Tuesday, May 31, 2022

রমজানের শেষ জুমু'আর বয়ান, ২৭ রমাদ্বন ১৪৪৩ হিজরী


أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ, পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আমরা গত সপ্তাহে পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিনের ব্যপারে আলোচনা করেছিলাম। আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরের রাত গত হয়ে দিনে এসে পৌঁছেছি আমরা। আশাকরি আমরা সবাই গতকাল রাতে নিজ নিজ ইল্ম অনুযায়ী, তৌফিক অনুসারে ইবাদত বন্দেগী করে কাটিয়েছি। সম্মানিত, আযিয, ঈমানদার, মুমিন ভাই ও পর্দার অন্তরালের মা বোন আমার, আর মাত্র ২ অথবা তিন দিন পরেই পবিত্র রমদ্বান শরীফ আমাদের নিকট থেকে চলে যাবেন। আজ রমদ্বান শরীফের শেষ জুমার দিন। আমরা কি পেরেছি, এই ৩০ দিনের সকল, সমস্থ নিয়ামত হাসিল করতে? আমরা কি পেরেছি রহমতের ১০ দিনের রহমতের ভাগিদার হতে? আমরা কি পেরেছি মাগফিরাতের ১০ দিনের মাগফিরাতের ভাগিদার হতে? আমরা কি পেরেছি নাজাতের ১০ দিনের অধিকারী হতে? আমরা কি পেরেছি পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর কে ধরতে?

আমরা তবে কি করলাম এই সারাটি মাস? অথচ এই মাসের ইবাদত-বন্দেগীর জন্য মহান আল্লাহ পাক বান্দাদের জন্য বিশেষ অফার ঘোষণা করেছিলেন। এই অফার গ্রহণ করে যারা তাদের দৈনন্দিন আমল পালন করে চলেছেন, মহান আল্লাহ পাক তাদের পুরস্কৃত করবেন। পক্ষান্তরে যারা এই মাস পেয়েও এর যথাযথ কদর করেননি, তাদের জন্য রয়েছে অভিশাপ।

হাদিস শরীফে এমনটিই বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি রমজান মাসকে গুরুত্বসহকারে নেয়নি, বরং অবহেলা করে এর সময়গুলো নষ্ট করেছে, তার প্রতি তার মালিক অসন্তুষ্ট।

হজরত কাব বিন আজরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা রসুল ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, তোমরা মিম্বরের কাছাকাছি হয়ে বসো। সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমরা সবাই কাছাকাছি হয়ে বসলে নবীজি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেনঃ আমিন। অতঃপর দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখেন এবং বলেনঃ 'আমিন'। অনুরূপ তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও তিনি বলেনঃ 'আমিন'

বয়ান শেষে মিম্বর থেকে নবীজি ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেমে আসলে কৌতূহলী হয়ে সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম জিজ্ঞাসা করেন, আপনাকে তো আগে কখনো এমন করতে দেখিনি। তখন নবিজী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি যখন প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি তখন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উপস্থিত হয়ে বললেন, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েছে কিন্তু নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি সে ধ্বংস হোক। তখন আমি বললামঃ 'আমিন'

অতঃপর যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যার নিকট আপনার নাম পেশ করা হয়েছে কিন্তু সে আপনার প্রতি দরূদ পড়েনি সে ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম 'আমিন'। (এর থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে হবে, এবং আজকে থেকে সতর্ক হতে হবে, কোন অবস্থায় কখনোই ভুলে যাওয়া চলবেনা যে, যখন আপনি আপনার কানে যেকোন যায়গায়, মানুষ হোক বা মানুষে আলোচানার অডিও, যেখানেই মুহাম্মাদ শব্দ শুনবেন সাথে সাথে ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করে নিবেন, কারণ যদি গাফলতিতে এরূপ প্রতিনিয়ত হয় তাহলে আপনার ধ্বংস অনিবার্য।)

এরপর নবিজী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বল্লেনঃ সর্বশেষ যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা মাতার কাউকে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েছে, কিন্তু তাদের খেদমত, সেবা-যত্ন করে জান্নাতের মালিক হতে পারেনি সেও ধ্বংস হোক। তখনও আমি বললাম, 'আমিন'। (পিতামাতার বিষয়ে আলোচনা ইনশা-আল্লাহ আগামী জুমুআহ শরীফে আল্লাহ পাক তৌফিক দিলে করা হবে।)  (বায়হাকী শরীফঃ ১৫৭২)  

এবার মূল প্রসঙ্গে চলে আসি। অনেকই হয়তো ভেবেছিলেন, সবে-মাত্র রমদ্বানুল মোবারক শুরু হয়েছে। আর কিছু দিন না হয় যাক। পরে কোমর বেধে ইবাদতে নেমে যাবো। তখন তাহাজ্জুদের জায়নামাজে দাঁড়িয়ে কেঁদে কেঁদে সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেবো। সন্তুষ্ট করে নেব আমার মালিক-কে। অথচ অনেকের সেই নসীব হয়নি বরং ২৭ রমদ্বান পার হয়ে গিয়েছে। এরকম ধারনা আর স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেছে। কেননা, এটি শয়তানের চেয়েও বড় শত্রু নফসের অন্যতম একটি ধোঁকা। এখনো দুই রাত তিন দিন রয়ে গেছে প্রায়, আসুন নিজেদের গুনাহ গুলি মাফ করিয়ে নেই।

রমদ্বান শরীফের মাস মূলত পবিত্র আল কুরআন এর মাস। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [ شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡکُمُ الشَّهۡرَ فَلۡیَصُمۡهُ] রমজান মাস হলো সে মাস, যে (মাসে পবিত্র) আল কুরআন নাজিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও সত্যপথের যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী (হিসেবে)। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ (পবিত্র) মাসটি পায়, সে যেন তাতে রোজা পালন করে। (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৮)।

পবিত্র আল কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব, যা সর্বশেষ নবী ও রসুল হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-এর ওপর নাজিল হয়েছে। এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোনো কিতাব ও নতুন কোনো নবী বা রাসুল আলাইহিমুস ছ্বলাতু ওয়াস সালাম আসবেন না; এটিই কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের জন্য দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ ও বিঁধান

পবিত্র আল কুরআন অংশবিশেষ পাঠ ব্যতিরেকে প্রত্যেক মুসলমানের মূল প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিহ শুদ্ধভাবে পবিত্র আল কুরআনে তিলাওয়াত শিখতে হবে। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন। কারণ কুরআন না শিখলে নামায ও পড়া সম্ভব না, আর যারা দিনের পর দিন নামায না পড়ে তা পরিত্যাগের পর্যায়ে নিয়ে যান তাদেরকে আল্লাহ পাক মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন না। অর্থাৎ যে কেউ নামায পরিত্যাগ করলো সে নিজেকে ইসলাম থেকে বের করে দিলো। সে আর মুসলিম মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত থাকেনা। হাদিস শরীফে এসেছেঃ [وَعَن بُرَيْدَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ اَلعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ رواه التِّرمِذِيُّ وَقَالَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صحيح] বুরাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায (পড়া)অতএব যে নামায ত্যাগ করবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে(আহমাদ ২২৯৩৭, তিরমিযী ২৬২১, নাসাঈ ৪৬৩, ইবনে মাজাহ ১০৭৯, ইবনে হিব্বান ১৪৫৪, হাকেম ১১, সহীহ তারগীব ৫৬১ নং)।

আর আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক স্পষ্ট করেই বলেছেনঃ [فَاِنۡ تَابُوۡا وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ فَاِخۡوَانُکُمۡ فِی الدِّیۡنِ] অতঃপর তারা যদি তওবা করে, যথাযথ(ভাবে) নামায পড়ে ও যাকাত দেয়, তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই (সূরাহ তাওবাঃ ৯/১১) অর্থাৎ কেউ নামায পরিত্যাগ করলে সে আর দ্বীনি ভাই থাকেনা, আর যারা নামায পরিত্যাগ করেছেন তাদের দ্বীনি ভাই হওয়ার অন্যতম পথ হলো তওবা করে নামায শুরু করা নাহলে কাফের হিসেবেই মৃত্যু হবে।

অতএব বোঝা গেলো যে নামায ব্যতীত মুসলমান থাকা অসম্ভব, আর এই নামায এর জন্য কুরআন শিখা ও পাঠ করতে জানা বাধ্যতামূলক। আরো একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী, এইযে নিয়ামতে পরিপূর্ণ রমদ্বান শরীফ আমরা পেয়েছে, এছাড়াও শবে কদরের ফজিলত যে আমরা আজ জানতে পেরেছি, এবং তা লাভ করার সুযোগ ও পেয়েছি, আজকে লাইলাতুল ক্বদর যে এতো সম্মানিত রাত, এটার মূল কারণ হচ্ছেন পবিত্র আল কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে জমিনে আগমন মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ [اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ]নিশ্চয় আমি কদরের রাতে পবিত্র আল কুরআন নাজিল করেছি (সূরাহ ক্বদরঃ ৯৭/১)।যে মানুষ যত বেশি কোরআনের ধারকবাহক হবেন, তাঁর সম্মানও তত বেশি হবে। রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পবিত্র আল কুরআন-ওয়ালারা (প্রকৃত) আল্লাহওয়ালা এবং মহান আল্লাহ তায়ালার খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে পবিত্র আল কুরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ ‘হাশরের মাঠে বিচারের দিনে পবিত্র আলরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে হুজ্জত করবে (মহান আল্লাহ পাকের নিকট)। (মুসলিম শরীফ)।

পবিত্র আল কুরআনের অর্থ পড়া, পাঠ করা, পাঠযোগ্য, যা বারবার পাঠ করা হয়। আল কুরআন-ই দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে মহান আল্লাহ তায়ালার আদালতে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম অভিযোগ করবেন। কিয়ামতের মাঠে তাদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে যারা কুরআন কে বর্জন করেছেন, কুরআন থেকে দূরে থেকেছেন, যারা কুরআন এর ব্যপারে উদাসীন ছিলেন, গাফেল ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [وَ قَالَ الرَّسُوۡلُ یٰرَبِّ اِنَّ قَوۡمِی اتَّخَذُوۡا هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ مَهۡجُوۡرًا] অর্থাৎ রসুলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমার জাতির লোকেরা এই পবিত্র আল কুরআনকে পরিত্যাজ্য (অর্থাৎ পরিত্যাগ করার মতো বিষয় মনে) করেছিল (সূরাহ আলঃ ফুরকানঃ ২৫/৩০)।

এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছেঃ মুশরিকরা কুরআন পাঠের সময় খুব হৈ-হল্লা করত, যাতে কুরআন না শোনা যায়, এর কারণ কুরআনের বাণীর মাধ্যমে আরবের মুশরিকরা দ্রুত হেদায়েত লাভ করছিলো যা আরবের মুশরিক প্রধানদের পিঁড়া দিত, তাই তারা কুরআন তিলাওয়াতের সময় বাধা দিত, আর একারণেই কুরআনের যেকোন কার্যক্রমে বাধা দেওয়াও এক ধরনের কুরআন পরিত্যাগ করার নামান্তর পবিত্র আল কুরআনের প্রতি ঈমান না আনা এবং সেই মত আমল না করাও পবিত্র আল কুরআন বর্জন করার নামান্তরপবিত্র আল কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা না করা, উহার আদেশাবলী পালন না করা ও উহার নিষেধাজ্ঞাবলী হতে বিরত না থাকাও এক প্রকার কুরআন ছেড়ে দেওয়ার নামান্তরঅনুরূপ পবিত্র আল কুরআন এঁর উপর অন্য কোন কিতাবকে অগ্রাধিকার দেওয়া-ও তা পরিত্যাজ্য মনে করার মধ্যে গণ্য এছাড়াও তৌফিক থাকার পরেও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করে না দেওয়া, সহযোগিতা না করা, গাফলতি প্রকাশ করা সকল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিয়ামত দিবসে রসূল ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে মামলা দায়ের করবেন আর কিয়ামতের মাঠে কোন উম্মতের বিরুদ্ধে যদি তার নবী মামলা দায়ের করেন তাহলে সেদিন তাকে বাঁচানোর আর কে আছ?

আর একারণেই পবিত্র আল কুরআন শিক্ষা করা ফরজ, শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ হয়; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই পবিত্র আল কুরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা জরুরি। যাঁরা পড়তে জানেন না, তাঁদের শিখতে হবে, যাঁরা শিখে ভুলে গেছেন, তাঁদের পুনরায় পড়তে হবে; যাঁরা ভুল পড়েন, তাঁদের সহিহভাবে পড়া শিখতে হবে।

আর এই শিক্ষা কেবল নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে হবেনা। বরং আশেপাশের সকল মানুষের মধ্যে কুরআন স্থাপনের কাজ করতে হবে নাহলে উপরোক্ত আয়াতের মিসদ্বাক হতে হবে।

পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালা বিশ্বমানবতার হেদায়াত ও মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসাবে পবিত্র কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন শরিফ রমদ্বানুল মোবারকে নাজিল করে এ মাসটিকে গৌরব ও শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করেছেন। সুতরাং প্রত্যেক রোজাদারের উচিত মোবারক এ মাস থেকে পবিত্র আল কুরআনের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা শুরু করা। মহানবি হজরত মুহাম্মদ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানে হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামকে অবতীর্ণ পূর্ণ কুরআন একবার শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম-ও নবি কারিম ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে অবতীর্ণ পূর্ণ কুরআন একবার শোনাতেন। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের জীবনের শেষ রমজানে (দশম হিজরি) জিবরাইল আলাইহিস সালামকে পূর্ণ কুরআন মজিদ দুবার শোনান এবং হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামনবী করীম ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে পূর্ণ কুরআন শরিফ দুবার শোনান। একারণেই রমদ্বান শরীফে দুই খতম করা খাস সুন্নত, এবং দুইবার সম্পূর্ণ কুরআনের তিলাওয়াত শোনাও খাস সুন্নত।

সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু সারা বছর প্রতি সপ্তাহে পূর্ণ কুরআন শরিফ একবার তিলাওয়াত করতেন। প্রতি সাত দিনে এক খতম পড়তেন বলেই কুরআন মজিদ সাত মঞ্জিলে বিভক্ত হয়েছে। তারা রমজান মাসে আরও বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। যুগে যুগে মহান আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দারাও রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের অনুসরণে আল কুরআনের তিলাওয়াতে নিজের ইবাদতের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো কাটাতেন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তায়ালার কিতাব থেকে একটি অক্ষর তিলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে দশগুণ, এ কথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি শব্দ, লাম একটি শব্দ, মীম একটি শব্দ(তিরমিযী শরীফ, হাদিসঃ ২৯১০)। অন্য হাদিসে হজরত আবু মূসা আল আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ হলো লেবুর মতো, যার স্বাদও ভালো আবার ঘ্রাণও ভালো। আর (কুরআন পাঠ করেনা এমন) মুমিনের উদাহরণ হলো খেজুরের মতো, তার স্বাদ (যদিও) ভালো কিন্তু (তাতে) কোনো ঘ্রাণ নেই, অথচ কুরআন তিলাওয়াতকারী পাপী ব্যক্তির উদাহরণ হলো (সেই) ফুলের মতো, যার স্বাদ তিক্ত হলেও ঘ্রাণ ভালো, আর যে হাফেজে কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ হলো মাকাল ফলের মতো যার স্বাদ তিক্ত এবং সুগন্ধ নেই।(সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ৭৫৬০)।

একারণেই নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত এর কোন বিকল্প নাই যারা নিয়মিত পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করেন তাদের জ্ঞাতার্থে নবিজী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ থেকে কিছু কথা না বললেই নয়। 

পবিত্র আল পবিত্র আল কুরআন অন্য কোনো বইয়ের মতো নয়পবিত্র আল পবিত্র আল কুরআন পাঠ করতে হয় যথাযথ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আদব সহকারেনিম্নে এর আদবগুলো উল্লেখ করা হলোঃ

প্রথম আদবঃ নিয়ত শুদ্ধ করারসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের ওপর আগুনের শাস্তি কঠোর করা হবে বলে জানিয়েছেন তাদের মধ্যে একজন ওই কারি, যিনি ইখলাসের সঙ্গে পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করতেন না(তিরমিজি, হাদিসঃ ২৩৮২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিসঃ ৪০৮)

দ্বিতীয় আদবঃ পবিত্র হয়ে অজু অবস্থায় পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করাঅজু ছাড়াও পবিত্র আল কুরআন পড়া যাবে, তবে তা অজু অবস্থায় পড়ার সমান হতে পারে না

তৃতীয় আদবঃ পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করাআলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মুখগুলো কোরআনের পথতাই সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো(ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ২৯১)

চতুর্থ আদবঃ তিলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়া মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং যখন আপনি পবিত্র এই কুরআন পাঠ করবেন, তখন মহান আল্লাহ তাআলার কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চান(সুরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৯৮)

পঞ্চম আদবঃ বিসমিল্লাহ পড়াতিলাওয়াতকারীর জন্য এটা ওয়াজিব হচ্ছে যে, সুরা তাওবা ছাড়া সকল সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া কারণ এটা খাস সুন্নতরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সুরা শেষ করে বিসমিল্লাহ বলে আরেক সুরা শুরু করতেনশুধু সুরা আনফাল শেষ করে সুরা তাওবা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন না

ষষ্ঠ আদবঃ তারতিলের সঙ্গে (ধীরস্থিরভাবে) পবিত্র আল কুরআন পড়াকারণ মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আর (আপনি) তারতিলের সঙ্গে (পবিত্র) আর পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করুন(সুরা মুজ্জাম্মিলঃ আয়াত ৪)

সপ্তম আদবঃ সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে পবিত্র আল কুরআন পড়াবারা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে এশার নামাজে সুরা ত্বিন পড়তে শুনেছিআমি উনার চেয়ে সুন্দর কণ্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনিনি(বুখারি শরীফঃ হাদিস ৭৫৪৬; মুসলিম শরীফঃ হাদিস ১০৬৭)

অষ্টম আদবঃ সুর-সহকারে পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করাএটি সুন্দর করে পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াতের অংশরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সে আমার উম্মত নয়, যে সুর-সহযোগে পবিত্র আল কুরআন পড়ে না(বুখারি শরীফঃ হাদিস ৭৫২৭; আবু দাউদঃ হাদিস ১৪৭১)

নবম আদবঃ রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুনি এলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকাআবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ে, ফলে তার জিহ্বায় পবিত্র আল কুরআন এমনভাবে জড়িয়ে আসে যে সে কী পড়ছে তা টের পায় না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে(মুসলিম শরীফ, হাদিস ১৮৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৮২১৪)

অর্থাৎ তার উচিত এমতাবস্থায় নামাজ না পড়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া, যাতে তার মুখে পবিত্র আল কুরআন ও অন্য কোনো শব্দের মিশ্রণ না ঘটে এবং কোরআনের আয়াত এলোমেলো হয়ে না যায়

দশম আদবঃ ফজিলতপূর্ণ সুরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করারসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বলল, কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া যাবে! তিনি বলেন, ‘সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য(মুসলিম শরীফঃ হাদিস ১৯২২; বুখারি শরীফঃ হাদিস ৫০১৫)

একাদশ আদবঃ ধৈর্য নিয়ে পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করাযিনি অনায়াসে পবিত্র আল কুরআন পড়তে পারেন না, তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেনরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র আল কুরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করে, সে সম্মানিত রসুল ও পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবেআর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দ্বিগুণ নেকি লেখা হবে(বুখারি শরীফঃ হাদিস ৪৯৩৭; মুসলিম শরীফঃ হাদিস ১৮৯৮)

দ্বাদশ আদবঃ পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করাআল্লাহ তাআলা তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে(সুরা বনি ইসরাঈলঃ আয়াত ১০৯)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাওবললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করিঅতঃপর আমি উনাকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলামযখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছেআমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনার চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে(বুখারি শরীফঃ হাদিস ৫০৫০; মুসলিম শরীফঃ হাদিস ১৯০৩)

আয়াতটি হলো, ‘যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে?’

কাসিম রহমতুল্লাহ একবার আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালামের (ঘরের) কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেনতিনি শুনতে পান, আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম একটি আয়াত শরীফ বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দোয়া করছেনআয়াতটি হলো, ‘অতঃপর মহান আল্লাহ পাক আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন(সুরা তুরঃ আয়াত ২৭)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেনআয়াত শরীফটি হলো, ‘আর মৃত্যুর যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে(সুরা ক্বফঃ আয়াত ১৯)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এ আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেনআয়াতটি হলো, ‘আর তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি তোমরা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, মহান আল্লাহ পাক সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন(সুরা বাকারাঃ আয়াত ২৮৪)

মূল কথা হলো, পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াতের সময় কান্নাকাটি করা এবং চোখে পানি আসা ঈমানের আলামতরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের পাঠকদের মধ্যে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ সর্বোত্তম, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় যে সে কাঁদছে(ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৩৯)

ত্রয়োদশ আদবঃ পবিত্র আল কুরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো এর মর্ম নিয়ে চিন্তা করাএটিই তিলাওয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদবতিলাওয়াতের সময় চিন্তা-গবেষণা করাই এর প্রকৃত সুফল বয়ে আনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে(সুরা ছ্বদঃ আয়াত ২৯)

ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা লিখেছেন, তিন দিনের কম সময়ে পবিত্র আল কুরআন খতম করা অনুচিতহাদিস শরিফে এসেছে, ‘তিন দিনের কম সময়ে যে পবিত্র আল কুরআন খতম করবে, সে পবিত্র আল কুরআন বুঝবে না(আবু দাউদঃ হাদিস ১৩৯৬)

জায়েদ বিন সাবেত রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাত দিনে পবিত্র আল কুরআন খতম করাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন? তিনি বলেন, এটা ভালোঅবশ্য আমি এটাকে ১৫ দিনে বা ১০ দিনে খতম করাই পছন্দ করিআমাকে জিজ্ঞেস করো, তা কেন? তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছিজায়েদ বলেন, যাতে আমি তার স্থানে স্থানে চিন্তা করতে পারি এবং থামতে পারি(মুয়াত্তা মালেকঃ হাদিস ৪৭২)

চতুর্দশ আদবঃ তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত এলে সিজদা দেওয়াসিজদার নিয়ম হলো, তাকবির দিয়ে সরাসরি সিজদায় চলে যাওয়া

পঞ্চদশ আদবঃ যথাসম্ভব আদবসহ বসাআর বসা, দাঁড়ানো, চলমান ও হেলান দেওয়া সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছেআল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে(সুরা আলে ইমরান আলাইহিস সালামঃ আয়াত ১৯১)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র আল কুরআন বিশুদ্ধভাবে, আদবের সহিত, সুন্দর কণ্ঠে পাঠ করার তৌফিক দান করুন আমিন। এছাড়াও আমাদের রমদ্বান, আমাদের ইফতার, তারাওয়্যি, সাহরি ও সকল ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ইবাদতকে কবুল করুন এই দোয়া করে আজকের মতো এখানেই সমাপ্তি, (وَ مَا عَلَیۡنَاۤ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ)।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: