সোশ্যাল মিডিয়া পরিত্যাগ করার ফলে অনেক নব্য ফেত্না ও গোস্তাখে রসুলদের সম্পর্কে দৈনিক অবগত থাকা যাচ্ছেনা। গতকাল এক ছোট ভাই টেলিগ্রামে ম্যাসেজ দিয়ে আরিফ বিন হাবিব নামের এক ভাইরাল মুল্লার ব্যপারে অবগত করেছে। এই গুস্তাখে রসূলের সম্পর্কে তেমন জানার কোন আগ্রহই ছিলোনা, আর বাংলাদেশে কোন আলীম এমনও নাই যাকে নিয়ে দুই কলম ভালো কিছু লিখাও যায়। তো বাধ্য হয়ে তার ওয়াল চেক করে দেখলাম, ওয়াল ভরা ফিত্না ফ্যাসাদ আর বিতর্ক। সবগুলি নিয়ে তো লিখা সম্ভব না তবে একটি নিয়েই লিখি যেনো সারা ডেগের ভাতের খবর যেকোন রাঁধুনিই একটি টিপেই বুঝতে পারে।
অদ্ভুত অদ্ভুত, যখন জমিনে জ্বিহাদ ফরজ, যখন মুসলিম চারিদিকে নির্যাতিত হচ্ছে, যখন মুসলিম উম্মাহ দলে দলে বিভক্ত, যখন উগ্রপন্থী হিন্দু ইউএনও কতৃক মসজিদের খতীবকে অপমান করা হচ্ছে তখন রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম যে যায়গায় আরাম ফরমাচ্ছেন, সেই যায়গা কে রওজা শরীফ নয় কবর বলতে হবে এরূপ গোস্তাখীতে লিপ্ত এই বে-আদব ইহুদীদের মতো। অথচ সে জানেইনা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের শানে গোস্তাখীর পরিণতি কি?
///যাইহোক গোস্তাখ আরিফ বিন হাবিব তার ফেইসবুক পোষ্টে কয়েকটি হাদিস শরীফের উদৃতি দিয়েছে যে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজে অন্যান্য নবী রসুল আলাইহিমুস সালামদের কবরকে কবর বলে সম্বোধন করেছেন। নিজের রওজা শরীফকেও কবর বলে সম্বোধন করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমরাও সম্বোধন করেছেন। তাবেঈ রহমতুল্লাহি আলাইহিমরাও করেছেন।
অতঃপর সে তার পোষ্ট শেষ করেছে এই বানি প্রদান করে, "আমি বলিনি যে রওজা বলা না যায়েজ, বলেছি যে হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবরকে "রওজা" বলা হয়েছে বলে আমি কোন বর্ননা পাইনি।///
(কোন সন্দেহ নাই তার দেওয়া হাদিস সত্য, কিন্তু আদার ব্যপারি জাহাজের খবর নিলেই সমস্যা হয়।)
আসুন আমরা দেখি কুরআন ও হাদিস শরীফদ্বয়ে রওযা শব্দ পাওয়া যায় কি না? গেলে কোন বিষয়ে কি উদ্যেশ্যে বর্ণিত হয়েছে?
আল কুরআনে রওজা শরীফ দুই জায়গায় জান্নাতের উদ্যান হিসেবে ব্যবহার করেছেন খোদ মহান আল্লাহ পাক। আল কুরআনের ৪২ নং সূরার ২২ নং আয়াত শরীফ এবং ৩০ নং সূরার ১৫ নং আয়াত শরীফে।
এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছেঃ (مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ، وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي) আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের উদ্যান/বাগানগুলোর একটি বাগান আর আমার মিম্বর আমার হাউয (কাউসার)-এর উপরে অবস্থিত। (বুখারি শরীফ ১১৯৫, ১১৯৬, ১৮৮৮, ৬৫৮৮ ৭৩৩৫, মুসলিম শরীফ ১৩৯০a, ১৩৯০b, ১৩৯১, নাসাঈ শরীফ ৬৯৫, তিরমিযি শরীফ ৩৯১৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০ ১১, মিশকাতুল মাসাবিহ ৬৯৪)
এই জাহিল নাকি হাদিসে খুজে পায়নি যে কবরকে "রওজা" বলা হয়েছে। এই জাহিল কবর আর রওজা শরীফের পার্থক্যই বুঝেনাই। জাহিলেরা যখন আলীম সাজবে তখন এরূপ অবস্থাই হবে।
"কবর" আর "রওযা" দুইটাই দুই জিনিস।
কবরঃ সোজা বাংলায় কবর হলো মৃতদেহকে মাটিতে পুতেঁ রাখার গর্ত কিংবা মৃত মানুষকে মাটির ভেতর যেখানে দাফন করা হয়, সেই যায়গাকে কবর বলা হয়ে থাকে।
রওজাঃ বাগানকে আরবিতে ‘রওজা’ বলা হয়। মূলত জান্নাতের উদ্যানকেই রওজা বলা হয়ে থাকে। যা খোদ আল্লাহ পাক আল কুরআনের ৪২ নং সূরার ২২ নং আয়াত শরীফে ব্যবহার করেছেন (وَالَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فِى رَوْضَاتِ الْجَنَّاتِ) পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার ও সৎকর্মশীল, তারা থাকবে জান্নাতের বাগানে/উদ্যানে।
এবার আসি রসূলে পাক রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনি যে স্থানে আরাম ফরমাচ্ছেন সেই যায়গাকে আমরা কি বলে সম্বোধন করবো?
হাদিসে এসেছে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (إِنَّمَا الْقَبْرُ رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ أَوْ حُفْرَةٌ مِنْ حُفَرِ النَّارِ) "কবর হল জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান, অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। (তিরমিঝি শরীফ ২৪৬০)
গোস্তাখ আরিফ বিন হাবিব তার আরেকটি ফেইসবুক পোষ্টে এই হাদিসকে দ্বয়িফ হিসেবে আমলযোগ্য নয় বলে ইশারা দিয়েছে, যদিও "মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি রহমতুল্লাহী আলাইহি এ হাদীসটি হাসান গারীব বলেছেন বর্ণনার পরে। এছাড়াও খোদ কথিত সলাফিদের ফতোয়ার ওয়েব ইসলাম.কা'তে তারা এটা ব্যবহার করেছে দলিল হিসেবে। এছাড়াও ব্যবহার করেছে দলিল হিসেবে দারুল ইফতার ওয়েব সাইটে।
এবার আসুন সহিহ হাদিসে মানুষের কবর কি জান্নাত ও দোযখে পরিণত হবে এরূপ কিছু পাওয়া যায় কি না।
আল-বারাআ ইবনু আজিব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত লম্বা হাদিসের একটি অংশ তুলে ধরা হলো, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেনঃ কবরে লাশ রাখার পরে যখন তাকে দ্বীন, রব ও রসূল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে তখন যদি উত্তর সঠিক হয় তাহলে আল্লাজির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসেঃ আমার বান্দা যথাযথ বলেছে। সুতরাং, তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও (তার কবরে) এবং তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। এছাড়া তার জন্য জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সুতরাং, তার দিকে জান্নাতের স্নিগ্ধকর হাওয়া ও তার সুগন্ধি বইতে থাকে। তিনি আরো বলেন, ঐ দরজা তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়।
আর যদি বান্দা উত্তর দিতে না পারে ঈমানহীন কাফের হালতে মৃত্যুর ফলে তাহলেঃ তাহলে আল্লাজির পক্ষ থেকে ঘোষণা আসেঃ এই লোক মিথ্যাবাদী সুতরাং, তার জন্য জাহান্নামের একটি বিছানা এনে (তার কবরে) বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও, আর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। তিনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর তার দিকে জাহান্নামের উত্তপ্ত বাতাস আসতে থাকে। এছাড়া তার জন্য তার কবরকে সংকীর্ণ করে দেয়া হয়, ফলে তার এক দিকের পাঁজর অপর দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। বর্ণনাকারী জারীর বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ তিনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আরো) বলেন, অতঃপর তার জন্য এক অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার সঙ্গে একটি লোহার হাতুড়ী থাকবে, যদি এ দ্বারা পাহাড়কে আঘাত করা হয় তাহলে তা ধূলায় পরিণত হয়ে যাবে। নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর সে তাকে হাতুড়ী দিয়ে সজোরে আঘাত করতে থাকে, এতে সে বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে যা মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত সকল সৃষ্টি জীবই শুনতে পায়। আঘাতের ফলে সে মাটিতে মিশে যায়। তিনি বলেন, অতঃপর (শাস্তি অব্যাহত রাখার জন্য) পুনরায় তাতে রুহ ফেরত দেয়া হয়। (আবু দাউদ শরীফ ৪৭৫৩, মিশকাত শরীফ)
অতএব প্রমাণিত হলো কবর কারো জন্যে জান্নাত কারো জন্যে যাহান্নাম হয়ে যাবে। আর হাদিস শরীফে এসেছেঃ (مَا بَيْنَ بَيْتِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ، وَمِنْبَرِي عَلَى حَوْضِي) আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের উদ্যান/বাগানগুলোর একটি বাগান আর আমার মিম্বর আমার হাউয (কাউসার)-এর উপরে অবস্থিত। (বুখারি শরীফ ১১৯৫, ১১৯৬, ১৮৮৮, ৬৫৮৮ ৭৩৩৫, মুসলিম শরীফ ১৩৯০a, ১৩৯০b, ১৩৯১, নাসাঈ শরীফ ৬৯৫, তিরমিযি শরীফ ৩৯১৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১০ ১১, মিশকাতুল মাসাবিহ ৬৯৪)
যে নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উসিলায়, উনার সম্মানার্থে ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের উদ্যান/বাগান হয়ে যায়, খোদ সেই নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেখানে শুয়ে আছেন সেটা জান্নাতের উদ্যান/বাগান নয়। নাউযুবিল্লাহ!!! মানুষ কটটুকু জাহিল হলে এরূপ আক্বিদাহ রাখতে পারে। মূর্খ গোস্তাখ আরিফ বিন হাবিবের মতে সবকিছুর হুকুম নাকি সরাসরি হাদিস শরীফে থাকতে হবে ব্যবহার করতে হলে, তা মূর্খ গোস্তাখ আরিফ এর নিকট জানতে চাই কোন সাহাবীর নামের আগে হাজী লাগানো ছিলো? নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন সাহাবীকে হাজী বলে, মুফতি বলে, সম্বোধন করেছেন? তুই যে নিজের নামের পেছনে লেঞ্জা হিসেবে মুফতি লাগিয়েছিস এর দলিল দে হাদিস শরীফ থেকে?
মূর্খ গোস্তাখ আরিফ এর নিকট জানতে চাই, তর কি কোন ধারনা আছেঃ যে ৪ মাজহাবের ৪ ইমাম, সিহাহ সিত্তাহ সহ শত শত হাদিসের মুসান্নিফ ইমাম, শত শত ফকিহ, তাফসিরকারক, হাদিসের শরাহ কারিদের কিতাব পড়ে তুই আজ ওয়াজ মাহফিলে বয়ান দিয়ে টাকা নিস, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে টাকা কামাস, এরূপ টাকা দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে কোন নবি, রসূল, সাহাবী, তাবেঈ, তবে-তাবেঈ কখনো নিয়েছেন?
আরে বে আদব তুই কি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বলে ডাকস নাকি হাসিনা বলে ডাকস? তুই কি তর শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকতি নাকি হুজুর/উস্তাদ বলে সম্বোধন করতি? তুই আদব বুঝস?
আমি থাকি তুরস্কে, এইখানে সাধারণ সকল কবরকেই মাজার বলে সম্বোধন করে থাকে টার্কিশ মুসলমানেরা, অথচ আমাদের দেশে মাজার বল্লেই বুঝবে যে এইখানে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত কোন মুমিন বান্ধা/বন্ধু আউলিয়া শুয়ে আছেন। আর এটাই মূলত আদব। কোন মানুষ আমি পাইনি (থাকতে পারে আমার অজানায়) যে অলি আউলিয়াদের মুহব্বতে ফিদা হয়ে তাদের কবরকে মাজারের বদলে রওজা শরীফ বলেছে, অথচ সেটাও যায়েজ কিন্তু আদব না। আসলে এইসব হচ্ছে মূলত আদব। কিন্তু বে-আদব যেহেতু মহান আল্লাহ তা'আলার রহমত থেকে বঞ্চিত সেহেতু বে-আদব হলে এইসব বুঝা যাবেনা। রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে কায়েনাতের বাকি সবার যে ব্যবধান আছে এটা মূলত এরা মিটিয়ে দিতে চায়। এইসব ইহুদীদের অনেক লং টাইম প্লানের অংশ।
এখানে সুক্ষ্ম একটি বিষয় রয়েছে যা আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। ঈমান আনার পরে কিছু বিষয় মানার বেলায় কোনো যুক্তি তর্ক দলিল খোজাও এক প্রকার সেই বিষয়ের প্রতি সন্দেহ পোষন করার মতো জাহেলিয়াত, যেমন মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ ءَامَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا) মু’মিন তারাই যারা মহান আল্লাহ পাক ও রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার পর আর কোন ধরণের সন্দেহে পড়েনা। (সূরাহ হুজুরাত ৪৯/১৫)
এছাড়াও রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার প্রত্যেকটা বিষয়কে সবকিছুর উর্ধে আলাদা পরিভাষায় রাখতে হবে, যেনো বিষয়টি বলার সাথে সাথে বুঝা যায় এটা উনার উদ্দেশ্যে নিসবত করা হচ্ছে সুবহানাল্লাহ!!! যেমন মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (لِّتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ تُعَزِّرُوۡهُ وَ تُوَقِّرُوۡهُ) যেন ওহে মানুষেরা তোমরা মহান আল্লাহ তা'আলা ও রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনো, আর রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনাকে সাহায্য-সহযোগিতা করো এবং উনার (সর্বোচ্চ) তাযীম তাক্বরিম করো। (সূরাহ ফাতহ ৪৮/৯) উক্ত আয়াত শরীফের শানে নুযূলের দিকে তাকালেই যেকোন মানুষের বুঝে ফেলার কথা যে এ আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ তা'আলা ও রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার উপর ঈমান আনয়নের পরে আরো তিনটি কাজ করার জন্য মুমিনদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর দুইটি হচ্ছে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার ব্যপারেঃ ১) উনার আনিত দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসার ও যেকোন প্রয়োজনে বিনা চু চেরায় উনার সকল নমুনার সাহায্য-সহযোগিতা করা। ২) তামাম সৃষ্টিকুলের মধ্যে উনাকে সর্বোচ্চ তাযীম- তাক্বরিম করা।
আমরা সবাই জানি যে সাধারণ মানুষ মরার পর যেখানে দাফন করা হয় সেটাকে বলা হয় কবর। সেই কবরের ভিতরে মহান আল্লাহ পাক জান্নাতের সংযোগ দিলেন নাকি জাহান্নামের সংযোগ দিলেন এটা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তিনি কেবল জান্নাতিই নন, খোদ জান্নাতের সার্টিফিকেট দাতা (দেখুন)। উনার রওজা পাঁকে উনি জিন্দা এবং পরম সুখে শান্তিতে অবস্থান করছেন। (দেখুন) তাহলে উনার রওজা শরীফ কিভাবে হাদিসে বর্ণিত কবরের মতো হলো?
আম পাবলিকের মতো নবীজির রওজা শরীফকে কবর বলার হুকুম আল্লাহ পাক দিয়েছেন? সূরাহ ফাতহ এর ৯ নং আয়াতে পাঁকে যে নির্দেশ দিলেন (وَتُوَقِّرُوهُ) "রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার (সর্বোচ্চ) তাযীম তাক্বরিম করো"। এর মানে বুঝস? কিভাবে তাযীম করা লাগে কখনো শিখেছিস? দেখ মহান আল্লাহ পাক তদের মতো বে-আদবদের ব্যপারে সূরাহ নূরের ৬৩ নং আয়াতে পাঁকে কি বলেছেনঃ (لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَکُمۡ کَدُعَآءِ بَعۡضِکُمۡ بَعۡضًا ؕ قَدۡ یَعۡلَمُ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ یَتَسَلَّلُوۡنَ مِنۡکُمۡ لِوَاذًا ۚ فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِهٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَهُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ) তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-কে সেভাবে (আমভাবে) ডেকো না; (১) (আর) মহান আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই তোমাদের মধ্যে থাকা সেইসব লোকদের সম্পর্কে জানেন যারা চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা উনার নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে (২)।
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে বলা হচ্ছেঃ (১) এর একটি অর্থ হল, যেভাবে তোমরা এক অপরকে নাম ধরে ডাক, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-কে ঐভাবে বে আদবের মতো ডাকবে না, যেমন ‘ওহে মুহাম্মাদ!’ বলে ডাকা, এইভাবে ডাকা বে-আদবী; বরং সম্মানসূচক উপাধি দ্বারা ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম, ইয়া হাবিবাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম’ ইত্যাদি বলে ডাকবে। (বাগাভী শরীফ) (২) ‘বিপর্যয়’ বলতে অন্তরের সেই বত্রুতাকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষকে ঈমান হতে বঞ্চিত করে ফেলে। এ হল রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লা উনার শানে বে আদবি, উনার আদেশ থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা এবং উনার বিরোধিতা করার পরিণাম। আর ঈমান থেকে বঞ্চনা ও কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তির কারণ। তাছাড়া প্রথমে ভাইরাল হতে বিতর্কের জন্ম দিতে গোস্তাখী করে পরে আমিতো এমনিই বলেছি, বা কথা ঘুরিয়ে নিলেও কোন ফায়দা হবেনা। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوۡلِهٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ کَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ ؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآئِفَۃٍ مِّنۡکُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَۃًۢ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا مُجۡرِمِیۡنَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমার, আপনি) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, আমরাতো শুধু আলাপ আলোচনা ও হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) বলে দিন, ‘তোমরা কি মহান আল্লাহ তাআলা, উনার আয়াতসমূহ এবং রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছিলে? ওযর পেশের চেষ্টা করো না (হে গোস্তাখেরা), (মূলত) ঈমান আনার পরও তোমরা কুফরী করেছ। আমি তোমাদের মধ্যেকার কোন দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে (নবী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করার কারণে অবশ্যই) শাস্তি দেব। কারণ তারা অপরাধী। (সূরাহ তাওবা ৯/৬৫-৬৬)
তাই সাবধান হে মুসলমান, কোকিল কণ্ঠি বক্তার সুরের ফাদে পা দিয়ে ঈমান যেনো না যায়। খুব ভালো করে খেয়াল করবে, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবত থাকা প্রত্যেক্টি জিনিসের সম্মান ইজ্জত মর্যাদা বর্ণনাতীত। এই যে সূরাহ আহযাবের ৩৩ নং আয়াত শরীফে আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা দিলেন সকল উম্মাহাতুল মু'মিনিন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা পাক পবিত্রা নারী, সারা কায়েনাতে এই মর্যাদা কোন আম নারী পেয়েছেন? উনাদের যদি রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযিম না হতো তাহলে কি উনাদের পাক পবিত্র বলার সুযোগ থাকতো? এছাড়াও যে আহলে বাইতের কিয়ামত পর্যন্ত মর্যাদা বিদ্যমান থাকবে এইসব কার গূনে? মদিনা শরীফের সেই ছোট্ট রিয়াদ্বুল জান্নাহ কার কারনে জান্নাতের টুকরা হয়েছে? এইসব ফিকির করার মতো কি কলব আছে?
এছারাও বে-আদব গোস্তাখ আরিফ দেখঃ মাওলানা জাকারিয়া, তাবলীগ জামাতের ফাজায়েলে হজ্জের নবম পরিচ্ছেদের রওজা পাঁক-এর জিয়ারতের আদবে'র ১৮নং এ লিখেছে “যেই জায়গা হুযুর পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে, উহা মহান আল্লাহ তা'আলার আরশ হইতেও শ্রেষ্ঠ, কা’বা হইতেও শ্রেষ্ঠ, কুরছি হতেও শ্রেষ্ঠ। এই উক্তির ব্যপারে তর গুরু লুৎফুর রহমান ফরায়েজী কি বলেছে। তুই তো বাপ দাদার অনুসারীও না জাহিল কোথাকার।
অতএব নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার রওজা শরিফকে যে ব্যক্তি উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে কবর বলবে, এবং এটার পক্ষে হাদিসের মনগড়া ব্যাখা দিতে চাইবে সে চরম পর্যায়ের গোস্তাখে রছুল। এদেরকে গোস্তাখ জাহিল আখ্যা দিয়ে বয়কট করতে হবে। এদের সাথে কোনো বিতর্কে জড়ানো যাবে না, শুধু এখানেই শেষ নয়ঃ এদের পিছনে কোনো মুসলমানের নামাজে ইকতিদাহ করাই জায়েজ হবে না।
মূর্খ গোস্তাখ আরিফ শোন তুই কেবল ব্রেইনের মধ্যে থাকা ইল্মে আ'মের অধিকারী জাহিল। কারন ইল্মে খাস হচ্ছেন নূর যা থাকে কল্বের মধ্যে, আর কোন গোস্তাখের কল্বে নূর তো অনেক দূরের বিষয় ঈমান ই মওজুদ থাকেনা। এটা পড়ে দেখ তর ঈমান আমল কিছু বিদ্যামান রয়েছে কি না। (রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের শানে গোস্তাখীর পরিণতি কি?)
0 ফেইসবুক: