Tuesday, July 5, 2022

রাজারবাগি মহিলা পির-কে মুর্শিদ মেনে মুরিদ হিসেবে অজিফা পাঠ কি যায়েজ?

এক কথায়, না। শুধু পুরুষের জন্যেই না, নারীর জন্যেওঃ “নারী খলীফা, নারী ইমাম, নারী পির/মুরশিদ” এর কোন স্থান নাই সম্মানিত দ্বীন ইসলামে। এক বোন আমাকে প্রশ্ন করেন এই বিষয়ে যে উনার কিছু আত্মীয় মেয়ে মুরিদেরা নাকি তাদের কথিত মুর্শিদ (আম্মাজি) রাজারবাগি পির দিল্লুর বউয়ের নামে তরীকার ওয়াজিফা পাঠ করে। নাউযুবিল্লাহ!!!

(আমি আমার ক্বলবের দিকে মুতাওয়াজ্জেহ আছি, আমার ক্বলব আমার শাইখা উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার ক্বলব মুবারকের ওসীলায় হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বলবের দিকে মুতাওয়াজ্জেহ আছে। উনার মুহব্বত, তাওয়াজ্জুহ ও যিয়ারত আমায় নছিব করুন ইয়া আল্লাহ পাক।)

শোনে আমি আসমান থেকে পড়ি, তখন এই লিখাটা লিখি যা প্রকাশ করা হয়নি কখনো। এর কারণ হিসেবে জানতে চাইলে আমাকে ঐ বোন জানান যে রাজারবাগি অধিকাংশ মহিলা মুরিদ নাকি দিল্লুর রহমানকে মুর্শিদ হিসেবে তালাক দিয়ে তার বউয়ের মুরিদ হয়েছে।

আমি জিজ্ঞাসা করলাম পির কে কেনো তালাক দিলো মুরিদেরা? কারণ হিসেবে বল্লেনঃ তাদের কথিত সেই আম্মাজি শায়েখা নাকি মুশরিক পির দিল্লুর অনেক কুফরিকে সমর্থন করেনা। আমি আরো বেশী আশ্চর্য হলাম এই কারণে যে, জামাইয়ের কুফরি আক্বিদাহ এর কারণে তার সাথে ইখতেলাফ করা মহিলা পিরের মগজে এতটুকু ঢুকেনা যে, কোন আহাল যদি স্পষ্ট কুফুরি করে তাহলে তার সাথে খোদ রাজারবাগি ফতওয়া অনুসারে বিয়ে বাতিল হয়ে যায়। বাচ্চা জন্ম নিলে জারজ হয়। ওয়ারিশস্বত্ব বাতিল হয়। অথচ শিরকের ম্যাশিন দিল্লুর আনলিমিটেড কুফরিতেও তাদের বিয়ে এখনো বাতিল হয়নি, একিই বাসায় একত্রে বসবাসে কোন গুনাহ হয়না, সারা জিনার গুনাহ কেবল যারা দিল্লুর মহিলা মুরিদ হয়নি তাদের। এ কেমন মুনাফিকি?

এই ঘটনা যখন দিল্লুর কানে গেলো সে তার ইবলিশি শান প্রকাশ করলো এত ফখরের সাথে, যা নিম্নোক্ত ভিডিওতে নিজেই শুনতে পাবেন। এছাড়াও প্রত্যেক সপ্তাহে নিজের পঠিত খুৎবায় বলা আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া (আবূ বক্বর সিদ্দিক আলাইহিস সালাম) সহ দুনিয়ার সকল মানুষের নাকি সে শায়েখ। এই উদ্ভট মাতলামি শোনে যেখানে দিল্লুর পেট্টু কে দলে দলে পরিত্যাগ করার কথা ছিল তার মুরিদ-দের, সেখানে তা না করে মূর্খ গোঁয়ার জাহিলেরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। 

যাইহোক মূল প্রসঙ্গে চলে আসি। সম্মানিত দ্বীন ইসলামে বাইয়াত হওয়া ফরজ/সুন্নত, কিন্তু সেটা কার নিকট?

ইসলামিক খিলাফত বিদ্যমান থাকলে মুসলিম মিল্লাতের খলিফার নিকট নিদৃষ্ট দ্বীনি বিষয়ে আনুগত্যের বাইয়াত হওয়া ফরজ, আর যদি এমন কোন একটি যায়গায় বসবাস করা হয় যেখানে ইসলামিক হুকুমাত এবং খিলাফত নাই, তখন নিদৃষ্ট দ্বীনি বিষয়ে ইসলাহ হতে তাক্বওয়া হাসিলের বাইয়াতের নিমিত্তে আশেপাশে থাকা সর্বচ্চ তাক্বওয়ার অধিকারী দ্বীনের ইলম ওয়ালা ব্যক্তির নিকট।

অনেক কথিত সুন্নী দাবী করে থাকে যে পিরের নিকট বাইয়াত হওয়া সকলের জন্যে ফরজ, আবার বিদয়াতি সালাফিরা দাবী করে যে খলিফা ছাড়া কারো নিকট নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ নয়। মূলত উভয়ই ভ্রান্ত আক্বিদাহ পোষণ করে থাকে। হাক্বিকত হলো যেকোন ইল্ম ও তাক্বওয়াশীল পিরের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ নয়, তবে তা আত্মশুদ্ধির জন্য যায়েজ পরন্ত সুন্নাহ। (বাইয়াত বিষয়ে আগামী পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, এইখানে এই বিষয়ে আলোচনাই প্রয়োজন যেটার কারণে এই লিখা।)

পবিত্র আল কুরআনে “বাইয়াত” শব্দটি অসংখ্যবার এসেছে মুসলিম মিল্লাতের ব্যপারে। তবে প্রত্যেক যায়গায় তা পুরুষদের জন্য খাস, কোন মহিলার ব্যপারে তা প্রয়োগ করা যাবেনা।

নারীদের উপর পুরুষের মর্যাদা দিতে গিয়ে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক নারীর সৃষ্টি পুরুষের মতো স্বতন্ত্রভাবে না করে পুরুষের বাম পাঁজরের বাকা একটি হাড় থেকে তাদের সৃষ্টি করেছেন। করেছেন তাদের পুরুষদের উপর নির্ভরশীল। ইসলামিক জ্ঞানের অধিকারী জ্ঞানী মাত্রই জানি যে একজন দ্বীনদার পর্দানশীল মুমিনা মহিলা সব সময়ই একজন পুরুষের উপর নির্ভরশীল, সে মাহরাম ব্যতীত ঘর থেকে সফরে বের হতেই পারবেনা (মজবুরি ভিন্ন জিনিস), এমনকি ফরজ হজ্জ আদায়ের জন্যে হলেও না। সে হয় আহাল, না হয় পূত্র, না হয় ভাই, বাপ, চাচা, মামা কিংবা দাদার মুখাপেক্ষী সব সময়। আর অন্যের মুখাপেক্ষী কেউ মুসলিম মিল্লাতের গুরুত্বপূর্ণ দায়ীত্ব খলিফা, আমীর, মুর্শিদ, শায়েখ এর স্থানে অধিষ্ট হতে কখনোই পারবেনা। একজন নারী প্রত্যেক মাসে নিদৃষ্ট কিছু দিন ফরজ নামায থেকে বিরত থাকে শারীরিক মাজুরতার কারণে, এছাড়াও সন্তান জন্মের সময় অনেক লম্বা সময় সে নামায রোজা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। একারণেই তাদের উপর মিল্লাতের দায়ীত্ব, ইমামের দায়িত্ব, শায়েখ/মুরশিদ, খিলাফত খলীফার দায়িত্ব নেওয়ার ভার আল্লাহ পাক ন্যস্ত করেন নাই। তার মূল দায়ীত্ব হলো সংসার সামলানো, আহালের খেদমত করা, সন্তানদের খাটি মুসলিম মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তোলা, আহালের প্রয়োজনে নফল নামাজ/রোজার মতো ইবাদত না করা, সেখানে শায়েখ/মুরশিদ, খিলাফত খলীফার কঠিন দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। অবশ্য ইহুদীদের টাকায় পরিচালিত কথিত নারীবাদীদের মতো বুলি আওড়িয়ে সমান অধিকার এর দাবী তুল্লে সেটা ভিন্ন কথা।

মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَ لِلرِّجَالِ عَلَیۡهِنَّ دَرَجَۃٌ ؕ وَ اللّٰهُ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ) (আর) নারীদের উপর পুরুষের মর্যাদা এক মাত্রা বেশী রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (আল কুরআনঃ ২:২২৮)

কুরআন সুন্নাহ’র সুস্পষ্ট বর্ণনাদির ভিত্তিতে বিগত চোদ্দ শতক ধরে এ বিষয়টি উম্মাহ’র ফিকাহ্বীদগনের মাঝে কোনো রকম মতদ্বন্দ্ব ছাড়াই গৃহীত হয়ে আসছে যে, কোনো ‘ইসলামী রাষ্ট্রে’র নেতৃত্ব দানের দায়িত্ব কোনো নারীর হাতে সোপর্দ করা জায়েয নয়।

ইমাম ইবনে হাযাম রহিমাহুল্লাহ (অফাৎ ৪৫৬ হিঃ) (مراتب الاجماع) নামে একটি কিতাব লিখেছেনঃ যে সব মাসআলার উপর উম্মাহ’র ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছেঃ- তিনি সেগুলোকে সেখানে সন্নিবেশিত করে দিয়েছেন। তিনি সেই কিতাবে লিখিছেনঃ (و اتفقوا ان الامامة لا تجوز لامراة) সকল ওলামায়ে কেরাম এব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য (মুসলিম মিল্লাতের) ‘ইমাম/খলিফা/রাষ্ট্রপ্রধান’ হওয়া জায়েয নয়’। (মারাতিবুল ইজমা ১২৬ পৃষ্ঠা)।

বস্তুতঃ উম্মতের এই ইজমা’র ভিত্তি কুরআন সুন্নাহ’র বহু দলিল প্রমাণের উপর স্থাপিত। আমরা সেগুলোকে এখানে পর্যায়ক্রমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিচ্ছিঃ-

১) যুবায়র ইবনু মুত'ঈম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (অনেক দূরের) একজন মহিলা সাহাবী রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলে তিনি সেই মহিলাকে (পরবর্তীতে) আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা তখন বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তখন কি করবো? এ কথা দ্বারা ঐ মহিলা সাহাবী রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর অফাৎ-এর প্রতি ইশারা করেলেন। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তাহলে আবু বকর সিদ্দিক আলাইহিস সালামের নিকট আসবে। (বুখারী শরীফ ৩৬৫৯, মুসলিম শরীফ ২৩৮৬) অথচ সকল উম্মাহাতুল মু’মিনিন বিদ্যমান ছিলেন, ছিলেন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার মেয়ে জান্নাতের সকল নারিদের সর্দারনী ফাতিমাতুজ্জ যাহ্‌রা আলাইহাস সালাতু ওয়াস সালাম। কিন্তু কোন মহিলাদের দিকে নয় নির্দেশ দিলেন একজন পুরুষের দিকে। 

২) ‘সহীহ বুখারী’ সহ বিভিন্ন ‘হাদীস গ্রন্থে’ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত হাদিস শরীফটি বিভিন্ন সহীহ ও বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘ওই জাতি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না, যে জাতি তাদের (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়গুলোকে কোনো নারীর দায়িত্বে সোর্পদ করে দেয়’। (বুখারী শরীফঃ ৪৪২৫, ৭০৯৯)

এই হাদীসের মধ্যে একথাও পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত কথাটি বলেছিলেন ওই সময়, যখন ইরানের অধিবাসীরা একজন নারীকে তাদের নেত্রী বানিয়ে রেখেছিল। তাই কোনো নারীকে নেত্রী বানানো নাজায়েয হওয়ার ব্যপারে এ হাদিসটি একটি সুস্পষ্ট দলিল।

৩) হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যখন তোমাদের উৎকৃষ্ট লোকগুলি তোমাদের আমীর (প্রশাসক) হবে, তোমাদের ধনী লোকগুলি তোমাদের দানশীলরাই হবে এবং তোমাদের (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয় আশয়গুলি তোমাদের মাঝে পরামর্শের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে, তখন জমিনের উপরিভাগ তোমাদের জন্য জমিনের গহবর থেকে উত্তম হবে। আর যখন তোমাদের নিকৃষ্ট লোকগুলি তোমাদের আমীর (প্রশাসক) হবে, তোমাদের ধনী লোকগুলি তোমাদেরই কৃপণ হবে এবং তোমাদের (গুরুত্বপূর্ণ)  বিষয়আশয়গুলি তোমাদের নারীদের হাতে সোপর্দ করা হবে, তখন জমিনের গহবর তোমাদের জন্য জমিনের উপরিভাগের চেয়ে উত্তম হবে’। (জামে তিরমিযীঃ ২/৪২) এই হাদীসটি এতই পরিষ্কার যে, এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের কোনো প্রয়োজন নেই।

৪) হযরত আবু বকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলে পাক ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার কোথাও সৈন্যদল প্রেরন করলেন। সেখান থেকে এক ব্যক্তি বিজয়ের সুসংবাদ নিয়ে এলে বিজয়ের সুসংবাদ শুনে তিনি (জমিনে) সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। সিজদা’র পর তিনি সংবাদ বাহকের কাছ থেকে বিস্তারিত বিবরণ শুনছিলেন। সংবাদদাতা বিস্তারিত বর্ণনা দান করলেনঃ ‘উক্ত বিবরণে শত্রুদের ঘটনাবলীর মধ্যে একটি বিষয় এও ছিল যে, একজন নারী তাদের নেতৃত্ব প্রদান করছিলো। রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা শুনে বললেনঃ ‘পুরুষরা যখন নারীদের অনুগত্য করা শুরু করে দিবে, তখন তারা বরবাদ-ধ্বংস হয়ে যাবে’। (মুসতাদরাক আল হাকীম ৪/২৯১, হাদিস ৭৮৭০)

ইমাম হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি এ হাদীসটিকে সহীহ সনদযুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ ও (অফাৎ ৭৪৮ হিজরী) একে সহীহ বলেছেন। এই হাদিসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় নিচের হাদিস শরীফের দিকে তাকালে।

উসমান ইবনু হায়সাম (রহমতুল্লাহী আলাইহি), হযরত আবূ বাকরা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনা একটি হাদিস শরীফ আমাকে জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের সাথে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে (সাইয়্যিদুনা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালামের পক্ষ নিয়ে মাওলা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম-এর বিপক্ষে) শরিক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম। আবূ বাকরা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, সেই হাদিস শরীফটি হলো, যখন রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা তনয়াকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছে, তখন তিনি বললেন, সেই জাতি কখনোই সফলতার মুখ দেখবে না যারা তাদের আমীর (সরকার, খলীফা, নেতা, মুর্শিদ) নির্বাচন করে। (বুখারি শরীফঃ ৪৪২৫)

৫) কুরআনুল কারীমে এরশাদ হয়েছেঃ (اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوۡنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللّٰہُ بَعۡضَہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ) পুরুষরা নারীদের উপর ‘কাউআম’ কতৃত্বশীল (অভিভাবক, কর্তা)। এটা এজন্য যে, মহান আল্লাহ পাক একজনকে অন্যজনের উপর প্রাধান্য দান করেছেন। (আল কুরআনঃ ৪/৩৪)

উপরোক্ত আয়াতটিতে মহান আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট করে ‘কাউমিয়াত’ (অভিভাবকত্ব ও কর্তাগিরী)-র দায়িত্ব দিয়েছেন পুরুষকে। যদিও এ আয়াতটি পড়ে আপনার ব্যক্তিগত ব্যপারাদির সাথে সম্পর্কিত বলে মনে হতে পারে; কিন্তু প্রথমতঃ আয়াতটির মধ্যে এমন কোনো ‘শব্দ’ নেই, যা একে ব্যক্তিগত বিষয়াদির সাথে বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়; দ্বিতীয়তঃ এখানে এ বিষয়টিও সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ পাক ছোট্ট একটি পরিবারের প্রধানত্বের দায়িত্বটুকুই যে নারী জাতির স্কন্ধে সোপর্দ করেন নি, সেখানে কোন নারীকে সমস্ত পরিবারের লোকজন সহ গোটা রাষ্ট্র, সালতানাত-এর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের দায়িত্বভার কি করে সোপর্দ করতে পারেন? সুতরাং এ আয়াতটি (عبارة النص) ইবারাতুন্নস্/প্রত্যক্ষ দলিল হিসেবে না হোক, (دلالت النص) দালালাতুন্নস্/পরোক্ষ দলিল হিসেবেও দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করে যে, নারীকে কোনো ইসলামী রাষ্ট্রের নেত্রী বানানো জায়েয নয়।

তাছাড়া আয়াতের শানে নুযুল ও পরিষ্কার ধারণা দেয় যে নারী কখনোই কোন পুরুষের উপর কতৃত্ব করতে পারবেনা।

তাফসীরে তাবারিতে উল্লেখ হয়েছেঃ হযরত দাহহাক রহমতুল্লাহ হতে বর্ণীত, তিনি - মহান আল্লাহ পাক উনার বাণীঃ (الرِّجَالُ قَوّٰمُونَ عَلَى النِّسَآءِ)-এর ব্যাখায় বলেন, নারীর উপর পুরুষের প্রাধান্য রয়েছে। সে তাকে মহান আল্লাহ পাক-এর আনুগত্যে, উনার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ করবে। যদি স্ত্রী তা মেনে না চলে তবে স্বামীর উচিৎ তাকে প্রহার করা।

ইবনে মুবারক (রহমতুল্লাহী আলাইহি) বলেন, আমি সুফিয়ান (রহমতুল্লাহী আলাইহি)-কে বলতে শুনেছি। তিনি (بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ)-এর ব্যাখায় বলেন, মূলত আল্লাহ তা'লা পুরুষদেরই নারীদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর গালে থাপ্পড় মেরেছিল, এ বিষয়ে (সেই স্ত্রীলোক) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ পেশ করলে তিনি কিসাসের আদেশ দিয়ে দেন (অর্থাৎ তুমি তোমার স্বামীর থেকে প্রতিশোধ নেবে)। কিন্তু মহান আল্লাহ পাঁক তা হতে দিলেন না। তখনই এ প্রসঙ্গে এ আয়াত শরীফ নাযিল হয়।

হযরত কাতাদা (রহমতুল্লাহী আলাইহি) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে থাপ্পড় মারে। এরপর সেই মহিলা রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে অভিযোগ করে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে সে কিসাস (আহালের আঘাতের বিনিময়ে অনুরূপ পাল্টা আঘাত তাকে করা) গ্রহণের ইচ্ছা পোষণ করলে, মহান আল্লাহ পাক তখন (الرِّجَالُ قَوّٰمُونَ عَلَى النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلٰى بَعْضٍ وَبِمَآ أَنفَقُوا مِنْ أَمْوٰلِهِمْ)-এ আয়াত শরীফ নাযিল করেন। আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর নবী করীম ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলাকে ডেকে বলেনঃ আমি চেয়েছিলাম এক রকম, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার মর্জি অন্য রকম।

ফিকির এর বিষয় হলোঃ সারা কায়েনাতে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম হলেন অদ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব মুবারক, যিনি কিছু নির্দেশ দিলে তা শরীয়ত, ফরজ বলে গন্য হবে এটা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনারই কথা। অথচ চিন্তা করা প্রয়োজন যে, খোদ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম চাওয়ার পরেও মহান আল্লাহ পাক ওয়াহী নাযিল করে দিয়েছেন এই বলে যে, না এই কাজ করা যাবেনা এতে পুরুষ এর কতৃত্ব নষ্ট হবে যাদের আমি জমিনে আমার খলীফা হিসেবে প্রেরণ করেছি। অর্থাৎ তোমার স্বামী যদি তোমাকে মেরেও থাকে তাহলে তুমি তাকে এর বিনিময়ে মারতে পারবেনা। কারণ মহান আল্লাহ পাক তাকে তোমার উপর কতৃত্বশীল করে দিয়েছেন। খোদ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর ইচ্ছাকেও আল্লাহ পাঁক এইখানে প্রধান্য দেন নায়, যাতে কিয়ামত পর্যন্ত পুরুষরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল থাকেন। জাহিলেরা কি বুঝে এইসব? কার ইচ্ছাকে রদ করে কি জারি করছেন মহান আল্লাহ পাঁক?

আরো উল্লেখ রয়েছেঃ উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে উল্লেখ হয়েছে এই হাদিস শরীফ খানাও, যেখানে বলা হয়েছেঃ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যদি কাউকে নির্দেশ দিতে পারতাম যে, সে মহান আল্লাহ পাক ছাড়া অন্য কাউকে সেজদাহ করবে তাহলে নারীকে নির্দেশ দিতাম, সে যেনো তার স্বামীকে সেজদাহ করে। কেননা তার ওপর সবচেয়ে বড় হক তারই রয়েছে। (আবূ দাউদ শরীফ ২/২৪৪/২১৪০, জামে তিরমিযী ৩/৪৬৫/১১৫৯, মুসনাদ আহমাদ-৩/১৫৮, ইবনে হিব্বান-৪/১২৯১)

উপরোক্ত হাদিস থেকেই বুঝা যায় যে একজন নারী কখনোই পুরুষের উপর কতৃত্বশীল হতে পারবেনা। একারণেই সেজদা কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে খাস না হলে নারীদেরকে হুকুম দেয়া হতো পুরুষকে সেজদা দিতে।

৬) সূরা আহযাবে মহান আল্লাহ তাআলা একজন নারীর কাজকর্মের গন্ডিসীমা পরিষ্কার ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন। একজন নারীর দুনিয়া হলো তার নিজের ঘর, পুরুষের মতো সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি তার নাই। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاهِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی) আর আপনারা স্বগৃহে অবস্থান করবেন এবং জাহেলী যুগের (নারীদের) মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবেন না। (আল কুরআনঃ ৩৩/৩৩) উপরোক্ত আয়াত খানার হুকুম সবার জন্যে হলেও নাযিল যাদের উদ্যেশ্যে করে হয়েছিলো, উনারা হলেন উম্মতের মাতাগণ। চিন্তা করা যায়? উনাদের সম্মুখে আজকের কোন নারীর দুই পয়সার কোন মুল্য আছে?

এ আয়াতে পাঁকে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, নারী জাতির আসল দায়িত্ব হল গৃহের দায়িত্ব। তার কর্তব্য হল, গৃহের বাহিরের কষ্ট পরিশ্রম ও সংগ্রাম থেকে নিজকে গুটিয়ে নিয়ে নিজ গৃহের সংশোধন এবং পরিবারের তরবিয়ত প্রতিপালন-পরিচর্যার মত ফরয কাজটিকে আনজাম দেয়া, যা মূলতঃ গোটা জাতি ও জীবন সংসারের বুনিয়াদ। তাই (স্বতন্ত্র অবস্থাগুলো ছাড়া) উসূল ও নীতিগত ভাবে গৃহের বাহিরের কোনো দায়িত্ব নারীর হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে না।

কেউ কেউ বলে থাকেন যে, ‘আয়াতের সম্মোধনটি বিশেষ ভাবে নবীয়ে করীম ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণের প্রতি নাযিল করা হয়েছিল; সকল নারী এর ‘সম্মোধন-পাত্র’ নয়! কিন্তু এটা এত পরিষ্কার একটি ভ্রান্ত কথা যে, এজাতীয় কথা রদ্ করে দেয়ার জন্য দীর্ঘ কোনো বহছে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। প্রথমতঃ কুরআনুল কারীমে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণকে সম্মোধন করে বহু ব্যপারেই তাগিদ দিয়েছেন। যেমনঃ উনারা যেন তাকওয়া অবলম্বন করেন, মহান আল্লাহ পাক ও উনার রাসুল ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুগত্য করেন, ফায়েশা কথাবার্তা থেকে বেঁচে চলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোনো একটি ব্যপারও এমন নেই, যে সম্পর্কে কোনো বিবেকবান লোক একথা বলতে পারেন যে, এসমস্ত বিধান শুধুমাত্র রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণের জন্য, অন্য কোনো নারীর জন্য নয়। কাজেই এসকল বিধান যখন সকল নারীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তখন ঘরে আবদ্ধ হয়ে থাকার এই একটি বিধানই কেনো নবীজী রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণের জন্য নির্দিষ্ট হবে?! দ্বিতীয়তঃ রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণ ইলমী ও আমলী যোগ্যতাগুণের প্রশ্নে উম্মাহ’র মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট নারী ছিলেন, উনারা গোটা উম্মাহ’র জননী ছিলেন-এ কথায় কোন্ মুসলমান সন্দেহ করতে পারে!? করলে ঈমান থাকবে? ইসলামে যদি রাজনীতি, নেতৃত্ব, জীবিকা ও অর্থনৈতিক দায়দায়িত্ব কোনো নারীর হাতে সোপর্দ করা জায়েয হতই, তাহলে এ সকল পবিত্র নারীদের চেয়ে অন্য আর কোনো নারীই এই দায়িত্বের জন্য অধিক উপযুক্ত হতে পারতেন না। 

পবিত্র কুরআন যখন উনাদেরকে এজাতীয় দায়িত্ব গ্রহন করা থেকে নিষেধ করে শুধুমাত্র গৃহের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, তখন অন্য কোন্ নারী আবার এমন থাকতে পারে, যার সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সহধর্মিণীগণকে যে কারণে গৃহে আবদ্ধ হয়ে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সে ‘কারণটি’ তার মধ্যে বিদ্যমান নেই!!! এমনকি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র কন্যা, সবচেয়ে মুহব্বতের বেটি ফাতেমাতুজ্জ যাহ্‌রা আলাইহাস সালাম থাকতেন সবার অগ্রে, যেহেতু রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র বংশধারা উনার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে যা অন্য কারো বেলায় প্রযোজ্য না।

৭) পবিত্র কুরআনে সূরা আহযাবে নারীদের যে গন্ডিসীমার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদিসে তার ‘সমর্থিত ব্যাখ্যা’ দিয়েছেন এভাবেঃ ‘একজন নারী হল তার স্বামীর ‘গৃহবাসী ও তার সন্তান-সন্ততির’ রক্ষনাবেক্ষনকারী। (এটাই তার জিম্মাদারী ও দায়িত্ব)। সে তাদের ব্যপারে জিজ্ঞাসীত হবে।’ (বুখারী শরীফঃ ৭১৩৮, ৮৯৩) 

এই হাদীসে পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে যে, নারীদের দায়িত্ব হল বাড়ির ব্যবস্থাপনার দেখভাল করা, সন্তান-সন্ততির তরবিয়ত ও পরিচর্যা করা এবং ব্যক্তিগত ব্যপার-স্যপারগুলোর সু-বন্দোবস্থ করা। গৃহের বহিঃর্ভাগের কোনো দায়দায়িত্ব তার কাধে সোপর্দ করা হয় নি।

৮) ইসলামে ‘রাষ্ট্রীয় ইমামত (নেতৃত্ব)’ এবং ‘নামাযের ইমামতীর দায়িত্ব’ এ-দুটো বিষয় এতই অতঃপ্রত ভাবে জড়িত যে, ‘রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব’-কেও শরীয়তের পরিভাষায় (امامت) ইমামত-ই বলা হয়ে থাকে। আর (امام) ইমাম কথাটি যেমনিভাবে নামায পড়ানেওয়ালাকে বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়, তেমনিভাবে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’-কেও ‘ইমাম’ বলা হয়ে থাকে। কুরআন হাদীসের বহু স্থানে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’কে ‘ইমাম’ শব্দ দ্বারা অবিহিত করা হয়েছে। আর ফিকাহবীদ আলেমগণ ‘ইমামত’-এর এই দ্বিবিধ অর্থকে এভাবে পার্থক্য করেন যে, নামাজের ‘ইমামতী’ কে তারা (امامت صغرى) ইমামত-ই-সুগরা বা ছোট ইমামত এবং রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বকে (امامت كبرى) ইমামত-ই কুবরা বা বড় ইমামত বলে থাকেন।

তদুপরি এই প্রমাণপুষ্ট কথাটিকেও কেউ অস্বীকার করতে পারে না যে, নামাযের মধ্যে কোনো নারীই কোনো পুরুষের ইমামতী করতে পারবে না। মহান আল্লাহ পাঁক যখন ছোট স্তরের ইমামতীর দায়িত্বই নারীর উপর ন্যস্ত করেন নি, তখন তার কাঁধে বড় স্তরের ইমামতী (খলীফা, আমীর, শায়েখ, মুর্শিদ) কি করে সোপর্দ করা যেতে পারে?

ইসলামে ‘রাষ্ট্রীয় ইমামত বা নেতৃতে’র সাথে নামাযের যে কি পরিমাণ গভীর সম্পর্ক রয়েছে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় দিয়েই তার অনুমান করা যেতে পারেঃ-

ক) পৃথিবীর কোনো অংশে ইসলামের হুকুমত ও কর্তৃত্ব অর্জিত হওয়ার পর (اقامت صلوة) নামায কায়েম করা-কে ‘আমীরুল মু’মিনীন (মুসলীম রাষ্ট্র প্রধান)’-এর সর্বপ্রথম ফরয দায়িত্ব বলে অবিহিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছেঃ (اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ) এরা ওই সমস্ত লোক, আমি যদি তাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে কর্তৃত্ব দান করি, তাহলে তারা পবিত্র নামায কায়েম করবে, পবিত্র যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে’’। (আল কুরআন ২২/৪১)

খ) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন পর্যন্ত, বরং এর পরবর্তী কয়েক যুগ পর্যন্ত ‘মুতাওয়াতির’ এই আমলটি অব্যহতভাবে চলে আসছে যে, যে জনগোষ্ঠির মধ্যে ‘রাষ্ট্র প্রধান’ (তথা আমিরুল মু’মিনীন) বিদ্যমান ছিলেন, তিনিই সেই জনগোষ্ঠির ইমামতী করতেন। আর গবেষক ফুকাহায়ে কেরামগণও এ ব্যপারে একমত যে, নামাজের ইমামতীর দায়িত্ব সবার আগে মুসলীম ‘রাষ্ট্র প্রধানে’র অধিকারেই বর্তায়। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে অফাৎ লাভ করার পূর্বে রোগের কারণে যখন মসজীদে আসতে অপারগ হয়ে পড়লেন, তখন তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম-কে উনার স্থলে নামাযের জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এ থেকে একথাই বুঝে নিয়েছিলেন যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালামের কাঁধে ছোট ইমামতের দায়িত্ব ন্যস্ত করার পিছনে এ দিকেই ইঙ্গিত রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পর ‘বড় ইমামত’ তথা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম।

হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম বলেনঃ ‘আমরা রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর পর লোকদের মাঝে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালামকেই রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব্যের সবচাইতে বেশি হক্বদার বলে মনে করি। তিনি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘গুহা-সাথী’, ‘দুজনের একজন’। আমরা উনার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে জানি। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম জমিনের উপরে থাকতেই লোকদের নামাযে উনাকে ইমামতী করার নির্দেশ দিয়েছেলেন। (মুসতারাকে হাকীম- ৩/৬৬) তাছাড়া এইযে ৪ চারজন খলীফা নির্বাচিত হয়েছিলেন, উনাদের কারো ব্যপারে পুরুষ ছাড়া কোন সাধারণ মহিলা তো দূর খোদ আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত কোন নারীর মতামত ও জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

গ) নামাযের মধ্যে ‘আমিরুল-মু’মিনীনে’র ইমামতীর অধিকারটি শরীয়তে এত অধিক গুরুত্ব রাখে যে, ‘জানাযা নামাযে’র ইমামতীর ক্ষেত্রে ‘আমিরুল-মু’মিনীন’-কে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারদের উপরেও স্থান দেয়া হয়েছে। আর একথাও প্রমাণিত যে, ‘আমিরুল-মু’মিনীন’ যদি জানাযার নামাযে উপস্থিত থাকেন, তাহলে ইমামতীর সর্ব প্রথম হক্ব তাঁর; এর পরে উত্তরাধিকারদের।

এসব বিধান থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইসলামে ‘রাষ্ট্রীয় নেতৃতে’র সাথে নামাযের ইমামতীর এতই গভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, ইসলামে এমন কোনো ‘রাষ্ট্র প্রধানের’ কথা কল্পনাও করা যায় না, যিনি কোনো অবস্থাতেই নামাযের ইমামতী করার উপযুক্ত নন। কোনো নারী তাকওয়া-পরহেজগারী ও পবিত্রতার প্রশ্নে যত উচ্চ মাকামের অধিকারিই হোন না কেনো, যেহেতু তিনি নামাযে পুরুষের ইমামতী করতে পারেন না, তাই তার উপর ‘বড় ইমামত ’ (তথা খলিফা/আমির)-এর দায়িত্বও সোপর্দ করা যেতে পারে না।

৯) ইসলামের সমস্ত বিধিবিধানের ক্ষেত্রে মোটের উপর যে বিষয়টি পরিষ্কার দৃষ্টিগোচর হয় তা এই যে, নারীকে এমন লাবনীয় ও আকর্ষনীয় পাত্র হিসেবে অবিহিত করা হয়েছে, যাকে কোনো প্রয়োজন ছাড়া মানুষের সাধারণ সমাবেশে পর্দা সহ আসাকেও কোনো অবস্থাতেই পছন্দ করা হয় নি। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘নারী হচ্ছে গোপনীয় থাকার পাত্র। সে যখন বাহিরে বেড় হয়, তখন শয়তান তার পশ্চাদানুসরণে লেগে যায়। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১১৮৩)

একারণেই নারীকে পর্দা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ মুসলমানদেরকে এই তাগিদ দেয়া হয়েছে যেঃ (وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتٰعًا فَسْـَٔلُوهُنَّ مِن وَرَآءِ حِجَابٍ)  আর তোমরা যখন উনাদের কাছ থেকে কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চেয়ে নিবে। (আল কুরআনঃ ৩৩/৫৩)

ইসলামের বহু বিধান ও ‘শিয়ার’ এমন আছে, যা ঘর থেকে বেড় হয়ে সম্পাদন করতে হয়; আর ওসব থেকে নারীদেরকে আলাদা রাখা হয়েছে। যেমনঃ জুমআর নামায। এটা কত ফজীলতের বিষয়! কুরআর হাদীসে পুরুষদেরকে এতে শরিক হওয়ার জন্য কতই না তাগিদ দেয়া হয়েছে। এমনকি জুমার আযান দিলে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া ওয়াজিব, বেচাকেনা হারাম। শুধু তাই নয় এর সাথে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম একথাও বলে দিয়েছেন যেঃ ‘জুমআ এমন একটি ফরয কাজ, যা জামাআতের সাথে আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব। তবে তা চার ধরনের ব্যক্তি’র জন্য নয়ঃ ১. এমন গোলাম, যে কারও মালিকানাধীনে রয়েছে, ২. নারী, ৩. শিশু ৪. রোগী’। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১০৬৭) এই হাদীসে জুমআর মত ‘শিয়ারে-ইসলাম’ থেকেও নারীকে আলাদা রাখা হয়েছে।

একইভাবে বলা হয়েছে যে, সাধারণ অবস্থায় এটা প্রত্যেক মুসলমানের হক্ব যে, তার মৃত্যু হলে অপরাপর মুসলমানগন তার জানাযার সাথে কবরস্থান পর্যন্ত গমন করবে। কিন্তু এ বিধান থেকেও নারীকে আলাদা রাখা হয়েছে। হযরত উম্মে আতীয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘আমাদেরকে জানাযার পিছে পিছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে’। (বুখারী শরীফঃ ১/১৭০)

এমনিভাবে নারীকে একাকি সফর করতেও নিষেধ করা হয়েছে, আর তাগিদ দেয়া হয়েছে তারা যেন কোনো ‘মাহরাম’ ছাড়া সফর না করে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ যে নারী মহান আল্লাহ পাক-এর উপর এবং আখেরাতের উপর ঈমান রাখে, যদি তার সাথে তার পিতা বা তার ভাই অথবা তার স্বামী বা তার ছেলে কিংবা তার মাহরাম কেউ না থাকে, তবে তার জন্য তিন দিনের বা ততোধিক দূরুত্বের সফরে যাওয়া হালাল নয়’’। (জামে তিরমিযীঃ ১১৭৯)

এমনকি হজ্জের ন্যয় পবিত্র ফরয কাজ- যা ইসলামের ‘আরকান চতুষ্টয়ে’র মধ্যে অন্যতম, তা আদায়ের জন্যেও (নারীর সাথে) ‘মাহরাম’ কেউ থাকা শর্ত। নারীর একাকি ‘হজ্জ সফরে’ যাওয়া কারও মতেই জায়েয নয়। এধরনের পরিস্থিতিতে তার উপর হজ্জ আদায়ের দায়িত্ব বিদ্যমান থাকে না। মৃত্যু পর্যন্ত এ রকম কোনো মাহরাম পাওয়া না গেলে তাকে হজ্জ আদায় করতে হবে না। অবশ্য বদলী হজ্জের জন্য সে ওসিয়ত করে যাবে।

ইসলামী রোকন সমূহের মধ্যে ‘জীহাদ’ কত গুরুত্বপূর্ণ একটি রোকন! জীহাদের ফজীলত দিয়ে কুরআন হাদীস ভরে আছে। কিন্তু এটা যেহেতু গৃহের বাহিরের একটি কাজ, তাই জীহাদের মত ‘ফরয’ কাজটিকেও নারী জাতির দায়িত্ব থেকে বাহিরে রাখা হয়েছে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর কোনো কোনো হাদীসে এসেছেঃ (ليس على النساء غزو و لا جمعة و لا تشبيع جنازة) ‘নারীর দায়িত্বে না আছে জীহাদ, না জুমআর নামায, আর না জানাযার পিছে পিছে যাওয়া’। (তাবরানী, মাজমাউয-যাওয়াইদ- ২/১৭০; ফাতহুল কাবীর- ৩/৬১)

এমন কি একবার হযরত উম্মে সালমাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহা জীহাদের আগ্রহের কারনে নবীয়ে করীম ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ (يغزوا الرجال و لا تغزو النساء) ‘পুরুষরা জীহাদ করে, নারীরা কি জীহাদ করবে না?’ এর পরিপ্রেক্ষিতে কুরআন কারিমের এই আয়াতটি নাজিল হয়ঃ (و لا تتمنوا ما فضل الله به بعضكم على بعض) ‘আর তোমরা ওই বিষয়ের আকাঙ্খা পোষন করো না, যা দিয়ে মহান আল্লাহ পাক তোমাদের মধ্য থেকে একজনকে অন্যজনের উপর প্রাধান্য দান করেছেন’। (জামে তিরমিযীঃ ৫০১১; মুসনাদে আহমদ- ৬/৩২২)

একথা ঠিক যে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানায় কোনো কোনো নারী জীহাদে আহতদের ঔষধ-পট্টি প্রভৃতির বন্দোবস্থ করার জন্য সাথে গিয়েছিলেন। কিন্তু কথা হল, প্রথমতঃ তাদের উপর নিয়মানুগ ভাবে জীহাদকে ফরয করা হয় নি; দ্বিতীয়ঃ তাদেরকে নিয়মানুগ ভাবে যুদ্ধেও শামিল করা হয় নি। যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম বর্ণনা করেনঃ- ‘রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে জীহাদে নিয়ে যেতেন। তারা আহতদের সেবাশশ্রুষা করতেন। তাদেরকে ‘গনীমতের মাল’ থেকে পুরষ্কার স্বরুপ কিছু দেয়া হত বটে, কিন্তু তিনি তাদেরকে গনীমতের নিয়মানুগ অংশে শরীক করতেন না’। (মুসলীম শরীফ ৪৪৪৮)

যদিও বা- রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার জামানায় নারীদেরকে রাতে মসজীদে নববীতে এসে জামাতে নামায পড়ার অনুমতি দিতেন, কিন্তু উক্ত অনুমতির সাথে সাথে তিনি একথাও বলতেন যেঃ (و بيوتهن خيرلهن) ‘নারীদের জন্য তাদের গৃহই (নামাযের জন্য সবচেয়ে) উৎকৃষ্ট স্থান’। (আবু দাউদ শরীফঃ ৫৬৭, ৫৬৮)

এর পরিষ্কার অর্থ এই যে, নারীদের জন্য ঘরে একাকি নামাজ পড়া মসজীদে নামায পড়া থেকে অধিক ফজীলতপূর্ণ। অথচ পুরুষদের জন্য শক্ত ওজর ছাড়া মসজীদের জামাত তরক করা জায়েয নয়। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম নারীদের ব্যপারে এতদূর পর্যন্ত বলেছেন যেঃ (و صلات المراة فى بيتها افضل من صلاتها فى حجرتها و صلاتها فى مخدعها افضل من صلاتها فى بيتها) ‘একজন নারীর জন্য তার ঘরে নামায পড়া তার হুজরায় নামায পড়া হতে অধিক ফজীলতপূর্ণ। আবার তার কামরার অন্দর মহলে নামায পড়া তার ঘরে নামায পড়া হতে অধিক ফজীলতপূর্ণ’। (আবু দাউদঃ ৫৭০)

উপরোক্ত কুরআন হাদীস থেকে যে কথাটি পরিষ্কার হয়ে যায়, তা এই যে-

১. নারীর উপর জুমআর নামায ওয়াজিব নয়।

২. নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া সফর করা জায়েয নয়।

৩. নারীর জন্য একাকি অবস্থায় হজ্জ আদায় করা ফরয নয়। মৃত্যু পর্যন্ত ‘মাহরাম’ পাওয়া না গেলে সে বদলী হজ্জের ওসিয়ত করে যাবে।

৪. নারীর উপর জীহাদ ফরজ নয়।

৫. নারীর জন্য জামাআতের সাথে নামায পড়া ওয়াজিব নয়।

৬. নারীর জন্য ঘরে একাকি নামায পড়া বাইরে জামাআতের সাথে নামায পড়া হতে অধিক ফজীলতপূর্ণ।

এখন ভেবে দেখার বিষয়, যে ‘দ্বীন ইসলাম’ নারীর পবিত্রতা এবং তার ইজ্জত আব্রু হিফাজতের উদ্দেশ্যে স্থানে স্থানে এত গুরুত্ব দিয়েছে যে, দ্বীনের বড় বড় ‘আরকান’ ও ‘শিয়ার’-কেও তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেই দ্বীন সম্পর্কে একথা কি করে চিন্তা করা যেতে পারে যে, দেশ ও জাতি ও দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নারীর কাঁধে সোপর্দ করে সে তাকে রাষ্ট্রের সামনেই শুধু নয় বরং গোটা পৃথিবীর সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিবে!!! আর তা সম্পাদন করার জন্য তার কাঁধে ওই সমস্ত কাজ কারবার ন্যস্ত করবে, যেসব কাজের দায়িত্ব তার উপর ব্যক্তি পর্যায়গতভাবেও আরোপিত হয় না!!!

দু’জাহানের সর্দার রসূলুল্লাহ ছ্বল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগ থেকে নিয়ে খুলাফায়ে রাশেদিন আলাইহিমুস সালাম বরং ‘খুলাফায়ে রাশেদাহ’র পরেও কয়েক যুগ পর্যন্ত ‘খলীফা’ ও ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ নির্বাচন বিষয়টি উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গোন পরিগ্রহ করেছে। এক খলীফার পর অন্য খলীফা নির্বাচনের সময় প্রত্যেক ক্ষেত্রে বহু মতামত সামনে এসেছে। সে যুগে এমন অসংখ্য নারী বিদ্যমান ছিলেন, যারা তাদের ইলম, ফজল, পবিত্রতা, পরহেজগারী ও বিবেক-বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে অনন্য পর্যায়ের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু কোনো নারীকে যে কখনই রাষ্ট্র প্রধান বানানো হয়নি- ব্যপার শুধু তাই নয়, বরং তখন নিম্ন স্তরের এমন কোনো মতামতও সামনে আসেনি যে, অমুক নারীকে ‘খলীফা’ বানানো হোক। এটা একথারই সুস্পষ্ট দলিল যে, এ ব্যপারে কুরআন-সুন্নাহ’র আহকাম এতটাই পরিষ্কার ছিল যে, কখনো কোনো মুসলমানের অন্তরে নারীকে ‘খলীফা’ বানানোর সামান্য খেয়ালটুকু পর্যন্ত আসেনি। আর আসবেই-বা কেমন করে, যখন ইসলামে এমন কোনো নারীর কথা চিন্তাই করা যায় না, যে নারী-

১. কোনো অবস্থাতেই নামাযের ইমামতী করতে পারে না।

২. যার জামাতের সাথে নামায পড়ার বিষয়টি পছন্দসই নয়।

৩. কখনো সে যদি জামাতে এসে পড়ে, তবে তাকে সকল পুরুষের পিছনে দাঁড়াতে হয়।

৪. যার প্রত্যেক মাসে কয়েক দিন এমন কিছু বের হয়, যখন তার জন্য মসজীদে প্রবেশ করা জায়েয থাকে না।

৫. যার উপর জুমআ ফরয নয়।

৬. যার কোনো জানাযার সাথে যাওয়া জায়েয নেই।

৭. যে মাহরাম ছাড়া সফর করতে পারে না।

৮. যে একাকি হজ্জে যেতে পারে না।

৯. যার উপর জীহাদ ফরয নয়।

১০. যার স্বাক্ষ্যকে অর্ধেক স্বাক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়।

১১. যার জন্য অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বেড় হওয়া জায়েয নয়।

১২. যার ‘ভাত-কাপড়’ বিয়ের আগে পিতার উপর এবং বিয়ের পর স্বামীর উপর ওয়াজিব থাকে।

১৩. যে কারো বিয়েতে ওলী হতে পারে না।

১৪. আর তার গন্ডি সীমা তো এই যে, সে খোদ্ তার ঘরেও ‘গৃহ প্রধান’ হওয়ার আসনটুকুও লাভ করতে পারে না।

পরিশেষে একটি কথাই বলবো, কারো মধ্যে গুমরাহি না থাকলে, চুল পরিমাণ ঈমান ও বিদ্যমান থাকলে সে কোন অবস্থায় কোন মহিলাকে তার (খলীফা, আমীর, শায়েখ, মুর্শিদ) মেনে নেবেনা। এছাড়াও এটা যে নাযায়েজ এর ব্যপারে ১৪০০ বছরের উম্মাহর শ্রেষ্ট আলিমদের ইযমার দলিল ও মওজুদ আছে প্রয়োজনে তা দেওয়া যাবে। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: