Thursday, July 28, 2022

কেরালার যুবকের পায়ে হেটে হজ্জের বিষয়ে বিদআতি সলাফি যাহিলদের তাওবার আহ্বান

আহলে হাদিস দাবীদার, সলাফি (সয়তান লানতুল্লাহি’র ফিরকা) লা মাজহাবিরা চরম জাহিল এবং মূর্খ, কয়েক বছর অনলাইনে ছিলাম না বলে এরা যেনো একেবারে লতিয়ে গজীয়ে উঠেছে। আসলে এদের দোষ দিয়েই বা কি লাভ, কথিত পেট পূজারী সুন্নীরার খারাপ। এরা নিজেরা দ্বীন থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। এরা খানকাহ ভিত্তিক ইসলাম প্রচার বাদ দিয়ে, বছরে একবার মিলাদুন্নবী (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) পালন করেই দ্বীন ইসলামের কাজ শেষ মনে করে। এরা যদি পূজারী সুন্নী না হয়ে কিতাবি সুন্নি হতো তাহলে এইসব মূর্খ আহলে হদসেরা প্রত্যেকটি কথার আগে ফিকির করে, কুরআন সুন্নাহ তালাশ করেই কথা বলতো।

যাইহোক মূল বিষয়ে চলে আসি। সলাফি এক লুমাজা একজন হাজীর অসাক্ষাৎ-এ মনগড়া হাদিসের ব্যখ্যা দিয়েছে, যা ১০০% কুরআন সুন্নাহর বিরোধী। তার উল্লেখিত হাদিসটি হুবুহু হলো /// আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে তার দুই ছেলের উপর ভর করে হেঁটে যেতে দেখে বললেনঃ তার কী হয়েছে? তারা বললেন, তিনি পায়ে হেঁটে হজ্জ করার মানত করেছেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা‘আলার এর কোন দরকার নেই। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন। সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৬৫, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস///

এবার আসুন আমরা দেখি উপরোক্ত হাদিসের শরায় কি পাওয়া যায় খোদ সলাফিদের ব্যখ্যায়ঃ মহান আল্লাহ তা’আলা কোন মানুষকেই তার সামর্থ্যের বাইরে কোন কাজের ভার দেন না এবং যে কোন কাজে নিয়োজিত হওয়ার প্রথম শর্ত হল, সেই বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিফহাল/জ্ঞান রাখা এবং ঐ বিষয়ে সামর্থ্য থাকা। এবং এটি ইসলামী শরীয়তের অন্যতম ভিত্তি। 

এই হাদিসে আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এমন একজন বৃদ্ধ ব্যক্তিকে দেখেছিলেন যার হাড় দুর্বল হয়ে গিয়েছিল এবং তার শক্তিও প্রায় ক্ষয় হয়ে পড়েছিল। যিনি অন্য কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারছিলেন না। তিনি তার দুই পুত্রের মাঝ দিয়ে চলছিলেন, অর্থাৎ: তাদের উপর হেলান দিয়ে দিয়ে হাঁটছিলেন। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার এই হাল দেখে জিজ্ঞাসা করলেন এই লোকের ব্যপার কি? যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং ক্লান্তি ও অবসাদে প্রায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে? তখন তারা উনাকে (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিল যে, তিনি পায়ে হেঁটে মহান আল্লাহ তা’আলার পবিত্র গৃহের হজ্জযাত্রা করার মানত করেছিলেন। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সেই বৃদ্ধের এই কাজটিকে অপছন্দ করেলেন এবং বল্লেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা কারোর নিজের উপর অত্যাচার করা এবং তা অর্পণ করা থেকে মুক্ত যে ব্যপারে সে সক্ষম নয়। তিনি, সর্বশক্তিমান, বলেনঃ (یُرِیۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ) মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান, যা কষ্টদায়ক তা চান না। (আল কুরআন ২/১৮৫) আর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সেই বৃদ্ধকে বাহনে আরোহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন; কারণ সে তার মানত পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছিলো না, এবং এটি একটি বিবৃতি যে, রবের ইবাদত আদায় করার উদ্দেশ্য এই নয় যে নিজের উপর অত্যাচার এবং নিজেকে অক্ষম করে দেওয়া, বরং আদেশ মেনে চলা এবং আনুগত্য করা, এবং সকলের জেনে রাখা উচিৎ যে, সৃষ্টির মালিকের চেয়ে জীবের প্রতি দয়ালু আর কেউ নেই, প্রশংসা ও মহিমা যতো কেবল উনারই।

অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সেই বৃদ্ধকে বাহনে আরোহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন মানে এই না যে পায়ে হেটে হজ্জ করা যাবেনা পায়ে হেটে হজ্জে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা থাকলে। এখন কথা হলো পায়ে হেটে যাওয়ার মানত সেই লোক কেনো করেছিলেন? এর কোন ভিত্তি কি আছে কুরআন সুন্নাহ'র মাঝে?

পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ) (ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে আরো আদেশ দিয়েছিলাম যে) আপনি মানুষের নিকট পবিত্র হজ্জের ঘোষণা (প্রচার করে) দিন। “যাতে করে তারা আপনার নিকট দূর-দূরান্তর থেকে পায়ে হেটে এবং (পথক্লান্ত) কৃশকায় উঠের পিঠে আরোহণ করে ছুটে আসে”(১)। (আল কুরআন ২২/২৭)

(১) (یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ) যাতে করে তারা আপনার নিকট দূর-দূরান্তর থেকে। এর দ্বারা কোন কোন ইমাম দলীল গ্রহণ করেছেন যে, যার ক্ষমতা রয়েছে তার জন্যে পায়ে হেটে হজ্জ করা সওয়ারীর উপর চড়ে হজ্জ করা অপেক্ষা উত্তম। কেননা, কুরআনুল কারীমে প্রথমে পদব্রজীদের উল্লেখ রয়েছে। অতঃপর সওয়ারীর কথা আছে। কাজেই পদব্রজের দিকে আকর্ষণ বেশী হলো এবং তাদের সাহসিকতার মর্যাদা দেয়া হলো, আর এর মূল কারণ হলো হযরত ইব্রাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমাস সালামদ্বয়ের সুন্নত ছিলো পায়ে হেটে হজ্জে আসা, একারণেই হযরত ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “আমার এ আকাংখ্যা থেকে গেল যে, যদি আমি পদব্রজে হজ্জ করতাম! কেননা, মহান আল্লাহ তা’আলার ঘোষণায় প্রথমে পদব্ৰজীদের উল্লেখ আছে। আবার অনেক ইমামের মত এই যে, সওয়ারীর উপর হজ্জ করাই উত্তম। কেননা, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণ ক্ষমতা সত্ত্বেও পদব্ৰজে হজ্জ করেন নাই। সুতরাং পায়ে হেটে হজ্জে গেলে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমাস সালামদ্বয়ের সুন্নত আদায় হবে আর সওয়ারীর উপর হজ্জ করলে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত আদায় হবে। (ইবনে কাসির, আত্ব-তাবারী)

অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে কারো যদি সামর্থ্য থাকে সে পায়ে হেটে গেলে সেটা আল্লাজীর নির্দেশ, ও দুই নবীর সুন্নত আদায় হবে, আর বাহনে উঠে চড়ে গেলে রসূলে পাঁক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত আদায় হবে, আর যারা বিমানে যাবে এরা সলাফিদের সুন্নত আদায় করবে যারা সব কিছুতে দুই লাইন বেশি বুঝে গুমরাহ হয়েছে। এদের উচিৎ দ্রুত তাওবা করে ঈমান ঋনু করা।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: