Monday, August 22, 2022

আযানের আগে দূরুদ শরীফ পাঠ করা কি বিদআত? নাকি হুব্বে রসূল প্রকাশ?

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে মূর্খরা যখন সেলিব্রিটি শায়েখ সাজলো আর তাদের অন্ধ অনুসারীর সংখ্যা যখন বেড়েই চল্লো, তখন দৈনন্দিন তারা এমন সব বিষয়ের অবতারণা করে যেতে লাগলো, যা নিয়ে পূর্বে এরূপ ফিত্না মুসলিম সমাজে কেউ করেনাই।

সলাফি ও দেওবন্দিরা রেজাখানি সুন্নিদের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক কিছুকেই আজকাল বিদআত বলে পাইকারি ফতওয়া দিচ্ছে। এদের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক সুন্নী নামধারী ও দেখি আজ গলাবাজি করে যাচ্ছে। মূলত মানুষ যখন মূর্খ জাহিলদের অনুসারী হয়, অন্ধভক্ত হয় তখন তাকে দলিল দিয়ে বোঝালেও বুঝেনা। এরা মূলত আরবের সেইসব দুর্ভাগ্যবান মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কুরআন দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তবুও অনেকে তাদের জাহেলি আক্বিদাহ পরিত্যাগ করে ঈমান আনেনাই।

একজন মুসলিম ও উম্মতে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে সর্ব প্রথম যে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে সেটা হলো আপনার আমার কোন কাজ কি মহান আল্লাহ পাঁক উনাকে অসন্তুষ্ট করছে? অন্যের প্রতি বিদ্বেষ দেখাতে গিয়ে আমি কি গোস্তাখে রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম হিসেবে সাব্যস্ত হচ্ছি?

রাসূলের শান শুনলে যদি পুড়ে তর অন্তর, বুঝে নিস তর মন মস্তিষ্কে মারা হয়ে গেছে মোহর। 

খুবই অদ্ভুত লাগে কিছু মানুষের আচরণে, এরা নিজেকে উম্মতে নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম দাবী করে, অথচ নবীজির শান মান শুনলে জন্মগতভাবে নবী বিদ্বেষী ইহুদীদের মতো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সোশ্যাল মিডীয়ার কল্যাণে আজকাল যেকোন বিষয় সহজেই ভাইরাল হয়ে যায়, আলোচনা থাকে তুঙ্গে, আগে এরূপ ছিলনা। দিন দিন মানুষ সোশ্যাল মিডীয়ার কারণে যাহান্নামে নিজের স্থান করিয়ে নিচ্ছে খুব সহজে।

মূল বিষয়ে চলে আসি সরাসরি, “আজকাল একটি জিনিস দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষ আযান, ও জুম্মার ইকামতের আগে দুরুদ শরীফ পাঠকে বিদআত বলছে”। এই মানুষেরা কারা? তারা সাধারণত, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত এর বাহিরের কিছু গ্রুপের মানুষঃ আহলে হদস, সলাফি, দেওবন্দি আক্বিদার অনুসারী। 

যারা পাঠ করেন তাঁরা কারা? তাঁরা হলেনঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের হাক্বিকি অনুসারী, সুন্নী মুসলিম ও আশেকে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম। 

এটা যারা পাঠ করেন তাদের নিকট এটা কোন ধরণের আমল? ফরজ? ওয়াজিব? সুন্নত? নাকি অন্য কিছু? 

যারা পাঠ করেন তাঁরা এটাকেঃ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত মনে করেন না, বরং তাদের নিকট এটা মুস্তাহাব আমল। 

তাহলে বিষয়টা দাঁড়ালোঃ আহলে হাদিস, সালাফি, দেওবন্দিদের ফতোয়াতে যা বিদআত তাহা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে মুস্তাহাব আমল। আযানের আগে দূরুদ শরীফ পাঠ করার বিষয়টা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের সাথে খাসভাবে সম্পর্কিত। যেহেতু উনার সাথে সম্পর্কিত সেহেতু এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার আগে হাজারবার চিন্তা ফিকির করা উচিৎ, কারণ যদি এতে গোস্তাখি প্রকাশ হয় তাহলে কিন্তু সব বরবাদ। আসুন প্রথমে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে গোস্তাখির ফলাফল কি তা জেনে নেই, “আযানের আগে দূরুদ শরীফ পাঠ করা যায়েজ নাকি বিদআত” জানার আগে, এতে অন্তর হয়তো ভিত হবে, আখিরাত বরবাদ হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। আশাকরি গোস্তাখীর দলিল ভিত্তিক নসিহত আপনাকে ভিত করেছে, যদি করে থাকে তাহলে প্রথমে জেনে নেই বিদআত কি এবং এর ফলাফল কিঃ (বিদআত কাকে বলে? দ্বীনের মধ্যে নতুন সব কিছুই কি বিদআত?) এই লিখাটা পড়ে নিন প্রথমে, নতুবা আপনি আপনার অনুসরনীয় শায়খ, বাবা, মুরুব্বী, মুর্শিদ, আলীম যেই হোক, তার মুখ থেকে বের হওয়া বিদ’আত আদতেই বিদআত কি না তা বুঝতেই পারবেন না, আর না বুঝে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় কে বিদআত বলে ধৃষ্টতা দেখাতে গিয়ে আপনার আখিরাত হয়ে যাবে সম্পূর্ণ আমল শুন্য সূরাহ হুজুরাতের নং আয়াত অনুসারে

এবার আসি, আযানের আগে দূরুদ শরীফ পাঠ করা কি বিদআত নাকি যায়েজ এই বিষয়ে। প্রথমে আমাদের জানতে হবে এর ইতিহাস। এর সাথে রেজাখানিদের সম্পর্ক নাকি এর আমল শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে।

আযানের পূর্বে ও পরে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করা কেবল জায়েজই নয় বরং মুস্তাহাব আমল। ইহা শরীয়ত স্বীকৃত একটি গ্রহনযোগ্য ইবাদত।

আসেন একটি হাদিস শরীফ দেখি মুয়াজ্জিনে আযম সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ব্যপারে। আযানের আগে উনার আমল কি ছিলোঃ

বনু নাজ্জারের এক মহিলা থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের মসজিদের নিকটবর্তী আমার ঘরটিই ছিল সবচেয়ে উচুঁ। সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আমার ঘরের ছাদে উঠে (প্রতিদিন) ফজরের আযান দিতেন। তিনি সাহরীর সময় (শেষ রাতে) সেখানে এসে বসতেন এবং সুবহে সাদিকের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। যখন সুবহে সাদিক হয়ে যেত, তিনি তখন শরীরের আড়মোড় ভেঙ্গে বা হাই তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ (اللَّهُمَّ إِنِّي أَحْمَدُكَ وَأَسْتَعِينُكَ عَلَى قُرَيْشٍ أَنْ يُقِيمُوا دِينَكَ) হে মহান আল্লাহ তাআলা! আমি আপনার প্রশংসা করছি এবং কুরাইশদের ব্যাপারে আপনার কাছে সাহায্য চাইছি যেন তাদের দ্বারা আপনার দ্বীন কায়িম হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি আযান দিতেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলার শপথ কোন রাতেই আমি সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে এ কলিমাটি ত্যাগ করতে দেখিনি। (আবু দাউদ শরীফ ৫১৯)

যেসকল মূর্খ জাহিল বলে থাকে আযানের আগে দুরুদ শরীফ পাঠ করা বিদ’আত সেইসব মূর্খ যাহিলদের নিকট আমি জানতে চাচ্ছি সাইয়্যিদুনা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে কি রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন? না দিলে তিনি যে এই আমল নিজ থেকে আমল করে গেলেন, এর জন্য কি উনাকে তোরা বিদআতি বলবি? উনি কি এখন সকল বিদআত ভ্রষ্টতা, আর সকল ভ্রষ্টাতাই যাহান্নামে যাওয়ার কারণ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাহান্নামে আছেন? সাবধান আগে বিদআত সম্পর্কে জেনে নাও নতুবা জান্নাতের সু-সংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীকে যাহান্নামি সাব্যস্ত করে নিজেই জাহান্নামের লাকড়ি হয়ে যাবে।

অতএব আমলে মুয়াজ্জিনে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত হলো, আযানের পূর্বে, আল্লাজির হামদ ও দোয়া যায়েজ উত্তম কাজ, সুন্নতে সাহাবাও বটে, এবং কোন দোয়াই মহান আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়না যতক্ষন না দুরুদ শরীফ পাঠ করা হয়। সায়্যিদুনা হযরত উমার ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত “মানুষ যখন দোয়া করে তখন তা আসমান যমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ না করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত দোয়ার কিছুই উপরে উঠে না” (অর্থাৎ আসমান ভেদ করে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট পৌঁছে না)। (তিরমিযি শরীফ ৪৮৬)

তাছাড়া মূর্খরা সম্ভবত দুরুদ শরীফ ও যে দোয়া এটাও হয়তো জানেনা, দুরুদ শরীফ ও যে তারীফ করা এটাও জানেনা। যে দুই কাজ মুয়াজ্জিনে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম রেগুলার করে গেছেন। এখন যদি সারা দুনিয়া মিলে সাহাবীদের কোন আমল পরিত্যাগ করে আর জমিনে তার চিনহ পাওয়া না যায় তাহলে কি মূর্খরা এইটা বলবে যে ইহা বিদআত?

এখন কথা হলো, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজ থেকে আযানের পূর্বে হামদ ও দোয়া করে আযান শুরু করলে যায়েজ আর বাকিরা দুরুদ পড়লে, বিদাআত? অনেক জাহিল আবার হারাম ও বলে থাকে। অথচ হারাম হালাল নির্ধারণের একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ পাঁক, আর যারাই নিজ থেকে যেকোন কিছুকে হারাম বলে আর তার মূর্খ অনুসারীরা তা বিশ্বাস করে উভয়েই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত কারণ সূরাহ তাওবার ৩১ নং আয়াতের ব্যখায় বলা হয়েছে আলিম/পির/দরবেশদের এভাবেই খোদা বানানো হয়, তাদের বলা হারাম কে হারাম মনে করা, তাদের বলা হালালকে হালাল মনে করা, অথচ আল্লাহ পাঁক তা করেন নাই।

দুরুদ শরীফের বিষয়ে মহান আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ হচ্ছেঃ ( اِنَّ اللّٰهَ وَ مَلٰٓئِکَتَهٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡهِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا) নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দুরুদ শরীফ প্রেরণ করে থাকেন। হে ইমানদারগণ তোমরাও দুরুদ শরীফ প্রেরণ করতে থাকো এবং যথাযথ শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাও। (আল কুরআন ৩৩/৫৬)

উপরোক্ত আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ হলো মানুষ যেন রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ প্রেরণ করতেই থাকে। কথা হলো কতক্ষন? এর বিষয়ে হাদিস শরীফে কি পাওয়া যায় আসুন দেখিঃ উবাই ইবনু কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে মহান আল্লাহ তা’আলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠ করি। আপনার প্রতি দুরুদ শরীফ পাঠের জন্য আমি আমার (যাবতীয়) সময়ের কতটুকু খরচ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইছা কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তাহলে তো (এ কাজ) তোমার দুশ্চিন্তা (দূর করার) জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার (সকল) গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (তিরমিযী শরীফ ২৪৫৭, মুসনাদে আহমাদ ২০৭৩৫, রিয়াদুস স্বলেহীন ৫৭৯)

অতএব আমরা কুরআন হাদিস থেকে যা পেলাম তা হলোঃ মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মুমিনেরা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ-সালাম প্রেরণ করতেই থাকবে, অতঃপর সাহাবীর আমলে রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে পেলাম, “দিনের পুরো সময়টাই যদি একজন মানুষ দুরুদ শরীফ পাঠে কাটিয়ে দেয় তাহলে এই আমলের কারণে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে এবং সকল গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। সুবহানআল্লাহ!!!

তাছাড়া রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ পাওয়া যায় আযানের পরে দুরুদ শরীফ পাঠের, কৈ আগে পাঠ করা বিদআত বলা মূর্খ জাহিলেরা দেখি এই আমল পালন করেনা, কেন?

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, “তোমরা যখন আযান শুনবে, তখন (আযানের উত্তরে) মুআয্‌যিন যা কিছু বলবে, তোমরাও ঠিক তাই বলবে। অতঃপর আযান শেষে আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে তার প্রতি মহান আল্লাহ তা’আলা দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট আমার জন্য ‘অসীলা’ প্রার্থনা করবে। কারণ, ‘অসীলা’ হচ্ছে জান্নাতের এমন একটি স্থান, যা সমস্ত বান্দার মধ্যে কেবল মহান আল্লাহ তা’আলার একটি বান্দা (তার উপযুক্ত) হবে। আর আশা করি, আমিই সেই বান্দা হব। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য (আমার) সুপারিশ অনিবার্য হয়ে যাবে। (বুখারী শরীফ ৬১১, মুসলিম শরীফ ৩৮৩, তিরমিযী শরীফ ২০৮, নাসায়ী শরীফ ৬৭৩, আবূ দাঊদ শরীফ ৫২২, ইবনু মাজাহ শরীফ ৭২০, মুসনাদে আহমাদ ১০৬৩৭, ১১১১২, ১১৩৩৩, ১১৪৫০, মুয়াত্তা মালিক ১৫০, দারেমী ১২০১)।

আযানের পরে যদি দুরুদ শরীফ পাঠ করা যায় তাহলে আগে করলে বিদআত? পরে যে পাঠ করা সুন্নাত সেটা আগে করা নাযায়েজ? এর দলিল দিক কিয়ামত পর্যন্ত সময় দিলাম?

এর পরেও কি জাহিলেরা বলবে যে আযানের আগে দূরুদ পড়া বিদ’আত? অথচ কোন কিছু হারাম, বিদ’আত প্রমাণ করতে হলে সেই দরজার দলিল থাকা লাগবে। কেননা শরীয়তের উসুল হল, (প্রত্যেক বস্তুই মূলে যায়েজ থাকে, যদিনা এর বিপরীতে কুরআন সুন্নাহর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যায়)। (যেমন কেউ যদি কাউকে ব্যবিচারি জেনাখুর বলে, তাহলে যাকে অপবাদ দেওয়া হলো সে নয়, বরং যে এই অপবাদ দিবে তাকেই দলিল পেশ করা লাগবে আল কুরআনের ২৪/৪ অনুসারে।)

এখন কাজ ভেদে ফরযের দলিল থাকলে ফরয হয়, সুন্নাতের দলিল থাকলে সুন্নাত হয়, আর হারামের দলিল থাকলে হারাম হয়। আর কোন দলিল না থাকলে তা বৈধ বলেই গন্য হয়। এখন এই মূর্খ জাহিলরা কি একটি দলিলও পেশ করতে পারবে যেখানে আযানের আগে দরুদ শরীফ পাঠ বিদ’আত বলা হয়েছে? অথচ উপরে প্রমান দেওয়া হয়েছে যখন খুশি পাঠ করতে পারবে, যা মহান আল্লাহ তা’আলা ও রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ এবং সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমের আমল।

যেহেতু তারা পারবেনা, সেহেতু আমি দিব দলিল, কোন কোন সময় রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করা নিষিদ্ধ?

জগদ্বিখ্যাত ফাতাওয়ার কিতাব “ফাতাওয়ায়ে শামী”র মধ্যে পাওয়া যায়ঃ (ومستحبة فى كل اوقات الامكان اى حيث لا مانع) অর্থাৎ নিষিদ্ধ স্থান ও সময় ব্যতীত অন্য যে কোন মুহুর্তে দুরুদ শরীফ ও সালাম পাঠ করা মুস্থাহাব।

এখন প্রশ্ন হবে কোন কোন স্থানে দুরুদ শরীফ ও সালাম পাঠ করা নিষেধ?

এর জবাবে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহ একিই কিতাবের একই পৃষ্ঠায় বর্ননা করেছেনঃ (تكره الصلاة عليه صلى الله عليه و سلم فى سبعة مواضع) অর্থাৎ সাত স্থানে মহান আল্লাহ তা’আলার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ শরীফ ও সালাম পাঠ করা নিষেধ। তাছাড়া অন্য সবক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় পাঠ করা মুস্তাহাব। নিষিদ্ধ স্থান সমূহঃ (ﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﺼﻼ ﻋﻠﻴﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﻟﺠﻤﺎﻉ ﻭ ﺣﺎﺟﺔ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻭ ﺷﻬﺮ ﺍﻟﻤﺒﻴﻊ ﻭ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﻭ ﺍﻟﺘﻌﺠﺐ ﻭ ﺍﻟﺬﺑﺢ ﻭﺍﻟﻌﻄﺎﺱ. ﻓﺘﻮﻱ ﺷﺎﻣﻲ) ১) স্বামী-স্ত্রীর মিলন কালে। ২) প্রশ্রাব-পায়খানার সময়। ৩) ব্যবসায়ী সামগ্রী প্রচারার্থে। ৪) হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার সময়। ৫) আশ্চার্যজনক কোন ঘটনা শ্রবনকালে। ৬) জবেহ করার সময়। ৭) এবং হাঁছি দেওয়ার সময়। (ফতওয়ায়ে শামী ২/২০৪)

এবার আসুন দেখি কবে এর প্রচলন কে শুরু করলেন, কেনো করলেন?

ইমাম হাফিজ মুহাম্মদ আবদুর রহমান আল সাখাউয়্যি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার (القول البديع في الصلاة على الحبيب الشفيع) এর মধ্যে লিখেনঃ আযানের পূর্ব দুরুদ-সালাম এর চালু করেছিলেন মুজাহিদে আযম, গাঁজিয়ে আযম, গাঁজিয়ে দ্বীন, ক্রুসেডারদের যম, আল আক্বসা শরীফ বিজয়ী সুলতান, সালাউদ্দিন বিন আইয়্যুবি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শুরু করেন সর্ব প্রথম উনার শাসনামলে। প্রশ্ন হলো কেনো করেন?

ইমাম সাখাউয়্যি রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, যখন মিসরের রাফেজি শিয়া বাদশা মাখজুলকে হত্যা করা হয়, এবং তার পুত্র হাকিম বিন আযিয মাখজুল ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন তার বোন, সারা সালতানাতের যতো মসজিদ আছে, সবকয়টিতে এই হুকুম জারি করে যে, সকল নামাযের পূর্বে বাদশার উদ্যেশ্যে দুরুদ সালাম বাধ্যতামূলক পাঠ করতে হবে। (রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপর নয়)। এভাবেই ৭৮১ হিজরির রবিউল আউওয়াল শরীফে, এক সোমবারে এশার আযানের পূর্বে বাদশার উদ্যেশ্যে দুরুদ সালাম সর্ব প্রথম পাঠ করা হয়। যার ভাষা এরূপ ছিলো (الصالةَ والسالمَعلى إلمامَالظاهر) এবং এই বাক্য পাঠের পরেই আযান দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পরে এই ফরমান জারি করা হয় যে, জুমু’আহ শরীফের দিন নামাযের আগে বাদশার উপর দুরুদ সালাম যেনো পাঠ করা হয়। এবং এর কিছুদিন পর, মাগরিবের নামায ব্যতীত ফজর, জোহর, মাগরিব, ইশার আযানের পূর্বে বাদশার উপর দুরুদ সালাম পাঠ জারি হয়ে যায়। প্রায় ১০ বছর এই কাজ রাফেজি শিয়া জারি রাখে। কিন্তু যখন মুজাহিদে আযম, গাঁজিয়ে আযম, গাঁজিয়ে দ্বীন, ক্রুসেডারদের যম, আল আক্বসা শরীফ বিজয়ী সুলতান, সালাউদ্দিন বিন আইয়্যুবি রহমতুল্লাহি আলাইহি মিসরের বাদশাহ হোন তখন সাথে সাথেই বাদশার উদ্যেশ্যে দুরুদ সালাম পাঠ বন্ধ করে দেন, এবং বলেন যদি পড়তেই হয়, তাহলে দো জাহানের কান্ডারি নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উপরই পাঠ করো।

এখন যদি কোন নামধারী মুসলিম আমার সম্মুখে এসে বলে যে আল আক্বিসা বিজয়ী মুজাহিদে মিল্লাত, গাঁজিয়ে দ্বীন সাইয়্যিদুনা হযরত সালাহউদ্দিন বিন আইয়্যুবি রহমতুল্লাহি আলাইহি বিদআতি ছিলেন, বিদআত চালু করেছেন, তাহলে আমি এক সেকেন্ড ও সময় নিবনা তার ধড় দেহ থেকে নামাতে। অতএব প্রমাণিত হলো নামাযের পূর্বে দুরুদ শরীফ পাঠ করা রেজাখানিদের সৃষ্টি করা কোন আমল নয়। তাই তাদের সাথে পার্সোনাল বিদ্বেষের কারণে যারা মুস্তাহাব এই আমলকে আক্রমণ করে বিদআত ফতওয়া মারে তারা মূলত জাহিল।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: