ছবিঃ আজকের ভ্রান্ত তাসাউফের কথিত মুশরিক পির, “জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরী” |
বর্তমান জামানায় কেউ যদি দাবী করে যে, হুজুর পাক ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনাকে, সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের মত কিংবা উনাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, ধরে নিতে হবে তার মস্তিস্ক বিকৃত হয়েছে, নতুবা না বুঝে কথা বলছে, কিংবা মিথ্যাবাদী কাজ্জাব (সাধারণত রাফেজি শিয়াদের আক্বিদাহ এটি)। এতদ বিষয়ে পবিত্র কুরআন শরীফে সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের বিষয়ে এরূপ অসংখ্য আয়াত শরীফ পর্যন্ত নাজিল হয়েছে (رَضِیَ اللّٰهُ عَنۡهُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡهُ ؕ ذٰلِکَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّهٗ)। উহুদ যুদ্ধে যখন শত্রুপক্ষ নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের খুব কাছাকাছি পৌছে যায়, তখন শত্রুর ছোঁড়া তীর ও বল্লম থেকে বাঁচাবার জন্য সকলে উনাকে ঘিরে ঢাল হিসেবে দাড়িয়ে যায়। শত্রুর ঐ আক্রমনে অনেকে শাহাদাতের অমিও সুধা পান করেন আবার অনেকে ভয়ংকরভাবে আহত হন। বিষয়টি হলো, প্রত্যেকেই জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন হুজুর পাক ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে শত্রুর আঘাত থেকে মুক্ত রাখতে।
যেখানে সকলেই জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন সেখানে একটি দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার ভাবাবেগে একজনও উনাদের একটি করে দাঁত উপড়ে ফেলেননি, কিন্তু শত মাইল দুরে অবস্থিত এক আশেকে রাসুল ঐ বার্তা পেয়ে কোন দন্ত মোবারক শহীদ হয়েছে তা নির্ধারন করতে ব্যর্থ হয়ে সকল দাঁত পাথর দিয়ে আঘাত করে করে তুলে ফেলেন। এ মুহব্বত তুলনাহীন, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালাহ্ আনহুদের চেয়েও বেশী মনে হয়। (নাউযুবিল্লাহ)।
বাস্তবতার নিরীখে বিষয়টি হচ্ছে, ঐ সকল দাঁত ফেলে দেয়ার ঘটনাটি ছিলো আত্মহনন, যা সম্পুর্ন একটি হারাম কাজ কুরআন (وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّهۡلُکَۃِ) অনুসারে। ওয়াইস আল ক্বারনী রহমতুল্লাহি আলাইহির মত সর্বশ্রেষ্ট তাবেয়ীন এবং আশেকে রাসুল কখনই ঐ কাজ করতে পারেন না, যা পবিত্র কুরআন শরীফে হারাম ঘোষনা করা হয়েছে। ঐ কাজ যদি যায়েজ হতো তবে সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমরা নিদেন পক্ষে একটি করে হলেও দাঁত ফেলে দিতেন। ঘটনাটি সম্পূর্ন ভূয়া এবং মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসার নমুনা হিসেবে দেখিয়ে তাসাউফ পন্থিদেরকে বিভ্রান্ত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কারো পক্ষেই স্বজ্ঞানে একটি একটি করে সবকটি দাত তুলে ফেলা অসম্ভব।
মূলত অতীতে দীনের পথে আত্মউৎসর্গকারী ওলি আউলিয়ারা বিভিন্ন পীর/মাশায়েখদের খানকাতে গিয়ে সবক নিয়ে তাছউফ চর্চা করতেন। সে সময়ে একজনের খানকা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে অন্য একজন আউলিয়ার কাছে যাওয়া একটি স্বাভাবিক কার্যক্রম ছিল। ধর্মীয় লাইনে তরক্কীর জন্য তার প্রয়োজনীয়তা ও ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে পদ্ধতি চালু হয়েছে তা হলো সকল পীরই নিজেকে দাবী করে আওলাদে রাসুল এবং আহলে বাইত। তবে তাদের অধিকাংশই নছবমানা দেখাতে ব্যর্থ, অর্থাৎ দলিল ছাড়া আহলে বাইত। অথচ পবিত্র কোরআন শরীফের নির্দেশনা হচ্ছে, যদি সত্যবাদী হও তবে দলিল উপস্থাপন কর (قُلۡ هَاتُوۡا بُرۡهَانَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ) এমন পীর ও বর্তমানে উপস্থিত আছে যে, (উদাহরণস্বরুপ রাজারবাগে মুশরিক পির দিল্লুর রহমান) সে যেকোন ব্যাক্তিকে আহলে বাইত বলে ঘোষনা দিতে পারে এবং ঘোষিত ব্যাক্তি সাথে সাথে আহলে বাইত হয়ে যাবে। (দেখতে পারেন) নাউযুবিল্লাহ!!! যেহেতু এহেন ক্ষমতা স্বপ্নে পাওয়া তাই কুরআন/হাদীসের দলীলের প্রয়োজন নেই, (নাউজুবিল্লাহ)। মুরীদদেরকে এমন ধারনা দেয়া হয় যে, তার পীর হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পীর এবং ওখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার অর্থই হচ্ছে জান্নাত থেকে বের হয়ে চির জাহান্নামী হওয়া। নাউজুবিল্লাহ!!!
হজরত আবুল হাসান রহমাতুল্লাহী আলাইহী বলেনঃ “তাসাউফ কোনো নির্দিষ্ট আচার আচরণ বা বিদ্যার সনদ পত্রের নাম নয়। বরং সচ্চরিত্র ও সদ্বগুনাবলির নামই সূফীবাদ”। আবুল হাসান নুরী রহমাতুল্লাহী আলাইহি বলে- “কু-প্রবৃত্তি, লোভ লালসার দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকা; অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং পার্থিব লৌকিকতা থেকে দূরে থাকার নামই তাসাউফ। নিজের সম্পদ অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া এবং দুনিয়াকে অন্যের হাতে ছেড়ে দেয়ার নামই সূফীজম”। হজরত আবু হাফস হাদ্দাদ নিশাপুরী রহমাতুল্লাহী আলাইহি বলেন “শরীয়ত এর নির্দেশ পালন করা এবং শিষ্টতা রক্ষা করার নামই সূফীবাদ। যে ব্যাক্তি প্রতিটি মুহূর্ত এর আদব বা শিষ্টতা মান্য করে চলে সে এর কাঙ্খিত স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়। আর যে তা মেনে চলে না সে তার কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয় না”।
মুরীদদের সাথে পীর সাহেবের সর্ম্পক হচ্ছে টাকা পয়সার। বছর জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে মুরীদদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাদিয়ার নামে আদায় করা হয়। হাদিয়ার পরিমান নির্ধারন করে দেয়া হয় এবং জমা দেয়ার তারিখ র্পযন্ত নির্দিষ্ট করে দয়ো দেয়া হয়। এখানে মুরীদদের জীবনে কামিয়াবীর কথা বলে ঐ টাকা দাবী করা হয়। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী খুনের ভয় দেখিয়ে টাকা দাবী করে যাকে বলা হয় চাঁদাবাজী আর আজকালের ভন্ডপীর (উদাহরণস্বরুপ রাজারবাগে মুশরিক পির দিল্লুর রহমান) কামিয়াবীর লোভ আর জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে মুরীদদের টাকা লুট করে, এটা কি তাছাউফের নামে একধরনের ভয়ংকর চাঁদাবাজি নয়? প্রতিনিয়ত কুদরতি ভাবে খেলাফত চালু হচ্ছে কিংবা শিঘ্রই চালু হবে এ ধরনের অলীক গল্প শুনিয়ে মুরীদদের পকেট খালী করা হয়। কামিয়াবির লোভে মুরীদ তার সকল সম্পদ পর্যায়ক্রমে হাদিয়া হিসেবে পীর সাহবেকে দিয়ে ফকিরে পরিনত হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করে আর কামিয়াবীর ধজ্বাধারী পীর সাহেব ও তার বংশধরেরা অতি শান-শওকতের সাথে জীবন অতিবাহিত করতে থাকে। এই হচ্ছে বর্তমান জামানার ভন্ড পীরদের খুসুসিয়ত। এদের সৃষ্ট ডুপ্লিকেট তাসাউফরে ভ্রান্ত আক্বিদাহ কেবল শিরকই নয় বরং সরাসরি কুফর, তাই আখেরী জামানার মুসলমানেরা সাবধান।
আজ এর মুবারক জন্ম, কাল তার মুবারক মৃতু
নামক হাজারো বাহানায় টাকা কালেকশন করা হয় অথচ ১৪০০ বছরের ইসলামিক ইতিহাসে এরূপ
চাঁদাবাজির কোন নজির নাই। না কেউ দেখাতে পারবে ছ্বল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম,
খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, তাবেঈ, তবে-তাবেঈ রহমতুল্লাহি আলাইহিমদের জীবন
থেকে যে ইসলামিক খিলাফতের মধ্যে এরূপ চাঁদাবাজি করে কোন খলীফা ডাউস সাইজের প্রকান্ড ভুঁড়ি আর ২২ তলা
বিল্ডিং বানিয়েছিলেন।
0 ফেইসবুক: