Wednesday, August 17, 2022

হে দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, দ্বীন পালনে তোমাদের পরিবার যেনো দ্বীনের পথে বাঁধা না হয়

আজকাল অনেকেই আছেন যারা ধন সম্পদ আর সন্তান-সন্ততিদের পেছনে জীবন তো শেষ করে ফেলছেন, এমনকি ঈমান হারাতেও দ্বিধাবোধ করেন না। সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে গিয়ে মহান আল্লাহ তাআলাকে ভুলে সারাদিন কুকুরের মতো কাজ করে যান কিন্তু নামায রোজার ধার ধারেন না, অথচ নামায ব্যতীত মুসলিম থাকা অসম্ভব। নামায পড়েন না সময় নাই, যাকাত দেন-না সন্তানের জন্য রাখেন, অথচ এইসব স্পষ্ট কুফর। আর এরূপ হালে যারা নিজেকে পতিত করেন, তাদের ব্যপারে মালিক মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ (اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِیَ عَنۡہُمۡ اَمۡوَالُہُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُہُمۡ مِّنَ اللّٰہِ شَیۡئًا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمۡ وَقُوۡدُ النَّارِ) নিশ্চয় যারা কুফরী করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি মহান আল্লাহ তা’আলার (আযাব) থেকে (তাদের বাচানোর ব্যাপারে) কখনোই কোনো উপকার করবে না, আর তারাই হবে জাহান্নামের ইন্ধন। (সূরাহ আলে ইমরান আলাইহিস সালাম ৩/১০)

মহান আল্লাহ এ আয়াতে কুফরে লিপ্ত মানুষদের সম্পর্কে এটা জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তারা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। তিনি আরো বলেনঃ (یَوۡمَ لَا یَنۡفَعُ الظّٰلِمِیۡنَ مَعۡذِرَتُہُمۡ وَ لَہُمُ اللَّعۡنَۃُ وَ لَہُمۡ سُوۡٓءُ الدَّارِ) যেদিন যালেমদের কোন ওজর-আপত্তি কাজে আসবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে লা‘নত এবং তাদের জন্য (যাহান্নামে) রয়েছে নিকৃষ্ট বাসস্থান।” (সুরাহ গাফিরঃ ৪০/৫২) দুনিয়াতে তাদেরকে যে সমস্ত মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দেয়া হয়েছিল তাও তাদের কোন উপকার দিবে না এবং তাদেরকে মহান আল্লাহ তা’আলার কঠোর শাস্তি ও কঠিন পাকড়াও থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হবে না। অন্য আয়াতেও মহান আল্লাহ তা'আলা এ বিষয়টি ইবরত হিসেবে যারা মুমিন তাদের জানিয়ে দিয়েছেনঃ (فَلَا تُعۡجِبۡکَ اَمۡوَالُہُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُہُمۡ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُعَذِّبَہُمۡ بِہَا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ تَزۡہَقَ اَنۡفُسُہُمۡ وَ ہُمۡ کٰفِرُوۡنَ) কাজেই ওদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেনো আপনাকে বিমুগ্ধ না করে, মহান আল্লাহ তা’আলা তো এসবের দ্বারাই ওদেরকে পার্থিব জীবনে শাস্তি দিতে চান। ওরা কাফের থাকা অবস্থায় ওদের আত্মা দেহত্যাগ করবে” (আত-তাওবাহঃ ৯/৫৫) আরও বলেনঃ (لَا یَغُرَّنَّکَ تَقَلُّبُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِی الۡبِلَادِ مَتَاعٌ قَلِیۡلٌ ۟ ثُمَّ مَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمِہَادُ) যারা কুফরী করেছে, দেশে দেশে (ব্যবসার উদ্যশ্যে ঘুরে বেড়ায়) তাদের অবাধ বিচরণ যেন কিছুতেই আপনাকে বিভ্রান্ত না করে। এ তো স্বল্পকালীন ভোগ মাত্র; তারপর জাহান্নাম তাদের আবাস আর ওটা কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! (সূরাহ আলে ইমরান আলাইহিস সালাম ৩/১৯৬–১৯৭) নাউযুবিল্লাহ!

তাই আপনার আমার, স্ত্রী/স্বামী ও সন্তান যেনো আমাদের দ্বীন পালনের পথে বাধা না হয়। আমরা যেনো তাদের দুষমন এ দ্বীন হিসেবে মহান আল্লাহ তাআলার নিকট সাব্যস্ত করে তাদের দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ না করি। আপনাকে স্বরনে রাখতে হবে যে, যেখানে জামাআত বিহীন খোদ একা একা ইসলাম পালন করেও ঈমানদার থাকা অসম্ভব, সেখানে ইসলাম ভুলে, দ্বীন ভুলে মাল সম্পদের পিছনে ছুটে ঈমানদার থাকার, মুমিন হয়ে হেদায়েত লাভ করার আদতেই কোন সুযোগ নাই।

আমাদেরকে এইসব গাফলতি থেকে বের হতে হবে। ইবাদত ও যিকির ফিকিরের বেলায় ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিদের চেয়ে দ্বীন-কে যেন প্রাধান্য দিতে পারি এটার সর্বচ্চো চেষ্টা করতে হবে। ধনসম্পদ স্বামী/স্ত্রী সন্তান-সন্ততি আজ আছে কাল থাকবেনা, বাস্তবতা হচ্ছে এরা না থাকলেও আমাদের ঈমান যাবেনা, কিন্তু দ্বীন না থাকলে আমাদের ঈমান চলে যাবে আর আমরা হয়ে যাব যাহান্নামের সেইসব লাকড়ী, যা রূহ কে পর্যন্ত পুড়িয়ে দিতে সক্ষম।

মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ ( وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ اَوۡلَادُکُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ) জেনে রাখো! তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষার বিষয় মাত্র। মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে রয়েছে এর চেয়েও মহান প্রতিদান। (সূরা আনফালঃ ৮/২৮)। একজন মানুষের জন্য দ্বীন পালন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বিধান বাস্তবায়নে যে বিষয়গুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তার মধ্যে অর্থলোভ এবং স্বামী/স্ত্রী সন্তানদের প্রতি মায়া-মমতা-ভালোবাসা অন্যতম। এ দুটোকে কেন্দ্র করেই মানুষ যত ধরনের অপরাধ করে বসে। তাই মহান আল্লাহ পাক বান্দাকে সতর্ক করে বলছেন, বান্দা! এসব বিষয় তো তোমার জন্য পরীক্ষার একেকটি বিষয় মাত্র। এ ধরনের প্রতিটি বিষয়ে তোমাকে কৃতিত্বের সঙ্গে সাফল্য লাভ করতে হবে। তবেই তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে থাকা প্রতিদান ভাণ্ডার থেকে বেশুমার নিয়ামত লাভ করতে পারবে।

ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেন, সন্তান-সন্ততি আমাদের জন্য পরীক্ষার বিষয়। মহান আল্লাহ পাক মানুষকে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করেন সে কি আমার শোকরিয়া আদায় করে নাকি সন্তান পেয়ে আমার নাফরমানি করে। সন্তানকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথে পরিচালিত করতে পারলেই বান্দা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে পরিগণিত হবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির)। আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহিমাহুল্লাহ  বলেন, সন্তান ও অর্থ-সম্পদ মানুষকে আখিরাতের কর্ম থেকে বিরত রাখে। তাই মহান আল্লাহ পাক জানিয়ে দিচ্ছেন দুনিয়ার এ অর্থ-সম্পদ ও সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক কে ভুলে যেয়ো না। আখিরাতে অনন্তপথের যাত্রাকে অমঙ্গল কর না। (তাফসিরে জালালাইন)।

অর্থ-সম্পদ যদি দীন পালনে সহায়ক হয় তবে তা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নেয়ামত। কিন্তু তারা যদি মহান আল্লাহ পাক উনার পথে চলতে বাধা প্রদান করে তবে বুঝতে হবে তারা আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু। তাদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ( یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ مِنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ وَ اَوۡلَادِکُمۡ عَدُوًّا لَّکُمۡ فَاحۡذَرُوۡهُمۡ ۚ وَ اِنۡ تَعۡفُوۡا وَ تَصۡفَحُوۡا وَ تَغۡفِرُوۡا فَاِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ) হে ঈমানদারগন! কখনো কখনো তোমাদের স্ত্রী (স্ত্রীর বিপরিতে স্বামী) এবং সন্তান তোমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারে। অতএব, (তাদের ব্যপারে) সাবধান থেক। আর তারা (যদি) তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করে (তাহলে) তোমরা যদি তাদের ক্ষমা করে দাও তবে জেনে রেখ, মহান আল্লাহ পাক তিনিও অতীব ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা তাগাবুনঃ ৬৪/১৪)।

অর্থ-সম্পদের লোভ এবং সন্তান-পরিজনের মায়া-ভালোবাসা যেন মানুষকে মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থেকে গাফেল করে না দেয় সে বিষয়ে সতর্ক করে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ ( یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ) হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতিপত্তি, ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থেকে গাফেল না রাখে। যদি তোমরা গাফেল বা উদাসীন হও তবে অবশ্যই তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকুনঃ ৬৩/৯)।

আরবের মুশরিকদের আক্বিদাহ আজকে অনেকেই লালন পালন করছেন, তাদের আক্বিদাহ ছিলোঃ (وَ قَالُوۡا نَحۡنُ اَکۡثَرُ اَمۡوَالًا وَّ اَوۡلَادًا ۙ وَّ مَا نَحۡنُ بِمُعَذَّبِیۡنَ) ধন-মাল আর বাল-বাচ্চায় আমরাতো সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই (আখিরাতে) শাস্তি দেয়া হবেনা। (সূরা সাবা ৩৪/৩৫) অর্থাৎ, তাদের ধারণা ছিলো মহান আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির আতিশয্য প্রদান করেছেন, তখন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হলেও আমাদের শাস্তি হবে না। তারা ঠিক যেন কিয়ামতের দিনকেও দুনিয়ার সাথে তুলনা করেছে যে, যেমন পৃথিবীতে কাফের ও মু’মিন সকলকে মহান আল্লাহ তাআলার নিয়ামত প্রদান করা হচ্ছে, অনুরূপ আখেরাতেও প্রদান করা হবে। অথচ আখেরাত হচ্ছে ফলাফল অর্জনের ক্ষেত্র, সেখানে পৃথিবীতে কৃত নিজ নিজ কর্মের ফল পাওয়া যাবে; ভাল কর্মের ভাল ফল এবং মন্দ কর্মের মন্দ ফল। আর পৃথিবী হচ্ছে পরীক্ষালয়। এখানে মহান আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা স্বরূপ সকলকে পার্থিব-সম্পদ প্রদান করেন। অথবা তারা পার্থিব ধন-সম্পদের আতিশয্যকে তারা মহান আল্লাহ তাআলার সন্তষ্টির বহিঃপ্রকাশ ধরে নিয়েছিল; অথচ এই রকম নয়। যদি তাই হত তাহলে মহান আল্লাহ তাআলা উনার অনুগত বান্দাদেরকে সর্বাধিক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রদান করতেন।

এ বিষয়বস্তুটি পবিত্র আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে। এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ (اَیَحۡسَبُوۡنَ اَنَّمَا نُمِدُّہُمۡ بِہٖ مِنۡ مَّالٍ وَّ بَنِیۡنَ نُسَارِعُ لَہُمۡ فِی الۡخَیۡرٰتِ ؕ بَلۡ لَّا یَشۡعُرُوۡنَ) তারা কি মনে করে যে, আমি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তাদেরকে যে সাহায্য করি, তা তাদের জন্যে পরিণাম ও আখেরাতের দিক দিয়েও মঙ্গলজনক? (কখনই নয়) বরং তারা আসল সত্য সম্পর্কে বে-খবর। (সূরা মু’মিনুন ২৩/৫৫–৫৬) (অর্থাৎ তারা বেখবর যে, যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মানুষকে মহান আল্লাহ তা’আলা থেকে গাফেল করে দেয়, তা তাদের জন্যে শাস্তিস্বরূপ)। কেননা, মহান আল্লাহ পাঁক স্পষ্ট ভাষায় বলেছেনঃ (وَ مَاۤ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ بِالَّتِیۡ تُقَرِّبُکُمۡ عِنۡدَنَا زُلۡفٰۤی اِلَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ۫ فَاُولٰٓئِکَ لَہُمۡ جَزَآءُ الضِّعۡفِ بِمَا عَمِلُوۡا وَ ہُمۡ فِی الۡغُرُفٰتِ اٰمِنُوۡنَ) (হে মানুষ,) তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি এমন (কোনো বিষয়) নয় যে, এগুলো তোমাদের আমার নৈকট্য লাভ করতে সহায়ক হবে, তবে যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করেছে (তার কথা আলাদা), এ ধরনের লোকদের জন্যেই (কেয়ামতে) ছিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে, আর তারা জান্নাতের (সুরম্য) বালাখানায় নিরাপদে অবস্থান করবে, কেননা তারা নেক আমল করেছে। (সূরা সাবা ৩৪/৩৭) অথচ এই সন্তান আর মালের পেছনে আমরা নিজেদের গাফেল করে ফেলি আল্লাহ পাঁক উনার স্বরন থেকে, কিন্তু মালিক আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেনঃ (قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ وَ یَقۡدِرُ لَہٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَہُوَ یُخۡلِفُہٗ ۚ وَ ہُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ) (হে আমার হাবীব ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম) আপনি, “বলে দিন আমার রব উনার বান্দাদের মাঝে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার রিযিক বাড়িয়ে দেন, (আবার যার প্রতি ইচ্ছা করনে) তার জন্যে (তা) সংকুচিত করে দেন। আর তোমরা যা কিছু (মহান আল্লাহর রাস্থায়) খরচ করবে, তিনি (অবশ্যই) তার প্রতিদান দেবেন, তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম রিযিক দাতা। (সূরা সাবা ৩৪/৩৯) অতএব জানার বিষয় হলো এতো কুরআনী নসিহত শুনেও যদি বুঝে না আসে আমাদের তাহলে জানতে হবে যে আল্লাহ তা'আলাকে ভূলে দুনিয়ার পিছনে ছুটে কি সচ্ছল জীবনযাপন সম্ভব?

অতএব আমরা যেনো নিজেদের ক্ষতি নিজেদের হাতে না করি, দ্বীনের উপর দুনিয়া, পরিবারকে প্রাধান্য না দেই। মহান আল্লাহ পাক আমাদের, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এবং অর্থের ফেত্না থেকে হেফাজতে রাখুন। কিন্তু কুরআন হাদিস দিয়ে বুঝানোর পরেও যদি কারো সমজে না ঢুকে তাহলে তার জন্য ভয়ানক অবস্থা অপেক্ষা করছে।

স্বরন করিয়ে দিতে চাই, মহান আল্লাহ পাঁক কেমন ইবরতনাক নসিহত পেশ করেছেন এইসব লোকদের ব্যপারে যাদের কুরআন হাদিস দিয়ে বোঝানোর পরেও বুঝতে চায়নাঃ (سَآءَ مَثَلَاۨ الۡقَوۡمُ الَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ اَنۡفُسَهُمۡ کَانُوۡا یَظۡلِمُوۡنَ مَنۡ یَّهۡدِ اللّٰهُ فَهُوَ الۡمُهۡتَدِیۡ ۚ وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ وَ لَقَدۡ ذَرَاۡنَا لِجَهَنَّمَ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ ۫ۖ لَهُمۡ قُلُوۡبٌ لَّا یَفۡقَهُوۡنَ بِهَا ۫ وَ لَهُمۡ اَعۡیُنٌ لَّا یُبۡصِرُوۡنَ بِهَا ۫ وَ لَهُمۡ اٰذَانٌ لَّا یَسۡمَعُوۡنَ بِهَا ؕ اُولٰٓئِکَ کَالۡاَنۡعَامِ بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ ؕ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡغٰفِلُوۡنَ) তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রমানে ব্যর্থ হয়েছে আমার আয়াত শরীফসমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে। (মূলত) মহান আল্লাহ তা’আলা যাকে হিদায়াত (দান) করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত আর যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি জ্বীন এবং ইনসানের মধ্যে থেকে অনেককেই সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য। তাদের অন্তর থাকার পরেও তারা বুঝবেনা, চোখ থাকার পর ও তারা দেখবেনা, কান থাকার পরও তারা শুনবেনা তারা হচ্ছে চতুষ্পদ জন্তুর মতো, রবং তার চেয়েও অধিক পথভ্রষ্ট। (আর) তারাই হচ্ছে গাফেল। (আল আরাফ ৭/১৭৭-১৭৯) আর এই বালহুম আদ্বল (بَلۡ هُمۡ اَضَلُّ) দের শাস্তির ব্যপারে মালিক মহান আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (وَیۡلٌ لِّکُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍ یَّسۡمَعُ اٰیٰتِ اللّٰهِ تُتۡلٰی عَلَیۡهِ ثُمَّ یُصِرُّ مُسۡتَکۡبِرًا کَاَنۡ لَّمۡ یَسۡمَعۡهَا ۚ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ وَ اِذَا عَلِمَ مِنۡ اٰیٰتِنَا شَیۡئَۨا اتَّخَذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ مِنۡ وَّرَآئِهِمۡ جَهَنَّمُ ۚ وَ لَا یُغۡنِیۡ عَنۡهُمۡ مَّا کَسَبُوۡا شَیۡئًا وَّ لَا مَا اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَوۡلِیَآءَ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ هٰذَا هُدًی ۚ وَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمۡ لَهُمۡ عَذَابٌ مِّنۡ رِّجۡزٍ اَلِیۡمٌ) ধ্বংস (এমন সব) প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী মহাপাপীর। সে মহান আল্লাহ তাআলার আয়াত শরীফসমূহ শুনে, অতঃপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে, যেনো সে আয়াত শরীফসমূহকে শুনেনি। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। যখন সে আমার কোন আয়াত শরীফসমূহ অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। তাদের সম্মুখে রয়েছে জাহান্নাম। তারা যা উপার্জন করেছে, তা তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা মহান আল্লাহ পাঁক উঁনার পরিবর্তে যাদেরকে অলি(অবিভাবক)রূপে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি। আর এই কিতাব (আল কুরআন) হেদায়েত দানকারী, আর যারা তাদের পালনকর্তার আয়াত শরীফসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (আল জাসিয়া ৪৫/৭-১১)

মুমিনের জন্য একটি আয়াত, একটি হাদিস যথেষ্ট হেদায়েতের পথে ফিরে আসত কিন্তু যারা গুমরাহ এদের হাজার বুঝালেও, ভয় দেখালেও কোন কাজ হবেনা মূলত এরা গুমরাহীর উপর ইস্তিকামত এমন কঠিনভাবেই যে তাদের ব্যপারে আল্লাহ পাঁক অগ্রিম বলেই দিয়েছেনঃ (وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ ذُکِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّهٖ فَاَعۡرَضَ عَنۡهَا وَ نَسِیَ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰهُ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِهِمۡ اَکِنَّۃً اَنۡ یَّفۡقَهُوۡهُ وَ فِیۡۤ اٰذَانِهِمۡ وَقۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَدۡعُهُمۡ اِلَی الۡهُدٰی فَلَنۡ یَّهۡتَدُوۡۤا اِذًا اَبَدًا) আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সে তার পূর্বের কৃতকর্মের (খারাপ পরিণতির) কথা ভুলে যায়। (একারণেই) আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা এটে দিয়েছি যাতে তারা তা (কুরআনের কথাগুলি) বুঝতে না পারে, আর তাদের কানেও এঁটে দিয়েছি বধিরতা। (অতএব) আপনি তাদেরকে সৎপথে ডাকলেও তারা কক্ষনো সৎপথ গ্রহণ করবে না। (আল কাহাফ ১৮/৫৭) তাদের ধারণা কুরআনের কিছু আয়াত তো আমরা মানি, আমরা তো কুরআনের আয়াত মেনেই নামায পড়ি, রোজা রাখি, যাকাত দেই, কিন্তু না ব্যপারটা মোটেও এরূপ না। এদের মতো যারা কিতাবের অর্ধেক মানে এবং নিজের বিপক্ষে যাওয়ার কারনে বাকি অর্ধেক মানেনা তাদের ব্যপারেও মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ মোবারক করেনঃ (اَفَتُؤۡمِنُوۡنَ بِبَعۡضِ الۡکِتٰبِ وَ تَکۡفُرُوۡنَ بِبَعۡضٍ ۚ فَمَا جَزَآءُ مَنۡ یَّفۡعَلُ ذٰلِکَ مِنۡکُمۡ اِلَّا خِزۡیٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یُرَدُّوۡنَ اِلٰۤی اَشَدِّ الۡعَذَابِ ؕ وَ مَا اللّٰہُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ) তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দাংশ বিশ্বাস করো এবং কিয়দাংশ অবিশ্বাস করো? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। (আর) কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন। (আল বাক্বারা ২/৮৫)।

মহান আল্লাহ পাঁক সবাইকে হেদায়েত ও তৌফিক দিন, যেন উনার প্রত্যেকটি হুকুম বিনা চু চেরায় মেনে নিতে পারে সকল বিষয়ে।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: