Wednesday, June 1, 2022

পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ ২ জিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরির বয়ান!

أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ২ জিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরি। দিন ও রাতের পরিক্রমায় আমরা এখন হিজরী জিলক্বদ  শরীফ মাস অতিবাহিত করছি। জিলক্বদ শরীফ আরবী মাসসমূহের এগারতম মাস। জিলক্বদ শরীফ হজ্বের মাস। জিলক্বদ শরীফ সম্মানিত মাস ‘আশহুরুল হুরুম’ তথা নিষিদ্ধ মাস সমূহের অন্তর্ভুক্ত। জিলক্বদ শরীফ মুমিনের বিশ্রামের মাস। আশহুরে হুরুমের মাহাত্ম্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেনঃ (اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ) আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহ তা’য়ালার বিধানে মাসের সংখ্যা বারোটি, (এটা) রয়েছে মহান আল্লাহ তা’য়ালার কিতাবে, এ (বারোটি)-র মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্যে) নিষিদ্ধ মাস; এটাই (মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রণীত) নির্ভুল ব্যবস্থা, অতএব এর ভেতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের ওপর যুলুম করো না (সূরাহ আত তাওবা ৯/৩৬)।

আয়াতের তাফসীরেঃ বিদায় হজ্জের সময় মিনা প্রান্তরে প্রদত্ত খুতবায় রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সম্মানিত মাসগুলোকে চিহ্নিত করে বলেনঃ (أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ خَطَبَ فِي حَجَّتِهِ، فَقَالَ: ثَلَاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ: ذُو الْقِعْدَةِ، وَذُو الْحِجَّةِ، وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ) তিনটি মাস হল ধারাবাহিকঃ যিলক্বদ, যিলহজ্জ ও মুহররম, অপরটি হল রজব। (বুখারী শরীফঃ ৩১৯৭, মুসলিম শরীফঃ ১৬৭৯) এই ব্যপারে বিস্তারিতভাবে হাদিসে এসেছেঃ (عَنْ أَبِي بَكْرَة رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ  عَنْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ الزَّمَانَ قَدْ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِه„ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ثَلاَثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَاد‘ى وَشَعْبَانَ) আবু বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সময় আবার ঘুরে তার নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফিরে এসেছে। যে পদ্ধতিতে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিনের মত। মাসের সংখ্যা বারটি। তন্মধ্যে চারটি হচ্ছে, হারাম মাস। তিনটি পরপর যিলক্বদ, যিলহজ্জ, ও মুহাররম। আর হচ্ছে মুদার গোত্রের রজব মাস, যা জুমাদাস সানী ও শা’বান মাসের মাঝখানে থাকে। (বুখারী শরীফঃ ৪৬৬২, মুসলিম শরীফঃ ১৬৭৯)

এখন এই সম্মানিত ৪ মাসের ব্যপারে আপনারা সবাই অবগত হয়েছেন যে, মহান আল্লাহ পাকের নিকট ৪ টি মাস সম্মানিত ও পবিত্র। এর মধ্যে দুইটি মাস পবিত্র হজ্জের মাসগুলির অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে জিলক্বদ শরীফ মাস অন্যতম। এটি হজ্জের নিদৃষ্ট মাসগুলির মধ্যে দ্বিতীয় মাস। পবিত্র আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومٰتٌ) হজ্জ হয় নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসে। (সূরাহ বাক্বারা ২/১৯৭) এই আয়াতের ব্যখায় হাদিস শরীফে এসেছেঃ (وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَشْهُرُ الْحَجِّ شَوَّالٌ وَذُو الْقَعْدَةِ وَعَشْرٌ مِنْ ذِي الْحَجَّةِ) আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে, পবিত্র হজ্জ-এর মাসগুলো হলঃ শাওয়াল, যিলক্বদ, এবং যিলহজ্জ মাসের দশ দিন। (বুখারী শরীফঃ ৩/৪৯০, ফাতহুল বারী ৩/৪৯০)।

উল্লেখিত চারটি হারাম মাস জিলক্বদ, জিলহজ্জ, মুহাররম ও রজব শরীফদ্বয় পূর্ববর্তী নবীদের যুগেও অতি বরকতময় ও সম্মানিত মনে করা হতো। তাদের শরিয়াহ মতে এ মাসগুলোতে সব ধরনের ইবাদতের সাওয়াব বেশি এবং গুনাহের পরিণামও তুলনামূলক ভয়াবহ। এছাড়া এসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ, কলহ-বিবাদ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। পবিত্র আল কুরআনে চারটি জিনিসকে মানবজাতির জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও তাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

১) বাইতুল্লাহ শরিফ (মক্কায় অবস্থিত পবিত্র ক্বাবা ঘর)।

২) সম্মানিত চার মাস অর্থাৎ “আশহুরে হুরুম”।

৩) হাদী অর্থাৎ ওই পশু, যার গলায় মালা পরিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে যাওয়া হয় কুরবানি করার জন্য (এর ভিত্তিতে আমাদের দেশেও কুরবানীর পশুর গলায় মালা ঝুলানো মুস্তাহাব আমলের অন্তর্ভুক্ত)।

৪) কলায়েদ অর্থাৎ হাজীদের গলার হার। ইসলামপূর্ব আরবের প্রথা ছিল, যে ব্যক্তি হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করত, সে হজ্জের নিদর্শনস্বরূপ একটি মালা গলায় পরে নিত। (যেমন বর্তমান সময়ে হাজীরা তাদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে রাখেন পরিচয় হিসেবে) এটি ছিল খারাপ লোকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য।

আবু বকর আল জাসসাস রহমতুল্লাহ বলেনঃ এই চারটি মাসকে ‘হুরুম’ বলার কারণ মূলত দুটিঃ-

১) এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম। যা আরবের সেই সময়ের মুশরিকরাও মানত।

২) অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে গোনাহের পরিণতি বেশি ভয়াবহ এবং ইবাদতের প্রতিদান অনেক বড়।

আশহুরল হুরুম তথা সম্মানিত চারটি মাসের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে আবু বকর আল জাসসাস রহমতুল্লাহ বলেন, এই মাসগুলোতে ইবাদতে অভ্যস্ত হলে অন্য মাসেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ অটুট থাকবে। আর এই মাসে গুনাহ ও মন্দ কাজগুলো থেকে বেঁচে থাকতে পারলে অন্য মাসেও এর থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। নিষিদ্ধ মাস-সমূহ বড়ই মর্যাদাসম্পন্ন। এ মাসগুলোতে পাপ শাস্তির দিক দিয়ে এবং সাওয়াব প্রতিদান প্রাপ্তির দিক দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। (তাফসিরে তাবারী ১৪/২৩৮) সুতারাং যারা এই নিষিদ্ধ মাসগুলোকে সম্মান না করে পাপাচারে লিপ্ত হবে নিশ্চই তারা সীমালংঘনকারী আর সীমালংঘনকারীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَ مَنۡ یُّرِدۡ فِیۡهِ بِاِلۡحَادٍۭ بِظُلۡمٍ نُّذِقۡهُ مِنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ) আর যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে সেখানে পাপকাজ করতে চায়, তাকে আমি আস্বাদন করাব ভয়াবহ শাস্তি। (সূরাহ হাজ্ব ২২/২৫) আশহুরুল হুরুম তথা সম্মানিত মাসসমূহে নেক আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং এ মাসের বর্জনীয় আমল সম্পর্কেই মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ (فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ) অতএব এর ভেতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের ওপর যুলুম করো না (সুরা তাওবা ৯/৩৬)।

এইযে আল্লাহ পাক বল্লেন, “নিজেদের ওপর জুলুম করো না” এর তাৎপর্য হলো মক্কার মুশরিকদের মতো তাদের সুবিধামতো মাসসমূহের নাম বদলের মাধ্যমে বিন্যাস পরিবর্তন করে সম্মানিত মাসেও যুদ্ধবিগ্রহ করা। কিংবা এসব মাসের নির্দিষ্ট বিধি-বিধান ও সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করা এবং ইবাদতে অবহেলা করা। পাপাচারে লিপ্ত হয়ে নিজেই নিজের অমঙ্গল ডেকে আনা। যদিও এখন সরাসরি যুদ্ধ নেই, কিন্তু প্রত্যেকেই ছোট ছোট নফসের যুদ্ধে প্রতিনিয়তই লিপ্ত আছি, আর সম্মানিত মাসের সম্মানে এগুলো আমাদের বন্ধ করা উচিত।

আর এই পবিত্র সম্মানিত মাসেই কিন্তু গাজওয়াতুল খন্দক বা খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয় (যদিও তার শুরু ছিলো পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে)। ইসলামিক ইতিহাসে খন্দকের যুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক জ্বিহাদ। ভাইয়েরা আমার, আজকে যে আপনি এই সাজানো গোছানো ইসলামিক জীবন পেয়ে গেলেন এটা কি আপনি এমনি এমনি ফাও অটোম্যাটিক পেয়ে গেছেন? আপনারা কি জানেন, কতো মুমিন আর মর্দে মুজাহিদের রক্তের, দ্বিখণ্ডিত মস্তকের কুরবানির বিনিময়ে আপনি আজ নির্বিঘ্নে দ্বীন পালন করে যাচ্ছেন, এই ব্যপারে হয়তো আপনাদের অনেকের নুন্যতম ধারনাও নাই। এইসব টেলিভশনে আর খানকায় বসে তাসবিহ জপার বিনিময়ে আসেনি কিন্তু, এসেছে মা, বাবা, বউ, বাচ্চার মায়া ছেঁড়ে জিহাদের ময়দানে নিজেদের অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে। হাদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ أَنَسًا ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْخَنْدَقِ فَإِذَا الْمُهَاجِرُونَ وَالأَنْصَارُ يَحْفِرُونَ فِي غَدَاةٍ بَارِدَةٍ، فَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ عَبِيدٌ يَعْمَلُونَ ذَلِكَ لَهُمْ، فَلَمَّا رَأَى مَا بِهِمْ مِنَ النَّصَبِ وَالْجُوعِ قَالَ اللَّهُمَّ إِنَّ الْعَيْشَ عَيْشُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ‏.‏ فَقَالُوا مُجِيبِينَ لَهُ نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِينَا أَبَدًا) আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের (ময়দানের) দিকে বের হলেন, হীম শীতল সকালে আনসার ও মুহাজিররা পরীখা খনন করছেন, আর তাদের এ কাজ করার জন্য তাদের কোন গোলাম ছিল না। যখন তিনি তাদের দেখতে পেলেন যে, তারা কষ্ট ও ক্ষুধায় আক্রান্ত, তখন বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! সুখের জীবন আখিরাতের জীবন। আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন। প্রত্যুত্তরে তারা বলে উঠেনঃ আমরা সেই লোক যারা মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে জ্বিহাদের বায়আত গ্রহন করেছি, যতদিন আমরা বেঁচে থাকি। (বুখারী শরীফঃ ইঃফাঃ ২৬৩৮, আঃ ২৮৩৪)।

এখন আমাদের চিন্তা ফিকির করা উচিৎ কেমন ছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ মুসলিমগণ। এই খন্দকের জ্বিহাদের দিনগুলিতে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য মুজেজা প্রকাশিত হয়। এই জ্বিহাদ ছিলো ইসলাম বিদ্বেষী নাফরমান ইহুদীদের বিরুদ্ধে বিরাট এক ইসলামিক জ্বিহাদ। আজো এই জ্বিহাদ বিদ্যামান যদি আপনারা ফিলিস্থিন, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়া, কাশ্মীরের দিকে তাকান।

যাইহোক আগামী সপ্তাহে ইন’শা-আল্লাহ এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো, আর প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে জুমু’আহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমু’আহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তা’য়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো। (সূরাহ জুমু’আহ শরীফ ৬২/৯)।

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমু’আহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমু’আহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্থ উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ ঐ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তা’য়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও। (সূরাহ জুমু’আহ শরীফ ৬২/১০)।

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমু’আর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্বরন থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কাম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমু’আহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।

এছাড়াও যারা নিয়মিত নামায পড়েন, জুমু’আতে আসেন, তারা যেনো সুন্নাহ অনুসরণ করেই মসজিদে আসেন, এতে রহমত ও বরকতপ্রাপ্ত হবেন, শাওয়ার বা পুকুরে এক ডুইব দিয়েই যেকোন একটা পোশাক পরে জুমু’আর দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের উদ্যেশে মসজিদে না এসে ভালো মতো প্রিপারেশন নিয়েই আসবেন। হাদিস শরীফে হযরত, (عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيّ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ  لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى) “সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমু’আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর (নামাযের উদ্যেশ্যে) বের হয় এবং (মসজিদে প্রবেশ করে) দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে (যেখানে যায়গা পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়), অতঃপর তার নির্ধারিত নামায আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সেই জুমু’আহ শরীফের (নামায) থেকে পরের জুমু’আহ শরীফের (নামাযের আগ) পর্যন্ত (মধ্যবর্তী) সময়ের (মধ্যে ঘটা) যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরিফঃ ইঃফাঃ ৮৩৯, আঃনাঃ ৮৮৩)

জুমু’আ শরীফের দিনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, না আছে সুযোগ জুমু’আর নামায কে অবহেলার। হদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ قَبْلَ أَنْ تَمُوتُوا وَبَادِرُوا بِالأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ قَبْلَ أَنْ تُشْغَلُوا وَصِلُوا الَّذِي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ بِكَثْرَةِ ذِكْرِكُمْ لَهُ وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ تُرْزَقُوا وَتُنْصَرُوا وَتُجْبَرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْكُمُ الْجُمُعَةَ فِي مَقَامِي هَذَا فِي يَوْمِي هَذَا فِي شَهْرِي هَذَا مِنْ عَامِي هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ تَرَكَهَا فِي حَيَاتِي أَوْ بَعْدِي وَلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ أَوْ جَائِرٌ اسْتِخْفَافًا بِهَا أَوْ جُحُودًا بِهَا فَلاَ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ شَمْلَهُ وَلاَ بَارَكَ لَهُ فِي أَمْرِهِ أَلاَ وَلاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ زَكَاةَ لَهُ وَلاَ حَجَّ لَهُ وَلاَ صَوْمَ لَهُ وَلاَ بِرَّ لَهُ حَتَّى يَتُوبَ فَمَنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَلاَ لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً وَلاَ يَؤُمَّنَّ أَعْرَابِيٌّ مُهَاجِرًا وَلاَ يَؤُمَّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا إِلاَّ أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ وَسَوْطَهُ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।

তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমু’আর নামাযকে ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার (মুবারক) জিন্দেগীতে বা আমার প্রস্থানের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমু’আর নামাযকে তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, মহান আল্লাহ পাক তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না (অর্থাৎ তার জুনিয়াবি জঞ্জালগুলি আরো জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে) এবং তার কাজে-কর্মে বরকত দান করবেন না। নাউযুবিল্লাহ!

(অতএব) সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! কোনো নারীকে পুরুষের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো বেদুইনকে কোনো মুহাজিরের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো খারাপ ব্যক্তিকে কোনো (সত্যিকার) মুমিনের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা। তবে কোন স্বৈরাচারী শাসক যদি বাধ্য করে এবং তার তরবারি ও চাবুকের ভয় থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। (ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১০৮১)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমু’আহ শরীফ সহ দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: