Wednesday, June 8, 2022

পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ ৯ই জিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরির বয়ান!

أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ৯ই জিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরি। গত সপ্তাহে আমরা খন্দক যুদ্ধের আলোচনা করেছিলাম, আজকে বাকিটুকু আলোচনা করবো ইনশা-আল্লাহ।

সম্মানিত ভাইয়েরা আমার, ইসলাম বিদ্বেষ সৃষ্টির শুরু থেকেই বিদ্যমান, ইবলিশ তার কাজে কখনোই গাফেল নয়। আজকেও তা খুব জোরেশোরে চলছে। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না যে গত ২৬ মে, ভারতীয় বিজেপি সরকারের মুখপাত্র নুপুর শর্মা, “ভারতের জ্ঞানবাপী মসজিদনিয়ে  বিতর্ক চলাকালীন সময়ে একটি টেলিভিশন শোতে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালামের শাদি মুবারক নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করে।

প্রথমা আলো পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত, নূপুর নামের বদ মেয়েটির বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সর্ব প্রথম ভারতের উত্তর প্রদেশের কানপুরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংসতায় ৪০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়। সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে দেড় হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এছাড়াও তার এই কুরুচিপূর্ণ বিদ্বষী মন্তব্যের জেরে ভারতের মুসলিমদের পাশাপাশি বিদেশেও নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সৌদি আরব, ইরান, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, পাকিস্তান প্রভৃতি মুসলিম দেশ নূপুরের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানায়। কাতার বাহরাইন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে হতাশা প্রকাশ করে, একে একে সরতে থাকে ভারতীয় পণ্য আরবের সুপার সপ থেকে, মুসলিমরা প্রতিবাদস্বরূপ বর্জন করতে থাকেন ভারতীয় সকল পণ্য, এমনকি ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মচির পর্যন্ত নূপুরের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)

প্রথমে টনক না নড়লেও সমালোচনার মুখে, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক যখন নষ্টের শেষ সিমায় পৌঁছে যাচ্ছিলো, যখন বিদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের চাপ বিজেপি সরকার আর নিতে পারছিলনা, তখন এক প্রকার জান বাঁচাতে, হিন্দু মৌলবাদি নূপুরের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয় বিজেপি সরকার তাঁকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। অথচ আমাদের ৯৫% মুসলমানের দেশে এর বিরুদ্ধে বড় ধরণের কোন প্রতিবাদ না সরকার না ইসলামিক কোন সংঘটনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, অথচ আরব বিশ্বে প্রতীবাদের এমন ঝড় উঠেছে যা আরব ইতিহাসে নজিরবিহীন।

ভাইয়েরা আমার, শরীয়তে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সকল মুসলমানের উপর তৌফিক অনুসারে ফরজ করা হয়েছে, ইমানদার থাকতে হলে প্রতিবাদ আপনাকে করতেই হবে। (عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُ، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: مَنْ رَأى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أضْعَفُ الإيمَانِ) আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায়/গর্হিত কাজ হতে দেখবে, সে যেনো তা তার নিজ হাত দ্বারা প্রতিবাদ করে। যদি (তাতে) সক্ষম না হয়, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা (উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে) যদি (তাতেও) সামর্থ্য না নয়, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে) আর এটাই হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান। (বুখারী শরীফ ৯৫৬, মুসলিম শরীফ ৪৯, তিরমিযী শরীফ ২১৭২, নাসায়ী শরীফ ৫০০৮, ৫০০৯, আবূ দাউদ শরীফ ১১৪০, ৪৩৪০, ইবনু মাজাহ শরীফ ১২৭৫, ৪০১৩, আহমাদ শরীফ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১১৪৫, ১১৪৬৬, দারেমী শরীফ ২৭৪০১)

আজ আমাদের আশেপাশে ইসলাম বিদ্বেষ, মহান আল্লাহ পাক, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে, ইসলাম কুরআন কে নিয়ে কটুক্তি করা হলেও আমরা নিরব থাকি, অথচ বর্ণিত হাদিসে পাঁকে বলা হচ্ছে তৌফিক অনুসারে প্রতিবাদ করা লাগবেই না হলে ঈমানের অবস্থান নষ্ট হয়ে যাবে। একারণেই ইসলামের ইতিহাসে, যুগে যুগে অনেক জ্বিহাদ যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়েছিলো, যার মধ্যে অন্যতম ছিলো গত সপ্তাহে আলোচনা করা খন্দকের যুদ্ধ।

খন্দক শব্দের অর্থ পরিখা বা গর্ত। যেহেতু যুদ্ধে অনেক পরিখা খনন করা হয়, তাই এর নাম দেওয়া হয়েছে খন্দকের যুদ্ধ। যুদ্ধ আহযাব নামেও পরিচিত। আহযাব  অর্থ সম্মিলিত বাহিনী। আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত বিশিষ্ট সাহাবী পারস্য থেকে আগত হযরত সালমান ফারসি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম এরূপ পরিখা খননের পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনা শরীফে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণকারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কুফফার জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র সেজে থাকা মদিনা শরীফের ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসে, যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহরে আক্রমণ করতে পারে কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, কুফফারদের জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণে ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসলাম পূর্বের চেয়ে আরো বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠে। হিজরিতে বা ৬২৭ খ্রিষ্টাব্দের শাওয়াল মাসে এই যুদ্ধ শুরু হয়, প্রায় ২৭দিন ধরে আরবের মুশরিক ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা শরীফ অবরোধ করে রাখে।

আবু সুফিয়ান (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নেতৃত্বে মক্কা থেকে ১০ হাজার লোকের সম্মিলিত বাহিনী মদিনার দিকে যাত্রা করে (তখন তিনি ইসলাম গ্রহন করেন নাই, আরব মুশরিকদের নেতা ছিলেন), উনার সঙ্গে তাঁদের ৬০০ ঘোড়া কিছু উট ছিল। মক্কার কুফফারদের সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধযাত্রার খবর পেয়ে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শ করলেন, মদিনার তিন দিকে তখন খেজুর গাছের বাগান, বাকি থাকে একদিক (সালা পাহাড়কে পেছনে এবং ওহুদ পাহাড়কে সামনে রেখে পরিখা খনন হয়), সেদিকে পরিখা খননের পরামর্শ দিলেন হযরত সালমান ফারসি রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলিহিস সালাম। পরিখা খনন ছিল পারস্যের একটি যুদ্ধকৌশল, একটি ঘোড়া লাফ দিয়ে যতটুকু যেতে পারে, তার চেয়ে বেশি দূরত্বে গর্ত খনন করা হয়, তাই শুরু হলো পরিখা খনন, ১০ জন করে একটি গ্রুপ, প্রতিটি গ্রুপ দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থে ১০ হাত, গভীরতায় ১০ হাত পরিখা খনন করে ছয় দিনে পরিখা খনন শেষ হয় পরিখা খননকালে একটি বড় শক্ত পাথর সামনে পড়ে, যা ভাঙা সকলের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়ে। রসুল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি এসে আঘাত করলে তা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এটি ছিলো একটি বিরাট মুজেজা। এছাড়াও আরেকটি মুজেজা আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ঐসময় দেখান। ঘটনাটা এরূপ ছিলোঃ (حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ أَيْمَنَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ أَتَيْتُ جَابِرًا ـ رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُ ـ فَقَالَ إِنَّا يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْفِرُ فَعَرَضَتْ كُدْيَةٌ شَدِيدَةٌ، فَجَاءُوا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ فَقَالُوا هَذِهِ كُدْيَةٌ عَرَضَتْ فِي الْخَنْدَقِ، فَقَالَ ‏"‏ أَنَا نَازِلٌ ‏"‏‏.‏ ثُمَّ قَامَ وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ، وَلَبِثْنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ لاَ نَذُوقُ ذَوَاقًا، فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ الْمِعْوَلَ فَضَرَبَ، فَعَادَ كَثِيبًا أَهْيَلَ أَوْ أَهْيَمَ، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ائْذَنْ لِي إِلَى الْبَيْتِ‏.‏ فَقُلْتُ لاِمْرَأَتِي رَأَيْتُ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ شَيْئًا، مَا كَانَ فِي ذَلِكَ صَبْرٌ، فَعِنْدَكِ شَىْءٌ قَالَتْ عِنْدِي شَعِيرٌ وَعَنَاقٌ‏.‏ فَذَبَحْتُ الْعَنَاقَ وَطَحَنَتِ الشَّعِيرَ، حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ فِي الْبُرْمَةِ، ثُمَّ جِئْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ وَالْعَجِينُ قَدِ انْكَسَرَ، وَالْبُرْمَةُ بَيْنَ الأَثَافِيِّ قَدْ كَادَتْ أَنْ تَنْضَجَ فَقُلْتُ طُعَيِّمٌ لِي، فَقُمْ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلاَنِ‏.‏ قَالَ ‏"‏ كَمْ هُوَ ‏"‏‏.‏ فَذَكَرْتُ لَهُ، قَالَ ‏"‏ كَثِيرٌ طَيِّبٌ ‏"‏‏.‏ قَالَ ‏"‏ قُلْ لَهَا لاَ تَنْزِعُ الْبُرْمَةَ وَلاَ الْخُبْزَ مِنَ التَّنُّورِ حَتَّى آتِيَ ‏"‏‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ قُومُوا ‏"‏‏.‏ فَقَامَ الْمُهَاجِرُونَ وَالأَنْصَارُ، فَلَمَّا دَخَلَ عَلَى امْرَأَتِهِ قَالَ وَيْحَكِ جَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ بِالْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ وَمَنْ مَعَهُمْ‏.‏ قَالَتْ هَلْ سَأَلَكَ قُلْتُ نَعَمْ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ ادْخُلُوا وَلاَ تَضَاغَطُوا ‏"‏‏.‏ فَجَعَلَ يَكْسِرُ الْخُبْزَ وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ، وَيُخَمِّرُ الْبُرْمَةَ وَالتَّنُّورَ إِذَا أَخَذَ مِنْهُ، وَيُقَرِّبُ إِلَى أَصْحَابِهِ ثُمَّ يَنْزِعُ، فَلَمْ يَزَلْ يَكْسِرُ الْخُبْزَ وَيَغْرِفُ حَتَّى شَبِعُوا وَبَقِيَ بَقِيَّةٌ قَالَ ‏"‏ كُلِي هَذَا وَأَهْدِي، فَإِنَّ النَّاسَ أَصَابَتْهُمْ مَجَاعَةٌ) আব্দুল ওয়াহিদ ইবনে আয়মান রহমতুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট গেলে তিনি বললেন, খন্দক যুদ্ধের দিন আমরা পরিখা খনন করছিলাম। এমন সময় একখন্ড কঠিন (বড়) পাথর বেরিয়ে আসলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, খন্দকের মাঝে একখন্ড শক্ত পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাংতে পারছি না) কথা শুনে তিনি বললেন, আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব। এরপর তিনি দাঁড়ালেন। সময় উনার পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল।

আর আমরাও তিন দিন পর্যন্ত অনাহারী ছিলাম। কোনো কিছুর স্বাদও গ্রহণ করিনি। তখন নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একখানা কোদাল হাতে নিয়ে প্রস্তরখন্ডে আঘাত করলেন। ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ হয়ে বালুকারাশিতে পরিণত হল। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! আমাকে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন। (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ি পৌঁছে) আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে আমি এমন কিছু দেখলাম (ক্ষুদার তাড়নায় পেটে পাথর বাধা) যা আমি সহ্য করতে পারছি না তোমার নিকট কোনো খাবার আছে কি?

সে বলল, আমার কাছে কিছু যব একটি বকরীর বাচ্চা আছে। তখন বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম। এবং সে (আমার স্ত্রী) যব পিষে দিল। এরপর গোশত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার উপর ছিল গোশত প্রায় রান্না হয়ে আসছিল। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! আমার (বাড়িতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। আপনি একজন বা দুইজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে চলুন। তিনি বললেন, কি পরিমাণ খাবার আছে? আমি উনার নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, তো অনেক উত্তম। এরপর তিনি আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত চুলা থেকে ডেকচি রুটি না নামায়।

এরপর তিনি বললেন, উঠ! (জাবির তোমাদের খাবার দাওয়াত দিয়েছে) মুহাজিরগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন) জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললেন, তোমার উপর রহম করুন! (এখন কি হবে?) নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাঁদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন। তিনি (জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী) বললেন, তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ।

এরপর নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত হয়ে) বললেন, তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করনা, এই বলে তিনি রুটি টুকরো করে এর উপর গোশত দিয়ে সাহাবীগণের নিকট তা বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি এবং চুলা ঢেকে রেখেছিলেন। এমনি করে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে পেট ভরে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তাই তিনি (জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রীকে) বললেন, তুমি খাও এবং অন্যকে হাদিয়া দাও। কেননা লোকদেরও ক্ষুধা পেয়েছে। (বুখারি শরীফঃ ইঃফাঃ ৩৮০১, আঃনাঃ ৪১০১)

অতঃপর সম্মিলিত বাহিনী যখন মদিনা শরীফে এসেউপনীত হয়, তখন সাহাবিদের খননকাজ শেষ। ১০ হাজার সেনার বাহিনী যখন ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু ফেলে, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম তখন হাজার সাহাবি নিয়ে হাজির হলেন। দুই দল দুই দিকে, মাঝখানে খন্দক। কুরাইশ বাহিনী খন্দক দেখে পুরাই হতভম্ব।

কিন্তু আরবের মুশরিক ইহুদি গোত্রগুলো প্রথমে হতভম্ব হলেও ২৭ দিন ধরে মদিনা শরীফে অবরোধ করে রাখে। এই অবরোধ এত কঠিন ছিল যে মুসলমানদের বহু বেলা খাবার না খেয়ে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু অবরোধকারীরা কিছুতেই পরিখা পার হতে পারল না। রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার সৈন্যদের পরিখার বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করলেন। কাফেররা বাইরে থেকে পাথর তির ছুড়তে শুরু করলে এদিক থেকেও তার প্রত্যুত্তর দেওয়া হলো। এরই ভেতর বিক্ষিপ্তভাবে দু-একটি হামলাও চলতে লাগল। অবরোধ যত দীর্ঘায়িত হলো, শত্রুদের উৎসাহও তত কমতে লাগল। ১০ হাজার লোকের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। তার ওপর ছিল প্রচণ্ড শীত। এরই মধ্যে একদিন এমন প্রচণ্ড বেগে মরু ঝড় বইল যে কাফেরদের সব ছাউনি উড়ে গেল। তাদের সৈন্যসামন্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। তাদের ওপর যেন মহান আল্লাহ পাঁকের গজব নেমে এল। আর বাস্তবিকই মহান আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য রহমত এবং কাফেরদের জন্য আজাব হিসেবেই ঝড় পাঠিয়েছিলেন। কাফেররা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারল না। অবস্থা বেগতিক দেখে ইহুদিরা আগেই সরে পড়েছিল। কুরাইশদেরও ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় রইল না।

আহযাব যুদ্ধে জন মুসলিম শহীদ হন। অন্যদিকে, শত্রুপক্ষে জন মারা যায়। অবরোধের সময় সম্পর্কে কেউ বলেছেন ২৪ দিন, কেউ কেউ ১৫ দিন। খন্দক যুদ্ধ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক সুরা আহযাবের থেকে ২৭ নং আয়াত পর্যন্ত নাজিল করেন, যাতে এই যুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। খন্দক আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, ইমান ধৈর্যের সঙ্গে মহান আল্লাহ পাঁকের ওপর আস্থা স্থাপন করলে মহান আল্লাহ পাঁকের রহমত থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না।

খন্দক যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের নামাজ কাজা হওয়াঃ (قَالَ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ جَاءَهُ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ يَوْمَ الْخَنْدَقِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَاللَّهِ مَا كِدْتُ أَنْ أُصَلِّيَ حَتَّى كَادَتِ الشَّمْسُ تَغْرُبُ، وَذَلِكَ بَعْدَ مَا أَفْطَرَ الصَّائِمُ‏.‏ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ‏ "‏ وَاللَّهِ مَا صَلَّيْتُهَا ‏"‏ فَنَزَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ إِلَى بُطْحَانَ وَأَنَا مَعَهُ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ صَلَّى ـ يَعْنِي الْعَصْرَ ـ بَعْدَ مَا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى بَعْدَهَا الْمَغْرِبَ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন উমর ইবনু খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম! মহান আল্লাহ পাঁকের কসম! আমি নামায আদায় করতে পারিনি, এমন কি সুর্য ডুবতে লাগলো, (জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন) যখন কথা হচ্ছিল তখন এমন সময়, যে রোযা পালনকারী ইফতার করে ফেলেন। নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মহান আল্লাহ পাঁকের কসম! আমিও সে নামাজ আদায় করিনি। তারপর নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বুহতাননামক উপত্যকায় গেলেন, আমিও উনার সঙ্গে ছিলাম। সেখানে তিনি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে তিনি (প্রথমে) আসরের নামাজ আদায় করলেন, এরপর তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। (বুখারি শরীফঃ ইঃফাঃ ৬১৩, আঃনাঃ৬৪১)

এই ঘটনা থেকে আমরা একটি মাসআলা শিখলাম, যেকোন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে নামাজ কাজা হলে প্রথমে যে নামাজ ছাড়া হয়েছে তা আদায় করে পরে সময়ের ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা সুন্নতে রসূল, সুন্নতে সাহাবা।

যাইহোক আগামী সপ্তাহে ইনশা-আল্লাহ এই গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধের পরে ইহুদীদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিলো তার বিস্তারিত আলোচনা করবো, আর প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে জুমুআহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমুআহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পারো। (সূরাহ জুমুআহ শরীফ ৬২/)

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমুআহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমুআহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্থ উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও। (সূরাহ জুমুআহ শরীফ ৬২/১০)

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তায়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমুআর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কামে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্বরন থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কাম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমুআহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।

এছাড়াও যারা নিয়মিত নামায পড়েন, জুমুআতে আসেন, তারা যেনো সুন্নাহ অনুসরণ করেই মসজিদে আসেন, এতে রহমত বরকতপ্রাপ্ত হবেন, শাওয়ার বা পুকুরে এক ডুইব দিয়েই যেকোন একটা পোশাক পরে জুমুআর দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের উদ্যেশে মসজিদে না এসে ভালো মতো প্রিপারেশন নিয়েই আসবেন। হাদিস শরীফে হযরত, (عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيّ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ  لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى) “সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর (নামাযের উদ্যেশ্যে) বের হয় এবং (মসজিদে প্রবেশ করে) দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে (যেখানে যায়গা পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়), অতঃপর তার নির্ধারিত নামায আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সেই জুমুআহ শরীফের (নামায) থেকে পরের জুমুআহ শরীফের (নামাযের আগ) পর্যন্ত (মধ্যবর্তী) সময়ের (মধ্যে ঘটা) যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরিফঃ ইঃফাঃ ৮৩৯, আঃনাঃ ৮৮৩)

জুমু শরীফের দিনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, না আছে সুযোগ জুমুআর নামায কে অবহেলার। হদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ـ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ قَبْلَ أَنْ تَمُوتُوا وَبَادِرُوا بِالأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ قَبْلَ أَنْ تُشْغَلُوا وَصِلُوا الَّذِي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ بِكَثْرَةِ ذِكْرِكُمْ لَهُ وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ تُرْزَقُوا وَتُنْصَرُوا وَتُجْبَرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْكُمُ الْجُمُعَةَ فِي مَقَامِي هَذَا فِي يَوْمِي هَذَا فِي شَهْرِي هَذَا مِنْ عَامِي هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ تَرَكَهَا فِي حَيَاتِي أَوْ بَعْدِي وَلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ أَوْ جَائِرٌ اسْتِخْفَافًا بِهَا أَوْ جُحُودًا بِهَا فَلاَ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ شَمْلَهُ وَلاَ بَارَكَ لَهُ فِي أَمْرِهِ أَلاَ وَلاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ زَكَاةَ لَهُ وَلاَ حَجَّ لَهُ وَلاَ صَوْمَ لَهُ وَلاَ بِرَّ لَهُ حَتَّى يَتُوبَ فَمَنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَلاَ لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً وَلاَ يَؤُمَّنَّ أَعْرَابِيٌّ مُهَاجِرًا وَلاَ يَؤُمَّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا إِلاَّ أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ وَسَوْطَهُ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।

তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআর নামাযকে ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার (মুবারক) জিন্দেগীতে বা আমার প্রস্থানের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআর নামাযকে তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, মহান আল্লাহ পাক তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না (অর্থাৎ তার জুনিয়াবি জঞ্জালগুলি আরো জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে) এবং তার কাজে-কর্মে বরকত দান করবেন না। নাউযুবিল্লাহ!

(অতএব) সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! কোনো নারীকে পুরুষের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো বেদুইনকে কোনো মুহাজিরের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো খারাপ ব্যক্তিকে কোনো (সত্যিকার) মুমিনের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা। তবে কোন স্বৈরাচারী শাসক যদি বাধ্য করে এবং তার তরবারি চাবুকের ভয় থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। (ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১০৮১)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমুআহ শরীফ সহ দৈনিক ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: