Tuesday, May 31, 2022

যেকোন জুমু'আহ শরীফের দিনে আলোচনা করতে পারেন!


أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ, পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। পবিত্র জুমুআহ শরীফের দিন এতো গুরুত্বপূর্ণ দিন যে, এটার মর্তবা মর্যাদা, বছরের অন্যান্য সকল দিন-ই কেবল নয়, এমনকি দুই পবিত্র ঈদের দিনের চেয়েও বেশী।

হাদিস শরীফে এসেছে,

আবূ লুবাবাহ বিন আবদুল মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত - তিনি বলেননবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনজুমুআহ শরীফের দিন হলো সপ্তাহের দিনসমূহের নেতা এবং তা মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক সম্মানিত। এ দিনটি মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট কুরবানীর ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়ে অধিক সম্মানিত (এছাড়াও) এই পবিত্র দিনের রয়েছে পাঁচটি (বিশেষ) বৈশিষ্ট্যঃ

১) এ দিন মহান আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন

২) এ দিনই মহান আল্লাহ তায়ালা উনাকে পৃথিবীতে পাঠান এবং এ দিনই মহান আল্লাহ তায়ালা উনার অফাৎ (অর্থাৎ মৃত্যু) মুবারক দান করেন

৩) এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে যেকোন বান্দা যদি তখন মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে তিনি তাকে তা দান করেনযদি না সে হারাম কোন জিনিসের প্রার্থনা করে এবং

৪) এ দিনই কিয়ামাত সংঘটিত হবে

৫) নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণআসমান-যমীনবায়ুপাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সবাই পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন শংকিত থাকেন

 কিতাব সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহহাদিস নং ১০৮৪।

আর মহান আল্লাহ পাক, পবিত্র এই দিনের গুরুত্ব বোঝাতে সম্পূর্ণ একটি সূরাহ পবিত্র আল কুরআনে নাযিল করে দিয়েছেন। এছাড়াও মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ এই দিনের ব্যপারে যা মানা ফরজ, অস্বীকার করা কুফুরি, অমান্য করা কবিরা গুনাহ।

মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ] হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমুআহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ করএটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তমযদি তোমরা বুঝতে পারো

 কিতাব সূত্রঃ আল কুরআন  ৬২/৯।

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমুআহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমুআহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্থ উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ ঐ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ] অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ করযাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও

 কিতাব সূত্রঃ আল কুরআনঃ ৬২/১০।

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তায়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎজুমুআর নামায শেষ করার পর তোমরা পুনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও তবে আমার স্বরন থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কাম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যেজুমুআহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী

অতএব পবিত্র আল কুরআন ও হাদিসের থেকে আমরা পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের গুরুত্ব বুঝতে পারলাম, তাই আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা এই দিন এলেই যেনো গুরুত্ব সহকারে এই দিনের প্রতিটি হুকুম আহকাম মেনে চলতে পারি তার জন্য এই দিনের হুকুম আহকামগুলি জেনে নেওয়া আবশ্যক।

হাদিস শরীফ এসেছে, ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যেউমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু একবার জুমুআর দিন খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক সাহাবী এসে (মসজিদে) প্রবেশ করলেন। তিনি তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন এখন সময় কততিনি বললেনঃ এই তো কেবল আযানের আওয়ায শুনতে পেলাম। অযু ছাড়া আর অতিরিক্ত কিছুই করিনি। উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ কেবল অযুঅথচ আপনি জানেন যেরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তো (জুমুআর দিনে) গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন

 কিতাব সূত্রঃ আবু দাউদ ৩৬৭বুখারি ও মুসলিমতিরমিজী ৪৯৪। [আল মাদানী প্রকাশনী]

বর্ণিত হাদিস শরীফ থেকে আমরা যা বুঝতে পারলাম, তা হলোঃ জুমুআহ শরীফের দিন গোসল করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ অর্থাৎ, যারা নামায পড়েন তাদের জন্য গোসল বাধ্যতামূলক। তবে এই গোসল অন্যান্য দিনের গোসলের মতো না, বরং এর বিনিময় পাবেন কল্পনাতীত।

আওস ইবনু আওস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআ শরীফের দিনে সকাল সকাল গোসল করলো এবং (পরিবারকে) গোসল করালতারপর ইমামের নিকটে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনল তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে এক বছরের সিয়াম ও কিয়ামের (নামাযের) সওয়াব (দেওয়া হবে)। ইমাম ওয়াকী রহমতুল্লাহি আলাইহি (পরিবারকে গোসল করাল) এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ যে নিজে গোসল করল এবং তার স্ত্রীকে গোসল করাল

 কিতাব সূত্রঃ ইবনু মাজাহ ১০৮৭তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৪৯৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]

অতএব আমরা যেনো জুমুআহ শরীফের দিন গোসলের ব্যপারে উদাসীন না হই আজকের পর থেকে, এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

কেবল গোসল-ই নয়, আমরা জুমুআহ শরীফের নামাযের জন্য যে অযু করে থাকি এর ফযিলত ও কল্পনাতীত, হাদিস শরীফে এসেছেঃ আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কেউ যদি অযু করে এবং খুব ভালভাবে তা করে জুমুআহ শরীফে হাযির হয় এবং ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনেতবে তার পূর্ববর্তী জুমুআহ সহ আরো অতিরিক্ত তিন (মোট দশ) দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি তখন কংকর সরাল সে-ও অনর্থক কাজ করল

 কিতাব সূত্রঃ ইবনু মাজাহ ১০৯০তিরমিজী শরীফ ৪৯৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]

বর্ণিত হাদিসের যে ব্যক্তি তখন কংকর সরাল সে-ও অনর্থক কাজ করল বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হলোঃ খুৎবার সময় খুৎবা থেকে মনোযোগ ফিরিয়ে হাত দিয়ে একটি বালুর কনাও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানো নিষিদ্ধ, এক নামাজি অন্য নামাজীর সাথে কথা বলাও নিষিদ্ধ। এরূপ কাজ করলে সওয়াব তো যাবে উল্টো গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান, কারণঃ হাদিস শরীফে এসেছে, হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ ইমামের খুতবা প্রদানের সময় কেউ যদি (কাউকে) বলেঃ চুপ করুনতবে সেও অনর্থক কাজ করল

 কিতাব সূত্রঃ ইবনু মাজাহ ১১১০বুখারি ও মুসলিমতিরমিজী শরীফ ৫১২ [আল মাদানী প্রকাশনী]

যে অনর্থক কাজগুলো জুমআর সওয়াবকে বরবাদ করে দিবে এখন থেকে এর ব্যপারে সতর্ক থাকতে হবে। খুৎবার সময় খুতবা শোনা ছাড়া সকল প্রকার অপ্রয়োজনীয় কাজ অহেতুক কাজের অন্তর্ভুক্ত। আর অহেতুক বা অনর্থক কাজ জুমুআহ শরীফের সওয়াবকে নষ্ট করে দিবে। এমন কয়েকটি অহেতুক কাজের উদাহরণ দিচ্ছিঃ

1.      খুৎবার সময় প্রয়োজনেও মসজিদের ভেতর কথা বলা।

2.     পাশের কেউ কথা বলতে থাকলে তাকে কথা বলতে নিষেধ করা।

3.     মোবাইল ফোনে যে-কোনো কাজ করা।

4.     টাকা উঠাতে মসজিদের দানবাক্স চালানো।

5.     মসজিদের জন্য দান উঠানোর জন্য রুমাল-জায়নামাজ ইত্যাদি ব্যবহার করে ঘুরে ঘুরে দান তোলা।

6.     উপস্থিত মুসল্লিগণকে ডিঙ্গিয়ে বা দুই জনের মাঝে ফাঁকা করে সামনে অগ্রসর হওয়া।

এছাড়াও, যারা গরীব, দান সদকা করার যাদের সামর্থ্য নাই, তাদের জন্য জুমুআহ শরীফের দিনে মহান আল্লাহ পাক, বিনা ব্যয়ে দান ছ্বদাকার সওয়াব পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছেঃ আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কেউ যদি জুমুআহ শরীফের দিন জানাবাতের (অর্থাৎ ফরয) গোসল করে (প্রথম ওয়াক্তে) মসজিদে রওয়ানা হয়ে যায়তবে সে যেন (আল্লাজীর রাস্থায়) একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় মুহূর্তে গেলসে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় মুহূর্তে গেলসে যেন শিংওয়ালা একটি মেষ কুরবানী করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ মুহূর্তে গেলসে যেন একটি মুরগি কুরবানী (অর্থাৎ ছ্বদাকা) করল। যে ব্যক্তি পঞ্চম মুহূর্তে গেলসে যেন একটি ডিম কুরবানী (অর্থাৎ ছ্বদাকা) করল। অতঃপর ইমাম যখন (হুজরা থেকে নামাযের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে (মসজিদে) আসেনতখন ফেরেশতারা নামাযে উপস্থিত হয়ে খুতবা শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন

 কিতাব সূত্রঃ ইবনু মাজাহ ১০৯২তিরমিজী শরীফ ৪৯৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]

এতো এতো নেকি আর সওয়াব এই পবিত্র জুমুআহ শরীফের দিনে যা বর্ণনা করলে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে। তবে দুঃখের বিষয় যে এতো আমল করেও অনেকে তা সামান্য কিছু ভুলে হারিয়ে ফেলেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা দেরিতে মসজিদে এসে প্রথম কাতারে নামায আদায় করে বেশী সওয়াবের আশায় লোকজনকে ডিঙ্গিয়ে প্রথম সারিতে চলে যান, এটা ঠিক না। হাদিস শরীফে এই কাজের কঠিন সমালোচনা করা হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে, জাবির বিন আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ জুমুআহ শরীফের দিন রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের খুতবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। সে লোকের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে যাচ্ছিল। রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনতুমি বসোতুমি (অন্যকে) কষ্ট দিয়েছ এবং অনর্থক কাজ করেছ (ইবনু মাজাহ ১১১৫, মানঃ হসান সহিহ) অন্য হাদিসে এসেছে, মুআয ইবনু আনাস আল-জুহানী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআহ শরীফের দিন মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে গেলসে যেন জাহান্নামে যাওয়ার পুল বানাল নাউযুবিল্লাহ!

 কিতাব সূত্রঃ ইবনু মাজাহ ১১১৬তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৫১৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]

পূর্ববর্তী আহলুস সুন্নাহপন্থী আলিম উলামাগণ এই হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। তারা জুমুআহ শরীফের দিন মানুষের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়াকে নিন্দনীয় বলে অভিমত দিয়েছেন। এই বিষয়ে তারা অত্যন্ত কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন অতএব আমরা যখন জুমুআর নামাযের জন্য মসজিদে আসবো, আমরা যেনো যেখানে স্থান পাই সেখানেই বসে পড়ি। মনে রাখতে হবে, মসজিদের প্রতিটা ইঞ্চিই মহান আল্লাহ তায়ালার ঘরের অংশ। আর ইনসাফ হচ্ছে, যে আগে আসবে যে যেই হোক তার প্রায়োরিটি আল্লাহ তায়ালার নিকট সবার চেয়ে বেশী, দুনিয়াবি হিসেবে পরে আসা ব্যক্তির মর্যাদা যাই হোক না কেনো।

এবার আপনাদেরকে পবিত্র জুমুআহ শরীফের দিনের কিছু ফযিলত বর্ণনা করবো ইনশা-আল্লাহ

 রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনপবিত্র জুমুআহ শরীফের রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মারা যায়মহান আল্লাহ পাক তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দিবেন। সুবহানআল্লাহ। (তাই আমাদের উচিৎ অন্তরে এই বাসনা লালন করাআমাদের মৃত্যু যেনো মহান আল্লাহ পাক পবিত্র জুমুআহ শরীফে দান করেন।)

 কিতাব সূত্রঃ তিরমিযী শরীফ ১০৭৮

 যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআহ শরীফের দিনে সুরা কাহফ এর প্রথম ১০ আয়াত পাঠ করবেসে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে। সুবহানআল্লাহ। (অতএব দাজ্জালি ফেত্না থেকে বাঁচতে সকলের উচিৎ জুমুআহ শরীফের দিন সকালে ফজর থেকে জুমুআহ শরীফের নামাযের আগ পর্যন্ত তা পাঠ করার আমল করা)

 কিতাব সূত্রঃ মুসলিম শরীফ

 এছাড়াও রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুআহ শরীফের দিনে সূরা আল-কাহাফ পাঠ করবেতার জন্য মহান আল্লাহ পাক পবিত্র দুই জুম্মার মাঝে নূর আলোকিত করবেন

 কিতাব সূত্রঃ ইমাম নাসাঈ ও বায়হাকী হাদিসটি বর্ণনা করেন

জুমুআহ শরীফের আরেকটি ফযিলত হচ্ছে যোহরের নামাযের তুলনায় জুমুআহ শরীফের নামায একটু দেরীতে পড়া সুন্নতঃ

সুরাইজ ইবনু নুমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি- আনাস ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যেরসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম জুমুআহ শরীফের নামায (দেরীতে) আদায় করতেনযখন সূর্য হেলে যেত (অর্থাৎ সাধারণ অবস্থায় আমরা যোহরের ওয়াক্তে জামায়াত যে সময়ে করি এর চেয়ে কিছু দেরীতে করতেন)। (অথচ আমাদের অঞ্চলে দেখা যায় এই সুন্নতের উপর আমল করা হয় নাআমরা মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই সুন্নত আদায়ের তৌফিক চাচ্ছিআমিন।)

 কিতাব সূত্রঃ বুখারী শরীফজুমুআহ অধ্যায়হাদীস ৮৫৮

এর পরে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমুআহ শরীফের দিন। এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিলএই দিনেই তিনি অফাৎ লাভ করেনএই দিনেই শিঙ্গায় ফুঁ (অর্থাৎ কেয়ামত শুরু করে) দেওয়া হবে এবং সকল সৃষ্টিকূল ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই তোমরা বেশি বেশি করে আমার উপর দুরুদ পাঠ করো এই দিনেকারণ তোমাদের পাঠকৃত দুরুদ আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে। উপস্থিত সাহাবীরা বললেন, ‘ইয়া রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামযখন আপনি মাটির সাথে মিশে যাবেন (নাউযুবিল্লাহ) তখন কিভাবে আমাদের দুরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে?

নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, ‘মহান আল্লাহ পাক মাটিকে নিষেধ করেছেন (সমস্থ) নবী রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের দেহ ভক্ষণ না করতে (সুবহানআল্লাহ)। (অর্থাৎ ১ লাখ ২৪ হাজার নবী রসুলুল্লাহ আলাইহিমুস সালামউনারা প্রত্যেকেই উনাদের নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন এবং আল্লাজির ইবাদতে লিপ্ত)। (অতএব উম্মত হিসেবে আমাদের উচিৎ আমাদের উপর করা নবীর এহসানের হক্ব আদায় করাসারাটা দিন হাটাচলায়উঠা বসায়অন্তত কিছুক্ষন পর পরগুন গুনিয়ে হলেওআল্লাহুম্মা ছ্বল্লিয়ালা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদওয়ালা আলি সাইয়্যিদিনা মাওলানা মুহাম্মদ পাঠ করা)

 কিতাব সূত্রঃ আবু দাউদ শরীফঃ ৪/২৭৩

অন্য একটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যেঃ রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম জুম্মার দিনের ফযিলত সম্পর্কে বলেন, ‘জুমুআহ শরীফে এমন একটি মুহূর্ত আছে যখন একজন মুসলিমসে নামাজ আদায় করেছে এবং দোয়া করেছেসেই দোয়া কবুল করা হয়ে থাকে’ তিনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) উনার মুবারক হাতের ইশারা দিয়ে বোঝান যেতা খুব অল্প একটি সময়। (তবে সেই সময় জুমুআহ শরীফের নামায থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত কখন তা সরাসরি বলা হয়নিতাই আমাদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব এই সময়টাতে আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশী বেশী দোয়া করা।)

 কিতাব সূত্রঃ বুখারি শরীফ ও মুসলিম শরীফ

আজকে এই পর্যন্তই, আগামী সপ্তাহে ইনশা-আল্লাহ আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন, আমাদের সুস্থ-সবল রাখুন, আমাদের ৫ ওয়াক্ত নামায ইখলাস ও খুশু খুজুর সাথে আদায়ের তৌফিক দিন আমিন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: