প্রবাসে অফলাইনে থেকেও খেলা নামক ডেঞ্জারাস দ্বীন বিরোধী কাজের থেকে রেহাই পাচ্ছিনা। এমন উন্মাদনা একজন মুসলিম কিভাবে করে থাকে, তা আমার বুঝেই আসেনা। আর বাঁজার ধরে রাখা ওয়াজি নামক কথিত মুল্লা ও উলামায়ে ছু'রা এইসবের ভয়ানক দিকটা কখনোই মুসলিম উম্মার যুব সমাজকে তুলে না ধরে, এদের ঈমান কে নষ্ট হওয়া থেকে হেফাজত না করে, উল্টো অনেক মুল্লাই এইসব খেলাধুলা দেখে, কাফের মুশরিকদের সাপোর্ট করে বে-ঈমান হচ্ছে, নিজের আমল আখলাক, আখিরাত বরবাদ করছে, নাউযুবিল্লাহ!!!
মুসলিম উম্মাহকে খেলাধূলায় মত্ত রেখে কাফের মুশরিকরা যে ইসলামের কত ক্ষতি করে যাচ্ছে তা আজকের খেলাধূলায় মত্ত ফাসেক যুব সমাজ বুঝতেই পারছেনা। আজ মুসলিম উম্মাহ'র সবচেয়ে দামি তিন জিনিস (সময়, জ্ঞান, মাল) ইহুদী নাসারাদের হাতে। আফসোস লাগে যে কুরআন হাদিসে নসিহত মওজুদ থাকা স্বতেও মুসলিম সমাজে এই উন্মাদনা কিভাবে বিদ্যমান থাকে বুঝতেই পারছিনা।
আসূন খেলাধূলার ব্যপারে কুরআন সুন্নাহ'র মধ্যে আমাদের জন্য কি কি দিক নির্দেশনা আছে, যারা খেলাধূলায় মত্ত থাকে তাদের ব্যপারে শরীয়তের হুকুম কি তা দেখি?
রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (مَا يَلْهُو بِهِ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ بَاطِلٌ إِلاَّ رَمْيَهُ بِقَوْسِهِ وَتَأْدِيبَهُ فَرَسَهُ وَمُلاَعَبَتَهُ أَهْلَهُ فَإِنَّهُنَّ مِنَ الْحَقِّ) মুসলমানদের জন্য সকল নমুনার ক্রীড়া-কৌতুক (খেলাধুলাই)-ই বাতিল তিনটি বিষয় ছাড়াঃ
১) ধনুক দিয়ে তীর নিক্ষেপ (প্রশিক্ষণ) করা।
২) (জ্বিহাদের জন্য) ঘোড়ার প্রশিক্ষণ এবং
৩) নিজ স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করা। (কারণ) এই তিনটি জিনিসই তার জন্যে সঠিক (বাকি সবকিছুই বাতিল)।
(তিরমিযি শরীফ ১৬৩৭ মানঃ সহিহ, ইবনে মাজাহ শরীফ ২৮১১ মানঃ হসান)
উক্ত হাদিস শরীফের আলোকে ক্রিকেট, ফুটবল সহ সকল নমুনার খেলাধূলা হারাম বাতিল সেটা জুয়া হিসেবে হোক, কিংবা নিছক সময় কাটানোর জন্য ম্যাচ হিসেবে হোক। কেউ মানুক বা না মানুক এতে মহান আল্লাহ পাঁক, রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম, সম্মানিত দ্বীন ইসলামের কিছুই আসে যায়না। সারা পৃথিবীর কথিত আলিম উলামা, পির, বাবা, শায়েখ মিলেও যদি বলে তাহলেও তা যায়েজ হবেনা, কারণ মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ) মানুষের হিসাব গ্রহণের কাল ক্রমশঃ ঘনিয়ে আসছে কিন্তু তারা গাফলতিতে (নিমজ্জিত হয়ে সত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে রেখেছে, (আর) যখন তাদের কাছে তাদের মালিকের কোনো নতুন উপদেশ (বাণী) আসে তখন (মনে হয়) তারা তা শুনছে, (কিন্তু না) তারা (তখনও) নানা-রকম খেলাধুলায় নিমগ্ন থাকে। (আল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ২১/১-২) অর্থাৎ মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেয়ার দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন ঘনিয়ে এসেছে, অথচ মানুষ এর ব্যপারে উদাসীন, গাফেল হয়ে আছে খেলাধুলা আর ক্রীড়া-কৌতুকের কারণে। কোন সতর্কসংকেত ও সতর্কবাণীর প্রতিই তারা দৃষ্টি দেয় না। দুনিয়া নিয়ে তারা এতই মগ্ন যে, আখেরাতের কথা ভুলেই গেছে। আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে যে মহান আল্লাহ তা'আলার উপর পরিপূর্ণরূপে ঈমান আনা, উনার ফরায়েযগুলো সময়মতো আদায় করা, নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকা সেটার জন্য তারা প্ৰস্তুতি নিচ্ছে না। (ফাতহুল কাদীর) আর যে নবী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে সর্তক করার চেষ্টা করেছেন উনার বাণীও তারা শোনে না। রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যে ওহী এসেছে তারা সেটার প্রতিও দৃষ্টি দেয় না। (ইবন কাসীর) আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হতে অমনোযোগী, পৃথিবীর চাকচিক্যে নিমজ্জিত (যা সেদিনকার জন্য ক্ষতিকর) এবং ঈমানের চাহিদা হতে উদাসীন (যা সেদিনকার জন্য কল্যাণকর)। স্পষ্ট বলা হয়েছে যে আখিরাত নিকটবর্তী যা মানুষের জন্যে খুবই ভয়ানক একটি দিন, আর এই ভয়ানক দিনের পাথেয় অর্জনে খেলাধুলা আর ক্রীড়া-কৌতুক হচ্ছে সবচেয়ে বড় বাঁধা। অথচ রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেনঃ “আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে। যখন আমি ও কেয়ামত এ দুটি আঙ্গুলের মতো অবস্থান করছি।” (বুখারী শরীফ ৪৯৯৫) জানার বিষয় হলো রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি খেলাধুলা আর ক্রীড়া-কৌতুকে মত্ত থাকার জন্যে কিয়ামতের ভয় দেখিয়েছিলে?
তাছাড়া মহান আল্লাহ পাঁক কালামুল্লাহ শরীফের যায়গায় যায়গায় আমাদের বার বার স্বরন করিয়ে দিয়েছেন আমাদের কেনো সৃষ্টি করেছেন, আমরা কেনো এসেছি, আমাদের কি কাজ, আর খেলাধূলা, ক্রীড়া-কৌতুকে মত্ত থাকা লোকদের ব্যপারে তো একেবারে গযব নাজিলের ধমকি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (اَفَاَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰۤی اَنۡ یَّاۡتِیَهُمۡ بَاۡسُنَا بَیَاتًا وَّ هُمۡ نَآئِمُوۡنَ اَوَ اَمِنَ اَهۡلُ الۡقُرٰۤی اَنۡ یَّاۡتِیَهُمۡ بَاۡسُنَا ضُحًی وَّ هُمۡ یَلۡعَبُوۡنَ) জনপদের মানুষগুলো কি এতোটাই নির্ভয় হয়ে গেছে? (তারা কি মনে করে নিয়েছে, নিঝুম) রাতে তাদের ওপর আমার আযাব আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর) থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আযাব তাদের ওপর মধ্য দিনে এসে পড়বে না যখন তারা খেলাধূলায় মত্ত থাকবে? (আল আ'রাফ ৭/৯৭-৯৮) আউযুবিল্লাহ কি ভয়ানক বিষয়, আজকে যারা ফালতু খেলাধুলায় মত্ত রয়েছে তাঁদের কতটুকু চিন্তা ফিকিরের প্রয়োজন? আজকে তারা যখন খেলাধুলায় মত্ত থাকে, বেপর্দা নারীদের সাথে স্টেডিয়ামে বসে কেবল চোখের ও মনের জিনাই করেনা বরং গযব নাযিল হওয়ার অন্যতম নিকৃষ্ট বিষয় খেলাধুলার মতো জাহেলি কাজ উপভোগ করে তখন যদি ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় আর তাওবা করার আগেই ঐ হালতে তাঁদের মৃত্যু হয় তাহলে তাঁদের কি হবে? মহান আল্লাহ পাঁক তিনি তো বলেই দিয়েছেনঃ (إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ لَوٰقِعٌ مَّا لَهُۥ مِن دَافِعٍ يَوْمَ تَمُورُ السَّمَآءُ مَوْرًا وَتَسِيرُ الْجِبَالُ سَيْرًا فَوَيْلٌ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ الَّذِينَ هُمْ فِى خَوْضٍ يَلْعَبُونَ يَوْمَ يُدَعُّونَ إِلٰى نَارِ جَهَنَّمَ دَعًّا هٰذِهِ النَّارُ الَّتِى كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ) আপনার মালিকের আযাব অবশ্যই সংঘটিত হবে, তাকে প্রতিরোধ করার (মতো) কেউই থাকবে না, (আর) যেদিন আসমান ভীষণভাবে আন্দোলিত হবে, পাহাড়সমূহ দ্রুত গতিতে চলতে থাকবে; (সেদিন) দুর্ভোগ হবে (একে) মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের, যারা (দুনিয়ায়) তামাসাচ্ছলে নানা অর্থহীন খেলাধুলায় মেতে রয়েছে। সেদিন তাদের ধাক্কা মারতে মারতে জাহান্নামের আগুনের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে; (তাদের বলা হবে.) এ হচ্ছে সেই (ভয়াবহ) আগুন, (দুনিয়ার জীবনে) যাকে তোমরা অস্বীকার করতে! (আত্ব তুর ৫২/৭-১৪) নাউযুবিল্লাহ এর পরেও মুসলিম দাবিদার কেউ কিভাবে খেলাধুলা নামক জাহেলি কর্মকাণ্ডে নিজেকে মত্ত রাখতে পারে?
এইসব মানুষদের উপদেশ তো আল কুরআনের পরতে পরতে রয়েছে কিন্তু ইবলিশ এদের কুরআন সুন্নাহ'র অধ্যায়ন থেকে বিরত রাখতে এদের মত্ত রেখেছে হারাম ক্রীড়া-কৌতুকে। মানুষ ভুলেই গেছে তাকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে, সে যে আল্লাজীর খলীফা, তাকে দিয়ে যে জমিনে দ্বীন কায়েম হবে, যুগ যুগ ধরে যে বিলিয়ন বিলিয়ন মুমিন মুসলমান অকাতরে তাঁদের প্রান বিলিয়ে দিয়েছেন এই দ্বীনের জন্যে এটাই তারা ভুলে গেছে। তারা মনে করে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে ক্রীড়া কৌতুক আর হাসি তামাশায় জীবন কাটানোর জন্য, তাদের এইসব ফালতু কাজ অবলোকনের জন্যে এই কায়েনাতে তাঁদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সম্মান দিয়েছেন। অথচ মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا لٰعِبِیۡنَ) আর আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। (আদ-দুখান ৪৪:৩৮) এছাড়াও মহান আল্লাহ পাঁক আরো স্পষ্ট করে বলেনঃ (وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا لٰعِبِیۡنَ لَوۡ اَرَدۡنَاۤ اَنۡ نَّتَّخِذَ لَهۡوًا لَّاتَّخَذۡنٰهُ مِنۡ لَّدُنَّاۤ ٭ۖ اِنۡ کُنَّا فٰعِلِیۡنَ) আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যিখানে যা কিছু আছে তার কোন কিছুই আমি খেল-তামাশার জন্য পয়দা করিনি। আমি যদি খেলাধূলার বস্তু বানাতে চাইতাম তাহলে আমার কাছে যা আছে তা নিয়েই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত। (আল আম্বিয় ২১/১৬-১৭) মহান আল্লাহ পাঁক যদি খেল-তামাশার জন্য পয়দা না করে থাকেন তাহলে আমরা কিভাবে মুমিন মুসলমান হয়ে খেল-তামাশার, হাসি ঠাট্টার, ক্রীড়া-কৌতুকের খেলাধূলার বস্তু বানিয়ে সেইসবে মত্ত হয়ে নিজেদের এখনো মুসলিম মনে করতে পারি?
যারা এখনো এইসব ফালতু হারাম কাজে মজে আছেন, তাদের প্রতি কালামুল্লাহ শরীফে উপদেশ খোদ মহান আল্লাহ পাঁক এইভাবেই দিচ্ছেনঃ (وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّ لَهۡوٌ ؕ وَ لَلدَّارُ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ لِّلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ) আর দুনিয়ার (এ) জীবন তো নিছক খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু নয়। (কিন্তু) যারা তাকওয়া অবলম্বন করে (অর্থাৎ মহান আল্লাহ তা'আলাকে ভয় করে) তাদের জন্য আখিরাতের আবাসই উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না? (আল আন'আম ৬/৩২) আসলেই কি আমরা বুঝবনা? আখিরাতের জীবনের জন্যে উত্তম কোনটা? মহান আল্লাহ পাঁক আমাদের এইসব হারাম খেলাধুলা থেকে বিরত থাকতে নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছেন, হাদিয়া করেছেন আল কুরআন কিয়ামত পর্যন্ত যেনো আমরা ইবলিসের ধোঁকায় পড়ে গেলে ফিরে আসতে পারি। আর একারণেই আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণীত হাদিস শরীফে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে স্পষ্ট বর্ণীত আছে, তিনি বলেছেনঃ (سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ: قَالَ رَّسُوْلُ اللهِ- صَلَّى ٱللّٰهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: لَسْتُ مِنْ دَدٍ، وَلاَ الدَّدُ مِنِّي بِشَيْءٍ، يَعْنِي: لَيْسَ الْبَاطِلُ مِنِّي بِشَيْءٍ) আমি খেলাধুলা বা ক্রীড়া-কৌতুক (মোটেও) পছন্দ করি না এবং খেলাধুলা বা ক্রীড়া-কৌতুকের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ আমার সাথে বাতিলের কোন সম্পর্ক নাই। (সূত্রঃ আল-আদাবুল মুফরাদ। অধ্যায়ঃ গান-বাজনা ও খেলাধুলা, হাদিস শরীফ নং ৭৮৫ মানঃ সহিহ) উক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা এটাই সাব্যস্থ হয় যে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে খেলাধুলা বা ক্রীড়া-কৌতুকের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তির কোন সম্পর্ক ই নেই, নাউযুবিল্লাহ!!! একজন মুসলিমের জন্যে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে যে দুনিয়াত সাধারন ফালতু খেলাধুলার কারণে তার সাথে তার নবী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার চিরস্থায়ী সম্পর্ক বিচ্ছিন হয়ে যাচ্ছে। (উক্ত হাদিস শরীফ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এইখানে যেতে পারেন, ইমাম বায়হাকি, তাবরানি, বুখারি রহমতুল্লাহী আলাইহিমদের মতামত জানতে লিঙ্ক)
এই খেলাধুলা যে কতো ভয়ানক বিষয় একজন মুমিনের জন্য তা এই হাদিস শরীফ খানার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, যেখানে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে কেউ খেলাধুলা করে থাকলে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম সেটা কাউকে বলতে নিষেধ করেছেনঃ (إِذَا لَعِبَ الشَّيْطَانُ بِأَحَدِكُمْ فِي مَنَامِهِ فَلاَ يُحَدِّثْ بِهِ النَّاسَ) সয়তান যখন তোমাদের কারো সঙ্গে তার ঘুমের মধ্যে খেলাধূলা করে, তখন সে যেন কোন ব্যক্তির নিকট তা প্রকাশ না করে। (মুসলিম শরীফ ২২৬৮) এর পরেও যারা খেলাধুলা বা ক্রীড়া-কৌতুকে মত্ত থাকবে তাদের ব্যপারে কিছুই বলার নাই, তবে মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (وَ ذَرِ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَهُمۡ لَعِبًا وَّ لَهۡوًا وَّ غَرَّتۡهُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَ ذَکِّرۡ بِهٖۤ اَنۡ تُبۡسَلَ نَفۡسٌۢ بِمَا کَسَبَتۡ ٭ۖ لَیۡسَ لَهَا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِیٌّ وَّ لَا شَفِیۡعٌ ۚ وَ اِنۡ تَعۡدِلۡ کُلَّ عَدۡلٍ لَّا یُؤۡخَذۡ مِنۡهَا ؕ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اُبۡسِلُوۡا بِمَا کَسَبُوۡا ۚ لَهُمۡ شَرَابٌ مِّنۡ حَمِیۡمٍ وَّ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ بِمَا کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) সেসব লোকদের আপনি (মহান আল্লাহ তা'আলা উনার হাতে) ছেড়ে দিন, যারা তাদের দ্বীনকে নিছক ক্রীড়া-কৌতুকে পরিণত করে রেখেছে এবং দুনিয়ার জীবন যাদের প্রতারণার জালে আটকে রেখেছে, আপনি এ (কুরআন) দিয়ে (তাদের) স্বরন করাতে থাকুন, যাতে করে কেউ নিজের অর্জিত কর্মকাণ্ডের ফলে ধ্বংস হয়ে যেতে না পারে, (হাশরের দিন) তার জন্যে মহান আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন বন্ধু ও সুপারিশকারি থাকবে না, কোন ব্যক্তি যদি নিজের সব কিছু দিয়েও দেয়, তবু তার কাছ থেকে (সেদিন তা) গ্রহন করা হবেনা; এরাই হচ্ছে সে মানুষ, যাদের নিজদের (গুনাহ) অর্জনের কারণে তাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে, মহান আল্লাহ তা'আলাকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্যে (থাকবে) ফুটন্ত পানি ও মর্মন্তুদ শাস্তি। (আল আন'আম ৬/৭০) এর পরেও কি মহান আল্লাহ পাঁক উনার দেওয়া এই জীবনকে নিছক ক্রীড়া-কৌতুকের জন্য আখিরাতে ফুটন্ত পানি ও মর্মন্তুদ শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আমাদের শাস্তি নগদে দেওয়া হচ্ছেনা বলে কি আমরা ছাড় পেয়ে যাব মনে করি? মহান আল্লাহ পাঁক তো বলেই দিছেনঃ (فَذَرۡهُمۡ یَخُوۡضُوۡا وَ یَلۡعَبُوۡا حَتّٰی یُلٰقُوۡا یَوۡمَهُمُ الَّذِیۡ یُوۡعَدُوۡنَ) অতএব (হে আমার পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) আপনি তাদেরকে (সেদিন পর্যন্ত) ছেড়ে দিন, তারা মগ্ন থাকুক অর্থহীন কথাবার্তায় আর (মত্ত) থাকতে দিন খেলাধুলায়, যতক্ষণ না তারা সেদিনের সাথে সাক্ষাৎ করে, যার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দেয়া হয়েছে। (আয-যুখরুফ ৪৩/৮৩) অর্থাৎ, আপনার মাধ্যমে যদি ওরা হিদায়াতের পথ অবলম্বন না করে, তবে আপনি তাদেরকে নিজ অবস্থাতেই ছেড়ে দিন এবং দুনিয়ার খেলা-ধূলায় মেতে থাকতে দিন। মহান আল্লাহ পাঁক হুঁশিয়ারি করতে এই ধমক দিয়েছেন। কিন্তু যারা একে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে তারা তাদের চোখ সেই দিনই খুলবে, যেদিন তাদের এই আচরণের পরিণাম তাদের সম্মুখে এসে উপস্থিত হয়ে যাবে। মূলত খেলাধুলা আর ক্রীড়া-কৌতুকে মত্ত থাকা মানুষেরা ইবলিসের ধোঁকায় যে রয়েছে তারা তা বুঝতেই পারছেনা, এইসব কোন মনগড়া কথা নয়, নয় কোন বাবা, পির, বা কথিত কোন টিভি মুল্লার বয়ান, বরং কায়েনাতের মালিক মহান আল্লাহ পাঁক বলতেছেনঃ (الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَهُمۡ لَهۡوًا وَّ لَعِبًا وَّ غَرَّتۡهُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ۚ فَالۡیَوۡمَ نَنۡسٰهُمۡ کَمَا نَسُوۡا لِقَآءَ یَوۡمِهِمۡ هٰذَا ۙ وَ مَا کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَجۡحَدُوۡنَ) যারা তাদের (নিজেদের) দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুকের বস্তুতে পরিণত করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। সুতরাং আজ আমি তাদেরকে (ঠিক) সেইভাবেই ভুলে যাবো, যেভাবে তারা (আমার) সামনা সামনি হওয়ার এ দিনটিকে (দুনিয়ায়) ভুলে গিয়েছিলো। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো। (আল আ'রাফ ৭/৫১) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ সাহাবায়ে কেরাম রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে মহান আল্লাহ তা'আলার রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! আমরা কি আমাদের রবকে কেয়ামতের দিন দেখতে পাব? তখন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ তা'আলার দীদার সংক্রান্ত কথা উল্লেখ করে বললেনঃ (লম্বা হাদিস বিস্তারিত এইখানে দেখুন) তারপর মহান আল্লাহ তা'আলা উনার কোন এক বান্দার সাথে সাক্ষাত করে বলবেন, হে অমুক! তোমাকে কি আমি সম্মানিত করিনি? নেতৃত্ব দেইনি? বিয়ে করাইনি? তোমার জন্য ঘোড়া ও উট (যানবাহন) আয়ত্বাধীন করে দেইনি? তোমাকে কি (জাতীর) প্রধান এবং শুল্ক আদায়কারী বানাইনি? (তোমাকে এমন আরামে রেখেছিলাম যে, তোমার কোন কষ্টই অনুভূত হয়নি।) সে বলবেঃ হ্যাঁ। তখন মহান আল্লাহ পাঁক বলবেনঃ তুমি কি আমার সাক্ষাতে বিশ্বাসী ছিলে? সে বলবেঃ না। তখন মহান আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়েছিলে। (মুসলিম শরীফঃ ২৯৬৮) আর কিয়ামতের মাঠে যদি মহান আল্লাহ পাঁক কাউকে ভুলে যান আর এইটা যদি কেউ দুনিয়ায় থেকে নিজের জন্যে সাব্যস্ত করে নিয়ে যায়, তাহলে আর আফসোসের সিমা থাকেনা।
আজ মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী উন্মাদনা দেখা যায় ক্রিকেট ফুটবল নিয়ে, অথচ প্রত্যেক ক্রিকেট ও ফুটবল খেলোয়াড়ই রিস্কে থাকে, যেকোন সময় খেলার মধ্যে এক্সিডেন্ট হয়ে মারা যেতে পারে। এছাড়াও আছে খেলাধুলার জন্যে নামাজ, যিকির, তাসবিহ তাহলিল আর দ্বীনি কাজ থেকে দূরে থাকার মতো জঘন্য সয়তানি কাজ। আর এই খেলাধুলার বদৌলতে মুসলিম যুব সম্প্রদায় আজ তাঁদের আদর্শ অনুসরণীয় যিনি উনাকে পরিবর্তন করে অনুসরণীয়, অনুকরণীয়, মুহব্বতের মানুষ বানিয়ে দিয়েছে কাফের মুশরিক বেদ্বীন বদ্বীন খেলোয়াড়দের নাউযুবিল্লাহ, অথচ তাদের মহান আল্লাহ পাঁক নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বলে যেঃ (لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُوا اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْءَاخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا) (হে মুসলমানেরা) তোমাদের মধ্যে যারা মহান আল্লাহ তা'আলা ও আখিরাত (দিবসের) প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মহান আল্লাহ তা'আলা উনার অধিক (পরিমানে) যিকির করে তাদের জন্য রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে উত্তম আদর্শ। (আল আহযাব ৩৩/২১) এখন যারা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ বাদ দিয়ে খেলোয়াড়দের অনুসরণে চুল কাটে, পোশাক পরে, ট্যাটু আকে, তাঁদের মুহব্বত করে, খেলাধুলায় মত্ত থেকে নামাজ ভুলে যায়, মহান আল্লাহ তাআলার যিকর থেকে গাফেল হয়ে যায়, মহান আল্লাহ তা'আলাকে স্বরনই করেনা, ঘন্টার পর ঘন্টা টেলিভিশনের সম্মুখে বসে থাকে, হাজার হাজার টাকা অপচয় করে স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখে বেপর্দা অর্ধনগ্ন নারীদের মধ্যে বসে তারা কি মহান আল্লাহ তা'আলা ও আখিরাত (দিবসের) প্রতি বিশ্বাস রাখে? তারা যাদের মুহব্বতে ফিদা হয়ে মহান আল্লাহ তা'আলার যিকির থেকে গাফেল হয়, রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা কি তাদের কোন কাজে আসবে? না কস্মিনকালেও না, বরং মহান আল্লাহ পাঁক হুসিয়ারি দিচ্ছেন আল কুরআনের মধ্যে এই বলে যেঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا دِیۡنَکُمۡ هُزُوًا وَّ لَعِبًا مِّنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ وَ الۡکُفَّارَ اَوۡلِیَآءَ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ وَ اِذَا نَادَیۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ اتَّخَذُوۡهَا هُزُوًا وَّ لَعِبًا ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَعۡقِلُوۡنَ) হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের আগে যাদের (মহান আল্লাহ তা'আলার) কিতাব দেওয়া হয়েছিলো, তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে হাসি-তামাসা ও খেলাধুলার বস্তুতে পরিণত করে রেখেছে, তাদের এবং কাফেরদের কখনো তোমরা নিজেদের বন্ধু বানিও না, যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে মোমেন হয়ে থাকো তাহলে একমাত্র মহান আল্লাহ তাআলাকেই (বন্ধু বানাও এবং উনাকেই) ভয় করো। আর যখন তোমরা (মানুষদের) নামাযের জন্যে ডাকো, তখন এ (ডাক)কে এরা হাসি-তামাসা ও খেলাধুলার বস্তুরূপে গ্রহণ করে; এটা এ জন্যে যে, এরা হচ্ছে এমন এক সম্প্রদায়, যারা (সত্য মিথ্যার) কিছুই বুঝেনা। (মায়েদা শরীফ ৫/৫৭-৫৮)
মহান আল্লাহ তা'আলার স্পষ্ট নিষেধ হচ্ছে ইহুদী, নাসারা এবং অবিশ্বাসী বা কাফের মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব না করার জন্য, কারণ তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম যাতে জমিনে কায়েম না হয় একারণে ইসলাম ধর্মকে হাসি-তামাসা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করেছে, ক্রীড়ার উপকরণ দিয়ে মানুষকে দ্বীন থেকে দূরে রাখার চেষ্টায় রত। আর তারা যেহেতু মহান আল্লাহ তা'আলা ও রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রু, সেহেতু তাদের সাথে মু’মিনদের বন্ধুত্ব হতেই পারে না। তাই ইহুদী, নাসারা, কাফের-মুশরিকদের ফাঁদে পা দেওয়া যাবেনা, কারণ দুনিয়ার এ জীবন একটি পরীক্ষার হল মাত্র, মানুষের আসল জীবন হচ্ছে যা চিরকাল স্থায়ী থাকবে, আর তা হচ্ছে আখেরাতের জীবন। মহান আল্লাহ পাঁক স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন একথা। মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (وَ مَا هٰذِهِ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا لَهۡوٌ وَّ لَعِبٌ ؕ وَ اِنَّ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ لَهِیَ الۡحَیَوَانُ ۘ لَوۡ کَانُوۡا) আর দুনিয়ার এ অর্থহীন জীবন কতিপয় খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়; নিস্বন্দেহে আখিরাতের জীবনই হলো প্রকৃত জীবন, কত ভালোইনা হতো যদি তারা (এ বিষয়টা) জানত। (আল-আনকাবূত ২৯/৬৪) অর্থাৎ যে পার্থিব জীবন তাদেরকে পরকালের জীবন সম্বন্ধে অন্ধ এবং তার জন্য সম্বল সঞ্চয় করার ব্যাপারে উদাসীন করে রেখেছে, তা আসলে দুনিয়ার ফালতু খেলাধূলা অপেক্ষা বেশি মর্যাদা রাখে না। কাফেররা পার্থিব জীবন নিয়ে ব্যাপৃত থাকে, তাতে সুখ অর্জনের জন্য দিবারাত্রি মেহনত করে, কিন্তু যখন মারা যায়, তখন শূন্য হাত হয়ে পরকালের পথে পাড়ি দেয়। যেমন শিশুরা সারা দিন ধুলো-বালির ঘর বানিয়ে খেলা করে এবং পরে বাড়ী ফিরে যাওয়ার সময় খালি হাতে ফিরে যায়, ক্লান্তি ছাড়া তাদের আর কিছুই অর্জন হয় না। সুতরাং এমন নেক আমল করা প্রয়োজন, যাতে আখেরাতের জীবন সুন্দর হতে পারে। কারণ, যদি তারা এ কথা জানত, তাহলে আখেরাতের জীবন সম্বন্ধে অমনোযোগী হয়ে দুনিয়ার জীবনে মহান আল্লাহ তা'আলা উনাকে ভূলে ফালতু খেলাধুলায় মগ্ন হত না। বলা বাহুল্য, এর ঔষধ হচ্ছে জানা ও শেখা, শরীয়তের জ্ঞান শিক্ষা করা। কিন্তু যে ব্যক্তি ক্রীড়া কৌতুকে, খেল-তামাশায়, ফালতু খেলাধুলায় মত্ত থাকে দিবারাত্রি সে কিভাবে এইসব অর্জন করবে? মহান আল্লাহ পাঁক তো বলেই দিয়েছেনঃ (اِنَّمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا لَعِبٌ وَّ لَهۡوٌ ؕ وَ اِنۡ تُؤۡمِنُوۡا وَ تَتَّقُوۡا یُؤۡتِکُمۡ اُجُوۡرَکُمۡ وَ لَا یَسۡـَٔلۡکُمۡ اَمۡوَالَکُمۡ) অবশ্যই দুনিয়ার এ জীবন তো কেবল খেলধুলা ও হাসি-তামাশা ও অর্থহীন কথাবার্তার বিষয় মাত্র (তাই এতে মত্ত হয়োনা)। আর যদি তোমরা (মহান আল্লাহ তা'আলার ওপর) ঈমান আনো এবং (সর্বাবস্থায়ই মহান আল্লাহ তা'আলা উনাকে) ভয় করো, তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদের এ কাজের (যথার্থ) বিনিময় প্রদান করবেন, এবং (এর বদলে) তিনি তোমাদের কাছ থেকে (কোন) ধন-সম্পদ চাইবেন না। (আল কুরআন ৪৭/৩৬) অর্থাৎ, খেলধুলা ও হাসি-তামাশা মূলত একটি ধোঁকা ও প্রতারণা বিষয় মাত্র। এরূপ বিষয়ের না আছে কোন ভিত্তি, না আছে তার স্থায়িত্ব, এবং না আছে তার কোন মূল্য। কারণ মহান আল্লাহ পাঁক নিজেই বলেনঃ (اعْلَمُوٓا أَنَّمَا الْحَيٰوةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌۢ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِى الْأَمْوٰلِ وَالْأَوْلٰدِ) তোমরা জেনে রাখো, (তোমাদের এ) পার্থিব জীবনটা খেলাধুলা, (হাসি) তামাশা, জাঁকজমক (প্রদর্শন), পরস্পর অহংকার প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা, ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি বাড়ানোর চেষ্টা সাধনা ছাড়া আর কিছুই নয়। (আল হাদীদ ৫৭/২০) অর্থাৎ, কাফের ও অবাধ্য কুরআন সুন্নাহ'র হুকুম অস্বীকারকারীদেরজন্য; যারা দুনিয়ার ক্রীড়া-কৌতুকেই মগ্ন থাকে এবং এটাকেই তাঁদের জীবনের আসল লক্ষ্য মনে করে। একারণেই তারা ঐ ১৪০০ বছর আগেই খোদ রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়েও এর মূল্যায়ন করেনি। বরং "এরা যখন কোনো ব্যবসায়িক কাজকর্ম কিংবা ক্রীড়াকৌতুক দেখতে পেত, তখন সেদিকেই দ্রুত গতিতে দৌড়ে যেত রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নামাযে একা দাড়ানো অবস্থায়ই; মহান আল্লাহ পাঁক রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তখন বলে দেন, যে আপনি বলুন, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার কাছে যা কিছু রয়েছে তা অবশ্যই খেলাধুলা ও বেচাকেনার চাইতে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট-উত্তম, (মূলত) মহান আল্লাহ তা'য়ালাই হচ্ছেন সর্বোত্তম রিযিকদাতা। (আল জুম'আহ ৬২/১১ থেকে নেওয়া) তাছাড়া আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত খেলাধূলা সম্পর্কিত বিখ্যাত হাদিসে বর্ণীত হয়েছে, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় আগমন করার পর তাদের (এমন) দু’টি দিন ছিল। যে দিন দু’টিতে তারা খেলাধূলা ও আমোদ-প্রমোদ করত। (এ দেখে) তিনি (ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু’টি দিন কি? তারা বলল ইসলামের পূর্বে জাহিলিয়্যাতের সময় এ দিন দু’টিতে আমরা খেলাধূলা করতাম। (এ কথা শ্রবণ করে) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই দু’দিনের পরিবর্তে মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য আরো উত্তম দু’টি দিন হাদিয়া করেছেন। এর একটি হলো ঈদুল আযহার দিন ও অপরটি ঈদুল ফিতরের দিন। (আবূ দাঊদ শরীফ ১১৩৪, আহমাদ ১৩৬২২, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৯১) উক্ত হাদিস শরীফেও স্পষ্ট পাওয়া যায় মুসলমানদের খেলাধুলা নয় দেওয়া হয়েছে দ্বীন ইসলাম, আর যখন এদের বারংবার উপদেশ দিয়েও কাজ হয়না তখন তদেরকে শেষ বারের মতো মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتّٰى يُلٰقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِى يُوعَدُونَ يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنَ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلٰى نُصُبٍ يُوفِضُونَ خٰشِعَةً أَبْصٰرُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۚ ذٰلِكَ الْيَوْمُ الَّذِى كَانُوا يُوعَدُونَ) (পেয়ারে হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) আপনি (বরং) এদের ছেড়ে দিন, এরা কিছুদিন ক্রীড়া-কৌতুকে নিমগ্ন থাক, সেদিনটির সম্মুখীন হওয়া পর্যন্ত, যেদিনের (ব্যাপারে) তাদের ওয়াদা দেয়া হচ্ছে। সেদিন এরা এমন দ্রুতগতিতে (নিজ নিজ) কবর থেকে বের হয়ে আসবে, (যা দেখে মনে হবে) তারা (সবাই বুঝি) কোনো শিকারের (লক্ষ্যবস্তুর) দিকে ছুটে চলেছে, তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত, অপমান ও লাঞ্ছনায় তাদের সবকিছু থাকবে আচ্ছন্ন; (তাদের বলা হবে) এ হচ্ছে সেই দিবস, তোমাদের কাছে যেদিনের ওয়াদা করা হয়েছিলো। (আল মা'আরিজ ৭০/৪২-৪৪)।
উপরোক্ত আয়াত খানার হাক্বিকত হচ্ছেঃ রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম যখন দ্বীনের বিশুদ্ধ পথে দাওয়াত দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলেন অথচ ক্রীড়া-কৌতুক, খেল-তামাশা ও খেলাধুলায় মত্ত লোকেরা মোটেও পাত্তা দিচ্ছিলোনা, তখন উনাকে মহান আল্লাহ পাঁক এই বলে সান্তনা দেন যে, আপনি তাদেরকে তাদের বাজে, অনর্থক আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক আর নিজেদের দুনিয়া নিয়ে মত্ত থাকতে দিন। আপনি বরং আপনার প্রচার-প্রসারের কাজ অব্যাহত রাখুন। তাদের আচরণ যেন আপনাকে আপনার দ্বীনের দায়িত্ব পালনে উদাসীন অথবা মনঃক্ষুণ্ণ না করে। আর উম্মত হিসেবে আমরা সেই নবি ওয়ালা কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এখনো সবর আর ধৈর্য সহকারে ক্রীড়া-কৌতুক, খেল-তামাশা ও খেলাধুলায় মত্ত থাকা পথভ্রষ্ট যুব সম্প্রদায়কে ফিরে আসার আহ্বান করে যাচ্ছি, এতে কেউ সাড়া দিলে দিক, না দিলে না দিক আমাদের কাজ আমরা চালিয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ।
0 ফেইসবুক: