গ্রুপের ভাই ও বোনেরা, আজকের পর থেকে পর্দার ব্যপারে আরো কঠোর অবস্থানে যাবেন আশা করি। মহান আল্লাহ তাআলার শরীয়তে, জিনার মতো কোন গুনাহ’র শাস্তির ব্যপারে এত কঠোর আল্লাহ তা’আলা হয়েছেন বলে আমার জানা নাই। শিরকের মতো কবিরা গুনাহের ব্যপারেও আল্লাহ তা’আলা এতো কঠোরতা প্রকাশ করেন নাই অথচ তা বদিয়ে আউওয়াল।
মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ( اَلزَّانِیَۃُ وَ الزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡهُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّ لَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِهِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَ لۡیَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ) জেনাখুর নারি ও জেনাখুর পুরুষদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর। যদি তোমরা মহান আল্লাহ তা’আলা ও কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাক, (তাহলে) মহান আল্লাহ তা’আলার আইন কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের প্রতি তোমাদের মনে যেনো কোন দয়ামায়ার উদ্রেক না হয়। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি (অবশ্যই) প্রত্যক্ষ করে। (আল কুরআন ২৪/২)
চিন্তা করা যায়? একটি অপরাধ কতটুকু নিকৃষ্ট হলে বিশাল মহাবিশ্বের মালিক, উনার একটি কায়েনাতের মধ্যে থাকা ছোট্ট একটি গ্রহের ক্ষুদ্র মানুষের ব্যপারে এরূপ কাহহার রূপে অবতীর্ণ হতে পারেন? কেউ যদি বড় জিনা (হারাম শারীরিক সম্পর্ক) করে তাহলে তাঁর শাস্তির ব্যপারে কোন দয়া মায়ার প্রকাশ করা যাবেনা, সেটা ভাই হোক বা বোন, বাপ হোক বা মামা চাচা কিংবা বন্ধু। যতো আপনই হোক এরূপ কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কোন দয়া মায়াও দেখানো যায়েজ না, এর পর আরো হুমকি দিয়েছেন এই বলে যে, যারা দয়া মায়া প্রকাশ করে শাস্তি মওকুফ করে দেবে তাদের আখেরাতে বিশ্বাসী নয় বলা হয়েছে। এছাড়াও এই যে শাস্তি তা আবার লুকিয়ে দিলে হবেনা, এমনকি শাস্তি যারা মুমিন তাদের একদল নিজ চোখে দেখতে হবে। ভাবা যায়? একটি অপরাধ কত জঘন্য হলে মহান আল্লাহ তা’আলা এরূপ রূপে নিজের ভাব প্রকাশ করেন বান্দার নিকট?
তাফসীরে এসেছে, আল্লাজির হুকুমের পাশাপাশি রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ হচ্ছেঃ জেনাখুর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে, একশ’ বেত্রাঘাতের সাথে সাথে এক বছরের জন্য দেশান্তরও করতে হবে। আর বিবাহিত হলে রজম (প্রস্তর নিক্ষেপ) করে (মৃত্যু) দেয়া হবে। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলিহিস সালাম হতে বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত উমার ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলিহিস সালাম উনার এক ভাষণে হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে লোক সকল! মহান আল্লাহ তাআলা রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন এবং উনার উপর নিজের কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। মহান আল্লাহ তা’আলার এই কিতাবে রজম করার হুকুমের আয়াতও ছিল (যা পরে রহিত হয়ে গেছে, কিন্তু হুকুম বিদ্যমান)। আমরা তা পাঠ করেছি, মুখস্থ করেছি এবং আমলও করেছি। স্বয়ং রসূলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের যুগেও রজম হয়েছে এবং উনার (অফাৎ মুবারকের) পরে আমরাও রজম করেছি। আমি ভয় করছি যে, কয়েক যুগ অতিবাহিত হওয়ার পর না জানি লোকেরা হয়তো বলতে শুরু করে দেবে যে, তারা রজম করার হুকুম মহান আল্লাহ তা’আলার কিতাবে পাচ্ছে না। মহান আল্লাহ তাআলা না করুন তারা হয়তো মহান আল্লাহ তা’আলার এই ফরয কাজকে যা মহান আল্লাহ তা’আলা উনার কিতাবে অবতীর্ণ করেছেন, ছেড়ে দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। রজমের সাধারণ হুকুম ঐ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হবে যে ব্যভিচার করবে এবং বিবাহিত হবে, সে পুরুষ হোক বা নারীই হোক, যখন তার ব্যভিচারের উপর শরঈ দলীল পাওয়া যাবে অথবা সে গর্ভবতী হবে বা স্বীকারোক্তি করবে। (উক্ত আয়াতের নির্ভরযোগ্য সকল তাফসিরের কিতাব সমূহে দেখতে পারেন)।
এতো গেলো হারাম পন্থায় শারীরিক জিনার ব্যপারে হুকুম। অথচ জিনা-ব্যবিচারে লিপ্ত হওয়া তো অনেক পরের বিষয়, এর আশেপাশে যাওয়াই নিষেধ। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّهٗ کَانَ فَاحِشَۃً ؕ وَ سَآءَ سَبِیۡلًا) আর জিনা(ব্যবিচারে)র ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (আল কুরআন ১৭/৩২)
অর্থাৎ, যেকোন বিষয় সেটা যতো সিম্পল আর সামান্যই হোক, যার দ্বারা জিনা ব্যবিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে, এর ধারে কাছে যাওয়া যাবেনা। ধরুন আপনার বাড়ীর পাশে একটি রাস্তা আছে, যেটার ৫ মাইল এর মাথায় একটি পতিতালয় আছে, মুমিন হলে সেই রাস্তায় ঢোকাই যাবেনা। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া চালালে যদি আপনি জিনায় লিপ্ত হওয়ার ভয় থাকে তাহলে সেটাও আপনার জন্যে নিষিদ্ধ। এই জিনার কারণে সামাজিক অনাসৃষ্টির সৃষ্টি হয়, জিনা-ব্যভিচারের কারণে এটা এত প্রসার লাভ করে যে, এর কোন সীমা-পরিসীমা থাকে না। এর অশুভ পরিণাম অনেক সময় সমগ্ৰ গোত্র ও সম্প্রদায়কে বরবাদ করে দেয়। এ কারণেই সম্মানিত দ্বীন ইসলামে এই অপরাধটিকে সব অপরাধের চাইতে গুরুতর বলে সাব্যস্ত করেছেন। এবং এর শাস্তি ও সব অপরাধের শাস্তির চাইতে কঠোর করেছেন। কেননা, এই একটি অপরাধ অন্যান্য শত শত অপরাধকে নিজের মধ্যে সন্নিবেশিত করেছে। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জিনাকারী ব্যক্তি জিনা করার সময় মুমিন থাকে না। (মুসলিম শরীফ ৫৭)
চিন্তা করা যায়? আপনি যখন জিনায় লিপ্ত হলেন তখন আর মুমিন রইলেন না, এরূপ অবস্থায় মালাকুল মাওত আপনার শিয়রে হাজীর হয়ে আপনার প্রাণবায়ু বের করে নিয়ে গেলেন? ব্যপারটা কত ভয়ানক হতে পারে চিন্তা করা যায়?
দ্বীন ইসলামে জিনা-ব্যভিচার এত বড় অপরাধ যে, কোন বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলার দ্বারা এ কাজ হয়ে গেলে, ইসলামী সমাজে তার জীবিত থাকার আর কোন অধিকার থাকে না। আবার তাকে তরবারির এক কোপে হত্যা করাও যথেষ্ট হয় না, বরং নির্দেশ হল, পাথর মেরে মেরে নির্মমভাবে তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে। যাতে সে সমাজে (অন্যদের জন্য) শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে যায়। সেহেতু এখানে বলা হয়েছে, ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। অর্থাৎ, তাতে উদ্বুদ্ধকারী উপায়-উপকরণ থেকেও দূরে থাক। যেমন, ‘গায়ের মাহরাম’ (যার সাথে বিবাহ হারাম নয় এমন বেগানা) নারীকে দেখা-সাক্ষাৎ করা, তার সাথে অবাধ মেলামেশার ও কথা বলার পথ সুগম করা। অনুরূপ মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে বেপর্দার সাথে বাড়ী থেকে বের হওয়া ইত্যাদি যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা জরুরী। যাতে এই ধরনের অশ্লীলতা থেকে বাঁচা যায়। কারণ এতে নিজেই কেবল না অন্যকেও জিনার ফিত্নায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। আর রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “শিরকের পরে ব্যভিচার হতে বড় পাপ আর কিছুই নেই যে, মানুষ তার শুক্র এমন গর্ভাশয়ে নিক্ষেপ করবে যা তার জন্যে বৈধ নয়”।
হাদিস শরীফে এসেছে, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চোখের জিনা হল (যা হারাম সেদিকে) তাকানো এবং জিহ্বার জিনা হল মুখে (নিষিদ্ধ বিষয়ে কথা) বলা। (তখন) মন কামনা ও আকাঙ্ক্ষা করে (এইসব নিষিদ্ধ বিষয়ে, যার ফলশ্রুতিতে) লজ্জাস্থান তাকে হাক্বিকতে রূপ দেয়, অথবা বিরত রাখে। (বুখারি শরীফ ৬৬১২) সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছেঃ দুই চোখের জিনা (যা হারাম তার দিকে) দৃষ্টিপাত করা, কানের জিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর লজ্জাস্থান তাকে হাক্বিকতে রূপ দেয়, অথবা বিরত রাখে। (মুসলিম শরীফ ২৬৫৭)।
উপরোক্ত হাদিস শরীফ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম জিনাহ ব্যভিচার ৭ টি জিনিস দিয়ে হয়ে থাকেঃ
১) মন, “এখান থেকেই জিনা উৎপত্তি হয়। যে ব্যক্তি জিনার ব্যপারে মনের বিরুদ্ধে চলতে পারে সেই পূর্ণ ঈমানদার মুসলমান হয়”।
২) চোখ, “চোখের জিনা সবচেয়ে কঠিন জিনা। কারোর প্রতি অসাবধানতাবশত প্রথমবার চোখ পড়লে গুনাহ হয়না কিন্তু ২য় বার তাকালে বা ১ম বার দৃষ্টির পর সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে না নিলে চোখের জিনা হয়।
৩) জিহ্বাঃ জিহ্বা দ্বারাও জিনা হয় যখন একজন নর/নারী আরেকজন নর/নারীর সাথে যৌন উদ্দীপক অশ্লীল কথা বলে স্বামী/স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া।
৪) কান, “এটা দিয়ে জিনা হয় যখন নর/নারীর মুখের অশ্লীল কথা শুনা হয়।
৫) হাত, “এটা দিয়ে জিনা হয় যখন কোন বিবাহিত/অবিবাহিত নর/নারীর শরীরের যেকোন অংশ ইচ্ছাকৃত খারাপ নিয়তে স্পর্শ বা ধরা হয়।
৬) পা, “এটা দিয়ে জিনা হয় যখন পায়ে হেটে কাঙ্খিত কোন নর বা নারীর কাছে যাওয়া হয়”।
৭) গুপ্ত অঙ্গ, “এটা দিয়ে ব্যভিচারের চুড়ান্ত রূপ দান করা হয়, এটার স্থান সবার উপরে। কেননা উপরে ৬ টিকে দমন করতে পারলেই এই অঙ্গ হেফাযত করা যায়”।
এতো গেলো দুনিয়ার হিসাব, আখেরাতে তো জেনাখুরের অবস্থা খুবই ভয়ানক হবেঃ
রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ হে উম্মতে মুহাম্মদী! মহান আল্লাহ তা’আলার কসম, মহান আল্লাহ তা’আলার কোন বান্দা জিনা করলে কিংবা কোন নারী জিনা করলে, মহান আল্লাহ তা’আলার চাইতে বেশী অপছন্দকারী কেউ নেই। হে উম্মাতে মুহাম্মদী! আল্লাহ তা’আলার কসম, আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তা হলে তোমরা অবশ্যই কম হাঁসতে ও বেশি কাঁদতে। (বুখারি শরীফ ১০৪৪)।
রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে জেনাখুর বৃদ্ধ, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব।” (মুসলিম শরীফ ও নাসাঈ শরীফ)
জেনাখুরেরা উলংগ অবস্থায় এমন এক চুলার মধ্যে থাকবে যার অগ্রভাগ হবে অত্যন্ত সংকীর্ণ আর নিম্নভাগ হবে প্রশস্ত উহার তলদেশে অগ্নি প্রজ্বলিত থাকবে তাদেরকে তাতে দগ্ধ করা হবে। তারা মাঝে মধ্যে সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌছে যাবে; অত:পর আগুন যখন স্তমিত হয়ে যাবে তখন তাতে তারা আবার ফিরে যাবে। (বুখারী শরীফ ৬৫৭১ ইঃফাঃ) অতএব যদি এইসব আযাবকে বিলিভ করে থাকেন তাহলে আসুন সবাই সম্মিলিত চেষ্টা করি, নিজে জিনা থেকে বাঁচি, সমাজের আগে নিজের পরিবারের যারা বেপর্দা চলে তাদের পেছনে সময় দেই, তাদের বোঝাই, তবে সবার আগে নিজে, এরপর বউ, বাচ্চা, বোন, মা, ও পরিবারের অন্যান্যদের উপর তা এপ্লাই করি। মহান আল্লাহ পাঁক আমাদের তৌফিক দিন, আমাদের জন্য বেপর্দা ও জিনার ফেত্না থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিন। মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট দ্বিতীয় কোন চাওয়া আর নেই।
0 ফেইসবুক: