Friday, October 21, 2022

দ্বীনের ঠিকাদার দাবীদার মুসলমানদের উপর বর্তমানে কোন কাজটি অধিক ফরয?


ইসলামিক খিলাফতের ঘোর বিরোধী দাজ্জালের চেলা ইহুদীদের পেইড একদল কলম সৈনিক আছে যারা মানুষের জিহাদী চেতনাকে ডিমোরালাইজড করতে দাবিরাত্রি ব্যস্ত অনলাইন অফলাইনে। যেসব আয়াত শরীফ কাফের ও মুনাফিকদের উপর নাজিল হয়েছে সেসবের অপব্যখা করে তারা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, যেনো মুসলিম সমাজ জিহাদ থেকে দূরে সরে যায়। সমাজে যতো অনাচার, যুলুম, নির্যাতনই ঘটুক না কেনো, যেনো সে কোন প্রতিবাদ না করে, সে যেনো চিন্তা করে আমি তো মুসলিম, আমি তো নামাজ ৫ ওয়াক্তই পড়ি তাহাজ্জুদ ও মিস হয়না আমার। আমিতো কেবল ফরজ রোজাই রাখিনা বরং সপ্তাহের সুন্নত সহ নফল ও রাখি প্রত্যেক মাসে, আমিতো কেবল যাকাতের শাড়িই দেইনা আমার এলাকায়, সাথে নির্বাচনের সময় দান খয়রাত ও করি ভোটের আগে, আমিতো অসংখ্যবার হজ্জ উমরা করেছি একারণেই তো মানুষ আমাকে হাজি ডাকে, আমিতো সব সময় তাসবির গোটা জপি এর পরেও কেনো আমাকে সমাজের ঝগড়া-ঝাটি মারামারিতে শামিল হতে হবে?

কিন্তু তারা এটা বুঝেনা, তাদের যিনি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার আদর্শ কি ছিলো। উনি মুমিন কাদের বলেছেন। কেবল নামাজ রোজা হজ্জ যাকাতেই কি মুমিন হওয়া সম্ভব?

একটি ঘটনা বললে বিস্তারিত বুঝতে পারবেন। ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেনঃ একবার এক আরব মুসলিম মহিলা বনু কায়নুকার বাজারে দুধ বিক্রি করতে যান। দুধ বিক্রির পর সেই সম্মানিতা মহিলা উনার ব্যবহৃত অলঙ্কার ঠিক করার প্রয়োজনে এক ইহুদী স্বর্ণাকারের দোকানে বসেন। কিন্তু সেই ইহুদী ব্যবসায়ী হলেও ছিলো চরম পর্যায়ের লম্পট। সেই লম্পট ইহুদী তখন সেই সম্মানিতা পর্দানশীল মহিলাকে উনার চেহারা অনাবৃত করতে বলে, কিন্তু সেই সম্মানিতা মুসলিম মহিলা তাতে রাজি হননি। এতে স্বর্ণাকার মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে চুপিসারে কাজের ছলে সেই সম্মানিতা মহিলার কাপড়ের একাংশ উনার পিটের সাথে গিট বেঁধে দেয়। মহিলা কিছুই বুঝতে পারেন নি। এর কিছুক্ষন পরে মহিলা যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালে, সাথে সাথে উনার লজ্জাস্থান উন্মুক্ত হয়ে যায়। এতে সেখানে থাকা ইহুদীরা খিলখিল করে হেসে ওঠে। সেই মুসলিম মহিলা এভাবে অপমানিত হয়ে সহ্য করতে না পেরে দুঃখে কষ্টে চিৎকার ও কান্নাকাটি শুরু করেন। উনার কান্না শুনে সেই বাজারে অবস্থনরত এক মুসলিম ব্যাক্তি এগিয়ে আসেন এবং কান্নার কারণ জানতে চান। মহিলার মুখে বিস্তারিত ঘটনা শুনে সেই মুসলিম ব্যক্তি ক্রোধে ফেটে পড়েন এবং সেই ইহুদিকে হামলা করে বসেন, লড়াইয়ের এক পর্যায়ে সেই ইহুদীকে তিনি হত্যা করে ফেলেন। আশেপাশে থাকা ইহুদীরা যখন দেখলো তাদের একজনকে এক মুসলিম ব্যক্তি হত্যা করে ফেলেছেন, তখন তারা তাঁদের চির শত্রু মুসলমান সেই ব্যক্তিকেও সম্মিলিতভাবে আক্রমন করে হত্যা করে ফেলে। নিহত পরিবারবর্গ যখন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয় তখন চিৎকার আর কান্নাকাটি করে ইহুদীদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের নিকট অভিযোগ করেন এবং বিচার চান। ফলে মুসলমান ও বনু কায়নুকা গোত্রের ইহুদীদের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটিনা যখন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনাকে অবগত করা হলো তখন উনার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায়। তিনি মদিনা শরীফের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবু ইবনে আবদুল মুনযের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে অর্পণ করেন, এবং হযরত হামযা রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাতে মুসলমানদের পতাকা তুলে দিয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালার সৈনিকদের নিয়ে বনু কায়নুকার বসতি অভিমূখে জিহাদ ঘোষণা করেন। ইহুদীরা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার আগমন সম্পর্কে অবগত হয়ে মুহূর্তে দুর্গের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়। সেদিন ছিল পবিত্র ইয়াওমুল জুমু'আয় শরীফের দিন। দ্বিতীয় হিজরির শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখ। এরপর ১৫ দিন অর্থাৎ যিলক্বদ মাসের প্রথম দিন পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখা হয়। ফলশ্রুতিতে মহান আল্লাহ তা’য়ালা ইহুদীদের মনে মুসলমানদের প্রতি ভয় ঢুকিয়ে দেন। বনু কায়নুকা গোত্র মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার শর্তে আত্মসমর্পণ করে। তাদের গোত্রের জান-মাল, মহিলা ও শিশুদের ব্যপারে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের দেয়া ফায়সালাই চুড়ান্ত হয়। এরপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে সকল ইহুদীদের বেঁধে ফেলা হয়।

[এই ঘটনার বিস্তারিত পাবেন, সিরাত ইবনে হিশাম ও মুসলিম শরীফের জ্বিহাদ অধ্যায়ে আরো আছে ড. ইসা মাহদির “মহাবিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব” কিতাবে।]

ঘটনার মোরাল ও আজকের মুসলিম সমাজের মুনাফিকির চিত্র।

যখন রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার কাছে একজন পর্দানশীল মহিলার বেইজ্জতি আর একজন মুসলিমের খুনের সংবাদটি আসে। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কাল বিলম্ব না করে চরম হুংকার দিয়ে বলতে লাগলেন হে আমার আসহাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগন, সবাই প্রস্তুত হয়ে যান, এখুনি আমাদেরকে ইহুদীদের সাথে যুদ্ধের জন্য জ্বিহাদে যেতে হবে।

রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বন্ধ করে দিলেন দ্বিন ইসলামের তাবলীগ (বিঃদ্রঃ ঐ তাবলীগের সাথে বর্তমানে ইলিয়াসি তাবলীগের কোন সম্পর্ক নাই), বন্ধ করে দিলেন আসহাবে সুফফার তাদরীছ। সেই মুহূর্তে সেগুলোর আর প্রয়োজন রইলো না। প্রথমে উম্মতে মুসলিমাকে উলঙ্গ করার বদলা নিতে হবে, নিতে হবে ইজ্জত হেফাজত করতে গিয়ে শহীদ হওয়া মুসলিম ভাইয়ের লাশের প্রতিশোধ, যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলোর বিচার না হবে! ততক্ষণ পর্যন্ত দ্বিনের দাওয়াত এবং তাদরীস চলবেনা। এখন সবচেয়ে বড় ফরয কাজ হলো, নিকৃষ্ট ইহুদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া।

রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইহুদীদের গোত্রে আক্রমণ করলেন এবং সমস্ত ইহুদীদেরকে ঐ কবিলা থেকে নির্বাসিত করলেন, আল্লাহু আকবার!!!

কিন্তু আজকের সুন্নি সূফী পিরানে দরবার, হক্কানী নায়েবে রাসূল দ্বাবীদার, দ্বিন ইসলামের ঠিকাদার, ছহি আকিদার দ্বাবীদারগন কোথায়? আজকে লক্ষ লক্ষ ইসলামিক দলের নেতাকর্মী যারা আছে তারা কোথায়, কখন হুংকার আসবে? ধর্ষীতা বোনদের বদলা নিতে? আজকে কোথাও কোন আওয়াজ নেই, প্রতিবাদ নেই? কারন কি? সবাই কি ভেড়ার দলে আর কাপুরুষের বাহিনীতে পরিনত হয়েছে?

কোন মুখে নিজেদেরকে রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের উম্মত বলে দ্বাবী করা হয়? কিভাবে নিজেদেরকে সাহাবায়ে কীরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের অনুসারী দ্বাবী করা হয়?

না আমি এদের মধ্যে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের কোন আদর্শ দেখতে পাচ্ছিনা!? সাহাবায়ে কীরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের কোন আকিদাও দেখতে পাচ্ছিনা।

তবে হ্যাঁ নিজ চোখে খুব কাছ থেকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার সুন্নত পালনকারী কয়েকজন ভাই ও বোনদের দেখছি, আশাকরি তারা খুব শিগ্রই ঈমানি জজবা দিয়েই আমাদের মুসলিম মা বোনদের ইজ্জতের প্রতিশোধ নিবেন, ইন-শা-আল্লাহ।

এখন দ্বীনের ঠিকাদার দাবীদার মুসলমানদের তাহলে কোন কাজটি ফরয?

১) গাট্টি মাথায় নিয়ে ৪০ দিনের চিল্লায় যাওয়া? টেলিভিশনে বসে কেবল মোডারেট মুসলিম বানানো? নাস্তিকদের বিরুদ্ধে দুই একটি বই লিখেই শেষ? তসবিহ নিয়ে খানকা আর মাজারের দায়িত্বে বসে থাকা? বুক পেতে কাফের মুশরিক ইহুদি নাসারাদের বলা তোমাদের গুলি শেষ হবে আমাদের বুক শেষ হবেনা?

২) নাকি সম্মিলিতভাবে এক হয়ে জ্বিহাদ করা? নির্যাতিতা, ধর্ষিতা, যুলুম হওয়া ভাই ব্রাদারদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া? দুনিয়ার জমিনে আবারো সম্মানিত দ্বিন ইসলাম কে কায়েম করা?

কোনটা?

অথচ মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (إِنَّمَا ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا۟ وَجَٰهَدُوا۟ بِأَمْوَٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ) প্রকৃত মুমিন তারাই যারা মহান আল্লাহ পাক ও রসুল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং তারা জান ও মাল দিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ করে। (সূরা হুজরাত ৪৯:১৫)

মুমিনদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ননা করে মহান আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (ٱلتَّٰٓئِبُونَ ٱلْعَٰبِدُونَ ٱلْحَٰمِدُونَ ٱلسَّٰٓئِحُونَ ٱلرَّٰكِعُونَ ٱلسَّٰجِدُونَ ٱلْءَامِرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَٱلْحَٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُؤْمِنِينَ) তারা তওবাকারী, ইবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং মহান আল্লাহ তাআলার দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দিন ঈমানদারদেরকে। (সূরা তাওবাহ ৯/১১২)

আপনি আমি কি টিকবো? জান ও মালের কি সেক্রিফাইস করার মতো কলিজা আমাদের আছে? অধিকাংশ বোন তো সতীনের কাছে জামাইকে সেক্রিফাইস করতে রাজিইনা। জান মাল তো অনেক পরের ব্যপার।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: