Thursday, September 29, 2022

গিবত, পরচর্চা, পরনিন্দা, চুগলখুরিতে লিপ্ত জাহান্নামিদের ফিরে আসার আহ্বান!

প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, আজকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো ইং শা আল্লাহ, বিষয়টি হলোঃ আমরা যারা মানুষের দোষ-ত্রুটি বলে বেড়াই এবং কথা ও কাজে এমনকি ইশারায়ও অন্যের ওপর অপবাদ দেই এবং সম্মুখে ও পেছনে নিন্দা, পরচর্চা করি এই ব্যপারে।

কি ভয়াবহ বিষয় মানুষের নামে নিন্দা করা, গিবত করা, পরচর্চা করা, হোক তা সত্য কিংবা মিথ্যা, সম্মুখে কিংবা পেছনে, আমাদের দ্বারা এই কাজ হলে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে পাকড়াও করবেন কিয়ামতের ময়দানে, তা আমরা যেই হই না কেনো। সাধারণত দেখা যায় মানুষ পারসোনাল স্বার্থে আঘাত এলেই এই কাজগুলি করে থাকে, তবে কিছু মানুষের অভ্যাস এইসব কাজে লিপ্ত থাকা। বিশেষকরে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথিত ওয়াজি/বক্তাদের মধ্যে, কথিত পির শায়েখদের দরবারে এবং গ্রামের মহিলাদের মধ্যে এই বিষয়গুলি চরম মাত্রায় পাওয়া যায়। মহিলারা এক যায়গায় হলেই প্রতিবেশী কিংবা বান্ধবীদের ব্যপারে এইসব নিয়ে মেতে উঠে। একারণেই মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে এরশাদ করেনঃ [وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ] দুর্ভোগ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনাসামনি) মানুষের নিন্দা করে আর (অসাক্ষাতে) করে দুর্নাম।

তো কিছু উলামা-এ আহলুস সুন্নাহ هُمَزَ এবং لُمَزَ এর একই অর্থ বলেছেন। আর কিছু সংখ্যক উলামা উভয়ের মাঝে কিছুটা পার্থক্য করে বলেন, هُمَزَ বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে সামনা-সামনি মানুষের নিন্দা করে যদিও তা সত্য হয়। আবার لُمَزَ বলা হয় সেই ব্যক্তিকে, যে পশ্চাতে গীবত (পরচর্চ্চা) করে। আবার কেউ কেউ এর বিপরীত অর্থও করেছেন। অনেকের মতে هَمز চোখ ও হাতের ইশারায় নিন্দা প্রকাশ করা এবং لَمز জিহ্বা দ্বারা পরনিন্দা করাকে বলা হয়। এ দুটি কাজই জঘন্য অপরাধ মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে।

তাফসীর-কারকগণ এ শব্দ দু’টির আরও অর্থ বর্ণনা করেছেন। তাদের বর্ণিত তাফসীর অনুসারে উভয় শব্দ মিলে এখানে যে অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছেঃ যে কাউকে লাঞ্ছিত ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, কারোর প্রতি তাচ্ছিল্য ভরে অংগুলি নির্দেশ করে, চোখের ইশারায় কাউকে ব্যঙ্গ করে কারো বংশের নিন্দা করে, কারো ব্যক্তি সত্তার বিরূপ সমালোচনা করে, কারো মুখের ওপর তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করে, কারো পেছনে তার দোষ বলে বেড়িয়ে, এর কথা ওর কানে লাগিয়ে বন্ধুদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে, ভাইদের মধ্যে পারস্পরিক ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে, মানুষের নাম বিকৃত করে খারাপ নামে অভিহিত করে, মুখের কথার খোঁচায় কাউকে আহত করে এবং কাউকে দোষারোপ করে। এসব যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তারা এই আয়াত শরীফের মিসদ্বাক। অথচ এসবই মারাত্মক অপরাধ মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে।

হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, এর অর্থ হলো খোটাদানকারী এবং গীবতকারী। রবী ইবনে আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, সামনে মন্দ বলাকে (هُمَزَ) বলা হয় এবং অসাক্ষাতে নিন্দে করাকে (لُمَزَ) বলে। হযরত কাতাদাহ রহমতুল্লাহ বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো মুখের ভাষায় এবং চোখের ইশারায় মহান আল্লাহ পাকের বান্দাদেরকে কষ্ট দেয়া। মুজাহিদ রহমতুল্লাহ বলেন যে, (هُمَزَ) এর অর্থ হলো হাত এবং (لُمَزَ) চোখ দ্বারা কষ্ট দেয়া এবং এর অর্থ মুখ বা জিহ্বা দ্বারা কষ্ট দেয়া। মুজাহিদ রহমতুল্লাহ বলেন যে, এ আয়াত কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ হয়নি।

[পশ্চাতে পরনিন্দার শাস্তির কথা পবিত্র আল কুরআন ও হাদীস শরীফে কঠিভাবেই বর্ণিত হয়েছে।

এর কারণ এরূপ হতে পারে যে, এ গোনাহে মশগুল হওয়ার পথে সামনে কোন বাধা থাকে না। যে এতে মশগুল হয়, সে কেবল এগিয়েই চলে। ফলে গোনাহ বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ও অধিকতর হতে থাকে। তবে সম্মুখের নিন্দা কিন্তু এরূপ নয়। এতে প্রতিপক্ষও বাধা দিতে প্রস্তুত থাকে। ফলে গোনাহ দীর্ঘ হয় না। এছাড়া কারও পশ্চাতে নিন্দা করা এ কারণেও বড় অন্যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি জানতেও পারে না যে, তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। ফলে সে সাফাই পেশ করার সুযোগ পায় না। আবার একদিক দিয়ে لمز তথা সম্মুখের নিন্দা গুরুতর। যার মুখোমুখি নিন্দা করা হয়, তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করা হয়। এর কষ্টও বেশি, ফলে শাস্তি ও গুরুতর। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম হচ্ছে তারা, যারা পরোক্ষ নিন্দা করে, বন্ধুদের মধ্যে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে এবং নিরপরাধ লোকদের দোষ খুঁজে বেড়ায়।” [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/২২৭] [এবং কুরতুবী শরিফেও হাদিস শরীফ খানা এসেছে]।

পবিত্র আল কুরআনের অন্যত্রও মহান আল্লাহ পাক এই ব্যপারে এরশাদ করেনঃ [هَمَّازٍ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِيمٍ] অর্থাৎ, যে (ব্যক্তি) পশ্চাতে নিন্দা করে, (এবং) একের কথা অন্যের নিকট লাগিয়ে বেড়ায়। অর্থাৎ চুকলি বা চুগলখুরি করে আমাদের সহজ বাংলা ভাষায়।

এছাড়াও পবিত্র আল কুরআন ও হাদীস শরীফের বিভিন্ন স্থানে যারা “পিছনে নিন্দাকারী, এবং যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়” তাদেরকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে কঠিন সাবধানবাণী শোনানো হয়েছে। বুখারির একটি হাদীস শরীফে এসেছেঃ রাসূলুল্লাহ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কাত্তাত (যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায় সে) জান্নাতে প্ৰবেশ করবে না।” [বুখারী শরীফ ৬০৫৬]

সহীহ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে আরেকটি হাদিস এই মর্মে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় বলেনঃ “এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে, আর এদেরকে খুব বড় (পাপের) কারণে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। এদের একজন প্রস্রাব করার সময় পর্দা করতো না এবং অপরজন ছিল চুগলখোর।"

মুসনাদে আহমাদে হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ “চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এ হাদীসটি ঐ সময় শুনিয়েছিলেন যখন তাঁকে বলা হয় যে, এ লোকটি আমীর-উমারার নিকট (গোয়েন্দারূপে) কথা পৌঁছিয়ে থাকে। 

মুসনাদে আহমদে হযরত আসমা বিনতু ইয়াযীদ ইবনে সাকন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম লোক কারা এ খবর কি আমি তোমাদেরকে দিবো না?” সাহাবীগণ উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, হে মহান আল্লাহ পাক এর রাসূল ছল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে এ খবর দিন!” তিনি তখন বললেনঃ “তারা হলো ঐ সব লোক যাদেরকে দেখলে মহামহিমান্বিত আল্লাহ পাক-কে স্মরণ হয়!” তারপর তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের নিকৃষ্ট লোকদের সংবাদ দিবো না? তারা হলো চুগলখোর, যারা বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে থাকে এবং সৎ ও পবিত্র লোকদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে থাকে।” (ইমাম ইবন মাজাহ রহিমাহুল্লাহও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)।

আর আল কুরআনে মহান আল্লাহ তা’আলা হুসিয়ার করে দেন এইভাবেঃ ( یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ) হে মু’মিনগণ! তোমরা (মানুষের ব্যপারে) নানা রকম অনুমান করা থেকে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ক্ষেত্রে অনুমান করা গুনাহ এবং তোমরা অন্যের দোষ-ত্রুটি খোঁজাখুঁজি করো না, এবং একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশ্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। (হুজুরাত ৪৯/১২)

এই আয়াতে পারস্পরিক হক ও সামাজিক রীতি-নীতি ব্যক্ত হয়েছে এবং এতে তিনটি বিষয় হারাম করা হয়েছে। (এক) ধারণা, (দুই) কোন গোপন দোষ সন্ধান করা এবং (তিন) গীবত অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে শুনলে অসহনীয় মনে করত।

তন্মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে, الظن বা প্ৰবল ধারণা। রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কারও মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি সু-ধারণা পোষণ ব্যতীত মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়।” (মুসলিম শরীফ ৫১২৫, আবু দাউদ শরীফ ২৭০৬, ইবনে মাজাহ শরীফ ৪১৫৭) অন্য এক হাদীসে আছে ‘আমি আমার বান্দার সাথে তেমনি ব্যবহার করি, যেমন সে আমার সম্বন্ধে ধারণা রাখে। এখন সে আমার প্রতি যা ইচ্ছা ধারণা রাখুক। (মুসনাদে আহমাদঃ ১৫৪৪২) এ থেকে জানা যায় যে, মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করা ফরয এবং কু-ধারণা পোষন করা হারাম। এমনিভাবে যেসব মুসলিম বাহ্যিক অবস্থার দিক দিয়ে সৎকর্মপরায়ণ দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের সম্পর্কে প্রমাণ ব্যতিরেকে কু-ধারণা পোষণ করা হারাম। রসুলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমরা (অধিক) ধারণা (করা) থেকে বেঁচে থাক। কেননা, ধারণা মিথ্যা কথার নামান্তর।’ (বুখারী শরীফ ৪০৬৬, মুসলিম শরীফ ২৫৬৩)

আয়াতে দ্বিতীয় নিষিদ্ধ বিষয় হচ্ছে, কারও দোষ সন্ধান করা। এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়। এ কারণে একবার নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম উনার খোতবার দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ “হে সেই সব লোকজন, যারা মুখে ঈমান এনেছো কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্ৰবেশ করেনি, তোমরা মুসলিমদের গোপনীয় বিষয় খোঁজে বেড়িও না। যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন। আর মহান আল্লাহ তা’আলা যার ত্রুটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন।” (আবু দাউদ শরীফ ৪৮৮০) অর্থাৎ, এই সন্ধানে থাকা যে, কোন গোপন দোষ-ত্রুটি পেলে বদনাম করা যাবে। এটাকেই تجسّس (জাসুসী) বলে, যা নিষেধ। হাদীসেও এ কাজ থেকে নিষেধ করা হয়েছে এবং নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, যদি কারো কোন দোষ-ত্রুটি তোমরা জানতে পার, তবে তা গোপন কর। না সেটাকে মানুষের সামনে বলে বেড়াও, আর না খুঁজে খুঁজে দোষ বের কর। বর্তমানে ব্যক্তি-স্বাধীনতার বড় চর্চা করা হয়। ইসলামও দোষ অনুসন্ধান করা থেকে নিষেধ করে মানুষের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা সম্পাদন না করে অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত সে অপরের কষ্টের কারণ না হয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলো অবাধ স্বাধীনতার শিক্ষা দিয়ে সকল মানুষকে ব্যাপক ফ্যাসাদের অনুমতি দিয়ে রেখেছে। যার ফলে সমাজের সকল প্রকার নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গেছে। মু'আবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ আমি নিজে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ “তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো। তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেবে।” (আবু দাউদ শরীফ ৪৮৮৮) অন্য এক হাদীসে রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “মুসলিমদের গীবত করো না এবং তাদের দোষ অনুসন্ধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি মুসলিমদের দোষ অনুসন্ধান করে, মহান আল্লাহ তা’আলা তার দোষ অনুসন্ধান করেন। আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করেন, তাকে স্ব-গৃহেও লাঞ্ছিত করে দেন।” (আবু দাউদ: ৪৮৮০)

দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করার এ নির্দেশ শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, বরং ইসলামী সরকারের জন্যেও। এ ক্ষেত্রে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর এ ঘটনা অতীব শিক্ষাপ্ৰদ। একবার রাতের বেলা তিনি এক ব্যক্তির কণ্ঠ শুনতে পেলেন। সে গান গাইতেছিল। উনার সন্দেহ হলো। তিনি তার সাথী আব্দুর রহমান ইবন আওফ রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেনঃ এ ঘরটি কার? বলা হল, এটা রবী’আ ইবন উমাইয়া ইবন খলফ এর ঘর। তারা এখন শরাব খাচ্ছে। আপনার কি অভিমত? অতঃপর আব্দুর রাহমান ইবন আওফ বললেন, আমার অভিমত হচ্ছে যে, আমরা আল্লাহ যা নিষেধ করেছে তা-ই করে ফেলছি। মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তা করতে নিষেধ করে বলেছেনঃ “তোমরা গোপন বিষয়ে অন্বেষণ করো না”। (সূরা আল হুজুরাতঃ ১২) তখন উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ফিরে আসলেন এবং তাকে ছেড়ে গেলেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম: ৮২৪৯, মাকারিমূল আখলাক: আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাফর আল খারায়েতী: ৩৯৮, ৪২০, মুসান্নাফে আব্দির রাজ্জাক; ১০/২২১)

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, খুঁজে খুঁজে মানুষের গোপন দোষ-ত্রুটি বের করা এবং তারপর তাদেরকে পাকড়াও করা শুধু ব্যক্তির জন্যই নয়, ইসলামী সরকারের জন্যও জায়েয নয়। একটি হাদীসেও একথা উল্লেখিত হয়েছে উক্ত হাদীসে নবী করীম ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “শাসকরা যখন সন্দেহের বশে মানুষের দোষ অনুসন্ধান করতে শুরু করে তখন তাদের চরিত্র নষ্ট করে দেয়।” (আবু দাউদ শরীফ ৪৮৮৯)

আয়াতে নিষিদ্ধ তৃতীয় বিষয় হচ্ছে গীবত। আর গীবতের অর্থ হল, অন্য লোকের কাছে কোন ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা (নিন্দা বা সমালোচনা করা), যা সে অপছন্দ করে। আর যদি তার প্রতি এমন দোষের কথা সম্পৃক্ত করা হয়, যা তার মধ্যে নেই, তাহলে তা মিথ্যা অপবাদ হবে। স্ব-স্ব স্থানে দু’টোই বড় অপরাধ ও মহাপাপ। অর্থাৎ, অপরের কাছে কোন মুসলিম ভাইয়ের নিন্দা গাওয়া ঐ রকমই, যেমন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া। মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে তো কেউ পছন্দ করে না, কিন্তু গীবত হল মানুষের অতি প্রিয় খাদ্য। গীবতের সংজ্ঞায় রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তি সম্পর্কে কারো এমন কথা বলা যা শুনলে সে অপছন্দ করবে। প্রশ্ন হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সত্যিই থেকে থাকে তাহলে আপনার মত কি? তিনি বললেনঃ তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তো তুমি তার গীবত করলে। আর তা যদি না থাকে তাহলে অপবাদ আরোপ করলে।” (মুসলিম শরীফ ২৫৮৯, আবু দাউদ শরীফ ৪৮৭৪, তিরমিযী শরীফ ১৯৩৪] এই আয়াতে তিনটি বিষয় নিষিদ্ধ করতে গিয়ে গীবতের নিষিদ্ধতাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং একে মৃত মুসলিমের মাংস ভক্ষণের সমতুল্য প্রকাশ করে এর নিষিদ্ধতা ও নীচতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মি'রাজের রাত্রির হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হল, আমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে গেলাম যাদের নখ ছিল তামার। তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহের গোশত আচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা তাদের ভাইয়ের গীবত করত এবং তাদের ইজ্জতিহানি করত। (মুসনাদে আহমাদ: ৩/২২৪, আবু দাউদ: ৪৮৭৮)

মহান আল্লাহ পাক আমাদের তৌফিক দান করুন আমরা যেনো চুগোলখুরি, গিবত, পরনিন্দা ও সামনা সামনি কাউকে হ্যাও পতিপন্ন না করি। আমিন। ওয়াস সালাম। আল্লাহ নিগাহবান।


সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুনঃ

এডমিন

আমার লিখা এবং প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বে আইনি।

0 ফেইসবুক: