Wednesday, July 13, 2022

কথিত ছোঁয়াচে রোগের বাহানায় মাস্ক পরা নিয়ে বিভ্রান্তি বনাম দ্বীন ইসলাম

বায়তুল মোকাররাম সহ দেশের প্রায় সকল মসজিদেই মাস্ক পরা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা না থাকলেও, আশ্চর্যের বিষয় মাথাব্যাথা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুশৃংখল বাহিনীর এলাকার মসজিদ সমূহে, অথচ হাদিস শরীফে এসেছে, “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন ব্যাক্তিকে নামাযরত অবস্থায় তার মুখমন্ডল ঢাকতে নিষেধ করেছেন” (দেখুন) কিন্তু সেখানে হাদিস শরীফের হুকুমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভয়ংকরভাবে মাস্ক পরা নিয়ে ষ্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। সেখানে টুপি ছাড়া নামাযে কোন সমস্যা নেই, থ্রিকোয়াটার প্যান্টেও কোন সমস্যা নেই, তবে মাস্ক থাকতেই হবে হাদিসের হুকুম অমান্য করে হলেও, অথচ উত্তম পোষাক পরিধান করা মহান আল্লাহ তাআলা কতৃক ফরজ প্রত্যেক নামাযের পূর্বে (দেখুন)। অথচ তাঁরা উত্তম পোশাকের ধার না ধারলেও, পুরুষের মুখে মাস্ক (মেয়েদের মতো নিকাব) পরাকে ফরজে আইনে রূপান্তরিত করে ফেলেছে নিজ থেকে, (নাউজুবিল্লাহ)। ধর্ম বিষয়ে এই সব এলাকার মানুষেরা শুধু অজ্ঞই নয় বরং বড় ধরনের বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছে। পবিত্র কোরআন শরীফে, সুরা নূরের পরিস্কার বলা হয়েছে যেঃ (وَّ لَا عَلَی الۡمَرِیۡضِ حَرَجٌ) রোগক্রান্তের কোন দোষ নেই। আর (لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَاۡکُلُوۡا جَمِیۡعًا اَوۡ اَشۡتَاتًا) তোমরা একসাথে খেতে পারো কিংবা আলাদাও খেতে পারো।” আরব দেশের প্রচলিত ধারায় এক সাথে খাওয়ার অর্থ হচ্ছে এক প্লেটে খাওয়া, আলাদা খাওয়ার অর্থ হচ্ছে আলাদা প্লেটে খাওয়া। এই ‘রোগক্রান্ত’ শব্দের হুকুম সকল ধরণের রোগীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

এখানে উল্লেখযোগ্য ৪টি হাদিস শরীফ বর্ননা করা হলোঃ

১) আফফান রহমতুল্লাহ বলেন, সালিম ইবনু হাই’য়ান, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (যে কোন) রোগের (নিজ থেকে) কোন সংক্রমণই নেই, কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের প্রতিক নয়, সফর মাসের কোন অশুভ (কিছু) নেই, (অতএব) কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি দূরে থাক সিংহ থেকে। (দেখুন)

উপরোক্ত হাদিস শরীফে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন স্পষ্টতই বলেছেন যেঃ যেকোন রোগ নিজ থেকে কারো মধ্যে সংক্রমিত হতে পারেনা। যদি এরূপ কারো বিশ্বাস থাকে তাহলে সে যেনো কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকে, বা পালায়, কেন? কারণ ঐ সময় আরব মুশরিকরা একে ছোঁয়াচে বলেই বিশ্বাস করতো, যা সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি সম্মানিত দ্বীন ইসলামের আক্বিদাহ বিশ্বাস অনুসারে। এর প্রমান হলো নিম্নোক্ত হাদিস শরিফগুলীঃ

২) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের সময়কালে কুষ্ঠ রোগকে ছোঁয়াচে রোগ বলে ধারনা করা হতো বলে, এমন একজন রোগীকে নিয়ে তিনি একপাত্রে আহার করেছেন। যাতে করে এই কুসংস্কার মুমিনদের মধ্যে থেকে নির্মূল হয়ে যায়। (দেখুন এখানে)

৩) আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ “ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই।” উপস্থিত একজন বেদুয়ীন সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “আপনি বলছেন ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, তবে চর্মরোগ নিয়ে একটি উট যখন আমার উটের পালে প্রবেশ করে তখন আমার অধিকাংশ উটের ঐ রোগ হয়। জবাবে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন, “তাহলে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করলো?” (দেখুন এখানে)

৪) এছাড়াও পবিত্র হাদীস শরীফে, উসামা ইবনে জায়েদ থেকে বর্নিত, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোন এলাকায় মহামারী হলে ঐ এলাকা থেকে কোন লোক বাহিরে যাবে না এবং বাহিরে থেকে কোন লোক ঐ এলাকায় প্রবেশ করবে না।’ (দেখুন এখানে)

৫) আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলার ঘর মসজিদ সব চেয়ে নিরাপদ এবং পবিত্র স্থান, আর বাজার হচ্ছে সব চেয়ে নিকৃষ্ট স্থান, (দেখুন এখানে) অথচ বিভ্রান্ত মুসলমানেরা ধারনা করে সমস্ত করোনা মসজিদে ওৎ পেতে বসে থাকে মুসলমানদেরকে আক্রমন করার জন্য। এতদ বিষয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা বাকারায় এরশাদ করেনঃ (وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنۡ یُّذۡکَرَ فِیۡهَا اسۡمُهٗ وَ سَعٰی فِیۡ خَرَابِهَا ؕ اُولٰٓئِکَ مَا کَانَ لَهُمۡ اَنۡ یَّدۡخُلُوۡهَاۤ اِلَّا خَآئِفِیۡنَ ۬ؕ لَهُمۡ فِی الدُّنۡیَا خِزۡیٌ وَّ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ) “আর তার চেয়ে অধিক যালেম আর কে আছে? যে মহান আল্লাহ তা’আলার মসজিদসমূহে উনারই নাম স্মরন করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা উজাড় করতে চেষ্টা করছে? (অথচ) তাদেরতো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব।”

বর্তমান জামানার মুসলমানেরা মূখে বলে, “ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা” (“Islam is a complete code of life”) কিন্তু বিষয়টি বিশ্বাস পর্যায়ে নেই বলেই আমরা যে কোন বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফের নির্দেশনার সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যবস্থা অনুশীলন করি। হাদীস পালনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন একটি উদাহরন হচ্ছে, যখন মুসলিম সেনারা শামদেশ (জর্ডান) এ অবস্থানরত ছিলেন তখন হঠাৎ করেই এক মহামারী আবির্ভাব ঘটে এবং প্রচুর সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমরা শহীদ হতে শুরু করেন। এহেন পরিস্থিতিতে আমিরুল মু’মিনীন ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেনা প্রধান আমর বিন আস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আহুকে পত্র মারফত নির্দেশ প্রদান করেন যাতে তিনি পত্রপ্রাপ্তির পর দ্রুততম সময়ে মদীনায় ফিরে আসেন। তিনি, সেনাপ্রধান আমর বিন আস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন হাদীস শরীফের আলোকে মহামারী এলাকা থেকে বের না হওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে পত্রের জবাব দেন। আমিরুল মু’মিনীন পত্র প্রাপ্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ধৈর্য্য ধারন করেন। পরবর্তী ৩দিনের মধ্যে সেনা প্রধান আমর বিন আস উক্ত মহামারীতে শহীদ (ইন্তেকাল) করেন, তবু প্রান বাঁচাতে রসুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অমান্য করাটাকে নিজের জন্য যায়েজ মনে করেননি। আজ আমরা নিজেদের কে মুসলমান দাবী করি কিন্তু ছোঁয়াচে রোগের ধারনায় এহেন কোন উদ্ভট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই যা আমরা গ্রহন করি না।

কেয়ামতের কঠিন দিনে মহান আল্লাহ পাক যখন প্রশ্ন করবেন, কোরাআন শরীফ ও হাদীস শরীফে পরিস্কার উল্লেখ থাকার পরও করোনার ভয়ে কেন মাস্ক পরে থাকতে? মহান আল্লাহ পাক আমি তো করোনাকে ভয় পেতাম না, সরকারী হুকুম ছিল বলে মাস্ক পরতাম। “মিথ্যাবাদী! তোমার অন্তরে ভয় ছিল কি ছিল না, আমি অন্তর্জামী কি জানতাম না? তুমি কেন আমার ঘর মসজিদে আসা সকল মুসল্লিদের উপর চড়াও হয়েছিলে মাস্ক পরানোর জন্য? তুমি নিজে আমার হুকুম মানোনি এবং অন্য সকল নামাজীদেরকে আমার হুকুম অমান্য করতে বাধ্য করতে, আমার ওয়াজিব নির্দেশ, কাতারের মধ্যে ফাঁক না রাখা, (এখানেও দেখুন) কিন্তু তুমি তা সকলকে অমান্য করতে বাধ্য করতে। আমাকে বাদ দিয়ে বিল গেটস-কে কেন নির্দেশ দাতা হিসাবে মেনে নিয়েছিলে। এখন যাও তুমি ঐ কাফের গেটস-এর সাথে চিরকালের জন্য জাহান্নামে অবস্থান কর।

পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছুই নেই, এই বিশ্বাসে কোন মুসলমান করোনা কিংবা অন্য যে কোন রোগে ইন্তেকাল করলে তার জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা যাই থাকুক না কেনো, এর বিপরীত বিশ্বাস নিয়ে যারা মারা যাবে, তাদের জাহান্নামে যাওয়ার চান্স কিন্তু শতভাগ, কারণ সরাসরি কোরআন শরীফ এবং হাদীস শরীফ থেকে এতগুলো দলিল উপস্থাপন করার পর ও কোন মুসলমান যদি অন্তরে বিশ্বাস করে ছোঁয়াচে রোগ আছে, সে যেনো জেনে শুনেই জাহান্নামে তার ঠিকানা নির্বাচন করে নিলো। কারন এই বিশ্বাসটি ইমানের সাথে জড়িত, আর আমরা সকলেই ইমান নিয়েই ইন্তেকাল করতে চাই।

মহান আল্লাহ পাক, আমাদের সকলকে দীন ইসলাম বুঝা এবং তা সঠিক ভাবে মেনে চলার তউফিক দান করুন। আমিন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: