Friday, July 15, 2022

পবিত্র ইয়াওমুল জুমু’আহ ১৫-ই জিলহাজ্জ শরীফ, ১৪৪৩ হিজরির বয়ান

أَعُوْذُ بِاللّٰهِ مِنَ الشَّيْطٰانِ الرَّجِيْمِ - بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

رَبِّ اشْرَحْ لِى صَدْرِى وَيَسِّرْ لِىٓ أَمْرِى وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِى يَفْقَهُوا قَوْلِى

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ وَ لآ  اِلٰہَ اِلَّا اللہُ وَاللہُ اَکْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللہِ الْعَلِیِّ الْعَظِیْمِ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ مَعْدَنِ الْجُوْدِ وَالْكَرَمِ وَ عَلَى آلِهٖ وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

মসজিদে উপস্থিত সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম সহ পর্দার অন্তরালে থাকা মা-বোনদের প্রতি (السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللهِ وَبَرَكَاتُهُ)  আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আজ পবিত্র ইয়াওমুল জুমুআহ শরীফের দিন, মুমিনদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। আজ ১৫- জিলহাজ্জ শরীফ ১৪৪৩ হিজরী। গত সপ্তাহে আমরা পবিত্র হজ্জ, কুরবানী, তাক্ববীরে তাশরিক নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা এই মাসে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশা-আল্লাহ।

) এই পবিত্র মাসেই রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জ পালন করেন এবং বিদায়ী খুতবানামে পরিচিত ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেন।

) হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক প্রেরিত সেনাবাহিনী দ্বারা মিশর জয় করা হয়েছিল।

) হযরত উসমান ইবনুল আফফান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তৃতীয় খলিফা হিসেবে নিযুক্ত হন।

সম্মানিত "বাইয়াতে-আকাবা" মুবারক এই মাসেই অনুষ্টিত হয়।

) সাইয়্যিদাতু নিসাই আহলিল জান্নাহ হযরত ফাতিমাতুজ্জ যাহ্রা আলাইহাস সালাম এই পবিত্র মাসে চতুর্থ খলিফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

) হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেনঃ ২৬ হিজরির ২৭শে জিলহজ্জে।

) হযরত উসমান ইবনুল আফফান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হনঃ ৩৫ হিজরির ১৮ই জিলহজ্জে

বিদায় হজ্জের সেই ঐতিহাসিক ভাষণঃ

জুবায়ের বিন মুত্বইম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আরাফার দিন বিদায় হজ্জের ভাষণে সমবেত জনগণের উদ্দেশ্যে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

হে উম্মতগণ! মহান আল্লাহ তাআলার কসম, আমি জানিনা আজকের পরে আর কোনদিন তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে মিলিত হতে পারব কি-না। অতএব মহান আল্লাহ তাআলা রহম করুন ঐসকল ব্যক্তি বর্গের উপরে, যে ব্যক্তি আজকে আমার কথা শুনবে তা স্মরণ রাখবে। কেননা অনেক জ্ঞানের বাহক নিজে জ্ঞানী নয় (সে অন্যের নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায় কেবল) এবং অনেক জ্ঞানের বাহক তার চাইতে অধিকতর জ্ঞানীর নিকটে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়। জেনে রেখ, নিশ্চয়ই তোমাদের মাল-সম্পদ তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)

জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে নাঃ

() মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে ইখলাছের সাথে কাজ করা।

() (মুসলিম) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা এবং

() মুসলমানদের জামাআতকে অাঁকড়ে ধরা। কেননা তাদের দো তাদেরকে পিছন থেকে (শয়তানের প্রতারণা তে) রক্ষা করে। () অর্থাৎ মুমিন যতক্ষণ উক্ত তিনটি স্বভাবের উপরে দৃঢ় থাকবে, ততক্ষণ তার অন্তরে খিয়ানত বা বিদ্বেষ প্রবেশ করবে না। যা তাকে ইলম প্রচারের কাজে বাধা দেয়। আর তিনিই হবেন কামেল মুমিন’ () ছাহেবে মিরক্বাত বলেনঃ (لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ) অর্থ আক্বীদা সৎকর্মে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জুম, জামাআত অন্যান্য বিষয়ে সকলে একত্রে অংশগ্রহণ করা। (فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ) অর্থ তাদের দো তাদেরকে শয়তানী প্রতারণা এবং পথভ্রষ্টতা তে পিছন থেকে তাদের রক্ষা করে। এর মধ্যে ধমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি জামাআত থেকে বেরিয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জামাআতের বরকত মানুষের দো থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, জামাআতবদ্ধ জীবন যাপন করা অধিক উত্তম বিচ্ছিন্ন থাকার চাইতে কোন কোন বর্ণনায় (مَنْ وَرَائَهُمْ) এসেছে। অর্থাৎ তাদের পিছনে যারা আছে, তারা তাকে রক্ষা করে। ত্বীবী বলেন, এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতকে বুঝানো হয়েছে। যাদের দো তাদের পরবর্তী বংশধরগণকেও পথভ্রষ্টতা তে রক্ষা করে। ()

জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ক্বাছওয়ানামের উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে বাত্বনুল ওয়াহদীতে আরাফাহ ময়দানে আসেন। অতঃপর লোকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন, “হে জনগণ! নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত মাল-সম্পদ তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম) শুনে রাখ, জাহেলী যুগের সকল কিছু আমার পায়ের তলে পিষ্ট (অর্থাৎ আমার পূর্বের সকল জাহেলি বিষয় খতম করে দিলাম আমি)

জাহেলী যুগের সকল রক্তের দাবী পরিত্যক্ত ল। আমাদের রক্ত সমূহের প্রথম যে রক্তের দাবী আমি পরিত্যাগ করছি, তা রাবীআহ ইবনুল হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব-এর শিশু পুত্রের রক্ত। যে তখন বনু সা (অন্য বর্ণনায় বনু লাইছ) () গোত্রে দুগ্ধ পান করছিল, আর হোযাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল

জাহেলী যুগের সকল সূদ পরিত্যক্ত ল। আমাদের সূদ সমূহের প্রথম যে সূদ আমি শেষ করে দিচ্ছি সেটি (আমার চাচা) আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিবের পাওনা সূদ। যার সবটুকুই বাতিল করা ল।

তোমরা নারীদের বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাদেরকে মহান আল্লাহ তাআলার আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ এবং মহান আল্লাহ তাআলার কালেমার মাধ্যমে তাদেরকে হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের প্রাপ্য হক এই যে, তারা তোমাদের বিছানা এমন কাউকে মাড়াতে দেবে না, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা সেটা করে, তবে তোমরা তাদের প্রহার করবে যা গুরুতর হবে না। আর তোমাদের উপরে তাদের প্রাপ্য হক উত্তমরূপে খাদ্য পরিধেয় প্রদান করা

আর জেনে রাখ, আমি তোমাদের মাঝে ছেড়ে যাচ্ছি এমন এক বস্ত্ত, যা মযবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না। সেটি আল্লাহর কিতাব আল কুরআন

আর তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। তখন তোমরা কি বলবে? লোকেরা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি সবকিছু পৌঁছে দিয়েছেন, (রিসালাতের আমানত) আদায় করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন অতঃপর তিনি শাহাদাত অঙ্গুলী আসমানের দিকে উঁচু করে অতঃপর সমবেত জনমন্ডলীর দিকে নীচু করে বললেন, ‘হে মহান আল্লাহ তাআলা! আপনি সাক্ষী রইলেন’ (তিনবার বল্লেন) ()

ফাযালাহ বিন ওবায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ

আমি কি তোমাদেরকে মুমিন সম্পর্কে খবর দিব না? সে হলো ব্যক্তি যার হাত থেকে অন্যদের মাল জান নিরাপদ থাকে। আর মুসলিম সেই, যার যবান হাত থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে। আর মুজাহিদ সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সর্বাত্মকভাবে নিয়োজিত করে এবং মুহাজির সেই, যে সকল প্রকার অন্যায় পাপকর্ম সমূহ পরিত্যাগ করে () উক্ত কথাটি আব্দুল্লাহ বিন আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় অন্যভাবে এসেছেঃ (الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ) মুসলিম হলো সেই ব্যক্তি, যার যবান হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে এবং মুহাজির সেই, যে মহান আল্লাহ তাআলার নিষেধ সমূহ পরিত্যাগ করে ()

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আরাফাতের ময়দানে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় প্রদত্ত ভাষণে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

মনে রেখ! আমি তোমাদের সকলের আগেই হাউয কাউছারে পৌঁছে যাব। আর আমি অন্য সকল উম্মতের মধ্যে তোমাদের আধিক্য নিয়ে গর্ব করব। অতএব তোমরা আমার চেহারাকে কালেমালিপ্ত করো না।

মনে রেখ! আমি অনেককে সেদিন মুক্ত করব এবং অনেকে সেদিন আমার থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তখন আমি বলব, “হে আমার প্রতিপালক! এরা তো আমার সাথী। তিনি বলবেন, তুমি জানো না তোমার পরে এরা (ইসলামের মধ্যে) কত বিদআত সৃষ্টি করেছিল

সাহল বিন সা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণনায় এসেছে, জওয়াব পাওয়ার পর রাসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ (سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِى) দূর হও দূর হও! যে ব্যক্তি আমার পরে আমার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছ ()

মিখনাফ বিন সুলায়েম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমরা আরাফাতের ময়দানে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের সাথে দাঁড়িয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বলতে শুনলাম যে, হে জনগণ! নিশ্চয় প্রত্যেক পরিবারের উপর প্রতি বছর একটি করে কুরবানী আতীরাহ ()

সুলায়মান বিন আমর ইবনুল আহওয়াছ তার পিতা তে বর্ণনা করেন যে, এদিন রাসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ আজকে কোন দিন? লোকেরা বলল, হজ্জে আকবরের দিন। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রক্ত, সম্পদ সম্মান পরস্পরের জন্য হারাম। যেমন এই দিন এই শহর তোমাদের জন্য হারাম। মনে রেখ, অপরাধের শাস্তি অপরাধী ব্যতীত অন্যে কারো উপরে বর্তাবে না। পিতার অপরাধের শাস্তি পুত্রের উপর এবং পুত্রের অপরাধের শাস্তি পিতার উপর বর্তাবে না মনে রেখ, শয়তান এই শহরে তোমাদের পূজা পাওয়া থেকে (অর্থাৎ তোমাদের কাফের হওয়া থেকে) চিরদিনের মত নিরাশ হয়ে গেছে। তবে যেসব কাজগুলিকে তোমরা তুচ্ছ মনে কর, সেসব কাজে তার আনুগত্য করা হবে, আর তাতেই সে খুশী থাকবে (১০) যেমন মিথ্যা, প্রতারণা, আপোষে ঝগড়া-মারামারি ইত্যাদি। যা পরবর্তীদের মধ্যে ঘটেছিল (মিরআত) জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনায় এসেছে (وَلَكِنْ فِى التَّحْرِيشِ بَيْنَهُمْ) কিন্তু শয়তানী প্ররোচনা বাকী থাকবে (১১) একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, (أَلاَ إِنَّ الْمُسْلِمَ أَخُو الْمُسْلِمِ فَلَيْسَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ مِنْ أَخِيهِ شَىْءٌ إِلاَّ مَا أَحَلَّ مِنْ نَفْسِهِ) ‘মনে রেখ! এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের জন্য তার ভাই-এর কোন বস্ত্ত হালাল নয় কেবল ততটুকু ব্যতীত যতটুকু সে তার জন্য হালাল করে’ (তিরমিযী হা/৩০৮৭) ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণনায় এসেছে, (لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ مِنْ مَالِ أَخِيهِ إِلاَّ مَا أَعْطَاهُ مِنْ طِيبِ نَفْسٍ وَلاَ تَظْلِمُوا) ‘কোন ব্যক্তির মাল তার ভাই-এর জন্য হালাল নয়। যতক্ষণ না সে তাকে খুশী মনে তা দেয়। আর তোমরা যুলুম করো না। (১২) এদিন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারীর পিঠে বসে একটি খুৎবা দিয়েছিলেন, দুটি খুৎবা নয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, মুসফিরের জন্য জুমআর ছ্বলাত অপরিহার্য নয় (১৩)

আরাফাতের ভাষণে উপরে বর্ণিত ৬টি হাদীছের মধ্যে আমরা ১৬টি বিষয়ে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য পেয়েছি। যার প্রতিটিই ব্যক্তি সমাজ জীবনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

উল্লেখ্য যে, আরাফাতের ময়দানে রাসূল রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের উক্ত ভাষণ উচ্চকণ্ঠে জনগণকে শুনিয়েছিলেন রাবীআহ বিন উমাইয়া বিন খালাফ (১৪) মহান আল্লাহ তাআলার কি অপূর্ব মহিমা! মক্কা শরীফে হযরত বেলালের উপরে লোমহর্ষক নির্যাতনকারী, রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী ১৪ নেতার অন্যতম নিকৃষ্টতম নেতা বদর যুদ্ধে নিহত উমাইয়া বিন খালাফের ছেলে রাবীআহ আজ রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের দেহরক্ষী ছাহাবী উনার বিদায়ী খুৎবা প্রচারকারী। সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল আযীম।

প্রতি সপ্তাহের মতো আজকেও সবাইকে আহ্বান করছি, অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শুরু হবে জুমুআহ শরীফের খুৎবা, আর খুৎবার আযান থেকে শুরু করে নামায চলাকালীন সময়ে করা সকল হালাল ব্যবসাই মহান আল্লাহ পাক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) হে ঈমানদারগণ! (পবিত্র) জুমুআহ শরীফের দিনে যখন নামাযের জন্য (তোমাদের) আহবান করা হয় (অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয়), তখন তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালার স্মরণের দিকে (অর্থাৎ নামাযের উদ্যেশ্যে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও। এবং (সকল ধরণের) বেচা-কেনা পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা (তা) বুঝতে পারো। (আল কুরআনঃ ৬২/)

কুরআনের এই আয়াত দ্বারা জুমুআহ শরীফের দিন খুৎবার আযানের সময় থেকে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের ব্যবসা বাণিজ্যকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই এই সময় দোকানপাঠ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, ব্যবসা প্রতিষ্টানে তালা মেরে নামাযে উপস্থিত হতে হবে। এই সময় বেচাকেনা হারাম, আমাদের ফিকির করা উচিৎ যে, মাত্র আধা ঘন্টার জুমুআহ নামাযের সময় আমরা কি এমন বেচাকেনা করছি, কি এমন লাভ করছি যে সামান্য কিছু টাকার জন্য সমস্ত উপার্জনটাই হারাম করে দিচ্ছি, কারণ মুহূর্তে করা এক টাকার ব্যবসাও বাকি টাকার সাথে মিলে সম্পূর্ণ টাকাই হারাম করে দিচ্ছে। আর হারাম উপার্জনে কখনোই মহান আল্লাহ তায়ালার বরকত থাকেনা, যার কারণে দিনশেষে দেখা যায় সারাদিন খেঁটেও ফায়দা হচ্ছেনা।

এর পরের আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانتَشِرُوا فِى الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ) অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে (অর্থাৎ জমিনে) ছড়িয়ে পড় এবং মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ (অর্থাৎ জীবিকা) তালাশ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালাকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা (জীবিকা উপার্জনে) সফলকাম হও। (আল কুরআনঃ ৬২/১০)

আয়াতে পাকে, মহান আল্লাহ তায়ালা যে অনুগ্রহ তালাশের কথা বলেছেন, এর অর্থ দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ব্যবসা-বাণিজ্য আবার শুরু করো। অর্থাৎ, জুমুআর নামায শেষ করার পর তোমরা পূনরায় নিজ নিজ কাজে-কর্মে এবং দুনিয়ার ব্যস্ততায় লেগে যাও। তবে আমার স্মরণ থেকে গাফেল হয়োনা, বরং মনে মনে আমার যিকির করো আর কাজ কর্ম করতে থাকো। এছাড়াও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন যে, জুমুআহ শরীফের দিন কাজ-কর্ম বন্ধ রাখা জরুরী নয়। কেবল নামাযের জন্য, নামাযের সময় তা বন্ধ রাখা জরুরী। মহান আল্লাহ পাক-এর এরূপ স্পষ্ট হুকুম জানার পরেও যারা এই হুকুম অমান্য করে ব্যবসা করবেন তারা ইচ্ছা অনিচ্ছা আর অজ্ঞতায় নিজেদের হালাল মালের মধ্যে হারাম কে মিশিয়ে দেবেন। আর হারাম মালের সংমিশ্রণের রিযিক দ্বারা গঠিত দেহ কখনোই জান্নাতে যাবেনা।

এছাড়াও যারা নিয়মিত নামায পড়েন, জুমুআতে আসেন, তারা যেনো সুন্নাহ অনুসরণ করেই মসজিদে আসেন, এতে রহমত বরকতপ্রাপ্ত হবেন, শাওয়ার বা পুকুরে এক ডুইব দিয়েই যেকোন একটা পোশাক পরে জুমুআর দুই রাকাত ফরজ নামায আদায়ের উদ্যেশে মসজিদে না এসে ভালো মতো প্রিপারেশন নিয়েই আসবেন। হাদিস শরীফে হযরত, (عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيّ رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ  لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى) “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুমুআর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে এবং নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর (নামাযের উদ্যেশ্যে) বের হয় এবং (মসজিদে প্রবেশ করে) দুজন লোকের মাঝে ফাঁক না করে (যেখানে যায়গা পায় সেখানেই দাড়িয়ে যায়), অতঃপর তার নির্ধারিত নামায আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সেই জুমুআহ শরীফের (নামায) থেকে পরের জুমুআহ শরীফের (নামাযের আগ) পর্যন্ত (মধ্যবর্তী) সময়ের (মধ্যে ঘটা) যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী শরিফঃ ইঃফাঃ ৮৩৯, আঃনাঃ ৮৮৩)

জুমু শরীফের দিনকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নাই, না আছে সুযোগ জুমুআর নামাযকে অবহেলার। হদিস শরীফে এসেছেঃ (عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ ـ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ ـ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ قَبْلَ أَنْ تَمُوتُوا وَبَادِرُوا بِالأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ قَبْلَ أَنْ تُشْغَلُوا وَصِلُوا الَّذِي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ بِكَثْرَةِ ذِكْرِكُمْ لَهُ وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ فِي السِّرِّ وَالْعَلاَنِيَةِ تُرْزَقُوا وَتُنْصَرُوا وَتُجْبَرُوا وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْكُمُ الْجُمُعَةَ فِي مَقَامِي هَذَا فِي يَوْمِي هَذَا فِي شَهْرِي هَذَا مِنْ عَامِي هَذَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَمَنْ تَرَكَهَا فِي حَيَاتِي أَوْ بَعْدِي وَلَهُ إِمَامٌ عَادِلٌ أَوْ جَائِرٌ اسْتِخْفَافًا بِهَا أَوْ جُحُودًا بِهَا فَلاَ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ شَمْلَهُ وَلاَ بَارَكَ لَهُ فِي أَمْرِهِ أَلاَ وَلاَ صَلاَةَ لَهُ وَلاَ زَكَاةَ لَهُ وَلاَ حَجَّ لَهُ وَلاَ صَوْمَ لَهُ وَلاَ بِرَّ لَهُ حَتَّى يَتُوبَ فَمَنْ تَابَ تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَلاَ لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً وَلاَ يَؤُمَّنَّ أَعْرَابِيٌّ مُهَاجِرًا وَلاَ يَؤُمَّ فَاجِرٌ مُؤْمِنًا إِلاَّ أَنْ يَقْهَرَهُ بِسُلْطَانٍ يَخَافُ سَيْفَهُ وَسَوْطَهُ) হযরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেনঃ হে মানবমন্ডলী! তোমরা মরার পূর্বেই মহান আল্লাহ পাকের নিকট তওবা করো এবং কর্মব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বেই সৎ কাজের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তাঁর অধিক যিকরের মাধ্যমে তোমাদের রবের সাথে তোমাদের সম্পর্ক স্থাপন করো এবং গোপনে প্রকাশ্যে অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করো, এজন্য তোমাদের রিযিক বাড়িয়ে দেয়া হবে, সাহায্য করা হবে এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করা হবে।

তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় মহান আল্লাহ তাআলা আমার এই স্থানে আমার এই দিনে, আমার এই মাসে এবং আমার এই বছরে তোমাদের উপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত জুমুআর নামাযকে ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি আমার (মুবারক) জিন্দেগীতে বা আমার প্রস্থানের পরে, ন্যায়পরায়ণ অথবা যালেম শাসক থাকা সত্ত্বেও জুমুআর নামাযকে তুচ্ছ মনে করে বা অস্বীকার করে তা বর্জন করবে, মহান আল্লাহ পাক তার বিক্ষিপ্ত বিষয়কে একত্রে গুছিয়ে দিবেন না (অর্থাৎ তার দুনিয়াবি জঞ্জালগুলি আরো জগাখিচুড়ী হয়ে যাবে) এবং তার কাজে-কর্মে বরকত দান করবেন না। নাউযুবিল্লাহ!

(অতএব) সাবধান! তার সালাত, যাকাত, হাজ্জ (হজ্জ), সাওম (রোযা) এবং অন্য কোন নেক আমল গ্রহণ করা হবে না, যতক্ষণ না সে তওবা করে। যে ব্যক্তি তওবা করে, মহান আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবূল করেন। সাবধান! কোনো নারীকে পুরুষের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো বেদুইনকে কোনো মুহাজিরের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা, কোনো খারাপ ব্যক্তিকে কোনো (সত্যিকার) মুমিনের ওপর ইমাম নিযুক্ত করবেনা। তবে কোন স্বৈরাচারী শাসক যদি বাধ্য করে এবং তার তরবারি চাবুকের ভয় থাকে তাহলে তা স্বতন্ত্র কথা। (ইবনে মাজাহ শরীফঃ ১০৮১)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে পবিত্র জুমুআহ শরীফ সহ দৈনিক ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায়ের তৌফিক দিন, জামায়াতে না পারলেও অন্তত একা আদায়ের তৌফিক যেনো দেন, এই আর্জি পেশ করলাম মালিক মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে। আল ফাতিহা (সূরাহ ফাতিহা দিয়ে দোয়া শেষ করবেন।)

দলিল সমূহঃ

() দারেমী হা/২২৭() মিরআত হা/২২৯-এর ব্যাখ্যা() মিরক্বাত, শরহে মিশকাত হা/২২৮-এর ব্যাখ্যা(৪) ইবনু হিশাম /৬০৪ (৫) মুসলিম হা/১২১৮ (১৪৭) বিদায় হজ্জঅনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/২৫৫৫ মানাসিকঅধ্যায়; ইবনু মাজাহ হা/৩০৭৪(৬) আহমাদ হা/২৪০০৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৬২; ছহীহাহ হা/৫৪৯(৭) বুখারী হা/১০; মিশকাত হা/(৮) বুখারী হা/৬৫৮৩-৮৪; মুসলিম হা/২২৯৭মিশকাত হা/৫৫৭১(অতএব জন্মনিরোধ করে উম্মতের সংখ্যা কমানো এবং ধর্মের নামে রাজনীতির নামে ইসলামের মধ্যে নতুন কিছু সৃষ্টি বা আমদানী করা নিষিদ্ধ(৯) তিরমিযী হা/১৫১৮; আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; ইবনু মাজাহ হা/৩১২৫; মিশকাত হা/১৪৭৮, ‘আতীরাহঅর্থ পশু যা রজব মাসে যবেহ করা হত যা ইসলামের প্রথম যুগে চালু ছিল এবং পরে রহিত করা হয় (মিরআত হা/১৪৯২-এর ব্যাখ্যা) (অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, মুক্বীম অবস্থায় প্রত্যেক পরিবারে একটি করে কুরবানী দেওয়া আবশ্যক। তাছাড়া মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আমরা ইসমাঈলের কুরবানীর বিনিময়ে একটি মহান কুরবানী পেশ করলাম আর সেটিকে আমরা পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ৩৭/১০৭-০৮) আর সেটি ছিল একটি দুম্বা। রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মদীনাতে মুক্বীম অবস্থায় নিজ পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে একটি বা দুটি দুম্বা কুরবানী করেছেন’ (বুখারী হা/৫৫৫৮; মুসলিম হা/১৯৬৬; মিশকাত হা/১৪৫৩-৫৪) আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম বলেন, হজ্জের সফরে তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী দিয়েছেনঃ (আবুদাঊদ হা/১৭৫০) আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজ্জের সফরে রাসূল রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ানো অবস্থায় ৭টি উট নহর করেন এবং মদীনাতে ঈদুল আযহার দিন দুটি শিংওয়ালা সুঠামদেহী দুম্বা যবেহ করেছেন’ (বুখারী হা/১৭১২) মুসাফির অবস্থায় সাত জনে মিলে একটি গরু বা উট কুরবানীর বিধান রয়েছে। হোদায়বিয়া হজ্জের সফরে এবং অন্যান্য সফরে ছাহাবীগণ এভাবেই কুরবানী করেছেন’ (মুসলিম হা/১৩১৮ (৩৫০-৫১); আবুদাঊদ হা/২৮০৯; তিরমিযী হা/৯০৪-০৫; ইবনু মাজাহ হা/৩১৩১; মিশকাত হা/১৪৬৯) উক্ত হাদীছটি আবুদাঊদে মিশকাতে সংক্ষিপ্তভাবে এসেছেঃ (الْبَقَرَةُ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْجَزُورُ عَنْ سَبْعَةٍ)গরু উট সাত জনের পক্ষ তে’ (আবুদাঊদ হা/২৮০৮; মিশকাত হা/১৪৫৮ কুরবানীঅনুচ্ছেদ) () তিরমিযী হা/২১৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৫, হাদীছ ছহীহ; মিরক্বাত শারহ মিশকাত হা/২৬৭০। আরাফার দিনকে হজ্জে আকবারবলা হয় এবং শুধু ওমরাকে হজ্জে আছগারবলা হয়। তবে প্রসিদ্ধ মতে আরাফা জুমআর দিন একত্রিত হওয়াকে হজ্জে আকবারবলা হয় (মিরক্বাত হা/২৬৭০-এর আলোচনা) () মুসলিম হা/২৮১২; মিশকাত হা/৭২() বায়হাক্বী হা/১১৩০৪; ইরওয়া হা/১৪৫৯-এর আলোচনা /২৮১, সনদ হাসান () যাদুল মাআদ /২১৬ () ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৯২৭, সনদ হাসান; ইবনু হিশাম /৬০৫


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: