Monday, July 24, 2023

ইস্তিমনা বিল কাফ কে যায়েজ বলা কি যাকির নায়েক এর জন্যে যায়েজ?

নারে পরিপূর্ণ যুব সমাজকে খুব সহজে নিজের পূজারী বানানোর সহজ তরীকা হলো, যুব সমাজ যেসব জিনিষ পছন্দ করে সেসব জিনিষে ইসলামের মোড়কে উপস্থাপন করা, যদিও তা হারাম নাযায়েজ হয়ে থাকে। তাহলে খুব সহজে তাদের নিজের অনুসারী বানিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করা যায়। যেমন হস্ত মৈথুন যায়েজ বলা, নারীদের পর্দায় মুখ না ঢাকলেও পর্দা হবে, নারী পুরুষ একসাথে বেপর্দা হয়ে বসে দ্বীন শিখতে পারবে। বিয়ের পূর্বে প্রেম ভালোবাসা ডেটিং যায়েজ হালাল প্রেম হলে।

প্রথমে ভারতীয় আহলে হাদিসের মুল্লাদের ই জবাব শুনে নেওয়া যাক জাকির ডাক্তারের ব্যপারেঃ

যাইহোক মূল বিষয়ে আসি, যদিও মহান আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেনঃ (فَسۡـَٔلُوۡۤا اَہۡلَ الذِّکۡرِ اِنۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ) (দ্বীনের কোন বিষয়ে) তোমরা যদি না জানো তাহলে (তোমাদের মধ্যে) যারা আহলে যিকর তাদেরকে জিজ্ঞেস করে (জেনে নাও)। (আল কুরআনঃ ১৬/৪৩, ২১/৭)

অথচ মানুষ ডাক্তার কবিরাজ বিজ্ঞানী সেলিব্রিটিদের থেকে ইউটিউব ফেইসবুকে গিয়ে দ্বীন শিখতেছে, বুঝেইনা যে তার এই আচরণ পুরোটাই কুরআন বিরোধী, বরং আল্লাজী উনার নাফরমানী বলা যায়।

যাইহোক জাকির ডাক্তার যে ফতোয়া দিলো, সম্মানিত দ্বীন ইসলামে মাস্টারবেশন বা হস্তমৈথুন করায় কোন সমস্যা নাই, তা কি কুরআন ছুন্নাহ সম্মত আসুন জেনে নেই, ঈমান বাঁচাই।

শাফেয়ী, মালেকি, হানাফি যারা উলামায়ে হক্ব ছিলেন, উনাদের নিকট এই হস্তমৈথুন একটি হারাম, না যায়েজ কাজ বলেই প্রসিদ্ধ ছিলো, আজও আছে। (হ্যা কোন মানুষ যদি এমন কোন অসুস্থতায় পতিত হয় যে সে বিয়ে করতে পারবেনা, আবার তার শারীরিক চাহিদা প্রবোল তখন কেবল তার জন্য ইয়া অনুরূপ যায়েজ যেরূপ প্রান বাঁচাতে শুকরের গোশত খাওয়া।)

প্রথমেই একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, যেকোন বিষয় কে হালাল বা হারাম সাব্যস্ত করার একমাত্র পথ হলো এর স্বপক্ষে কুরআন বা সুন্নাহ তথা হাদিছ শরীফের দলিল থাকতে হবে। কিন্তু যদি কুরআন শরীফের বিপরীতে হাদিছ শরীফের দলিল ও আসে তাহলে সেই হাদিছ শরীফ কবুল করা হবেনা যদিও সনদ মতন হাসান সহিহ হয়ে থাকে। আর এটাই উসুল।

ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহী আলাইহি উনার সম্মুখে যখন এই বিষয় উপস্থাপন করা হয় বিভিন্ন আছার পেশ করে, তখন তিনি বলেনঃ “ইস্তিমনা বিল কাফের ব্যপারে যত রেওয়ায়েত আমাদের নিকট এসেছে, এর সনদ মতন যত সহিহ ই হোক, যতো আলা দরজার ই হোক, যত ভেরিফাইড রাবিই হোন বা সাহাবী হোন না কেন, সব একপাশে রেখে দিতে হবে, কোন রেওয়ায়েতই কবুল করা যাবেনা, কারন কালামুল্লাহ শরীফের বিলকুলই ১৮০* বিপরীত।

এখন কথা হলো “ইস্তিমনা বিল কাফ” কীভাবে খেলাফে কুরআন হয় এটা ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহ এইভাবে বর্ণনা করছেনঃ (وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِفُرُوۡجِہِمۡ حٰفِظُوۡنَ اِلَّا عَلٰۤی اَزۡوَاجِہِمۡ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُمۡ فَاِنَّہُمۡ غَیۡرُ مَلُوۡمِیۡنَ فَمَنِ ابۡتَغٰی وَرَآءَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡعٰدُوۡنَ) আর যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, তবে আপন স্ত্রী, কিংবা নিজেদের অধিকারভুক্ত দাসীদের বেলায় (এ বিধান প্রযোজ্য) নয়, (বরং এদের সাথে শারীরিক চাহিদা মেটানোতে) তারা কখনো তিরস্কৃত হবে না, কিন্তু এই (বিধিবদ্ধ উপায়) ছাড়া যদি অন্য কোনো (পন্থায় কেউ শারীরিক চাহিদা মেটাতে) চায়, তাহলে তারা হবে সীমালংঘনকারী (জালিম)। (আল কুরআন ২৩/৫-৭, ৭০/২৯-৩১)।

এই আয়াত শরীফের ব্যপারে ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহ বলতেছেন যে মহান আল্লাহ তায়ালা বড় স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, তোমরা তোমাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করো। যেখানে সেখানে এটার ব্যবহার করনা, তবে হ্যা তোমাদের কেবল এই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে যে তোমাদের স্ত্রী ও যারা ক্রীতদাসী রয়েছে তোমাদের মালিকানায় তাদের বেলায় লজ্জাস্থানের ব্যবহারে কোন গুনাহ নাই। এরপর আল্লাহ পাক বলতেছেন যে স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ব্যতীত অন্য যেকোন পন্থায় যারাই তাদের লজ্জাস্থানের ব্যবহার করবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী বা জালিম।

এছাড়াও ছুরা নূর মুবারকের ৩৩ নং আয়াত শরিফেও মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলতেছেনঃ (وَ لۡیَسۡتَعۡفِفِ الَّذِیۡنَ لَا یَجِدُوۡنَ نِکَاحًا حَتّٰی یُغۡنِیَہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ) আর যাদের বিবাহের (ব্যায়ভার বহনের) সামর্থ্য নেই, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম (পবিত্রতার পথ) অবলম্বন করে (ছুরা নূর ২৪/৩৩)।

এই আয়াত শরীফেও মহান আল্লাহ তায়ালা বড় স্পষ্ট ভাষায় বলতেছেন যে ফিনান্সিয়াল সমস্যার কারনে যদি কেউ বিয়ে করতে না পারে তাহলে সে যেনো সবর করে ধর্য ধরে জিনা থেকে পাক পবিত্র থাকে, যতক্ষন না মহান আল্লাহ পাক তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাল দিয়ে সক্ষম করে দিচ্ছেন। আল্লাহ পাক তৃতীয় কোন বিষয়ে ইঙ্গিত পর্যন্ত দেন নাই, যেখানে জীবন এর প্রয়োজনে খাবার এর বেলায় হারাম গোশত খাওয়ায় কোন দোষ নেই বলতে দ্বীধা করেন নাই। আর্থিকভাবে সক্ষম না হলেও বিবাহ করা বৈধ; তবে অভাব দূর না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ না করে যৌন-পীড়নে ধৈর্য ধরাই উত্তমযতদিন বিবাহের সামর্থ্য না থাকবে, ততদিন পাক-পবিত্র থাকার জন্য নফল রোযা রাখার উপর হাদীছ শরীফে তাকীদ করা হয়েছে যেমনঃ “হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে বিয়ে করতে পারে তার বিয়ে করে নেয়া উচিতকারণ এটি হচ্ছে চোখকে জিনা থেকে বাঁচাবার এবং মানুষের সততা ও চারিত্রিক পবিত্ৰতা রক্ষার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায়আর যার বিয়ে করার ক্ষমতা নেই তার উচিৎ রোজা রাখা। কারণ রোজা মানুষের দেহের উত্তাপ ঠাণ্ডা করে দেয়/কারণ তা তার জন্য যৌন কামনা দমনকারী” (বুখারী শরীফ ১৯০৫, মুসলিম শরীফ ১০১৮)

মহান আল্লাহ পাক উনার পরে উনার পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু য়া’লাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লামও বিয়েতে অক্ষম হলে ছ্ববর ও রোজা রাখার তালীম দিয়েছেন। রোজা রেখে তুমি তোমার যৌন কামনাকে দমিয়ে রাখো। এটাই ঐ আয়াত শরীফের তাফসীর, যা আল কুরআনের কোন হুকুম এপ্লাইয়ের তরীকা বর্ণনা করছেন। যদি দ্বিতীয় কোন পথ খোলা থাকত তাহলে রছুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু য়া’লাইহি ওয়া আলিহি ওয়া ছাল্লাম আমাদের অবশ্যই বলে যেতেন। মুছ্বন্নফে ইবনে আবি শায়বা কিতাবে সহিহ হাদিছে পাওয়া যায় আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রদ্বিআল্লাহু আনহু ইস্তিমনা বিল কাফ বা হস্তমৈথুন করা লোকেরা নিজের সাথে নিজে জিনার করনে ওয়ালা, এরূপ কাজ করা হারাম।

আমি আশা করি এতটুকুই যথেষ্ট যারা আহলে কুরআন, আহলে হাদিছ, আহলে সুন্নাহ বলে নিজেদের দাবি করে তাদের জন্য যে তারা এইসব ডিজিটাল মুল্লাদের ছেড়ে আহলে যিকর থেকে দ্বীন শিখে, যাদের নিউরনে ইলম মওজুদই নয় শুধু বরং মহান আল্লাজী উনার যিকর দ্বারা কলবকে নূরানী করে ফেলেছে, যারা দ্বীনের যেকোন বিষয়ে নূরের নেটওয়ার্ক থেকে ভেরিফাই সিগন্যাল পায় সমাধান দিতে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: