Monday, January 29, 2024

ছবি তোলে হজ্জ করা নাযায়েজ নামক রাজারবাগি মুশরিকদের মনগড়া ফতওয়া বনাম কুরআন সুন্নাহ

রাজারবাগের সাথে যুক্ত থাকা ৩.৫ বছরে (২০১৪-২০১৮) তাদের এই মনগড়া দাবির পক্ষে কুরআন হাদিসের অনেক অপব্যাখা দেখেছিলাম, মূলত কুরআন সুন্নাহ অধ্যায়ন না করে, তাদের কথাবার্তা যাচাই বাছাই না করে, বাহিরের সূরত দেখে বিলিভ করেই ঠকেছিলাম। ২০১৯ সালে যখন তাদের হক্বিকত প্রকাশ হতে লাগলো আমার নিকট, আর আমিও কুরআন হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ সহ সারা পৃথিবীর মশহুর আলিম উলামার বিভিন্ন বিষয়ে মত কি, এর দ্বারা তাদের প্রত্যেক্টি জিনিস যাচাই করতে লাগলাম, তখন বুঝলাম যে কুয়ার বেঙ রাজারবাগি মুশরিক কথিত গবেষক মুরিদেরা কতো বড় জাহিল আর অপব্যাখ্যাকারি।

///তাদের দাবী হলো, “সূরাহ বাক্বারার ১৯৭” নং আয়াতে আল্লাহ পাঁক হজ্জের সময় ফাসেকি কাজ নাযায়েজ ঘোষণা করেছেন, তাই ছবি তোলে হজ্জ নাযায়েজ, কারণ ছবি তোলা হারাম। শুধু তাই না তাদের মনগড়া বাণী হচ্ছেঃ ছবি তোলা, আকা, রাখা, দেখাও হারাম।///

এইযে হাস্যকর দাবী তারা ভ্রান্ত ব্যাখ্যার মাধ্যমে করে থাকে, তাই তাদের এই মনগড়া যুক্তিহীন দাবির বিপরীতে কুরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যা কি তা জানা প্রয়োজন, কারণ হজ্জ পবিত্র দ্বীন ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ।

আপনারা কি মনে করেন রাজারবাগিরা ছবি তোলে না? না এটা ভুল কথা, তাঁরা অহরহ ছবির মধ্যেই জীবনযাপন করছে, ছবি ছাড়া তাদের ব্যবসা অচল। (রাজারবাগিরা কি তাদের ফতওয়ায় যে ছবি ব্যবহার করা হারাম তা ব্যবহার করেনা?)

প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত হাদিছগুলি পড়লে আমরা বুঝতে পারি যে, “ছবি তোলা, আক্বা, রাখা, দেখাও হারাম” নামক দাবী পুরটাই বানোয়াট ছবি অংকন করা ছাড়া। কারণ আমরা হাদিছ শরীফের মধ্যে পাচ্ছি যে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা য়ালাইহাছ ছালামের ব্যাপারে অনেক হাদিস শরীফ মওজুদ, যেখানে বার বার বিভিন্ন সময় রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম তিনি উনাকে (আম্মাজানকে) ছবি ওয়ালা গদি, পর্দা, বালিশ ব্যবহারে পেয়েছেন, রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম একবার ও বলেন নাই যে তুমি ব্যবহারকারী হিসেবে যাহান্নামি, হারাম কাজে লিপ্ত, বরং যে এসব তৈরি করেছে তার ব্যপারে সকল হাদিসেই এসেছে যে, “সে-ই কেবল কিয়ামতের মাঠে সবচেয়ে বেশি শাস্তির অধিকারী হবে, যে এইসব তৈরি করেছে”। তাহলে রাজারবাগি কাজ্জাবেরা যে বলে প্রাণীর ছবি রাখা,দেখা, হারাম এটার ভিত্তি কি? এটার কোন ভিত্তি নাই, বরং এটা বিশ্বাস করলে আম্মাজান সিদ্দিকা য়ালাইহাছ ছালাম উনার উপর হারাম কাজের অপবাদ আরোপিত হবে।

তাহলে কি যেসব ছবি তৈরি করা হারাম তা যে কেউ ঘরে/বাহীরে ব্যবহার করতে পারবে? না পারবেনা, কারণ যেসব ছবির কারণে রহমতের ফেরেশতাগণ ঘরে প্রবেশ করবেন না সেসব পরিত্যাগ করতে হবে, পরিত্যাগ সম্ভব না হলে চেহারা বিকৃত করে, কেটে/ছিড়ে ফেলে দিতে হবে, যা খোদ রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম করেছিলেন।

রইলো হজ্জের জন্য ভিসা, পাসপোর্টের ছবি তোলার বিষয়ঃ তো আমরা প্রাণীর ছবি সম্পর্কিত লিখায় অলরেডী জেনে গেছি যে পৃথিবীর অধিকাংশ আলিম উলামা ডিজিটাল ছবিকে হারাম মনেই করেন না, সেখানে হজ্জের জন্য তো যেকোন ছবিই যায়েজ তাদের নিকট, আর যারা অঙ্কিত ছবির মতো প্রিন্ট করা ডিজিটাল ছবিও হারাম মনে করেন তারাও হজ্জের জন্য তোলা ছবিকে যায়েজ মনে করেন।

এবার দেখি হজ্জে যেতে কি কি লাগেঃ বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়-এর তথ্য অনুসারে এবং সৌদিয়া অনুসারে হজ্জে যেতে ১৮+ হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং ১ কপি রঙ্গিন ছবি লাগবে। আর ১৮- হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের যায়গায় জন্ম নিবন্ধন।

এছাড়াও যা জানা গেলো তা হলো, হজ্জের ভিসার জন্যে কয়েকমাস আগেই এইসব দিয়ে এপ্লাই করতে হবে।

এবার আসুন যে আয়াতের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দ্বারা “ছবি তোলে হজ্জ করা যায়েজ নয়” বলে যে দাবী করে, তা কতটুকু সত্য। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَّعْلُومَاتٌ فَمَن فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلاَ رَفَثَ وَلاَ فُسُوقَ وَلاَ جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللّهُ وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَا أُوْلِي الأَلْبَابِ) পবিত্র হজ্জ্বের জন্য নির্ধারিত কয়েকটি মাস রয়েছে। (১) এসব মাসে যে লোক পবিত্র হজ্জ্বের পরিপূর্ণ নিয়ত করবে, তার জন্য পবিত্র হজ্জের মধ্যে স্ত্রী সহবাস জায়েজ নয়। (২) জায়েজ নয় কোনো ফাসেকি কাজ করা (৩) এবং ঝাগড়া-বিবাদ করাও পবিত্র হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ নয়। (৪) আর তোমরা যাকিছু সৎকাজ কর, মহান আল্লাহ তা’আলা-তো তা জানেনই (হজ্জের নিয়ত করলে) (৫) এর জন্যে তোমরা পাথেয় যোগাড় করে নেবে। (৬) নিঃসন্দেহে তাকওয়া (মহান আল্লাহ তা’আলার ভয়) হচ্ছে (মানুষের) সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয়। আর আমার ভয়(তাকওয়া অবলম্বন) করতে থাকো, অতএব হে জ্ঞানী লোকেরা, তোমরা আমাকেই ভয় করো। (৭)

হজ্জের হুকুম আহকাম সম্পর্কে নাযিলকৃত উপরোক্ত আয়াত শরীফে ৭ টি বিষয় পাওয়া যায়। আমরা এখানে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ রিলেটেড বিষয়ে আলোচনা করবো।

আয়াত শরীফের ব্যখা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ

১) যারা পবিত্র হজ্ব অথবা উমরা করার নিয়্যতে এহ্‌রাম বাঁধেন, তাদের উপর এর সকল অনুষ্ঠানক্রিয়াদি সম্পন্ন করা ওয়াজিব হয়ে পড়ে। এ দু'টির মধ্যে উমরার জন্য কোন সময় নির্ধারিত নেই। বছরের যে কোন সময় তা আদায় করা যায়। কিন্তু পবিত্র হজ্বের মাস এবং এর অনুষ্ঠানাদি আদায়ের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কাজেই এ আয়াত শরীফের শুরুতেই বলে দেয়া হয়েছে যে, পবিত্র হজ্বের ব্যাপারটি উমরার মত নয়। এর জন্য কয়েকটি মাস রয়েছে, সেগুলো প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত। আর তা হচ্ছে শাওয়াল, যিল্‌ক্বদ ও জিলহজ্ব। পবিত্র হজ্বের মাস শাওয়াল হতে আরম্ভ হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এর পূর্বে পবিত্র হজ্বের এহ্‌রাম বাঁধা জায়েয নয়।

২) (رفث) , ‘রাফাস’ একটি ব্যাপক শব্দ, যাতে স্ত্রী সহবাস ও তার আনুষাঙ্গিক কর্ম, স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা, এমনকি খোলাখুলিভাবে সহবাস সংক্রান্ত আলাপ আলোচনাও এর অন্তর্ভুক্ত। এহ্‌রাম অবস্থায় এ সবই হারাম। হাদীছ শরীফে এসেছে, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ এমনভাবে পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করবে যে, তাতে ‘রাফাস’, ‘ফুসূক’ ও ‘জিদাল’ তথা অশ্লীলতা, পাপ ও ঝগড়া ছিল না, সে তার হজ্জ থেকে সে দিনের ন্যায় ফিরে আসল যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিলেন”। (বুখারী শরীফঃ ১৫২১, মুসলিম শরীফ ১৩৫০)

৩) (فسوق) ‘ফুসুক’ এর শাব্দিক অর্থ বের হওয়া। আল কুরআনের পরীভাষায় নির্দেশ লংঘন বা নাফরমানী করাকে ‘ফুসুক’ বলা হয়। সাধারণ অর্থে যাবতীয় পাপকেই ফুসুক বলে। তাই অনেক ইমাম এস্থলে সাধারণ অর্থই নিয়েছেন, কিন্তু আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদিয়াল্লাহু আনহু ‘ফুসুক’ শব্দের অর্থ করেছেনঃ সে সকল কাজ-কর্ম যা এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ। স্থান অনুসারে এ ব্যাখ্যাই যুক্তিযুক্ত। কারণ সাধারণ পাপ এহ্‌রামের অবস্থাতেই শুধু নয়; বরং সবসময়ই নিষিদ্ধ। যে সমস্ত বিষয় প্রকৃতপক্ষে নাজায়েয ও নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু এহরামের জন্য নিষেধ ও নাজায়েয, তা হচ্ছে ছয়টিঃ

(১) স্ত্রী সহবাস ও এর আনুষাঙ্গিক যাবতীয় আচরণ; এমনকি খোলাখুলিভাবে সহবাস সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা।

(২) স্থলভাগের জীব-জন্তু শিকার করা বা শিকারীকে বলে দেয়া।

(৩) নখ বা চুল কাটা।

(৪) সুগন্ধি দ্রব্যের ব্যবহার। এ চারটি বিষয় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্যই এহ্‌রাম অবস্থায় হারাম বা নিষিদ্ধ। অবশিষ্ট দুটি বিষয় পুরুষের সাথে সম্পৃক্ত।

(৫) সেলাই করা কাপড় পোষাকের মত করে পরিধান করা।

(৬) মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা।

আলোচ্য ছয়টি বিষয়ের মধ্যে স্ত্রী সহবাস যদিও ‘ফুসুক’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত, তথাপি একে 'রাফাস' শব্দের দ্বারা স্বতন্ত্রভাবে এজন্যে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, এহ্‌রাম অবস্থায় এ কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এর কোন ক্ষতিপূরণ বা বদলা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। কোন কোন অবস্থায় এটা এত মারাত্মক যে, এতে পবিত্র হজ্জই বাতিল হয়ে যায়। অবশ্য অন্যান্য কাজগুলোর কাফ্‌ফারা বা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আরাফাতে অবস্থান শেষ হওয়ার পূর্বে স্ত্রী সহবাস করলে পবিত্র হজ্ব ফাসেদ হয়ে যাবে। গাভী বা উট দ্বারা এর কাফ্‌ফারা দিয়েও পরের বছর পুনরায় হজ্ব করতেই হবে। এজন্যেই (فَلَا رَفَثَ) শব্দ ব্যবহার করে একে স্বতন্ত্রভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

৪) (جدال) শব্দের অর্থ একে অপরকে পরাস্ত করার চেষ্টা করা। এ জন্যেই বড় রকমের বিবাদকে (جدال) বলা হয়। এ শব্দটিও অতি ব্যাপক। কোন কোন ইমাম এস্থলে ‘ফুসুক’ ও ‘জিদাল’ শব্দদ্বয়কে সাধারণ অর্থে ব্যবহার করে এ অর্থ নিয়েছেন যে, ‘ফুসুক’ ও ‘জিদাল’ সর্বক্ষেত্রেই পাপ ও নিষিদ্ধ, কিন্তু এহরামের অবস্থায় এর পাপ গুরুতর। পবিত্র দিনসমূহে এবং পবিত্র স্থানে, যেখানে শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার ইবাদাতের জন্য আগমন করা হয়েছে এবং ‘লাব্বাইকা লাব্বাইকা' বলা হচ্ছে, এহরামের পোষাক তাদেরকে সবসময় এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, তোমরা এখন ‘ইবাদাতে ব্যস্ত, এমতাবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি অত্যন্ত অন্যায় ও চরমতম নাফরমানীর কাজ। (মা’রিফুল কুরআন)

(৫) ইহরামকালে নিষিদ্ধ বিষয়াদি বর্ণনা করার পর উল্লেখিত বাক্যে হিদায়াত করা হচ্ছে যে, পবিত্র হজ্জের সময় ও স্থানগুলোতে শুধু নিষিদ্ধ কাজ থেকেই বিরত থাকা যথেষ্ট নয়, বরং সুবর্ণ সুযোগ মনে করে মহান আল্লাহ তা’আলার যিক্‌র ও ইবাদাত এবং সৎকাজে সদা আত্মনিয়োগ কর। তুমি যে কাজই কর না কেন, মহান আল্লাহ তা'আলা তা জানেন। আর এতে তোমাদেরকে অতি উত্তম প্রতিদানও দেয়া হবে।

(৬) এ আয়াতে ঐ সমস্ত ব্যক্তির সংশোধনী পেশ করা হয়েছে যারা পবিত্র হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য নিঃস্ব অবস্থায় বেরিয়ে পড়ে। অথচ দাবী করে যে, আমরা আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করছি। পক্ষান্তরে পথে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়। নিজেও কষ্ট করে এবং অন্যকেও পেরেশান করে। তাদেরই উদ্দেশ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, পবিত্র হজ্জের উদ্দেশ্যে সফর করার আগে প্রয়োজনীয় পাথেয় সাথে নেয়া বাঞ্ছনীয়, এটা তাওয়াক্কুলের অন্তরায় নয়। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করার প্রকৃত অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক প্রদত্ত আসবাব পত্র নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সংগ্রহ ও জমা করে নিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার উপর ভরসা করা। রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম থেকে তাওয়াক্কুলের এই ব্যাখ্যাই বর্ণিত হয়েছে।

(৭) অর্থাৎ যারা জ্ঞানী, তাঁরা আমার উপদেশ মানো, আমার শাস্তি, আমার পাকড়াও, আমার লাঞ্ছনা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। কেননা, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে চলে না, আমার নিষেধ থেকে দূরে থাকে না তাদের উপর আমার আযাব অবধারিত।

√ পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফঃ আয়াত শরীফ ১৯৭।

এবার আসি মুশরিক রাজারবাগিদের মনগড়া ফতওয়া ছবি তুলে হজ্জ নাযায়েজ এর খণ্ডনে।

যে আয়াত শরীফের রেফারেন্সে তারা তাদের মনগড়া দাবী করে থাকেঃ “মহান আল্লাহ পাঁক হজ্জের সময় ফাসেকি কাজ করতে নিষেধ করেছেন, আর ছবি তোলা ফাসেকি কাজের অন্তর্ভুক্ত” অথচ সেই আয়াত শরীফের ব্যাখ্যা থেকেই আমরা জানলাম যেঃ হজ্জের ইহরাম বাধার পরে “স্ত্রী সহবাস, যেকোন ফাসেকি কাজ, ঝাগড়া-বিবাদ” জায়েজ নয়।

এখন কি রাজারবাগিরা হজ্জের ইহরাম বাধার আগেঃ স্ত্রী সহবাস, স্থলভাগের জীব-জন্তু শিকার করা বা শিকারীকে বলে দেয়া, নখ বা চুল কাটা, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা কাপড় পোষাকের মত করে পরিধান করা, মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করাকেও হারাম মনে করে নাকি? ব্রেইনলেস রাজারবাগিরা কি এই নুন্যতম জ্ঞান ও অর্জন করেনাই? অথচ হজ্জের সময় এইসব যায়েজ বিষয় ও নাযায়েজ।

এর মধ্যে স্ত্রী সহবাস এর কেবল কোন কাফফারা নাই, স্ত্রী সহবাস করলে হজ্জের কাজা আদায় প্লাস কাফফারা ওয়াজিব, বাকি ফাসেকি ও ঝগড়া বিবাদের কাফফারা দিলেই হজ্জের ক্ষতি পুষে যায়, অর্থাৎ কৃত হজ্জ বাতিল হয়না।

ব্রেইনলেস রাজারবাগিদের নিকট জানতে চাই, পাসপোর্ট এর মধ্যে যে ছবি থাকে, ভিসার জন্য যে এক কপি ছবি তোলা হয়, এইসব কি ইহরাম বাধার আগেই সম্পাদিত হয় নাকি ইহরাম বাধার পরে? ইহরামের আগে যত গুনাহই মানুষ করে থাকুক না কেনো, মক্ববুল হজ্জ তার সমস্থ গুনাহকে মিটিয়ে দেবে, হাদিস শরীফে এসেছেঃ যে কেউ এমনভাবে পবিত্র হজ্জ সম্পাদন করবে যে, তাতে ‘রাফাস’, ‘ফুসূক’ ও ‘জিদাল’ তথা অশ্লীলতা, পাপ ও ঝগড়া ছিল না, সে তার হজ্জ থেকে সে দিনের ন্যায় ফিরে আসল যেদিন তাকে তার মা জন্ম দিয়েছিলেন”। (বুখারী শরীফঃ ১৫২১, মুসলিম শরীফ ১৩৫০) এছাড়াও আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, পবিত্র কা’বার দিকে নিজের বাড়ি থেকে তোমার বের হওয়াতে, তোমার বাহনের প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তা’আলা একটি করে সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন এবং একটি করে পাপ মোচন করবেন। আরাফায় অবস্থানকালে মহান আল্লাহ তা’আলা নিচের আসমানে নেমে আসেন (অর্থাৎ উনার রহমতে খাস নেমে আসেন) এবং তাদের (হাজীদের) ব্যপারে ফিরিশতা য়ালাইহিমুছ ছালামগণের নিকট গর্ব করেন। বলেন, ‘আমার ঐ বান্দাগণ আলুথালু কেশে ধূলামলিন বেশে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে আমার কাছে এসে আমার রহমতের আশা করে এবং আমার আযাবকে ভয় করে, অথচ তারা আমাকে দেখেনি। তাহলে তারা আমাকে দেখলে কি করত?

সুতরাং তোমার যদি বালির পাহাড় অথবা পৃথিবীর বয়স অথবা আকাশের বৃষ্টি পরিমাণ গোনাহ থাকে, মহান আল্লাহ তা’আলা তা ধৌত করে দেবেন। পাথর মারার সওয়াব তোমার জন্য জমা থাকবে। মাথা নেড়া করলে প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে একটি করে সওয়াব লিখা হবে। অতঃপর কা’বাগৃহের তওয়াফ করলে তুমি তোমার পাপরাশি থেকে সেই দিনের মত বের হবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিলেন। (ত্বাবারানী শরীফঃ ১৩৩৯০, সহীহুল জামেঃ ১৩৬০) অর্থাৎ একজন মানুষ যতো পাপ সাথে নিয়েই আসুক, হজ্জের ইহরাম বেঁধে ফেলার পরে যদি সে আর কোন গুনাহ না করে তাহলে তার সকল গুনাহ এমনভাবে ডিলিট করে দিবেন আল্লাহ পাঁক যেমন সে ছিলো তার মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্টের দিন।

অতএব প্রমাণিত হলোঃ রাজারবাগি মুশরিকদের ব্যাখ্যা অনুসারে ছবি তোলা যদি ফাসেকির অন্তর্ভুক্ত কাজ হয়েও থাকে, তাহলেও তা একজন মুসলিম করছে প্রায় ১ বছর আগে, অথচ শাওয়াল, যিল্‌ক্বদ ও জিলহজ্ব শরিফদ্বয়ের তিন মাসেই কেবল ইহরাম বাঁধা যায়েজ, শাওয়াল শরীফের আগে হজ্জের ইহরাম বাঁধাই যায়েজ না। আমরা দেখি অনেকেই রমজান শরীফে হজ্জে চলে যান, আর শাওয়াল মাসে বা হজ্জের আগে ইহরাম বাঁধেন। তো ব্রেইনলেস মুশরিক রাজারবাগিরা কি তাদের উপর উক্ত আয়াতের হুকুমগুলি প্রয়োগ করা যায়েজ মনে করে নাকি?

অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে ছবি তোলা নাযায়েজ হোক কিংবা যায়েজ, ছবি তোলে হজ্জ করায় হজ্জের কোন ক্ষতিই নাই কুরআন, সুন্নাহ, হাদিস, সাহাবী ও ফুকাহায়ে কেরাম উনাদের ব্যাখ্যা অনুসারে।

এবার আসি, ব্রেইনলেস মুশরিক রাজারবাগিরা ও তাদের কথিত পির দিল্লুর লানতুল্লাহ এর হজ্জ না করে কুয়ায় বসে নিজেকে মুসলিম দাবির ব্যপারে।

দিল্লুর রহমান ১৯৮৬ সালে রাজারবাগে তার পৈত্রিক বাড়িতে ‘তাসাউফের দরবার’ প্রতিষ্ঠা করে। সেই সময়ই তার উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে, চাইলে সে তখনই ছবি না তুলে হজ্জ আদায় করতে পারতো, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক দিল্লুর তখন ফিনান্সিয়ালি, ফিজিক্যালি সব দিক দিয়েই ছিলো পারফেক্ট, চাইলেই সে ১৯৭২ থেকে ছবির ক্যামেরার ব্যাপক প্রচলন শুরুর আগেই ছবি না তুলে হজ্জ করতে পারতো, কিন্তু করেনাই। এই না করার ব্যপারে কুরআন সুন্নাহর হুকুম কি?

মহান আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক সামর্থবান মানুষের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ) এবং (প্রত্যেক) সামর্থ্যবান মানুষের ওপর মহান আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্জ (আদায়) করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে (তার জেনে রাখা প্রয়োজন যে) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা সমস্ত সৃষ্টিকুলের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী। (আল কুরআন ৩/৯৭)

আব্দুল্লাহ ইবন উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেনঃ (وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ) ইসলামের ভিত রাখা হয়েছে পাঁচটি বস্তুর ওপর অথবা ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের উপর দন্ডায়মানঃ ১) মহান আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ/মাবুদ/ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই, এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম আল্লাহ তা’আলার রছুল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা। ২) নামায কায়িম করা। ৩) যাকাত প্রদান করা। ৪) হজ্জ সম্পাদন করা এবং ৫) রমযান মাসের রোজা রাখা। (মুসলিম শরীফ ৬১, বুখারি শরীফ )।

সুতরাং হজ্জ ফরয হওয়ার বিধান কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এ-ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত। আর সামর্থবান ব্যক্তির ওপর সারা জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ.فَقَامَ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ فَقَالَ : أَفِى كُلِّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ : لَوْ قُلْتُهَا لَوَجَبَتْ ، وَلَوْ وَجَبَتْ لَمْ تَعْمَلُوا بِهَا ، وَلَمْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْمَلُوا بِهَا. الْحَجُّ مَرَّةٌ فَمَنْ زَادَ فَتَطَوُّعٌ) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে লোক সকল, মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন আকরা ইবন হাবিস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ তা’আলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম, প্রত্যেক বছর? তিনি বললেন, ‘আমি বললে অবশ্যই তা ফরয হয়ে যাবে। আর যদি ফরয হয়ে যায়, তবে তোমরা তার ওপর আমল করবে না এবং তোমরা তার ওপর আমল করতে সক্ষমও হবে না। হজ্জ একবার ফরয। যে অতিরিক্ত আদায় করবে, সেটা হবে নফল। (মুসলিম শরীফ ১৩৩৭, মুসনাদে আহমদঃ ৪০২২, ইবন মাজাহ শরীফঃ ৬৮৮২)।

আর সক্ষম ব্যক্তির ওপর বিলম্ব না করে হজ্জ করা জরুরী। কালক্ষেপণ করা মোটেই উচিত নয়। এটা মূলত শিথিলতা ও সময়ের অপচয় মাত্র। ইবন আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেনঃ (تَعَجَّلُوا إِلَى الْحَجِّ - يَعْنِي : الْفَرِيضَةَ - فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لاَ يَدْرِي مَا يَعْرِضُ لَهُ) তোমরা বিলম্ব না করে ফরয হজ্জ (দ্রুত) আদায় কর। কারণ তোমাদের কেউ জানে না, কী বিপদাপদ তার সামনে আসবে। (মুসনাদে আহমদ শরীফঃ ৭৬৮২; ইবন মাজাহ্শরীফ ৩৮৮২)

উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ (لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ أَبْعَثَ رِجَالًا إلَى هَذِهِ الْأَمْصَارِ فَيَنْظُرُوا كُلَّ مَنْ لَهُ جَدَةٌ وَلَمْ يَحُجَّ فَيَضْرِبُوا عَلَيْهِ الْجِزْيَةَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ مَا هُمْ بِمُسْلِمِينَ) ‘আমার ইচ্ছা হয়, ঐসকল শহরে আমি লোক প্রেরণ করি, তারা যেন (খুঁজে) দেখে কে সামর্থবান হওয়ার পরও হজ্জ করেনি। অতঃপর তারা তার ওপর জিযিয়া (কর বা ট্যাক্স) আরোপ করবে। কারণ, তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়।’ (ইবন হাজার আসকালানি রহমতুল্লাহ, আত-তালখীসুল হাবীরঃ ২/২২৩) উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেনঃ (لِيَمُتْ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا- يَقُولُهَا ثَلَاثَ مَرَّات-ٍ رَجُلٌ مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ وَوَجَدَ لِذَلِكَ سَعَةً) (তারা) ইহূদী হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে। তিনি কথাটি তিনবার বললেনঃ সেই ব্যক্তি যে আর্থিক স্বচ্ছলতা সত্ত্বেও হজ্জ না করে মারা গেল। (বায়হাকী শরীফঃ ৪/৩৩৪)

এছাড়াও আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু (তবুও সে) আমার দিকে (হজ্জব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই (কল্যান থেকে) বঞ্চিত। (ইবনে হিব্বান ৩৭০৩, বাইহাকী ১০৬৯৫, আবূ য়্যা’লা ১০৩১, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৬৬২)

এছাড়াও এইসব ব্রেইনলেস মুশরিক রাজারবাগিদের আরেকটি দাবী হলোঃ ///জাহিল ও মুনাফিকরা বেপর্দা হয়ে হারাম পন্থায় ফাসেকি কাজ দিয়ে হজ্জ ব্যবস্থা প্রতিকূল করে তুলেছে। এখন আমরা কি এক ফরয পালন করতে গিয়ে বেপর্দা হবো নারী পুরুষদের ভেদাভেদ ভুলে যাবো একসাথে ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি করে তাওয়াফ করবো? যেখানে পুরুষ আর মহিলাদের জন্যে ১৪ জন ব্যতীত দেখা সম্পূর্ণ হারাম এবং আরো হাজারো আদেশ মুবারক অমান্য করবো, অথচ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা য়ালাইহাছ ছালাম তিনি বলেনঃ كان الركبان يمرون بنا و نحن محرمات مع الرسول فإذا حاذونا سدلت إحدانا جلبابها على وجهها من رأسها فإذا جاوزنا كشفناه. বাংলা অর্থঃ আমরা রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম উনার সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম। তারা আমাদেরকে অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল খুলে দিতাম। (আহমাদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ) ///

অরজিনাল হাদিস এরূপঃ আয়িশাহ সিদ্দিকা য়ালাইহাছ ছালাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “অনেক কাফেলা আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। তখন আমরা রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম সঙ্গে ইহরাম অবস্হায় ছিলাম। তারা আমাদের সামনা-সামনি আসলে আমাদের মহিলারা ঘোমটা মাথার উপর থেকে নামিয়ে নিজ মূখমন্ডল ঢেকে ফেলতেন। অতঃপর তারা অতিক্রম করে চলে গেলে আমরা মুখ খুলতাম। (আবু দাউদ শরীফ ১৮৩৩) হাদিসের মান দ্ব’য়িফ। হাদিসের রাবিদের মধ্যে থাকা ইয়াযিদ ইবনু আবূ যিয়াদ সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ যঈফ, বৃদ্ধ বয়সে তার স্মৃতি লোপ পেয়েছিল, ফলে তিনি তালকীন করতেন।

যাইহোক তাদের উল্লেখিত হাদিসটিকে দ্ব’য়িফ বলা হলেও আমি দলিল হিসেবে মেনে নিলাম, নিয়ে তাদের নিম্নোক্ত হাদিস শরীফ খানা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এখন কি তাঁরা রছুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম এবং ফাযল ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে সহ সেই মহিলা সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে হজ্জের সময় বেপর্দা হারাম কাজে লিপ্ত ছিলেন বলবে?

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার কুরবানীর (১০ জিলহজ্জের) দিনে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ফাযল ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফাযল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম মানুষকে মাসলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এমন সময় খাশ’আম গোত্রের এক সুন্দরী (হাজি) নারী (সাহাবী) রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লামের নিকট একটা মাসআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসলেন। তখন ফাযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেই মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য উনাকে আকৃষ্ট করলে, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ফাযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফাযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেই মহিলার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফাযল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য উনার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। এরপর ঐ মহিলা সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে মহান আল্লাহ তা’আলার রছুল ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম! মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে উনার বান্দাদের উপর যে হজ্জ ফরজ হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপর তিনি বসতে অক্ষম। যদি আমি উনার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি বললেনঃ হাঁ। (বুখারি শরীফ ৬২২৮)

যাইহোক, জ্ঞানিরা কিন্তু ব্রেইনলেস মুশরিক রাজারবাগিদের হজ্জ সম্পর্কে ভ্রান্ত ব্যাখ্যার ফতওয়া যে পুরটাই কুরআন হাদিস বিরোধী আগাগোড়া মনগড়া তা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আশাকরি। তাই এদের চুঙ্গল থেকে এখনো যারা বের হোন নাই তারা তাওবা করে ফিরে আসুন। হজ্জ ফরজ হলে দম বেরিয়ে যাওয়ার আগেই তা সম্পাদন করুন। কারণ যদি ছবি তোলা কবিরা গুনাহ হয়, তাহলে হজ্জ না করা কুফরি। এখন একটি কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে যদি কুফরি করে মুশরিক হয়ে মরতে চান তাহলে মরুন, মুশরিকদের জন্য কোন আফসোস নাই। মহান আল্লাহ পাঁক (আল কুরানেরঃ ৩/১৭৬, ৫/৪১, ৩১/২৩) যা বলেছেন তার সারমর্ম হলোঃ হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম! আপনি তাদের জন্য চিন্তিত, পেরেশান, ব্যথিত বা দুঃখিত হইয়েন না, যারা দৌড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলে, আমরা ইমান এনেছি, অথচ তাদের অন্তর ইমান আনেনি। (এর পরেও যারা বুঝতে পারবেনা, তাদের নসীবে হেদায়েত আল্লাহ পাঁক কিভাবে লিখেছেন তিনিই ভালো জানেন, নাকি নাই কে জানে।)


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: