أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى
سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ
মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি (السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللهِ وَبَرَكَاتُهُ) আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ৮ জিলহাজ্জ শরীফ ১৪৪৩ হিজরী। গত সপ্তাহে আমরা পবিত্র হজ্জের বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে পবিত্র হজ্জ ও কুরবানী নিয়ে আলোচনা করবো, ইন’শা-আল্লাহ।
প্রথমে জেনে নেই হজ্জ ও উমরার পার্থক্যঃ হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জ অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কিছু জায়গায়, নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক নির্দিষ্ট কিছু কর্ম সম্পাদন করা। আর উমরার আভিধানিক অর্থঃ যিয়ারত করা। শরীয়তের পরিভাষায় উমরা অর্থ, নির্দিষ্ট কিছু কর্ম অর্থাৎ ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করার মাধ্যমে বায়তুল্লাহ শরীফের যিয়ারত করা। (বনুল আসীর, নিহায়াঃ ১/৩৪০, ইবন কুদামা, আল-মুগনীঃ ৫/৫, আল-উমরাতু ওয়াল হাজ্জ ওয়ায যিয়ারাহ, পৃষ্টা ৯)
১) দ্বীন ইসলামে হজ্জের বিধানঃ হজ্জ হচ্ছেন ইসলামের পাঁচ রুকন বা স্তম্ভের অন্যতম একটি ফরজ বিষয় যা আন্তরিকভাবে স্বীকার করা ও ফরজ হলে আদায় করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক সামর্থবান মানুষের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ) এবং (প্রত্যেক) সামর্থ্যবান মানুষের ওপর মহান আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্জ (আদায়) করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে (তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী। (আল কুরআন ৩/৯৭)
ইবন উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ) ইসলামের ভিত রাখা হয়েছে পাঁচটি বস্তুর ওপর অথবা ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের উপর দন্ডায়মানঃ ১) মহান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ/মাবুদ/ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই, এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২) নামায কায়িম করা। ৩) যাকাত প্রদান করা। ৪) হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫) রমযান মাসের রোজা রাখা। (মুসলিম শরীফ ৬১, বুখারি শরীফ ৮)।
সুতরাং হজ্জ ফরয হওয়ার বিধান কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ-ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত।
২) সামর্থবান ব্যক্তির ওপর হজ্জ সারা জীবনে একবার ফরয। ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ.فَقَامَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ : أَفِى كُلِّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : لَوْ قُلْتُهَا لَوَجَبَتْ ، وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا ، وَلَمْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْمَلُوا بِهَا. الْحَجُّ مَرَّةٌ فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ) রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে লোক সকল, মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন আকরা ইবন হাবিস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ তা’আলার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম, প্রত্যেক বছর? তিনি বললেন, ‘আমি বললে অবশ্যই তা ফরয হয়ে যাবে। আর যদি ফরয হয়ে যায়, তবে তোমরা তার ওপর আমল করবে না এবং তোমরা তার ওপর আমল করতে সক্ষমও হবে না। হজ্জ একবার ফরয। যে অতিরিক্ত আদায় করবে, সেটা হবে নফল। (মুসনাদে আহমদঃ ৪০২২, আবূ দাউদ শরীফঃ ১২৭১, ইবন মাজাহ শরীফঃ ৬৮৮২)।
৩) সক্ষম ব্যক্তির ওপর বিলম্ব না করে হজ্জ করা জরুরী। কালক্ষেপণ করা মোটেই উচিত নয়। এটা মূলত শিথিলতা ও সময়ের অপচয় মাত্র। ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ - يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ - فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ) তোমরা বিলম্ব না করে ফরয হজ্জ (দ্রুত) আদায় কর। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ তার সামনে আসবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফঃ ৭৬৮২; ইবন মাজাহ্ শরীফ ৩৮৮২)
উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ (لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوا كُلَّ مَنْ لَهُ جَدَةٌ وَلَمْ يَحُجَّ فَيَضْرِبُوا عَلَيْهِ الْجِزْيَةَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ) ‘আমার ইচ্ছা হয়, ঐসকল শহরে আমি লোক প্রেরণ করি, তারা যেন (খুঁজে) দেখে কে সামর্থবান হওয়ার পরও হজ্জ করেনি। অতঃপর তারা তার ওপর জিযিয়া (কর বা ট্যাক্স) আরোপ করবে। কারণ, তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়।’ (ইবন হাজার আসকালানি রহমতুল্লাহ, আত-তালখীসুল হাবীরঃ ২/২২৩)
উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেনঃ (لِيَمُتْ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا- يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّات-ٍ رَجُلٌ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ وَوَجَدَ لِذَلِكَ سَعَةً) (তারা) ইহূদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে। তিনি কথাটি তিনবার বললেনঃ সেই ব্যক্তি যে আর্থিক স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও হজ্জ না করে মারা গেল। (বাইহাকী শরীফঃ ৪/৩৩৪।)
এবার আসূন হজের ফরয-ওয়াজিব সমূহ জেনে নিই?
হজের ফরযসমূহঃ
১) ইহরাম তথা হজ্জের নিয়ত করা। যে ব্যক্তি হজ্জের নিয়ত করবে না তার হজ্জ হবে না। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى) নিশ্চয় আমলসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেকের জন্য তাই হবে, যা সে নিয়ত করে। (বুখারী শরীফ ১)
২. উকূফে আরাফা বা আরাফায় অবস্থান। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (الْحَجُّ عَرَفَةُ) হজ্জ হচ্ছে আরাফা। (হজে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুকরণ করেছেন। তিনি মুশরিকদের ব্যাপারে মুসলমানদেরকে বলছেন, (هَدْيُنَا مُخَالِفٌ لِهَدْيِهِمْ) আমাদের আদর্শ তাদের আদর্শ থেকে ভিন্ন’। সুতরাং তিনি মুসলমানদেরকে নিয়ে আরাফার ময়দানে অবস্থান করলেন এবং এ-ক্ষেত্রেও কুরাইশদের বিপরীত করলেন। কেননা কুরাইশরা মুযদালিফা অতিক্রম করত না; বরং মুযদালিফাতেই অবস্থান করত এবং বলত, আমরা হারাম এলাকা ছাড়া অন্য জায়গা থেকে প্রস্থান করব না। উল্লেখ্য, আরাফা হারামের সীমারেখার বাইরে। (বায়হাকী শরীফ, আস-সুনানুল-কুবরাঃ ৫/১২৫, এরওয়াউল গালীল ৪/২৫৬)
৩. তাওয়াফে ইফাযা বা তাওয়াফে যিয়ারা (বাইতুল্লাহ শরীফের ফরয তাওয়াফ)। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ) আর তারা যেন প্রাচীন ঘরের তাওয়াফ করে। সাফিয়্যা আলাইহাস সালাম যখন ঋতুবতী হলেন, তখন নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে?। আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম, তিনি তো ইফাযা অর্থাৎ বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করেছেন। তাওয়াফে ইফাযার পর তিনি ঋতুবতী হয়েছেন। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাহলে এখন যাত্রা কর। এ থেকে বুঝা যায়, তাওয়াফে ইফাযা ফরয। (“الْبَيْتِ الْعَتِيق” বা পুরাতন ঘর বলতে মহান আল্লাহ তা’আলার ইবাদাতের জন্য তৈরিকৃত সবচাইতে পুরাতন ঘর তথা কা‘বা ঘরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ ইবাদাতের জন্য নির্মিত এটাই যমীনের বুকে সর্বপ্রথম ঘর, আল কুরআন ২২/২৯, বুখারী শরীফ ৪২৮)
৪. সাফা ও মারওয়ায় সাঈ করা। অধিকাংশ সাহাবী, তাবেঈ ও ইমামের মতে এটা ফরয। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ (اسْعَوْا فَإِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ السَّعْي) তোমরা সাঈ কর, কেননা মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর সাঈ ফরয করেছেন। আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বলেনঃ (فَلَعَمْرِى مَا أَتَمَّ اللَّهُ حَجَّ مَنْ لَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ) আমার জীবনের কসম! মহান আল্লাহ তা’আলা কখনো সে ব্যক্তির হজ্জ পরিপূর্ণ করবেন না যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করে না। মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি কোন একটি ফরয ছেড়ে দেবে, তার হজ্জ হবে না। (জাহেলী যুগে আনসারদের কিছু লোক মূর্তির উদ্দেশে হজ্জ পালন করতেন এবং মনে করতেন যে, সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করা বৈধ নয়। উনারা যখন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের সাথে হজ্জ করতে আসলেন, তখন বিষয়টি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, ‘সাঈ কর, কেননা মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর সাঈ ফরয করেছেন। বিস্তারিত দেখুন (বুখারী শরীফ ১৬৪৩, ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহর মতে এটি ওয়াজিব, মুসনাদে আহমদঃ ৪২১, মুসলিম ৯২৮)
হজ্জের ওয়াজিবসমূহঃ
১. মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধাঃ অর্থাৎ মীকাত অতিক্রমের আগেই ইহরাম বাঁধা। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মীকাতগুলো নির্ধারণ করার সময় বলেনঃ (هُنَّ لَهُنَّ وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِ أَهْلِهِنَّ لِمَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَجَّ وَالْعُمْرَة) এগুলো তাদের জন্য এবং যারা অন্যত্র থেকে ওই পথে আসে হজ্জ ও উমরা আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে তাদের জন্যও। (বুখারী শরীফঃ ১৫২৪, মুসলিম শরীফঃ ১১৮১)
২. সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করাঃ যে ব্যক্তি আরাফার ময়দানে দিনে উকূফ (অবস্থান) করবে, তার ওপর ওয়াজিব হচ্ছে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করা। কেননা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আরাফার ময়দানে দিনে উকূফ করেছেন এবং সূর্যাস্ত পর্যস্ত সেখানে অবস্থান করেছেন। মিসওয়ার ইবন মাখরামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আরাফায় আমাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করার সময় বললেন, মুশরিক ও পৌত্তলিকরা সূর্যাস্তের সময় এখান থেকে প্রস্থান করত, যখন সূর্য পাহাড়ের মাথায় পুরুষের মাথায় পাগড়ির মতই অবস্থান করত। অতএব আমাদের রিতি তাদের রিতি থেকে ভিন্ন। (বায়হাকী, আস-সুনানুল-কুবরাঃ ৫/১২৫) সুতরাং সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের প্রস্থান মুশরিকদের আচারের সাথে ভিন্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ছিল।
৩. মুযদালিফায় রাত যাপনঃ কেননা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় রাত যাপন করেছেন এবং বলেছেনঃ (لِتَأْخُذْ أُمَّتِي نُسُكَهَا ، فَإِنِّي لاَ أَدْرِي لَعَلِّي لاَ أَلْقَاهُمْ بَعْدَ عَامِي هَذَا) আমার উম্মত যেন হজের বিধান শিখে নেয়। কারণ আমি জানি না, এ বছরের পর সম্ভবত তাদের সাথে আমার আর সাক্ষাত হবে না।
খ. তিনি অর্ধরাতের পর দুর্বলদেরকে মুযদালিফা প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায়, মুযদালিফায় রাত যাপন ওয়াজিব। কারণ অনুমতি তখনই প্রয়োজন হয় যখন বিষয়টি গুরুত্বের দাবী রাখে।
গ. আল্লাহ তা’আলা মাশ’আরে হারামের নিকট উনার যিকর করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা”আলা বলেনঃ (فَإِذَآ أَفَضۡتُم مِّنۡ عَرَفَٰتٖ فَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ عِندَ ٱلۡمَشۡعَرِ ٱلۡحَرَامِۖ) ‘সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশ’আরে হারামের নিকট মহান আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ কর। (আল কুরআন ২/১৯৮)
৪) তাশরীকের রাতগুলো মিনায় যাপনঃ ১০ তারিখ দিবাগত রাত ও ১১ তারিখ দিবাগত রাত মিনায় যাপন করতে হবে। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ দিবাগত রাতও মিনায় যাপন করতে হবে। ১৩ তারিখ কঙ্কর মেরে তারপর মিনা ত্যাগ করতে হবে। আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বলেনঃ (أَفَاضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ حِينَ صَلَّى الظُّهْرَ ثُمَّ رَجَعَ إِلَى مِنًى فَمَكَثَ بِهَا لَيَالِىَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ) রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যোহরের ছ্বলাত মসজিদুল হারামে আদায় ও তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে মিনায় ফিরে এসেছেন এবং তাশরীকের রাতগুলো মিনায় কাটিয়েছেন। (আবূ দাউদ শরীফঃ ১৬৮৩)
হাজীদেরকে যমযমের পানি পান করানোর জন্য রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে মিনার রাতগুলো মক্কাতে যাপনের অনুমতি দিয়েছেন এবং উটের দায়িত্বশীলদেরকে মিনার বাইরে রাতযাপনের অনুমতি দিয়েছেন। এই অনুমতি প্রদান থেকে প্রতীয়মান হয়, মিনার রাতগুলোতে মিনাতে যাপন করা ওয়াজিব।
৫. জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করাঃ ১০ যিলহজ্জ জামরাতুল আকাবায় (বড় জমারায়) কঙ্কর নিক্ষেপ করা। তাশরীকের দিনসমূহ যথা, ১১, ১২ এবং যারা ১৩ তারিখ মিনায় থাকবেন, তাদের জন্য ১৩ তারিখেও। যথাক্রমে ছোট, মধ্য ও বড় জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করা। কেননা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এভাবে জামরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করেছেন। জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ (رَأَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَرْمِى عَلَى رَاحِلَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ وَيَقُولُ «لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ) আমি নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি কুরবানীর দিন তিনি তাঁর বাহনের ওপর বসে কঙ্কর নিক্ষেপ করছেন এবং বলেছেন, তোমরা তোমাদের হজ্জের বিধান জেনে নাও। কারণ আমি জানি না, সম্ভবত আমার এ হজ্জের পর আমি আর হজ্জ করতে পারব না। (মুসলিম শরীফ ১২৯৭, আবূ দাউদ শরীফ ১৯৭০)
৬. মাথা মুন্ডান বা চুল ছোট করাঃ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করার আদেশ দিয়ে বলেন, (وَلْيُقْصِرْ ، وَلْيُحِلل) অর্থাৎ সে যেন মাথার চুল ছোট করে এবং হালাল হয়ে যায়। (বুখারী শরীফ ১৬৯১, মুসলিম শরীফ ১২২৭) আর তিনি মাথা মুণ্ডনকারিদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দো‘আ করেছেন এবং চুল ছোটকারিদের জন্য একবার মাগফিরাতের দো’আ করেছেন।
৭. বিদায়ী তাওয়াফঃ রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী তাওয়াফের আদেশ দিয়ে বলেনঃ (لاَ يَنْفِرَنَّ أَحَدٌ حَتَّى يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِ بِالْبَيْت) ‘বাইতুল্লাহ শরীফের সাথে তার শেষ সাক্ষাত না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন না যায়। (মুসলিম শরীফ ২৩৫০) ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ (أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُونَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ إِلاَّ أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ) লোকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহ শরীফের সাক্ষাত। তবে তিনি ঋতুবতী মহিলাদের জন্য ছাড় দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ ২৩৫১) উল্লেখ্য যে, যে এসবের একটিও ছেড়ে দেবে, তার ওপর দম (কুরবানি) ওয়াজিব হবে অর্থাৎ একটি পশু যবেহ করতে হবে।
ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ (مَنْ نَسِىَ شَيْئًا مِنْ نُسُكِهِ أَوْ تَرَكَهُ فَلْيُهْرِقْ دَمًا) যে ব্যক্তি তার হজ্জের কোন কাজ করতে ভুলে যায় অথবা ছেড়ে দেয় সে যেন একটি পশু যবেহ করে। (মুআত্তা মালেকঃ ৮৯০; দারাকুতনীঃ ২/২৪৪)
তাছাড়া জিলহজ্ব শরীফ মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। জিলহজ্ব শরীফের প্রথম দশকে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যকীয় একটি আমল তাকবিরে তাশরিক।
তাই আসুন জেনে নেই তাকবীরে তাশরীকের বিধান?
‘তাকবীরে তাশরীক’ এর পরিচয়ঃ তাকবীর শব্দের অর্থ হলো, “বড়ত্ব ঘোষণা করা” আর তাশরীক শব্দের অর্থ হলো, “সূর্যের আলোতে রেখে গোশত শুকানো” আরবগণ তাদের কুরবানীর গোশত ঈদের তিনদিন পর পর্যন্ত রোদে দিয়ে শুকাতেন, এজন্য এ দিনগুলোকে আইয়ামে তাশরীক বলা হয়। তাকবীরে তাশরীক হলোঃ (اللهُ أَكْبَر اللهُ أَكْبَر لَآ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ و اللهُ أَكْبَر اللهُ أَكْبَر و لِلّٰهِ ٱلْحَمْدُ) “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ” বাক্য পাঠ করা। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান৷ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আল্লাহ মহান৷ আল্লহ মহান এবং সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য৷ (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৬৯৬, তাবারানী শরীফ ৯৫৩৮, ইলাউস সুনান ৮/১৫৬ পৃষ্ঠা, বা’দায়েউস সানায়ে ১/৪৫৮ পৃষ্ঠা, গুনিয়াতুত তালিবীন ১৯৮ পৃষ্ঠা)। কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ (وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡدُوۡدٰتٍ) আর তোমরা মহান আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ কর (আইয়ামে তাশরীকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে। (আল কুরআন ২/২০৩) তাছাড়াঃ চতুর্থ খলীফা, আহলে বাইতের রসূল, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম, “নয় তারিখ আরাফার দিন ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর তাশরিক পড়তেন” (ইবনে আবী শাইবা ৫৬৭৭, বায়হাকি ৬৫০০)
৯ই জিলহজ্জ বাদ ফজর হতে ১৩ই জিলহজ্জ বাদ আসর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব। এ পাঁচ দিনকে একত্রে আইয়্যামে তাশরিক বলে। এই বছর ১৪৪৩ হিজরিতে বাংলাদেশে শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু করে বুধবার আসর পর্যন্ত আইয়্যামে তাশরিকের দিন। (আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী, ৬২৭৮)
আর এই তাকবির বলার রয়েছে কতিপয় মাসআলাঃ
১. নামাজের পর ইমাম তাকবির বলতে ভুলে গেলেও মুক্তাদির জন্য তাকবির বলা ওয়াজিব।
২. পুরুষেরা উচ্চ-মধ্যম স্বরে আর মহিলাগণ অনুচ্চস্বরে তাকবির বলবেন। পুরুষ উচ্চ স্বরে না পড়ে আস্তে আস্তে পড়লে ওয়াজিব আদায় হবে না। (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৭০ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে শামী ৩/১৭৯ পৃষ্ঠা৷ ইলাউস সুনান ৮/১৫২ পৃষ্ঠা৷ আশরাফুল হিদায়া ১/৬৩২ পৃষ্ঠা৷)
৩. নামাজের জামাআতে অংশগ্রহণকারী মাসবুক ব্যক্তি তার নামাজ আদায় করে তাকবির বলবেন।
৪. কোন মুসল্লি যদি ফরজ নামাজের পর তাকবির বলতে ভুলে যান। এবং অন্যকাজে মনোনিবেশ করার পর মনে হয় যে তাকবির বলেনি, অর্থাৎ (মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া, অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা) তবে তার উপর থেকে তাকবির বলা রহিত হয়ে যাবে।
৫. ঈদুল আজহার নামাজান্তে তাকবিরে তাশরিক বলা উত্তম।
৬. আইয়ামে তাশরিকের (এ ৫ দিনের) মধ্যে কারো নামাজ কাজা হলে, এ দিনগুলোর মধ্যে কাজা আদায় করলে তাকবিরে তাশরিক আদায় করতে হবে।
প্রত্যেক বালিগ পুরুষ মহিলা, মুকিম, মুসাফির, গ্রামবাসী, শহরবাসী, জামায়াতে বা একাকি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
তাকবীরে তাশরীক নির্ধারিত দিনসমূহে প্রতি ফরজ নামাজের পর শব্দ করে একবার পড়া ওয়াজিব। (ফাতাওয়া নাওয়াজেল-১৪/৫৯৪) উক্ত সময়ে প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। পূর্ণভাবে তাকবিরে তাশরিক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফুকাহায়ে কেরাম ও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটিকে বেদআ’ত বলা যাবেনা। (আল আওসাত ইবনুল মুনজির ২১৯৮)
তাকবীরে তাশরীকের কাযা নেই৷ তাই যথা সময়ে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে না পারলে অন্য সময়ে পাঠ করা ওয়াজিব হবেনা৷ সুতরাং অনিচ্ছাকৃত তাকবীরে তাশরীক পাঠ তরক হলে গুনাহ হবেনা৷ কিন্তু ইচ্ছাকৃত তাকবীর পাঠ তরক করলে ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/১৮১ পৃষ্ঠা৷ খুলাসাতুল ফতোয়া ১/২১৬ পৃষ্ঠা৷ আল মুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯ পৃষ্ঠা৷ বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬১ পৃষ্ঠা৷)
ঈদের নামাজের পর কি তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে?
ঈদের নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়া প্রমাণিত। তাই ঈদের নামাযের পরও তাকবীরে তাশরীক পড়বে। এটা ওয়াজিব না মুস্তাহাব এ বিষয়ে মতভেদ আছে। তবে ওয়াজিব হওয়াটাই অধিক গ্রহণযোগ্য। (কিতাবুন নাওয়াজেল-১৪/৫৯৫)
ঈদের খুতবার সময় তাকবীরে তাশরিকের বিধানঃ ঈদের খুতবা চলাকালীন উপস্থিত লোকদের জন্য সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবার সময় মুসল্লীগণ তাকবীর বলবেন না; বরং চুপ থেকে খুতবা শুনবেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ চারটি স্থানে চুপ থাকা ওয়াজিব; জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৫৬৪২, আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৫)
উভয় ঈদের নামাযের প্রথম খুতবার শুরুতে ৯ বার এবং দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে ৭ বার তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা সুন্নত৷ আর ইমামের সাথে সাথে মুসল্লীদের তাকবীর পাঠ করা মুস্তাহাব৷ (ফতোয়ায়ে শামী ২/১৭৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৬৬-৩৬৭ পৃষ্ঠা৷ আল কুদুরী ১/১১১ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১১৫ পৃষ্ঠা৷)
উভয় ঈদের নামাযে যাওয়া আসার সময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা সুন্নত৷ তবে ঈদুল ফিতরে নিম্নস্বরে এবং ঈদুল আযহায় উচ্চস্বরে পাঠ করা সুন্নত৷ (মুস্তাদরাকে হাকীম ১১০৫ পৃষ্ঠা৷ ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/৩৬৬ পৃষ্ঠা৷ শরহে বেকায়া ১/৪৯০ পৃষ্ঠা৷ বেহেশতী গাওহার ১১/১১৬ পৃষ্ঠা৷ আল জাওয়াহারাতুন নাইয়েরা ১/৯০পৃষ্ঠা৷)
কুরবানী বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসয়ালা!
কুরবানী একটি ইবাদত এবং এটি শিয়ারে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত আর কুরবানীর মূল কথা হল মহান আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য এটি বিশেষ জরুরী। ইখলাস তথা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পন্ন করা।
কুরবানি সম্পর্কে, মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ) (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আল্লাম) অতএব (আপনি) আপনার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন। (আল কুরআন ১০৮/২)
কিছু মানুষ আছে যারা মুসলিম দাবী করে থাকেন নিজেদের কিন্তু কুরবানী ওয়াজিব মনে করেন না, এবং অনেকে (نحر) এর তাফসীর করেছেনঃ “নামাযের সময়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাধা”। এটা খুবই হাস্যকর তাফসীর।
আরবে সাধারণত উটকে কুরবানী করা হত হজ্জের সময়, ইসলাম পূর্ব আরবে মুশরিকরাও বিভিন্ন দেব দেবির নামে কুরবানী দিতো। একারণেই আল্লাহ পাঁক এইখানে (نحر) শব্দ ব্যবহার করেছেন। (نحر) শব্দের অর্থ উট কুরবানী করা। এর প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে হাত-পা বেঁধে কণ্ঠনালীতে বর্শা অথবা ছুরি দিয়ে আঘাত করা এবং রক্ত বের করে দেয়া। গরু-ছাগল ইত্যাদির কুরবানীর পদ্ধতি যাবাই করা। অর্থাৎ জন্তুকে শুইয়ে কণ্ঠনালিতে ছুরি চালিয়ে রক্ত প্রবাহিত করা। কিন্তু আরবে সাধারণতঃ উট কুরবানী করা হতো। তাই কুরবানী বোঝাবার জন্য এখানে (نحر) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ আয়াতে পাঁকের পূর্ববর্তী আয়াতে প্রদত্ত কাউসারের কারণে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুটি কাজ করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাঁক রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন, মুশরিকদের বিপরীত করুনঃ নামাজ ইখলাসের সহিত কেবল মহান আল্লাহ তা’আলার উদ্যেশ্যেই আদায় করেন, এবং মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যের নামে পশু উৎসর্গ করবেন না।
হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আপনি নামায ও কুরবানীর মাধ্যমে লা-শারীক এক আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করুন। যেমন কুরআনের অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ لَا شَرِیۡکَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِکَ اُمِرۡتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ) (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) বলুন, আমার নামায, আমার যাবতীয় “ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) সমস্ত আলমের রব মহান আল্লাহ তা’আলার জন্যই (নিবেদিত)। “উনার কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমিই হলাম প্রথম মুসলমান”। (আল কুরআন ৬/১৬২-১৬৩) আয়াতে পাঁকে কুরবানী দ্বারা এখানে উট বা অন্য পশু কুরবানীর কথা বলেছেন মহান আল্লাহ পাঁক। কারণ মুশরিকরা তাদের কথিত ইবাদত “সিজদা” এবং “কুরবানী” মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যদের নামে করতো। তাই এখানে মহান আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিচ্ছেন, “তোমরা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করো”। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (وَ لَا تَاۡکُلُوۡا مِمَّا لَمۡ یُذۡکَرِ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَیۡهِ وَ اِنَّهٗ لَفِسۡقٌ) অর্থাৎ যে পশু জবাইয়ের সময় মহান আল্লাহ তা’আলার নাম নেয়া হয় না, তা তোমরা খেয়োনা, কেননা এটা হচ্ছে পাপাচার।” (আল কুরআন ৬:১২১)
এছাড়াও কুরবানি করা যে, সকল সামর্থবানের জন্য ওয়াজিব এটা উক্ত আয়াত শরীফের মধ্যে ব্যবহৃত (انۡحَرۡ) এর সিগাহ আমরের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এখন কেউ অজ্ঞ জাহিল হলে আলিম উলামারা কি করতে পারেন?
এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উপস্থাপিত হলো!
কুরবানীর প্রকারভেদঃ
(১) ওয়াজিব কুরবানী।
ক) সাহিবে নিসাবের কুরবানী।
খ) মান্নতের কুরবানী।
গ) দরিদ্র ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে ফেললে।
(২) নফল কুরবানী
ক) মুসাফির ব্যক্তির কুরবানী (সাহেবে নিসাব নয় এমন ব্যক্তির মান্নত করা ব্যতীত এবং কুরবানির পশু ক্রয় করার পূর্বে তার জন্য কুরবানি করা নফল থাকে।)
যাদের ওপর কুরবানী ওয়াজিবঃ
মাসয়ালা ০১; প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুকীম (মুসাফির নয়) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ই যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনাতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। টাকা পয়সা, সোনা রুপা, অলংঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যাবসায়িক পন্য ও অপ্রোজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নিসাব এর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৩)
আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। টাকা বা অন্যান্য সম্পদের ক্ষেত্রে নিসাব হলো সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার মূল্য সমপরিমাণ হাওয়া। আর স্বর্ণ বা রুপা বা টাকা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথক ভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্নতোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মাসয়ালা ০২; যাকাতের নিসাব থেকে কুরবানীর নিসাবের ভিন্নতা;
১) যাকাতের নিসাব এর ক্ষেত্রে স্বর্ণ রুপা টাকা ও ব্যবসায়িক পণ্যের হিসাব করা হয়। অর্থাৎ শুধুমাত্র বর্ধনশীল সম্পদের হিসাব করা হয় আর যেগুলো বর্ধনশীল নয় যেমন জমি, ফসল, গাড়ী ইত্যাদি এগুলোর হিসাব করা হয় না। পক্ষান্তরে কুরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদ বর্ধনশীল হোক বা বর্ধনশীল না হোক, সকল প্রকার সম্পদের হিসাব করা হয়।
২) যাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পর এক বছর অতিক্রম করতে হয়। পক্ষান্তরে কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে বছর অতিক্রম করা শর্ত নয়। বরং জিলহজের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় নিসাবের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। বছর অতিক্রম হয়েছে কি হয়নি তা দেখা হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০৬)
মাসয়ালা০৩; কোন নাবালেগ সন্তান যদি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয় এবং এই তিন দিনের মধ্যে সে প্রাপ্তবয়স্ক হয় তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৪)
মাসয়ালা ০৪; যে সমস্ত ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে পাগল হয়ে যায় আবার সুস্থ হয়ে যায় এ সকল ব্যক্তিরা যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় এবং উক্ত তিন দিন সুস্থ থাকে তাহলে তাদের উপরে কোরবানি করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৪)
মাসয়ালা ০৫; কোন ব্যক্তি বাড়ি ঘর নির্মাণ করার জন্য টাকা জমা রাখে কিন্তু কোন পণ্য ক্রয় না করে থাকে তেমনি ভাবে প্রয়োজন অতিরিক্ত ফসলের মূল্য যদি নিসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মাসয়ালা ০৬; একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব। পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পশু কোরবানি করতে হবে কিংবা বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে। একটি কুরবানির সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না। (আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৩১২)
মাসয়ালা ০৭; প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থাকলেও কুরবানী ওয়াজিব হয়। (আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫০৬)
মাসয়ালা ০৮; যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব তিনি নিজের পক্ষ থেকে কুরবানী করবেন অতঃপর সম্ভব হলে জিবীত বা মৃত পিতা-মাতা বা অন্যান্যদের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিজের ওয়াজিব কুরবানী না করে অন্যান্য দের পক্ষ থেকে যেমন মৃত পিতা মাতা বা ছোট সন্তান তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়নি তাদের পক্ষ হয়ে কুরবানী করে। এটা সঠিক তরিকা নয়। কারন এতে ঐ ব্যক্তির ওয়াজিব কুরবানী আদায় করা হয় না। (ফাতায়ায় মাহমুদিয়া ১৭/৩১২)
মাসয়ালা ০৯; যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তি যদি কুরবানীর তিনদিনে কুরবানী না করে পশু বা তার মূল্য সদকা করে দেয় তাহলে কুরবানী আদায় হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৬ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৩০৯)
মাসয়ালা ১০; কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পর কুরবানী আদায় না করে অতঃপর ঐ তিনদিন পর সে গরীব হয়ে যায় তাহলে ও তার উপর কুরবানী যোগ্য ছাগল সদকা করা আবশ্যক। দরিদ্র হওয়ার কারণে কুরবানী মাফ হবে না। সুতরাং সে আদায় করে যেতে না পারলে তা আদায় করে দেওয়ার জন্য ওসিয়ত করে যেতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৫ আল ইখতিয়ার ৫/২০ মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)
মাসয়ালা ১১; কোন ধনী ব্যক্তি যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর তা কুরবানী করার পূর্বেই তা হারিয়ে যায় ,বা মারা যায়,বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার জন্য আবশ্যক হলো অন্য একটি কুরবানী করা। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৬।কাযীখান ৩/৩৪৪আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩১৫ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
মাসয়ালা ১২; কোন ধনী ব্যক্তি কোরবানির পশু হারিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় কোরবানি উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া পশু ও পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য উত্তম হলো উভয়টি কোরবানি করে দেওয়া। তবে সে চাইলে যে কোন একটি কোরবানি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে উভয় পশুর দামের মাঝে যদি তারতম্য থাকে তাহলে অতিরিক্ত অংশ সদকা করে দিবে। (বাদায়েউস সানায়ে৫/৬৭ ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৩১৭)
মাসায়ালা ১৩; কোন ব্যক্তি কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পর পূনরায় কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করে অতঃপর পূর্বের হারিয়ে যাওয়া পশু পেয়ে যায় তাহলে তার জন্য উভয়টি কুরবানি করতে হবে যদিও সে গরীব হয়, তার একটি পশু কুরবানি করা যথেষ্ট হবে না। তবে যদি গরিব ব্যক্তি দ্বিতীয় পশু ক্রয় করার সময় প্রথম পশুর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ক্রয় করে তাহলে এক্ষেত্রে একটি পশু কোরবানি করার যথেষ্ট হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৭ আযীযুল ফাতাওয়া ৬৭৯)
মাসায়ালা ১৪; কোন গরীব ব্যক্তি কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করার পর তা মারা যায়, বা হারিয়ে যায়, বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তার কুরবানী মাফ হয়ে যায়। এবং তার জন্য পূণরায় কুরবানীর ব্যবস্থা করা আবশ্যক নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৬)
মাসয়ালা ১৫; কোন ব্যক্তি যদি অন্য কারো অনুমতি নিয়ে তার পক্ষ হয়ে কোরবানি করে দেয় তাহলে ওই ব্যক্তির (তার জন্য কুরবানী করে দিচ্ছে) কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৬৭)
মাসয়ালা ১৬; নাবালেগের কুরবানীঃ নাবালক শিশু তদ্রূপ সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয় নিসাবের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তাদের অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা দের পক্ষে নফল কুরবানী করতে পারবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬ রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)
মাসয়ালা ১৭; মুসাফির ব্যক্তির কোরবানীর বিধানঃ যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮মাইল বা প্রায় ৭৮কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া কাযিখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়েহ৪/১৯৫, হিদায়া ৪/৭৯, আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩১৫)
মাসয়ালা ১৮; কুরবানীর পূর্ণ সময়ঃ মোট তিন দিন কুরবানী করা যায়। জিলহজ্জের ১০, ১১, ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজের ১০ তারিখে কুরবানী করা উত্তম। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫, আল ইখতিয়ার ৫/১৯, মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)
মাসয়ালা ১৯; যে সমস্ত এলাকার লোকের উপরে জুমা ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করা বৈধ নয়। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে হযরত আনাস ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন “নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ছ্বলাত আদায়ের পুর্বে যবেহ্ করল সে নিজের জন্যই যবেহ্ করল। আর যে ব্যক্তি ছ্বলাত আদায়ের পরে যবেহ্ করল, তার কুরবানী পূর্ণ হল এবং সে মুসলিমদের নীতি গ্রহণ করল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৩৫, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৪৬, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
মাসায়ালা ২০; অবশ্য বৃষ্টি বাদল বা অন্য কোনো ওজর যদি প্রথম দিনে ঈদের নামাজ না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় শেষ হওয়ার পর (অর্থাৎ ঝাওয়ালের পর বা সূর্য মধ্য আকাশে থেকে বলে পড়ার পর) প্রথম দিনে কোরবানি করা জায়েজ। (কাযীখান ৩/৩৪৪আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩১৫ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
মাসয়ালা ২১; ১০ ও ১১ তারিখ দিবগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করা ভালো। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩, আদ্দুররুল মুহতার ৬/৩২০, জাওহারাতুন নাইয়্যিরাহ ২/১৮৮)
এছাড়াও মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানি করা পশুর গোশত ভাগ করার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির পশুর মাংস ভাগ করার নিয়ম সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির গোশত একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ দিতেন গরীব-মিসকিনদের।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ (فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ) “অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করাও। (সূরা হজ্ব-২৮)। রাসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেনঃ তোমরা নিজেরা খাও এবং অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ (বোখারি শরীফ ৫৫৬৯)। ‘আহার করাও’ বাক্য দ্বারা অভাবগ্রস্থকে দান করা ও ধনীদের উপহার হিসেবে দেয়াকে বুঝায়। তবে কোরআনের আয়াত ও হাদিস শরীফে ৩টি ভাগের কথা ইঙ্গিত করা হলেও পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম হতেও পরিমাণ নির্দিষ্ট করার কোনো স্পষ্ট আমল আমি পাইনি। রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের আমলে তিনি প্রত্যেক কোরবানির পশু হতে কিছু কিছু করে নিয়ে রান্না করতেন, বাকিটা পুরোটাই দান ও বিতরণ করে দিতেন।
তবে আব্দুল্লাহ বিন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে একটি আছার (বক্তব্য) পাওয়া যায়, ‘কোরবানির পশু বা হাদি হতে ১/৩ তোমার পরিবারের জন্য, ১/৩ তোমার আত্নীয়-প্রতিবেশীর জন্য, ১/৩ গরিব মিসকিনের জন্য। তাহলে সাহাবাদের আমল থেকে পরিমাণ নির্দিষ্ট করার প্রমাণ পাওয়া যায়।’ যদি প্রয়োজন হয়, গরিব কোরবানি করেছে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি বা তার চেয়ে অভাবী আশেপাশে আর কেউ নেই তাহলে যদি পুরোটাই নিজেরা খায়, সেটাও জায়েজ। তার চেয়ে সচ্ছলদেরকে বিতরণ করতে হবে, এটা জরুরি নয়। তবে এখলাস থাকতে হবে, নিয়ত শুদ্ধ হতে হবে। সর্বোপরি কোরবানি মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তষ্টির উদ্দেশে হতে হবে। অথবা কোনো অংশই না খেয়ে পুরোটাই দান করে দিলে এটাও জায়েজ।
আব্দুল্লাহ বিন ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর একটি আছারঃ ‘এটা মহান আল্লাহ তা’আলা হতে অনুগ্রহ; কুরবানির গোশত পুরোটা নিজেরা খাওয়া যাবে, দরিদ্রদের দান করা যাবে বা পুরোটা উপহার হিসেবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের বিতরণ করা যাবে। এছাড়া ইবন মাসঊদ রদ্বইয়াল্লাহু আনহু কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন বলে উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন ইমামগণও কুরবানির গোশতকে তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন।
কুরবানির গোশত আত্মীয় ও গরীবদের মাঝে বিতরণ না করাটা খুবই গর্হিত কাজ। এতে কৃপণতা প্রকাশ পায়। কারণ কুরবানির মাধ্যমে কুরবানিদাতা অহংকার থেকে নিরাপদ থাকেন এবং তার অন্তর পরিশুদ্ধ থাকে। আলহামদুলিল্লাহ্ আশা করা যায়, হজ্জ, কুরবানীর ব্যপারে আমরা মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছি, কি এবং কীভাবে তা আদায় করা লাগে। আজ এপর্যন্তই, আর প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে জুমু’আহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমু’আহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তা’য়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা (তা) বুঝতে পারো। (আল কুরআনঃ ৬২/৯)।
কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমু’আহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমু’আহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্ত উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ ঐ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তা’য়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।
এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও। (আল কুরআনঃ ৬২/১০)।
আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তা’য়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমু’আর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কর্মে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্মরণ থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কর্ম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমু’আহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।
এছাড়াও যারা নিয়মিত নামায পড়েন, জুমু’আতে আসেন, তারা যেনো সুন্নাহ অনুসরণ করেই মসজিদে আসেন, এতে রহমত ও বরকতপ্রাপ্ত হবেন, শাওয়ার বা পুকুরে এক ডুইব দিয়েই যেকোন একটা পোশাক পরে জুমু’আর দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের উদ্যেশে মসজিদে না এসে ভালো মতো প্রিপারেশন নিয়েই আসবেন। হাদিস শরীফে হযরত, (عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيّ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى) “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমু’আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর (নামাযের উদ্যেশ্যে) বের হয় এবং (মসজিদে প্রবেশ করে) দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে (যেখানে যায়গা পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়), অতঃপর তার নির্ধারিত নামায আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সেই জুমু’আহ শরীফের (নামায) থেকে পরের জুমু’আহ শরীফের (নামাযের আগ) পর্যন্ত (মধ্যবর্তী) সময়ের (মধ্যে ঘটা) যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরিফঃ ইঃফাঃ ৮৩৯, আঃনাঃ ৮৮৩)
জুমু’আ শরীফের দিনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, না আছে সুযোগ জুমু’আর নামাযকে অবহেলার। হদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ـ فَقَالَ " يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ قَبْلَ أَنْ تَمُوتُوا وَبَادِرُوا بِالأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ قَبْلَ أَنْ تُشْغَلُوا وَصِلُوا الَّذِي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ بِكَثْرَةِ ذِكْرِكُمْ لَهُ وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ تُرْزَقُوا وَتُنْصَرُوا وَتُجْبَرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْكُمُ الْجُمُعَةَ فِي مَقَامِي هَذَا فِي يَوْمِي هَذَا فِي شَهْرِي هَذَا مِنْ عَامِي هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ تَرَكَهَا فِي حَيَاتِي أَوْ بَعْدِي وَلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ أَوْ جَائِرٌ اسْتِخْفَافًا بِهَا أَوْ جُحُودًا بِهَا فَلاَ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ شَمْلَهُ وَلاَ بَارَكَ لَهُ فِي أَمْرِهِ أَلاَ وَلاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ زَكَاةَ لَهُ وَلاَ حَجَّ لَهُ وَلاَ صَوْمَ لَهُ وَلاَ بِرَّ لَهُ حَتَّى يَتُوبَ فَمَنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَلاَ لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً وَلاَ يَؤُمَّنَّ أَعْرَابِيٌّ مُهَاجِرًا وَلاَ يَؤُمَّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا إِلاَّ أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ وَسَوْطَهُ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।
তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমু’আর নামাযকে ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার (মুবারক) জিন্দেগীতে বা আমার প্রস্থানের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমু’আর নামাযকে তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, মহান আল্লাহ পাক তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না (অর্থাৎ তার দুনিয়াবি জঞ্জালগুলি আরো জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে) এবং তার কাজে-কর্মে বরকত দান করবেন না। নাউযুবিল্লাহ!
(অতএব) সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! কোনো নারীকে পুরুষের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো বেদুইনকে কোনো মুহাজিরের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো খারাপ ব্যক্তিকে কোনো (সত্যিকার) মুমিনের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা। তবে কোন স্বৈরাচারী শাসক যদি বাধ্য করে এবং তার তরবারি ও চাবুকের ভয় থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। (ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১০৮১)
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমু’আহ শরীফ সহ দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)
0 ফেইসবুক: