Sunday, June 19, 2022

১৪০০ পশুর কুরবানি করে গোশত মওজুদ নাকি বন্যার্তদের ত্রানের হুকুম দেন শরীয়ত?

ছবিতে তো সবাই সিলেটের বর্তমান অবস্থা অবলোকন করেছেন, এবং নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়া ও সয়লাভ সিলেটের বর্তমান পরিস্থিতির ব্যপারে। এই মুহূর্তে এইসব বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো মুমিন দাবিকারী আশেপাশের সকল মানুষের উপর ফরজ কাজ। দূর বিদেশে থাকা মানুষের উপরও ওয়াজিব বটে। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করবে।

যাইহোক, মূল বিষয়ে আসি, যে কারণে এই পোষ্ট এর অবতারণা। আমি যে রাজারবাগীদের মুশরিক হিসেবে প্রমান করেছি তাদের পির দিল্লুর রহমান অরূনের বিভিন্ন শিরকী আর কুফরি কাজের বিনিময়ে তা এবারো প্রমান পাবেন। হাদিসে এসেছেঃ (عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَثَلُ الْمُؤْمِنِينَ فِي تَوَادِّهِمْ وَتَرَاحُمِهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ مَثَلُ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى) নুমান ইবনু বাশীর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানব দেহের ন্যায় যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্ৰা। (মুসলিম শরীফঃ ইঃফাঃ ৬৩৫০, ইঃসেঃ ৬৪০০, হাঃএঃ ৬৪৮০, আঃনাঃ ২৫৮৬)

অথচ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সিলেটি ও বাংলাদেশী মুসলিম যার যা সামর্থ্য সাহায্য করে গেলেও, নিজেকে আস ছমাদ, রহমাতুল্লীল আলামিন, ক্বায়ীম মাক্বামে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম, আস-সাফফাহ, দ্বশম খলীফা, আহলে বাইত, আওলাদে রসূল দাবীদার কাজ্জাব রাজারবাগি পির, মুশরিক দিল্লুর রহমান অরূন কোন সাহায্য তো করেই নাই উল্টো মুরিদ-দের দিয়ে এই কঠিন সময়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় কি প্রচার চালাচ্ছে নিজেই দেখুন স্ক্রিনশটেঃ

এবার আসি, ১৪০০ পশুর কুরবানি না বন্যার্তদের পাশে দাড়ানো ওয়াজিব এই বিষয়ে?

যখন মানুষের ঘর, বাড়ী, সহায়, সম্পদ বন্যার পানি দ্বারা নিশ্চিনহ হয়ে গেছে তখন মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা না করে ১৪০০ কুরবানী নামাক রিয়ায় ভরা ইবাদত দ্বারা নিজেকে সবচেয়ে বড় মুসলমান হিসেবে জাহির করতে চায়। এছাড়াও যদি এই কুরবানি এমন হতো যে, দিল্লুর রহমান ১৪০০ পশু কুরবানি করে সমগ্র ঢাকা শহরের ভাসমান, গরীব দুঃখীর মধ্যে বিলিয়ে দেয় তাহলেও এক কথা ছিলো, কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবতা হলো যে, সে তার আমার দেখা মিনিমাম ২৫ টনের কম হবেনা ফ্রিজে সম্পূর্ণ কুরবানির গোশত মওজুদ করে রাখবে। এই গোশত সে সারা বছর কথিত মুরিদদের নিয়েই খাবে, নিজের ১৪ গোষ্ঠীর মাহফিল করবে, এমনকি (আমি শিউর নই একটি বিষয়ে, তার কথিত ক্যান্টিনে এই কুরাবানীর গোসত থেকেই বিক্রি করে কি না, আমি নির্ভরযোগ্য খবরের অপেক্ষায় রয়েছি)। এছাড়া সে কেবল তার কুরবানির চামড়াই নয়, বরং তার চাঁদাবাজ মুরিদদের দিয়ে এতিমদের নামে মিথ্যাচার করে মানুষের থেকে চামড়া কালেকশন করে, যা মিনিমাম ৫০০০ এর কম হবেনা। এই চামড়া বিক্রি করে সব টাকাই তার তহবিলে জমা হয়। কোন অবস্থায় কোন এতিমের হাতে এইসব টাকার একটি পয়সাও যাবেনা।

আজকে যদি সে এই কোরবানি করে সিলেটের বন্যার্ত মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতো তাহলে আলহামদুলিল্লাহ বলতাম। কিন্তু আফসোস, উপরে স্ক্রিনশট তো দেখেছেন-ই, সাহায্য তো করবেইনা উল্টো বলতেছে বন্যা নাকি তাকে যাকাত না দেওয়ার কারণে হয়েছে, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নাকি তার নাপাক কদমে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!!!

কুরবানি সম্পর্কে, মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ) (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আল্লাম) অতএব (আপনি) আপনার রবের উদ্দেশ্যেই নামাজ পড়ুন এবং নহর করুন। (আল কুরআন ১০৮/২)

অধিকাংশ সালাফি আলিমরা কুরবানী ওয়াজিব মনে করেনা, এবং অনেকে (نحر) এর তাফসীর করেছেনঃ “নামাযের সময়ে ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকে বাধা”। তবে আমি যেহেতু উক্ত তাফসির ও মত গ্রহন না করে কুরবানি ওয়াজিব বলেই মনে করি, এবং রাজারবাগি মুশরিকরাও যেহেতু মনে করে সেহেতু দলিল দিয়ে ওয়াজিব প্রমানের কোন প্রয়োজন নাই। হ্যাঁ তবে তা কেমন ওয়াজিব তা বুঝতে হবেঃ

আরবে সাধারণত উটকে কুরবানী করা হত হজ্জের সময়, ইসলাম পূর্ব আরবে মুশরিকরাও বিভিন্ন দেব দেবির নামে কুরবানী দিতো। একারণেই আল্লাহ পাঁক এইখানে (نحر) শব্দ ব্যবহার করেছেন। (نحر) শব্দের অর্থ উট কুরবানী করা। এর প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে হাত-পা বেঁধে কণ্ঠনালীতে বর্শা অথবা ছুরি দিয়ে আঘাত করা এবং রক্ত বের করে দেয়া। গরু-ছাগল ইত্যাদির কুরবানীর পদ্ধতি যাবাই করা। অর্থাৎ জন্তুকে শুইয়ে কণ্ঠনালিতে ছুরি চালিয়ে রক্ত প্রবাহিত করা। কিন্তু আরবে সাধারণতঃ উট কুরবানী করা হতো। তাই কুরবানী বোঝাবার জন্য এখানে (نحر) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ আয়াতে পাঁকের পূর্ববর্তী আয়াতে প্রদত্ত কাউসারের কারণে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দুটি কাজ করতে বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাঁক রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিচ্ছেন, মুশরিকদের বিপরীত করুনঃ নামাজ ইখলাসের সহিত কেবল মহান আল্লাহ তা’আলার উদ্যেশ্যেই আদায় করেন, এবং মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যের নামে পশু উৎসর্গ করবেন না।

পাঠক লক্ষ্য করুনঃ মহান আল্লাহ পাক কুরবানির বেলায়, কি বলেছেন? আর অভাবি গরীব মানুষের প্রয়োজনের বিপরীতে ধনীদের কি নির্দেশ দিচ্ছেন?

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে (সম্মানিত) কাওসার দান করেছি। অতএব (শুকরিয়াস্বরূপ) আপনি আপনার স্বীয় প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায এবং কুরবানী করুন। আর নিস্বন্দেহে আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীরাই তো নির্বংশ। (আল কুরআন ১০৮/২)

অর্থাৎ হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আপনি নফল নামায ও কুরবানীর মাধ্যমে লা-শারীক এক আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করুন। যেমন কুরআনের অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ لَا شَرِیۡکَ لَهٗ ۚ وَ بِذٰلِکَ اُمِرۡتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ) (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) বলুন, আমার নামায, আমার যাবতীয় “ইবাদাত, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) সমস্ত আলমের রব মহান আল্লাহ তা’আলার জন্যই (নিবেদিত)। “উনার কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমিই হলাম প্রথম মুসলমান”। (আল কুরআন ৬/১৬২-১৬৩) আয়াতে পাঁকে কুরবানী দ্বারা এখানে উট বা অন্য পশু কুরবানীর কথা বলেছেন মহান আল্লাহ পাঁক। কারণ মুশরিকরা তাদের কথিত ইবাদত “সিজদা” এবং “কুরবানী” মহান আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যদের নামে করতো। তাই এখানে মহান আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিচ্ছেন, “তোমরা শুধুমাত্র মহান আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করো”। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (وَ لَا تَاۡکُلُوۡا مِمَّا لَمۡ یُذۡکَرِ اسۡمُ اللّٰهِ عَلَیۡهِ وَ اِنَّهٗ لَفِسۡقٌ) অর্থাৎ যে পশু জবাইয়ের সময় মহান আল্লাহ তা’আলার নাম নেয়া হয় না, তা তোমরা খেয়োনা, কেননা এটা হচ্ছে পাপাচার।” (আল কুরআন ৬:১২১)

বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট শিরকি আক্বিদাহ পোষণকারীরা উপরোক্ত আয়াত দিয়ে ১৪০০ কুরবানী ওয়াজিব বানিয়ে দিতে চায়, নাউযুবিল্লাহ!!! অথচ এই আয়াতে মহান আল্লাহ পাঁক কি বলছেন তা বুঝেইনাই। আসুন আমরা বুঝার চেষ্টা করি?

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ) আমি প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য মানাসাক (১) এর নিয়ম করে দিয়েছি। যাতে তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, ঐসকল (পশু জবাইয়ের সময় তার) উপর তারা মহান আল্লাহ তা’আলার নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মা‘বূদ একই মা‘বূদ, কাজেই উনারই নিকট আত্মসমর্পণ করো এবং সুসংবাদ দিন বিনীতদেরকে।

অর্থাৎ হজ্জের ক্রিয়াকর্ম শরিয়তসম্মত উপায়ে কিভাবে সম্পাদন করা লাগবে, তন্মধ্যে কুরবানির পশু কিভাবে কুরবানি করা লাগবে সেটাও বলে দিচ্ছেন। অথচ এই আয়াত শরীফ দিয়ে ১৪০০ কুরবানি ওয়াজিব করে দিতে চায়। নাউযুবিল্লাহ। এইখানে মহান আল্লাহ পাক হজ্জের সময় মক্কায় হাজিদের কুরবানী করার নিয়ম বলে দিয়েছেন। ঢাকায় থাকা কোন মুশরিকের উপর ১৪০০ পশু কুরবানির হুকুম দেন নাই যখন পাশের শহরে বন্যায় মানুষের জীবন যায় খাবারের অভাবে।

(১) আরবী ভাষায় منسكنسك কয়েক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, জন্তু যবেহ করা, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম, ঈদের জন্য একত্রিত হওয়া ইত্যাদি। তাফসীরকারক মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ অনেকে এখানে منسك এর অর্থ হাদঈর প্রাণী যবেহ করা নিয়েছেন। তখন আয়াতের অর্থ হবে, এই উম্মতকে হাদঈ যবেহ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, তা কোন নতুন আদেশ নয়, পূর্ববর্তী উম্মতদেরকেও এ ধরনের আদেশ দেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সমস্ত উম্মতের মধ্যে, সমস্ত মাযহাবে এবং সমস্ত দলে আমি কুরবানীর নিয়ম চালু করে দিয়েছিলাম। তাদের জন্যে ঈদের একটা দিন নির্ধারিত ছিল। তারাও মহান আল্লাহ তা’আলার নামে পশু জবাই করতো। সবাই মক্কা শরীফে নিজেদের কুরবানীর জন্তু পাঠিয়ে দিতো। যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি, সেগুলির উপর মহান আল্লাহ তা’আলার নাম উচ্চারণ করা হয় জবাইয়ের সময়। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের নিকটও সাদা কালো মিশ্রিত রঙ এর বড় বড় শিং বিশিষ্ট দুটি ভেড়া আনয়ন করা হয়। তিনি সেগুলিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে সেগুলোর গর্দানে পা রেখে বিসমিল্লাহি আল্লাহু-আক্ববার বলে জবাই করেন। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম রহমতুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে মহান আল্লাহ পাঁকের রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানীর হুকুম কি (ফরজ)”? জবাবে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “এটা তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীমের আলাইহিস সালামের সুন্নত।” তারা আবার জিজ্ঞেস করেনঃ “আমরা এতে কি পরিমাণ পূণ্য লাভ করি?” উত্তরে বলেনঃ “প্রত্যেক চুলের বিনিময়ে এক নেকী।" পুনরায় তারা প্রশ্ন করেনঃ “পশমের হুকুম কি?” তিনি জবাব দেনঃ “ওর প্রত্যেক লোমের বিনিময়েও এক নেকি।” (তাফসির দেখুন) পক্ষান্তরে কাতাদাহ রহমতুল্লাহর মতে আয়াতের অর্থ এই যে, হজ্জের ক্রিয়াকর্ম যেমন এই উম্মতের উপর আরোপ করা হয়েছে, তেমনি পূর্ববর্তী উম্মতদের উপরও হজ্জ ফরয করা হয়েছিল। তখন মক্কার সাথে এটি সুনির্দিষ্ট হবে। হজ্জের জায়গা মক্কা ছাড়া আর কোথাও ছিল না। তখন منسك শব্দের অর্থ হবে হজ্জ এর স্থান। (তাফসীর দেখুন) তবে প্রথম মতটি বেশী বিশুদ্ধ। পরবর্তী আয়াতাংশ এর উপর প্রমাণবাহ। (কুরতুবী; ফাতহুল ক্বদীর)

মহান আল্লাহ তা’আলার হুকুম মুসলিম মিল্লাতের উপর কুরবানীর জন্য কিন্তু তা কি ১৪০০? নাকি    সর্বনিম্ন একটি, এক    অংশ? এছাড়াও যখন কেউ পশু জবাই করবে তখন যেনো সেটা মহান আল্লাহ তা’আলার নামেই করে, যাতে খাওয়ার জন্য তা হালাল হয়, মূলত এটাই বার বার স্বরন করিয়ে দিচ্ছেন। আর সর্বনিম্ন একটি পশু (ছাগল, ভেড়া, দুম্বা) এবং এক পশুর ৭/১ ভাগ (উট, মহিষ, গরু) কুরাবনী করা ওয়াজিব হয়েছে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কওল ও ফেল দ্বারা। একারনে কেউ ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব কুরবানি ছেড়ে দিলে কবিরা গুনাহ করবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহের মধ্যে এমন কোন হুকুম পাওয়া যায় নাই যে মানুষ কুরবানীর মাসে বন্যায় ঘর, বাড়ি, টাকা পয়সা, ধন দৌলত হারিয়ে, আশ্রয়হীন হয়ে, খাবারের অভাবে মারা যাবে আর কেউ ১৪০০ পশু কুরবানি করে গোশত মওজুদ করে সারা বছর মাহফিল করবে। বরং মহান আল্লাহ পাক হুকুম দিচ্ছেনঃ (وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَقۡرِضُوا اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا) আর (তোমরা) নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান করো এবং মহান আল্লাহ তা’আলাকে দাও উত্তম ঋণ। (আল কুরআন ৭৩/২০)

নামায কায়েম ও যাকাত আদায় তো মুসলমান করছেই, কিন্তু মহান আল্লাহ তা’আলাকে যে ঋন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তা কি পালন করছে? এছাড়াও মহান আল্লাহ তা’আলা এইসব বন্যার্ত অভাবি মানুষের ব্যপারে কি বলেছেন দেখুনঃ (اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا هِیَ ۚ وَ اِنۡ تُخۡفُوۡهَا وَ تُؤۡتُوۡهَا الۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَ یُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ) তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তাও উত্তম, কিন্তু যদি তোমরা তা গোপনে করে থাকো এবং তা (যদি) অভাবগ্রস্তদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম, এবং এর দ্বারা তোমাদের কিছু পাপ (এর কালিমা তিনি) মোচন করে দেবেন; আর তোমরা যে আমল কর মহান আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত। (আল কুরআন ২/২৭১)

বিখ্যাত সুফী ইমাম আল কুশায়রী নিশাপুরি রহমতুল্লাহ বলেন, “কর্যে হাসানার ১০টি শর্ত রয়েছে” সূরাহ আলে ইমরানের উক্ত আয়াতের হুকুম তন্মধ্যে একটিঃ ( لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ) তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহ তা’আলার উদ্যেশে) ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনই নেকি লাভ করতে পারবেনা; এবং তোমরা যা কিছুই ব্যয় কর, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তা’আলা সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত আছেন। (আল কুরআন ৩/৯২)

আর হাদিসে এসেছে, (عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي ‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ ‏.‏ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي ‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ ‏.‏ قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي ‏.‏ قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي) আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনার খোজ-খবর করব, অথচ আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক। মহান আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিলেন, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে।

(অতঃপর মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ)

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে খেতে দাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কি করে আপনাকে আহার করাতে পারি! আমি তো সারা জাহানের প্রতিপালক। তিনি (মহান আল্লাহ তা’আলা) বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে আহার চেয়েছিলেন? তুমি তাকে খেতে দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে আহার করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে (আজ) পেতে।

(অতঃপর মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ)

হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। সে (বান্দা) বলবে, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমি কী করে আপনাকে পান করাব, অথচ আপনি সারা জাহানের প্রতিপালক। মহান আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানীয় চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। যদি তুমি তাকে পান করাতে, তবে তা আমার কাছে (আজ) পেতে। (মুসলিম শরীফ ৬৩২২)

অথচ আজ উপরোক্ত কুরআন হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশ, আল্লাহ তাআলার বান্দাদের সাহায্য করো আল্লাজীর সন্তুষ্টির জন্য, অভাবগ্রস্তদেরকে দান কর তাদের কঠিন প্রয়োজনের সময়, তাদের খাবার দাও, পানি দাও-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মানুষকে সাহায্য না করে ১৪০০ কুরবানী করে টন কে টন গোশত মওজুদ করে দিল্লুর রহমান নিজেকে বিরাট কিছু ভাবে তখন কেবল আশ্চর্য হই। বাকিটা পাঠকের উপর ছেঁড়ে দিলাম, কি পরিমান ঘৃণা আপনি করবেন দিল্লুর রহমান অরূন নামক মুশরিক পিরটার প্রতি। তাছাড়া এদের হাক্বিকত তো দেড় যুগ আগেই প্রকাশ করেছিলো অনেকেই।

এবার আসুন দেখি কারা কারা উপরোক্ত আয়াত অনুসরণ করে মানুষের এই কঠিন বিপদে পাশে দাড়িয়েছে সবকিছু উজাড় করে?

সিলেটের ফুলতলি দরবার এর কার্যক্রমঃ 


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কিছু কার্যক্রমঃ


সিলেটে বন্যা দুর্গতদের পাশে দাওয়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ত্রানঃ


বাকিদের আপডেট আসছে............।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

3 comments:

  1. মা শা আল্লাহ! খুব সুন্দর তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক আলোচনা। একই সাথে বাতিল ফিরকার মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাসায়েলের অবতারণা আপনার এই লেখাকে সমৃদ্ব করেছে।
    জাযাকাল্লাহু খাইর মুহতারাম।

    ReplyDelete
  2. prthom dui post dorbar shorif nijukto keo na , ar tader ei dhoroner post dite mana kora hoy kintu tara ta dey.

    ReplyDelete
  3. বন্যা কবলিত থেকে তোমার আমার নবী উনার জন্মদিনের জন্য প্রতি আরবি মাসের ১২ তারিখে মিলাদ ক্বিয়াম অনুষ্ঠান করেই বিভিন্ন লোকদের খাওয়ানো এবং বিভিন্ন আইয়্যামুল্লাহ শরীফেও খাওয়ানো হয়, যা তুমি নিজেও খেয়েছো। আর এটাও জানো সকল কিছুর চেয়ে সবচেয়ে বড় আমল হলো নূর নবীজিকে খুশি করা।

    ReplyDelete