রাজারবাগি এক ফেবু মুফতে, খুব ফখর করে মহান আল্লাহ পাঁকের সম্মানিত খাস তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) থেকে মহান আল্লাহ তা’আলাকে ডিলিট করে তার মুশরিক পির দিল্লুর নাম বসিয়ে সেই কুফরি তাসবীহ (সুবহানা মামদুহ) পাঠ করাকে যায়েজ করতে কুরআনের অপব্যাখ্যা করেছে দেখে একজন ইমানদার মুসলিম হিসেবে আর সহ্য হয়নি, প্রায় এক সপ্তাহ ব্যায় করে মুশরিকটার জবাব লিখতে হয়েছে। আসলে এদের কলিজা পাথরের মতো হয়ে গেছে, এদের বুক কাঁপেনা, এরা যে একদিন মারা যাবে ভুলেই গেছে।
উচিৎ ছিলো এদের দ্বীন হবে কুরআন-সুন্নাহ তথা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম কেন্দ্রিক, অথচ এরা ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গিয়ে দ্বীন কে করে নিয়েছে তাদের কথিত মুশরিক বাবা কেন্দ্রিক। তাদের এই বিকৃতির পরিনামে যে তাদের ঈমানহারা হতে হবে, এটা অনেকেই জানেনা। যারা জানেনা তাঁরা এটা পড়ুক, “খোদ রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এইসব কে শিরক বলেছেন”। এছাড়াও যারা জ্ঞানী, যারা সত্যিকারার্থে নিজের ঈমান এর ফিকির করেন তাদের উচিৎ অন্ধ না হয়ে চিন্তা ফিকির করা। যদি আমার কথা মানতে কষ্ট হয়, তাহলে যান এইসব লিখার কপি বাংলাদেশের যেকোন সুন্নী আলীমদের অন্তত দেখান, দেখিয়ে জেনে নিন কোন ভুল কিছু লিখা হয়েছে কি না। আর যদি মনে করেন যে সবাই রাজারবাগের বিরোধি, তাহলে ভারত-পাকিস্তানের সুন্নী আলীমদের দেখান, তারপর আন্তর্জাতিক যেকোন সুন্নী স্কলারকে দেখান, হাজারো আহলে বাইত স্কলার আছেন, দেখান, দেখিয়ে বুঝে নিন, আমি যা বলছি এতে চুল পরিমাণ ভুল আছে কি না। আপনি যদি টেস্ট না করে, না পড়ে কেবল গালিগালাজ দিয়ে আপনার কথিত বাবাকে বাঁচাতে চান, তাহলে হয়তো দুনিয়ায় আপনার বাবার কিছুই হবেনা, তবে আখিরাতে আপনার বাবার সাথে আপনার যাহান্নাম হবে কনফার্ম। আপনার বাবা যে কুফুরি করেছে, এর বিনিময়ে জুব্বুল হুজুন একা তার জন্যে যথেষ্ট নয়।
পাঠক আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, (سُبْحَنَ اللَّه) এমন একটি তাসবিহ, যা মহান আল্লাহ তা’আলা নিজের জন্য খাসকরে পছন্দ করেছেন, এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামদেরকে বলতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, এবং উনার সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তিকে ঘোষণা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ আজ রাজারবাগি মুশরিকেরা সুবহানাল্লাহ এর যায়গায় সুবহানা মামদুহ নামক কুফুরি তাসবিহ অবলিলায় পাঠ করে যাচ্ছে তাদের বাবার উপর, আর তা যায়েজ করতে দলিল দিচ্ছে সূরাহ ইউসূফ আলাইহিস সালামের ১০৮ নং আয়াত শরীফ, যেখানে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতার নমুনা প্রকাশ করছেন এই বলে যেঃ (قُلۡ هٰذِهٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ) (হে নবী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) আপনি বলেদিন এটাই আমার (মালিকের) পথ; প্রতিটি মানুষকে আমি আহবান করি সজ্ঞানে প্রমাণ সহকারে, আমি এবং আমার অনুসারীগণও; (আর) মহান আল্লাহ পাক তিনি (সম্পূর্ণরূপে) পবিত্র (মুশরিকরা যা ধারণা করে উনার ব্যপারে তা থেকে) এবং যারা মহান আল্লাহ পাকের সাথে শরীক স্থাপন করে আমি তাদের মধ্যে শামিল নই। (আল কুরআনঃ ১২/১০৮) উক্ত আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ পাকের শানে ব্যবহৃত (سُبۡحٰنَ اللّٰهِ) শব্দের সাথে সূরাহ আহযাবের ৩৩ নং আয়াতে আহলে বাইতের ব্যপারে ব্যবহৃত (تَطْهِيرً) কে গুলিয়ে ফেলে তার কথিত বাবা মুশরিক দিল্লুরের শানে (سُبۡحٰنَ اَهۡلُ بَیۡت شَرِفْ عَلَيۡهِم اُلسَّلَامُ) যিকর করা যায়েজ করতে চায়। আসলে মানুষ কতটা গণ্ডমূর্খ আর জাহিল হলে পরে এরূপ করতে পারে আমার জানা নাই। তোরা যে অপব্যাখ্যা করে পিরের শানে সুবহানা মামদুহ বলা যায়েজ করতে চাস, এই বলে যে আহলে বাইতকে আল্লাহ তা’আলা পাঁক বলেছেন (تَطْهِيرً) শব্দ দ্বারা, আরে মূর্খরা নবীর মেয়ে, সহধর্মিণীরা তো হায়েজ-নেফাসের স্বীকার হতেন, তখন কি উনারা পাঁক থাকতেন? নামায, কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তোরা কি মনে করিস আল্লাহ তা’আলার পাঁক-নাপাক আর পবিত্রতার বিষয়টিও অনুরূপ?
পাঠক খেয়াল করুন, আয়াত শরীফ খানায় নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম নিজের বেলায় ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি মুশরিকদের মতো মানুষের অন্তর্ভুক্ত নন যারা আল্লাজির ব্যপারে কুফুরি আক্বিদাহ রাখে, বরং তিনি তো সেই ব্যক্তিত্ব মুবারক যিনি নিজে ঘোষণা দিচ্ছেন মহান আল্লাহ তা’আলা সমস্থ জাগতিক বিষয় থেকে সম্পূর্ণরূপে পাক-পবিত্র। অথচ মুশরিক রাজারবাগিরা আজ সেই নবির আর উনার আহলে বাইতের ব্যপারে একিই আক্বিদাহ পোষন করে যেরূপ আক্বিদাহ রাখতো আরবের সেইসব মুশরিকেরা যাদের উপর প্রথমে মহান আল্লাহ তা’আলার পাক-পবিত্রতার বিষয়ে আয়াত নাযিল হয়।
মুশরিক রাজারবাগিরা কেমন জাহিল তা বুঝতে হলে আপনাকে প্রথমে (سُبْحَنَ اللَّه) ও পরে (تَطْهِيرً) এর হাক্বিকি মানে বুঝতে হবে। আসুন প্রথমে দেখি (تَطْهِيرً) শব্দটি মহান আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের মধ্যে কোন বিষয়ে কতবার ব্যবহার করেছেন।
তাত্বহির (تَطْهِيرً) শব্দটির মুল হচ্ছে (طهر) ত্বহির, যার স্বাভাবিক অর্থ হচ্ছেঃ জীবাণুমুক্ত করা, বিশুদ্ধ করা, পবিত্র করা, পরিষ্কার করা। আল কুরআন ৩১ বার মহান আল্লাহ পাঁক এই (طهر) ত্বহির শব্দটি বিভিন্ন যায়গায় ব্যবহার করেছেন। আসুন দেখি সেসব যায়গায় আল্লাহ পাঁক এই শব্দ দিয়ে কি বুঝিয়েছেনঃ আল কুরআনেরঃ ২/২৫, ৩/১৫, ৪/৫৭ তে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “জান্নাতিদের জন্য থাকবে পবিত্র স্ত্রীগণ”। কেমন পবিত্র? যাদের জিন ও মানুষ কখনো স্পর্শ করেনাই। ২/১২৫, ২২/২৬ এ বলছেন, “তাওয়াফ, রুকু, সেজদা, ইতিকাফকারিদের জন্য পবিত্র রাখতে” কি থেকে? ময়লা বিষ্টা থেকে। ২/২২৫ এ বলছেন, “হায়েজ থেকে পবিত্র না হওয়ার আগ পর্যন্ত যেনো মানুষ তার স্ত্রির সাথে সহবাসে লিপ্ত না হয়। এছাড়াও বলছেন যারা পবিত্রতা অর্জন করে মহান আল্লাহ পাঁক তাদের ভালোবাসেন”। ২/২৩২ এ বলছেন, “তোমাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে নিয়ে তোমাদের যেনো মাথাব্যথা না হয়, তোমরা তাদের কোন ধরণের বাঁধা দিবেনা, এটাই আল্লাহ পাঁকের নিকট বিশুদ্ধ এবং অধিক পবিত্র”। ৩/৪২ এ বলেছেন, “হযরত মারইয়াম আলাইহিস সালাম হলেন সবচেয়ে পবিত্র নারী তামাম দুনিয়ার নারীদের মধ্যে”। ৩/৫৫ তে বলেছেন, “হযরত ইসা আলাইহিস সালামকে কাফেরদের থেকে পবিত্র করবেন” অর্থাৎ সেই সমস্ত অপবাদ থেকে পবিত্রকরণকে বুঝানো হয়েছে, যা ইয়াহুদীরা উনার উপর আরোপ করত। সুতরাং আখেরি রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে ওয়াহী দ্বারা উনার পবিত্রতার কথা বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করে আল্লাহ পাঁক উনার ওয়াদা রক্ষা করেন। ৫/৬ এ বলেছেন, “নামাজের জন্য পাঁক পবিত্র হতে হবে অজু করে আর যদি জুনুবি হও তাহলে গোসল করে পাঁক পবিত্র হয়েই নামাজে দাঁড়াবে”। ৫/৪১ এ বলেছেন, “হে রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! কুফরীর ব্যাপারে তাদের প্রতিযোগিতা যেন আপনাকে দুঃখ না দেয়, যারা মুখে বলে (আমরা) ঈমান এনেছি কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। আর যারা ইয়াহূদী, তারা (তো) মিথ্যা কথা শুনতে বিশেষ পারদর্শী, তারা আপনার কথাগুলো অন্য সম্প্রদায়ের স্বার্থে কান পেতে শোনে যারা আপনার নিকট (কখনো) আসেনি, এরা মহান আল্লাহ তা’আলার কিতাবের শব্দগুলোকে প্রকৃত অর্থ হতে বিকৃত করে। তারা বলে, তোমরা এ রকম নির্দেশপ্রাপ্ত হলে মানবে, আর তা না হলে বর্জন করবে। বস্তুত মহান আল্লাহ তা’আলা যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে আপনার কিছুই করার নেই। ওরা হল সেই লোক, যাদের অন্তরাত্মাকে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র করতে চান না (কুফর থেকে)। তাদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য আখেরাতে আছে মহা শাস্তি। ৭/৮২, ২৭/৫৬ তে বলেছেন, “লূত আলাইহিস সালামের কওম সমকামিতার পাপ থেকে উনাকে পবিত্র থাকার বিষয়ে উনাকে এলাকা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলে।” ৮/১১ তে বলেছেন, উহুদ যুদ্ধে যখন শয়তান মু’মিনদের অন্তরে যে কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যে, পরিবেশ কতো নোংরা অথচ তোমরা মহান আল্লাহ তা’আলার নেক বান্দা হওয়া সত্ত্বেও পানি হতে এত দূরে অবস্থান করছ যে পবিত্রতা অর্জন করতে পারছনা। তখন আল্লাহ পাঁক বৃষ্টি দেন যাতে মুজাহিদেরা পাঁক পবিত্র হতে পারেন। ৯/১০৩ এ বলেছেন, যাকাত ও স্বাদাক্বাহ মানুষের আখলাক-চরিত্রকে পবিত্র করার একটি অন্যতম উপায়। ৯/৮ এ বলছেন, “ক্বুবাবাসীরা পবিত্রতা অর্জনে পানি ব্যবহার করতেন বলে মহান আল্লাহ তাঁদের প্রশংসা করেছেন”। ১১/৭৮ এ বলেছেন, “হূদ আলাইহিস সালাম উনার সমকামি কওমকে, পুরুষদের সাথে সমকামিতার বদলে কওমের কন্যাদের দিকে ইশারা করে বলেন তোমাদের জন্য এরাই পবিত্র, সমকামিতা তো নাপাক জিনিস। ২৫/৪৮ এ বলেছেন, “মহান আল্লাহ পাঁক আসমান থেকে আমাদের জন্য পবিত্র পানি বর্ষণ করেন”। ৩৩/৩৩ এ বলেছেন, “হে উম্মাহাতুল মু’মিনিনেরা, মহান আল্লাহ পাঁক চান জাহেলিয়াতের অশ্লীলতা থেকে তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পাঁক পবিত্র রাখতে”। ৩৩/৫৩ এ বলেছেন, “তোমরা উম্মাহাতুল মু’মিনিনদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দা অবলম্বন করেই চাইবে। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র। ৫৬/৭৯, ৮০/১৪ তে বলেছেন, “কেউ তা (আল কুরআন) স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া। এ দুই আয়াতের মূল উদ্দেশ্য এই যে, এটাকে এমন লোক, যারা ‘হাদসে-আসগর’ ও ‘হাদসে আকবর’ থেকে পবিত্র তারা ব্যতীত কেউ যেন স্পর্শ না করে। (বে-ওযু অবস্থাকে হাদসে-আসগর’ বলা হয়। ওযু করলে এই অবস্থা দূর হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বীর্যস্খলনের কিংবা স্ত্রীসহবাসের পরবর্তী অবস্থা এবং হায়েয এবং নেফাসের অবস্থাকে ‘হাদসে-আকবর’ বলা হয়)”। ৫৮/১২ তে বলেছেন, “সদাক্বাহ দাও, এটাই তোমাদের জন্য উত্তম ও অতি পবিত্র পন্থা। সদাক্বায় তোমাদেরই অন্যান্য গরীব মুসলিম ভাইদের উপকার হয়। আর পবিত্রতর এই জন্য যে, এটা হল এমন এক সৎকর্ম এবং মহান আল্লাহ তা’আলার আনুগত্য, যার দ্বারা মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়।” ৭৪/৪ এ বলেছেন, “আর আপনার পোশাক পরিচ্ছেদ পবিত্র রাখুন”। ৭৬/২১ এ বলেছেন, “জান্নাতে পান করানো হবে এমন শরাব যা পাঁক পবিত্র”। ৯৮/২ এ বলছেন, “মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে (প্রেরিত) একজন রসূল পবিত্র কিতাবসমূহ তিলাওয়াত করেন। এখানে পবিত্র কিতাব বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন কিতাবকে, যার মধ্যে কোন প্রকার বাতিল, কোন ধরনের গোমরাহী ও ভ্ৰষ্টতা নেই এবং শয়তান যার নিকটে আসে না”।
পাঠক, অতএব আমরা স্পষ্ট হয়ে গেলাম যে, যেসমস্থ আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ পাঁক তাত্বহির (تَطْهِيرً) শব্দটির মুল (طهر) ত্বহির বিভিন্ন যায়গায় ব্যবহার করেছেন যা কেবল সৃষ্টির সাথেই খাস, আর সূরাহ আহযাব এর ৩৩/৩৩ নং আয়াতে যে বলেছেন “তিনি চান উম্মাহাতুল মু’মিনিন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সম্পূর্ণরূপে পাঁক পবিত্র করতে চান অপবিত্রতা থেকে, সেই অপবিত্রতার জন্য ব্যবহৃত শব্দ (الرِّجۡسَ) শব্দটি (رِجْسٌ) থেকে উৎপন্ন হয়েছে, যার প্রকৃত অর্থ হলোঃ “নাপাকী-অপবিত্রতা” আর আল কুরআনে ১০ বার মহান আল্লাহ পাঁক তা ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন যায়গায়। মূলত, শয়তানি সকল কাজই নাপাকির অন্তর্ভুক্ত, আযাব, নাপাক বস্তু, শিরক, কুফুর, অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ এর স্বীকার হওয়া। চাইলে নিজ দায়িত্বে দেখে নিতে পারেনঃ ৫/৯০, ৬/১২৫,১৪৫, ৭/৭১, ৯/৯৫,১২৫, ১০/১০০, ২২/৩০, ৩৩/৩৩ এর মধ্যে।
এবার আসুন দেখি সৃষ্টির জন্য পাঁক-পবিত্র অর্থে ব্যবহৃত (تَطْهِيرً) আর মহান আল্লাহ তা’আলার জন্য ব্যবহৃত (سُبْحَنَ) এর পাঁক-পবিত্র কি একিই জিনিস?
পাঠক আপনি যদি একজন চিন্তাশীল মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে, মানুষ সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه) তাসবিহ খুব ঘন-ঘনই যিকর করে থাকে। আমরা যখন নামাজ শুরু করি, নিয়ত বেঁধে প্রথমেই ছানা পড়া শুরু করি সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه) দিয়ে। রুকু এবং সেজদায় আমরা কম করে হলেও তিন বার করে (سُبْحَنَ اللَّه) পড়ি। নামাজের পরে সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه) এর তাসবিহ পড়তে হয়। সফরের দোয়া শুরু হয় এই সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه) দিয়ে। যেকোন আশ্চর্যজনক কিছু দেখলে, কোন মানুষের তারীফ করতে হলে, কোন মানুষের নিজের সৃষ্ট কোন কিছুরও তারীফ করতে হলে, পৃথিবির যেকোন সুন্দর কিছু আবলোকন করলে এই তাসবিহ পাঠ করতে হয়।
এখন কথা হলো, এই শব্দে এমন কি আছে যে মহান আল্লাহ পাক চান আমরা বার বার এই শব্দ, এই তাসবিহ উচ্চারণ করি? আমভাবে সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه)-এর যে তরজমা করা হয়ে থাকে তা হলো “মহান আল্লাহ তা’আলা পাক-পবিত্র” কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা অনেক বিশাল একটি কনসেপ্ট এর সারাংশ কেবল। পাক পবিত্র তো আমরাও অজু/গোসল করে হয়ে যাই, ফিরিশতাও পাক-পবিত্র, যমজমের পানিও পাক-পবিত্র। এহেন সোজা সাপ্টা তরজমা শুনলে চিন্তাশীল মানুষের নিকট প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, তাহলে মহান আল্লাহ তা’আলাকে পাক-পবিত্র বলার মধ্যে আর তফাৎ কি?
কিন্তু না ব্যাপারটা এরূপ না, আপনি যদি সম্পূর্ণ আল কুরআন বুঝে শুনে পড়েন, তাহলে এই বাক্যাংশ(সুবহানআল্লাহ سُبْحَنَ اللَّه)র হাক্বিকি মানে আপনি বুঝতে পারবেন। আল কুরআনে কেবল মহান আল্লাহ তা’আলা পাক-পবিত্র বলে সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه)’র ব্যবহার করা হয়নি, বরং অনেক যায়গায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিয়েছেন যে, তোমরা যে আমাকে পাক-পবিত্র হিসেবে জানো এটা কি ধরনের পাক-পবিত্র? কি থেকে আমি আল্লাহ পাক-পবিত্র? আমি কি তোমাদের মতো পাঁক পবিত্র?
উদাহরণস্বরূপঃ সুরাহ মরিয়ম আলাইহাস সালামের ১৯/৩৫ নং আয়াতে বলেনঃ ( مَا کَانَ لِلّٰهِ اَنۡ یَّتَّخِذَ مِنۡ وَّلَدٍ ۙ سُبۡحٰنَهٗ ؕ اِذَا قَضٰۤی اَمۡرًا فَاِنَّمَا یَقُوۡلُ لَهٗ کُنۡ فَیَکُوۡنُ) সন্তান গ্রহণ করা (তো) মহান আল্লাহ তা’আলার কাজ নয়। তিনি (এর থেকে) পবিত্র-মহান। তিনি যখন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।
সূরাহ নাহলের ১৬/৫৭ নং আয়াতে বলেনঃ (وَ یَجۡعَلُوۡنَ لِلّٰهِ الۡبَنٰتِ سُبۡحٰنَهٗ ۙ وَ لَهُمۡ مَّا یَشۡتَهُوۡنَ) আর তারা কন্যা সন্তানদের নির্ধারিত করে মহান আল্লাহ তা’আলার জন্য, অথচ তিনি (এইসব কুফরি ধারণা থেকে সম্পূর্ণ) পাক-পবিত্র, আর তারা নিজেদের জন্য (নির্ধারণ করে) যা তাদের মনে চায়।
সূরাহ আল-কলম ৬৮/২৯ নং আয়াতে বলেনঃ (قَالُوۡا سُبۡحٰنَ رَبِّنَاۤ اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ) আর তারা বলল, ‘আমরা আমাদের রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি(আমাদের কৃত ধারণার)। আমরা (আসলেই) সীমালঙ্ঘনকারীই ছিলাম।
অনুরূপ ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামেরাও আদম আলাইহিস সালামের আল্লাহ প্রদত্ব ইলমের ব্যপারে যখন প্রমান পেয়ে গেলেন, তখন মহান আল্লাহ তা’আলার উদ্যেশে তারা যা বলেছিলেন, মহান আল্লাহ তা’আলা সূরাহ বাক্বারার ২/৩২ নং আয়াতে সেটা হুবুহু তুলে ধরেনঃ (قَالُوۡا سُبۡحٰنَکَ لَا عِلۡمَ لَنَاۤ اِلَّا مَا عَلَّمۡتَنَا ؕ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَلِیۡمُ الۡحَکِیۡمُ) তারা (ফেরেশতারা) বলল, (হে আল্লাহ তা’আলা) “আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের আর কোন জ্ঞানই নেই, নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়”।
কাতাদাহ ও আবুল আলীয়া বলেনঃ অর্থাৎ ফেরেশতারা যখন আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির বিষয়ে অবগত হলেন তখন, তারা মনের মধ্যে যা গোপন করছিলেন তা হচ্ছে, আমাদের রব মহান আল্লাহ্ তা'আলা যা-ই সৃষ্টি করুন না কেন, আমরা তার থেকে বেশী জ্ঞানী ও সম্মানিত থাকব। (তাবারী শরীফ) কিন্তু “আল্লাহ পাঁক” আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে যখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামদের জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা আমাকে, “আমি যেসব জিনিস সৃষ্টি করেছি এইসবের নাম বলতো”? তখন উনারা অপারগতা প্রকাশ করলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক আদম আলাইহিস সালামের দিকে দৃষ্টিপাত করলে তিনি সাথে সাথেই সবকিছুর নাম বলে দিলেন। সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه)! তখন উনারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেই বলেন “আপনি পবিত্র মহান” অর্থাৎ আমরা আপনার ব্যপারে যে ধারণা রাখি আপনি তার চেয়ে অধিক অধিক উপরে।
এছাড়াও সূরাহ তুরের ৫২/৪৩ নং আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ পাক খোদ নিজের ব্যপারে বলছেনঃ (اَمۡ لَهُمۡ اِلٰهٌ غَیۡرُ اللّٰهِ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ) তাদের জন্য (আমি) আল্লাহ ছাড়া অন্য (কোন) ইলাহ আছে নাকি? তারা যে শিরক করে তা থেকে (আমি) আল্লাহ (সম্পূর্ণরূপে) পাক-পবিত্র।
অতএব স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, মহান আল্লাহ তা’আলা নিজের শানে ব্যবহৃত সুবহান শব্দের পাঁক-পবিত্র অর্থ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নাপাকি থেকে পাঁক পবিত্র হওয়া হওয়ার মতো কিছু নয়, মূলত ইহা এমন এক পাঁক পবিত্রতা যার বিপরীতে নাপাকি বিদ্যমান থাকা জরুরি নয়।
পবিত্র আল কুরআনের ২/৩২ আয়াতে পাঁকে ‘সুবহানাল্লাহ’র তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, 'সুবহানাল্লাহ' -এর অর্থ হচ্ছে কেবল মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা, অর্থাৎ তিনি কাফেরদের দায়ের করা সমস্ত অশ্লীলতা থেকে, নাপাকি থেকে সর্বাবস্থায় পবিত্র। হযরত উমার ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম একদা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম এবং উনার পার্শ্বে উপবিষ্ট অন্য কয়েকজন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা কে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তো জানি, কিন্তু “সুবহানাল্লাহ” কি কালেমা?” হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম উত্তরে বলেনঃ “এ কালেমাটি মহান আল্লাহ পাঁক নিজের জন্যে পছন্দ করেন এবং এতে তিনি খুব খুশী হন, আর এটা বলা উনার নিকট খুবই প্রিয়”।
আরো খোলাসা করে মহান আল্লাহ তা’আলা সূরাহ তাওবার ৯/৩১ নং আয়াতে বলেনঃ (اِتَّخَذُوۡۤا اَحۡبَارَهُمۡ وَ رُهۡبَانَهُمۡ اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ الۡمَسِیۡحَ ابۡنَ مَرۡیَمَ ۚ وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبۡحٰنَهٗ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ) মহান আল্লাহ তা’আলাকে বাদ দিয়ে তারা তাদের ‘আলিম আর পির-দরবেশদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে; সাথে মারইয়াম-পুত্র (ইসা) মাসীহকেও। অথচ তাদেরকে এক ইলাহ ব্যতীত (অন্যের) ‘ইবাদাত করার আদেশ দেয়া হয়নি। তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, পাঁক-পবিত্রতা আর মহিমা (যতো) উনারই, (বহু ঊর্ধ্বে তিনি) তারা যাদেরকে (উনার) অংশীদার হিসেবে গণ্য করে তাত্থেকে।
এছাড়াও ৩৩ বা ১০০ বার সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه) তাসবিহ পাঠের হুকুম ও দিয়েছেন আল্লাহ পাঁক, যাতে আমাদের মন মগজে এই পবিত্র তাসবিহ বসে যায়, কিন্তু যখনই নামাজ শেষ করে তাসবিহ পড়ে মসজিদ থেকে আমরা বাহিরে বের হই, তখন ইবলিশ, তার সহকর্মী এবং জাহিল মূর্খরা আমাদের বিভিন্নভাবে এটা বলতে চায় যে মহান আল্লাহ তা’আলা পাঁক নন। নাউযুবিল্লাহ!
তবে অল্প শব্দে যদি সুবহানআল্লাহ (سُبْحَنَ اللَّه)-র অর্থ বুঝাতে চাই তাহলে এর অর্থ হলোঃ মহান আল্লাহ তা’আলা স্বত্বাগতভাবে সমস্থ ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে পাঁক, সমস্ত কথাবার্তা থেকেও, অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাঁক জাতিগতভাবে সমস্থ অভাব অনটন, সমস্থ প্রয়োজন, চাহিদা, মুখাপেক্ষিতা থেকে মুক্ত, তিনি সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ মুকাম্মেল। এবং উনার কথাবার্তা ও কখনো ভুল হবার কোন সুযোগ নাই। কিন্তু ইসলাম ব্যতীত মহান আল্লাহ তা’আলাকে এই হাক্বিকি পাঁক-পবিত্রের মর্যাদা অন্য কোন ধর্মের লোকেরা দেয়নি অথচ উনিই হচ্ছেন এর একমাত্র হক্বদার। অথচ আজকে সেই অমুসলিমদের মতো ডেঞ্জারাস ভ্রান্ত আক্বিদার কিছু মুসলিম নামধারী মুশরিক লোক আমাদের আশেপাশে দেখা যাচ্ছে, যারা আজ পবিত্র ঐ তাসবিহ থেকে আল্লাহ তা’আলাকে ডিলিট করে মানুষের উপর পাঠ করানো শুরু করেছে। নাউযুবিল্লাহ!!! অনেকেই বুঝতে না পেরে তা পালন করে বিভ্রান্ত হচ্ছে, ঈমান হারাচ্ছে, জানতেও পারছেনা।
অথচ মহান আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট করেই বলেছেনঃ (سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یَصِفُوۡنَ) “ওরা যা বলে, তা হতে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র, মহান” (৩৭/১৫৯)। অর্থাৎ কিয়ামতের ময়দানে যখন মহান আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমি কি বলিনাই যে আমি পাঁক-পবিত্র তোমরা আমার ব্যপারে যা বলতে বা ধারণা করতে তার থেকে? তখন কি জবাব দেবে এরা?
অতএব মহান আল্লাহ তা’আলা (سُبْحَنَ اللَّه) দ্বারা নিজের পাঁক-পবিত্রতার সিমাহীন হাক্বিকি রূপ, হাক্বিকি অর্থ খুব অল্পই বুঝিয়েছেন, যা আনলিমিটেড সৃষ্টির মধ্যে থাকা ক্ষুদ্র কোন মানুষের পক্ষে পুরোপুরি অনুধাবন করা কস্মিনকালেও সম্ভব না। এর পরেও তিনি চান আমরা যেনো সহজে বুঝতে পারি। তাই কেবল এই কয়েকটি আয়াতেই নয় হে এক সময়ের ইমানদার মুজাহিদ ভাই ও বোনেরা। পবিত্র আল কুরআনের ৪০ টি যায়গায় মহান আল্লাহ পাক কতো নমুনায় (سُبْحَنَ اللَّه) এর প্রয়োগ তোমরা কেবল আমার ব্যপারেই করবে বলে বুঝাতে চেয়েছেন, কিন্তু এমন মূর্খ মুরিদ হয়েছো-যে এই বাক্যটি কুরআনে খুজে দেখার, অর্থ বোঝার প্রয়োজন ও মনে করনি কখনো মুশরিক দিল্লুর ঘাড়ে বসানোর আগে। (২/৩২, ২/১১৬, ৩/১৯১, ৪/১৭১, ৫/১১৬, ৬/১০০, ৭/১৪৩, ৯/৩১, ১০/১০, ১০/১৮, ১০/৬৮, ১২/১০৮, ১৬/১, ১৬/৫৭, ১৭/১, ১৭/৪৩, ১৭/১০৮, ১৯/৩৫, ২১/২২, ২১/২৭, ২১/৮৭, ২৩/৯১, ২৪/১৬, ২৫/১৮, ২৭/৮, ২৮/৬৮, ৩০/১৭, ৩০/৪০, ৩৪/৪১, ৩৬/৩৬, ৩৬/৮৩, ৩৭/১৬৯, ৩৭/১৮০, ৩৯/৪, ৩৯/৬৭, ৪৩/১৩, ৪৩/৮২, ৫২/৪৩, ৫৯/২৩, ৬৯/২৯)।
এইযে মহান আল্লাহ পাক উনারই জন্যে কেবল পবিত্র আল কুরআনের নিদৃষ্ট শব্দ গুলি থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক ডিলিট করার মতো ধৃষ্টতা দেখালো মুশরিক দিল্লু নিজের নফসের খায়েস মেটাতে, এতে তার কলিজা নাইবা কাপলো, তোমার কেনো কাপলনা? তুমি কি আল্লাজীর বান্দা ছিলেনা? আজ মালিকের শান মান থেকে মালিক-কে ডিলিট করে মূল্যহীন দুনিয়ার এক মানুষের শান মানে ব্যবহার করার পরেও তোমার চোখ থেকে কুফুরের পর্দা সরেনা। কিভাবে তুমি এমন নিকৃষ্টভাবে নিজের ইমানকে বিসর্জন করে দিলে? আমার বড় কষ্ট হয়, তবে আশ্চর্য হইনা,
আসলে এরা খুব সুক্ষভাবে সরলমনা মুরিদ-দের ধিরে ধিরে কুফর এর দিকে নিয়ে আসে, যা বুঝতে পারা প্রায় অসম্ভব সাধারণ মানুষের জন্যে, কারণ অনেক কথিত আলিমই এদের ব্যপারে কনফিউজড হয়ে যায়। একারণেই যখন তাদের মুরিদ-দের কেউ বোঝাতে যায় কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা, তখন তারা তা মানতে চায়না, কারণ এদের পূর্ব পুরুষও অনুরূপ আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিলো। রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম যখন আরবের মুশরিকদের দাওয়াত দেন এই বলে যেঃ (وَ لَا تَجۡعَلُوۡا مَعَ اللّٰهِ اِلٰـهًا اٰخَرَ ؕ اِنِّیۡ لَکُمۡ مِّنۡهُ نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ کَذٰلِکَ مَاۤ اَتَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ مِّنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا قَالُوۡا سَاحِرٌ اَوۡ مَجۡنُوۡنٌ) আর তোমরা (কখনো) মহান আল্লাহ পাঁকের সাথে কোন ইলাহ(মাবূদ/শরীক) নির্ধারণ করো না; আমি (তো কেবল) উনার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী। (কিন্তু) এভাবে যখনই তাদের আগের লোকেদের মধ্যে কোন রসূল এসেছেন, তখনই তারা বলেছেঃ- (আরে) সে (তো) যাদুকর না হয় উন্মাদ। (আল কুরআনঃ ৫১/৫১-৫২)
আজকে যে-ই একিই পন্থায় কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে আরবের সেইসব মুশরিকদের চেয়েও জঘন্য আক্বিদাহ পোষণকারী রাজারবাগি মুরিদ-দেরকে তাদের কুফুরি কার্যক্রম থেকে সতর্ক করতে যায়, তারাই তাকে চরম ইতরের মতো গালিগালাজ করে থাকে। তবুও আমি কেনো তাদের ফিরে আসার দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছি? কারণ এটাই আমার মালিকের হুকুম ছিলো আমার আক্বা রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার উপর, আমি যার ক্ষুদ্র এক অনুসারী। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَّ ذَکِّرۡ فَاِنَّ الذِّکۡرٰی تَنۡفَعُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ مَاۤ اُرِیۡدُ مِنۡهُمۡ مِّنۡ رِّزۡقٍ وَّ مَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ یُّطۡعِمُوۡنِ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الۡقُوَّۃِ الۡمَتِیۡنُ) (তবুও) আপনি উপদেশ দিতে থাকুন, কেননা উপদেশ (যারা) মু’মিন তাদের কাজে আসবে। (যদি বুঝে ফেলে যে) আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা (কেবল) আমারই ইবাদাত করবে (১)। আমি (কিন্তু) তাদের থেকে (কোন) রিযক চাই না, এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে খাওয়াবে। (বরং) মহান আল্লাহ পাক তিনিই-তো (তাদের) রিযকদাতা, মহা শক্তিধর তিনি, প্রবল পরাক্রান্ত। (আল কুরআনঃ ৫১/৫৫-৫৮)
(১) এই আয়াতে পাঁকে মহান আল্লাহ তা’আলা উনার নাযিলকৃত (শরয়ী) ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা তিনি ভালবাসেন ও চান। আর তা হল, সমস্ত মানুষ ও জ্বিন কেবল এক আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করবে এবং আনুগত্যও শুধু উনার ও উনি যে বিষয়ে স্পষ্ট বলেছেন তাঁর। এর সম্পর্ক যদি উনার সৃষ্টিগত ইচ্ছার সাথে হত, তবে কোন মানুষ ও জ্বিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কোন ক্ষমতাই রাখত না। অর্থাৎ, এই আয়াতে সকল মানুষ ও জ্বিনকে জীবনের সেই উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করানো হয়েছে, যেটাকে তারা ভুলে গেলে পরকালে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এই পরীক্ষায় তারা অসফল গণ্য হবে, যাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন।
অতএব বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেলো যে ইবাদত কেবল মহান আল্লাহ পাক উনারই জন্যে জায়েজ, অন্য কাউকে উনার সাথে ইবাদতে শরীক করা যাবেনা। আর দ্বীতিয় হলো ভালো মন্দের বিচার, বিশ্লেষণ বিবেক মহান আল্লাহ পাক মানুষকে দিয়েছেন, যাতে সে ভালো খারাপ বুঝতে পারে, এবং নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে সে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে হাটবে নাকি কোন কুফুরিস্থানে(উদাহরণস্বরূপ রাজারবাগে)র উদ্যেশ্যে। এর পরেও মহান আল্লাহ পাক এহসান করেছেন যে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের থেকে নিয়ে নিলেও রেখে দিয়েছেন নিজের ও উনার হাবিব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কালাম(কুরান-সুন্নাহ), যা যুগে যুগে কিছু মানুষ আঁকড়ে ধরে আছে এবং যখনই কাউকে দেখেছে কুফুরিস্থানের (উদাহরণস্বরূপ রাজারবাগের) দিকে হাঁটছে তখনই তাদের সতর্ক করার সুন্নত আমল করে যাচ্ছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো যে এদের (রাজারবাগিদের মতো মুশরিকদের) কুরআন দিয়েও বোঝালে এরা অনেকেই তা মানতে চায়না যেরূপ চায়নি আরবের সেই সময়ের গোমরা, গোঁয়ার মুশরিকরা যাদের উপর এই আয়াত শরীফগুলি নাযিল হয়েছিলোঃ (وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ ذُکِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّهٖ فَاَعۡرَضَ عَنۡهَا وَ نَسِیَ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰهُ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ اَکِنَّۃً اَنۡ یَّفۡقَهُوۡهُ وَ فِیۡۤ اٰذَانِهِمۡ وَقۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَدۡعُهُمۡ اِلَی الۡهُدٰی فَلَنۡ یَّهۡتَدُوۡۤا اِذًا اَبَدًا) তার চাইতে আর অধিক যালিম কে হতে পারে, যাকে তার রবের (পবিত্র) আয়াতসমূহ (দ্বারা বোঝানোর উদ্যেশে) স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃত(কুফুরি)কর্মসমূহ ভুলে যায় তাহলে তার অপেক্ষা অধিক সীমা লংঘনকারী (জালিম) আর কে? নিশ্চয় আমি তাদের অন্তরসমূহের উপর পর্দা এটে দিয়েছি (তাদের কুফুর এর কারনে), যাতে তারা ইহা (যে হেদায়েত তা) বুঝতে না পারে। আর তাদের কর্ণসমূহে রয়েছে বধিরতা এবং আপনি তাদেরকে হেদায়াতের প্রতি আহবান করলেও তারা কখনো হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে না। (আল কুরআন ১৮/৫৭) (নাউযুবিল্লাহ)
এছাড়াও বলা হচ্ছেঃ (سَآءَ مَثَلَاۨ الۡقَوۡمُ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ اَنۡفُسَهُمۡ کَانُوۡا یَظۡلِمُوۡنَ مَنۡ یَّهۡدِ اللّٰهُ فَهُوَ الۡمُهۡتَدِیۡ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَهَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ ۫ۖ لَهُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَهُوۡنَ بِهَا ۫ وَ لَهُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِهَا ۫ وَ لَهُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِهَا ؕ اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ) সেই সম্প্রদায়ের দৃষ্টান্ত কতইনা মন্দ যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করেছে। যাকে মহান আল্লাহ পাক হেদায়াত দান করেন সে-ই (কেবল) হেদায়াতপ্রাপ্ত, আর যাদেরকে তিনি (তাদের কুফুরের কারনে) পথভ্রষ্ট করেন তারাই (হলো) ক্ষতিগ্রস্ত। আর অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষকে। তাদের রয়েছে অন্তর, (তবুও) এর দ্বারা তারা বুঝে না (যে তাদের হেদায়েতের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে); তাদের রয়েছে চোখ, (তবুও) তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের রয়েছে কান, (তবুও) তা দ্বারা তারা শুনে না। তারা (মূলত) চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তারা অধিক পথভ্রষ্ট। (আর) এরাই হচ্ছে (মূলত) গাফেল। (আল কুরআন ৭/১৭৭-১৭৯)
মহান আল্লাহ পাক এতেই ক্ষান্ত হোন নাই, তিনি আরো বলেছেন যেঃ (وَیۡلٌ لِّکُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍ یَّسۡمَعُ اٰیٰتِ اللّٰهِ تُتۡلٰی عَلَیۡهِ ثُمَّ یُصِرُّ مُسۡتَکۡبِرًا کَاَنۡ لَّمۡ یَسۡمَعۡهَا ۚ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ وَ اِذَا عَلِمَ مِنۡ اٰیٰتِنَا شَیۡئَۨا اتَّخَذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ مِنۡ وَّرَآئِهِمۡ جَهَنَّمُ ۚ وَ لَا یُغۡنِیۡ عَنۡهُمۡ مَّا کَسَبُوۡا شَیۡئًا وَّ لَا مَا اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَوۡلِیَآءَ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ هٰذَا هُدًی ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمۡ لَهُمۡ عَذَابٌ مِّنۡ رِّجۡزٍ اَلِیۡمٌ) প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্য (রয়েছে) দুর্ভোগ। যে মহান আল্লাহ পাঁকের আয়াত শরীফসমূহ শোনে যা তার সামনে পাঠ করা হয় (দলিল হিসেবে), এরপরেও (সে) অহমিকার সাথে (নিজের কুফরী মতবাদের উপর অটল) থাকে, যেন সে তা শোনেইনি; কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দিন। (আর) সে যখন (তার মতের বিপরীত) আমার কোন আয়াত শরীফ অবগত হয়, সে তখন তা নিয়ে পরিহাস করে। (মূলত) এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির (ব্যবস্থা)। এই (কুরআন মূলত) হেদায়াত দানকারী। আর যারাই তাদের রবের আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য রয়েছে অতিশয় যন্ত্রণাদায়ক আযাব। (আল কুরআন ৪৫/৭-১১)।
অতএব আমার আর কিছুই বলার নাই, এর পরেও যদি মূর্খ জাহিলেরা রাজারবাগ পরিত্যাগ না করে তাহলে বুঝতে হবে এদের কপালে হেদায়েত নাই। আর যারা রাজারবাগি নন, তারা হয়তো ভাবছেন যে এও কি সম্ভব? কেউ কি আল্লাহ পাঁকের নাম ডিলিট করে সুনহানাল্লায় তার নাম লাগিয়ে মুরিদ-দের দিয়ে প্রচার প্রাসার ও যিকরে লিপ্ত করাতে পারে? তাদের জন্যঃ হ্যাঁ পারে, দেখুন স্ক্রিনশটগুলিঃ
0 ফেইসবুক: