প্রথমেই বলে নেই, এই লিখা পড়ার সময় যদি আপনার মনে হয় এই লিখা আপনাকে আঘাত করছে, যদি মনে হয় লিখাটা যেনো আপনার উদ্যেশ্যেই লিখা হয়েছে, যদি দেখেন যে লিখাটা আপনার মনঃপুত হচ্ছেনা, তখন বুঝবেন আপনি নিম্নোক্ত কুরআন হাদিসের হুকুমের বিপরীতে জীবনযাপন করছেন। তবে এই লিখা পড়ে যদি আপনার আনন্দ হয় তাহলে নিচের কুরআন হাদিসের অনুসরণ হচ্ছে বলেই মনে করবেন।
আজকাল অনেকেই দেখা যাচ্ছে, বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। অনেকের ধারণা আমি যদি আমার নামায, রোজা, ঈমান আমল ঠিক রাখি, হালাল খাই তাহলেই হলো। আমি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে নিশ্চিন্ত, একা নিরাপদে থেকে ইসলাম পালন করলেই আমার আখেরাত সহজ হয়ে যাবে।
জি না এরূপ স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। বরং একতাবদ্ধ জীবন-যাপন করা ইসলামের মূল শিক্ষার একটি। একাকি জীবন-যাপনে রয়েছে নানাবিধ ঝুঁকি ও বিপদ। তা হতে পারে দুনিয়াবি আম কাজের ঝুঁকি আবার হতে পারে পরকালের জন্য দুনিয়াবি আমলি কাজের ঝুঁকি। একা একা দ্বীন পালন করতে গিয়ে কখন কীভাবে গুমরাহ হবেন টের ও পাবেন না।
জামায়াতবদ্ধ কোনো মানুষ যদি কোনো দোষ-ত্রুটি করে বসে তবে জামায়াতের অন্য লোক তাকে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেবে। জীবন চলার পথের নানাবিধ সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরবে এবং সমাধানও দেয়ার চেষ্টা করবে।
আপনি দৈনিক ১৭ রাকায়াত ফরজে, ১২ রাকআত সুন্নতে ২৯ বার সূরাহ ফাতেহা শরীফে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট বলে থাকেনঃ (اهْدِنَا الصِّرٰطَ الْمُسْتَقِيمَ) অর্থাৎ (হে আমার মালিক) আমাদেরকে সরল সঠিক (হেদায়েতের) পথ প্রদর্শন করুন ও তার প্রতি অটুট থাকার তাওফীক দান করুন। (আল কুরআন ১/৫)
খেয়াল করে দেখুন, ইমামের পেছনে বা একা যেই পাঠ করুক, বলতে হচ্ছে আমাদের, শিখানো হয়নি আমার। এর পরেও আপনার হুস হয়না?
এইযে সিরাতুল মুস্তাকিম আপনি প্রতিনিয়ত চাচ্ছেন এর ব্যপারে মহান আল্লাহ পাঁক কি বলেন জানুন, মহান আল্লাহ তা'আলা গ্যারান্টি দিচ্ছেনঃ (وَ مَنۡ یَّعۡتَصِمۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ هُدِیَ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ) আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা'আলাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে তাকে অবশ্যই সিরাতুল মুস্তাকিমের দিশা দেয়া হবে। (আল কুরআন ৩/১০১) আয়াতে “মহান আল্লাহ তা’আলাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা”র করার মানে কি? এর মানে হলোঃ মহান আল্লাহ তা’আলার দ্বীনকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করা এবং উনার ও উনার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যে গড়িমসি না করা। এটা কীভাবে সম্ভব? এই বিষয়ে মহান আল্লাহ তা’আলা এর পরের আয়াতেই জানিয়ে দিচ্ছেনঃ মহান আল্লাহ তা’আলা বলতেছেন ( یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ) হে মু’মিনগণ! মহান আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর যেমনভাবে উনাকে ভয় করা উচিত। (আর) তোমরা মুসলিম না হয়ে কক্ষনো মারা যেও না। (আল কুরআন ৩/১০২) মহান আল্লাহ তা’আলাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার জন্য যেটা করতে হবে সেটাই আল্লাহ পাঁক এই আয়াতে বলেছেন, যে তোমরা তাক্বওয়া হাসিল করো, এতেই বুঝা যায় যে, পূর্ণ ইসলামই প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তা’আলা ও উনার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ আনুগত্য করা এবং উনার অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার নামই হচ্ছে তাকওয়া অবলম্বন। বিনা চু চেরায় ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলা, দ্বীনের ফরজ-ওয়াজিব/সুন্নতে খাস কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করা এবং যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তার ধারে-কাছেও না যাওয়ার নামই মহান আল্লাহ তাআলার তাক্বওয়া হাসিল। এছাড়াও আয়াতের শেষে মুসলিম না হয়ে যেন কারও মৃত্যু না হয় সেটার উপর জোর দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সারা জীবন ইসলামের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাক, যাতে মৃত্যুও তার উপরেই হয়। ঐ মহান রবের অভ্যাস এই যে, মানুষ স্বীয় জীবন যেভাবে পরিচালিত করে ঐভাবেই তার মৃত্যু দিয়ে থাকেন। যার উপরে তার মৃত্যু সংঘটিত হবে ওর উপরেই কিয়ামতের দিন তাকে উথিত করবেন। (কিছু ইমামের মতে উপরোক্ত আয়াতটি (৬৪:১৬) আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে কিন্তু হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, এ আয়াতটি রহিত হয়ে যায়নি, আমিও এটাই মনে করি।) এখন এই যে ইসলামের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকার বিষয় তা কি একা একা দ্বীন পালন করে সম্ভব? কস্মিনকালেও সম্ভব না, আর একারণেই মহান আল্লাহ পাঁক এর ঠিক পরের আয়াতেই নির্দেশ দিচ্ছেনঃ (وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا) আর তোমরা সকলে মিলে (জামায়াতবদ্ধ ভাবে) মহান আল্লাহ তা’আলার রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (আল কুরআন ৩/১০৩) অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরো, আর এর আদেশ দিয়ে এ কথা পরিষ্কার করে দিলেন যে, মুক্তিও রয়েছে এই দুই মূল নীতির মধ্যে এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এই মূল নীতিরই ভিত্তিতে। এরপর বলছেন ‘‘পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’’ এর মাধ্যমে দলে দলে বিভক্ত হওয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ, উল্লিখিত দু’টি মূল নীতি থেকে যদি তোমরা বিচ্যুত হয়ে পড়, তাহলে তোমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং ভিন্ন ভিন্ন দলে তোমরা বিভক্ত হয়ে যাবে। বলাই বাহুল্য যে, বর্তমানে দলে দলে বিভক্ত হওয়ার দৃশ্য আমাদের সামনেই রয়েছে।
কুরআন ও হাদীস বোঝার এবং তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ নিয়ে পারস্পরিক কিছু মতপার্থক্য থাকলেও তা কিন্তু দলে দলে বিভক্ত হওয়ার কারণ নয়। এ ধরনের বিরোধ তো সাহাবী ও তাবেঈনদের যুগেও ছিল, কিন্তু তারা ফির্কাবন্দী সৃষ্টি করেননি এবং দলে দলে বিভক্ত হয়েও যাননি। কারণ, তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও সকলের আনুগত্য ও আকীদার মূল কেন্দ্র ছিল একটাই, আর তা হল, কুরআন এবং সুন্নাহ। কিন্তু যখন ব্যক্তিত্বের নামে চিন্তা ও গবেষণা কেন্দ্রের আবির্ভাব ঘটল, তখন আনুগত্য ও আকীদার মূল কেন্দ্র পরিবর্তন হয়ে গেল, আহলে সুন্নত থেকে সরে গিয়ে তখন খারেজী, শীআ, মুরজিয়া, নাসেবি, জাবরিয়া, কাদরিয়া, জাহমিয়া, মুতাযিলা, যার ধারাবাহিকতায় ওহাবি, থেকে ভাগ হয়ে বিদআতি সলাফি, আহলে হাদিস, দেওবন্দীর সৃষ্টি হয়, যার ফলে আপন আপন দলের গুরুজন এবং তাদের উক্তি ও মন্তব্যসমূহ প্রথম স্থান দখল করল এবং মহান আল্লাহ তা’আলা ও উনার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের বাণীসমূহ দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হল। আর এখান থেকেই মুসলিম উম্মাহর মাঝে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা শুরু হল; যা দিনে দিনে বাড়তেই লাগল এবং বড় শক্তভাবে বদ্ধমূল হয়ে গেল। অথচ তারা জানেইনা যে কুরআন সুন্নাহে তাদের এরূপ কাজের ফলাফল নির্ধারণ করেছেন মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে, যেমন মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (مُنِیۡبِیۡنَ اِلَیۡهِ وَ اتَّقُوۡهُ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ مِنَ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَهُمۡ وَ کَانُوۡا شِیَعًا ؕ کُلُّ حِزۡبٍۭ بِمَا لَدَیۡهِمۡ فَرِحُوۡنَ) সবাই বিশুদ্ধ চিত্তে উনারই অভিমুখী হয়ে উনাকেই ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা, যারা নিজদের দ্বীনের (মধ্যে) মতভেদ সৃষ্টি করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। আর (এসব) প্রত্যেক দলই (তাদের) নিজের মতবাদ নিয়ে উল্লসিত। (আল কুরআন ৩০/৩১-৩২) অতএব স্পষ্ট বোঝা গেলো, যারাই উনার পথ তথা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ ছেঁড়ে নিজের পথ বানিয়ে নেবে পূর্বের নির্ধারিত পথ ছেঁড়ে তারা যতো উল্লসিতই হোক না কেনো তারা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
এছাড়াও কেবল দলে দলে বিভক্তই নিষিদ্ধ নয়, সাথে এও বলা হয়েছে যারা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকবে তারা যেন পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়। অর্থাৎ একা একা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে হাটার চেষ্টা করা যাবেনা। যেখানেই থাকো না কেনো সেখানের সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকা মানুষের সাথে মিলেমিশে জীবনযাপন করো।
হাদিসে পাকে প্রিয়নবি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম জামায়াতবদ্ধ জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। একতাবদ্ধ জীবন-যাপনকারী ব্যক্তি একাকি জীবন-যাপনকারী ব্যক্তির তুলনায় অনেক গুণ বেশি নিরাপদ। হজরত মুয়াজ ইবনু জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মেষপালের নেকড়ে বাঘের মতো শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে বাঘস্বরূপ। যে মেষপালের মধ্য থেকে একটি মেষ দল থেকে আলাদা থাকে অথবা খাদ্যের সন্ধানে একাকি দূরে চলে যায় অথবা যে মেষ অলসতাবশত দল ছেড়ে এক প্রান্তে পড়ে থাকে, সেটিকে নেকড়ে বাঘ ওঠিয়ে নিয়ে যায়। সাবধান! তোমরা কখনো জামায়াত ছেড়ে একাকি দুর্গম পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে চলবে না। সুতরাং সব সময় জামায়াত তথা মুসলিম জনসাধারণের সঙ্গে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত ১৮৪)
হাদিসের আলোকে মুসলিম উম্মাহ জামায়াতবদ্ধ জীবন যাপন করবে। তা যে কোনো জনপদেই হোক না কেন। এমনকি যদি কোনো সমাজে বা জনপদে মাত্র ৩জন লোকও থাকে; তবে তারা যেন একজনকে নেতা বানিয়ে পরামর্শের আলোকে জীবন পরিচালনা করে।
রাসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘৩জন লোকও যখন জনমানবহীন মরুভূমিতে থাকবে তখন তাদের একজনকে নেতা নিযুক্ত করে তার অনুসরণ না করে বিচ্ছিন্ন থাকা বৈধ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ)
অন্য হাদিসে এসেছে সফরের সময়ও একাধিক ব্যক্তির দল হলে একজনকে নেতা বানিয়ে জামায়াতবদ্ধভাবে সফর করা। রাসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিনজন লোক যখন কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে তখন অবশ্যই একজনকে নেতা বানিয়ে নেবে”। (হাদিগুলি দেখুন এইখানে)
অতএব আপনি কোন অবস্থায় একা একা দ্বীন পালন করতে পারবেন না, এতে আপনার আক্বিদাহ বিশ্বাস যতো বিশুদ্ধই থাকুক না কেনো, সকালে কাজে যান রাতে বাসায় ফিরেন, পরিবার নিয়ে যদি হালাল খান, ৫ ওয়াক্ত এর যায়গায় তাহাজ্জুদ সহ ৬ ওয়াক্ত জামাআতে পড়েন, সকাল বিকাল দূরুদ, তাসবিহ তাহ্লিল যিকরে মত্ত থাকেন তাহলেও আপনি উপরোক্ত কুরআন হাদিসের অস্বীকারকারী বলেই গন্য হবেন, আরেকটি বিষয় হলো, আপনার পরিবারে যতো মানুষই থাকুক, সেটা জামায়াত বলে গন্য হবেনা।
আপনি যেখানেই থাকুন, সেটা অ্যামাজনের মধ্যে থাকা জংলীদের মিল্লাত হোক, কিংবা ইউরোপ অ্যামেরিকার এমন কোন রাজ্য যেখানে আর কোন মুসলমান ই নাই, ইন্টারনেট নাই, এরূপ অবস্থায় আপনাকে সেখানে দ্বীনের দাঈ হয়ে মুসলিম মিল্লাত তথা জামায়াতের সৃষ্টি করা লাগবে, করে জামায়াতবদ্ধ হয়ে জীবনযাপন করা লাগবে। ইসলাম একা পালনের কোন দ্বীন নয়। আর ইন্টারনেট থাকলে তো সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে থাকা সারা দুনিয়ার মানুষের সাথে জামায়াতবদ্ধ হওয়ার আছে বিশেষ সুযোগ। আপনাকে জামায়াতবদ্ধ থাকাই লাগবে, সেটা ৩ পরিবারের তিন জন হলেও। এর মানে এটা নয় যে আপনি একটি আলাধা দল তৈরি করবেন সলাফি, আহলে হাদিস, দেওবন্দি কিংবা শিয়াদের মতো। বরং আপনি ৩/৫/১০ জনের হলেও একটি জামায়াত বানিয়ে শলাপরামর্শের মাধ্যমে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মত পথ অনুসরণ করে জীবনযাপন করবেন। কারণ মহান আল্লাহ তাআলার যাবতীয় রহমত, কল্যাণ ও সৌভাগ্য লাভের মূল কারণ হচ্ছে মুসলিমদের জামাতবদ্ধ জীবনযাপন। কারণ বড় কোন সমস্যাও তখন ছোট হয়ে যায়, কঠিন হলে সহজ হয়ে যায়, বিপদ হলে দূর হয়ে যায় এবং জটিলতায় তা নিরসন করে দেয়। পক্ষান্তরে কারো কাছ থেকে রহমত ছিনিয়ে নেওয়া হলে তা তার জন্য প্রতিশোধ ও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর রহমত কেবলই মহান আল্লাহ তাআলার ইখতিয়ারে রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (مَا یَفۡتَحِ اللّٰهُ لِلنَّاسِ مِنۡ رَّحۡمَۃٍ فَلَا مُمۡسِکَ لَهَا ۚ وَ مَا یُمۡسِکۡ ۙ فَلَا مُرۡسِلَ لَهٗ مِنۡۢ بَعۡدِهٖ ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ) মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা আটকে রাখার কেউ নেই। আর তিনি যা আটকে রাখেন, তারপর তা ছাড়াবার কেউ নেই। (ফাতির ৩৫/২)। আর জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্নতা মানুষকে মহান আল্লাহ তা’আলার রহমত থেকে বের করে আযাবের দিকে নিয়ে যায়। যেমন, নুমান ইবনে বশীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বসে ইরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি ছোটো জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ নয়, সে বড় জিনিসের জন্যও কৃতজ্ঞ হবে না। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয় সে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়। আর মহান আল্লাহ তা’আলার নিয়ামতের যিকর করা হল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সেগুলিকে উপেক্ষা করা হল অকৃতজ্ঞতা। আর জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাস রহমত স্বরূপ এবং বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করা আযাব স্বরূপ। (মুসনাদে আহমদ ১৭৯৮২)
অতএব জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে শাস্তি আবশ্যক হওয়া জামা‘আতবদ্ধভাবে বসবাসের কারণে রহমত আবশ্যক হওয়ার মতোই। হাদিস শরীফে বর্ণিত দু’টি বিপরীত জিনিস (রহমত ও আযাব) থেকে এটাই বুঝা যায়। আবার কখনো কখনো জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাওয়াই শেষ পরিণাম অশুভ হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের (অবস্থায়) মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নের্তৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ করে গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির কোন ব্যাপার সেখানে থাকেনা) আর তাতে নিহত হয়, সেও জাহেলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করে। (মুসলিম শরীফ ১৮৪৮এ, নাসাঈ শরীফ ৪১১৪, মিশকাত শরীফ ৩৬৬৯) তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের গন্ডি ছিন্ন করল’। নাউজুবিল্লাহ!!! (আবু দাঊদ শরীফ ৪৭৫৮, মিশকাত আল মাসাবিহ ১৮৫, মিশকাত শরীফ ৩৬৯৪) অনুরূপভাবে রহমত জামা’আতকে আঁকড়ে ধারণকারীকে জান্নাতের কেন্দ্রস্থলে পোঁছে দেয়, তেমনিভাবে আযাব জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ব্যক্তিকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। আরফাযা ইবন শুরায়হ্ আশজা‘ঈ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে মিম্বরের উপর লোকদের উদ্দেশ্যে নসিহত করতে দেখেছি। তিনি বলছিলেনঃ আমার পরে অনেক ফিতনা দেখা দেবে, এসময় তোমরা যাকে দেখবে মুসলমানদের দল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, অথবা উম্মতে মুহাম্মদীর (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে; সে যে-ই হোক না কেন, তাকে হত্যা করবে। কেননা মহান আল্লাহ তা’আলার রহমতের হাত মুসলমানদের জামাআতের উপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি জামা’আত থেকে পৃথক হয়ে যায়, শয়তান তার সাথী হয় এবং তাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেয়। (নাসাঈ শরীফ ৪০২০, তিরমিযি শরীফ ২১৬৬)
আশাকরি এর পর আর কিছুই বলার প্রয়োজন নাই জ্ঞানীদের উদ্যেশ্যে। মহান আল্লাহ পাক আমাদের ৩ জনের একটি দল নিয়ে হলেও যেনো জামায়াতবদ্ধ হয়ে আহলে সুন্নতের মতে পথে চলার ব্যবস্থা করে দেন। আমিন।
0 ফেইসবুক: