ক্বারিয়াতুল ইসলামিয়াহ কি? কেনো তা প্রয়োজন?

 

ক্বারিয়াতুল ইসলামিয়াহ হচ্ছে রছুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার মদিনা শরীফের জীবনে সাহাবায়ে কেরাম রদ্বীয়াল্লাহু আনহুম উনাদের নিয়ে কাটানো জীবনের মতো জীবন কাটানোর একটি গ্রাম, যা হবে বাগদাদ সিটির আদলে। যেখানে ৪০ টি মুমিন পরিবার সম্মিলিতভাবে ইসলামিক জীবনযাপন করবেন। এর কারণ হচ্ছে ৪০ জন হাক্বিকি মুমিন ব্যক্তি যদি কোন ব্যক্তির জানাযায়, তার ঈমানের ব্যপারে সাক্ষ্য প্রদান করে যে সে ভালো ছিলো এবং তার জন্যে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট মাগফিরাত কামনা করে তাহলে মহান আল্লাহ পাঁক ঐ মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিবেন। (সকল হাদিছ এখানে)

কেনো এর প্রয়োজনীয়তা?

কারণ আমরা ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। ঐসকল ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত যাদের উপর প্রত্যেক ওয়াক্তের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল নামাজে, নামাযিগণ তাশাহুদে রছুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছ্বলেহীনদেরও সালাম দিয়ে থাকেন (اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَ عَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ)। যার ফলশ্রুতিতে দুনিয়া আখিরাতের তাদের জীবন হয়ে ওঠে নূরানী। আর এই ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত না হলে কোন দিন ও ইসলামিক পরিবেশ পাওয়া যাবেনা ফাওয়াইলুল্লিল মুছ্বল্লীন হয়ে কাকের মতো কয়েকটি রকেট গতির ঠোকর মারা সেজদা দিয়ে।

এরূপ পরিবেশ পেতে হলে কি করতে হবে খোদ মহান আল্লাহ পাক বলেই দিছেন।

মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنسٰنَ لَفِى خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ) (সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়া ও অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী) সময়ের শপথ নিশ্চয়ই সমস্থ মানুষ ক্ষতির মধ্যে (নিমজ্জিত) আছে, (তবে) তারা ব্যতীত, যারা (হাক্বিকি) মুমিন হয়ে গেছে, আমলে ছ্বলেহ করেছে। এবং একে অন্যকে তাগীদ করে হক্ব পথে চলার এবং পরস্পরকে ধৈর্য ধারণে উদ্ভুদ্ধ করে (জীবনের কঠিন মুহূর্ত গুলিতে)। (সূরা আসর ১০৩/১-৩)

জমিনে কিভাবে ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা পাওয়া যাবে এই ব্যপারে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ (وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ ءَامَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِى الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِى ارْتَضٰى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِى لَا يُشْرِكُونَ بِى شَيْـًٔا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْفٰسِقُونَ) তোমাদের মধ্যে যারা যারা (হাক্বিকি) মুমিন হবে, এবং আমলে ছ্বলেহ করবে, তাদের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন, তিনি যমীনে তাদের অবশ্যই ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা দান করবেনঃ "যেমনিভাবে তিনি তাদের আগের লোকদের খিলাফত দান করেছিলেন", (সর্বোপরি) যে জীবনবিধান তিনিঃ তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন তাও তাদের জন্যে (সমাজে ও রাষ্ট্রে) সুদৃঢ় করে দেবেন, তাদের ভীতিজনক অবস্থার পর তিনি তাদের অবস্থা (নিরাপত্তা ও) শান্তিতে বদলে দেবেন, (তবে এ জন্যে শর্ত হচ্ছে যে) তারা শুধু আমারই ইবাদত করবে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে নাঃ এরপরও যে (এবং যারা আমার নেয়ামতের) নাফরমানী করবে তারাই (সত্যত্যাগী) ফাসিক (বলে পরিগণিত হবে)। (সূরা নূর ২৪/৫৫) খুব খেয়াল করে দেখুন, একিই জিনিস দুই সূরাতে বলা হয়েছে (ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ) (ءَامَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ)।

আমরা স্পষ্ট বুঝলাম যে প্রথমতো প্রকৃত মুমিন ও আমলে ছ্বলেহ করে ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিকল্প কোন রাস্থা নাই। এখন প্রকৃত মুমিন ও ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তরিকা কি আমাদের নিকট?

প্রথমতো যারাই আমাদের ঐ ৪০ পরিবারের একজন হতে চায় তারা দুনিয়াকে তালাক দিতে হবে। অর্থাৎ দুনিয়া বিমুখ হয়ে আখেরাতের পাথেয় তালাসে নিজেকে ওয়াকফ করে দিবে। এর জন্যে প্রথমে ত্বরীকাহ আল রাজ-এর বাইয়াত হতে হবে।

বাইয়াত হতে হলে যে যে শর্ত মেনে নিয়ে বাইয়াত হতে হবে?

১) বর্তমান ছ্বলাফি, আহলে হাদিস, (যারা ধর্মের অপব্যখ্যা করে মনগড়া শিরক আর বিদআতের বুলি আওড়ায়), জামাতি-শিবির, দেওবন্দি ও কথিত ভন্ড সুন্নীদের কোন আক্বিদাহ পোষণ করা যাবেনা বরং পিউর আহলুস সুন্নাহ'এর অনুসারী হতে হবে।

২) কুরআন শরীফ তিলাওয়াত জানতে হবে, না জানা থাকলে শিখতে হবে শর্ত মেনে নিবে।

৩) ৫ ওয়াক্ত নামাযী হতে হবে। তাহাজ্জুদ ও পড়তে হবে।

৪) রমযানের ফরজ রোজা সহ, প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে হবে, এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ আইয়্যামুল্লাতেও নফল রোজা রাখতে হবে।

৫) যাকাত ফরজ হলে তা আদায় করতে হবে।

৬) সামর্থ থাকলে কুরআন সুন্নাহ অনুসারেই হজ্জ আদায় করা লাগবে।

৭) সকাল বিকাল ত্বরীকার সবক সহ সকল আমল বাধ্যতামূলক আদায় করা লাগবে।

বাইয়াত হওয়ার পরে, ২৪ ঘন্টার আমল গুলি বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং করে প্রত্যেক আমল আদায়ের রিপোর্ট দিতে হবে।

১) প্রত্যেক নামাজের পরে ৫ ওয়াক্তই, ওয়াক্তের ভেতর আমাদের দেওয়া নিদৃষ্ট তাসবীহ, তাহলীল, তাহমিদ আদায় করে রিপোর্ট দিতে হবে।

২) দৈনিক আল কুরআনের সর্বনিম্ন ৫ আয়াত তিলাওয়াত ও তরজমা আদায় করে রিপোর্ট দিতে হবে।

৩) দৈনিক আসমানের দিকে তাকিয়ে আমাদের ত্বরিকার আমল আদায় করে রিপোর্ট দিতে হবে।

৪) দৈনিক ৩৩ মিনিট মুরাকাবা করতে হবেঃ মহান আল্লাহ পাঁক, রছুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম ও মুর্শিদের স্বরনে, আমাদের ত্বরীকাহ অনুসারে। করে রিপোর্ট দিতে হবে।

৫) ১২৬৩ বার খাস দূরুদে নিসবতে রছুলে পাঁক ছ্বল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়া আলিহি ওয়াছাল্লাম আদায় করে করে রিপোর্ট দিতে হবে।

৬) দৈনিক আসমাউল হুসনা পাঠ করে রিপোর্ট দিতে হবে।

৬) মেয়েরা আউওয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করে রিপোর্ট দিবে, ছেলেরা জামায়াত আদায় করে। সময়মতো নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক। সাথে মূল গ্রুপের সকল কুরআন হাদিস পাঠ করা ও বাধ্যতামূলক।

৭) কলবি যিকির ২৪ ঘন্টা করে জারির চেষ্টা করা বাধ্যতামূলক।

৮) বাংলাদেশ টাইম দুপুর ২ টা ৩০ থেকে ৪ টা পর্যন্ত, কুরআনের তরজমা ও ব্যখ্যার আলোচনায় থাকা বাধ্যাতামূলক।

৯) সকাল ১০ টায় মিলাদ শরীফ ও কুরআনের ছুরার মশকের লাইভে থাকা বাধ্যতামূলক। মাগরিবের পরে তাজবিদের ক্লাসে থাকাও বাধ্যতামূলক।

১০) রাত ৯ টা ১০ টা ১২ মিনিট পর্যন্ত বিশুদ্ধ করে কুরআন পাঠের জন্যে তাজউইদের ক্লাসে যারা জানেনা তাদের থাকা বাধ্যতামূলক।

১১) মূল যিকিরের মাহফিল রাত ১০ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত সবার থাকা বাধ্যতামূলক। যেখানেঃ আসমাউল হুসনা পাঠ, তাওবা করা, সর্বশ্রেষ্ট যিকির, দুরুদ ও দোয়া করা হয়, বাংলা, ইংরেজি, টার্কিশ ভাষায়।

১২) মিথ্যা, চোগলখুরি, জিনা, গিবত, হারাম কাজে লিপ্ত থাকা ১০০% নিষিদ্ধ। মেয়েরা খাস পর্দা করা বাধ্যতামূলক, ছেলেরা চোখের হেফাজত করা বাধ্যতামূলক।

উপরোক্ত কাজ যারা ১০০% করবে ৩ বছরের ভেতর আশা করা যায় ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তবে এইসব করার জন্যে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন তা হলো সম্মিলিতভাবে ফিজিক্যালি একটি জায়গায় বসবাস, যেখানে হালাল খবার খেয়ে জীবনযাপন করা যাবে, কারণ সকল ইবাদতের পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল খাবার যা নিজ হাতে উৎপন্ন করে খেতে হবে। নিজের হাতে ধান, সবজি, মাছ, গোশত ফলিয়ে খাওয়া ব্যতীত ১০০% হালাল খাবার খাওয়া অসম্ভব। আর হালাল খাবার ব্যতীত যত আমলই করা হোক, আমলে ছ্বলেহ করে ছ্বলেহীনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবেনা। 

0 ফেইসবুক: