Thursday, July 28, 2016

“জঙ্গি” ট্যাগ, মুছলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের শব্দাস্ত্রের অন্যতম একটি বুলেট

রাইজিং বিডি একটি নিউজ প্রকাশ করেছে (জঙ্গিহামলাঃ উদীচী থেকে শোলাকিয়া) অথচ ভেতরে যে মালগুলির আলাপ করা হচ্ছে এদের সাথে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম ও জ্বীহাদের ০.০১% কোন কানেকশনই নাই, বরং এগুলো হলো ইহুদীদের ফলস ফ্ল্যাগের অংশ। অনেকেই জানেনা যে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদীরা সকল পথেই মুছলিমদের আক্রমণ চালিয়ে গেলেও মুছলিম এতো অলস, জাহিল আর গোলামে পরিণত হয়েছে যে, সে নিজেও জানেনা যে কি ধরণের প্রোপাগান্ডা আর চক্রান্তের শিকার হয়ে আছে সে। ইহুদীদের যত অস্ত্র আছে মুছলিমদের বিরুদ্ধে, এর মধ্যে অন্যতম একটি অস্ত্র হলো শব্দাস্ত্র, আমরা অনেক লম্বা সময় ধরেই বলে আসছি ঘুমন্ত এই জাতিকে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। ইহুদীরা দিন রাত রিসার্চে লিপ্ত কীভাবে মুছলিমদের ঐক্য বিনষ্ট করা যায়, আর ডিমোরালাইজ করা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যামানায় অনলাইনও যাতে মুছলিমদের হাতে না যায় (যার প্রভাব আমাদের রেগুলার অফলাইন জীবনে প্রবলভাবে পড়ে) এর জন্যে এইখানেও তাদের অস্ত্র তারা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু অনলাইন শব্দের কারখানা তাই শব্দই এইখানে অস্ত্র, তারা দেখে মুছলিমদের চেতনা, ঈমান, আমল, আখলাক এইসবের সাথে কি কি বিষয় জড়িত, তারা ইহাকে খুব হাইলাইট করে নেগেটিভভাবে তাদের নিজের হাতে গড়া পুতুল মিডিয়া দিয়ে, আর মুর্খ মুছলিম সেগুলো অনায়াসে গিলে একেবারে চেতনাহীন হয়ে যায়, চিন্তাশক্তির এনেস্তেশিয়া বলা যায় এগুলোকে। যেমন ঈমানের সাথে, ঈমানী চেতনার সাথে জড়িত শব্দঃ তাওহীদ, শরিয়াহ, তরিকত, তাসাউফ, আউলিয়া, মাজার, খিলাফত, মুজাহিদ, জঙ্গি, জ্বিহাদ, পর্দা, নিকাব, বোরখা বাল্যবিবাহকে মানুষের মধ্যে এমন নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছে যাতে মানুষ এই শব্দগুলীর থেকে দূরে থাকে, শুনলে নাক সিটিকায় নাউযুবিল্লাহ। প্রয়োজনে নিজেই এইসবের ফলস ফ্লাস সিচুয়েশন তৈরি করে নেতিবাচক হাল সৃষ্টি করে দিবে। আর একারণেই বলতে হয় যে মস্তিষ্ক আপনার, কিন্ত হুকুম চলছে ইহুদীদের। কি আশ্চর্য হচ্ছেন? জি হ্যাঁ সঠিকই বলছি। আপনার এখন আর নিজস্ব চিন্তা-ফিকির করার ক্ষমতা নাই, তাই ইহুদীরা আপনাকে যা গেলাচ্ছে আপনি তাই গিলতেছেন ইচ্ছা অনিচ্ছায়

আজকাল নাস্তিক ও নাস্তিকতার বিরুদ্ধে, এলজিবিটি, ভারত-আমেরিকার বিরুদ্ধে মুছলিম যুব সম্প্রদায় একটু চেতনা দেখানো শুরু করেছে বলে যাকে তাকে উগ্র-ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী বানাতে জঙ্গি ট্যাগ লাগিয়ে গুম করে দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

অথচ আপনি ইংরেজি ওরিজিনাল অভিধানগুলো খুলে দেখুনঃ

জঙ্গিশব্দের অর্থঃ = Militant

জঙ্গিবাদশব্দের অর্থঃ = Militancy

জঙ্গিবাদীশব্দের অর্থঃ = Militant

অথচ একজন আমাকে আজকে দেখালো-যে তাগুতি এক আলেম নামের জাহেল লিখেছে, জঙ্গিবাদ নাকি যুলুম। নাউযুবিল্লাহ!!!

মূলত জঙ্গী শব্দটির মানেটা-কি তা-ই আমরা জানিনা, এমনকি আমরা জানার চেষ্টাও করিনা, কারন না জেনে না বুঝে কাজ করাটা আমাদের বাঙ্গালীদের একটা বিরাট অসুখে পরিনত হয়েছে।

জঙ্গ একটি ফার্সি শব্দ। উর্দুতেও এর প্রচুর ব্যবহার আছে। উর্দু আর ফার্সিতে শব্দটা লড়াই বা যুদ্ধ অর্থে ব্যবহার হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ আর জঙ্গি মানে যোদ্ধা, লড়াকু। যেমন স্বাধীনতা যুদ্ধকে উর্দু ফার্সিতে জঙ্গে আজাদি বলা হয়, আর স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের বাংলায় মুক্তিযোদ্ধা বলে আর উর্দু ফার্সিতে বলে জঙ্গিয়ে আজাদি। ফার্সি আর উর্দুতে জঙ্গি একটি সম্মানিত শব্দ। যারা অন্যায় অত্যাচার আর জুলুম নির্যাতনের বিপক্ষে এবং ন্যায়ের পক্ষে বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করে তাদেরকেই বলা হয় জঙ্গি, এমনকি তাদেরকে সম্মানের চোখে দেখা হবে সেটাই স্বাভাবিক।

যেমন ১৯৭১ সালে যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন তারা আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানের পাত্র। আমাদের গৌরব। তারা বাংলায় মুক্তিযোদ্ধা আর উর্দু ফার্সিতে জঙ্গি। এই অর্থে জঙ্গি একটি সম্মানিত শব্দ। তুরস্কের জঙ্গি রাজবংশের শেষ শাসক, বায়তুল মুকাদ্দাসের পুনরুদ্ধারের স্বপ্নদ্রষ্টা, ন্যায়পরায়ণ শাসক সূলতান নূর উদ্দিন জঙ্গি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এখনও মুসলমানরা সম্মানের চোখেই দেখেন। কারণ যেভাবে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা অন্যায়ের বিপক্ষে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন তিনিও সমগ্র মুছলিম মিল্লাতের জন্য অন্যায়ের বিপক্ষে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিলেন আমৃত্যু।

ঠিক একারণেই ইহুদীরা তাদের মিডিয়া দিয়ে এই পবিত্র শব্দকে খারাপভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে করে আমরা জঙ্গ বা যুদ্ধের ব্যপারে পুরোপুরি ডি-মোরালাইজড হয়ে যাই। এতে করে তারা তাদের আগ্রাসন নিসচিন্তে চালিয়ে যেতে পারবে।

আপনাদের মনে রাখা উচিৎ, ইসলাম ধর্মের প্রথম জঙ্গি হলেনঃ

১) রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

২) ৪ সম্মানিত খলীফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।

৩) খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হামযা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ সকল মুজাহিদ সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জঙ্গি ছিলেন।

৪) তারিক বিন যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি এরা সবাই জঙ্গি ছিলেন।

৫) সুলতানে আযম, মুজাহিদে আযম, হযরত নূর উদ্দিন জঙ্গি রহমতুল্লাহি আলাইহি ও গাজীয়ে আযম, মুজাহিদে আযম হযরত সালাহউদ্দিন আল আইয়্যুবি রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা সবাই জঙ্গি, যুদ্ধবাদি ছিলেন।

এখন আপনারা কি বলবেন উনারা যুলুম করেছেন? উনারা যালিম ছিলেন? উনারা সন্ত্রাসী ছিলেন? বললে ঈমান থাকবে?

এতএব উপর থেকে জঙ্গীশব্দ সম্পর্কে নিশ্চয় ক্লিয়ার ধারনা পেয়েছেন, তাই কথা বলার পূর্বে জঙ্গী” “জঙ্গিবাদ” “জঙ্গিবাদীশব্দগুলির অর্থ বুঝার চেষ্টা করবেন নাহলে নিজের অজান্তে ঈমান আলি ফুড়ুৎ করে চলে যাবে, কারণ জঙ্গি একটি পবিত্র শব্দ এটিকে ইহানত করাই কুফুরি।

আফসোস যে মুছলমান জানেনা কি কারণে ক্রুসেডার ইহুদী-নাসারাদের যম নূর উদ্দিন জঙ্গি রহমতুল্লাহ উনার নামের সাথে জঙ্গি লাগানো। মনে রাখতে হবে যে, ইহুদী-নাসারারা কোন শব্দ কে বিকৃত করলেই সেটা খারাপ হয়ে যায়না বরং তাদের কথায় সায় দিলে ঈমান চলে যায়। 

মনে রেখো তোমাদের বিরুদ্ধে ইহুদীদের শব্দাস্ত্রের শেষ শব্দ হচ্ছে “মুসলিম”, কি বুঝো নাই? এমন এক সময় আসবে, যখন তুমি নিজেকে মুসলিম বলতে ভয় পাবে, যদি আজ তাদের এইসব প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে রুখে না দাড়াও।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: