Sunday, August 21, 2022

আমরা আমাদের দুর্দশা নিজের হাতেই কামাই করি, উত্তরণের চেষ্টাও করতে রাজি না

ভাই ও বোনেরা তোমরা দুনিয়ার পিছে এমনভাবে ছোট না যে, দিন রাত কুকুরের মতো খেটেও দিনশেষে দেখা যাবে তলাহীন ঝুড়িই ঝুটেছে তোমাদের ভাগ্যে। একজন মুসলিম হলে, কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত, ও যাহান্নামে বিশ্বাসী হলে এখনই সময় আত্মসমর্পণের। মহান আল্লাহ তা’আলার জন্যে সময় বের করো, মহান আল্লাহ তা’আলা তোমাদের সচ্ছলতা দান করবেন। উদ্ধার করবেন সকল সমস্যা থেকে। মহান আল্লাহ পাঁক বলেনঃ “আর যে কেউ মহান আল্লাহ তা’আলাকে ভয় (তাকওয়া অর্জন) করে, মহান আল্লাহ তা’আলা তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন (তার সমস্যা থেকে), এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা’আলার উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলাই যথেষ্ট। (আল কুরআন ৬৫/২-৩)

হাদিস শরীফে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য সময় বের করো। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবো এবং তোমার দারিদ্রতা দূর করে দেব। আর যদি তুমি তা না করো, তাহলে আমি তোমার অন্তর পেরেশানী দিয়ে পূর্ণ করবো এবং তোমার দারিদ্রতাও দূর করবো না। (ইবনে মাজাহ ৪১০৭) অন্য বর্ণনায় এসেছেঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব অনটন দূর করে দিব। কিন্তু তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটনও দূর করবো না। (তিরমিঝি ২৪৬৬)

এছাড়াও হাদিস শরীফে এসেছেঃ আমর ইবনে মায়নূন আওদী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে নসীহতস্বরূপ বললেন, পাঁচটি জিনিস আসার পূর্বে পাঁচটি কাজ করাকে বিরাট সম্পদ মনে কর।

(১) তোমার বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে।

(২) রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্যকে।

(৩) দরিদ্রতার পূর্বে অভাবমুক্ত থাকাকে।

(৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে। এবং

(৫) মৃত্যুর পূর্বে হায়াতকে। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত ৫১৭৪)

এই ফেইক দুনিয়া নিয়ে যে মজে আছি এর কি আদতে কোন মুল্য আছে? সাহল ইবনে সা‘দ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূল ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি দুনিয়ার মূল্য মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট মাছির একটি পাখার সমতুল্য হত, তা‘হলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোকও পানি পান করতে দিতেন না (আহমাদ শরীফ, মিশকাত ৫১৭৭)।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম একটি (খালি) চাটাইয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, তা হতে উঠলে উনার দেহ মোবারকে চাটাইয়ে দাগ পড়েছিল। তখন ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরয করলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন তবে আমরা আপনার জন্য একখানা বিছানা তৈরি করে বিছিয়ে দিতাম। তিনি বললেন, দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? বস্ত্ততঃ আমার ও দুনিয়ার দৃষ্টান্ত হল সেই আরোহীর ন্যায়, যে একটি গাছের নীচে ছায়ায় কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিল, অতঃপর বৃক্ষটিকে ছেড়ে চলে যায় (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত ৫১৮৮)।

আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (মহান আল্লাহ তা’আলা) মক্কার বাতহা (প্রশস্ত উপত্যকা) আমার জন্য স্বর্ণে রূপান্তরিত করে দেওয়ার বিষয় আমার নিকট পেশ করলেন, তখন আমি বললাম না, হে আমার প্রভু! বরং আমি একদিন পরিতৃপ্ত এবং আরেক দিন অভুক্ত থাকতে চাই। যাতে আমি যখন অভুক্ত থাকি তখন তোমার কাছে সকাতরে বিনয় প্রকাশ করব এবং আপনাকে স্মরণ করব। আর যখন পরিতৃপ্ত হব তখন আপনার প্রশংসা করব এবং আপনার শোকর আদায় করব (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত ৫১৯০)।

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কোন ব্যক্তি তার উদর অপেক্ষা মন্দ কোন পাত্রকে ভর্তি করেনি। আদম সন্তানের জন্য এই পরিমাণ কয়েক লোকমাই যথেষ্ট যা দ্বারা সে নিজের কোমরকে সোজা রাখতে পারে (ও মহান আল্লাহ তা’আলার ইবাদত করতে পারে)। যদি এর অধিক খাওয়ার প্রয়োজন মনে করে তবে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য, আরেক তৃতীয়াংশ পানীয় এবং তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখবে (তিরমিযী শরীফ, ইবনু মাজাহ শরীফ, মিশকাত ৫১৯২)।

এর চেয়ে স্পষ্ট কিছুই নাই নসিহতের গাফেল না হওয়ার জন্যে। যদি এর পরেও ভাই ও বোনেরা না বুঝেন কি করার আছে। এরূপ ভাব্বেন না যে বিনা হিসেবে পার পেয়ে যাবেন। ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কিয়ামতের দিন কোন আদম সন্তানের পদদ্বয় একটুও নড়তে পারবে না যে পর্যন্ত না তার নিকট হতে পাঁচটি বিষয়ের উত্তর চাওয়া হবেঃ

(১) তার বয়স সম্পর্কে-সে তা কি কাজে ব্যয় করেছে?

(২) তার যৌবন সম্পর্কে- সে তা কি কাজে ক্ষয় করেছে?

(৩) তার মাল-সম্পদ সম্পর্কে-সে তা কোথায় থেকে উপার্যন করেছে?

(৪) আর তা কোথায় ব্যয় করেছে?

(৫) এবং যেই ইলম হাসিল করেছিল তা অনুযায়ী কি আমল করেছে? (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত ৫১৯৭)।

আর মাওলা আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বলেন, দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর আখেরাত সম্মুক্ষে আসছে। আর তাদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা, আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন আমল নেই (বুখারী শরীফ, মিশকাত ৫২১৫)।

অতএব আর কিছুই বলার বাকি থাকেনা, যারা গাফেল হবে তারা নিজেদের হাতেই নিজেদের আখিরাত ধ্বংস করবেন।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: