। আর তাঁরা উনার নিকট ক্ষমা চাইলে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। (ইবনে মাজাহ ২৮৯২, সহীহ তারগীব ১১০৯)

আজ এপর্যন্তই, আগামী সপ্তাহে ফযিলত হজ্জের পরিপূর্ণ বিধান সম্পর্কে ইনশা-আল্লাহ বিস্তারিত আলোচনা করবো। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে হজ্জ-উমরার বিধি-বিধান জানা, এর শিক্ষণীয় দিকগুলো অনুধাবন করা এবং সহীহভাবে হজ্জ-উমরা পালন করার তাওফীক দান করুন, আমীন। আর প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে জুমুআহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমুআহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা (তা) বুঝতে পারো। (আল কুরআনঃ ৬২/)

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমুআহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমুআহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্ত উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও। (আল কুরআনঃ ৬২/১০)

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তায়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমুআর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কর্মে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্মরণ থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কর্ম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমুআহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।

এছাড়াও যারা নিয়মিত নামায পড়েন, জুমুআতে আসেন, তারা যেনো সুন্নাহ অনুসরণ করেই মসজিদে আসেন, এতে রহমত বরকতপ্রাপ্ত হবেন, শাওয়ার বা পুকুরে এক ডুইব দিয়েই যেকোন একটা পোশাক পরে জুমুআর দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের উদ্যেশে মসজিদে না এসে ভালো মতো প্রিপারেশন নিয়েই আসবেন। হাদিস শরীফে হযরত, (عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيّ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ  لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى) “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর (নামাযের উদ্যেশ্যে) বের হয় এবং (মসজিদে প্রবেশ করে) দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে (যেখানে যায়গা পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়), অতঃপর তার নির্ধারিত নামায আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সেই জুমুআহ শরীফের (নামায) থেকে পরের জুমুআহ শরীফের (নামাযের আগ) পর্যন্ত (মধ্যবর্তী) সময়ের (মধ্যে ঘটা) যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরিফঃ ইঃফাঃ ৮৩৯, আঃনাঃ ৮৮৩)

জুমু শরীফের দিনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, না আছে সুযোগ জুমুআর নামাযকে অবহেলার। হদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ـ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ قَبْلَ أَنْ تَمُوتُوا وَبَادِرُوا بِالأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ قَبْلَ أَنْ تُشْغَلُوا وَصِلُوا الَّذِي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ بِكَثْرَةِ ذِكْرِكُمْ لَهُ وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ تُرْزَقُوا وَتُنْصَرُوا وَتُجْبَرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْكُمُ الْجُمُعَةَ فِي مَقَامِي هَذَا فِي يَوْمِي هَذَا فِي شَهْرِي هَذَا مِنْ عَامِي هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ تَرَكَهَا فِي حَيَاتِي أَوْ بَعْدِي وَلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ أَوْ جَائِرٌ اسْتِخْفَافًا بِهَا أَوْ جُحُودًا بِهَا فَلاَ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ شَمْلَهُ وَلاَ بَارَكَ لَهُ فِي أَمْرِهِ أَلاَ وَلاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ زَكَاةَ لَهُ وَلاَ حَجَّ لَهُ وَلاَ صَوْمَ لَهُ وَلاَ بِرَّ لَهُ حَتَّى يَتُوبَ فَمَنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَلاَ لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً وَلاَ يَؤُمَّنَّ أَعْرَابِيٌّ مُهَاجِرًا وَلاَ يَؤُمَّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا إِلاَّ أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ وَسَوْطَهُ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।

তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআর নামাযকে ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার (মুবারক) জিন্দেগীতে বা আমার প্রস্থানের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআর নামাযকে তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, মহান আল্লাহ পাক তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না (অর্থাৎ তার দুনিয়াবি জঞ্জালগুলি আরো জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে) এবং তার কাজে-কর্মে বরকত দান করবেন না। নাউযুবিল্লাহ!

(অতএব) সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! কোনো নারীকে পুরুষের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো বেদুইনকে কোনো মুহাজিরের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো খারাপ ব্যক্তিকে কোনো (সত্যিকার) মুমিনের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা। তবে কোন স্বৈরাচারী শাসক যদি বাধ্য করে এবং তার তরবারি চাবুকের ভয় থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। (ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১০৮১)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমুআহ শরীফ সহ দৈনিক ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: