ধর্মব্যবসায়ী, মুনাফিক, ভন্ড, শ্রেনীর
কিছু লোক মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য বলে থাকে
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে।
তাই মতভেদ যুক্ত বিষয়ে আমল করা যাবে না অর্থাৎ ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পালন করা যাবে না । নাউযুবিল্লাহ !!
আসলে
এই বাতিল ফির্কাগুলা মুনাফিক হএয়ার কারনে সত্য বিষয় গোপন করে। দেখুন সহীহ হাদীস শরীফে
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের তারিখ, বার, মাস সবই
বর্ণনা করা আছে।
হাফিজে
হাদীস হযরত আবু বকর ইবনে আবী শায়বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেটা বিশুদ্ধ সনদে হাদীস শরীফে
বর্ননা করেন-
(ﻋﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﻣﻴﻦ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻋﺎﻡ ﺍﻟﻔﻴﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺭﺑﻴﻊ ﺍﻻﻭﻝ)
অর্থঃ
হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্নিত, তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
থেকে বর্ননা করেছেন যে,
হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হস্তি বাহীনি বর্ষের ১২ই রবীউল
আউয়াল সোমবার শরীফ হয়েছিল।”
দলীল-
√ মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা
√ বুলুগুল আমানী শরহিল ফতহুর রব্বানী ২য় খন্ড
১৮৯ পৃস্ঠা।
√ বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩ য় খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা-
দারূল ফিকর, বৈরূত
লেবানন।
উক্ত
হাদীস শরীফ এর রাবীগন অত্যান্ত সেকাহ বা বিশস্ত। রবীগনের নাম ও তাদের সম্পর্কে রেজাল
বিদগন কি বলেছেন আসুন দেখা যাক। উপরোক্ত হাদীস শরীফের সনদে রাবীগন হচ্ছেন,
–হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
– হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু
– সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি আলাইহি
– হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি
সনদের
উপরের দুজনতো সাহাবী উনাদের তে কোন তুলনাই নাই । অপর দুই জন রাবী সাঈদ ইবনে মীনা রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ও হযরত আফফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে রেজালের কিতাবে বলা হয়েছে– উচ্চ
পর্যায়ের নির্ভযোগ্য ইমাম,
সিকাহ,
তীক্ষ্ণ স্মরন শক্তি সম্পন্ন, বিশস্ত এবং নির্ভরযোগ্য, দৃঢ় প্রত্যয়
সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব।’’
দলীল-
√ খুলাছাতুত তাহযীব ২৬৮ পৃষ্ঠা
√ ত্বাকরীবুত তাহযীব ২ খন্ড ১২৬ পৃষ্ঠা।
শুধু
তাই নয় সহীহ হাদীস শরীফে অন্য সনদেও এ বিষয়ে হাদীস শরীফ উল্লেখ আছে। ইমাম হাকিম নিশাপুরী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এ প্রসঙ্গে উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
মুহম্মদ
বিন ইসহাক রহমতুল্লাহি আলিইহি (তাবেয়ী) বলেন, নবী করিম
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ এর রাতে বিলাদত (জন্ম) লাভ করেন।’’ ইমাম
হাকিম ও ইমাম যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন-
উক্ত হাদীস শরীফটি সহীহ।
দলীলঃ
আল মুস্তাদরাকে
হাকিম ২য় খন্ড ৬৫৯ পৃস্ঠা ,
কিতাবুল মানাকিব অধ্যায় , হাদীস নম্বর ৪১৮২।
সূতরাং
আমরা সহীহ হাদীস শরীফ থেকে নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের
তারিখ জানতে পাররাম। এবার আসুন দেখা যাক পরবর্তী উলামায়ে কিরামগন এ বিষয়ে কি বলেছেন।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত ১২
ই রবিউল আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে হয়েছে।’’
দলীলঃ
কিতাবুল
ওয়াফা পৃষ্ঠা ৮৭ । লেখক –
আল্লামা ইবনে জাওজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, প্রকাশনা
– দারূল
কুতুব ইসলামীয়া , বৈরূত
লেবানন।
হাফিজে
হাদীস ইমাম কুস্তালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন প্রসিদ্ধ মত অনুসারে নিশ্চয়ই ‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফ সোমবার দুনিয়ায় শুভ আগমন করেছেন। ………….. ১২ ই
রবিউল আউয়াল শরীফ মক্কা শরীফের অধিবাসীদের মধ্যে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর পবিত্র জন্মস্থান যিয়ারত করার আমল বর্তমান অবধি জাড়ি রয়েছে।’’
দলীলঃ
শরহুল
মাওয়াহেব ১ম খন্ড ২৪৮ পৃস্ঠা।
বিখ্যাত
ইতিহাসবিদ ইমাম ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে উনার পবিত্র বিলাদত লাভ করেন।’’
দলীলঃ
সিরাতে
ইবনে হিশাম ১ম খন্ড ১৫৮ পৃষ্ঠা।
ঐতিহাসি
ইবনে খালদুন রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতে শুভ আগমন করেন। তখন ছিলো বাদগশা
নাওয়াশেরের শাষনকাল।
দলীলঃ
সিরাতে
নববীয়া ৮১ পৃস্ঠা।
ইমাম
জারির তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
১২ ই রবিউর আউয়ালের আমুল ফিল বা হস্তী বাহীনির বছর রাতের শেষ ভাগে উনার পবিত্র বিলাদত লাভ করেন।’’
দলীলঃ
তারিখে
ওমুম ওয়াল মুলক ২ খন্ড ১২৫ পৃষ্ঠা।
ইমাম
ইবনে কাছীর ও ইমাম যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন, ১২ ই
রবিউর আউয়াল তারিখ ই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তারিখ হিসাবে জমহুর উলামায়ে
কিরামের নিকট প্রসিদ্ধ। উক্ত ১২ ই রবিউর আউয়াল তারিখ ই নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর শুভাগমন হিসাবে সবাই পালন করে আসছে।
দলীলঃ
বিদায়া
ওয়ান নিহায়া ৩ য় খন্ড ১০৯ পৃষ্ঠা।
শরহুল
মাওয়াহেব ২ খন্ড ২৪৮ পৃষ্ঠা।
উপমহাদেশের
বিখ্যাত আলেম ও হাদীস শরীফ বিশারদ শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, ‘নবীজী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদত শরীফের তারিখ হিসাবে ১২ ই রবিউল আউয়াল তারিখ
ই মশহুর। মক্কা শরীফের অধিবাসীদের আমল হলো
উক্ত তারিখে তারা নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র জন্মস্থান
যিয়ারত করতেন ’’
দলীলঃ
মা-সাবাতা
বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা।
তিনি
আরো বলেন, প্রসিদ্ধ
সিরাতবিদদের মতে, ‘নবীজী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদতের সময় হলো হস্তী বর্ষের ৫৫ দিন পর। এই মতই
সর্বাধিক প্রসিদ্ধ যে তা ছিলো রবিউল আউয়াল শরীফ মাসের ১২ তারিখ। অধিকাংশ আলেম ও ইতিহাসবি
এ বিষয়ে ঐক্যমত্য স্থাপন করেছেন।
দলীলঃ
মা-সাবাতা
বিস সুন্নাহ ৮১ পৃষ্ঠা।
উক্ত
কিতাবে আরো বর্নিত আছে ,
‘সমস্ত মুসলমানগন এ বিষয়ের উপর ইজমা করেছেন বা একমত যে, ‘নবীজী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ ই রবিউল আউয়াল আগমন করেছেন।
দলীলঃ
মা-সাবাতা
বিস সুন্নাহ ৮২ পৃষ্ঠা।
শুধু
তাই নয় বর্তমানে যে সকল ওহাবী সালাফীরা নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
আগমনের তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল অস্বীকার করে তাদের গুরু লা-মাযহাবী নওয়াব সিদ্দীক হাসান
খান ভুপালি তার কিতাবে লিখেছে,
‘নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদত মক্কা শরীফের বাদশা
আবরাহার হস্তী বাহীনির বছর ১২ ই রবিউল আউয়ালের সুবহে সাদিকের সময় হয়েছে, এটার
উপর উলামায়ে কিরাম একমত হয়েছেন এবং এটার উপর ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা
করেছেন ও ঐক্যমত্য পোষন বরেছেন।
দলীলঃ
শামামাতুর
আনবার ইয়ার ফি মাওলিদে খায়রিল বারিয়াহ ৭ পৃষ্ঠা।
সূতরাং
এত স্পষ্ট এবং বিশুদ্ধ দলীল থাকার পরও নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের
তারিখ ১২ ই রবিউল আউয়াল নিয়ে বিরোধিতা করা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির নামান্তর।
অনেকে
আবার ১২ ই রবিউল আউয়ালকে অস্বীকার করতে বিভিন্ন মহাকাশবিদরে রেফারেন্স দেয়ার অপচেষ্টা
করে। এসকল লোকদের জন্য নিম্নোক্ত গবেষনামূলক গানিতিক হিসাব উল্লেখ করা হলো-
অ্যাস্ট্রোনমারদের
গবেষণায় নির্ভুলভাবে প্রমাণ হয় ১২ই রবিউল আউয়াল-ই হচ্ছে নবীজির আগমণ (জন্ম) এর দিন
নবীজির
বিদায় গ্রহণের দিন ছিলোঃ
হিজরী
সনঃ ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল
ঈসায়ী
সনঃ ৬৩২ সাল, ৮ই
জুন
বারঃ
সোমবার
**(১ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
Back Calculation করে দেখা যায়, ৫৭০ ঈসায়ী
সনে রবীউল আউায়াল মাস শুরু হয়েছিলোঃ
হয়,
২৩ শে
এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ২৯শে দিনে হয়)
অথবা,
২৪ শে
এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ৩০ শে দিনে হয়)
কিন্তু, এটা নিশ্চিত
৫৩ হিজরী পূর্ব সনে সফর মাস ৩০ দিনের হয়েছিলো।
**(সূত্র:
২ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
সে অনুযায়ী
আপনি নিজেই গণনা করলে পাবেনঃ
৫৭০ সালের
৫ই মে সোমবারই হচ্ছে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
তাহলে
আমরা দেখতে পেলাম-
বিলাদত
দিবসঃ ৫ই মে, ৫৭০
ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরী সোমবার
বিদায়
দিবসঃ ৮ই জুন, ৬৩২
ঈসায়ী সন, ১১
হিজরী সোমবার
দুই ইংরেজী
সনের সময়ের পার্থক্য-
৬২ বছর
১ মাস ৩ দিন
সুতরাং
চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী-
৬২x৩৬৫+৩১+৩=
(২২৬৬৪ ভাগ ৩৫৫ দিন)= ৬৩+ বৎসর
১ নং
দ্রষ্টব্যঃ আখেরী চাহার শোম্বা বলা হয় সফর মাসের শেষ বুধবারকে, কিন্তু
কোন তারিখ নিদ্দিষ্ট করা হয় না। এর কারণ সফর মাসের শেষ বুধবার ছিলো হিজরী মাসের ৩০
তারিখ, যা
সব সময় আসে না। তাই পরবর্তীতে এ দিনটি যেন প্রতি বছর পালন করা যায় সেই সুবিধার্থে
সফর মাসের শেষ বুধবার ধরে দিনটি পালন করা হয়। এখন ৩০ তারিখ যদি বুধবার ধরা হয়, তবে আপনি
নিজেই হাতে গুনে দেখুনে ১২ তারিখ সোমবার হয়।
২ নং
দ্রষ্টব্যঃ ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরীতে সফর মাস যে ৩০ দিন ছিলো তার প্রমাণ দুটিঃ
ক) চাদ
গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায়,
নবীজির বিলাদতের আগে পর পর ৪ চন্দ্র মাস ৩০ দিন করে হয়েছিলো।
খ) যদি
সফর মাস ৩০ না হয়, তবে
বিলাদত দিবস সোমবার হয় না। অথচ সহিহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় নবীজি নিজেই বলেছেন
উনার বিলাদত গ্রহণ হচ্ছে সোমবার দিন।
তাই অ্যাস্ট্রোনমার
বা জোর্তিবিজ্ঞানীদের গবেষণায় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত নবীজির বিলাদতের দিন অবশ্যই ১২ই
রবিউল আউয়াল শরীফ।
0 ফেইসবুক: